তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব -১২+১৩

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ১২
#Jhorna_Islam

দায়ানের সোহার এরকম অবস্থা দেখে রীতিমতো ঘাম ছুটে গেছে।
সোহা কি হয়েছে তোমার? বলো আমায়। এমন করতেছো কেনো কোথায় ক’ষ্ট হচ্ছে? বলেই সোহা কে ধরতে যায় দায়ান।
কিন্তু সোহা দায়ানকে ধরতে দেয়না।অনেক কষ্টে নিজের মুখ থেকে কথা বের করে।

আ-আপনি না মা-মানা করেছেন আ-আপনার কাছে যেতে।ন-না ছুঁতে। তা-হলে আপনি কেনো কাছে আ-আসছেন চলে যান।

দায়ানের হুঁ’শ আসে কিছুসময় আগে সোহা কে কি বলেছে।রাগের মাথায় মেয়েটাকে এভাবে বলা ঠিক হয়নি।কেন যে রাগটাকে সামলাতে পারলোনা।একজনের রাগ আরেজনের উপরে ঝেড়ে ফেললো।খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছে।অনুতাপ হতে লাগলো।নিজের গালে নিজেই চ’ড় মা’রতে ইচ্ছে করতেছে। মেয়েটাকে এভাবে বলা একদম ঠিক হয়নি।সেতো আমার ভালোর জন্যই এসেছিলো।আর আমি কি করলাম,,যা নয় তাই শুনিয়ে দিলাম? সেম অন ইউ দায়ান।নিজের মনে নিজেই গা/লি দিতে লাগলো দায়ান।

কিছুসময় আগে দায়ানের মোবাইলে যে ছবিটা এসেছে।সেটা আর কারো না রুশ ও এতোদিন যে কোম্পানি দায়ানের চু’রি হওয়া ফাইলের সব ডি’ল গুলো পেতো সে কোম্পানির এম.ডি।দুই জনের পাশাপাশি হাস্যে’জ্জল ছবি।
দেখে মনে হচ্ছে কি নিয়ে যেনো আলোচনা করছে।দায়ানের মাথাই কাজ করা ব’ন্ধ করে দিয়েছে যে রুশ এমন কিছু করতে পারে।
রুশ দায়ানের স্কুল জীবনের বন্ধু। খুবই কাছের।দায়ানের সব কিছু যেমন রুশ যানে,তেমনি দায়ান ও রুশের সব কিছু যানে।
দায়ান ভাবতেই পারতেছেনা রুশ তার পিঠ- পিছে ছু/ ড়ি চালাবে।

দুনিয়া থেকে মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ই উঠে যাচ্ছে। কাকে বিশ্বাস করবে।নিজে আপন মানুষরাই ক্ষ’তি করে বেশি।এজন্যই গুরুজনেরা বলে,,,” আপন থেকে পর ভালো।”
এসবই দায়ান মাথায় হাত দিয়ে বসে বসে ভাবছিলো।আর রাগ যেনো ফু’সছিলো।হঠাৎ সোহার আগমন আবার মাথায় হাত দেওয়ায় দায়ানের রা’গে যেমন ঘি ঢা’লার মতো কাজ করলো।তাই নিজেকে আর কন’ট্রো’ল করতে পারেনি।সোহার উপর ই রা’গটা ঝে’ড়ে ফেলেছে।

সোহা প্লিজ কাম ডা’উন।আ’ম সো সরি।আমার ভুল হয়ে গেছে এক্স”ট্রিম’লি সরি। রাগের মাথায় বলে ফেলেছি।প্লিজ বোঝার চে’ষ্টা করো একটু। আর এসব কথা কখনো বলবনা ওকে? প্লিজ এবার আমাকে বলো কি হয়েছে।কোথায় ক’ষ্ট হচ্ছে। তোমার কি শ্বা’স ক’ষ্ট হচ্ছে? বলো আমায়।চলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।

সোহা এবার ক’রুণ চোখে দায়ানের দিকে তাকায়।

দায়ান কিছু না ভেবেই সোহার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

নিশ্বাস আর নিতে পারতেছেনা সোহা।সোহার চোখ উ’ল্টে আসছে।সামনের সব কিছু যেনো অ’ন্ধকার হয়ে আসছে।অনেক ক’ষ্টে দায়ানের হাতে কাঁ’পা কাঁ’পা হাত গুলো রাখে।

দায়ান শ’ক্ত করে নিজের মুঠোতে আগলে নেয় সোহার হাত গুলো।

—- ডাক্তার ললাগববে ননা। আ-আমার রুওওওমে,, বলেই আটকে যায় সোহা। মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না।

— হ্যা তোমার রুমে কি বলো? সোহা তাড়াতাড়ি বলোনা প্লিজ একটু ক’ষ্ট করে বলার চে’ষ্টা করো। আমি বুঝতে পারতেছিনা।দায়ানের কা’তর ক’ন্ঠস্বর।

—- সোহা দায়ানের হাত খাম’চে ধরে আবার বলার চে’ষ্টা করে। আআমার রুমের বে-বেড সাইইড টেবি,,,,,,,আর বলতে পারে না জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।

—– দায়ান আর সোহার বলার অপে’ক্ষাতে থাকেনা।দৌড়ে সোহার রুমে চলে যায়। গিয়ে বেড সাইড টেবিলে খুঁজতেই দেখতে পায় ওখানে ই/ন/হে’লার রাখা আছে।দায়ান একপ্রকার ছুটে গিয়ে ওটা হাতে তুলে নেয়।যে ভাবে দৌড়ে গিয়েছিলো সে ভাবেই সোহার কাছে দৌড়ে এসে নিচে বসে।

সোহা ততক্ষণে হাত পা ছে/ড়ে দিয়েছে প্রায়। দায়ান দ্রু’ত সোহার মাথাটা নিজের কাছে আগলে নিয়ে সোহার মুখের কাছে ধরে।

সোহা কাপা কাপা হাতে অনেক কষ্টে ই/ন/হে’লার টা হাতে নিয়ে শ্বা’স নিতে থাকে।
দায়ান সোহাকে নিজের কাছে আগলে ধরে রাখে।

সোহা অনেকটা সময় শ্বা’স নিয়ে কিছুটা স্বা’ভাবিক হয়।তারপর হাত পা ছেড়ে নিচে বসেই সোফায় মাথাটা হে’লি’য়ে দিয়ে চোখ ব’ন্ধ করে রাখে।চোখ খোলার মতো শ’ক্তি ও অব’শিষ্ট নেই। সব যেনো কেউ শু/ষে নিয়েছে।

দায়ান ও যেমন নিজের প্রান ফিরে পেয়েছে।সোহার পাশেই মাথাটা সোফায় হে’লিয়ে দেয়।ক’রুণ চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে থাকে।আজ এই মেয়েটা কতোটা ক’ষ্ট পেয়েছে। শুধুমাত্র তার করা ভু’লের জন্য। ভু’ল নয়তো অ’ন্যায় করেছে।ভাবতেই শরীরে কা’টা দেয় আরেকটুর জন্য মেয়েটা মৃ’ত্যু’র মুখেই চলে গেছিলো।

দায়ান এখনো এক দৃ’ষ্টিতে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। কি মায়াময় সেই মুখ।কি শান্ত হয়ে আছে।অথচ সারাক্ষণ কাউকে কথা বলার জন্য না পেলে নিজে নিজেই বক বক করে মেয়েটা।কান্না করায় চোখ মুখ ফুলে আছে। মুখটা এখনো লাল হয়ে আছে।চোখের কা’র্ণিশটা এখনো ভেজা।চুলের খোপাটা অগোছালো হয়ে আছে।ওড়নাটা মেঝেতে এলোমেলো হয়ে পরে আছে।এমন ভাবে হাত-পা ছড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে দেহে প্রা’নটাই নেই।

দায়ান আরেকটু এগিয়ে এসে সোহার কাছে ঘেসে বসে।নিজের হাত গলিয়ে সোহার খোপা থেকে বেরিয়ে আসা এলোমেলো চুল গুলু কানের পিছনে গুঁ’জে দেয়।পাশ থেকে ওড়নাটা খুব য’ত্ন সহকারে তুলে নেয়। এই ওড়না নিয়ে মেয়েটা কতো কা’ন্ড করেছে।অথচ ঐই দিন এই ওড়না দিয়েই কতো য’ত্ন সহকারে মাথা মুছে দিয়েছে।

ওড়না থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রা’ণ নাকে এসে বারি খাচ্ছে। ঐদিন ও এরকম একটা ঘ্রা’ণ পেয়েছিলো দায়ান।এসব ভাবতে ভাবতেই হাতে থাকা ওড়না টা নিজের নাকের কাছে এনে ধরে নিজের অজা’ন্তেই। সেই মাতাল করা ঘ্রা’ণ। দায়ান আবেশে চোখ ব’ন্ধ করে রাখে কিছুসময়। পরো মু’হূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়।খুব য’ত্ন সহকারে ওড়না টা গায়ে জড়িয়ে দেয়।

সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তাপমাত্রা ও বেড়ে চলেছে।বাইরে কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ।মানুষ নিজ নিজ উদ্যেগে যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।

দায়ান একমনে সোহার দিকে কতো সময় নিয়ে তাকিয়ে ছিলো তার জানা নেই।এই প্রথম সোহাকে এতো সময় নিয়ে এতো কাছ থেকে লক্ষ করছে।মেয়েটা যে অতিমাত্রায় সুন্দরী তা না।খুবই সাধারণ তাও দায়ানের চোখ মেয়েটার মাঝে আঁ’টকে আছে।
হয়তো ঠিকই বলা হয়েছে,,,,,
“সাধারণ হতেও অসাধারণ গুণ লাগে যা সবার মাঝে থাকেনা”।

সোহা ঐভাবেই রয়েছে কোনো নরচর নেই।ক্লান্ত শরীরটাতে ঘুম পরিরা এসে ভর করেছে।চোখ বুঁজে থাকতে থাকতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমিয়ে পরলেও এখনো শ্বাস নেওয়ার গতি স্বাভাবিক হয় নি।

দায়ান সোহাকে ভালো করে পর্যবেক্ষন করে বুঝতে পারে ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো যে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে তার শব্দ কানে এসে বারি খাচ্ছে। তাই কিছু সময় ভেবে খুব সাবধানে হাত বাড়িয়ে সোহাকে কোলে তুলে নেয়।
সোহা ছোট্ট বিড়াল ছানার মতো দায়ানের বুকে মুখ গুঁজে দেয় ঘুমের ঘোরে।সোহার স্পর্শে দায়ানের বুক কেঁ’পে উঠে। চোখ ব’ন্ধ করে নিজেকে সামলে নিয়ে সোহার রুমের দিকে আগায়।

সোহার রুমে ঢুকে খুব যত্ন সহকারে বিছানার উপর আস্তে করে শুয়িয়ে দেয়। এতোটাই কমোলতার সাথে কাজ গুলো করে যেনো একটু এদিক ওদিক হলেই সোহার নরম তুলতুলে শরীর টা তে ব্যা’থা পাবে।শুয়িয়ে দিয়ে পায়ের কাছ থেকে কাঁথা টা টেনে শরীরে জড়িয়ে দেয়। শরীর টা ঠান্ডা হয়ে আছে সোহার।তারপর এগিয়ে গিয়ে জানালার পাশের পর্দা গুলো মেলে দেয়।যেনো সোহার ঘুমে ব্যা’ঘাত না ঘটে আলোর জন্য । তারপর আরেকবার সোহার দিকে চোখ বু’লিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

——————————————-
পুরো বাড়িতে পিন’পত’ন নিরবতা।যেনো কোনো কা’ক প’ক্ষি ও নেই।দায়ান সোহাকে রুমে দিয়ে এসে চুপচাপ রুমে ঢুকে বাবা মায়ের ছবির দিকে এক ধ্যা’নে তাকিয়ে আছে।চোখের পানি ছ’লছ’ল করছে।চাইলেও কাঁদতে না পারার কি যে নিদা’রুণ ক’ষ্ট, যে কাঁদতে না পারে সেই বুঝে।

অফিসের সময় কখনই পেরিয়ে গেছে।সে দিকে দায়ানের বি’ন্দু পরিমাপ খেয়াল নেই।পকেটের ফোন বিরতিহীন বে’জে চলেছে।আজ যেমন ধরার তা’ড়া নেই। একসময় ফোনটা বেজে বেজে বন্ধ হয়,আবার কিছুসময় পরই বেজে উঠে ।
—————————————–
রুশ অফিসে এসে দায়ান কে একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে। দায়ানের ধরার নামও নেই। আজ অফিসে আসতে রুশের একটু লেট হয়ে গেছে। রুশ প্রথমে একটু অবাকই হয়েছে। অফিসে এসে যখন দেখতে পেলো দায়ান এখনো অফিসে আসেনি।দায়ানের অফিসে আসতে কখনো লেট হয়না।ঠিক টাইমে অফিসে এসে হা’জির হয়।আর আজ এতো দেরি? তাই ফোন লাগায়,,,,,,, কিন্তু বারে বারে রিং হতে হতে কেটে যায় রিসিভ হয়না।

বারোটার দিকে আবার দায়ানের আর রুশের নতুন বি’ল্ডিং এর ইন’সট্রা’কশনের কাজ হচ্ছে ঐখানে গিয়ে সব ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা দেখার কথা।

তাই দায়ানকে কল দিচ্ছে হয়তো ভুলে গেছে। একপর্যায়ে কল দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে ভাবলো হয়তো অন্য কোনো কাজে বিজি।তাই কল আর দিলোনা।ফ্রি হয়ে দায়ান নিজেই কল দিবে ভেবে নিলো।

এবং নিজেই কাজ ঠকঠাক হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য বেরিয়ে গেলো।

————————————

সময়ের কাটা যখন বারোটার ঘরে তখন ঘড়ির ঢং ঢং শব্দে দায়ানের ধ্যা’ন ভা’ঙে।খাওয়ার কথা বে’মা’লুম ভুলে বসে আছে। খিদে নেই দায়ানের পর পর এতোগুলো অনা’কা’ঙ্ক্ষি’ত ঘটনায় খিদে ম/রে গেছে।পরের মুহূর্তেই দায়ানের সোহার কথা মাথায় আসে।মেয়েটাতো না খেয়ে আছে।এমনিতেই যা হলো তাতে ময়েটার শরীর দূর্বল হয়ে গেছে বুঝাই যায়।

——————————
আরো অনেক আগেই হয়তো সোহা রান্না করে ফেলতো।কিন্তু মেয়েটার সাথে যা করলো দায়ান অ’নুশো’চনায় দ’গ্ধ হচ্ছে। বুঝতে পারলো নিজেকেই কিছু একটা করতে হবে।একা জীবনে চলার জন্য অনেক কিছুরই স’ম্মু’ক্ষীন হতে হয়েছিল দায়ানকে।তাই নিজ তা’গি’দে নিজের কাজ করতে শিখে নিয়েছিলো।রান্নাটাও বাদ রাখেনি।কম বেশি রান্না যানে দায়ান।সময় মানুষকে সব কিছুই শিখিয়ে দেয়।যেই ছেলেটা এক গ্লা’স পানিও নিয়ে খেতোনা,,এখন সে নিত্য প্রয়োজনীয় সব কাজই পারে।কিন্তু সময়ের অভাবে করেনা।তাছাড়া জমিলা খালাই সব কাজ করে দিয়ে যায়। তাই করা হয় না।আজ আবার করবে সোহার জন্য। ভাবতে ভাবতেই রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে যায় দায়ান,,,,,,

#চলবে

বিঃদ্রঃ নেন আপনাদের দায়ানের মনে কিছুটা ফিলিংস জা’গিয়ে দিলাম।কালকে যারা বোনাস পার্ট চেয়েছিলেন দিতে চেয়েছিলাম,কিন্তু লেখা শেষ করতে পারিনি। আজ বোনাস পার্ট দেওয়ার চেষ্টা করবো। আর যারা দায়ানের অতীত জানতে চান তারা একটু ধৈ’র্য ধরুন। অতীত সামনে আসতে একটু সময় লাগবে।#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ১৩( বোনাস পর্ব)
#Jhorna_Islam

দায়ান রান্না ঘরে এসে আপন মনে ভাবতে লাগলো কি রান্না করা যায়।সোহা কি খেতে পছন্দ করে সেতো জানেই না।সোহার সম্পর্কে কোনো কিছুই ভালো ভাবে জানা নেই তার।অনেক ভেবে চিন্তে বিরিয়ানি রান্না করার সি’দ্ধান্ত নিলো। বিরিয়ানি রান্না টা মায়ের কাছ থেকে শিখে ছিলো।

দায়ানের মা খুব ভালো বিরিয়ানি রান্না করতো।সকল বন্ধু-বান্ধব রা ছুটির দিনে ছুটে আসতো দায়ানের মায়ের হাতের বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য। দায়ান শখের বসে মায়ের কাছ থেকে শিখে ছিলো রান্না টা।কখনো করা হয়নি।আজ করবে, সোহা কে দিয়েই নাহয় নিজের হাতে প্রথম রান্না করে টেস্ট করাবে।

এদিক ওদিক তাকিয়ে বিরিয়ানি রান্না করার সকল উপকরণ বের করে রাখলো।ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে পানিতে ভিজিয়ে রাখলো।তারপর একে একে সব কিছু নিয়ে রান্না করা শুরু করে দিলো।

——————————————-

আস্তে আস্তে চোখ খুলে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকে সোহা।শরীরে একদম শক্তি পাচ্ছে না উঠার।এদিকে খুদায় পেটে ইঁদুর দৌড়ে বেড়াচ্ছে।

অনেক কষ্টে উঠে বসে। শরীরের দূর্বলতায় মাথা ঝি’ম ঝি’ম করছে।অনেক সময় নিয়ে বিছানায় বসে থাকে।ঘুম থেকে উঠলে সোহার পা’ক্কা দশ মিনিট কোনো হু’শ জ্ঞা’নই থাকেনা। নিজেকেই তখন নিজে চিনতে পারে না।

অনেকক্ষন পর নিজের হুঁ’শে আসে। সকালের সব ঘটনা আস্তে আস্তে মানস পটে ভেসে ওঠে। চোখ দিয়ে আপনা আপনিই পানি পরতে থাকে।ঠিক করে নেয়,,দায়ান যতই সরি বলুক না কেনো।উনার কাছে সহজে ঘেঁষবেই না।যার উপকার করতে গেলো তার কাছ থেকে কতো কথাই না শুনতে হলো।

খিদের জ্বা’লা সহ্য না করতে পেরে উঠে দাঁড়ায়। কিছু রান্না করে আগে খেয়ে নিতে হবে।নয়তে চলা ফেরা করার এক রত্তি শক্তি ও অবশিষ্ট নেই।

————————————–

দায়ানের রান্না শেষ। এখন শুধু ডাইনিং টেবিলে গিয়ে রাখবে। রেখে তারপর সোহাকে ডাকতে যাবে।এতো বেলা হয়ে গেছে না খেয়ে থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে পরবে।

সোহা রান্না ঘরের পাশে আসতেই রান্না ঘর থেকে টুংটাং আওয়াজ শুনতে পায়।তাই পুরোপুরি রান্না ঘরে না ঢুকেই দেখার চেষ্টা করে রান্না ঘরে কে।

সোহা যেই টাইমে উঁকি দেয় ঠিক সেই টাইমেই দায়ান পিছনে ফিরে দরজার দিকে তাকায়। দু’জনের ই চোখে চোখ পরে যায়।সোহা তড়িৎ গতিতে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। দায়ান বোঝতে পারে সোহা অস্বস্তিতে তে পরে গেছে।এভাবে চোখে চোখ পরায়। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বলে ওঠে,,,,,
উঠে গেছো? আমার রান্না ও দেখা যায় ঠিক সময়েই শেষ হয়েছে। আমি এখোনি তোমায় ডাকতে যেতাম।টেবিলে গিয়ে বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।

আর কোনো সংকোচ বোধ করতে হবে না। এতোদিন তো তুমিই রান্না করে খাওয়াও। আজ না হয় আমিই খাওয়ালাম।

সোহা কথা বাড়ায় না খিদে পেয়েছে প্রচুর। খাওয়ার উপর রাগ করে লাভ নাই।তাই চুপচাপ ডাইনিং টেবিলে এগিয়ে যায় বসার জন্য। আর মনে মনে ভাবতে থাকে এই লোক রান্না ও করতে পারে? আর কতো গুন আছে কে জানে।

দায়ান টেবিলে খাবার নিয়ে এসে রাখে।নিজেও একটা চেয়ার টেনে বসে পরে। তারপর নিজ হাতে সোহাকে খাবার সার্ভ করে দিতে থাকে।

সোহা অবাক হয়ে দায়ানের কাজ দেখছে।কি হলো হঠাৎ লোকটার?

দায়ান সোহাকে খাবার সার্ভ করে দিয়ে,নিজের প্লেটে ও নেয়।খাবার নিতে নিতে বলে,,,খেয়ে অবশ্যই বলবা কি রকম হয়েছে।মায়ের কাছ থেকে অনেক আগে শিখেছিলাম।বাট করিনি কখনো আজই প্রথম।

সোহা দায়ানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে খাবার খেতে থাকে।সত্যি বলতে খাবারটা আসলেই অনেক মজা হয়েছে। অন্য রকম একটা টেস্ট পাচ্ছে খাবার থেকে।হয়তো প্রিয় মানুষের হাতের রান্না তাই জন্য। আর এমনিতেও সোহার বিরিয়ানি অনেক প্রিয়।

দায়ান নিজের খাবার রেখে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। খাবার কেমন হয়েছে তা জানার আসায়।

সোহা কিছু না বলে আপন মনে তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে।

দায়ান সোহার কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে বললল,,,,আমার ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছে।পরশু দিন আমরা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।

সোহা তাও কোনো কথা বলল না।

দায়ান হতাশার শ্বাস ফেলল আর কথা বাড়ালোনা।

দুইজনেই চুপচাপ খেতে থাকলো।

সোহা খাওয়া শেষ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াবে এমন সময়,,,,, দায়ান আবার করুন সুরে বলে উঠে “সরি”। আসলে ঐই সময় মাথা ঠিক ছিলোনা।অফিসের একটা ঝামেলা নিয়ে রে’গে ছিলাম। আর রেগে গেলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা।কখন কি করে ফেলি বলে ফেলি নিজেও বুঝতে পারি না।

দায়ানের করুণ কন্ঠ শুনে সোহা পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় দায়ানের দিকে।মুখ দেখেই বুঝতে পারছে বে’চারা প্রচুর অনু’ত’প্ত।
সোহাতো দায়ানের রান্না খেয়েই গ/লে গেছিলো।এখন দায়ানের মুখ দেখে রা’গ অভিমান সব শে/ষ।মুখে আপনা আপনিই হাসি ফোটে উঠে।

ইট’স ওকে। আমি আর রেগে নেই বুঝতে পারছি বিষয়টা। আর রান্নাটা দারুনননন হয়েছে।ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।মায়ের রান্না আর আপুর রান্নার পর এই প্রথম কারো হাতের রান্না তৃপ্তি নিয়ে খেলাম।বলেই সোহা নিজের রুমে চলে যায়।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে থাকে। নিজের অজান্তেই ঠোটে হাসি খেলা করে।

——————————————
যেহেতু দুজনেরই প্রায় দুপুরেই খেয়েছে।তাই পরে আর কারো খাওয়া হয়নি।

বিকেলে সোহা বাগানে চলে যায়। কতোক্ষন বাগানে হাটাহাটি করবে।ফুল ও গাছদের সাথে কথা বলবে।পরে গাছে একেবারে পানি দিয়ে তারপর রুমে আসবে ঠিক করে,,বাগানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

দায়ান ঐই সময় বসে ল্যাপটপে কাজ করতেছিলো।সোহা বেরিয়ে গেলে দায়ান ও ল্যাপটপ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

সোহা বাগানে এসে ফুল গাছ নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখছে।আর আপন মনে বিরবির করছে।

হঠাৎই দোলনার দিকে চোখ যায়। দোলনার দিকে তাকিয়ে চোখ চ’র’ক গাছ। এ কি দেখছি আমি? ভুল ভেবে নিজের চোখ হাত দিয়ে ক’চ’লিয়ে আবার দোলনার দিকে দৃষ্টি দেই নাহ।ঠিকইতো দেখছি।উনি বাগানে এসেছে? তাও দোলনায় বসে আছে?

দায়ান ল্যাপটপ নিয়ে তখন সোহার পিছু পিছু নিজেও বাগানে এসে দোলনায় বসে। ল্যাপটপে কাজ করতেছিলো আর আড়’চোখে সোহা কে লক্ষ করতেছিলো।দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে তার দিকে সোহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এভাবে সোহাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে,, এক ব্রু উচিয়ে জানতে চায় কি?

সোহা নিজেকে স্বাভাবিক করে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয় কিছুনা।দায়ানের দিকে আর না তাকিয়ে নিজের কাজে মন দেয় সোহা।

মাগরিবের আজান দিলে দুজনেই বাড়িতে ঢুকে যে যার রুমে চলে যায়।

রাতে যথাসময়ে সোহা রান্না করে দায়ান কে ডাক দেয়।

দু’জনই একসাথে বসে চুপচাপ খাবার শেষ করে যে যার মতো রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।

—————————————–

সব কিছু আগের মতোই আবার চলতে থাকে। সোহা দায়ানের উপর রে’গে থাকতে পারেনি। খুব নরম মনের মানুষ কি না।একটুতেই গ/লে জল।

পরের দিন খুব ভোরে উঠেই দায়ান অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরে। যাওয়ার আগে অবশ্য সোহাকে এবার বলে গেছে।সোহা বলেছিলো সকালের খাবার খেয়ে যেতে দায়ান শুনেনি।
এতো সকালে কে অফিসে যায় ভেবে পায় না সোহা।
—————————————–
দায়ান আজ অফিসে এসেছে অন্য উদ্দেশ্য। আজ মুখোশের আড়ালের শ’ত্রু কে সামনে আনার দিন এসে গেছে।অনেক পিটপিছে ছু/ড়ি মেরেছে আর না।এবার বুঝতে পারবে দায়ান কি জিনিস।বিশ্বাসঘা’ত’কতার ফল যে কি হতে পারে তা আজ খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিবে।

অফিসে ঢুকেই নিজের ক্যাবিনে যাওয়ার সময়,,,সিক্রেট রুম থেকে কারো গলার স্বর শুনতে পায়।

দায়ান বাঁ’কা হেসে রুমের দরজার কাছে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাড়ায়।

দায়ানের সামনে থাকা ব্যক্তিটি ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত।

—- হ্যা হ্যা চিন্তা করো না।এই ফাইল ও তোমার কাছে পৌঁছে যাবে।আর ডি’ল টা তুমিই পাবে এবার ও।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

— নাহ, আমি এতো কাঁচা কাজ করিনা।তুমি নিশ্চিন্তে থাকো
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

— আরে না এমন চা’ল চেলে ছিনা আমাকে ধরাতো দূর আমাকে স’ন্দেহ ও করতে পারবে না।

তাই নাকি? দায়ান জি’জ্ঞেস করে।

হ্যা বলেই সামনে থাকা ব্যক্তিটি পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়।দায়ান কে দেখে আঁতকে উঠে। পা কাঁপতে থাকে।মুখ দিয়ে কথা বের হয় না।

দায়ান ডে/ভি/ল স্মাইল দিয়ে তাকিয়ে রয়।

#চলবে

বিঃদ্রঃ বোনাস পর্ব পেয়ে এবার সবাই খুশিতো?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here