#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৪৫
আদি রেগে তার রুমে চলে আসে। তার রাগ এখনো কমচ্ছে না আজ অন্তুকে যে অবস্থাতে সে দেখেছে, না জানি ৪ বছর ধরে তার সাথে কি কি হয়েছে আদি মাথা চেপে বসে থাকে বেডে। আদিবা আদির রুমে এসে রুম লক করে আদির কাছে এসে তার কাধে হাত রাখতে। হঠাৎ কাধে কারো হাত পরতেই আদি না দেখে বুঝে যায় কে এসেছে। আদি আদিবার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে তার কোমর জড়িয়ে ধরে তার সাথে মিশিয়ে নে। আকাম্মসিক আদির কাজে আদিবা হকচকিয়ে যায় কিন্তু নিজেকে ধাতস্ত করে আদির মাথায় হাত বুলাতে লাগে সে আদির মনের আবস্থা বুঝছতে পারছে। একজন ভাই তার বোনকে এমন অবস্থায় দেখতে চায় না।
আদিঃ আদিবা আমার ছোট্ট অন্তুপাখি ভালো নেই। আমার অন্তুপাখি তার দাদাভাইয়ের থেকে কথা লুকাতে শিক্ষে গেছে, তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিক্ষে গেছে। আমি তাকে খুশি রাখতে পারিনি আমি কেমন দাদাভাই তাইলে আমি আমি ভালো দাদাভাই হতে পারিনি।
আদি ছোট বাচ্চার মতো কান্না করতে লাগলো আদিবা আদিকে এতোটা ভেঙে পরতে কখন দেখেনি তার মনে প্রশ্ন জাগে সে যখন আদিকে ছেড়ে চলে যায় তখন তো আদি একলা ছিলো তখন তার কি অবস্থা হয়েছিলো। এখন অন্তুর জন্য যতটা ভেঙে পরেছে তেমনটা কি তার জন্য ভেঙে পরেছিলো, না এর থেকেও বেশি পরেছিলো আদিবার ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। আদিবা বললো..
আদিবাঃ আদি প্লিজ কান্না করবেন না অন্তুর ঠিক আছে। আর কে বলেছে আপনি তার ভালো দাদাভাই না আপনি বেস্ট দাদাভাই বুঝলেন।
আদিঃ আমার কষ্ট হচ্ছে ভীষন আদিবা আমি আম্মুর কথা রাখতে পারিনি আমি অন্তুকে খুশি রাখতে পারিনি কষ্ট থেকে দূরে রাখতে পারিনি। আমার নিজের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে কেন আমি বিদেশ গেলে কেন কেন? আমি যদি না যেতাম তাইলে আমার অন্তুপাখির জীবন অন্যরকম থাকতো সে নিজের লাইফে হেপ্পি থাকতো আর না তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে সব আমার দোষ সব।
বলে আদিবাকে আরো জোরে আখড়ে ধরে আদিবা আদির শেষ কথা শুনে থমকে যায় সত্যি তো আদি বিদেশে না গেলে তাদের জীবনে অন্যরকম থাকতো তার একে ওপরের থেকে কখনো দূরে যেতো না আর না সে এতোটা কষ্ট ভোগ করতো না আদিকে করতে হতো। আদি তাকে ছেড়ে দিয়ে বলে…
আদিঃ আদু প্লিজ যাও আমি নিজের মধ্যে নেই কিছু করে বসলে তোমার কষ্ট হবে যাও।
আদির কথায় আদিবা তার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় সে আদির হাব ভাব বুঝার চেষ্টা করছে। আদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছে আদিবার দিকে একবারো তাকিয়ে দেখেনি সে। আদিবা তার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সে পুরো ভেজা তার জামা গায়ের সাথে লেপ্টে আছে, তা দেখে সে নিজেই লজ্জা পায় তাইলে আদি এই কারনে তাকে যেতে বলছে। আদিবা চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই আদি আদিবার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আদিবার হাতে হঠাৎ টান পরতেই চমকে যায় সে। আদিবা আদির দিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে, আদি আদিবার দিকে তাকিয়ে থেকে তার ঠোঁট আদিবার ঠোঁটে মিশিয়ে দিলো। আদিবা আবেগে চোখ বন্ধ করে নেয়, সে নড়ার ক্ষমতা পর্যন্ত হরিয়ে ফলে আদির স্পর্শে। আদি আদিবাকে ছেড়ে দিলে আদিবা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগে, আদিবা আদিকে তার কাছে আসতে দেখে সে পিছিয়ে গিয়ে বললো…
আদিবাঃ আদি প্লিজ…
আদিবার কথা আদির কার্ণপনে গেলো না আদি নেশাগ্রস্ত কন্ঠে বললো… তোমাকে আগেই বলেছিলাম চলে যাও কিন্তু তুমি গেলে না তাই এখন আমি নিজেকে আটকে রাখতে পারবো না। তাই প্লিজ কষ্ট হলেও সহ্য করে নাও আর সরি আদুমনি…
বলে আদিবার মধ্যে ডুব দেয় আর আদিবাও আদিকে বাধ্য প্রদান করতে পারে না। সে জানে আদি আর নিজের মধ্যে নেই তাই মেনে নেওয়া বেটার আর কেন মানবে না সে আদি ভালোবাসর পাবার লোভ সে সামলাতে পারে না সে ও আদির ডাকে সারা দেয়…… এক হতে লাগে তাদের ভালোবাসা……
___________________________________
তুমি নিরবে কাছে এসে ধরা দিলে আমায়, কিন্তু আমি ধরতে পারিনি তোমায়….
তুমি গোপনে আমার খেয়াল রেখেছিলে, তবুও বুঝতে পারিনি আমি….
তুমি নতুনরুপে সামনে এলে আমার, আমি অনুভব করতে পারেনি তোমায়….
এ কেমন ভালোবাসা যে নিজের অস্তিত্বকে চিনতে পারিনি আমি….
®সন্ধ্যা হালদার (কপি করবেন না প্লিজ)
একলা মনে গুনগুনিয়ে যাচ্ছে অন্তু। আজকের আকাশটা কেমন মেঘচ্ছন্ন তার সাথে অন্তুর মনও। আজ ৭দিন হয়ে গেছে তারা কক্সবাজার থেকে এসেছে কিন্তু সে এই সাতদিন নিজের রুম থেকে বের হয় নি, এমনকি কারো সাথে কথাও বলে নি। অন্তু কেন করছে এমনটা সেটা কেউ বুঝতে পারছে না, আদি অন্তুর সাথে কথা বলতে এসেছিলো কিন্তু সে কথা বলেনি। অর্ণব এসব জানলে অন্তুকে অনেক বার ফোন করে কিন্তু অন্তু তার ফোন ধরেনি। তার মধ্যে কি চলছে সে নিজেও জানে না হঠাৎ কারো আওয়াজ পেতে সে পিছনে ঘুরে দেখে আয়রা আর অরনি এসেছে সাথে অয়নবাবু। অন্তু রুমে এসে বেডে বসে সাথে তারা ও বসলো। অরনি অন্তুর মুখের ভাব বোঝার চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছু বুঝতে পারছে না তার দিদিয়া রেগে আছে না-কি কষ্টে আছে। আয়রা অয়নকে বেডে শুয়ে দিলে অন্তু তার হাত ধরে কি সব বলতে লাগলো অরনি আয়রা একে ওপরকে দেখে শুকনো মুখে বসে রইলো। হঠাৎ অন্তুর একটা কথায় তারা চমকে যায়…
অন্তুঃ ভাবি পৃথিবীতে মানুষ বহুরূপী হয় তাই না। মানে কিছু মানুষের সামনে এক পিছনে অরেক।
আয়রা ঢোক গিলে বললো… হুম হয় তো এমন কিন্তু তুমি কেন জিজ্ঞেস করলে?
অন্তু মুচকি হেসে বললো… আচ্ছা ভাবি ধরো তুমি কাউকে প্রচন্ড ভালোবাসো কিন্তু কিছু দূর্ঘটনার কারনে সে তার আগের রুপে ফিরে না এসে অন্যরুপে আসে তাইলে তুমি তাকে চিনতে সক্ষম হবে, না-কি তাকে অন্য কেউ ভেবে দূরে সরিয়ে দেবে?
আয়রা, অরনি অন্তু দ্বিধাযুক্ত প্রশ্ন শুনে ‘থ’ হয়ে যায়। অরনি চোখ ছোট ছোট করে অন্তুর দিকে তাকিয়ে আছে কেন অন্তু এই রকম প্রশ্ন করলো বলে সে কি কিছু বুঝে গেছে না অন্য কথা। আয়রা বিস্ময় কাটিয়ে বললো…
আয়রাঃ নতুন রুপে কাউকে চেনা যায় না অন্তু কিন্তু তার ভালোবাসা তাকে অনুভব করাতে পারে যে সেই ব্যক্তিটি তার আগের ভালোবাসা।
অন্তুর আয়রার উত্তরে সন্তুষ্টি প্রসন্ন করে কিন্তু কিছু বললো না আয়রা অন্তুকে পর্যবেক্ষণ করে কিছু পেলো না অরনি ও না। অন্তু আবার বললো…
অন্তুঃ ভাবি দাদাভাই কোথায়?
আয়রাঃ দাদাভাই কাজের জন্য বাবার সাথে চট্টগ্রাম গিয়েছে পরশু চলে আসবে কেন কিছু দরকার ছিলো?
অন্তুঃ না এমনি
বলে অয়নের সাথে খেলতে লাগলো সে আয়রা ও কিছু বললো না আর না অরনি বলো…অন্তুর মনে কি চলছে সে শুধু সেই জানে। সামনে কি হবে বা কি হতে চলছে কেউ জানে না….
___________________________________
আম্মু জেদ করে না আমার কথা শোনও তোমার মাম্মাম তোমার সাথে দেখা করতে আসবে তো প্লিজ জেদ করে না আমার কাছে আসো অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে হবে, না হলে শরীর খারাপ করবে… বলে অর্ণব আনভির কাছে যেতে নিলে সে সরে অন্যদিকে চলে যায়। আনভির কাজে অর্ণব আবার হতাশ হয়
আজ ৭ দিন হলো অন্তু আনভির সাথে দেখা করতে আসে না আর না কথা বলে এতে আনভি কষ্ট পাচ্ছে সে জেদ ধরে বসে আছে তার মাম্মাকে তার চাই যেভাবে হোক তার মাম্মাম চায়। কিন্তু অর্ণব তা করতে পারছে না অন্তু তার সাথে কথা বলছে না কি হয়েছে সে সেটাও বুঝতে পারছে না। হঠাৎ অন্তুর এতো পরিবর্তন হলো কেন সে ভেবে পাচ্ছে না
অর্ণব আবার আনভিকে ধরতে নিলে আনভি মুখ ফুলিয়ে বললো… পাপা তুমি পঁচা কথা দিয়ে কথা রাখো না তুমি বলে আমার মাম্মাকে এনে দেবে তুমি দিলে না এনে।
অর্ণব আনভিকে তার কাছে নিয়ে এসে কোলে বসিয়ে বললো…. আম্মু তোমার মাম্মামের শরীল খারাপ হয়েছে সে সুস্থ হলে তোমার কাছে চলে আসবে দেখো। এখন একটু ঘুমাও
আনভি মুখ ফুলিয়ে থাকলো কিছু বলো না তা দেখে অর্ণব আনভির মাথা নিজের ঘাড়ের ওপর রেখে তাকে নিয়ে ঘুরতে লাগলো কিছুসময় পর আনভি ঘুমিয়ে গেলে সে তাকে শুয়ে দিয়ে উঠতে নিলে তার ফোনে একটা ফোন আসে ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার দেখে বিরক্ত হয়ে রিসিভ করে বললো…
অর্ণবঃ আপনার সমস্যা কি বলবেন ফোন করে কথা বলছেন না কেন। কি হলো কিছু বলুন।
ওপাশথেকে শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ আসছে কিছু বলছে না তা দেখে অর্ণব রেগে গিয়ে বললো… ফাজলামি করছেন আমার সাথে আপনি হ্যাঁ। রাতবিরাতে নাটক করছেন কথা বলবেন না যখন ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করছেন কেন। ভাই ৭দিন হলো এখন একটু শান্তি দিন প্রতিদিন ফোন করেন কিন্তু কথা বলে না। টাকা কি বেশি হয়েছে না-কি… হ্যালো
আর বলতে পারে বা ওপাশথেকে ফোন কেটে যায়। অর্ণব বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে লাইট ওফ করে এসে শুয়ে পরে আজ ৭ দিন ধরে এই এক টাইমে কেউ ফোন দেয় কিন্তু কথা বলে না অর্ণব ফোন কেটে দিলে বার বার ফোন করে ব্লকে ফেলালে নতুন নাম্বার থেকে ফোন করে অর্ণবের নিজের জ্বালায় মরছে তার ওপর নতুন মুসিবত এসে জুটেছে এক….
__________________________________
এদিকে ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে অন্তু হঠাৎ উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো, পাগলের মতো হাসা যাকে বলে। একটু আগে সেই অর্ণবকে ফোন করেছিলো। সেই ৭দিন ধরে প্রতিরাতে অর্ণবকে ফোন করে ডিস্টার্ব করে। অর্ণবের বিরক্তবোধ করা, উচ্চ স্বরে তাকে গাল পারা তার ভালো লাগছে কিছু কিছু বকার মধ্যে ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে। অন্তু হাসি থামিয়ে ভাবতে লাগলো ৭দিন আগে যখন সে অর্ণবের ‘রোদের’ চোখে তাকায় তখন অর্ণবের ‘রোদের’ চোখের রং কালো ছিলো না বাদামি ছিলো তা দেখে অন্তু স্তব্ধ হয়ে যায় সে ভাবে তাইলে সেদিন অর্ণবের ‘রোদের’ ওয়াশরুমে যে লেন্স ছিলো তা অর্ণব ব্যবহার করতো। তারপর যখন অর্ণবের ‘রোদের’ বুকের বা পাশে নিজের নামের টেটু দেখে তখন তার মনে সন্দেহ জন্ম নেয় রোদ আসলে কে তার পরিচয় কি অর্ণব যেখানে তার নাম লিখেছিলো ঠিক সেখানে রোদের বুকে কেন তার নাম লেখা। নামটা দেখে বুঝেছিলো এটা নতুন না অনেক পুরনো তাই তখন অজ্ঞাত হবার নাটক করে। অর্ণব যখন তাকে কোলে করে পাগলের মতো তাকে রুমে নিয়ে এসে অরনির ওপর রাগ করলো তখন সে বুঝতে পারে না কিন্তু যখন তার দাদাভাই রোদকে অর্ণব বলে সম্বর্ধন করে তখন তার সব কিছু স্পষ্ট হয় একে একে ওই রুমে যা কিছু কথা হয় সে নিজের কানে সব শোনে শেষে অর্ণব যখন তাকে তার মনের কথা গুলো বলো তখন তার ইচ্ছে করছিলো অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে তাকে জিজ্ঞেস করি… কেন এতো দিন তাকে তার নিজের পরিচয় দিলো না, কেন তাকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখলো, কেন তাকে নিয়ে গেলো না এই নরক থেকে, কেন কেন?… আস্তে আস্তে অন্তুর মনে অর্ণবের জন্য অভিমান জন্ম নিলো, রাগ, খোপ, জেদ সব তার মাথায় চেপে বসে তার মাথায় একটা প্রশ্ন আসলো… আনভি কে তার সাথে অর্ণবের কি সম্পর্ক, সে কি নতুন করে কারোর মায়া জড়িয়েছে না কি রোদের মেয়ে…. অন্তুর কাছে তার প্রশ্নের উত্তর ছিলো না তাই সে চুপ হয়ে যায়। বাড়িতে এসে কারোর সাথে কথা বলে না সবাই অর্ণবের কথা জানতো কিন্তু কেউ তাকে বলেনি সবাই তো দেখেছে সে অর্ণবের জন্য কেমন ছটফট করতো তারপরেও বলেনি তাই তার বাড়ির সবার প্রতি একটা চাপা অভিমান কাজ করছে। আর অর্ণবকে ডিস্টার্ব করতে লাগলো বুঝতে চেষ্টা করলো সে কি আগের মতো তাকে ভালো বাসে না-কি না..
অন্তুঃ অর্ণব আমার সাথে তুমি যা কিছু করেছো তার জবাব তুমি আমাকে দিতে বাধ্য। এতো কিসের লুকোচুরি ছিলো তোমার যে সবাইকে তোমার পরিচয় দিতে পারলে আমাকে না। এই তোমার ভালোবাসা এই তোমার প্রমিস তোমার জন্য প্রতিনিয়ত আমি কষ্ট পেয়েছি কিন্তু তুমি সব জানা সত্বেও আমার কাছে এসে বলো নি অন্তু এই তো আমি তোমার অর্ণব তোমার ভালোবাসা… আমার তোমাকে প্রয়োজন ছিলো অর্ণব কিন্তু তুমি ছিলে না আমার প্রয়োজনে। আমার মেয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যায় সেটা কি তুমি জানতে যদি জানতে তাইলে কেন আসো নি আমার কাছে কেন বলোনি অন্তু ভেঙ্গে পরো না সব ঠিক হয়ে যাবে আমি আছি তো..কেন আসো নি তুমি কেন বলো নি কেন কেন..
বলে কান্না করতে লাগলো অন্তু, চোখের জল মুছে বললে… সব প্রশ্নে উত্তর আমার চায় এট এনি কোস্ট। তোমার সমুখীন হবার সময় এসে গেছে অর্ণব তৈরি থেকো আমার প্রশ্নের জন্যে….
কিছু প্রশ্নের উত্তর হয় না আবার কিছু উত্তরের প্রশ্ন হয় না….
পরিস্থিতির চাপে সব এলোমেলো হয়ে যায়, কারোর হাতে তখন থাকে না কিছু….
জেদের বসে কখনো ভুল ডিসিশন নিতে হয় না, তাইলে পরে গিয়ে নিজেকেই পস্তাতে হয়….
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৪৬ (মিলনমেলা ধামাকা-১)
আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে আগের রুপে দেখে থমকে যায় অন্তু। সেই গোলাপি রঙের শাড়ি, হাত ভরতি চুরি, কপালে টিপ, খোলা চুল, নাকে অর্ণবের দেয়া নাকফুল, হাতে সেই চুরি সব পরে আয়ানর সামনে দাড়িয়ে আছে সে, হ্যাঁ সেই সাজ মানে অর্ণবকে যেদিন বিয়ে করে সেই সাজ। আয়নায় আবার একবার দেখে নিয়ে হাতে পার্স আর ফোন নিয়ে কাউকে কিছু না বলে সকাল সকাল বেরিয়ে যায় সে, কোথায় গেলো, কার কাছে গেলো, কেউ জানে না সে নিজের মতো কোথাও চলে যায়…..আজ তার সব প্রশ্নের উত্তর পাবে সে….
_____________________________________
বিকেলে,,,
অর্ণব তার কাজ করছে আর প্রাপ্য আদিবার সাথে কথা বলছে কিছু নিয়ে ঠিক তখনি অর্ণবের ফোনে ফোন আসে একটা। অর্ণব ফোন হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে রিসিব করে বললো….
অর্ণবঃ কি হয়েছে অরু ফোন করছো কেন?
অর্ণবের কথা শুনে আদিবা, প্রাপ্য তার দিকে তাকিয়ে বুঝতে চায় কি হয়েছে। অরনি হবতম্ভ হয়ে চিন্তিত কন্ঠে বললো…
অরনিঃ ভাইয়া দিদিয়া কে সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে কাউকে কিছু না বলে কোথাও চলে গেছে।
অরনির কথা শুনে অর্ণবে নিঃশ্বাস যেন আটকে যায় কি বললো অরনি অন্তুকে পাওয়া যাচ্ছে না মানে। অন্তু তো কাউকে না বলে কোথাও যায় না তাইলে আজ কি হলো…
অর্ণবঃ পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি অরু সে কি ছোট বাচ্চা পাওয়া যাবে না। আর সকাল থেকে বাড়িতে নেয় তুমি এখন আমাকে বলছো।
অরনি ভয়ে ভয়ে বললো… ভাইয়া আমরা মনে করেছিলাম দিদিয়া রুমে আছে কিন্তু একটু আগে গিয়ে দেখি সে নেই। দিদুন চিন্তা করছে দাদাভাই, আব্বু, আয়ান ভাইয়া কেউ বাড়িতে নেয়। আমি সবাইকে জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু কেউ দিদিয়াকে বাইরে যেতে দেখেনি কিন্তু সে বাড়িতেও নেই।
অর্ণবঃ আমি দেখছি তুমি টেনশন করো না ফোন রাখলাম।
ফোন রাখতেই রাজ্যর সমস্ত চিন্তা এসে ভর করলো অর্ণবর মাথায়। অন্তু কোথায় গেলো, কেমন আছে সে, কোনো বিপদ হয়নি তো অর্ণব মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। আদিবা প্রাপ্য অর্ণবকে এভাবে দেখে চিন্তিত হয় তারা। কি এমন বললো অরনি ফোনে যে অর্ণবের অবস্থা এমন হলো। প্রাপ্য সব চিন্তা বাদে সে বললো..
প্রাপ্যঃ ভাইয়া কি হয়েছে অরনি ফোনে কি বলো? কাকে পাওয়া যাচ্ছে না?
অর্ণব মাথা নিচু করে বললো… অন্তুকে সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় গেছে কেউ জানে না।
অর্ণবের কথা শুনে দুজনি স্কট কি হলো বুঝলো না তারা, আর হঠাৎ অন্তু কাউকে কিছু না বলে কোথায় চলে যাবে। অর্ণব উঠে দাড়িয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে কাউকে কিছু না বলে অফিস থেকে হবতম্ভ হয়ে বেরিয়ে যায়। তার এখন অন্তুকে খোঁজা লাগবে সে কোথায় আছে, কি ভাবে আছে সে জানে না কিন্তু তাকে পেতেই হবে। এদিকে অর্ণবকে এভাবে কিছু না বলে চলে যেতে দেখে আদিবা প্রাপ্য হতভম্ব হয়ে যায় তারা বিষয়টা স্পষ্ট জানে না এখন তারা কি করবে তারা জানে না…
__________________________________
ঢাকার অলিগলি অর্ণব পাগলের মতো খুজেছে অন্তুকে কিন্তু কোথাও খুজে পায়নি। অর্ণব অন্তুর চেনা জানা সবার জায়গায় সে খুজে এসেছে কিন্তু অন্তু দেখা মেলেনি। অর্ণব চৌধুরী বাড়িতে ও ফোন করে যদি অন্তু আনভির কাছে যায় সেটা ভেবে কিন্তু তার বাবাই বলে অন্তু সেখানে যায়নি অর্ণব হতাশ হয়। তার চিন্তা হচ্ছে মেয়েটা না বলে কোথায় গেলে অর্ণব জানে অন্তুর জেদ, রাগ, অভিমান, সম্পর্কে এতো সহজে তাকে পাওয়া যাবে না যতখন না সে নিজে থেকে ধরা দেবে। অর্ণব গাড়ি ঘুরিয়ে বনানী দিকে নিলে তার ফোনে ফোন আসে। সে অন্তু ফোন মনে করে ফোন নিলে ওই অচেনা নাম্বার দেখে মেজাজ খারাপ হতে লাগলো। একে তো অন্তুর টেনশনে মরছে তার ওপর নতুন প্যারা, অর্ণব ফোন কেটে দিয়ে রেখে দেয়। তারপরও সেই নাম্বার থেকে একের পর এক ফোন আসতে থাকে অবশেষে না পেরে ফোন তুলে কিছু কঠিন কথা বলবে তার আগে ওপাশ থেকে মিহিত কন্ঠে বলে উঠলো…” অর্ণব “। চেনা কষ্ঠের স্বর শুনে অর্ণব থমকে যায় সাথে সাথে গাড়িয়ো থামিয়ে দেয়। অতিপরিচিত ডাক শুনে অর্ণবের শিরদাঁড়া শীতল হয় যায় মন বলছে এটা অন্তু কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে অন্তু কি করে হবে সে তো তার পরিচায় যানে না তাইলে কে? অর্ণবকে কিছু বলতে না দেখে অন্তু আবার বললো…
অন্তুঃ আমার কন্ঠে স্বরো ভুলে গেছো না-কি আমাকে ও পুরোপুরি ভুলে গেছো অর্ণব…[তেজি কন্ঠে বললো]
অর্ণবের এবার অন্তুকে চিনতে ভুল হলো না এই রাগ এই জেদ শুধু অন্তুরি হতে পারে অর্ণব হাসলো সে বুঝে গেছে অন্তু তার বিষয়ে সব জেনে গেছে তার জন্য এই ৭দিন নিজেকে প্রস্তুতি করছে তার সামনে আসতে। অর্ণব স্লো ভয়েজে বললো…
অর্ণবঃ কোথায় তুমি?
অন্তু মুচকি হেসে বলো… তোমার আমার ছোট্ট পৃথিবীতে।
অর্ণব জানে অন্তু কোথা কার কথা বলছে সে বললো.. জাস্ট ১৫মিনিট ওয়েট করো আমি আসছি।
বলে ফোন রেখে গাড়ি তার বাড্ডার ফ্ল্যাটের দিকে নিয়ে নিলো সে, সাথে প্রাপ্যকে ও মেসেজ করে দেয় সে অন্তুকে পেয়েছে তাদের কে চিন্তা করতে মানা করে। অর্ণবের অবাক করা বিষয় হলো অন্তু তার বিষয়ে সব জানা সত্বেও তার কাছে কিছু জানতে চায়নি বরং তাকে ফোন করে ডিস্টার্ব করেছে এই কয়েক দিন এটা তার কাছে ঝড়ের পূর্বাভাস লাগছে। অন্তুর কন্ঠ শুনে স্বাভাবিক লাগলেও অন্তু ভেতরে অনেক কিছু চলছে সে জানে। অর্ণব বুঝতে পেরেছে আজ তাকে অনেক প্রশ্নের সমূর্খীন হতে হবে। অর্ণব তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাচ্ছে সে, আজ ৪বছর পর সে অর্ণব হয়ে তার অন্তুর কাছে যাচ্ছে অনেক কিছু বলা, শোনার আছে তার সে খুশি ভীষণ খুশি আজ। এদিকে অর্ণব ফোন রাখতেই অন্তুর চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু বিসর্জন করে এতোখন নিজেকে স্বাভাবিক রাখলেও এখন রাখতে পারছে না অনেক কষ্ট হচ্ছে বুকের মাঝে তার। অন্তু দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে রইলো….
______________________________________
মেঘের গর্জনে চারিদিকে নেমে এলো বৃষ্টি, কেউ কেউ বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য ছাউনিতে যাচ্ছে, কেউবা বৃষ্টি বিলাস করে আনন্দ করছে। সন্ধ্যা নেমে এসেছে পৃথিবীর বুকে সাথে বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়া। অর্ণবের গাড়ি তার ফ্ল্যাটের বাইরে রেখে দৌড়ে তার ফ্ল্যাটের দরজার কাছে আসে। অর্ণব নিজেকে সামলে হালকা হাতে ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। সে অবাক হয় কিছুটা কিন্তু কিছু না ভেবে সে ভেতরে এসে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে অন্তু নেই দরজা আটকিয়ে পিছন ঘুরে কয়েক কদম গিয়ে থেমে যা তার পা, দেওয়াল সাথে ঘেঁষে বসে আছে এক রুপবতী তরী এক মুহূর্তের জন্য অর্ণবে হার্ট বিট মিস করলো সে কাকে দেখছে তার চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না, অবিকল ৪বছর আগের সেই অন্তু লাগছে তার কাছে। অর্ণব নিজেকে ধাতস্থ করে অন্তুর দিকে এগোতে নিলে অন্তুর কঠিক কন্ঠের স্বর শুনে থমকে যায় অন্তু বললো…
অন্তুঃ যেখানে আছো সেখানেই দাঁড়াও। এক পা এগোবে না আমার দিকে।
বলে অন্তু উঠে দাড়ায় চোখের জল মুছে অর্ণবের প্রানে তাকায়। অর্ণব অন্তুকে দেখে হতবিহ্বল হয়ে যায় সে, কি অবস্থা করেছে মেয়েটা কেঁদে কেটে, চোখের কাজল লেপ্টে আছে, মুখ, নাক লালা হয়ে আছে কান্নার ফলে, চুলগুলো এলোমেলো শাড়ি কুচিগুলো এলোমেলো, এ এক অগোছালো অন্তুকে দেখছে অর্ণব। অর্ণবের কাছে অন্তুর এই রুপ তাকে আকৃষ্ট করছে। অর্ণব নেশাক্ত চোখে অন্তুর দিকে তাকিয়ে থাকলো সে। এদিকে অন্তু অর্ণবকে তার দিকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে রাগ হচ্ছে,,, তার কাছে অর্ণবের এই ভাব আগলা পিরিতি লাগছে। অন্তু ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বললো…
অন্তুঃ এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন। আমাকে দেখতে কি সার্কাসে জোঁকার লাগছে।
অন্তুর ক্ষুব্ধ কন্ঠ শুনে অর্ণব তার ঘোরের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসে। অর্ণব অন্তুর চোখে তার জন্য ক্রোধ চাহনি দেখে হতভম্ব, সে জানতো অন্তু আজ নিজের রাগ, অভিমান, ক্রোধ তার ওপর ছাড়বে তাই সে প্রস্তুত করেই এসেছিলো নিজেকে। অর্ণব অন্তুর কথা উপেক্ষা করে আবার এগোতে নিলে অন্তু রাগি কন্ঠে বললো…
অন্তুঃ অর্ণব এক পা এগোলে আমি নিজের কোন ক্ষতি করে বসবো তখন সারা জীবন আফসোস করবে কেন এগোতে গেলাম। তাই নিজের জায়গায় থাকো।
অর্ণব অন্তু কথায় ভ্রু কুচকে অন্তু কি তাকায়। সে বুঝতে চায় অন্তু কি করতে চাচ্ছে আর তাকে ভয় কেন দেখাছে। অন্তু মুচকি হেসে নিজের হাত উচু করতেই অর্ণব তার হাতে চাকু দেখে ভয়ে দু পা পিছিয়ে যায় অর্ণব কাঁপা গলায় বললো…
অর্ণবঃ অন্তু পাগলামি করবে না চাকু হাত থেকে ফেলো, আমি আর এগোবো না প্লিজ। আর আমার কথা শোন আমাকে একটা বার তোমাকে এক্সপেলেন করার সুযোগ তো দাও কেন এমন করেছি আমি প্লিজ।
অন্তু ক্ষিপ্ত হয়ে বললো… কি বলবে তুমি হে কি বলবে ৪টা বছর বেঁচে ছিলে আমার আসেপাশে একটা সুন্দর জীবন নিয়ে যেখানে অন্তু নামের কেউ ছিলো না, আর না ছিলো অন্তুর নামের কোন মুসিবত তাই বলবে তাই না। আর আমি পাগল অর্ণব অর্ণব করে ৪ টা বছর পাগলামি করে গেলাম কিন্তু তুমি তো দ্বিবী নিজের জীবন চালিয়ে গেছো একটা সুখময় শান্তির জীবন নিয়ে। আমার কি হলো আমার সন্তানর কি হলো সেটা তোমার জানার সময় আছে না-কি। এই অন্তু মরলে তোমার কি যা আসে তাই না মিস্টার অর্ণব আহমেদ।
অন্তু সমস্ত অভিযোগ অর্ণবের কাছে কাটার মতো লাগছে তার বুকে, অন্তু কি একা কষ্টে ছিলো সেও তো একই কষ্টে ছিলো। অর্ণব নিজেকে যথেষ্ট শান্তো রাখে কেননা সে অন্তুর মেন্টাল হেল্থ সম্পর্কে জানে। অন্তুকে কোন ভাবেই উত্তেজিত করা যাবে না, না হলে হীতেবিপরীত হতে পারে অর্ণব শান্ত স্বরে অন্তুকে বললো…
অর্ণবঃ জান আমার কথাটা একবার শোন প্লিজ তার পর তুমি ডিসিশন নাও কি করবে আমার সাথে। আমাকে তুমি যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেবো কিন্তু তার আগে আমার কথাটা শুনবে আর চাকুটা হাত থেকে ফেলাও।
অন্তুঃ ডিসিশন তাই না ওকে তুমি কি ডিসিশন নিয়েছিলে বলো আমাকে। ৪বছর আগে কি এমন ডিসিশন নিয়েছিলে যে আমাকে এমন একটা নরকে ফেলে আসলে যেখানে আমি সেফ না আর না আমাদের সন্তান সেফে ছিলো বলো তুমি কি ডিসিশন নিয়েছিলে। অর্ণব তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে #তুমি আসবে বলে আমাকে প্রমিস করেছিলে। কি হলো তোমার প্রমিস আর আমার #অপেক্ষার প্রহর গুলির, কি ভাবে পারলে তুমি আমাকে মাঝ রাস্তায় ফেলে নতুন জীবন শুরু করতে, সেখানে তুমি সুখে ছিলে। কিন্তু তোমার মনে একবারও আমার কথা বা তোমার সন্তানের কথা আসেনি যে আমরা কেমন আছি, কি করছি, বেঁচে আছি না কি মরে গেছি এক বারো মনে হয় নি তোমার। ও ও সরি মনে হবে কি করে তুমি তো নতুন লাইফ নতুন সম্পর্ক গুলো নিয়ে ব্যস্ত ছিলে তাই না কি?
শেষ কথাটা অন্তু তাচ্ছিল্য তার সাথে বলো অর্ণবের অন্তুর শেষ কথা শুলো পিড়া দিচ্ছে সে নিজের ধৈর্যশক্তি হারিয়ে ফেলছে অন্তু অযৈতিক কথা শুনে। অর্ণব তার সহ্যসীমা হারাতে বাধ্য হচ্ছে কিন্তু সে নিজের মধ্যে থাকতে চাচ্ছে না হলে অন্তু কোন দুর্ঘটনা ঘটাতে পিছপা হবে না। অর্ণবকে চুপ থাকতে দেখে অন্তু ক্ষেপে গিয়ে বললো…
অন্তুঃ তুমি জানতে আমি কষ্ট আছি কি হলো বলো?
অর্ণবঃ হ্যাঁ
অন্তুঃ তুমি জানতে আমি একটা যন্ত্রণা মধ্যে ছিলাম। তোমায় হারিয়ে আমি পাগলের মতো হয়ে গিয়ে ছিলাম, আমি নিজের বোধ বুদ্ধি হিতাহীত জ্ঞান পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে ছিলাম তুমি জানতে কি না?
অর্ণব মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে তা দেখে অন্তু এক কদম এগিয়ে এসে কাতর কন্ঠে বললো… তুমি জানতে আমাদের সন্তান ম..মারা গেছে।
অন্তু কাতর কন্ঠে শুনে অর্ণব ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে মাথা নিচু করে নেই। তা দেখে অন্তু তাচ্ছিল্যে হেঁসে বললো…
অন্তুঃ তুমি সব জানতে কিন্তু একটা বার আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার বুকে আগলে নিয়ে বলো নি “অন্তু কিছু হয়নি আমি আছি”। কেন আসো নি অর্ণব কেন বলোনি এই কথা কেন, অর্ণব তোমাকে আমার প্রয়োজন ছিলো ভীষণ প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তোমাকে আমার পাশে পায়নি বলতে পারো কেন পায়নি…[বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরে]
অর্ণব অন্তুর কাছে আসতে নিলে অন্তু পিছিয়ে যেয়ে তার হাত উচু করে অর্ণবকে থামিয়ে বললো…
অন্তুঃ আমার কি দোষ ছিলো অর্ণব তোমাকে প্রতিটা মূহুর্তে আমি আমার আশেপাশে অনুভব করেছি কিন্তু তোমাকে পায়নি আমি পেয়েছি একটা অচেনা আজানা রোদ চৌধুরীকে যে নিজের মেয়েকে নিজের জীবন থেকে বেশি ভালোবাসে। তাকে ঘিরে তার পৃথিবীর, অর্ণব আমাদেরও তো মেয়ে হয়েছিলো তাইলে তোমার কাছে তার কোনো মূল্য কেন ছিলো না কেন?
অন্তু কথা শুনে অর্ণবের চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু পানি পরতে থাকে সে অন্তুকে কি করে বুঝাবে যাকে সে আমার মেয়ে ভাবছে সে আসলে তাদের মেয়ে তাদের সন্তান অন্তুর অংশ। তার কাছে তাদের মেয়ের মূল্য তার কাছে অনেক। অর্ণব অন্তুকে বললো…
অর্ণবঃ অন্তু মূল্য আছে তোমাদের দু’জনেরি আমার জীবনে অনেক মূল্য আছে। তোমাদের ছাড়া এই অর্ণবের কোন অস্তিত্ব নেয় প্লিজ অন্তু আমার কথাটা একবার শোন প্লিজ আনভি আমাদের মে…
আর কিছু বলতে পারে না তার আগে অন্তু গর্জিত কষ্টে বললো… আমি কিছু শুনতে চাই না, কিছু বুঝতে ও চাইনা, আমার জানা বুঝা হয়ে গেছে। তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেয় তুমি তোমার লাইফে এগিয়ে গেছো এতে আমি কষ্ট পাচ্ছি না, আমি সত্যি হেপ্পি তোমার জন্য।
অর্ণবঃ অন্তু তুমি ভুল বুঝো আমাকে…
অর্ণবকে বলতে না দিয়ে অন্তু বললো…. তোমার সবাই স্বার্থেপর। সবাই সবার স্বার্থ বুঝেছো, আমি কাউকে ক্ষমা করবো না কাউকে না। আমার বাড়ির মানুষ আমাকে ঠোকিয়েছে যেমনটা তুমি ঠোকিয়েছো। আমার কাউকে লাগবে না কাউকে। কিন্তু একটা সত্যি কথা জানো তুমি আমার সাথে যা করেছো তার পরো আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি আর আমার পরিবারকে ও। কিন্তু আমি নিজের পরিবারকে, নিজের সন্তানকে আর নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে আমি আজ নিঃস্ব, তাই নিজেকে শেষ করতে আজ কোন আফসোস নেই আমার।
কথাটা বলতে না বলতেই অন্তু তার বা হাতে চাকু ধরে ধীরে ধীরে টান দিতে থাকে, সেই স্থানে কেটে রক্ত বের হতে লাগলো। অর্ণব অন্তুর কাজে স্তব্ধ সে ভাবোনি অন্তু এমনটা করবে অর্ণব নিজের বোধবুদ্ধি লোপ পায়, সে যে গিয়ে অন্তুকে থামাবে সে তা করতে পারছে। অর্ণব অনুভূতি শূন্য চোখে অন্তুর দিকে তাকিয়ে রইলো,অন্তু মুচকি হেসে বললো…
অন্তুঃ অঅর্ণব তুমি সত্যি আমাকে ভালোবাসো না আর। কিন্তু আমি তোমাকে আজও আগের মতো ভালোবাসি, পাগলের মতো ভালোবাসি। প্লিজ একটা বার ভালোবাসি বলবে প্লিজ….
অন্তু আকুতি ভরা চোখে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে রইলো…
তোমাকে ছেড়ে দূরে থাকতে এতো কষ্ট কেন হয়….
তুমি হীনা নিজেকে এতো অনুভূতি শূন্য কেন লাগে…
ভালোবাসি বলতে এতো কষ্ট কেন হয়….
ভালোবাসা কি এতো পিরা দেয়…তাইলে সবাই ভালোবাসে কেন?….
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৪৭ (মিলনমেলা ধামাকা-২)
“ঠাসসস” করে চর পরে অন্তুর গালে। অন্তু গালে হাত দিয়ে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে সে অর্ণবের দিকে, অন্তুর বিশ্বাস হচ্ছে না অর্ণব তাকে থাপ্পড় মারলো। যে অর্ণব কখনো অন্তুর সাথে রেগে কথা বলে না সে আজ তাকে থাপ্পড় মারলো অন্তু ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে অর্ণবের দিকে। আর অর্ণব রাগে ফসফস করে তাকিয়ে আছে অন্তুর দিকে।
“তখন অন্তু যখন হাত কাটে সেটা দেখে অর্ণব স্তব্ধ হয়ে যায়। সে নিজের মধ্যে থাকে না যখন অন্তুর বলা শেষ কথা গুলো শোনে তখন তার হুঁশ আসে। তার মাথায় রাগ উঠে যায় অন্তুর কাজে কিন্তু তার মনে পরে অন্তু তার হাত কেটে ফেলেছে তাকে বাচাতে হবে, তার অনেক না বলা কথা তাকে বলতে হবে, তাদের অনেকটা দূরে যেতে হবে এক সাথে, অন্তু কিছুতেই তাকে ছেড়ে যেতে পারে না। অর্ণব নিজেকে রেগে সামলাতে না পরে অন্তুর কাছে গিয়ে তার হাত থেকে চাকু ফেলে তার গালে চর বসিয়ে দেয়”
অর্ণবের লাল চোখ দেখে অন্তুর আত্মা কেঁপে উঠলো। অর্ণব অন্তুর হাত ধরে সামনে এনে দেখে বেশি গভীরে কেটে যায়নি তাই সে তার রুমাল বের করে অন্তুর হাতে বাধতে লাগলো, এদিকে অন্তু কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না অর্ণবের ভয়ংকর রাগ দেখে অন্তুর চোখ থেকে অঝোড়ে জল পরছে। সে এই অর্ণবকে চেনে না কিছুতেই চেনে না, এই রাগ, হিংস্র হওয়া, অন্তু কিছুতেই আগের অর্ণবের সাথে এখন কর অর্ণবের মিলাতে পারছে না। অর্ণব অন্তুর হাতে রুমাল বেধে দিয়ে অন্তুর বাহু চেপে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে। এদিকে অর্ণবে ধরাতে অন্তু ব্যাথায় কুকড়ে যায় কিন্তু কিছু বলো না অর্ণব ক্রোধ দৃষ্টিতে বললো…
অর্ণবঃ নিজেকে কি ভাবো তুমি হ্যা, কি ভাবো তুমি। তখন থেকে যা নয় তাই বলছো কিন্তু আমি কিছু বলছি না বলে এতো সাহস বেরে গেছে তোমার তাই না যে নিজেকে শেষ করতে চাচ্ছো। এই মেয়ে তোমার জীবন কি তোমার একার হ্যাঁ, না তোমার জীবন আমার বুঝলে তুমি শুধু আমার। তোমার জীবনের ওপর শুধু আমার অধিকার আছে এতে তোমার হস্তক্ষেপ আমি পছন্দ করবো না বুঝতে পারলে।
অর্ণবে ধমুক শুনে অন্তু শব্দ করে কেঁদে ফেলে অন্তুকে কান্না করতে দেখে অর্ণব চোখ বন্ধ করে নেয়। অন্তুর চোখের পানি তার দূর্বলতা সেটা এই মেয়ে ভালোভাবে জানে তাই এভাবে কান্না করছে কিন্তু অর্ণব এবার গলবে না কিছুতেই না আজ সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে তাই আজ এর একটা বিহীত করবে সে, অর্ণব চোখ বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে ধমুক দিয়ে বললো….
অর্ণবঃ এই মেয়ে কান্না বন্ধ করো আর এক ফোঁটা চোখের জল বের হলে তোমার একদিন কিম্বা আমার একদিন। চোখ মোছো কি হলো চোখ মুছো কথা কানে যাচ্ছে না তোমার কি হলো…
অর্ণবের ধমুকে অন্তু তারাতাড়ি করে চোখে মুছে নিলো কিন্তু সে ফুপাতে লাগলো, তা দেখে অর্ণব মনে মনে হাসলো কিন্তু মুখে রাগি লুক নিয়ে থাকলো। অন্তু ছলছল চোখে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে রইলো অর্ণব কিছুটা নরম হয়ে সে অন্তুর বাহু ছেড়ে অন্তুর গালে তার দুহাত রেখে বললো….
অর্ণবঃ জান তোমার কি করে মনে হলো আমি তোমাকে ভালোবাসি না, কি করে মনে হলো আমার জীবনে তোমার মূল্য নেই। তুমি জানো আমার অস্তিত্ব তুমি আমার জীবনে তুমি ছাড়া অন্য কেউ নেই। আমি তোমাকে ভালোবাসি অন্য কাউকে না। আমার সবকিছু তুমি, তোমায় ঘিরে আমার জীবন তাই প্লিজ আমার ভালোবাসাকে ছোট করো না।
বলে অন্তুর কপালে নিজের কপাল ঠেকায় অর্ণব। অন্তু অর্ণবের বুকের কাছের শার্ট খামছে ধরে চুপ করে আছে কিন্তু অর্ণবের প্রতিটা কথাতে তার ভেতরটা পুরছে। হঠাৎ অন্তুর গালে পানি পরতে সে চমকে যায় তাইলে কি অর্ণব কাঁদছে তার কথাতে কি অর্ণব কষ্ট পেয়েছে, অর্ণব আস্তে আস্তে নিচে বসতে লাগলো সাথে অন্তু ও। চারিপাশে নিস্তব্ধতায় ঘেরা অর্ণবের উষ্ণ নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে অন্তুর মুখে, অন্তু কেঁপে কেঁপে উঠছে। অর্ণব নিরবতা ভেঙ্গে বললো…
অর্ণবঃ জান ৪টা বছর যে নরক যন্ত্রণা তুমি ভোগ করেছো ঠিক তার থেকে বেশি যন্ত্রণা আমি ভোগ করেছি। তোমার জন্য প্রতিটা সেকেন্ড, প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা মূহুর্তে তুমি বিহীন আমি কেমন ছিলাম সেটা বাবাই আর প্রাপ্য জানে। আমি তোমাকে কাছে পাবার জন্য কতো রাত্রি নিদ্রাবিহীন কাটিয়েছি সেটা আমি জানি, তোমাকে দেখার জন্য শুধু ছটফট করেছি কিন্তু যেতে পারিনি কিন্তু তোমার সব খবর নিতাম। জান তুমি কষ্টে ছিলে তাই বলে আমি সুখে ছিলাম এটা ভুল, জান তুমি অনেক কিছু জানো না তাই আমার ভালোবাসাকে তুমি ছোট করছো। আমি বুঝছি তুমি কষ্ট পেয়েছো তোমাকে কিছু না বলে আমি ভুল করেছি কিন্তু আমি সত্যি তোমাকে এসব থেকে দূরে রাখতে এসব করেছি যাতে তুমি কষ্ট না পাও কিন্তু আমি জানতাম না তুমি আমার এই কাজে এতোটা আঘাত পাবে সরি জান সরি…
অন্তু ওই অবস্থাতেই বললো….
অন্তুঃ তুমি তাইলে এমন করলে কেন? আমাকে কেন তোমার সত্যি বলে না। কেন নিয়ে গেলে না আমাকে তোমার কাছে।
অর্ণবঃ জান তুমি একটা বার বোঝো আমি এমন একটা পরিস্থিতিতে ছিলাম যেখানে তোমাকে নিয়ে গেলে তোমার আর আমার দুজনেরি ক্ষতি হতো। আমাদের সাথে যে এটা করেছে সে যদি সব জানতে পারতো তাইলে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলতো। আমি শুধু সঠিক সময়ে অপেক্ষাতে ছিলাম তোমাকে সঠিক সময় সব বলে দিতাম। তাইতো আদিকে বলে তোমাকে কক্সবাজার নিয়ে গিয়ে গিয়েছিলাম সব বলতে কিন্তু তার আগেই তুমি সব জেনে গেলে।
অন্তুঃ আমার প্রিয় জন্য আমাকে ঠকিয়েছে। সবাই স্বার্থপর…
অর্ণবঃ জান কেউ স্বার্থপর না, সবাই তোমাকে ভালোবাসে বলে একটা সত্যি বলে নিই। এটাকে স্বার্থপরের নাম দিও না। যদি স্বার্থে কথা বলো তাইলে আমি নিজের স্বার্থে তোমাকে কিছু বলিনি। আমার স্বার্থ কি যানো, তোমাকে নিজের কাছে সম্পূর্ণ নিরাপদ ভাবে নিয়ে আসা যাতে কেউ আমাদের ক্ষতি করতে না পারে…
বলে অন্তুর সারা মুখে অজস্র চুমো দিতে লাগলো অর্ণব। অন্তু অর্ণবের স্পর্শ চোখ বুজে অনুভব করতে লাগলো। এতো বছর পর সেই চেনা স্পর্শ সেই চেনা অনুভূতি সে চুপ করে অনুভব করতে লাগলো। অর্ণব কাতর কন্ঠে বললো…
অর্ণবঃ অন্তু তোমাকে আমি যতটা আঘাত দিয়েছি সেই আঘাত কিন্তু ফিরে আমার কাছেই এসেছে। তোমার চোখ থেকে যতবার অশ্রু গড়িয়েছে ঠিক সেই অশ্রু রক্ত হয়ে আমার বুক থেকে ঝরেছে, ক্ষতবিক্ষত করেছে এই হৃদয়টাকে। জান তোমাকে ডিপ্রেশনে থেকে বের করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাদের। তোমাকে কোন প্রকার উত্তেজিত করলে তোমাকে হারাতে হতো আমার। আমি সেই আঘাত সহ্য করতে পারতাম না তাই তোমাকে সব কিছু বলতে নিষেধ করি সবাইকে প্লিজ জান একটা বার আমার কথা বিশ্বাস করো প্লিজ…
অর্ণবের কথা শুনে অন্তু ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে অন্তু যানে তার অর্ণব ভালো ছিলো না তাকে ছাড়া, কিন্তু ৪বছের অভিযোগ, রাগ, জেদ, কষ্ট, যন্ত্রণা, ক্ষোপ, অভিমান সব এক সাথে হয়ে আজ অর্ণবকে সে কষ্ট দিয়ে ফেলো ভাবতেই আরো জোরে জোরে কান্না করতে লাগে। অর্ণব অন্তুকে কান্না করতে দিলো তার মধ্যে থেকে সব কষ্ট বার করতে চায় সে। এই শেষ বারের মতো তাকে মন খুলে কাঁদতে দিতে চায় সে। অর্ণব অন্তুর কপালে গাঢ় করে চুমু দিয়ে কাতর কন্ঠে বললো….
অর্ণবঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি জান। আমার জীবনে অন্য কারোর জায়গা নেই। আমি শুধু তোমার শুধু তোমার তোমার অস্তিত্বর সাথে আমার অস্তিত্ব মিলে আছে, আমার জীবনে শুধু তুমি থাকবে, অন্য কেউ না। আমার বুকে শুধু তোমার জায়গা হবে, অন্য কারো না। আমার অস্তিত্বে শুধু তুমি আছো, অন্য কেউ নেয়। তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা আর তুমিই আমার শেষ ভালোবাসা বুঝতে পারলে। একটা কথা শুনে রাখো এই পৃথিবীতে যদি অন্তু না থাকে তাইলে অর্ণবও থাকবে না, বুঝতে পারলে অর্ণবও থাকবে না..
অন্তু অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো অর্ণব ও অন্তুকে জড়িয়ে ধরে। অন্তু অর্ণবকে জড়িয়ে ধরার ফলে তার হাতে নখ অর্ণবের পিঠে গেঁথে যায় কিন্তু অর্ণব নিরবে তা সহ্য করে নেয়। অন্তুর কান্না বন্ধ হলে অর্ণব একমুহূর্ত নষ্ট না করে অন্তুকে কোলে তুলে নিলো অন্তু হচকে যায় পরার ভয়ে সে অর্ণবের শার্ট খামচে ধরে। অর্ণবের ৪ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে সে তার অন্তুকে আবার নিজের করে নেবে যেখানে অতীতের কোন রাগ, অভিমান, কষ্ট, থাকবে না থাকবে শুধু তাদের নতুক করে বাঁচার আশা, ভালোবাসা, সুখের সাগর তাদের নতুন জীবন…
__________________________________
বৃষ্টির বেগ ধীরে ধীরে বাড়ছে থাকে, সাথে একজোরা ভালোবাসা মানুষের কে কাছে পাবার আকাঙ্খা। অর্ণব অন্তুকে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে দেয়, অন্তু অর্ণবের থেকে ছাড়া পেতেই পেছনে যেতে নিলে অর্ণব তার পা ধরে তাকে কাছে নিয়ে এসে অন্তুর ঘাড়ে হাত দিয়ে তার মুখ বরাবর অন্তুর মুখ নিয়ে এসে হালকা ভাবে ফুঁ দেয় তার মুখে। অর্ণবের গরম নিঃশ্বাস তার সারা মুখে ছুঁয়ে গেলো এতে অন্তু হালকা কেপে ওঠে অন্তু আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় অর্ণব মুচকি হেসে অন্তু ঠোঁটের নিচের তিলে শব্দ করে চুমু খায় এতে অন্তু লজ্জা নুয়ে যেতে নিলে অর্ণব তাকে শক্ত বাধনে আবদ্ধ করে, অর্ণব অন্তু সারা মুখে তার ঠোঁটের বুলিয়ে অন্তুর ঠোঁটে তার ঠোঁট মিলায়। অর্ণব অন্তুকে ছেড়ে দেয়,ছাড়া পেতেই অন্তু জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। অর্ণব তার শার্ট খুলে অন্তুর দিকে আগাতে নিলে অন্তু পিছিয়ে যেতে লাগে অর্ণব তাকে ধরে বেডের সাথে চেপে ধরে তার গলায় মুখ ডুবিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বললো…
অর্ণবঃ প্লিজ জান এমন করে না তোমাকে পাবার তীব্র ইচ্ছে জেগেছে এখন, না পেলে না যানি কি করে বসবো তাই চুপচাপ মেনে নাও, না হলে কষ্ট তোমাকেই বেশি হবে, তখন কান্না করলেও আমি ছাড়বো না বলে দিলাম।
অর্ণবরে ঠোঁট কাটা কথা শুনে অন্তু লজ্জা কুঁকড়ে যায় ছেলেটা বেশি নিলজ্জ হয়ে গেছে আগের তুলনায়। অর্ণবের বাজে কথা শুনে তার মাঠিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে ছিঃ কিসব কথা শিখে গেছে অসভ্য ছেলে। অন্তুর লজ্জায় লাল হওয়া মুখ দেখে অর্ণব হাসলো, অন্তু চোখ বন্ধ করে তাকে অর্ণবের কাছে সমার্পন করে দেয় অর্ণব ধীরে ধীরে অন্তুকে নিজের করতে লাগলো নিজের সবটুকু দিয়ে তাকে ভালোবাসতে লাগলো এতো বছরে অপেক্ষার অবসান ঘটলো এই মিলনে। দুটি দেহো আবার এক প্রাণ হতে লাগলো….
_____________________________________
ভোর-৪,,,
বাইরে বৃষ্টি এখনো ঝুমঝুম করে পরছে হালকা শীত শীত লাগছে পরিবেশটা। অর্ণব অন্তুর উন্মুক্ত শরীরে ভালো ভাবে কাঁথাটা জড়িয়ে দিলো, অন্তু ছোট বাচ্চাদের মধ্যে ঠোঁট উল্টে ঘুমিয়ে আছে অর্ণবের বুকের মাঝে অর্ণব নিঃশব্দে হাসলো। অন্তুর কপালে ছোট চুলগুলো নিজের হাতে সরিয়ে দিয়ে কপালে তার ঠোঁট ছোঁয়ায়। অর্ণব মনে মনে বললো…
অর্ণবঃ তোমায় পেয়েছি এক নতুন রুপে…. তোমাকে পেয়েছি আমি নতুন অনুভূতিতে…. পেয়েছি তোমাকে নতুন করে অনুভব করতে…. নতুন করে পেয়েছি তোমাকে ভালোবাসতে…. তুমি কি আমায় মানতে পারবে আমার এই নতুন রুপকে….
(®সন্ধ্যা হালদার)
অন্তুকে বুকে থেকে নামিয়ে বালিশের ওপর ভালোভাবে শুয়ে দিয়ে সে উঠে দাড়ায় ফোন হাতে নিয়ে নিঃশব্দে বেলকনিতে গিয়ে প্রাপ্যকের ফোন করে, প্রাপ্য ফোন ধরতেই সে বললে…
অর্ণবঃ প্রাপ্য আম্মু কেমন আছে? কান্নাকাটি করেছে কি? রাতে খেয়েছে?
প্রাপ্য তার কোন প্রশ্নের উত্তর প্রথামে দেবে ভাবনায় পরে যায় সে বলে… ভাইয়া আনভি আমার সাথে ঘুমাছে। কান্নাকাটি করেছে কিন্তু আমি বলেছি কাল তার মাম্মাম তার কাছে চলে বসবে তাই আর কিছু করেনি লক্ষীমেয়ের মতো রাতের খাবার খেয়ে আমার সাথে ঘুমাছে। ভাইয়া ভাবি কি এখনো রেগে আছে? তুই কি আনভির কথা বলে দিয়েছিস?
অর্ণব দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো… অন্তু ঠিক আছে এখন তাকে সব বলেছি কিন্তু আনভির কথা বলিনি সে কি ভাবে রিয়েক্ট করবে তা নিয়ে ভয়ে বলা হয়নি কিন্তু কাল সকালে বলে দেবো। তুই এক কাজ কর?
প্রাপ্যঃ হুমম বললো
অর্ণবঃ সকালে আমার আর অন্তু জামাকাপড় ড্রাইভার দিয়ে আমার ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দিস আর পারলে অরনিকে বাড়িতে আসতে বল সকালে অন্তু সত্যি জেনে কি করবে জানি না।
প্রাপ্যঃ ঠিক আছে রাখছি।
অর্ণব হ্যাঁ বলে ফোন রেখে দেয় অর্ণব বাইরে তাকিয়ে থাকে সে অন্তুকে সব বলেছে কিন্তু আনভির আর এর পেছনে কে আছে সে এটা তাকে বলেনি। অর্ণব জানে অন্তু ২টা ধাক্কা এক সাথে নিতে পারবে না তাই তাকে অনায়াসে বুঝিয়ে সুজিয়ে মানাতে হবে। প্রথমে সে আনভির সত্যি বলবে তারপর এসবের কে করেছে তাকে সামনে আনবে না জানি ২য় সত্যি অন্তু কি ভাবে নেবে। অর্ণব দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমে গিয়ে শুয়ে অন্তুকে আবার তার বুকে নিয়ে নেয় অন্তু অর্ণবের স্পর্শ পেতে তাকে আরো ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায় অর্ণব হাসে অন্তুকে শান্তি মতো দেখে তার দুচোখ এতে বছরের তৃষ্ণাত চোখ গুলো আজ তার তৃষ্ণা মেটাছে…..
____________________________________
সকালের স্নিগ্ধ পরিবেশ ঘুম ভাঙ্গে অন্তুর চোখ খুলতেই অর্ণবের হাসি মাখা মুখ দেখে তার ঠোঁটের কোণে হাসিটা চোরা হয়ে যায়। অর্ণব মুচকি হেসে অন্তুর ঠোঁটের ছোট চুমু দিয়ে বললো…
অর্ণবঃ গুড মর্নিং জান।
অন্তুঃ মর্নিং।
অর্ণবঃ আই লাভ ইউ।
অন্তুঃ আই লাভ ইউ।
অন্তু অর্ণবের বুকে মাথা রেখে আবার ঘুমাতে নিলে বাড়ির কলিংবেল বেজে ওঠে অন্তু বিরক্ত মুখ করে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে থাকে। অন্তুর বিরক্ত মুখ দেখে অর্ণব শব্দ করে হাসতে লাগলো তা দেখে অন্তু রেগে অর্ণবের বুকে কামড় দিলো অর্ণব ব্যাথা পেলো কিন্তু কিছু বলো না, অর্ণব অন্তুকে তার কাছ থেকে ছাড়িয়ে উঠতে উঠতে বললো…
অর্ণবঃ জান তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি দরজা খুলছি। ড্রাইভার এসেছে আমাদের জামাকাপড় নিয়ে যাও তুমি আমি নিয়ে আসছি।
বলে সে চলে যায় অন্তু উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় শাওয়ার নিতে। অর্ণব অন্তুর জামা রুমে থুয়ে অন্তুকে বলে সে অন্য রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। অন্তু শাওয়ার নিয়ে বাইরে এসে জামা নিয়ে আবার ওয়াশরুমে চলে যায়। অর্ণব রুমে এসে দেখে অন্তু বের হয় নি তাই সে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ায়। সে ভাবছে কি করে আনভির সত্যি বলবে অন্তুকে, কোথা থেকে শুরু করবে সে। হঠাৎ বুকের ওপর দুটো হাত তাকে জড়িয়ে ধরতে সে বুঝতে পারে অন্তু এসেছে, অর্ণব তার হাত ধরে সামনে নিয়ে এসে দাড়া করায় অন্তুকে দেখে সে থমকে যায় সদ্য গোসল করে আসায় তার মুখে বিন্দু বিন্দু পানি আছে, চুল দিয়ে পানি পরছে তার ফলে কোমরের কাছে খানিকটা ভিজে গেছে অন্তুকে সদ্য ফুটন্ত ফুলের মতো লাগছে স্নিগ্ধ মনোমুগ্ধকর লাগছে তার কাছে। অন্তুর কথায় অর্ণবের ধ্যন ভাঙে..
অন্তুঃ বাড়ি যাবো কখন?
অর্ণব নিজেকে প্রস্তুত করছে নেয়, আজ যে কোন মূল্য তাকে আনভির কথা বলতে হবে অন্তুকে। ওই দিকে আনভি তার মাম্মার জন্য অপেক্ষা করছে। অর্ণব শুকনো ঢোক গিলে বললো…
অর্ণবঃ জান তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো..
অন্তুঃ বলো আমি শুনছি।
অর্ণবঃ জান আনভি
অন্তু ভ্রু কুচকে বললো… আনভি কি?
অর্ণবঃ আনভি মানে আনভি আমাদের…
অর্ণবের কথার আগা মাথা না বুঝতে পেরে অন্তু বিরক্ত নিয়ে বললো… অর্ণব আনভি কি ভালো করে বলো আমি কিছু বঝতে পারছি না।
অর্ণবঃ জান আনভি আর কেউ নয় আমাদের মেয়ে। আমাদের প্রথম সন্তান। যাকে তুমি এতো দিন মৃত মনে করে এসেছো।
চোখ বন্ধ করে এক দমে অর্ণব সব বলে অন্তুর দিকে তাকয়া। তাকিয়ে সে থমকে যায় অন্তু ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে। অন্তু চোখে জল দেখে অর্ণবে বুক কেঁপে ওঠে না জানি অন্তু কি ভাবে রিয়েক্ট করবে। অন্তু কাঁপা গলায় বললো…
অন্তুঃ আ আনভি আ আমার মেয়ে। আমার অংশ….
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৪৮ (মিলনমেলা ধামাকা-৩)
‘মা’ ডাক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ডাক। একজন মায়ের কাছে এই ডাক পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ডাক। ‘মা’ শব্দের মাধ্যমে একজন মেয়ে সম্পূর্ণ রুপে নারীতে পরিপূর্ণ হয়। একজন মায়ের কাছে তার সন্তানের গুরুত্ব কি শুধু একজন ‘মা’ জানে। একজন মা তার সন্তানকে ১০মাস ১০ দিন তার গর্ভে ধারণা করে যে শারীরিক, মানুষিক যন্ত্রণা সহ্য করে শুধু মাত্র মাতৃত্বের স্বাদ পাবার জন্য। সন্তানের মুখে আদো আদো কন্ঠে প্রথম ‘মা’ ডাক শুনতে কতটা তৃপ্তি পায় যে, সে শুধু সেই মা-ই জানে। ঠিক এখন অন্তুরো একই ভাবে তৃপ্তি পাচ্ছে যে সন্তানকে সে তার গর্ভে ধারণা করে এতো কষ্ট সহ্য করে তাকে জন্ম দিলো কিন্তু মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করার পূর্বেই তার সন্তানকে মৃত ভাবতে হলো, সেই সন্তানের মুখ থেকে যখন ‘মা’ ডাক শুনতে পায় তখন অন্তুর মনে হচ্ছে তার জীবন সার্থক এই ডাক শুনে। অন্তু আনভিকে কোলে নিয়ে ফ্লোরে বসে আছে, অন্তুর চোখে পানি কিন্তু ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি। সে আজ তার ভেতরের নতুন সত্তার সাথে পরিচিত হলো সেই সত্তা হলো ‘মা’ সত্তা, মাতৃত্ব সত্তা। হ্যাঁ সে আজ মা হয়েছে পরিপূর্ণ রুপে সে নিজেকে পেয়েছে নিজের অংশকে পেয়েছে। চৌধুরী বাড়িতে উপস্থিত সবার চোখে জল দুঃখের না সুখের, একজন মা আজ তার সন্তানকে পেয়েছে যেমন তেমনি একটা মেয়ে তার মাকে পেয়েছে। অর্ণব দাড়িয়ে দাড়িয়ে মা-মেয়ের মিলাপ দেখছে তার চোখ ছলছল করছে কিন্তু সে কিছুতেই আজ পানি পরতে দেবে না অনেক তো কান্না করেছে এখন তো তার সুখের দিন। অন্তু আনভির সারা মুখে চুমু দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো…
অন্তুঃ আ আনভি মা আর এ একবার আ আমাকে মা মাম্মাম বলে ডাকো….
আনভি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো…. মাম্মাম..
মাম্মাম ডাক শুনে অন্তু ভেতরটা কেঁপে ওঠে, শরীলের ভেতরে শীতল প্রবাহ বেয়ে গেলো তার। আনভিকে বুকের সাথে জরিয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দিলো৷ অন্ত কান্নারত অবস্থায় অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো…
অন্তুঃ অর্ণব আনভি আমার মেয়ে, আমাদের সন্তান, আমাদের ভালোবাসা চিহ্ন।
বলে আবার কান্না করতে লাগলো অর্ণব অন্তুকে কি বলবে তার কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। সে তো জানতো এমনটা হবে অন্তু যখন আনভির কথা জানবে। অর্ণবের সকালের কথা মনে পরলো যখন সে অন্তুকে আনভির সত্যি বলো….
কিছুক্ষণ আগে,,,,,,
_____________________________________
অন্তু চুপচাপ হয়ে দাড়িয়ে থাকে সে কিছু বলছেও না আর না কিছু করছে একদম কাঠপুতুলের মতো দাড়িয়ে আছে, অন্তু মধ্যে মনে হচ্ছে প্রান নেই। অর্ণব অন্তুকে এভাবে দেখে চমকে যায় ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো, অন্তুর মধ্যে কি চলছে সে জানে না কিন্তু অন্তুকে এখন সব সত্যি বলে দিলে এই মেয়ের নির্ঘাত কিছু হয়ে যাবে। অর্ণব জানে অন্তুর মেন্টাল হেল্থ ভালো না তাই সে সব সত্যি নিতে পারবে না তাই অর্ণব আর কিছু না বলে অন্তুর দিকে এগিয়ে গিয়ে অন্তুকে ধরতেই অন্তু এক ঝটকায় তার হাত ঝাড়ি দিয়ে দূরে সরে যায়। অন্তু এমন আচরণে অর্ণব বিহ্বলিত, হতভম্ব হয়ে যায় সে, বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকে অন্তুর দিকে। অন্তু রাগে, ক্ষপে চোখ থেকে জল বের হচ্ছে সে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো….
অন্তুঃ এমনটা কেন করলে অর্ণব কেন করলে। তুমি আমার থেকে আমার মেয়েকে দূরে সরিয়ে রাখলে। কেন করলে।
অর্ণব কাঁপা কাঁপা গলায় বললো… জান তখন তুমি নিজের মধ্যে ছিলে না আর আনভির জীবন সংস…
অর্ণবকে কথা শেষ করতে না দিয়ে অন্তু ক্রোধ কন্ঠে বললো… নিজের মধ্যে ছিলাম না তাই বলে তুমি আমার থেকে আমার মেয়েকে দূরে সরিয়ে নিলে। আমাকে ৪ বছর ধরে এটা বুঝতে দিলে আমার মেয়ে মারা গেছে। তুমি যানো আমার মেয়েকে আর তোমাকে ছাড়া আমি কি করে ছিলাম। তুমি কি করে পারলে একটা মায়ের কাছে থেকে তার সন্তানকে কেরে নিতে, কি করে পারলে তুমি? তোমার হাত কাপলো না একটুও, তোমার মেনে হলো না তোমার অন্তু জীবন্ত লাশে পরিণত হবে তার সন্তানকে না পেলে। কি হলো বলো..
অর্ণব দৌড়ে এসে অন্তুকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। অন্তু নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হতে লাগলো অর্ণবের থাকে কিন্তু অর্ণবের শক্তির সাথে পেরে ওঠলো না সে। অন্তু ফুপিয়ে কেঁদে দিলো অর্ণব ধীরগতিতে অন্তুকে আস্তে আস্তে বললো…
অর্ণবঃ অন্তু আমি জানি তোমার কাছে থেকে আনভিকে নিয়ে এসে আমি অন্যায় করেছি কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো না। তুমি তখন নিজের মধ্যে ছিলে না আর না তুমি আনভিকে তোমার আশেপাশের শত্রুর থেকে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতে তাই আমি বাধ্য হয়ে আনভিকে নিয়ে যেতে হয়। সরি জান…
অন্তু নিস্তেজ গলায় বললো… ঠিক আছে আমি মানছি আমি তখন নিজের মধ্যে ছিলাম না তাই তুমি আনভিকে নিয়ে গেলে ঠিক আছে। কিন্তু আমাকে কেন ওই নরকে রেখে গেলে আমাকে কেন তোমার সাথে নিয়ে গেলে না কেন অর্ণব।
অন্তু কন্ঠে স্পষ্ট অভিযোগ তার জন্য অর্ণব অন্তুর আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো…
অর্ণবঃ সরি জান আমি তোমায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু দিদুন বলো তোমাকে নিয়ে গেলে আমার ধরা পরে যাবো আর তোমার অবস্থা তখন ভালো ছিলো না আর আমার হাতে সময় ছিলো না। তোমার আর আনভি মধ্যে একজনকে আমার বেছেনিতে হতো তাই আমি আন…
অন্তুঃ তাই তুমি আমাকে থুয়ে আনভিকে নিয়ে চলে গেলে আর আমাকে বলে আমার মেয়ে মারা গেছে তাই তো…
অর্ণব মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। অন্তু অর্ণবকে জোরপূর্বক তার কাছে থেকে সরিয়ে বললো… তোমরা সবাই সবার দিকটা দেখলে কিন্তু কেউ আমার দিকটা দেখলে না৷ আমি তো তোমাকে হারিয়ে নিঃসহ হয়েছিলাম কিন্তু একটা বাঁচার আশা ছিলো কিন্তু তুমি তাকেও আমার কাছে থেকে নিয়ে নিলে তখন, তারপরে তো আমি পরিপূর্ণ ভাবে নিঃসহ হয়ে গেলাম তাই না।
অর্ণবঃ অন্তু তখন তুমি সত্যিটা জানলে আনভি জীবন নিয়ে টানাটানি হতো। আনভির যদি কিছু হয়ে যেতো তখন তুমি নিজেকে সামলাতে পারতে।
অন্তু অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো… অর্ণব তুমি আনভির ছোট থেকে বেরে ওঠতে দেখেছো কিন্তু আমি দেখিনি। তুমি তাকে হাটতে দেখেছো, আমি দেখিনি। তুমি তার মুখে আদোও আদোও ভাষায় কথা বলতে দেখেছো, আমি দেখিনি। আনভির প্রথম ডাক ‘মা’ ডাকেনি হয়তো বাবা বলেছে, কিন্তু আমি ‘মা’ ডাক শুনতে পায়নি। আমি মা হয়ে আমার মেয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। তার প্রথম স্পর্শ আমি পায়নি, আমি আমার মমতা তাকে দিতে পারিনি। আমি আমার সন্তানকে দুষ্টুমি, হাসি, কান্না, ভালোবাসা কিছু দেখিনি। আনভির যখন অসুস্থ হতো আমি তার পাশে থাকতে পারিনি, তাকে আদর করতে পারিনি, বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে পারিনি, খাওয়াতে পারিনি। এখন আমার মধ্যে কি চলছে সেটা তুমি বুঝতে পারছো।
অর্ণব মাথা নিচু করে নেয় অন্তু যা বলছে সব সত্যি আনভির প্রথম ডাক ‘বাবা’ ছিলো, আনভির বেরে ওঠা সব অর্ণব তার নিজের চোখের সামনে দেখেছি কিন্তু অন্তু তা দেখতে পারেনি। অর্ণবকে চুপ থাকতে দেখে অন্তু তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বললো…
অন্তুঃ তোমাদের কাউকে আমি ক্ষমা করবো না কাউকে না। তোমরা সবাই মিলে আমার মাতৃত্বের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছো। আমি পাগলো জানো আনভিকে যখন নিজের কাছে টেনে নিতাম তখন কেমন টান অনুভব করতাম। আনভিকে যেদিন প্রথম দেখি সে আমাকে মাম্মাম বলেছিলো তখন বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়েছিলো, তার মায়াবী মুখ দেখে নিজের কেমন লাগছিলো, যখন তাকে আমার কাছে থেকে মালা নিয়ে নিলো তখন মনে হচ্ছিলো আমার হৃদয় থেকে হৃদস্পন্দন কেউ কেরে নিয়ে যাচ্ছে…
অর্ণব অন্তু দিকে তাকায় সেদিন সেও দেখেছিলো শপিং কমপ্লেক্সে আনভি আর অন্তু প্রথম দেখা সে আড়াল থেকে সব দেখেছিলো। অন্তু আবার বললো…
অন্তুঃ প্রতি বার আনভিকে দেখে আমার নিজের ভেতরে অস্থির হতো কাওকে বলতে পরতাম না, আমার শান্তি লাগতো তাকে নিলে, আদর করলে, তার মুখ থেকে মাম্মাম ডাক শুনলে। যেদিন আনভিকে অসুস্থ হতে দেখলাম তখন মনে হচ্ছিল আমি কেন মরে গেলাম না কেন ওই ছোট্ট প্রানটাকে আমার কারনে কষ্ট পেতে হলো। যখন তুমি আমভিকে আমার কোল থেকে নিয়ে নিলে আমরা মনে হলো আমার প্রাণকে কেউ কেরে নিয়েছে। অর্ণব আমার মেয়ে আমার কাছে থাকা সত্ত্বেও আমি তাকে নিজের কাছে পাইনি তাকে ভালোবাসতে পারিনি মন ভরে, কেন করলে তুমি এটা কেন। নিজেকে ঘন্না লাগছে আমি আমার মেয়েকে চিনতে পারলাম না কেমন মা আমি নিজের অংশকে চিনতে পারলাম না। তুমি জানো আমি প্রথম আনভিকে মিথ্যা কথা বলেছি তাও তার অসুস্থতা কথা জেনে আমি জানতাম আনভি ঘুম থেকে ওঠে আমাকে না দেখলে সে কষ্ট পাবে কান্না করবে তারপরেও আমি চলে এসেছিলাম। এখন বুঝতে পারছি আমার মেয়েটা কতটা কষ্ট পেয়েছিলো আমার কথায় আমি তাকে কষ্ট দিয়েছি সে অসুস্থ জেনেও কষ্ট দিয়েছি। আমি খুব খারাপ খুব। এটা আমি কি করে করতে পারলাম কি করে।
বলে কান্না করতে লাগলো অর্ণব তার কাছে গেলে অন্তু তাকে জড়িয়ে ধরে এমন কি অর্ণবও। অন্তু কান্না করতে করতে বললো…
অন্তুঃ আমি ভালো মা হতে পারিনি অর্ণব আমি ভালো মা হতে পারিনি। আমি আনভিকে কাঁদিয়েছি কষ্ট দিয়েছি। আনভি আমাকে মানতে পারবে না মা হিসেবে। আমি ব্যর্থ হলাম আজ মা হয় নিজের মেয়েকে কি করে এতো কষ্ট দিলাম কি করে।
অর্ণবঃ জান কান্না করো না তোমার শরীর খারাপ করবে। আর আনভি তোমায় ভুল বুঝবে না সে জানে তার মাম্মাম তাকে কতোটা ভালোবাসে। সে কষ্ট পেয়েছে ঠিক কি কিন্তু যখন সে জানলো তার ভালো আন্টি তার মাম্মাম তখন তার খুশির ঠিকানা ছিলো না, সে তার মাম্মাম কে নিজের কাছে রাখতে চায়। প্লিজ জান আম্মু ঠিক আছে আর সে তার মাম্মামের জন্য ওয়েট করছে।
অন্তুঃ অর্ণব আমি আনভির কাছে যাবো। আমি তাকে মন ভরে আদর করবো প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো প্লিজ।
অর্ণব অন্তুকে তখনি চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে আসে। অন্তু গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে চলে যায় অর্ণব ও তাড়াতাড়ি যায়। অরনি সব প্রাপ্যর থেকে জেনে সকালে চৌধুরী বাড়িতে চলে আসে। তারা সবাই সোফাতে বসে ছিলো আর আনভি বার বার তার মাম্মাম কখন আসবে বলছে অরনি তাকে বুঝিয়ে যাচ্ছে তার মাম্মাম একটু পরে চলে আসবে, তারদের কথার মাঝে অন্তু দৌড়ে এসে আনভিকে ডাক দেয়। অন্তুর ডাকে সবাই তার দিকে তাকায় অর্ণব অন্তুর পেছনে এসে দাড়ায়, অন্তু ছলছল চোখে আনভিকে তার কাছে ডাকতেই আনভি দৌড়ে এসে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে অস্পষ্ট স্বরে বললো… মা মাম্মাম। এই শব্দটাই যথেষ্ট ছিলো অন্তুকে ভাঙ্গাতে, অন্তু আনভিকে নিয়ে ক্লান্ত শরীর ফ্লোরে বসে আনভিকে আদর করতে লাগলো…..
____________________________________
এখন,,,,,
আনভি মা তোমার মাম্মাম তোমাকে কষ্ট দিয়েছে তাই না, তোমাকে কাঁদিয়েছে মাম্মাম ভালো না সে তোমাকে ঠিক মতো ভালোবাসেনি। মাম্মাম পঁচা… বলে অন্তু কান্না করতে লাগলো। আনভি অন্তুর সারা মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো…
আনভিঃ আমার মাম্মাম পঁচা না। আমার মাম্মাম ভালো আমাকে অনেক ভালোবাসে। মাম্মাম কেঁদেও না তা না হলে আনভিও কেঁদে দেবে।
অন্তু আনভিকে জড়িয়ে ধরে বললো…. না মা তুমি কাঁদবে না তোমাকে আমি আর কাঁদেতে দেবো না। তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসবো। তুমি কেঁদেও না, তুমি কাঁদলে আমার মনে হবে আমি তোমার ভালো মাম্মাম হতে পারিনি।
আনভি অন্তুকে শক্ত করে জিড়িয়ে ধরে বললো… মাম্মাম তুমি আমাকে ছেড়ে আর যাবে না তো। তুমি চলে গেলে আমি অনেক কান্না করবো, খাবোও না কিন্তু।
অন্তুঃ না মা আমি কোথাও যাবো না তোমাকে ছেড়ে। কেউ তোমাকে আমার থেকে আর আলাদা করতে পারবে না কউ না।
অন্তু শক্ত গলায় কথাটা বলে অর্ণবের দিকে তাকায়। অর্ণব অন্তু কথার মর্ম বুঝে অপরাধ নুয়ে মাথা নিচু করে থাকে৷ উপস্থিত সবাই একই অপরাধ মাথা নামায় তারা সবাই অন্তুর অভিযোগ সবাই বুঝছে। এতো বছর ধরে আনভিকে তার কাছে থেকে দূরে রেখেছে বলে তার এতো রাগ, অভিমান, অভিযোগ। অর্ণব ভাবছে অন্য কথা অন্তুকে এখন কিছুতেই আনভির থেকে দূরে রাখা যাবে না আর না অন্তু দূরে যেতে চাইবে। তাইলে তার তৈরি করা এতো দিনের খেলে সব তাইলে বিফলে যাবে, না এটা সে কিছুতেই হতে দেবে না সে অন্তুকে সব বলে বুঝিয়ে তাকে, কিছুতেই তার আর আনভির আসল পরিচয় কাউকে বলতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই না। হঠাৎ আনভির কান্না আর বাকিদের চিতকার শুনে অর্ণবের হুশ আসে, অর্ণব আনভির দিকে তাকিয়ে দেখে অন্তু ফ্লোরে অজ্ঞান অবস্থায় পরে আছে আর আনভি তাকে ডাকছে। একমুহূর্তে মধ্যে কি হলো অর্ণব জানে না সে বিস্ময়, স্তব্ধ, অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সে অন্তুর নিস্তেজ মুখশ্রী দিকে, মুখটা শুকিয়ে আছে অন্তুর। আনভির ডাকে সে বাস্তবে আসে দৌড়ে অন্তুর কাছে গিয়ে অন্তুকে তার বুকে নিয়ে তার গালে তার হাত দিয়ে হালকা থাপারিয়ে বললো…
অর্ণবঃ অন্তু এই অন্তু কি হলো এই কথা বললো৷ দেখো আনভি কান্না করছে অন্তু।
আনভিঃ মাম্মাম ওঠো পাপা মাম্মাম আমার সাথে কথা বলছে না কেন। পাপা মাম্মামকে কথা বলতে বলো না আমার সাথে না হলে আমি কান্না করবো। মাম্মাম তো আমার কান্না সহ্য করতে পারে না তাই না।
আনভি কান্না করতে লাগলো অর্ণব একবার অন্তুর তেজহীন মুখ দেখে আবার আনভির দিকে তাকায় মেয়েটা তার মাম্মামের জন্য কান্না করছে। অরনি তার দিদিয়াকে সেন্স লেস দেখে কান্না করতে লাগে। কি থেকে কি হলো তারা কেউ বুঝলো না। একটু আগেই তো অন্তু আনভিকে আদর করছিলো কিন্তু এখন হঠাৎ কি হলো তার। অর্ণব প্রাপ্য কে বললো…
অর্ণবঃ প্রাপ্য জলদি ডক্টরকে ডাক আমি অন্তুকে নিয়ে ওপরে যাচ্ছি। আর অরনি তুমি আনভিকে একটু সামলাও প্লিজ।
অরনি অর্ণব কথা শুনে আনভিকে নিতে নিলে সে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে বললো… আমি মাম্মামকে ছাড়া কোথাও যাবো না।
অর্ণবঃ আম্মু তোমার মাম্মাম কোথাও যাচ্ছে না তাকে আমাদের রুমে নিয়ে যাচ্ছি। তোমার মাম্মাম তো এখন ঘুমিয়ে আছে তাই না। তুমি অরনি খালামনির কাছে যাও।
আনভি তার পাপার কথা শুনে অন্তুকে ছেড়ে দেয় অরনি তাকে কোলে তুলে নেয়। প্রাপ্য ডক্টরকে ফোন করে তাদের বাড়িতে আসতে বলে তাড়াতাড়ি। অর্ণব অন্তুকে কোলে তুলে তার রুমে নিয়ে গিয়ে শুয়ে দিলো। অন্তুর কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে তার বাসে বসে তার হাত ধরে রাখলো। অন্তুর মলিন মুখ দেখে তার বুকে ব্যাথা অনুভব করছে, তার জন্য আর কতো কষ্ট এই মেয়েটা পাবে সে জানে না, অর্ণব আস্তে আস্তে বলো..
অর্ণবঃ তোমার জীবনে আমি সুখ হয়ে যেতে চাই.. দুঃখ হয়ে না…..
তোমার জীবনে আমি ভালোবাসা হয়ে থাকতে চাই…. অভিসাপ হয় না…!
চলবে…