#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_32
হালকা ঠান্ডা পরা শুরু করেছে। সিজন পরিবর্তন হচ্ছে তাই চারপাশে ঠান্ডা জ্বর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কখন জানি বর্ষার গা কাঁপিয়ে জ্বর চলে আসে।
ছোট বেলকনিতে বসে ঠান্ডা উপভোগ করছে বর্ষা। উপভোগ করতে পারছে কি জানা নেই। মনটা হয়ে আছে বিষন্ন। অচেনা রাস্তা, অচেনা জায়গা, সব কিছু অচেনা। আটটা বোধহয় বাজে দুইদিন পর থেকে বর্ষার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ফাইনাল পরিক্ষা কিন্তু তাতে বর্ষার মধ্যে কোন রকম উত্তেজনা নাই। বই খুলে রেখেই বারান্দায় এসে বসে আছে। আগেও যে লেখা পড়া নিয়ে খুব সিরিয়াস ছিলো তা না কিন্তু পরিক্ষার আগের দুইদিন খুব করে পরতো কিন্তু এখন আর তাও হচ্ছে না। হবে কি করে মনের শান্তি না থাকলে কি আর কিছু করে ভালো লাগে? লাগেনা! পড়ালেখা থেকে তো মন উঠেই গেছে। কলেজে গিয়ে এক দন্ড দাঁড়াতে পারে না সবাই ওর দিকে কেমন নজরে যেন তাকিয়ে থাকে যেন বর্ষা কলেজে স্টুডেন্ট ই না এলিয়েন। কেমন কৌতুক করে কথা বলে। এটা শুধু সম বয়সীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে মানা যেতো কিন্তু এসব তো স্যার ম্যাম এর দিকে থেকে ও দেখা যায়।
তারা ও খুব একটা কথা বলে না। কেমন গা ছাড়া ভাব নিয়ে থাকে যেন চিনেই না। আগেই যেই স্যার ম্যাম রা আমাকে দেখলে কতো আদর স্নেহ করতো তার রেশ মাত্র নাই। সব যেন হারিয়ে গেছে।
এক সপ্তাহ হলো নতুন এই বাসা নেওয়া হয়েছে। দুটো রুম একটা কিচেন রুমে। এইখানে আসার পর আর বর্ষা রুমে থেকে বের হয়নি। বর্ষার ভেতরটা ফেটে যায় এসব দেখলে। নিজের বাসা যেখানে জন্ম নেওয়ার পর থেকে থেকেছে কতো শত স্মৃতি সব ফেলে কোথায় পরে আছি।
হাচ্চু বলেই বর্ষা মুখে হাত দিলো পর পর তিনটা হাঁচি দিলো। ঠান্ডা মনে হয় লেগেই গেলো।
মাম্মা ছুটে এলো বর্ষা বর্ষা করে।
‘ বর্ষা কইরে!’
বর্ষা উঠে রুমে চলে এলো, ‘ হুম বলো।’
‘ তুই এই ঠান্ডায় বারান্দায় বসে ছিলি এই হাতা কাটা ড্রেসে?’
‘হুম।’
‘ জ্বর বাধাবি তো। পরতে বস। না পড়ে ওইখানে কি করছিলি।’
‘ এমনি বসে ছিলাম।’
মাম্মা বারান্দায় দরজা আটকে চলে গেলো।
রাতে সত্যি জ্বর চলে এলো। জ্বরে বর্ষা বরাবরই কাতর হয়ে যায়। আবোলতাবোল বলে। আর পানির পিপাসা পায় খুব। আজ ও রাত তিনটায় পানির তৃষ্ণায় চোখ মেলে তাকালো। কিন্তু উঠতে পারছে না শরীর এতো ব্যাথা আর মাথাটা ভার হয়ে আছে।
বর্ষা জ্বরের ঘোরে গোঙরাতে লাগলো সেই শব্দ পেয়ে ওর মা ছুটে এলো মেয়ের কাছে। আর বর্ষার গায়ে হাত দিয়ে আঁতকে উঠলো,
‘ হায় আল্লাহ কতো জ্বর এসেছে।’
বাপি ও চলে এসেছে। বর্ষা পানি পানি করছে। মাম্মা তা দেখে দৌড়ে পানি এনে খাওয়ালো। তিতা বিষ যেন খেলো বর্ষা ও মুখটা কুঁচকে ফেললো।ভেতরটা তিতা হয়ে গেছে।
নিবিড় চৌধুরী মেয়ের মাথায় কাছে বসে আছে। ডাক্তারকে কল করলো উঠে গিয়ে।বর্ষার মা মেয়ের মাথা পানি ঢালছে। আর চোখের জল ফেলছে। এতো রাতে ডাক্তার কল রিসিভ করলো না। তাই আবার বসে পরলো।মেয়ের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে আছে দুজনে মেয়ের পাশে বসে রাত পার করে দিলো।
সকালে ডাক্তার নিজেই কল করলো। আগের মতো আন্তরিকতা পাওয়া গেলো না কথায়। বিরক্ত সুরে কথা বলছে। ডাক্তার রিমান বর্ষা দের পারিবারিক ডাক্তার। তিনি বর্ষাকে নিয়ে যেতে বললো তিনি নাকি ব্যস্ত বাসায় আসতে পারবে না। অনেক অনুরোধ এর পর রাজি হলো কিন্তু সেটা এগারোটার আগে না।
বর্ষার জ্বর একটু ও কমে নি। ওর মা খাবার রেডি করতে চলে গেলো। কিছু খাইয়ে নাপা খাইয়ে দিবে তাই। নিবিড় চৌধুরী রুমে এসে একটু চোখ বন্ধ করলো। তিনি কি ভেবে যেন আদিলকে কল করার কথা ভাবলো। আদিল তাকে অনেক সাহায্য করেছে। বাসা ঠিক করা থেকে এখানে আসার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বাসায় ও এসেছে কয়েকবার। কিন্তু বর্ষা আদিল কে দেখে নি দেখবে কি করে মেয়ে যে তার ঘর ছেড়ে বের হয় না। সারা দিন বসে থাকে বই নিয়ে। পরে না এতো আসলে বই সামনে নিয়ে আনমনে কি যেনো ভাবে।
ডাক্তার নিয়ে এলো আদিল নয়টার আগেই। ফোন করে জানানোর আধা ঘন্টার মধ্যে এসে হাজির। নিবিড় চৌধুরী এতোটা আশা করেনি। ডাক্তার বর্ষাকে দেখে চলে গেলো।
বর্ষা জ্বরের বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে। চোখ একটু একটু খোলা তাতে ও তূর্য কে চিনতে পেরেছে। অবাক হয়ে ও তূর্য এর দিকে তাকিয়ে আছে আধো আধো চোখে। কথা বলতে চাইছে কিন্তু দূর্বলতা ওকে কথা বলতে দিচ্ছে না। ও ভাবছে, আমি এসব কি দেখছি? তূর্য বাপির সাথে কথা বলছে। এটা কি করে সম্ভব? না না আমি হয়তো জ্বরে ভুল দেখছি এটা তূর্য না। বর্ষা চোখ খিচে বন্ধ করে রইলো। বাপির আওয়াজ আসছে না ও নিজের গালে কারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো। তাকাতে পারছে না মাথা ব্যাথায় কথাও বলতে পারছে না। কিন্তু অপরজনের কথা শুনে ওর হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো।
‘ বর্ষা মনি তুমি ভুল দেখো নি।’
লোকটার নিশ্বাস আমার কানের কাছে পরছে এই স্পর্শ আমার চেনা।আমার শরীর কাঁপছে। আর কিছু মনে নেই যখন চোখ খুলি সন্ধ্যা তখন। শরীরের ব্যথা একটু কম আমি মাথা চেপে ধরে খাটে বসে পরি।
আস্তে সব মনে পরে নিজেই নিজেকে শান্তনা দেয়। ওইটা তূর্য হতেই পারেনা। আমি জ্বরে আবোলতাবোল দেখেছি সিউর।
তূর্য এখানে কি করে আসবে? মা বাবা আছে। আর তিনি আসবেই বা কেন? তিনি যা চেয়েছিল পেয়েছে এখন আর কি চাইতে পারে। সব তো শেষ।
বাথরুমে থেকে বেরিয়ে দেখলো মাম্মা বসে আছে।
‘ কখন উঠলি? আমাকে ডাকলি না কেন? এখন কেমন লাগছে?’
‘ মাথাটা ভার হয়ে আছে। এমনিতে আগের থেকে ভালো লাগছে!’
আমি বিছানায় বসে পরলাম। মাম্মা মাথা হাত রেখে জ্বর চেক করলো। আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ বাসায় কি কেউ এসেছিলো মাম্মা?
‘ হুম ডাক্তার এসেছি।’
‘ ওহ।’
‘ আর অফিসার আদিল এসেছিল। তিনিই তো ডাক্তার নিয়ে এসেছিলো। ছেলেটা কি ভালো রে আমাদের অনেক সাহায্য করছে।’
‘ ওহ্।’
তার মানে সেসব সত্যি আমার ভ্রম ছিল।
.
জ্বর নিয়ে ই দুইদিন বর্ষা মনোযোগ দিয়ে পড়লো। আজ প্রথম পরিক্ষা। তিশা এসেছে ওকে নিতে দুজন একসাথে বেরিয়ে পরলো। গায়ে হালকা জ্বর আছে। ওইভাবে হালকা একটু খাবার খেয়ে কলেজে এসে পৌঁছায়।
তিন ঘন্টার আধাঘন্টা আগেই বর্ষা পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে যায়। অনেক কষ্টে পরীক্ষা দিয়েছে মনে হয় জ্বর বেড়ে গেছে শরীর কেমন গরম হয়ে আসছে। মাথা ঘোরাচ্ছে যেটুকু লিখেছে তাতে চলে যাবে বাংলা পরীক্ষা তাই অতটা পেরেশানি হতে হয়নি ওকে। মাথায় আঙুল চেপে বাইরে আসতেই একটা পরিচিত মুখ দেখে ওর শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ঠোট কামড়ে হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে। ও চোখ বন্ধ করে আবার তাকায় না এখনো দাঁড়িয়ে আছে। এসব কি হচ্ছে এখানে ওই লোকটা কোথা থেকে এলো? আমি কি পাগল হয়ে গেলাম নাকি যেখানে-সেখানে উনাকে দেখতে পারছি কেন? চোখ ঢলে আবার তাকাতেই দেখে তূর্য ওর একদম কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে। এতটা ভয় পেলে যে ও সাথে সাথে ঢোলে পরলো তূর্য এর গায়ের উপর জ্ঞান হারিয়ে।
চোখ খুলে বর্ষা নিজেকে নিজের রুমে দেখতে পেল। চমকে উঠে বসলো। আবার ও তূর্য কে দেখলো কেন?
মাম্মা বলে চেঁচিয়ে উঠলো। ও তো কলেজের সামনে ছিল বাসায় আসলে কিভাবে।
‘ কি হয়েছে চেঁচামেচি করছিস কেন?’
‘ আমি বাসায় আসলাম কিভাবে?’
‘তিশা তো তোকে বাসায় নিয়ে আসলো। তুই নাকি বাসার সামনে এসে জ্ঞান হারালি আমরা গিয়ে তোকে নিচে থেকে নিয়ে আসলাম।’
‘কিহ তিশা? ও কিভাবে আমি তো ওর আগেই….
‘কি বলছিস কিছু বুঝতে পারছিনা!’
‘কিছু না মাম্মা তুমি যাও!’
মাম্মা কে এসব বলে চিন্তায় ফেলতে চাইলো না বর্ষা তাই কিছু বলল না। কিন্তু তিশা আমাকে নিয়ে আসলো কিভাবে জানতে হবে। ফোন বের করে কল করলো ওকে।
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_33
‘ তুই বাবা- মা কে না করলি না কেন? রাজি কেন হলি?’
অভ্রর সামনে এসে দাড়িয়ে কথাগুলো বললো নিদ্রা। অভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
‘ না করবো কেন? আমরা দুজনেই বেড়াতে পছন্দ করি আর এখন যখন সুযোগ পেয়েছি তা কাজে লাগবো না!’
‘ তুই কি পাগল হয়ে গেলি নাকি! এটা শুধু বেড়াতে যাওয়ার হলে কথা ছিলো? কিন্তু সবাই আমাদের হানিমুনে পাঠাতে এটা দিয়েছি। তুই কি তা শুনিছ নি। শুনেও রাজি হয়ে এই টিকেট নিয়ে আসলি কিভাবে!!’
‘ দেখ নতুন বর বউদের হানিমুনে যেতেই হয়। আমরা ও না হয় যাব এতে এতো সমস্যা কোথায়?’
‘ কিসব বলছিস। মাথা গেছে নাকি তোর। নতুন হ্যাজবেন্ড ওয়াইফ রা কি করে সেটা আমাকে কেন শুনাচ্ছিস? তোর আর আমার সম্পর্ক একদম আলাদা তাই এসব না করে দে আমি কোথাও যেতে পারবো না।’
‘ ইম্পসিবল। আমি কোন না টা করতে পারবো না। কাল আমরা বেড়াতে যাচ্ছি ইটস ফাইনাল ডিসিশন।’
‘ আমি যাব না বলছি তাও তুই যাওয়ার কথা বলছিস?’
‘ আরে তুই এতোটা হাইফাই কেন হচ্ছিস? হানিমুনের টিকেট দিয়েছে তাই কি হয়েছে। আমরা তো আর সত্যি হানিমুনে করবো না। আমার বেড়ানোর জন্য যাব। ফ্রেন্ড থাকতে যেমন যেতাম তেমন।’
‘ আমি…
‘ প্লিজ আর কিছু বলিস না। আমরা ঠিক থাকলেই হলো তাই না। আর কথা না বাড়িয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ফেল।’
বলেই অভ্র আলমারি খুলে নিজের ড্রেস বের করে বিছানায় রাখতে লাগলো। নিদ্রা যেতে একদম আগ্রহী না। ওর মনটা ভালো নেই।
‘ কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
‘ আমার সত্যি যেতে ইচ্ছে করছে না। কোন ভাবে ক্যান্সেল কর না।’
‘ দেখ এখন এই নিয়ে না করলে সবাই আমাদের অনেক কথা শুনাবে। আর তোর মনটা ইদানিং খারাপ থাকে। বেড়াতে গেলে তোরই মনটা ফুরফুরে হয়ে যাবে দেখিস।’
নিদ্রা কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। অভ্র ব্যাগ প্যাক করে ফেললো।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরদিন সকালেই বেরিয়ে পরতে হলো অভ্রর সাথে। গাড়িতে করে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু অভ্র গাড়িতে যাবে না ট্রেনে যাবে। একদিন নিদ্রা ট্রেনে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছিলো অনেক দিন আগে। তখন ওদের ভার্সিটি টুর ছিলো। বাসে নিদ্রা আর অভ্র পাশাপাশি বসে ছিলো। তখন নিদ্রা বলেছিলো।
‘ অভ্র আমরা ট্রেনে গেলে ভালো হতো রে। আমার না ট্রেনে চরার ইচ্ছে অনেক কিন্তু এখনো হয়নি উঠা।’
গাড়িতে নিদ্রা মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে রেখেছিলো। কিন্তু ট্রেন স্টেশনে নামতেই ওর চোখ মুখে বিষ্ময় প্রকাশ পেলো। ও অবাক চোখে অভ্রর দিকে তাকালো উজ্জ্বল মুখে। ট্রেনে উঠে নিদ্রার মলিন মুখটা আর নাই। খুশি মনে বসে আছে।
মনটা ভালো করতে পেরে অভ্রর ও ভালো লাগছে।
‘ তুই সেই কথাটা মনে রেখেছিস এখনো?’
‘ আরো অনেক কিছুই মনে রেখেছি।’
‘ সব মনে রেখেছিস কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কথাটাই মনে রাখিস নি। যেটা মনে রাখা দরকার ছিলো বেশি।’
অভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘ কি?’
‘ বলতে ইচ্ছে করছে না।’
অভ্র মনে করার চেষ্টা করেও তেমনি কিছু মনে করতে পারলো না। নিদ্রা কোন কথা মনে রাখার কথা বলছে ভাবছে অভ্র।নিদ্রা জানালা দিয়ে বাইরে প্রকৃতি দেখছে।
.
অনেক দিন পর আজ বর্ষা মনটা ভালো লাগছে। নতুন বাসায় আসার পর ও রুমে থেকেই বের হয়নি। যে কয়বার বেরিয়েছে পরিক্ষা দিতে গিয়েছে। আগামীকাল পরিক্ষা শেষ হয়েছে বর্ষার। এই কয়েকদিনে ও একটা পিচ্চির সাথে খুব সখ্যতা গড়ে উঠেছে। খুব চঞ্চল পিচ্চি টা। কাছে আসলে মন খারাপ করে থাকতেই পারে না ও। আমরা আসার কয়েক দিন পরেই পিচ্চিরা এই ফ্ল্যাটে এসেছে। পিচ্চিটার নাম পরী। দেখতেও সে পরীর মত সুন্দর। নাম ও পরী মনে হয় ওর এইরূপ দেখে ওর বাবা মা এই দিয়েছে। দেখতে মনে হয় না পরী খুব চঞ্চল কিন্তু পরী হচ্ছে মারাত্মক চঞ্চল মেয়ে। বাচ্চাদের সাথে কখন আমার তেমন সম্পর্ক হয়নি কারন এরা খুব দুষ্টু হয়। তাই এদের থেকে বর্ষা দুরত্ব বজায় রেখেছে। কিন্তু এই চঞ্চল পরীর সাথে বর্ষার ভাব হয়ে গেছে।
আজ পরীর সাথে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে বর্ষা। এখানে একটা শিশু পার্ক আছে পরী বর্ষাকে নিয়ে সেই পার্ক এ চলে এলো। এসে লাফালাফি ছোটাছুটি করতে লাগলো আরো অনেক বাচ্চারা আছে এখানে বর্ষা ওদের সাথে লাফালাফি করছি অনেকদিন পর প্রাণ খুলে হাসছে। এখানে এসে বর্ষা সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে গেছে যেন।
‘ বর্ষাপু আমি আইসক্রিম খাবো।’
পরীর কথা শুনে বর্ষা চমকে উঠলো। টাকা তো সাথে আনেনি বর্ষা এখন টাকা কোথায় পাবো কি ঝামেলায় পরলাম। টাকা আনার কথা তো মনেই ছিলো না।
পরী বর্ষার হাত ঝাঁকিয়ে বললো, ‘ কি হলো খাওয়াবে না।’
‘ পরী আমি তো টাকা আনিনি। কাল খাওয়াবো তোমাকে কেমন। এখন চলো বাসায় ফিরে যাই।’
পরীর নাছড়বান্দা এখনই খাবে। ওর নাকি খুব খেতে ইচ্ছে করছে। এখন রাগ লাগছে বর্ষার। পরীর ওর স্কার্ট টেনে আইসক্রিম ওয়ালার কাছে নিয়ে এলো। বর্ষা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষা পরীর হাত স্কার্ট থেকে ছাড়িয়ে নিলো। পরীর আইসক্রিম চেয়ে ফেলেছে। ও না করছে।
‘ না না দিয়েন না প্লিজ।’
আইসক্রিম ওয়ালা, ‘ বাচ্চা তো চাচ্ছে আপনি দিতে মানা করছে কেন?’
‘ সরি আসলে আমার কাছে এখন টাকা নাই। টাকা ছাড়াই এসেছি।এখন আইসক্রিম নিলে টাকা দেবো কি করে।’
‘ আচ্ছা সমস্যা নাই।টাকা পরে দিয়েন আমি এখানে প্রতিদিন আসি। আপনার বাসা কোনটা?”
‘ ওই কাছেই দশ মিনিটের রাস্তা।’
পরীর জরাজরিতে বর্ষা একটা আইসক্রিম নিলো। কিন্তু আইসক্রিম ওয়ালা জোর করে দুইটা আইসক্রিম দিলো। বর্ষা লজ্জা পেয়ে দুটাই নিলো। পরীর জন্য মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। মেয়েটা এতো চঞ্চল কেন? কতো আনন্দ করছিলাম সব মাটি করে দিলো। ছিঃ টাকা বিহীন আইসক্রিম খাচ্ছি। বর্ষা মনে খারাপ করে দোলনায় বসে রইলো। আর ওর সামনে পরী কানে হাত দিয়ে সরি বলতে লাগলো। এত ইনোসেন্ট আর মিষ্টি লাগছিলো দেখতে যে বর্ষা রাগ উঠে গেল। কিন্তু মুখ গম্ভীর করে রাখলো।
পরী আইসক্রিম শেষ করে সব বাচ্চাদের নিয়ে এসে। পেছন থেকে দোলনায় দোল দিতে লাগলো।বর্ষার মন খারাপ নেস টা একদমই চলে গেল বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে বলল ,
‘আরে কি করছিস তোরা?কষ্ট করে আমাকে দোল দিতে হবে না তোরা এখানে বস আমি তোদের দোল দিচ্ছি।’
কে শোনে কার কথা বর্ষার কথা শুনলো না। বর্ষা ওঁদের থামাতে না পেরে দোল খেতে লাগল আর আনন্দে খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো।
আইসক্রিম ওয়ালাকে টাকা দিয়ে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলো একজন মুগ্ধ নয়নে। বর্ষা ঠোঁটে হাসি দেখে তার ঠোঁটের কোনে হাসি চলে এলো।
.
বর্ষার মন ভালো থাকলে তখন ও চুপি চুপি রান্না ঘরে গিয়ে ওর সেই বিখ্যাত চা করে। যা সব থেকে বাজে হয় খেতে। অতি আদরের বলে কখনো মাম্মা ওকে রান্না ঘরের ধারের কাছে ঘেঁষতে দেয়না এজন্য রান্নার ক্ষেত্রে একদম কাঁচা।
কিন্তু চা করতে পারে। কিন্তু সেই চা খাওয়ার যোগ্য হয় না। কিন্তু মাম্মা বাপি খুব আনন্দের সাথেই তা পান করেন। আর বকেও দেয় রান্না ঘরে লুকিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ আমি যদি আঘাত পায় এজন্য।
আজ বাইরে উঁকি মেরে দেখতে যাব কেউ আছে পারে আছে কিনা দরজা খুলতেই একজন অপরিচিত লোক দেখলাম। আমার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার পেছনে থেকে কেমন জানি চেনা লাগছিল। কিন্তু লোকটা এদিকে ঘুরতে যাবে দেখে আমি দরজা আটকে বসে পরলাম। কে এলো এখন আবার। খুব রাত না কিন্তু কে এটা। এখন অবশ্য অনেক কেই আসে বর্ষা সেদিকে লক্ষ্য করে না। সারাদিন রুমে দরজা আটকে বসে থাকে তাই চিনে না কাউকে। আধা ঘন্টা অপেক্ষা করে দরজা খুলে বেরিয়ে রান্না ঘরে চলে এলাম।দরজা আটকানোর শব্দে বুঝতে পেরেছি লোকটা চলে গেছে। রান্না ঘরে এসে চা করতে লাগলো। ট্রে তে তিন কাপ চা করে বাপির রুমের ঢুকে গেলো। ভেতরে ঢুকে বাপি আর মাম্মা কি কিছু নিয়ে আলোচনা করতে দেখলো ও। ওকে দেখেই দুজনে চুপ করে গেলো।
বর্ষা অবাক হয়ে তাকিয়ে এগিয়ে টেবিলের উপর ট্রে রাখলো।
‘তুই আবার রান্নাঘরে গিয়ে ছিলি কেন? চা খেতে ইচ্ছে হয়েছে আমাকে বলতেই পারতি!’
‘তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছিল। আমাকে দেখে থেমে গেলে কেন?’
‘কিছু না!’ মাম্মা বললো।
বাপি বললো, আমার প্রিন্সেসের কি মন ভালো আজ!!’
‘জ্বি বাপি।’
‘সে তো আমি তোমার হাতে চায়ের ট্রে দেখে বুঝতে পেরেছি। কারণটা কি জানতে পারি?
‘ বাপি পরীর সাথে থেকেই আমার মন ভালো হয়ে গেছে। খুব কিউট ও। ওর সাথে থাকলে মন খারাপ করে থাকাই যায় না।’
অনেকটা সময় বাবা-মার সাথে গল্প করলো বর্ষা। আলোচনা বিষয়ে আর জিজ্ঞেস করলো না কারণ ও মনে করলো ওকে জানাতে চায়না তাই আর জিজ্ঞেস করলো না।
.
একদিন রাতে নিবিড় চৌধুরী বর্ষার রুমে এসে ওর পাশে বসলো। বর্ষার শুয়ে ফোন ঘাটছিল বাপিকে দেখে উঠে বসে। নিবিড় চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
‘ বর্ষা আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি?’
বর্ষার বাপির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ কি সিদ্ধান্ত বাপি?’
বর্ষা মা ও এসে বসে খাটে। দুজনে একটা নিঃশ্বাস ফেলে।
বর্ষার বাপি বললো,
‘ আমরা তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।’
#চলবে……..
#চলবে……..