তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব -১৬

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১৬

সত্যিই তো আদ্রিয়ান তার থেকে স্মার্ট সুন্দরী মেয়েকে পেয়ে তাকে ভুলে গেলো। আদ্রিয়ানের ভালোবাসা সে কখনোই ছিল না শুধু মোহ ছিল। কণার সাথে যে এতোদিন মিস বিহেভ করেছে এর জন্য ছোঁয়া একটুও অনুতপ্ত হয়নি। বরং তার মনে দাউ দাউ করে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। আরুহির এই সৌন্দর্য সে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবে।

আদ্রিয়ান বার কয়েক বার আরুহিকে ডাকে। আরুহি শুনেও না শোনার ভান করে। এক কথায় আরুহি আদ্রিয়ানকে পাত্তায় দিচ্ছে না। এটা আদ্রিয়ানের ইগোতে লাগে। আদ্রিয়ান আরুহির হাত ধরে ফেলে। আদ্রিয়ানের আরুহির হাত ধরতে হয়তো দেরি হয়েছে কিন্তু আরুহির আদ্রিয়ানকে থাপ্পড় মারতে দেরি হয়নি। সবাই অদ্ভুত ভাবে আদ্রিয়ান আরুহির দিকে তাকিয়ে আছে।

উৎসুক জনতা চেয়ে আছে এর পরে কি হয় সেটা দেখার জন্য। ছোঁয়া ক্ষিপ্ত বাঘিনার মতো আরুহির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। রেগে চিৎকার করে বলে,

তোর কত বড় সাহস তুই আমার কলিজার গায়ে হাত দিস। তোর এই হাত আমি কেটে ফেলবো। রূপের খুব অহংকার তোর তাই না? তোর এই অহংকার আমি মাটিতে মিশিয়ে দিব।

ছোঁয়া আরুহিকে থাপ্পড় দিতে গেলে আদ্রিয়ান ছোঁয়ার হাত ধরে ফেলে। আদ্রিয়ান ছোঁয়াকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় ছোঁয়ার গালে। ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এইসব কিছু দেখে একজন অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। এই এক তৃপ্তির হাসি।
ছোঁয়াকে আর আদ্রিয়ানকে অপমানিত হতে দেখে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে। আদ্রিয়ান ছোঁয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

জীবনে অনেক মেয়ে দেখছে তোর মতো বেশরম মেয়ে জীবনেও দেখি নাই। একটা মানুষ এতোটা ছ্যাঁচড়া কী করে হতে পারে? তোকে যেনো নেক্সট টাইম আমার বা আরুহির আশেপাশে না দেখি। আর তুই যদি আরুহির কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করিস এর ফল খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।

কথাগুলো বলেই আদ্রিয়ান আরুহির হাতটা শক্ত করে ধরে। আরুহি ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই আরো জুড়ে চেপে ধরে। ছোঁয়ার নকের আঁচড়ে আরুহির গলার কাছে অনেকটা ছিলে গেছে। আদ্রিয়ান আরুহির দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে,

একদম চুপচাপ আমার সাথে যাবে। ড্রেসিং কর়াতে হবে। নাহলে ইনফেকশন হয়ে যাবে।

আদ্রিয়ান আরুহির হাত ধরেই ড্রেসিং করাতে নিয়ে চলে যায়। ছোঁয়া ওদের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। ছোঁয়া অনুভব করছে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কারো সাথে দেখলে কেমন অনুভূতি হয়। এতক্ষণ ধরে সম্পূর্ণ ঘটনাটাই নিরবে দেখছিল কণা আর ঐশি। ঐশি তো খুশিতে রীতিমত লাফাচ্ছে। কিন্তু কণার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না কণার মনে কি চলছে। ঐশি ছোঁয়ার কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে এগিয়ে আসে। ঐশি ছোঁয়াকে উদ্দেশ্য করে ছোঁয়ার কথাগুলোই ব্যঙ্গ করে বলে,

একদিন বলেছিলাম না তোর ভালোবাসাকে আমি কেড়ে নিবা। দেখ তোর ভালোবাসা আজকে আমার। আমাকে ছাড়া আর কিছু বুঝে না। আদ্রিয়ানের মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলের পাশে শুধু আমার মতো একটা সুন্দরী মেয়েকেই মানায়।

কারো ভালোবাসা কেউ কেড়ে নিয়ে কখনো সুখী হতে পারে না। দেখলি তো আজকে তার নমুনা। আদ্রিয়ান তোকে না সৌন্দর্য ছাড়া কিছুই বুঝে না। আদ্রিয়ানের পাশে আরুহিকেই মানায়। তা বাবু নিজের ভালোবাসার হাতে থাপ্পড় খেয়ে কেমন লাগলো? তোকে তো বেশরম মেয়েও বলে গেলো।

ছোঁয়া লজ্জায় অপমানে দৌড়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যায়। ঐশি ছোঁয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

কেউ কাউকে ঠকিয়ে কখনো সুখী হতে পারে না।

সত্যিকারের ভালোবাসার জন্য সুন্দর চেহারা বা অঢেল টাকার প্রয়োজন নেই। একটি সুন্দর আর পবিত্র মনই এর জন্য যথেষ্ঠ।

৩৭

ছোঁয়া অমিতকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। অমিত অস্থির হয়ে নিজের বোনের কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। ছোঁয়ার কান্না থামার পরিবর্তে আরো বেড়ে যাচ্ছে।

ছোঁয়া কী হয়ছে? এভাবে কাঁদছিস কেনো? বলবি তো আমাকে? তুই না বললে আমি বুঝবো কী করে তুই কেনো কাঁদছিস?

ভাইয়া ও আমাকে ঠকিয়েছে। ও আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি। এতোদিন আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছে। আজকে আমার থেকে সুন্দরী মেয়ে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছে। আমাকে নিজের জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।

ছোঁয়া ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা একে একে খুলে বলে অমিতকে। সবকিছু শুনে রাগে অমিতে ছোঁয়াল শক্ত হয়ে আসে।

ঐ কুত্তার বাচ্চার কত বড় সাহস আমার বোনের গায়ে হাত তুলেছে। ওকে আমি শেষ করে দিব।

না ভাইয়া তুমি আদ্রিয়ানের কিছু করো না। আমি আদ্রিয়ানকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া বাঁচবো না। তুমি আরুহির একটা ব্যবস্থা কর।
আরুহির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই তো আদ্রিয়ান আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। তুমি আরুহির ঐ সৌন্দর্যকেই শেষ করে দাও।

অমিত কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসে।

৩৮

আবারও ঐ অগান্তুকের সামনে একটা লোক পড়ে আছে। হাত পা বাধা। শরীরে অসংখ্য মারের দাগ। লোকটা চোখের ইশারা করতেই একটা ছেলে এসে ঐ লোকটাকে মাটি থেকে তুলে হাত পায়ের বাধন খুলে দেয়। মুখে পানি দেয় লোকটা পিটপিট করে চোখ খুলে। অগান্তুক ঐ লোকটার মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে বলে,

দেখ তোকে লাস্ট বারের মতো বলছি। যদি এখনও সত্যিটা শিকার না করিস তাহলে তোকে জানে মেরে দিব। বল তোকে কে বলেছিল আমার মিহুপাখির মুখে এসিড মারতে?

বলবো না।

দেখ আমার মাথা গরম করিস না। আমার মাথা গরম হয়ে গেলে নিজেকে কনট্রোল করতে পারি না। গুলি করে তোর মাথার খুলি উড়িয়ে দিতেও দুই বার ভাববো না।

নাম না বললে তো শুধু আমি একা মরবো। নাম বললে আমি সহ আমার পুরো পরিবারকে মরতে হবে। ওরা আমাদের বাঁচতে দিবে না।

সামনে বসে থাকা লোকটা কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসে। ঐ ছেলেটাকে ইশারা করতেই একটা ভিডিও বের করে।

প্লিজ না আমার পরিবারের কিছু করবেন নাহ। আমি বলবো। আমি নাম বলবো।

বল তাহলে।

নামটা শুনেই লোকটা হিংস্র হয়ে ওঠে। চোখ মুখ দিয়ে যেনো আগুন বের হয়ে আসছে। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলেছে। তার সন্দেহটাই একদম ঠিক। ঐ লোকটার মাথায় পর পর তিনটা গুলি করে দেয়।

তোদের মতো কীটদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। টাকার জন্য অন্যের জীবন নরক করে দিতে দুই বার ভাবে না। তাদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। তোরা বেঁচে থাকলে কোনো মা-বোন একা নিশ্চিন্তে ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না।

৩৯

কণা আবারও একই স্বপ্ন দেখে মাঝ রাতে চিৎকার করে ওঠে। কণার চিৎকার শুনে সাফাত আর আহসিন আহম্মেদ দৌড়ে আসে। কণাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কণা পাগলের মতো ব্যবহার করছে। এবারের স্বপ্নটা যে প্রতিদিনের থেকে অনেক বেশি ভয়ংকর। কণা নিজেকে নিজেই আঘাত করছে। সাফাত আর তাহসিন আহম্মেদ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সাফাত জোর করে কণাকে স্লিপিং পিল খাইয়ে দেয়।

_____________

কেটে গেছে দুই সপ্তাহ। সবার জীবনেই একটু পরিবর্তন এসেছে। কণা ঐ দিনের পর থেকে নিজেকে আরো গুটিয়ে নিয়েছে। প্রয়োজনের বাইরে কারো সাথে একটা কথাও বলে না। ঠিক মতো ভার্সিটিতেও যায় না। আরুশি আর আদ্রিয়ান অনেকটা ক্লোজ হয়ে গেছে। অহি চীন যাওয়ার জন্য এপ্লাই করেছে। যদি সে চান্স পেয়ে যায়। সারাজীবনের মতো এই দেশ ছেড়ে চলে যাবে। আর ফিরে আসবে না। ওখানে সেটেল্ড হয়ে যেতে পারলে পুরো পরিবারকে ওখানে নিয়ে যাবে। কোনো পিছুটান রাখবে না। আভিয়ান আর ঐশির সম্পর্কে একটু তিক্ততা এসে গেছে। আভিয়ান ঐশিকে আগের মতো সময় দেয় না। ঠিক মতো কথাও বলে না। এই নিয়ে ঐশির মনে অভিমানের পাহাড় জমেছে। সাফাত আর বন্যার সম্পর্কটা আগের মতোই আছে।

আজকে প্রায় ৫ দিন পর কণা ভার্সিটিতে এসেছিল। সবকিছু নোট করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সাফাত তিশান আহম্মেদকে নিয়ে ডক্টর দেখাতে গেছে। তাই কণাকে একাই বাসায় যেতে হবে। কণা একটা নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখে আরুহিকে ঘিরে বেশকিছু ছেলে গোল করে ঘুরছে। যেমনটা ঘটেছিল ঠিক তার সাথে। আরুহির সাথেও কী একই ঘটনা ঘটতে চলেছে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here