#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১৪
বন্যা কথাটা যাস্ট ইগনোর করে চলে যায়। সে শুনতে চায় না এই মহিলার কথা। সে প্রয়োজন বোধ করছে না এই মহিলার কথা শোনার। আনজুম বেগম ( বন্যার মা ) অনেক কিছু বলছেন কিন্তু বন্যা সেই কথাগুলো কর্ণপাত করলো না। নিজের রুমে চলে এলো। নিজের রুমে এসেই বন্যা হতভম্ব হয় যায়। তার রুমে দু দুটো ছেলে বসে আছে।
দুজন ছেলেই তার অপরিচিত। দুজনকে আগে দেখেছে বলেও তার মনে পড়ছে না। হয়তো তার মা আর তার মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর সাথেই এসেছে। কিন্তু গেস্ট হলে গেস্ট রুমে থাকবে। এখানে কী করছে? তখনি তার বড় মামি বলে,
আরে বন্যা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
বন্যা ছেলে দুটোর দিকে ইশারা করে বলে, উনারা কে? আর আমার রুমে কী করছে?
ছেলে দুটো এতক্ষণ বন্যাকে খেয়াল করেনি। বন্যার কন্ঠ শুনে চমকে দরজার দিকে তাকায়। বন্যার বড় মামি একবার ছেলে দুটোর দিকে তাকিয়ে বলে,
ওহ। এটা হচ্ছে তোর ম মানে বড় খালার ছেলে আসিফ। এটা হচ্ছে আসিফের বন্ধুর ভাই। ওরা আজকে এই রুমে থাকবে। তুই মিতুর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
বন্যা অবাক হয়ে যায়। তার তো কোনো খালা নেই। তার মায়ের তো কোনো বোনই নেই।
বন্যার আর বুঝতে বাকি থাকে না আসিফ তার মায়ের দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান। আসিফ হয়তো জানে না আনজুম বেগমের আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল। আর একটা মেয়েও আছে। তাই হয়তো তাকে খালাতো বোন বলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। কথাগুলো ভাবতেই বন্যার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে। সন্তান বড় হলে বাবা-মাকে ভুলে যায় বা নিজের বাবা-মা পরিচয় দিতে চায় না। বাবা-মা ও যে সন্তানকে ভুলে যায় বা নিজের সন্তান বলে পরিচয় দিতে চায় না এটা ইতিহাস বিরল।
আসিফ আর নোমান ও হলো বন্যা আসিফের খালাতো বোন।
বন্যা মিতুর রুমের দিকে পা বাড়ায়। এটা তার নিজের বাড়ি না। সে এই বাড়ির আশ্রিতা। তাই তার কোনো অধিকার নেই এই বাসার ওপর। যে যেখানে থাকতে বলবে তাকে সেখানেই থাকতে হবে। দয়া করে এখানে থাকতে দিয়েছে, তিন বার খেতে দিচ্ছে, পড়াশোনা করাচ্ছে এটাই তার ভাগ্য। তাই এই বাসার কারো মুখের ওপর সে কথা বলে না। সে বড়ই হোক কিংবা ছোট।
আসিফ ও হচ্ছে তোমার ছোট খালার মেয়ে। বলেছিলাম না যার বাবা-মা দুজনেই মারা গেছে।
আসিফ বন্যার মুখের দিকে তাকায়। তার খালাতো বোনের ফেইস আর তার মায়ের ফেইস প্রায় মিলে যাচ্ছে। সে ভাবছে এটা কী করে সম্ভব? হয়তো তার মায়ের বোনের মেয়ে বলেই এতোটা মিল। আসিফ আর নোমান বন্যার সাথে কথা বলার আগেই বন্যা নিজের জামাকাপড় নিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে। এতে তারা একটু অপমান বোধ করে। কিন্তু সেটাকে পাত্তা দেয় না। ভাবে অপরিচিত ছেলেদের সাথে কথা বলতে আনকম্পোর্টেবল ফিল করে তাই চলে গেছে।
__________________
বন্যা মিতুর রুমে এসে দেখে মিতুর সাথে একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটা আনজুম বেগমের মতো দেখতে। শুধু এতটুকু পরিবর্তন মেয়েটা বিদেশীদের মতো ধবধবে সাদা। এটা হয়তো আসিফের বোন। বন্যা একনজর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। জামা কাপড়গুলো বেলকনিতে মেলে দিয়ে ফোন নিয়ে সোফায় বসে। সাফাতকে ফোন লাগায়।
ঐ বন্যা আপু ও হচ্ছে …….
জানি আমি।
অহি মিতুকে কথাটা শেষ করতে দেয় না। মিতু ভয়ে চুপসে যায়। সে বুঝতে পারছে বন্যা কোনো কারণে বিরক্ত। তাই আর কথা বাড়ালো না। একবার রিং হতেই সাফাত কলটা রিসিভ করে।
বাসায় পৌছে গেছো?
হুম, তুমি?
না। একটা ইম্পর্টেন্ট মিটিং ছিল সেটাই এটেন্ট করতে গিয়ে লেইট হয়ে গেছে।
ঐ মিটিং লবণ ছিল? তোমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল?
নিশ্চুপ।
এন্সার মি।
সাফাত এখন কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না। হ্যাঁ বললে বন্যা আজকে তার দফারফা করে ছাড়বে। বন্যার কথা শুনে মনে হচ্ছে ওর মুড ঠিক নেই। ঠিক তখনি আনজুম বেগম আর পরিবারের বাকি সদস্যরা মিতুর রুমে আসে। সবাইকে দেখে বন্যা ঠাস করে ফোনটা কেটে দিয়ে সাইলেন্ট করে ফেলে। সাফাত ভাবছে বন্যা রাগ করে ফোন কেটে দিয়েছে। তাই বার বার ফোন দিচ্ছে। কিন্তু বন্যা রিসিভ করছে না। আনজুম বেগম চোখের ইশারায় মিতু আর ঐ মেয়েটাকে রুম থেকে চলে যেতে বলে। আনজুম বেগমের ইশারা পেয়ে সুর সুর করে দুজন রুম থেকে চলে যায়। আনজুম বেগম কিছু বলতে যাবেন তার আগেই বন্যা উনাকে থামিয়ে দিয়ে কাঠ কাঠ গলায় উত্তর দেয়,
আমি জানি আপনি এবং আপনারা সবাই আমাকে কী বলতে এসেছেন। আমি আসিফ আর ঐ মেয়েটাকে কিছু বলবো না। আর না কোনোদিন নিজের পরিচয় দিব না। এতটুকু বিশ্বাস আমাকে করতেই পারেন। আপনার সুখের বাধা আমি কোনোদিন হয়নি আর না কোনোদিন হবো। এতটুকু ভরসা আমাকে করতে পারেন। এতো বছর যখন আপনার পরিচয় ছাড়া বড় হতে পেরেছি বাকি জীবনটা ও পারব। কিন্তু আপনি একদিন এসবের জন্য আফসোস করবেন।
নোমান এতক্ষণ ধরা দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে বন্যার কথাগুলো শুনছিল। আড়ি পাতার ইচ্ছে তার ছিল না। কিন্তু সে এদিক দিয়ে যাচ্ছিল আর বন্যার কথাগুলো তার কানে আসে। বন্যা রুম থেকে বের হয়ে আসে। বন্যা রুম থেকে বের হওয়ার আগেই নোমান দরজার আড়াল থেকে সরে যায়। বন্যার চোখের কোণে অভি চিকচিক করছে।
৩৩
অহির কান্নাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে চলে এলো। কিন্তু কান্নার দলাগুলো চোখের পাতায় ঝড়লো না। কান্না মানে দুর্বলতা। যে মানুষটা তার না তার জন্য কেঁদে কেটে বন্যা বানানোটাই বোকামি। অহি চোখ বন্ধ করেই গান ধরে।
সোনারও পালঙ্কের ঘরে
লিখে রেখে ছিলেম দ্বারে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেকো, ভালো থেকো
মনে রেখ এই আমারে
বুকের ভেতর নোনা ব্যাথা
চোখে আমার ঝরে কথা
এপার ওপার তোলপার একা
বুকের ভেতর নোনা ব্যাথা
চোখে আমার ঝরে কথা
এপার ওপার তোলপার একা
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেকো, ভালো থেকো
মনে রেখ এই আমারে
মেঘের ওপর আকাশ উড়ে
নদীর ওপার পাখির বাসা
মনে বন্ধু বড়ো আশা
মেঘের ওপর আকাশ ওড়ে
নদীর ওপার পাখির বাসা
মনে বন্ধু বড়ো আশা
যাও পাখি যারে উড়ে
তারে কইয়ো আমার হয়ে
চোখ জ্বলে যায় দেখব তারে
মন চলে যায় অদূর দূরে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেকো, ভালো থেকো
মনে রেখ এই আমারে
সোনারও পালঙ্কের ঘরে
লিখে রেখে ছিলেম দ্বারে
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভোলে না মোরে
সুখে থেকো, ভালো থেকো
মনে রেখ এই আমারে
অহির চোখের সামনে ভাসছে কিছু দৃশ্য। অহির চোখ দুটো জ্বলছে কিন্তু বৃষ্টি ঝড়ছে না। অহির এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আর থাকতে ইচ্ছে করে না। মানুষ যা চায় তা কেনো সে পায় না। অহি চোখ বন্ধ করে সোফায় শুয়ে পড়ে। অহির বন্ধ চোখের কোল ঘেঁষে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো সোফায়। অহি হঠাৎ করেই অনুভব করছে এই অশ্রুটুকু বিসর্জন দেওয়া ভীষণ প্রয়োজন ছিল। এই অশ্রু বিসর্জন দেওয়া ব্যাতিত এই বিষাক্ত রাতটা কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব হতো না।
আভিয়ান ঐশির সাথে ফোনে কথা বলছিল। অহির এমন বিষাধ গানের সুর শুনে অহির রুমের সামনে এসেছিল। দরজায় হালকা ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে যায়। বুঝতে পারে দরজাটা শুধু চাপানো ছিল। ঘরের ভিতর এক পা রাখতেই দেখে অহি সোফায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। এটা দেখে তার বুকের ভিতর ধক করে ওঠে। সে ভাবছে তার বোনও কী এক তরফা ভালোবাসার মতো ভুল করেছে? তাই এমন বিষাধ সুর। সে কিছুদিন ধরেই খেয়াল করছে অহির পরিবর্তন। সে ভেবেছিল পড়াশোনার জন্য হয়তো এমন চুপচাপ হয়ে গেছে। কিন্তু তেমনটা যে নয়। এটা প্রণয় গঠিত ব্যাপার।
আভিয়ান নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। অহির এমন অবস্থা মেনে নিতে পারছে না। তার বোনের চোখের এক ফোটা জলও যে তার সহ্য হয় না। সে ছোটবেলা থেকেই অহির কোনো আবদার অপূর্ণ রাখেনি। অহির সব ভালো লাগা ও পছন্দের জিনিস এনে দিয়েছে। কিন্তু এটা এনে দেওয়া যে সম্ভব নয়। সবকিছু জোর করে হলে ও ভালোবাসা জোর করে হয় না। যদি ভালোবাসা জোর করে হতো তাহলে ঐ ছেলেকে কিডন্যাপ করে হলেও এনে অহির সাথে বিয়ে দিয়ে দিত। কিন্তু তা তো সম্ভব না।
৩৪
কণা গালে হাত দিয়ে সোফার ওপর বসে আছে। সে অপেক্ষা করছে সারপ্রাইজ পাওয়ার জন্য। লোকটা বলেছিল বিকেলবেলা সারাপ্রাইজ দিবে। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো। কিন্তু এখনো সে সারপ্রাইজ পায়নি। কলিংবেলের শব্দে কণার ধ্যান ভাঙে।
কণা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে। দরজা খুলতেই দেখতে পায় একটা পার্সেল। আশেপাশে তাকায় কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। এবার পার্সেলটার দিকে তাকায়। পার্সেলের ওপর আবারও ধূলিকণা লেখা। কিন্তু এবার ধূলিকণা লেখা সুন্দর করে আর্ট করা। কণা পার্সেলটা নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
চলবে…….