#তুমি_হলেই_চলবে
#part_8
writer : #Mahira_Megha
কথা গুলো বারবার কানে বাজছে আরুহীর।
আর্শ ওর সামনে এসে ওকে ডাকছে বাট ওর কানে কিছুই পৌছাই নি।
আর্শ হাত দিয়ে আরুহীর কাধ ঝাকিয়ে, ” এই রুহি। কি হয়েছে তোর? ”
আরুহী আর্শের দিকে মলিন চোখে তাকালো। আর্শের কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে ওকে বলে উঠলো,” সিথি কে মনে আছে তোর? ”
আর্শঃ সিথি! হঠাৎ সিথির কথা কেনো বলছিস রুহি।
-আজ না আমার সিথির কথা খুব মনে পরছে। ওর বলা কথা আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। সিথি ঠিক বলছিল আর্শ আমি পাথর। আমার মন নেই।
-কেনো এসব বলছিস? কি হয়েছে তোর?
-সেদিন সিথি কে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছিলাম।ওর কোনো দোষ না থাকা শর্তেও। আর আজ ভাইয়াকে। আরিয়ান ভাইয়াকে আমার জন্য ভুল বুঝলো। ভাইয়াকে থাপ্পড় মেরেছে বড়আব্বু। সব দোষ আমার ছিলো।আমি পাগলামি করেছিলাম ভাইয়ার সাথে।
কথা আটকে আসছে আরুহীর কান্নায় ভেঙ্গে পরেছে ও।
আর্শ ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে, ” কিছু হয় নি রুহি সব ঠিক হয়ে যাবে।
-কিছু ঠিক হবে না। সিথি কোথায় আমি জানি না। আজ ওকে খুব করে দেখতে ইচ্ছে করছে ক্ষমা চাইতে ইচ্ছে করছে। আমি সেদিন ওর চোখের পানির কারন হয়েছিলাম। বিনা কারনে ওকে কষ্ট দিয়েছিলাম।
আরুহী নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো ডুব দিলো অতীতে।
আর্শ ছিলো স্কুলের ফাস্ট বয় আরুহী 2nd আর সিথি3rd। ছোট বেলা থেকেই আরুহী খুবই দুষ্টু ছিলো। ওর সব দুষ্টুমির সাথি আর্শ।
সিথি খুব শান্ত মেয়ে। প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা বলে না।
আর্শ সেদিন স্কুলে যায় নি। আরুহী একা ছিলো।
টিফিনে সবাই ক্লাস রুমের বাহিরে গেলেও সিথি বইয়ে মুখ গুজে বসে আছে। আরুহী তো খুব দুষ্টু। সিথির সামনে গিয়ে নানা রকম মুখো ভঙ্গি করছে।
আরুহীকে দেখে সিথি হেসে দিলো। তারপর থেকে দুজনের ভাব হয়ে গেলো।
আরুহী আর্শ সিথি তিনজন সব সময় একসাথে থাকতো। আরুহী আর্শ সারাদিন বকবক করলেও সিথি চুপচাপ শুনতো। আরুহী আর্শ সিথির লাইফে প্রথম ফ্রেন্ড। এর আগে কখনো কোনো ফ্রেন্ড ছিলো না ওর। মেয়েটা খুব চাপা স্বভাবের। কাউকে কিছু বলে না।
আর্শ আরুহীর সাথে ঝগড়া করছে। সিথি ওদের কত করে বোঝালো বাট কেউ শুনলো না। সিথির পা লেগে সিড়ি থেকে পড়ে গেলো আরুহী।
মাথা অনেকটা ফেটে গেছে। সিথি কি করবে বুঝতে পারছিলো না। আর্শ সিথি টিচারকে ডাকলো।
সিথি আরুহীকে ডাকলো বাট আরুহী ওর সাথে কোনো কথা না বলে চলে গেলো নিলিমা আর্শের সাথে।
সিথি স্কুলে এসে আরুহীকে খুজছিলো খুব মিস করছিলো ওকে। বাট আরুহী তো 3 দিন স্কুলে আসে নি। ওরা ক্লাস 7 এর স্টুডেন্ট হওয়ায় কারো কাছে ফোন ও ছিলোনা। তাই যোগাযোগ করতে পারছিলো না সিথি।
আরুহী স্কুলে আসার পর সিথি ওকে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলো। যে মেয়েটা একটাও কথা বলে না সে আরুহীকে দেখে এক নিঃশ্বাসে বলতে শুরু করলো,” তুই ঠিক আছিস তো আরুহী। তোর জন্য আমার কত চিন্তা হচ্ছিলো জানিস। তোর সাথে যোগাযোগ ও করতে পারছিলাম না। তোকে খুব মিস করছিলাম। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিলো। তুই যে আমার জীবনে অনেকটা জুরে আছিস আরুহী। আমায় ক্ষমা করে দে আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি। ”
কথাটা শেষ হতে পুরো ক্লাসের সামনে আরুহী সিথিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। রাগি গলায় বলে উঠলো,” বন্ধ কর তোর নাটক। আমায় তুই হিংসে করিস তাই না? তাই তো আমায় ফেলে দিয়েছিলি সিড়ি থেকে। ”
সিথিঃ আমি তোকে ইচ্ছে করে ফেলিনি আরুহী। এক্সিডেন্ট ছিলো আর্শ তুই বলনা প্লিজ।
-আর্শ কি বলবে ।
আর্শঃ আরুহী তুই,,,,
-একটাও কথা বলবি না আর্শ। সিথির সাইড কেনো নিচ্ছিস তুই। তোকে বন্ধু ভেবে আমি ভুল করেছিলাম। তুই কারো বন্ধু হওয়ার যোগ্য না।
সিথি হাত দিয়ে চোখে পানি মুছে,” তুই মেয়ে না আরুহী তুই পাথর। মেয়েদের একটা নরম মন থাকে যা তোর মাঝে নেই। তোর এই ছেলে ছেলে ড্রেস আর বিহেভ তোকে মেয়ে হওয়া শর্তেও পাথর বানিয়ে দিয়েছে।
কথা টা বলে স্কুল থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যায় সিথি। আর কোনো দিন স্কুলে আসেনি ও।
আর্শ হেড টিচারের থেকে জানতে পায় সিথির বাবা ট্রান্সফার সার্টিফিকেট তুলে নিয়ে গেছে।
যদি ও কখনো সিথির কথা মনে পরেনি আরুহীর কখনো কোনো অনুশোচনা ও হয় নি। বাট আজ ওর খুব খারাপ লাগছে। মন থেকে অনুশোচনা হচ্ছে। একবার ওকে জড়িয়ে ক্ষমা চাইতে ইচ্ছে করছে।
আর্শঃ এতো ভাবিস না রুহি যেটা সম্ভব নয় সেইটা ভেবে কষ্ট পেয়ে কি লাভ বল?
আরুহীঃ ঠিক বলেছিস আর্শ। আমি ভুল করেছি ঠিকি বাট ভুল টা ঠিক শুধরে নেবো। আজ অব্দি আমি যেটা করেছি সেইটায় ঠিক মনে হয়েছে। বাট আজ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। এত দিন আমি শুধু নিজের অনুভূতিটা দেখে এসেছি। কখনো ভাইয়ার দিক টা ভাবি নি।
আমি বড়আব্বু চোখে ছোট করে দিলাম ভাইয়াকে। বাট আমি কথা দিচ্ছি ভাইয়াকে বড়আব্বুর ভালোবাসা আমি ফিরিয়ে দিবো।
সকালে
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে বসে আছে আরুহী। ফাস্ট ইয়ারের এক্সাম শেষ হয়েছে কয়েক দিন কলেজ বন্ধ থাকবে। আরুহী আয়নার সামনে দাড়িয়ে, “আজ থেকে আরুহী পাল্টে যাবে। আজ থেকে আমি আমার আম্মু আব্বুর মেয়ে হয়ে থাকবো। ওদের মনের মতো হয়ে দেখাবো। ”
আরুহী ড্রইংরুমে আসতেই সবাই হা হয়ে তাকাই ওর দিকে।
আরুহীঃ হা করে কি দেখছো।
নিলিমার চোখে পানি খুশির পানি। লাইফে প্রথম আরুহী নিজের ইচ্ছাই একটা সাদা কামিজ আর নীল রংয়ের স্কার্ট প্লাজু পড়েছে সাথে নীল রংয়ের ওড়না।
রিহানাঃ দেখ তো তোকে কত সুন্দর লাগছে এই কাপড়ে! তোর মামি নিজের হাতে তোকে বানিয়ে দিয়েছে। তুই তো তোর মামিকে কত কথা বললি এগুলো পরিস না কখনো পরবি না। আজ নিজেই পরে নিলি?
আরুহী মিষ্টি হেসে হ্যাঁ বড়আম্মু এখন থেকে আমি এগুলোই পড়বো। তোমাদের মেয়ে হয়ে থাকবো। আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলা গুন্ডামি করা সব ছেড়ে দিবো।
আরিয়ান চোখ নামিয়ে নিলো।মনে মনে বলছে,” নতুন নাটক শুরু করেছে। আব্বুর চোখে খারাপ সাজিয়ে হয় নি। এখন সবার সামনে ছোট করে দিবে।
আরিয়ানে দিকে তাকিয়ে আরুহী মনে মনে,” আরিয়ান ভাইয়া তোমাকে বড়আব্বুর ভালোবাসা ফিরিয়ে দিবো। ”
বিকেলে আর্শ আরুহী ছাদে পায়চারী করছে। মুখে টেনশনের ছাপ।
দুজন দুজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে পরে গেলো।
আরুহীঃ ওহহো আর্শ তুই ও না কি করিস। কিছু ভাব না কি করা যায়।
আর্শঃ আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে বাট তোর জন্য খুব কঠিন হবে।
-আমি সব করতে রাজি তুই শুধু বল।
-আমাদের এখন একজনই হেল্প করতে পারে নাবিদ ভাইয়া।
নাবিদ নাম টা শুনেই আরুহীর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। আর্শের দিকে তাকিয়ে নাবিদ ভাইয়া ছাড়া হবে না?
-না নাবিদ ভাইয়া সবটা জানে। ভাইয়ার বেষ্ট ফ্রেন্ড নাবিদ ভাইয়া। ছোট বেলা থেকে একসাথে থেকেছে। আব্বু কেনো ভাইয়াকে লাইক করে না নাবিদ ভাইয়ায় বলতে পারবে।
-বাট আমায় কি বলবে নাবিদ ভাইয়া? আমি ওর সাথে যা করেছি তারপর ও কি?
-আর কোনো উপায় নেই ভাইয়াকে হেল্প করতে চাইলে নাবিদ ভাইয়ার কাছে যেতেই হবে। তোর জন্য তো আমাকেও নাবিদ ভাইয়া সহ্য করতে পারে না। জানি না কিছু বলবে কিনা?
-আমরা আজকেই নাবিদ ভাইয়ার বাড়িতে যাবো। যা হওয়ার দেখা যাবে। বাট ভাইকে আর কষ্ট পেতে দিবো না।
আরিয়ান নিজের রুমে একা একা বসে আছে। সামনে ল্যাপটপ থাকলেও কাজে কোনো মন নেয় ওর। নিজের মনেই বলে যাচ্ছে,”মেয়েদের নিয়ে আমার ধারনা একদম ঠিক তা আবার ও প্রমান হয়ে গেলো। আরুহী তোমাকে আমি কোনো দিন ও ক্ষমা করবো না। আব্বু আমার গায়ে জীবনে প্রথম হাত তুলেছে তাও তোমার জন্য।
আরুহীঃ ভাইয়া সরি আমি বুঝতে পারি নি এমন কিছু হবে। আর কখনো তোমার বিরক্তির কারন হবো না আমি। দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো। ভাইয়া বিশ্বাস করো আমি নির্লজ্জ বেহায়া না। আমি মন যা বলে তাই করি। কি করবো বলো আমি যে মনে এক রেখে মুখে অন্যটা বলতে পারি না। বাড়ির কখনো আমায় কিছু বলেনি কখনো। তুমি যে গুলোকে বেহায়াপনা মনে করো বাড়ির সবাই সেগুলোকে আমার বাচ্চামি ভাবে। আমি জানি না কার ভাবনা সঠিক। সত্যি এগুলো বেহায়াপনা নাকি বাচ্চামো।
আমি কি করবো বলো তুমি সামনে থাকলে আমি যে অন্য জগতে হারিয়ে যায়। ভালোবাসি যে আমি তোমায়। কেনো বাসি জানি না। কেনো তোমায় দেখে পাগলামি করি জানি না।
বাট হ্যাঁ আমি নিজেকে পাল্টে ফেলবো। অনুভূতি গুলো তো বদলাতে পারবো না বাট মনের কথা লুকিয়ে রাখতে শিখে নিবো আমি।
জানো ভাইয়া আগে কখনো এমন ফিল হয়নি। বাট তোমাকে দেখার পর থেকে আমি পাগলামি কেনো করছি জানি না । মনকে বোঝাতেই পারছি না। মন যে বড্ড অবুঝ। বাট আর না আমি নিজে কষ্ট পেলেও তোমাকে কষ্ট পেতে দিবো না। সবটা ঠিক করে দিবো।
তোমার বিরক্তির কারন হবো না সবটা ঠিক করে দিবো।
চলবে…….
( একটা আপু বলেছে যে মেয়ে গুলো ছেলেদের পোষাক পরে,বিহেভ করে তারা খুব স্ট্রং হয়। কথাটা আমিও মানি। বাট তারা নাকি কখনো বেহায়া নির্লজ্জ হয় না। হ্যাঁ সবাই হয় না। বাট কেউ হয় না এটা ভুল। আপু হয়তো আপনি এরকম কাউকে দেখেন নি।
বাট আমি দেখেছি এরকম অনেক মেয়ে আছে যারা কোনো ছেলেকে একবার পছন্দ করলে তাকে কোনো মতেই ছাড়ে না। তার পেছনে নির্লজ্জর মতো পড়ে থাকে ইভেন ছেলেটা রাজি না হলে হাত পা ভেঙ্গে দেয়। মেরে ফেলার হুমকি অব্দি দেয়।ছেলেটার লাইফ হেল করে দেয়।
এইরকম মেয়ের কোনো ছেলে ফ্রেন্ড যদি কোনো মেয়েকে লাইক করে তাহলে সে নিজে মেয়ে হওয়া শর্তেও ওই মেয়েটাকে রিলেশনশিপে যাওয়ার জন্য জোড় করে। কলেজ, ভার্সিটিতে এরকম বেশি হয়ে থাকে। মেয়েটার জীবন টা শেষ করে দেয়।
এরকম অনেক মেয়ে আছে যারা ছেলেদের সাথে বসে নেশা করে সিগারেট খায়।
জানি না এগুলোকে আপনি কি ভাবে নিবেন। বাট হ্যাঁ এগুলো যদি বেহায়াপনা, নিষ্ঠুরতা না হয়ে থাকে তাহলে কি এগুলো?
আর যদি আরুহীর ক্যারেক্টারের কথা বলি তাহলে আরুহী আরিয়ানকে ভালোবাসে সেইটা আবেগের বসে হোক বা সত্যি । ওর কাছে ওর অনুভূতি গুলো ভুল হলেও ঠিক। ওর পাগলামি গুলো ওর কাছে বেহায়াপনা মনে হয় না। আর পাগলামি ছাড়া ভালোবাসা হয় না।
ভালোবাসা যদি কোনো লজিক মেনে হতো, মনকে যদি কন্ট্রোল করা যেতো তাহলে কেউ তার হবে না জেনেও প্রতিটি মোনাজাতে তাকে চাইতো না আল্লাহর কাছে। তার জন্য চোখের পানি ফেলতো না।)
কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে বা কোনো বিষয়ে খারাপ লাগলে বলতে পারেন।
বাট হ্যাঁ নায়ক নিয়ে আমি এখন কিছুই বলবো না। নায়ক কে জানার জন্য গল্প শেষ অব্দি পড়তে হবে।
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার পাশে থাকার জন্য।