#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১৭
আজকে প্রায় ৫ দিন পর কণা ভার্সিটিতে এসেছিল। সবকিছু নোট করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সাফাত তিশান আহম্মেদকে নিয়ে ডক্টর দেখাতে গেছে। তাই কণাকে একাই বাসায় যেতে হবে। কণা একটা নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখে আরুহিকে ঘিরে বেশকিছু ছেলে গোল করে ঘুরছে। যেমনটা ঘটেছিল ঠিক তার সাথে। আরুহির সাথেও কী একই ঘটনা ঘটতে চলেছে?
কণা ভাবছে তার আরুহিকে সাহায্য করা দরকার। কিন্তু সে নড়তে পারছে না। পা অবশ হয়ে আসছে। চোখের সামনে ভাসছে সেই ভয়ঙ্কর রাতের ঘটনা। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে মনে হচ্ছে। মাথা ভন ভন করে ঘুরছে। একটা ছেলে এসে আরুহির হাত ধরে ফেলে। এটা দেখেই কণার আত্না কেঁপে ওঠে। তাকে আরুহিকে সাহায্য করতেই হবে। সে আরেকটা মেয়ের ভবিষ্যৎ কিছুতেই নষ্ট হতে দিবে না।
সে দৌড়াতে যেয়েও দৌড়াতে পারছে না। পা দুটো নড়ছেই না। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে। কণা ঝাপসা ঝাপসা চোখে দেখে আরুহিদের সামনে একটা গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে একজন সুদর্শন পুরুষ বের হয়। নিঃসন্দেহে একটা মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ। কণার লোকটাকে চেনা চেনা লাগছে মনে হচ্ছে আগেও কোথাও দেখেছে। হঠাৎই কণার মনে পড়ে সে এই লোকটাকে টিভিতে দেখছে। কণা লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
সেই লোকটা আর কেউ না। সেই লোকটা আদিয়াত আয়মান তুর্ণ। আদিয়াতকে দেখে সেই ছেলেগুলো ভয় পেয়ে যায়। আদিয়াতের পিছন পিছন চারটা বডিগার্ড এসে ছেলেগুলোকে মেরে গাড়ি করে নিয়ে চলে যায়। আরুহি আদিয়াতের দিকে সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বলে,
থ্যাংক ইউ।
মেনশন নট। এটা আমার কর্তব্য ছিল। আর তুই আমার দায়িত্ব। অন্য কারো আমানত। আমানতের খেয়াল তো ঠিক ঠাক রাখতে হবে।
ও তোমার সাথে কথা বলতে বলতে আমি তো কণার কথায় ভুলে গেছি।
কণা কে?
আরুহি আদিয়াতের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে উত্তর দেয়,
আমার ক্লাসমেন্ট। আমাকে যখন ছেলেগুলো এ্যাটাক করে তখন আমি ওকে এখানেই দেখতে পেয়েছিলাম।
আদিয়াত একটু দুরে তাকিয়ে দেখে কেউ একজন পড়ে আছে। আদিয়াত দৌড়ে যায়। আরুহিও যায়। আরুহি গিয়ে দেখে কণা। আদিয়াত কণাকে কোলে তুলে নেয়। কোলে করে গাড়িতে এনে শুইয়ে দেয়। কণাকে নিয়ে হসপিটালের রাস্তার দিকে রওনা দেয়।
৪০
সাফাত আর বন্যা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। আজকে বন্যার বার্থডে সে উপলক্ষ্যেই এখানে আসা। সাফাত চেয়েছিল বন্যার বার্থডে সেলিব্রেইট করতে। কিন্তু বন্যা না করে দিয়েছে। সে নিজের বার্থডে উপলক্ষ্যে সাফাতের কাছে চেয়েছিল আজকে সারাদিন যাতে তাকে সময় দেই। সাফাতও রাজি হয়ে যায়। আজকে সারাদিন তারা অনেক ঘুরাঘুরি করেছে। রাস্তায় বসে ফুচকা খেয়েছে। কড়া রৌদ্দুরে হাতে হাত রেখে হেঁটেছে। রিকশা করে সারা শহর ঘুরেছে। পার্কে দৌড়া দৌড়ি করেছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আইসক্রিম খেয়েছে। সদ্য প্রেমে পড়া কিশোর কিশোরীর মতো করে সারাটা দিন কাটিয়েছে।
সাফাতের নজর যায় রেস্টুরেন্টের এক কোণে। যেখানে অহি আর একটা ছেলে বসে আছে। সাফাতের বুকের ভিতর চিন চিন ব্যথা অনুভব করে। সাফাত তার নজর সরিয়ে ফেলে। বন্যাতে তার দৃষ্টি স্থির করে। এর মাঝেই ওয়েটার খাবার দিয়ে যায়। অহি এতক্ষণ সাফাত আর বন্যাকে খেয়াল করেনি।
অহি সাফাত আর বন্যাকে খেয়াল করতেই সেই ছেলেটাকে বিদায় জানিয়ে সাফাত আর বন্যার কাছে আসে।
আরে সাফাত ভাই যে। কেমন আছো? এটা বুঝি আমাদের ভাবি।
অহির মুখে ভাই শুনে সাফাত একটু চমকে যায়। অহি তাকে আগে কখনোই ভাই ডাকতো না। তবু সাফাত নির্বিকার। কারণ মানুষ পরিবর্তনশীল এই কথাটা সাফাত মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। আর অহির সাথে তার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর দেখা হলো। এর মাঝে অহির বিহেভিয়ারের পরিবর্তন হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। অহির মুখে ভাবি ডাকটা শুনে বন্যার গাল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে রক্তিম আভা।
সাফাত বন্যার সাথে অহির পরিচয় করিয়ে দেয়। বন্যা আর অহি বক বক করছে সাফাত নির্বিকার চেয়ে আছে।
৪১
কেটে গেছে দুই মাস। এই দুই মাসে কারো কাছে নিয়ে এসেছে কারো প্রিয় মানুষকে আবার কারো কাছ থেকে দুরে সরিয়ে দিয়েছে তার প্রিয় মানুষকে। জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়। ভার্সিটির বেস্ট কাপলটা আজ ছন্নছাড়া। বিক্ষিপ্তভাবে জীবন যাপন করছে দুটো মানুষ। হঠাৎ করেই আভিয়ান আর ঐশির মাঝে দুরত্ব বেড়ে গেছে। যারা এক মুহূর্ত একজনকে ছাড়া আরেকজন থাকতে পারতো না তারা আজ বহুদুর। প্রত্যেকদিন ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতো। তারা এখন সপ্তাহেও দুই মিনিট কথা বলে না। অহি মন দিয়ে পড়াশোনা করছে। সাফাত আর বন্যার সম্পর্কে কোনো রকম ফাটল ধরেনি। বরং তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে। হয়তো কিছুদিনের মাঝেই বিয়ে করবে। নোমান সে তো কল্পনায় তার প্রেয়সীকে নিয়ে সংসার সাজাতে ব্যাস্ত। আরুহি আর আদ্রিয়ান রিলেশনে আছে। অবশ্য সেটা কেউ জানে না। আদ্রিয়ান আরুহি বলতে পাগল। আরুহিকে ছাড়া কিছু বুঝে না। কণাও ভালোবেসে ফেলেছে তার চিঠি প্রেরককে। আদ্রিয়ানের জন্য তার মনে এক বিন্দু পরিমাণ জায়গাও নেই। কণা তার চিঠি প্রেরককে এখনো দেখেনি। ইনফ্যাক্ট নামও জানে। সে জানতেও চায় না। ভালোবাসলে যে তাকে দেখতে হবে ছুঁতে হবে তার কোনো মানে নেই। অনুভবেও ভালোবাসা যায়। সেই ভালোবাসায় না থাকে কোনো চাওয়া আর না পাওয়া। আরুহির সাথে কণার একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে। ছোঁয়া ক্ষিপ্ত বাঘিনীর নেয় হয়ে ওঠেছে। সে যে কোনো উপায়ে আরুহির ক্ষতি করতে চায়।
____________
আরুহিদের বাসার ছাদে বসে আছে আরুহি আর কণা। আরুহি কণাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
এবার বলা শুরু করো।
দিনটা ছিল শনিবার। আমার ভার্সিটির প্রথম দিন। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির প্রথম দিন সবাই এক্সাইটেট থাকে তেমনি আমিও ছিলাম। আমি বরাবরই দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম। আমার কৌতুহলটাও বরাবরই বেশি ছিল। ভার্সিটি এসে সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। তখনি এক সিনিয়র আপু আর ভাইয়াতে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলি। ভাইয়াটা নির্বিকার থাকলেও আপুটা ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ভাবছিল আমি যদি স্যারকে বলে দেই তাহলে ক্যারিয়ার শেষ। আমি কিছু না বলে ওখান থেকে চলে আসি। অফ পিরিয়ডে ক্যান্টিনে গিয়েছিলাম। সেখানে এক সিনিয়র ভাইয়া এসে বলে আমাকে ডাকা হয়েছে। কে ডেকেছে সেটা বলেনি। বললাম না ঐ যে আমি কৌতূহলী প্রাণী। সবকিছুতেই কৌতূহল বেশি। আমি বিনা বাক্য বেয়ে ঐ ভাইয়াটার পিছন পিছন যেতে থাকি। ভাইয়াটা আমাকে একটা রুমে নিয়ে যায়। ঐ রুমে আরো অনেকগুলো ছেলে ছিল। দেখেই বুঝা যাচ্ছিল এরা ভার্সিটির গুন্ডা পান্ডা। একটা ছেলে বেঞ্চে বসে ছিল আর বাকিরা তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল। বেঞ্চে যে ছেলেটা বসে ছিল সে ছিল আদ্রিয়ান। তাদের সবার কথা বার্তায় বুঝতে পারছিলাম। তখনকার ঘটনার জন্য আমাকে এখানে ডাকা হয়েছে। আমি যাতে কাউকে কিছু না বলি তার জন্য থ্রেট দিতে নিয়ে আসছে। সবাই আদ্রিয়ানকে ধাক্কাচ্ছে কথা বলার জন্য। কিন্তু আদ্রিয়ান নির্বিকার কারো কোনো কথার উত্তর দিচ্ছে না। বরং আমার দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ানের এমন তাকিয়ে থাকা দেখে আমার রাগ হচ্ছিল। আবার এতক্ষণ ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য বিরক্তও হচ্ছিলাম। রাগে বিরক্তে চেঁচিয়ে বলি, আমাকে কী এখানে সঙয়ের মতো দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য নিয়ে আসছেন? সিনিয়র হইছেন বলে কী যা ইচ্ছে তাই করবেন? একটা ছেলে আমাকে ধমক দিতেই আদ্রিয়ান তার দিকে চোখ গরম করে তাকায়। হুট করেই আদ্রিয়ান বেঞ্চ থেকে নেমে পকেট থেকে একটা রিং বের করে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।
তারপর।
পানি দেও।
আরুহি কণার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়। কণা এক ঢোকে সম্পূর্ণ পানি খেয়ে ফেলে।
ওখানে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। বিষ্ময়ে আমার চোখও বড় বড় হয়ে গিয়েছিল।
কণার ফোন বেঁজে ওঠে। কণা ফোনটা রিসিভ করেই স্তব্ধ হয়ে যায়। ফোনটা হসপিটাল থেকে করেছিল। সাফাত এক্সিডেন্ট করেছে। সাফাতের অবস্থা বেশি ভালো না। কণা কী করবে বুঝতে পারছে না? নিজেকে পাগল পাগল লাগছে তার।
চলবে…….