তুমি আসবে বলে পর্ব -৪৯+৫০+৫১

#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৪৯

রুমের পরিবেশ শীতল ঠান্ডা কেউ কথা বলছে না সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে। ডক্টর অন্তুকে দেখছে তখন প্রাপ্য ডক্টরকে কল করলে তিনি তাড়াতাড়ি চলে আসে। অর্ণব অন্তুর এক হাত ধরে বসে আছে, আনভি অন্তুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। আনভিকে কিছুতেই অন্তুর কাছে থেকে সরানো যায়নি তাই তাকে অন্তুর কাছে রাখা হয়। ডাক্তার গম্ভীর মুখে উঠে দাড়ালে অর্ণব ভ্রু কুচকে সেও ওঠে ডক্টরকে বলে…

অর্ণবঃ আঙ্কেল অন্তুর কি হয়েছে? এখনো অন্তুর জ্ঞান ফিরছে না কেন? কোন অসুবিধা আছে কি আপনাকে এমন দেখাছে কেন?

অর্ণবের কথায় ডক্টর মাসুদ শেখ তার দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারায় তাকে অন্তুর থেকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে বললো…

ড.মাসুদঃ রোদ অন্তুর একটু পরে জ্ঞান ফিরে আসবে কিন্তু..

অর্ণবঃ কিন্তু কি?

ড.মাসুদঃ অন্তু কাল থেকে কিছু খাইনি বলে সেন্সলেস হয়ে গেছে। আর অন্তুকে দেখে আমার মনে হচ্ছে সে মানুষিক ভাবে আঘাত পেয়েছে মানে তার সামনে এমন কিছু সত্যি এসেছে যে, সে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনি। তুমি অন্তুকে কোন সাইক্রেটিস দেখাও। এতো মানুষিক যন্ত্রণা সে নিতে পারছে না তাই তুমি ভালো কোনো ডক্টর দেখাও এতে অন্তুর সুবিধা হবে। আমি কি বলছি তুমি বুঝতে পারছো রোদ..

ডক্টরের কথা শুনে সবাই চমকে যায় অর্ণব মুখ আরো শুকিয়ে যায় সে জানতো অন্তু সব সত্যি এক্সেপ্ট করতে কষ্ট হবে তাই তো অন্য একটা সত্যি সে বলেনি, কিন্তু আনভির আর তার সত্যি এতোটা বাজে ভাবে অন্তুর মস্তিষ্কে পরবে সে ভাবতে পারেনি। প্রাপ্য ডাক্তারকে এগিয়ে দিতে যায়। মি.চৌধুরী এসে অর্ণবের কাঁধে হাত রাখে অর্ণব মলিন মুখ তার দিকে তাকিয়ে বললো…

অর্ণবঃ বাবাই আমি এটা করতে চাইনি আমি তো অন্তুকে ধীরে সুস্থে বলতে চেয়েছিলাম যাতে সে কোনো ভাবে আঘাত না পায় আর না মানুষিক ভাবে ভেঙে পরে। কিন্তু দেখো আমি যেই ভয় পেয়েছিলাম সেটাই হলো। বাবাই আমি অন্তুকে ছাড়া থাকতে পারবো না…

বলে তার বাবাইকে জড়িয়ে ধরে সে নিজেকে স্ট্রিং যতোই দেখাক না কেন তার দূর্বলতা অন্তু আর আনভি তাদের কিছু হলে সে একেবারে ভেঙ্গে পরে। মি.চৌধুরী ছেলেকে এতোটা ভেঙ্গে পরতে দেখে তিনি আশ্বস্ত দিয়ে বললো…

মি.চৌধুরীঃ অর্ণব অন্তুর কিছু হবে না তুমি নিজেকে শক্ত করো। আমি ভালো সাইক্রেটিসের খোঁজ নিচ্ছি। অন্তুকে ভালো চিকিৎসা দিলে সে ভালো হয়ে যাবে দেখে নিও।

অর্ণব কিছু বলো না সে অন্তুর দিকে তাকিয়ে থাকলো মেয়েটা দূর্বল শরীরলে ঘুমিয়ে আছে তার পাশে আনভি তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। সবাই একে একে চলে যায় অর্ণব অন্তুর কাছে গিয়ে দেখে আনভি ঘুমিয়ে আছে অন্তুর বুকের ওপর অর্ণব মলিন হাসলো কিন্তু আনভিকে সরালো না থাক মায়ের কাছে। অর্ণব তাদের গা ঘেঁষে শুয়ে পরলো, তার মাথা কাজ করছে না অন্তুর জ্ঞান ফেরার পরে তাকে কি বলে মির্জা বাড়িতে পাঠাবে সে জানে না, অর্ণব না ভেবে ঘুমিয়ে যায়….
____________________________________

পিটপিট করে তাকালো অন্তু, মাথাটা ভারলাগছে তার, শরীলটা ও দূর্বল লাগছে। মাথায় এক হাত দিয়ে মনে করার চেষ্টা করে তখন কি হয়েছিলো সে তো আনভির সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে যায় তারপরে কিছু মনে নেই তার। অন্তু উঠলে নিলে তার বুকে ভাড়ি কিছু অনুভব করে তাকিয়ে দেখে আনভি গুটিগুটি হয়ে তার বুকের মাঝে ঘুমিয়ে আছে। অন্তু হাসলো সেটা তার একরাশ মুগ্ধতার বিভরের প্রাপ্তি, সে তো এটাই চাইতো তার সন্তান তার বুকের মাঝে থাকবে। অন্তু তার হাত দিয়ে আনভির এলোমেলো চুল গুছিয়ে দিচ্ছে তার কাছে আনভির বড়ো চুলের রহস্য তার কাছে জানা..সে একবার অর্ণবকে বলেছিলো..

অন্তুঃ অর্ণব আমার মেয়ে হলে তার চুল আমি কাটতে দেবো না অনেক বড় চুল রাখবো।

অর্ণবঃ কেন?

অন্তুঃ আমার চুল এখনকার থেকেও বড় ছিলো কিন্তু দাদাভাই কেটে দিয়েছে তাই আমার মেয়ের চুল আমি কাটবো না বড় করবো।

অর্ণবঃ এখনো মেয়ে হলো না আগে থেকে এতো প্লেন যদি মেয়ে না হয় তখন..

অন্তু জেদ ধরে বললো… আমার মেয়ে লাগবে আর মেয়েই হবে বুঝলে..

সেদিন অর্ণব শুধু হেসেছিলো কিন্তু কিছু বলেনি। আজ অন্তুর কাছে আনভির চুলগুলো তার করা অবদার অর্ণব রাখেছে ভেবেই সে খুশি। অন্তুর নড়াচড়া অর্ণব জেগে যায়। অর্ণব হবতম্ভ হয়ে উঠে বসে অন্তুকে জিজ্ঞেস করে…

অর্ণবঃ তুমি ঠিক আছো। কি হয়েছে আমাকে বলো। খারাপ লাগছে আমি ডক্টর ডাকবো। কি হলো কথা বলছো না কেন।

অর্ণবকে তার জন্য উত্তেজিত হতে দেখে অন্তু মৃদু হাসলো। অর্ণব অন্তুর হাসি দেখে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, অর্ণবের তাকানো দেখে অন্তু বললো…

অন্তুঃ আমার কিছু হয় নি। তোমাকে টেনশন করতে হবে না। আমি আনভিকে দেখছিলাম আমার মেয়ে কতো কিউট লাগছে আমার বুকে মনে হচ্ছে বেশি বেশি করে আদর করি..

অর্ণব মুখ গোমরা করে বললো… আনভি শুধু তোমার মেয়ে আমার কিছু না বুঝি…

অন্তুঃ হ্যাঁ আনভি এখন থেকে শুধু আমার মেয়ে। তুমি ছিলে এতোদিন তাই তোমার মেয়ে হয়ে ছিলো এখন আমি এসে গেছি তাই এখন থেকে আমার মেয়ে বুঝলে।

অন্তুর কথা শুনে অর্ণবের মুখ কালো হয়ে গেলো অন্তু সেটা দেখেও কিছু বললো না। অর্ণব মিনমিন করে বললো…. জান সরি বলছি তো আগের জন্য আর এমন হবে না আর প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দাও।

অন্তু আনভিকে নিজের বুকের থেকে আস্তে করে নামিয়ে বালিসে ওপর রেখে উঠে বসে অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। আকাম্মসিক অন্তুর কাজে অর্ণব বিস্মিতো সে তো মনে করেছিলো অন্তুর তার সাথে ঠিক মতো কথা বলবে না তাকে অনেক কাটখর পুরিয়ে তাকে মানাতে হবে কিন্তু তাকে তো কিছু না করতেই অন্তু গলে ক্ষীর হয়ে গেছে। অর্ণব অন্তুর শক্ত করে জড়িত ধরে তার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ছোট ছোট কিস করতে লাগলো। অর্ণবের কাজে অন্তুর শরীলে শিহরিত হতে লাগলো, অন্তু অর্ণবের কানের কাছে মিটিয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো…

অন্তুঃ অর্ণব আমি তোমাকে ৪টা বছর কাছে পাইনি নিজেকে অনেক কষ্ট দিয়েছি কিন্তু তোমাকে ভুলতে পারিনি। তুমি যেটা করেছো তাতে তোমার কঠিন শাস্তি পাওয়া দরকার কিন্তু সেটা আমি দিতে পারবো না, কেননা ৪বছর তোমার থেকে দূরে থেকে এটা বুঝেছি তোমাকে ছাড়া একটা মূহুর্ত আমি থাকতে পারবো না। আর এখনতো আরো নয় তোমাকে কাছে পেয়ে ভুলেও তেমাকে দূরে সরাতে পারবো না এই বুকেতে এতো জোর নেই আমার। কিন্তু শাস্তি তোমাকে আমি দেবোই আনভির পাপা…..

বলে অর্ণবের কানে লতিতে কামর দিয়ে তাকে নিজের থেকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিলো। অন্তুর শাস্তি দেবার কথা শুনে অর্ণব ভ্রু কুচকায় কিন্তু অন্তুর তার কানে কামর আর ধাক্কা দেয়া সে হতভম্ব হয়ে যায়। অর্ণব রেগে ছোট্ট ছোট্ট চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকলে অন্তু খিলখিল করে হাসতে লাগে অর্ণব অন্তুর হাসি দেখে সব রাগ ভুলে মুগ্ধ নয়নে তাকে দেখতে লাগলো। এই হাসি এই হাসি সে ৪টা বছর মিস করেছে, এই হাসির জন্য সে কতো কি না করেছে, এই হাসিতে দেখে তার বুকের পাশে মোচড় দিলো সে বুকে হাত দিয়ে অন্তর দিকে তাকিয়ে থাকে। অন্তু হাসি থামিয়ে বললো…

অন্তুঃ আমার থেকে ৫ হাত দূরে থাকবে বুঝেছো। আমার কাছেও ঘেষবে না, যতখন না ওবদি আমার রাগ পরছে তোমার করা সব কাজের থেকে ততখন এই শাস্তি চলবে তোমার ওপর৷ এই শাস্তি না মানলে, আমি তোমাকে, আমি তোমাকে..

অর্ণব তার ভ্রু কুচকে বললো…. না মানলে আমাকে কি জান?

অন্তু ফোস করে বললো… তা না মানলে আমি তোমাকে ১বছর আমাকে ছুতেও দেবো না এমন কি আদর করতেও দেবো না। এটাই তোমার শাস্তি হবে আমাকে কষ্ট দেবার জন্য। হু হু

অর্ণব অন্তু বাচ্চামো সভাব দেখে দেখে হাসলো। অন্তু মুখ ফোলায় অর্ণবের হাসি দেখে। অর্ণব অন্তুর কাছে গিয়ে তার গাল দুটো টেনে বললো….

অর্ণবঃ এইতো আমার বাচ্চামো অন্তু ফিরে এসেছে। আমার সোনা জান, কিউটি জান, তোমাকে এই ভাবেই মানায় আর আমি তোমার শাস্তি মাথা পেতে নিলাম তুমি যতখন না বলবে আমি তোমার কাছে ঘেষবো না সত্যি প্রমিস। কিন্তু আমাকেও একটা প্রমিস করতে হবে তোমাকে আমি যা করতে বলবো তুমি তাই করবে। করো প্রমিস..

অন্তু তীক্ষ্ণ নজরে বললো… কি প্রমিজ করতে হবে?

অর্ণব ঢোক গিলো না জানি এই মেয়ে সব শুনে কি করে বসবে। অর্ণব শান্ত সুরে বললো… জান তোমাকে কিছু দিনের জন্য শুধু কিছুদিনে জন্য মির্জা বাড়িতে গিয়ে থাকতে হবে আমাকে আর আনভিকে ছাড়া এমনকি তুমি কাওকে আমাদের আসল পরিচয় দিতে পারবে না।

অর্ণবের কথা শুনে অন্তু ভীষণ রেগে যায় এই ছেলে নিজেকে কি ভাবে তাকে কি করে তার থেকে দূরে যেতে বলছে সব জেনেও তাকে কি করে আবার নরকে পাঠাচ্ছে না সে এটা মনবে না কিছুতেই না। অন্তু অর্ণবকে কিছু না বলে ঘুমন্ত আনভিকে কোলে তুলে নিয়ে উঠে দাড়ায়। অর্ণব অন্তুর কাজ দেখে হতবিহ্বল তার জানা নেয় এখন অন্তু কি করবে। অর্ণব উঠে গিয়ে অন্তুকে ধরে বললো…

অর্ণবঃ কি করছো কি তুমি নিজের দেখেছো কি তুমি কতোটা দূর্বল। হাঁটতে পারচ্ছো না ঠিক মতো আর তুমি আনভিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো…

অন্তু অর্ণবের হাত সরিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বললো…. কি করছি আমি তাই না চলে যাচ্ছি আমি শুনতে পাচ্ছো তুমি, চলে যাচ্ছি আমি আনভিকে নিয়ে। এখানে আমি এক মুহূর্ত থাকবো না আমি আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যাবো কিন্তু মির্জা বাড়িতে কিছুতেই যাবো না। আনভিকে থুয়ে তো কিছুতেই না…

অর্ণবঃ জান আমার কথাটা ঠান্ডা মাথায় শোন তারপরে তুমি ডিসিশন না। আর আনভিকে আমার কাছে দাও পরে গেলে মেয়েটা চোট পাবে প্লিজ আর শান্তু হয়ে বসো তোমার সাথে কিছু কথা আছে। প্লিজ…

অন্তু অর্ণবের কথায় দমে যা তাই আনভিকে তার কাছে দিলে অর্ণব আনভিকে শুয়ে দিয়ে অন্তুকে কোলে নিয়ে নিলো হঠাৎ কোলে নিতে অন্তু অর্ণবের শার্টে কোলার খামচে ধরে যাতে না পরে যায় সে। অর্ণব তাকে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দুলনাতে বসে অন্তুকে তার কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো…

অর্ণবঃ শোনো জান তুমি এখনো অনেক কিছু জানো না, তোমার জানার মধ্যে এখনো অনেক কিছু অজানা কথা আছে। আমি বেচে গিয়ে কেনো তোমাকে নিতে গেলাম না আর আনভিকে কেন নিয়ে আসলাম তুমি জানো না। শোন তুমি এখন যদি আমার সাথে বা আনভির সাথে থাকো তাইলে সবাই জেনে যাবে আমাদের আসল পরিচয় আমারা আসলে কে। তখন আমাদের অজানা শত্রু আমাদের মারতে দ্বিধা বোধ করবে না। তোমাকে সব বলে তুমি বুঝবে না আর তোমাকে মানুষিকে ভাবে কোন চাপ আমি দিতে চাই না। তাই প্লিজ আনভির জীবনের কথা ভেবে তুমি মির্জা বাড়িতে চাও প্লিজ…

অর্ণবের কথা অন্তু গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনলো তার কাছে অর্ণবের কথা আর আয়ানের কথা সারমর্ম একই লাগছে। কিন্তু আয়ান আর অর্ণব কেন এক কথা বলবে আয়ান তো তাকে মারতে চেয়েছিলো তাইলে তার কথা আয়ানের কথার সাথে মিল কেন। আর সেদিন আয়ানকে তো অর্ণব বাঁচিয়েছিলো। অর্ণব তার কাছে থেকে কি সত্যি লুকাছে আর সে আয়ানকে কেন শাস্তি দিচ্ছি না আয়রা, অয়নের কথা ভেবে হ্যাঁ সেটাই হতে পারে। অন্তু নরম কন্ঠে বললো…

অন্তুঃ আমরা এখান থেকে কেন চলে যাচ্ছি না। আমরা এখান থেকে চলে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে তো। তুমি আমি আর আনভি ভালো ভাবে বাঁচতে পারবো৷

অর্ণবঃ হ্যাঁ আমরা নতুন কোথাও গিয়ে জীবন শুরু করতেই পারি কিন্তু আমাদের সাথে করা অন্যায়, ৪বছর তোমার থেকে আমি দূরে থেকেছি, তোমাকে কষ্ট পেতে হয়েছে, আনভি তার মা ছাড়া এতো দিন বড় হচ্ছিল এসবের হিসাব দায়ভার কে নেবে বলতে পারো। আমাদের সাথে করার সব অন্যায়ের শাস্তি তাকে পেতে হবে এমনকি এখন তা পাচ্ছে। আমার কাথাটা মানো জান তুমি জাস্ট কিছুদিনের জন্য মির্জা বাড়িতে ফিরে যাও, না হলে এতো দিনের খেলে এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।

অন্তু ঘুরে অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে বললো…. আমি কোন সত্যি জানতে চাই না, আমি শুধু চাই তোমার আর আনভির সাথে থাকতে তাও কোন ভয় ভিত্তি ছাড়া। আমি জানি আমাদের সাথে যেটা হয়েছে সেটা অন্যায় হয়েছে তাই যে এটা করেছে তার শাস্তি সে পাক আমিও চাই।

অর্ণব অন্তুর গালে চুমু দিয়ে বললো…. অন্তু সঠিক সময় সত্যি সবার সামনে আসবে ততদিন অপেক্ষা করো। এই অপেক্ষাই শেষ অপেক্ষা আমাদের জীবন তারপর আর কোনো অপেক্ষা আমাদের করতে হবে না। আমি তুমি আর আনভি নতুন জীবন শুরু করবো তাও নতুন ভাবে নতুন সুখ নিয়ে যেখানে অতীতের কোন জায়গা নেই বুঝলে৷

অন্তু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে৷ কিছুক্ষণ নিরব থেকে অন্তু বলে… আনভিকে কি করে বোঝাবে কেন আমি তার সাথে থাকছি না। সে তো কান্না করবে কষ্ট পাবে৷ আমি তার কষ্ট দেখে কি করে থাকবো ওখানে।

অর্ণবঃ আমি আম্মুকে মানিয়ে নেবো আর তুমি চিন্তা করো না আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। তুমি শুধু রাতটা মির্জা বাড়িতে থাকবে সারা দিন তুমি আনভির সাথে থাকবে।

অন্তু মুখ গোমরা করে বলো… যেতেই হবে না গেলে হয় না।

অর্ণব দুষ্টু হাসি তার ঠোঁটের কোণে রাখে বললো… তাইলে চলো কাল রাতের অবশিষ্ট কাজ এখন করে ফেলি। কাল রাতে তুমি ঘুমিয়ে গেছিলে আমার মন ভরেনি তাই এখন মনটা ভরিয়ে দাও কি বললো….

অর্ণবের লাগামহীন কথা শুনে অন্তু কান গরম হতে লাগলো। মুখে লাল আভা ফুটে উঠলো, লজ্জা লাল হতে লাগলো সে। অর্ণবে যেন অন্তুর এই রুপ দেখে নেশাকাজ করছে তীব্র নেশা, অন্তু অর্ণবের নেশাকৃত চক্ষু দেখে আরো লজ্জা পায় অস্পষ্ট সরে বললো…. আস্তো অসভ্য একটা…
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৫০

নিস্তব্ধ রাতে তারার আনাগোনা দেখে মনে ভরে যায়। রাস্তার দু’ধারে ল্যামপোস্টের আলো পরছে কিছুক্ষণ আগে রাত্রির নেমেছে। রাস্তায় শতো শতো গাড়ির আনাগোনা। একমনে গাড়ি চালাছে প্রাপ্য তার পাশে মুখ ভার করে বসে আছে অরনি, আড়চোখে প্রাপ্য তা দেখে কিন্তু কিছু বললো না, কেননা গাড়ির পেছন সিটে বসে আছে অর্ণব আর অন্তুর। আনভি অন্তুর জড়িয়ে ধরে তার কোলে ঘুমিয়ে আছে। অন্তু আনভিকে আদর করতে থাকে এতো দিন পরে তাকে পেয়ে আবারো তাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে যেতে হচ্ছে। অন্তুকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে অর্ণব তাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে বুকের মাঝে নিয়ে চুপটি করে থাকে, অন্তু অর্ণবের স্পর্শ পেয়ে তার বুকের মাঝে চোখ বুজে থাকে। একটু পরেইতো তাকে চলে যেতে হবে এই দুজনকে ছেড়ে কিছু ঘন্টার জন্য কিন্তু এই কিছু ঘন্টার ব্যবধান তাকে পুরাছে। প্রাপ্য আয়নাতে পিছনে দেখে গাড়ির লাইট বন্ধ করে দেয় তারপর অরনির হাত নিজের হাতে নিয়ে গাড়ি চালাতে লাগে। হঠাৎ ঠান্ডা স্পর্শ পেতেই অরনি কেঁপে ওঠে কিন্তু নিজের হাত ধরার মালিকে চিনে সে চুপ করে থাকে, তার মন ভালো না তার দিদিয়া তার সাথে কথা বলছে না কেমন চুপ হয়ে গেছে, সে জানতো সত্যি জেনে তার দিদিয়া তার ওপর রাগ করবে অভিমান করবে তাই বলে একেবার চুপচাপ হয়ে যাবে কথা বলবে না তার সাথে সে সেটা মানতে পারছে না কিছুতেই না। অরনির এখনও মনে পরাছে দুপুরের কথা যখন সে খাবার নিয়ে তার দিদিয়ার কাছে যায়….

অরনি খাবার হাতে করে অর্ণবে রুমে গেলে সে দেখে, অর্ণব আর অন্তু আনভিকে নিয়ে মেতে আছে৷ অরনি তার দিদিয়াকে হাসি খুশি দেখে তার মনে প্রশান্ত বয়ে গেলো। অরনি কে দেখে অর্ণব বললো…

অর্ণবঃ অরু ওখানে কেন ভেতরে আসো…

অর্ণবে কথায় অন্তু একবার অরনির দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে আনভিকে নিয়ে খেলতে লাগলো। অন্তুর এমন কাজে অরনি কষ্ট পায় তার দিদিয়া তার ওপর রাগ করছে সে বুঝলে অরনির মুখ কালো হয়ে যায়। অরনি হঠাৎ মুখের রং বদলাতে দেখে অর্ণব বুঝতে পারে অন্তু অরনির সাথে কথা বলছে না বলে তার মন খারাপ হয়ে গেছে। অরনি রুমে ভেতরে এসে খাবার টেবিলে থুয়ে বললো…

অরনিঃ ভাইয়া দিদিয়া আপনার আর আনভির খাবারটা দিয়ে গেলাম খেয়ে নেবেন।

অর্ণবঃ ঠিক আছে। তুমি খেয়েছো আর বাবাই প্রাপ্য তারা?

অরনি অন্তুর দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু একটা বারো অন্তু অরনির দিকে তাকায় না সেটা দেখে অরনি আহত হয়। অরনি কান্না চেপে রেখে বললো….

অরনিঃ জ্বি ভাইয়া সবাই খেয়েছে। ভাইয়া দাদাভাই ফোন করেছিলো সে আপনাকে তার সাথে কথা বলতে বলেছে।

অর্ণবঃ ঠিক আছে আমি কথা বলে আসছি। তুমি বসো।

অর্ণব আদির সাথে কথা বলতে গেলো, অরনি আদিকে এখানকার সব ঘটনা বললে আদি অরনিকে বলে অর্ণব যে তার সাথে কথা বলে তাই অরনি বলো। অর্ণব গেলে অরনি অন্তু পাশে বসে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো….

অরনিঃ দি দিদিয়া আমার সাথে কথা বলবি না। এতো রাগ আমার ওপর।

অন্তু স্বাভাবিক ভাবে বললো… তোদের ওপর রাগ করে কি করবো বল। আমি নিজের ওপর রাগ করে আছি আমার বাড়ির কমবেশি সবাই অর্ণব আনভির কথা জানতো কিন্তু আমি কিছু জানি না।

অরনিঃ দিদিয়া বাড়িতে অর্ণব ভাইয়া আর আনভির কথা শুধু আমি, দাদাভাই আর দিদুন জানি এর বেশি কেউ কিছু জানে না। প্লিজ দিদিয়া আমার ওপর রাগ করে থাকিস না আমি শুধু অর্ণব ভাইয়ার কথা মেনেছি এর বেশি কিছু না।

অন্তু ক্ষিপ্ত সরে বলো…. অরনি বলাম তো আমি কারোর ওপর রেগে নেই তাই বেশি বুঝিস না। তুই তোর কাজ করেছিস আর এখন আমাকে আমার কাজ করতে দে।

বলে আনভিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। অন্তু যদি একটা বার অরনির দিকে তাকাতো তাইলে দেখতে পারতো অরনির কান্নারত মুখ খানি, সে কতটা কষ্ট পাচ্ছে তার দিদিয়ার মুখে তার সম্পূর্ণ নাম শুনে। অরনি কান্না করতে করতে বাইরে চলে যায় অরনি যেতেই অন্তু দরজার দিকে তাকিয়ে চোখ মুখে বলে…. তোরা সবাই দোষ করেছিস আমাকে সত্যি না বলে তাই তোদের কেউ শাস্তি পেতে হবে।

অর্ণব সবটা খেয়াল করলো কিন্তু কিছু বলো না সে জানে অন্তু অরুর সাথে বেশিক্ষণ কথা বলে থাকতে পারবে না। অর্ণব এসে খাবারটা নিয়ে অন্তু আর আনভিকে খাওয়াতে লাগলো অন্তু তৃপ্তি করে খেতে লাগলো। অন্তুর হাসি খুশি দেখে অর্ণবও সন্তুষ্ট হয় তাদের খাইয়ে অর্ণব আনভিকে সব বুঝিয়ে বলতে অন্তু তাদের সাথে থাকতে পারবে না। আনভি কিছুতেই অন্তুকে ছাড়বে না কিন্তু সে তার পাপার কথা পরে মেনে নেয়। রাত হয়ে আসলে অন্তু অরনিকে নিয়ে তারা মির্জা বাড়ির দিতে আসে….

গাড়ি থামতেই অরনি তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। প্রাপ্য তার হাত ছেড়ে দিয়ে তাকে বাইরে এসে দাড়াতে বলে অরনি কথা না বলে তাই করে। এখনও গাড়ির লাইট বন্ধ অন্তু অর্ণবের বুকে চোখ বুজে আছে। অর্ণব অন্তুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আস্তে করে বলে…

অর্ণবঃ জান বাড়ি চলে এসেছি..

অন্তু চোখ বন্ধ করে বললো…. আমি যাবো না প্লিজ…

অর্ণবঃ জেদ করে না কাল সকালে আবার চলে এসেও কেউ কিছু বলবে না। আনভিকে আমার কাছে দাও..

অন্তু অর্ণবের বুক থেকে সরে আসে সে জানে অর্ণব যখন বলেছে তাকে বাড়ি যেতে হবে তাইলে যেতেই হবে। এই ছেলে আগে এমন ছিলো না আগে সে যা বলতো তাই করতো, কিন্তু এখন তারকে দেখলে কেমন ভয় করে আগের মতো নম্র, শান্ত, নেয় এখন প্রচুর জেদি একরোখা হয়েছে সে যা বলবে তাই করতে হবে। অন্তু মুখ গোমরা করে আনভিকে অর্ণবের কাছে দিয়ে আনভির সারা মুখে চুমু দিতে লাগলো। তা দেখে অর্ণব বললো….

অর্ণবঃ বাহ বাহ মেয়েকে এতো আদর আর মেয়ের বাবাকে কিছু না। এটা কেমন কথা এটা তো আন্যায় তাই না। এই আন্যায় আমি মানবো না…

অন্তুঃ মানতে হবে কাছে আসলে ১বছরের জায়গায় ২বছর হবে তখন ভালো লাগবে বুঝি।

অর্ণব মাথা নাড়িয়ে না বলো, ২বছর কষ্ট সে মানতে পারবে না তাই কিছু করবে না। অন্তু অর্ণবের চুপসে যাওয়া মুখ দেখে ফিক করে হেসে দিয়ে অর্ণবের গালে শব্দ করে চুমু দিয়ে সরে আসে। অর্ণব তো অবাক অন্তু তাকে কিস করলো বসে সে কিছু বলো না কিছু বলে আবার শাস্তি ডোবল হবে তাই। অর্ণব অন্তুকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এসে দেখে প্রাপ্য অরনিকে কিছু বলছে আর অরনি মাথা নিচু করে চোখের পানি মুছে নিচ্ছে…

প্রাপ্যঃ অরুসোনা ভাবি ঠিক কথা বলবে তোমার সাথে দেখে নিও। কান্না করে না।

অরনি কিছু বলো না প্রাপ্য হতাস হলো কিন্তু হবে না কেন অরনির মন খারাপ দেখলে তার কষ্ট লাগে সেটা যদি এই মেয়ে যানতো। অর্ণব এসে তাদের কাছে দাঁড়িয়ে বললো…

অর্ণবঃ অরু প্রাপ্য কিছু বলছে তুমি কান্না করছো কেন?

প্রাপ্যঃ ভাইয়া আমি কিছু করিনি সত্যি

অর্ণবঃ তাইলে অরু কান্না করছে কেন?

প্রাপ্য কিছু বলতে যাবে তার আগে অরনি বলো… না ভাইয়া প্রাপ্য কিছু বলেনি। আমরা চোখে কিছু পরেছিলো তাই প্রাপ্য বার করে দিচ্ছিলো।

অর্ণব আর কিছু বলো না অন্তু বুঝেছে অরনি মিথ্যা বলছে তাও সে কিছু বলো না। অরনি আর অন্তু তাদের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে যায়। প্রাপ্য অর্ণব ও চলে যায়…..
____________________________________

অরনি আর অন্তু বাড়ি ডুকতেই নিহিতা মির্জা তাদের দিকে প্রশ্ন ছুরে দেয়….

নিহিতা মির্জাঃ তোমরা এখন কোথা থেকে আসলে। আর অন্তু কাল থেকে তুমি কোথায় ছিলে। তুমি জানো তোমাকে না পেয়ে আমরা কতোটা টেনশনে ছিলাম। বাড়িতে তোমার আব্বু, আদি, আকাশ কেউ নেই। কাউকে বলে তো জাবে কি হলো বলো…

নিহিতা কন্ঠে স্পষ্ট চিন্তার রেখা দেখা যাচ্ছে অন্তু অরনি তার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তু কাছে তার চাচীর ব্যবহার আগের মতো লাগছে আগে তাকে নিয়ে টেনশন করতো, বকা দিতো, কেয়ার কতো তেমন অন্তুর খুশিতে চোখে জল চলে আসে। হে নিহিতা মির্জা অরনি সাথে যে আন্যায় সে করেছিলো তারপর থেকে তিনি নিজেকে সুধরাতে লাগে সে এখন আর অন্তুকে খারাপ কথা বলে না, তাকে নিয়ে টেনশন করে আগেও করতো কিন্তু কিছু প্রকাশ করতো না। কাল অন্তুকে না দেখে সে অনেক টেনশনে পরে যায় কি করবে বুঝে না বাড়িতে কেউ না থাকায় সে আয়ানকে বলে কিন্তু আয়ানের তাতে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না, যেন কিছু হয়নি অন্তুর, তার গা ছাড়া ভাব দেখে তিনি রেগে যায়। অরনি ও তার মার দিকে তাকিয়ে থাকে। অন্তু নিজেকে সামলে বললো…

অন্তুঃ চাচী কাল আমি অর্ণবের ফ্ল্যাটে ছিলাম আজো সারা দিন ওখানেই ছিলাম।

নিহিতাঃ ঠিক আছে গেছো, কিন্তু কাউকে তো বলে যাবে তাইলে টেনশন করতে হতো না আমাদের। আর যেন এমন কাজ দ্বিতীয় বার না হয়। যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।

অন্তু অরনি তাদের রুমে চলে যায়। নিহিতা মির্জা ভারি নিঃশ্বাস ফলে মেয়েগুলোকে নিয়ে তার চিন্তা হচ্ছে। তিনি ও তার রুমে চলে যায়।
_______________________________________

পরেরদিন,,,,,

অর্ণব আমরা হসপিটালে কেন এসেছি। আমি একদম ঠিক আছি দেখো প্লিজ আমি ডক্টর দেখাবো না। বাড়িতে চলো বাবাই আমাদের জন্য ওয়েট করছে… বলে পিছনে ঘুরতেই অর্ণব তার হাত ধরে ফেলে রাগিকন্ঠে বললো…

অর্ণবঃ একপা এদিক ওদিক করলে পা ভেঙ্গে বাড়িতে বসিয়ে রাখবো। তুমি কি বাচ্চা হে যে ইনজেকশন দেখে ভয় পাও, তোমার থেকে আনভি ভালো সে কিছুতেই ভয় পায় না। চুপচাপ আমার সাথে চলো না হলে কোলে তুলে নিয়ে যাবো।

অর্ণবের কথা শুনে অন্তু গোমরামুখ হয়ে যায় এতে অর্ণবের কিছু যায় আসে না সে নিজের কাজে অটল৷ আনভি তার মাম্মার মুখ দেখে খিলখিল করে হেসে বললো….

আনভিঃ মাম্মাম তুমি কতো ভিতু ইনজনশত দেখে ভয় পাও। পাপ ঠিক করেছে তোমাকে বকে। হা হা হা

অর্ণব হাসে আনভির কথা শুনে এদিকে অন্তু ফুসছে অর্ণবের কারনে। তার মেয়ে তাকে ভিতু বলো ভাবা যায় হু হু এখন তার হাত পা ছড়িয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। অন্তু কাঁদো কাঁদো মুখে করে বললো…

অন্তুঃ আনভি মামুনি তুমি মাম্মাকে ভিতু বলে তোমার সাথে কথা নেয় এমনকি তোমার পাপার সাথেও না তোমারা দুজনেই পচা কেউ আমাকে ভালোবাসে না।

বলে কান্না করার অভিনয় করতে লাগলো। আনভি তার মাম্মার কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে তার চোখ মুখ কান্নার আভা ফুটে উঠতে লাগলো। অর্ণব মা মেয়ের কাজে বিরক্ত হলো। অর্ণব ধমুক দিয়ে বললো…

অর্ণবঃ এই মেয়ে তোমার নাটক বন্ধ করো না হলে তুলে আছাড় মারবো। আমি কিছু বুঝছি না বলে তোমার মনে হয়, তুমি কি করার চেষ্টা করছো হে আমাকে কি বাচ্চা মনে হয় তোমার। আর একটা বার এই ইমোশনাল ড্রামা করলে তোমাকে আমি কি করবো নিজেও জানি না। তোমাকে দেখা দেখি আনভিও নাটক করতে শুরু করবে তখন হবে আমার আরেক ঝামেলা একটাকে নিয়ে পারিনা আবার আসবে অন্যটা। চুপচাপ আমার সাথে চলো…

বলে অন্তু হাত ধরে হসপিটালের ভেতরে নিয়ে যেতে লাগলো৷ অন্তু তার কাজে সফল হতে পারেনি বলে মুখ ফুলিয়ে রেখেছে আসলেই সে অর্ণবকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করে যাতে তাকে ডক্টর দেখানো থেকে বাঁচতে পারে কিন্তু তা হলো না অর্ণব সব বুঝে গেয়ে বলে সে আর কথা বাড়ায় না তার সাথে যেতে লাগলো। (আসলে সকালে অন্তুকে নিয়ে তারা হসপিটালে এসেছে অন্তুকে দেখাতে তাই এতো নাটক করছে অন্তু)

তারা হসপিটালে এসে ৩ তলাতে গিয়ে ৩০২ নম্বর রুমে যায় সেখানে অন্তুকে ডক্টর সারা খানের কাছে দেখাবে। ডক্টর সারা খান বাংলাদের দ্বিতীয় বেস্ট সাইক্রেটিক্স। অর্ণব অন্তুকে তার কাছে দেখালে বিভিন্ন পরীক্ষা দেয়, তারা সব পরীক্ষা করিয়ে সব রিপোর্ট নিয়ে আবার ডক্টর কেবিনে দেখাতে যায়। অর্ণব অন্তুর এখন ডক্টরের সামনে বসে আছে আর ডক্টর সারা অন্তুর রিপোর্টস শুলো খুতিয়ে খুতিয়ে দেখছে। অন্তুর কোলে আনভি ঘুমিয়ে গেছে মেয়েটাকে নিয়ে এতো ঘুরেছে যে আনভি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে অর্ণব আনভিকে আনতে চায়নি কিন্তু আনভি তার মাম্মাকে ছাড়বে না তাই বাধ্য হয়ে নিয়ে আসতে হয় তাকে। অর্ণব বললো…

অর্ণবঃ ডক্টর রিপোর্টসে কি খারাপ কিছু আছে না মানে আপনি কিছু বলছে না। দেখুন খারাপ ভালো যা কিছু থাকুক্ না কেন প্লিজ বলুন টেনশন হচ্ছে।

অর্ণবের কথা শুনে ডক্টর সারা রিপোর্টস গুলো নামিয়ে তাদের দিকে গম্ভীর মুখে তাকায়। ডক্টর গম্ভীর মুখ দেখে অন্তু ভয় পেয়ে যায় তার রিপোর্টসে যদি খারাপ কিছু থাকে তাইলে আনভি অর্ণবের কি হবে তারা দুজনে ভেঙ্গে পরবে। অন্তু অর্ণবের দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকালে অর্ণব তাকে আশ্বাস দেয় কিছু হবে না। ডক্টর সারা তাদের মলিন মুখ দেখে মৃদু হেসে বললো….

ডক্টর সারাঃ রিল্যাক্স মি.চৌধুরী টেনশনের কিছু নেয় আপনার ওয়াইফের রিপোর্টস সব ভালো এসেছে কিন্তু…

অর্ণব চিন্তিত হয়ে বললো…. কিন্তু কি ডক্টর

ডক্টর সারাঃ কিন্তু ওনাকে বেশি উত্তেজিত হতে দেবা যাবে না, তা না হলে তার প্যানিক অ্যাটাক হবে। মিসেসে.চৌধুরী পুরাতন মেডিকেল রিপোর্টসশুলো ওতোটা ভালো না উনি ডিপ্রেশনের রুগী তার ওপর কোনো প্রকার চাপ দেবা জাবে না। তা না হলে হীতেবিপরীত হবে। আপনি যথা চেষ্টা করবেন মিসেসে.চৌধুরী কোন প্রকার টেনশন না নেয় সব সময় হাসি খুশি থাকে তালে তার সুস্থ হতে বেশি সময় লাগবে না। আমি ঔষধ লিখে দিচ্ছি আপনি টাইম টু টাইম খাওয়াবেন। আল্লাহ চাইলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবে।

(আমার মেডিক্যাল সম্পর্কে কোনো ধারণা নেয় তাই প্লিজ কিছু ভুল হলে মাফ করবেন)

অর্ণব ডক্টর কথা শুনে পুরোপুরি চিন্তা মুক্ত হলো না। কিন্তু আশা আছে অন্তু ঠিক হয়ে যাবে সে অন্তুর দিকে তাকিয়ে মলিন হাসলো অন্তু তাকে বলে ঠিক হয়ে যাবো। ডক্টর সারা সব কিছু ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিলো অর্ণব সব মন দিয়ে শুনে নিলো। হঠাৎ কেবিনের মধ্যে একটা ছেলে এসে জোরে জোরে বললো….

ছেলেটিঃ শোন সারা নিজের তো ঠিক মতো খেয়াল রাখিস না তাই বলে আমার মেয়েকেও না খাইয়ে রাখবি। এটা হতে দেবো না তাড়াতাড়ি খেয়ে নে আমি খাবার নিয়ে এসেছি।

ছেলেটা কাউকে না দেখে একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে। এদিকে সারা বিরক্ত নিয়ে বললো…

সারাঃ তোমাকে কতো বার বলবো কেবিনে আসার আগে নক করবে। তুমি দেখছো আমি রুগী দেখছি তারপরও কেন এমন করো। এখন দেখো কি অপতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করলে।

সারার কথায় ছেলেটি সামনে তাকিয়ে দেখে সত্যি তার ভুল হয়েছে সারা পেসেন্ট দেখছিলো। ছেলেটি কান ধরে ইশারায় সরি বললো সারাকে। এদিকে অন্তু আর অর্ণবের কাছে ছেলেটির কণ্ঠের স্বর অতিচেনা লাগছে তারা একে ওপরে মুখ চাওয়া চাই করে চেয়ার ছেড়ে পিছন ঘুরতেই বিস্মিত হয় তারা নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না ৪ বছর পরে তার সাথে দেখে হবে। অর্ণবের চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু পানি, ছেলেটা তাদেরকে না দেখে বললো…

ছেলেটাঃ সরি আসলে….

আর কিছু বলতে পারে না সেও অন্তুকে দেখে বিস্ময় হয় কিন্তু কিছু মনে পরতেই তার চোখ লাল হতে লাগলো। ছেলেটি অন্তুর দিকে তেরে যেতে লাগলো….
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#বোনাস পাট

অন্তু চোখে জল নিয়ে সামনে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে দেখতে থাকে। ছেলেটি রাগি চোখে অন্তু দিকে তাকাছে একবার আবার অর্ণবের দিকে তাকাছে৷ অন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবে তার আগে ছেলেটি তার দিকে তেরে এসে অন্তুর বাহু ধরে বলে…

ছেলেটাঃ বাহ বাহ অন্তু বর মেয়ে নিয়ে দেখছি অনেক সুখেই আছো৷ থাকবেই বা না কেন টাকাওয়ালা ছেলে পেয়েছো সুখ তো টাকাতেই আসবে…

ছেলেটির কথা শুনে অন্তু অর্ণব থমকে যায়। ছেলেটি একের পর এক কুটো কথা শুনে অন্তু অনেকটা আঘাত পায়, অন্তু কাপা কাপা গলায় বললো….

অন্তুঃ না নাহিদ ভাইয়ার এ এসব আপনি কি বলছেন..

অন্তুকে বলতে না দিয়ে নাহিদ গর্জে ওঠে বললো… কি বলছি বুঝতে পারছো না তুমি হে। তোমাকে আমি ভালো মেয়ে ভাবতাম কি তুমি কতোটা নিচু মনের মেয়ে সেটা আমি বুঝে গেছি। আমাকে জাস্ট একটা এন্সার দাও অর্ণব কোথায়? কি করেছো তোমরা ওর সাথে? বেঁচে আছে নাকি মেরে ফেলেছো? কি হলো বলো..

বলে নাহিদ অন্তুর বাহু শক্ত করে ধরে এতে অন্তু যতটা না ব্যাথা পাচ্ছে তার থেকে বেশি ব্যাথা পাচ্ছে নাহিদের মনে তাকে নিয়ে এই তিক্ততা কুটো বচনে৷ নাহিদ তাকে এতোটা বাজে ভাবে ভেবে। অর্ণব হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে নাহিদের দিকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না, যে নাহিদ অন্তুকে বোন বলতো সে আজ তাকে বাজে বাজে কথা বলছে, বাজে বিহেভ করছে। এদিকে সারা কিছু বুঝতে পারছে না হঠাৎ মিসেস চৌধুরীকে দেখে তার স্বামী মানে নাহিদ এতোটা উত্তেজিত হচ্ছে কেন? সারা নিজের ভারী শরীল নিয়ে (সারা ৭মাসের প্রেগন্যান্ট) চেয়ার থেকে উঠে নাহিদের কাছে আসতে নিলো। নাহিদ আবার বললো….

নাহিদঃ তোমাকে আমি বোনের মতো ভালোবাসতাম কিন্তু তুমি কি করলে এটা। তোমাকে আমি বলেছিলাম না অর্ণবকে কষ্ট দিও না, তুমি আমাকে বলেছিলে তুমি অর্ণবকে কষ্ট পেতে দেবে না তাইলে তুমি কি করে অর্ণবকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলে৷ আমার বন্ধু কোথায় অন্তু উত্তর দাও। আমার ভাই কোথায় অন্তু, আমার অর্ণব কোথায় সে বেচে আছে নাকি মারা গেছে। বলো..

অন্তু এখনো কিছু বলতে পারছে না তার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। সে অঝোরে কান্না করে যাচ্ছে অন্তু আনভিকে শক্তি করে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে অন্তুর কান্নার শব্দে অর্ণবের হুশ আসে। সে এতোখনে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো তার কাছে নাহিদের আচরণ নতুন সে এমন নাহিদকে চেনা না। অর্ণব অন্তুর কাছে গিয়ে নাহিদের কাছে থেকে জোরপূর্বক অন্তুকে ছাড়িয়ে নিয়ে নাহিদকে সামান্য ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় ততখনে সারা এসে নাহিদকে আটকায়।অর্ণব অন্তুকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে চোখ মুছে অস্থির হয়ে বললো….

অর্ণবঃ অন্তু তুমি ঠিক আছো। তোমার কোথাও লাগেনি তো।

অন্তু অর্ণবের দিয়ে তাকিয়ে কান্নারত কন্ঠে বললো…. নাহিদ ভাইয়া আমাকে ভুল বুঝছে। আমি কিছু করিনি তুমি তো জানো আমি কিছু করিনি। তুমি প্লিজ ওনাকে বোঝাও আমি কিছু করিনি…

অন্তুকে অস্থির হতে দেখে অর্ণব ভয় পেয়ে যায় অন্তুকে কোনো প্রকার চাপ নেয়া যাবে না কিন্তু এমন একটা অবস্থায় তারা আছে সে কি করবে বুঝছে না। অর্ণব একবার নাহিদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার অন্তুকে বললো….

অর্ণবঃ অন্তু আমি নাহিদকে সব বলছি কিন্তু তুমি নিজেকে সামলাও দেখো আনভি কিন্তু তোমার কোলে আছে। তাই নিজেকে সামলাও না হলে আমাদের মেয়ের কষ্ট হবে।

অর্ণবের কথায় অন্তু আনভিকে দেখে নিজের চোখের জল মুছে নিলো নিজেকে শান্তু করতে লাগলো৷ অন্তুকে শান্ত হতে দেখে অর্ণব নাহিদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো….

অর্ণবঃ আমার ওয়াইফের সাথে এই ভাবে কথা বলার সাহস কে দিয়েছে তোকে…

নাহিদঃ দেখেন ভাই আমি আপনার বা আপনার ওয়াইফকে নিয়ে কথা বলতে চাইনা বা আমার বলার কোনো ইচ্ছে আছে। আমি শুধু ওর কাছে থেকে শুনতে চায় আমার বন্ধু অর্ণব কোথায়..

অর্ণব নাহিদের সামনে দাড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো…. এতোই যখন বন্ধু বন্ধু বলে দরদ উথলাচ্ছে তাইলে সেই বন্ধুর সামনে দাড়িয়ে তার স্ত্রীকে এভাবে হেনস্তা করছিস কেন? আমার বউকে এভাবে জেরা করতে বা তাকে অপমানীত করতে আমি কি তোকে পারমিশন দিয়েছি। কি হলো বল…

নাহিদঃ আমি কেন আপনার কাছে থেকে পারমিশন নিতে যাবো৷ আর আমার বন্ধু সামনে দাড়িয়ে মানে কি আমার বন্ধু এখানে কোথায়। আমার বন্ধুর খোজ শুধু আপনার স্ত্রী দিতে পারে তাই আমি তার কাছে থেকে সেটার উওর নিচ্ছিলাম।

অর্ণব নাহিদের দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বললো… আমার থেকে আলবাত পারমিশন নিতে হবে, আমারি সামনে দাড়িয়ে আমাকে নিয়ে আমারি জানকে তুই যা নয় তাই বলছিলেস। তাইলে আমার থেকে পারমিশন নিতে বাধ্য তুই। আমরা উচিৎ হয়নি তোর মতো গবেটকে আমার বাইকের তেল ফুরিয়ে প্রেম করতে পাঠানো৷ দেখ আজ তুমি আমারি সামনে অন্তুকে বাজে কথা বলছিস।

নাহিদ না বুঝেই বলতে লাগলো… কি তুই তুকারি করছেন ভাই আর আমি কখন আপনার বিষয় নিয়ে কথা বলাম আর তার থেকেও বড় কথা আমি কখন আপনার বাইকের তেল ফুরিয়ে প্রেম কর…( কিছু একটা বুঝে নাহিদর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো) এক মিনিট এক মিনিট আপনি কি করে জানলেন আমি বাইক নিয়ে প্রেম করতে যেতেম। আপনেকে কে বলেছে এটা?

নাহিদের ভ্রু যুগলখানা কুচকে অর্ণবকে প্রশ্ন করে। অর্ণব শয়তানী হেসে বললো… আমি এর থেকেও বেশি জানি ধর এই যে তুই যখন সারার সাথে রিলেশনে থাকার পরেও আমাদের ডিপার্টমেন্ট হেডের মেয়েকে আই লাভ ইউ বলেছিলি এমনকি তাকে কিস ও করেছিলি।

অর্ণবের কথা শেষ হতে না হতে সারা নাহিদের পিঠে থারাম থারাম কিল বসিয়ে দিলো৷ সারা রাগে ফুসছে সে জানতো নাহিদ কাওকে প্রপোজ করেছিলো কিন্তু কিস করেছে সেটা জানতো না। এদিকে নাহিদ বেকুপের মতো তাকিয়ে থাকলো অর্ণবের দিকে। সে ভেবে পাচ্ছে না এই ছেলেটা তার এতো কথা জানলো কি করে এই কথা তো অর্ণব ছাড়া কেউ জানতো না তাইলে কি অন্তু একে বলেছে কিন্তু অন্তুর তো এটা জানার কথা না। নাহিদর আবস্থা দেখে অর্ণব পিসাজি আনন্দ পায়। নাহিদ সারাকে বলে…

নাহিদঃ সারা বাবু দেখো তুমি তো জানতে আমি এটা অর্ণবের সাথে বাজি ধরে করেছিলাম তাইলে এতোটা রিয়েক্ট কেনো করছো। দেখো তোমার রাগতে নেই এই অবস্থাতে, তা না হলে বাবুর ক্ষতি হবে।

সারা মুখ ফুলিয়ে থাকলো। নাহিদ অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো… আপনি কি করে জানলেন এই কথা। এই কথা তো শুধু আমি আর…

অর্ণব নাহিদকে না বলতে দিয়ে বললো… অর্ণব জানতো তাই তো।

নাহিদ মাথা নাড়িয়ে মানে হ্যাঁ অর্ণব হাসলো শুধু। অর্ণব কিছু বলতে যাবে তার আগে অন্তু বললো…

অন্তুঃ নাহিদ ভাইয়া আপনার সামনে যে দাড়িয়ে আছে সে আর কেউ না আপনারি বন্ধু অর্ণব। আমাদের অর্ণব.. আর আমার কোলে যে আছে সে আমার আর অর্ণবের সন্তান। আমাদের ভালোবাসার অংশ।

অন্তুর কথা শুনে নাহিদ আকাশ থেকে পরলো সে, এদিকে সারারো একি আবস্থা। তাদের সত্যিটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। নাহিদ অর্ণবের দিকে অবিশ্বাস চোখে তাকিয়ে আছে, সে অন্তুর কথায় বিশ্বাস করতে পারছে না। অর্ণব নাহিদরে অবস্থা দেখে একে একে সব আস্তে আস্তে বলতে লাগলো সব শুনে নাহিদ ছলছল চোখে অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে বললো…

নাহিদঃ আমি তোকে কোথায় কোথায় না খুঁজেছি। এক্সামের পরে তুই একে বারে উধাও হয়ে গেলি এমনকি অন্তুর ও কোন খোঁজ পাচ্ছিলাম না। আমি দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম মাদারকে ফোন করে তোর কথা বলে সে বলে তুই ওখানে যাসনি। তখন আমি পাগলের মতো হয়ে গেছিলাম তোকে খুজতে লাগলাম সব জাগায়। এর মধ্যে আমি অন্তুর বাডিতে গিয়ে ওর খোজ নিলে তখন জানতে পাড়ি অন্তুর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে সে এখন সুখ সংসার করছে বিদেশে। এটা শুনে একমূহুর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলাম যে মেয়ে তোকে এতোটা ভালোবাসে সে কি করে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে। কিন্তু পরে সবকিছু পরিপেক্ষিতে আমি অন্তুকে ভুল বুঝি। সরি মামা ভুল হয়ে গেছে এবারে মতো মাফ করে দে আর হবে না।

অর্ণব নাহিদকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললো… আমার কাছে না অন্তুর কাছে ক্ষমা চা, সে ক্ষমা করলে আমিও করে দেবো।

নাহিদ তার করা কাজে অনুতপ্ত সে রাগের বসে অন্তুকে অনেক বাজে কথা শুনিয়ে দিয়েছে। নাহিদ অন্তুর কাছে গিয়ে বললো….

নাহিদঃ বোন তোমার এই ভাইকে ক্ষমা করে দাও। আমি সত্যি নিজের করা কাজে অনুতপ্ত আমি ভুল করেছি সত্যি না জেনে তোমাকে খারাপ খারাপ কথা বলে দিয়েছি। তুমি জানো আমি অর্ণবকে বন্ধুর থেকে ভাই মানি বেশি তাই ওকে হারিয়ে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম তোমাকে দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নি। সরি।

অন্তু নাহিদের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলো… মাফ চাবেন না ভাইয়া আপনার জায়গায় আমি থাকলেও এটাই করতাম। তাই আমি কিছু মনে করিনি।

নাহিদ হাসলো মেয়েটা অনেক বুঝদার হয়ে গেছে আগের মতো আর নেই। অর্ণব পরিবেশটা চেঞ্জ করতে বললো…

অর্ণবঃ শালা বিয়ে করে নিয়েছিস কিছুদিন পর বাপ হবি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ভাবির সাথে দেখা করালি না। অন্তু ঠিক বলেছিলো তুই ভাবিকে দেখাবি না বলে অযুহাত দিতি।

নাহিদ মুচকি হেসে অন্তুর কাছ থেকে অর্ণবের দিকে এসে বললো…. মামা আমি তো আমার বউ কে দেখাব কিন্তু তোকে তো দ্বিতীয় বারে নতুন করে চিনতে হবে। আমার বন্ধু আগেরটা বেস্ট ছিলো কিন্তু এখনকর টা ডেঞ্জারাস ভাবা যায় কি ভাবে আমাকে ধাক্কা দিলি আর লাল লাল চোখ করে তাকিয়ে ছিলি আমার দিকে যেন কাচা গিলবি আমাকে।

নাহিদের কথা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। অর্ণব মাথা চুলকিয়ে বললো…. সরি ধাক্কা দেবার জন্য আসলে অন্তুকে কেউ কষ্ট দিকে আমার মাথা ঠিক থাকে না তাই হয়ে গেছে। আমার কথা ছাড় তুই তোর কথা বল।

নাহিদঃ আমার কথা কি বললো বল। তোকে না পেয়ে আমি পাগল হয়ে গেছিলাম ভেবে আমার খালুজান তার মেয়েকে আমার হাতে দেবে না বলে দেয় সাফ সাফ। খালুর কথা শুনে সারা আমাকে ছাড়বে না বলে খালুর সাথে ঝড়গা করে আমাদের বাড়ি চলে আসে, বাবা মা সব ঠিক করে আমাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। এখন আমি বাবার ব্যবসা সামলায় আর সারা মেডিকেল শেষে এখন এইখানে চিকিৎসা দেয়। আর কিছুদিন পর বাপও হয়ে যাবো বুঝলি।

একদমে নাহিদ সব বলো অন্তু বললো…. ভাইয়া তাইলে আমার ধারণা সঠিক হলো আপনি ভালোবাসর ট্রিট দিলেন না, বিয়ের ও ট্রিট দিলেন না এমনকি বেবি হবে এর ও মনে হয় আমরা ট্রিট পাবো না৷ তা ভাবি ভাইয়া যে এতো কিপ্টা আপনি জানতে না আগে, না-কি না জেনেই প্রেম করেছেন।

সারাঃ আগে জানতাম না কিন্তু বিয়ের পর হারে হারে জেনেছি। ফাউল ছেলে একটা।

নাহিদঃ এভাবে বলো না বাবু বুকে গিয়ে লাগে।

নাহিদের কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে সারা রাগি মুখে বললো… ঢং। অন্তু অর্ণবকে নাহিদ সারার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, অন্তুর কাছে সারা মেয়েটাকে ভালো লেগেছে নাহিদ ভাইয়ার জন্য সারা পারফেক্ট। ততখনে আনভিও উঠে যায় তাকে নিয়ে তার সাবাই মেতে ওঠে। তারপর তারা সবাইকে গল্প করে অর্ণব অন্তুকে নিয়ে চলে আসে কিন্তু আসার আগে নাহিদকে তার বাড়িতে যেতে বলে গেছে….
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৫১

বাবাই আরো একটা পরোটা দেয় আপনাকে… বলে একটা পরোটা হাতে তুলে নিলো অন্তু। অন্তুকে পরোটা তুলতে দেখে মি.চৌধুরী তারাহুরো করে বললো….

মি.চৌধুরীঃ কি করছো কি মা তুমি। আরো একটা পরোটাও আমার পেটে যাবে না। তুমি অলরেডি ৩টা খাইয়েছো আর না মা। এবার সত্যি সত্যি আমার পেট ফেটে যাবে।

মি.চৌধুরী কথা শুনে অর্ণব আর প্রাপ্য মিটমিট করে হাসছে। অন্তু আর তার বাবার কথপোকথন শুনে তারা মজা নিচ্ছে। সকাল বেলা অন্তু এ বাড়িতে এসে নিজের হাতে সকলের জন্য পরোটা, ডিম ভাজি, রুটি, সবজি ব্রেকফাস্ট তৈরি করেছে৷ অন্তু সবাইকে মন ভরে খাওয়াতে চায় তাই। অন্তু গাল ফুলিয়ে বললো…

অন্তুঃ মা বলছেন কিন্তু মায়ের কথা শুনছেন না।

মি.চৌধুরীঃ আমি তো খেয়েছি। ওই দেখো প্রাপ্যর প্লেট খালি ওকে দাও।

বলে প্রাপ্যকে দেখিয়ে দিলেন তিনি, অন্তু ও প্রাপ্য দিকে তাকায়ে দেখে তার প্লেট খালি তাই সে প্রাপ্যকে কিছু বলতে যাবে তখনি প্রাপ্য বললো… আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই আমার খাওয়া শেষ ভাবি। তুমি বরং তোমার হাজবেন্ডকে দাও।

অন্তু অসহায় মুখে অর্ণবে দিকে তাকালে অর্ণব মুচকি হেসে প্লেট এগিয়ে দেয় তার দিকে, তা দেখে অন্তু খুশি মনে তার প্লেটে আরো একটা পরোটা দিয়ে দিলো। অর্ণব অন্তু হাসি দেখে নিজের পেট ভরা থাকা সত্ত্বেও সে কিছুটা জায়গা করে নিলো। অর্ণব খেতে খেতে বললো…

অর্ণবঃ অন্তু খেতে বসো। তুমি বাড়ি থেকে কিছু খেয়ে আসনি…

অর্ণবের কথা শুনে অন্তু মাথা নাড়িয়ে তার চেয়ারে পাশের চেয়ার বসে আনভিকে তার কোলে নিয়ে তাকে রুটি খাওয়াতে লাগলো। অর্ণব হতাশ হলো এই মেয়েকে সে যাই বলে সে তার উল্টোটাই করে। মি.চৌধুরী বললো…

মি.চৌধুরীঃ অর্ণব তুমি বরং আজ অফিসে না গিয়ে আনভির আর অন্তুকে সময় দাও। আমি আর প্রাপ্য অফিসটা দেখে নেবো। কি বলো প্রাপ্য?

প্রাপ্য পানি খেয়ে বললো…. হ্যাঁ ভাইয়া বাবা ঠিক বলছে তুই বরং বাড়িতে থাকো আমি অফিসের কাজ সামলে নেবো।

অর্ণবঃ কিন্তু..

মি.চৌধুরীঃ কোনো কিন্তু না। আমি অফিসের জন্য রেডি হচ্ছি প্রাপ্য তুমি যাবে।

প্রাপ্যঃ বাবা তুমি যাও আমি আসছি একটু পরে।

মি.চৌধুরী চলে যায় তার রুমে রেডি হতে অফিসের জন্য। এদিকে অন্তু তার যাবার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মি.চৌধুরী তাকে ছেলে বউয়ের থেকে মেয়ে বেশি মনে করে, অন্তু বোঝে না একটা মানুষ এতোটা নিঃস্বার্থ ভাবে ভালো কি করে বাসতে পারে তাকে, যেখানে অর্ণব বা সে তার রক্তের কেউ না। অন্তু যেদিন প্রথম তাকে অর্ণবকে বাচানোর জন্য ধন্যবাদ দেয় সেদিন তিনি বলেছিলেন…

মি.চৌধুরীঃ দেখো অন্তু আমার কোনো মেয়ে নেই তাই তোমাকে আমি ছেলের বউ থেকে নিজের মেয়ে মনে করি বেশি। তাই একজন বাবার কাছে ছেলের প্রান বাচানোর জন্য ধন্যবাদ দেওয়া ঠিক না। অর্ণবকে নিজের ছেলে ভাবি তাই তুমি আমার মেয়ে আর আনভি আমার নাতনি। তোমাদের ঘিরে আমার পরিবার তাই আমাকে আঙ্কেল না বলে বাবাই বলে খুশি হবো বুঝলে…

সেদিন অন্তু তার মধ্যে সত্যি কারে বাবার প্রতিচ্ছবি পেয়েছিলো যেখানে ছিলো না কোন স্বার্থে, ছিলো শুধু নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। অর্ণব কথায় অন্তুর ধ্যন ভাঙে…

অর্ণবঃ কি হয়েছে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে…

অন্তুঃ কিছু না। প্রাপ্য ভাইয়া কোথায়।

অর্ণবঃ সে উঠে গেছে কখন। তুমি খেয়ে নাও আমার খাওয়া শেষ আমি আনভিকে বাকিটা খাইয়ে দিচ্ছি। তুমি খেয়ে নাও, তারপর ঔষধ খেতে হবে।

অন্তু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে অর্ণব আনভিকে নিতে গেলে গেলে সে অর্ণবের কাছে যাবে না বলে বলে… আমি মাম্মার কাছে খাবো তোমার কাছে না

অর্ণবঃ আম্মু মাম্মাকে খেতে হবে, মাম্মাকে ঔষধ খেতে হবে জেদ করে না আসো আমি খাইয়ে দিই।

আনভি মুখ ফুলিয়ে অর্ণবের কাছে গেলে অর্ণব তাকে বাকি খাবারটা খাওয়াতে লাগে। অন্তু বাপ মেয়েকে দেখে হেসে হেসে খেয়ে নিলো তাড়াতাড়ি করে। আনভিকে খাইয়ে অর্ণব অন্তুর ঔষধ নিয়ে এসে তাকে খাইয়ে দিলো। বাড়িতে শুধু অর্ণব, অন্তু আর আনভি আছে। প্রাপ্য আর মি.চৌধুরী অফিসে তাই অর্ণব বাড়ির সব কাজের মানুষকে চলে যেতে বলে সে অন্তুর সাথে একান্তে কিছুটা সময় চায়….
_____________________________________

আদি একের পরে এক আদিবাকে ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু আদিবা ফোন ধরছে না। সেদিন কক্সবাজারে তাদের অনাঙ্ক্ষিত ভাবে কাছে আসার পর থেকে আদিবা তার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে লাগে। প্রথমে আদি আদিবার কাজে মনে করে সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদিবা তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না কিন্তু আদিবা যখন তাকে ইগনোর করতে লাগলো তখন আদির কাছে এটা স্বাভাবিক লাগলো না। তাই তো এইকয়েক দিন ধরে আদিবার সাথে এই নিয়ে কথা বলতে চেয়েও সে বলতে পারছে না বা আদিবা আদিকে সে সুযোগ দিচ্ছে না। আদি শেষ বারের মতো ফোন দিলো কিন্তু সে ফোন বন্ধ করে ফেলো তা দেখে আদি রেগে ফোন আছাড় দিয়ে বললো…

আদিঃ তোমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছি কিন্তু তুমি সেই সুযোগ পাবার যোগ্য না। এবার যা হবে সামনা সামনি হবে। হয় ইসপার না হয়ে ওসপার। আমি নিজেকে আর ছোট করবো না তোমার কাছে…

এদিকে আদিবার ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে। তার চোখ থেকে অঝোরে পানি পরছে। তার মনে হচ্ছে আদি কাছে চলে যেতে কিন্তু সে যেতে পারছে না। আদিবা কক্সবাজারে থেকে আসার পর থেকে নিজেকে নতুন করে মানিয়ে নিয়ে আদির কাছে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু তা আর হলো না তার, যেদিন সে আদিকে মেনে নিতে যাবে সেদিন আবার তার অতীতের তিক্ত কিছু তার চোখের সামনে আসায় নিজেকে গুটিয়ে নিলো আদির থেকে সে চায় না আদি সেই সব দেখে তাকে ভুল বুঝুক বা তার চরিত্রে নিয়ে কথা বলুক। সে নিজেকে অনেক কষ্টে আদির থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে….
___________________________________

পেটের ওপর কারোর হাতের বাঁধন শক্তি হতেই অন্তু চমকে যায় কিন্তু পরক্ষণে হাতের মালিক কে বুঝতে পেরে হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে ঝাঝালো গলায় বলো….

অন্তুঃ এই তোমাকে না আমি আমাকে ছুতে নিষেধ করেছিলাম তাইলে কোন সাহসে আমাকে ছুলে তুমি হ্যা…

এদিকে দুপুরের খাবার খেয়ে অন্তু আনভিকে ঘুম পারাতে ব্যস্ত থাকায় অর্ণব অন্তু পাশে এসে শুয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলে অন্তু তাকে নিজের থেকে একঝটকা দিয়ে সরিয়ে দেওয়াতে অর্ণব হতভম্ব হয়ে অন্তুর দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু অন্তু কাজের থেকে বেশি অন্তুর কথাতে বিমূঢ় হয় সে। অর্ণব তো মানে করেছিলো অন্তু সব ভুলে গেছে তাইতো সে তার কাছে গিয়েছিলো কিন্তু তাকে ভুল প্রমান কে অন্তু তো সব মনে ধরে রেখেছে। অর্ণব ফেঁকাসে মুখ করে বললো….

অর্ণবঃ জান তুমি এখনো রাগ করে থাকবে আমার ওপর। এই আবলা ছেলেকে মাফ করে দাও না জান দেখো তোমাকে ৪ টা বছর না না কিছুদিন পরে তো পাঁচ বছর হয়ে যাবে। জান দেখেও এতো রাগ না করে একটু টাইম স্পেন্ড করিনা প্লিজ। আসো একটু কাছে আসো…

বলে অন্তুর দিকে আগাতে নিলে অন্তু সরে এসে রাগীক্ত কন্ঠে বললো…. এই খবরদার আমার কাছে আসবে না, না হলে তোমাকে আমি কামুর দেবো। আর কি ৪ বছর না ৫ বছর লাগাছো তুমি হে যতো বছর হোক না কেন ১ বছরের আগে আমাকে ছোঁবে না তুমি। উম আয়ছে কোথাকার নবাব আমাকে আদর করতে টাইমস্পেন্ড করতে। তোমার টাইম লাগবে না আমার আমি আমার মেয়েকে টাইম দিলেই হলো।

অন্তু কথা শুনে অর্ণবের ফেকাসে মুখে আরো ভোতা হয়ে গেলো তা দেখে অন্তু মনে মনে হাসলো কিন্তু প্রকাশ করলো না, আর একটু জ্বালাবে সে অর্ণবকে তাকে সে অনেক জ্বালিয়েছে বলে। অর্ণব মাথা নতো করে বললো…

অর্ণবঃ জান আর কতো সরি বলবো বলো। আগে তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারলেও এখন থাকাটা মুস্কিল হয়ে যাচ্ছে আমার কাছে এটা বোঝছো না কেন তুমি। আমি জানি যা আমি করেছি সেটার শাস্তি আমাকে পেতে হবে তাই বলে তুমি আমাকে তোমাকে ভালোবাসা থেকে দূরে রাখবে এটা অন্যায় জান….

কথাশুমো বলে অর্ণব মুখ গোমরা করে চলে যেতে নিলো। এদিকে অন্তু অর্ণবকে কষ্ট পেতে দেখে তার ও এখন কষ্ট লাগছে সে একটু বেশিই করে ফেলেছে সে জানে অর্ণব যা করেছে তার ভালোর জন্য কিন্তু সে তো তাকে কষ্ট দিয়েছে সেটা জেনা হোক আর না জেনে হোক কিন্তু দিয়েছে তো। তাইতো শাস্তি দিচ্ছে সে তাকে কিন্তু সেটা একটু বেশিই করে ফেলেছে যার জন্য অর্ণবের কষ্ট পেলো। অন্তু অর্ণবের হাত ধরে আটকায় হাতে টান পরতেই অর্ণব পিছন ঘুরে ভ্রু কুচকে তাকায় অন্তুর দিকে সে বুঝতে চায় অন্তু এখন আবার কি করবে। অর্ণবকে অবাক করিয়ে অন্তু নিজে থেকে অর্ণবের কাছে ধরা দিতে লাগে। অন্তু অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে মুখ ডুবায় এতে অর্ণব ফিজ হয়ে যায় সে বিশ্বাস করতে পারছে না অন্তু তাকে ক্ষমা করে দিয়ে তার কাছে ধরা দিবে। অন্তু অর্ণবের গালে ঘাড়ে, কানের লতিতে ছোট্ট ছোট্ট কিস করে মিন মিন করে বললো..

অন্তুঃ সরি একটু বেশি হয়ে গেছে আর হবে না। তুমি তো জানো আমি কেমন যখন জেদ চাপে যায় আমার মাথা তখন হুশ থাকে না। তোমাকে কষ্ট দিতে চায়নি সরি।

অর্ণব অন্তুকে শক্তি করে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে থাকে তার কাছে অন্তুর এটা নতুন রুপ শান্ত, নম্র, ভালোবাসাময়ি রুপ। সেতো অন্তুর সব রুপকে নতুন ভাবে ভালোবাসতে চায়, ভালোবেসে আগলে রাখতে চায়। অর্ণব একবার ঘুমন্ত আনভিকে দেখে অন্তুকে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বাইরে এসে অন্য রুমে নিয়ে যেতে লাগলো। অন্তু অর্ণবের বুকে মাথা দিয়ে অর্ণবকে দেখতে ব্যস্ত, সে এই চেহারাকে চেনে না কিন্তু এই চেহারার পেছনের মানুষকে সে চেনে তার অতি প্রিয় আপন জন্য সে। অর্ণব রুমে এসে পা দিয়ে দরজা লাগিয়ে অন্তুকে বেডে শুয়ে তার ওপর সমস্ত ভার ছেড়ে তার ঘাড়ে মুখ ডুবায়, অর্ণবে উপ্ত নিশ্বাস-প্রশ্বাস তার ঘাড়ে মুখ আছড়ে পরে সে চাদর খামচে ধরে থাকে। আস্তে আস্তে অর্ণবের স্পর্শ গভীরে থেকে গভীরতর হতে থাকে, অন্তু নিজেকে নতুন ভাবে অর্ণবের মধ্যে বিলীন করতে লাগে…..
_____________________________________

বিকেলের রক্তিমা ভাবটা গাঢ় হতে লাগলো, একে একে সব পাখি তার কুঠুরিতে যেতে লাগলো। আকাশের সমস্তটা দিক জুরে মেঘের হাত ছানি দিতে লাগলো। অন্তু অর্ণবরে বুকে মাথা রেখে তার দিকে তাকিয়ে তাকে দেখতে ব্যস্ত আছে। অন্তুকে তার দিকে এই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্ণব বিরক্ত নিয়ে বললো….

অর্ণবঃ জান এভাবে দেখা বন্ধ করো এবার প্লিজ। বিরক্ত লাগছে আমার এখন, সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছো আমার দিকে, আমাকে কি আগে কখনো দেখো নি নাকি…

অন্তু আনমনে বলে ওঠে…. তোমাকে চিনেছিলাম যে অন্যরুপে… ভালোবেসে ছিলাম যে আমি অন্য তুমিকে… কিন্তু এখনকার তুমিতে নেই সেই আগেররুপে সেই মানুষটা যে। কিন্তু এখনো সেই ভালোবাসার সীমাবদ্ধতা আছে এই তুমিতে…..

অন্তুর আনমনে কথা শুনে অর্ণবে মন খারাপ হয়ে যায় সে অন্তুকে ছেড়ে উঠে বসে। অর্ণবের উঠতেই অন্তুর হুশ আসে সে একটু আগে সে কি বলেছে। অন্তু উঠে গিয়ে অর্ণবের কোলে বসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো…

অন্তুঃ সরি আমি আসলে ওভাবে বলতে চাইনি।

অর্ণবঃ তুমি সরি কেন বলছো। তুমি তো আমার নতুন রুপকে চেনো না, কখনো দেখোনি আমাকে এ রুপে তাই তোমার মানতে একটু কষ্ট হয়ে। তুমি যে রুপে অর্ণবকে ভালোবেসেছিলে এখন সেই রুপ নেয় আমার মধ্যে।

অন্তু অর্ণবের কথা শুনে তাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো…. আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার মধ্যে যে তুমিটা আছে তাকে ভালোবাসি। আমি তোমার রুপকে ভালোবাসি না, না আগে ভালোবাসতাম তোমার রুপকে। আমি তোমাকে শুধু তোমাকে ভালোবাসি অর্ণব শুধু তোমাকে….

অর্ণব অন্তুকে শক্তি করে ধরে বললো… জানো অন্তু যখন নিজেকে প্রথম এই অচেনা রুপে দেখেছিলাম তখন শুধু একটা কথাই মনে পরেছিলো তুমি কি আমাকে এই রুপে মেনে নেবে। তুমি কি আমাকে এই নতুন রুপে নতুন করে ভালোবাসতে পারবে। নতুন করে মায়া জন্মাতে পারবে, যেমনটা আগের রুপে করতে। আমার শুধু তোমাকে হারানোর ভয় ছিলো যদি তুমি না মনো তাইলে আমি কি করে বাঁচবো তোমাকে ছাড়া…

অন্তু অর্ণবের সারা মুখে অজস্র চুমু দিয়ে তার অধরে সময় নিয়ে কিস করে। অর্ণবের দু’গালে হাত রেখে তার চোখে চোখ দেখে নম্র সুরে বললো…

অন্তুঃ অর্ণব আমি তেমাকে ভালোবাসি তোমার রুপকে না। আমি তোমার মধ্যের তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমার রুপের মোহতে পরে ভালোবাসি নি তোমার মনকে ভালোবেসেছি। রুপ যতই বদলাক না কেন তোমার মন তো বদলায় নি। আর না বদলিয়েছে তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসা। তাইনা…

অর্ণব অন্তুর গাল হাত রেখে মুচকি হেসে তার হাত দিয়ে অন্তুর গালে স্লাইড করতে করতে বললো…

অর্ণবঃ আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ সো মাচ জান। আই লাভ ইউ…

অন্তুঃ আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ…

অর্ণব অন্তুর ঠোঁটে তার ঠোঁট ছোঁয়ায় অন্তু চোখ বুজে সেই স্পর্শ শুলো অনুভব করতে লাগলো। কিছুসময় পর তাকে ছেড়ে বললো…

অর্ণবঃ তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আনভির ওঠার সময় হয়ে গেছে তোমাকে না দেখলে কান্না করবে।

অন্তু মাথা নাড়িয়ে অর্ণবের কোল থেকে উঠতে নিলে অর্ণব তাকে আবার তার কোলে বসিয়ে দুষ্টুস্বরে বললো…

অর্ণবঃ জান তুমি আগের তুলোনায় এখন আমার করা সব পাগলামি সহ্য করে নিতে সক্ষম হয়ে গেছে। দেখো আগে পাগলামি করলে বলতে ব্যাথা লাগছে, কান্না করতে, কিন্তু এখন তা করো না নিজে থেকে আমাকে সাহায্য করো। তাইনা…

বলে অর্ণব হাসতে লাগলো। অর্ণবের লাগামহীন কথা শুনে অন্তুর গাল, কান, লাল হতে লাগলো। অন্তু লজ্জায় নেতিয়ে পরে অর্ণবের বুকে তা দেখে অর্ণব হাসে শব্দ করে। অর্ণবকে হাসতে দেখে অন্তু অর্ণবের বুকে কয়েকটা কিল দিয়ে নিজেকে তার কাছ থেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে যায় সেখান থেকে। অর্ণব অন্তুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অর্ণব তার চুল গুলো এলোমেলো করে উঠে ফ্রেশ হতে গেলো….

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here