কবরের মাটি দুই হাত দিয়ে খুঁড়ে চলেছে দায়ান। আর চিৎকার করে কাঁদছে। তার কান্নার আওয়াজে আশেপাশে গাছে বসে থাকা পাখি গুলোও বুঝি ভ’য় পেয়ে গেছে। তাইতো ডানা ঝাপটে ডাকতে ডাকতে উড়ে চলে যাচ্ছে। দূরে কোথাও চিৎকারের শব্দ বারি খেয়ে আবার প্রতিধ্বনি তুলছে। কি বেদনা দায়ক সেই কষ্ট হাহাকার।একজন অচেনা লোক ও বুঝি দেখলে তার কষ্টে কেঁদে দেবে।পাষাণ লোকের ও মন হয়তো গ’লে যাবে।
পাগ’ল উন্মাদের মতো হয়ে গেছে যেনো দায়ান। বার বার একটা নাম বলে কান্না করছে আর কবরের মাটি খুঁড়ছে। পাশ থেকে রুশ টেনেও তাকে এক বিন্দু পরিমাণ কবরের পাশ থেকে সরাতে পারছে না।
দায়ান ভাই আমার এবার থাম।এমন পাগলামো করিস না।কি করছিস এসব? প্লিজ ভাই আমার এখান থেকে চল।
এইই রুশ আমার তিশাকে উঠতে বল এখান থেকে। বল না বল উঠতে বল।ও কেনো এখানে শুয়ে আছে?
আমি এসেছি দেখতে পারছে না?
এই তিশা উঠ বলছি উঠছিস না কেনো? আমি ঠিক টাইমে আসতে না পারায় রা’গ করেছিস আমার সাথে?
আমি কি করবো বল? আমি অনেক চেষ্টা করেছি আসার,, কিন্তু ঠিক টাইমে টিকিট পাইনি রে বিশ্বাস কর আমায়।
তিশারে এই কলিজা উঠ দেখ তর দায়ান এসেছে উঠবি না তুই? বায়না ধরবি না তোর জন্য কি কি এনেছি দেখার জন্য? তোর জন্য কতো কিছু নিয়ে এসেছি জানিস? তোর যা পছন্দ সব এনেছি আমি।দুই লাগেজ ভরে শুধু তর পছন্দের জিনিস ই এনেছি।চকলেট,ড্রেস, কসমেটিকস আরো কতো কি এনেছি আর তুই এখানে শুয়ে আছিস কেন এই ভাবে? উঠনা আমি কিন্তু রা’গ করবো! তোকে ছেড়ে আবার চলে যাব উঠে আয় বলছি। চল বাড়ি চল তোর সাথে কতো কথা জমে আছে আমার বলেই আবার মাটি খুঁড়তে থাকে।
রুশ এতো টেনেও দায়ান কে এক চুল পরিমাণ ও সরাতে পারছে না। দায়ানের কান্না দেখে রুশের ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক বে’গ পেতে হচ্ছে। আর রুশ এতো স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়েও দায়ান কে এখান থেকে উঠাতে পারছে না।পারবে কি করে? দায়ান সব দিক থেকে রুশের চেয়ে ব’লি’ষ্ঠ বান শক্তিশালী পুরুষ।
দায়ানের পাগলামো আর সহ্য হয় না রুশের।এমন কঠোর মনোভাবের ছেলেটটাকে এভাবে বাচচাদের মতো আচরণ করতে দেখলে কারই বা সহ্য হবে?
রুশের ও সহ্য হলোনা সজোড়ে থাপ্পড় লাগালো দায়ানের গালে। এবার আর রুশ নিজেকে কনট্রোল করতে না পেরে বলে উঠে কেন এমন পাগলামি করছিস।
“তিশা মরে গেছে।” শুনতে পাচ্ছিস তুই আমার কথা? মরে গেছে তিশা। আর কখনো ফিরে আসবে না।মরা মানুষকে দেখেছিস কখনো ফিরে আসতে? তিশা আর ফিরবে না নেই ও।চিরদিনের জন্য চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। কথাগুলো বলতে বলতেই রুশের গলা জরিয়ে আসে।চোখের কোণে পানির বিন্দু উপলব্ধি করতে পারে। রুশের কি কম কষ্ট হচ্ছে? ওর ও তো বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ওরতো বোন হয় তিশা খুব আদরের ছোট বোন।
বাড়ি চল ভাই আমার কাকি অপেক্ষা করছে তোর জন্য। তোর এসব পাগলামি দেখলে বাড়ির সবার কি হবে ভাবতে পারছিস?
দায়ান যেনো পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে। কান্নার আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেছে। চোখের পানি এবার নিরবে ঝড়ছে। কানে একটা কথাই বাড়ি খাচ্ছে তিশা নেই।মরে গেছে। আর ফিরে আসবে না।
রুশ দায়ানের নিরবতা দেখে টেনে মাটি থেকে তুলে দাড় করায়।দায়ানের কোনো বোধ নেই। রুশ দায়ানকে ধরে গাড়িতে নিয়ে বসায়।তারপর বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
—————————-
আজ প্রায় দুই বছর পর দেশে ফিরেছে দায়ান। ডাক্তারি পরা শেষ করে হাসপাতালে জয়েন হয়েেছিলো। দায়ান একজন হার্টের ডাক্তার। তখন দায়ানের স্যার তাকে একটা অফার দেয় দেশের বাইরে একটা মেডিসিন রিসার্চের জন্য টিম গঠন করা হয়েছে সে যেনো অংশ নেয় তাতে।এটা তার জন্য সূবর্ণ সুযোগ। যেহেতু দায়ান একজন মেধাবী ছাত্র ছিলো উনি দায়ানের সম্পর্কে ভালো করেই জানে সব।
দায়ান বাড়িতে এসে সবাই কে বিষয় টা জানায়।বাড়িতে সবাই শুনে খুব খুশি হয়। দায়ানকে অফারটা গ্রহন করতে বলে।
কিন্তু দায়ান রাজি হয় না। সে কিছুতেই নিজের পরিবার আর তিশাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।অসম্ভব তাও কয়েক মাস হলে কথা ছিলো। দুই বছরের ব্যাপার কোনোভাবেই রাজি না দায়ান।
বাড়ির সকলে যখন বুঝিয়ে হা’ল ছেড়ে দেয় তখন তিশা দায়ানকে বোঝায়। দুই বছরেরই ব্যাপার দেখতে দেখতেই কেটে যাবে।
রুশ ও বোঝায়। রুশ আর তিশা আপন ভাই বোন দায়ানের ছোটো চাচার ছেলে মেয়ে তাঁরা। দায়ানদের সাথেই থাকে। রুশের বাবা নেই মা আর বোনই।রুশ দায়ানের বাবার সাথে ব্যবসা সামলায়।
তিশার জোরাজোরি তে শেষ পর্যন্ত দায়ান যেতে রাজি হয়।
তারপর আজ যখন দুই বছর পর দেশে আসছে তখন এয়ারপোর্টে তিশা কে না দেখতে পেয়ে দায়ান রুশ কে চেপে ধরে। তিশা কেন আসলো না? সে কই অনেক জোরাজোরির পর রুশ বলতে বাধ্য হয়ে দায়ানকে এখানে নিয়ে আসে।
দায়ান ব্রু কোচকে জানতে চায় এখানে কেনো নিয়ে এসেছে রুশ?
রুশ দায়ান কে কবর টা ইশারা করে দেখিয়ে বলে আম-আমাদের তিশা।
তিশা আরো পাঁচ মাস আগে এক্সিডেন্টে মারা গেছে।
তখন থেকে দায়ানের পা’গলামি শুরু হয়েছে।
———————————-
প্রায় বিশ মিনিটের মাথায় বাড়িতে এসে পৌছায় দায়ান রুশ।রুশ দায়ানকে ধরে বাড়ির ভিতর নিয়ে যায়। শেখ বাড়ির সকলেই ড্রইং রুমে উপস্থিত।
দায়ানের অবস্থা দেখে দায়ানের মার বুক টা ধক্ করে উঠে দৌড়ে গিয়ে ছেলের মুখটা আগলে ধরে।
দায়ান মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকায়। তারপর ঠাস করে নিচে বসে পরে।
দায়ানের মা ও ছেলেকে ধরে নিচে বসে।ডাক দেয় বাপ আমার।
দায়ান মায়ের স্নেহময় ডাক শুনে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
আম্মা এই আম্মা তোমরা আমার তিশাকে ঐখানে রেখে আসছো কেন? ওরে আমার সামনে আসতে বলো আম্মা। আম্মা ও কি আমার সাথে রা’গ করে চলে গেছে আম্মা। আমিতো যেতে চাই নি ওকে ছেড়ে আম্মা তোমরা আর তিশা মিলে আমাকে জোর করে পাঠিয়েছো।
আমার তিশাকে এনে দাও তোমরা।আমি ওকে ভালোভাবে সুস্থ রেখে গেছিলাম আম্মা তোমরা কেনো ওরে দেখে রাখতে পারো নাই।
বাড়িতে সকলে আছে।শুধু আমার তিশা নেই কেনো আম্মা।?
বাড়ির সকলে নিঃশব্দে চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে। দায়ানের বাবা মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পরে। ছেলের এই আহাজারি সহ্য হচ্ছে না তার।হবেই বা কি করে? একমাত্র ছেলে যদি এমন ভাবে আহাজারি করে কার সহ্য হবে।
দায়ানের মা ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে চুপ কর বাপ আমার শান্ত হ।
দায়ান মায়ের কোলে মাথা রেখে কেঁদে চলেছে। আম্মা আমার তিশা কে এনে দাও।আম্মা আম্মা গো আমার না নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে আম্মা! এরকম হাজারো আহাজারি করতে করতে একে বারে শান্ত হয়ে যায় দায়ান।
দায়ানের মা দায়ান কে ডাকতে থাকে। দায়ানের কোনো সারা শব্দ নেই।রুশ দৌড়ে এসে দায়ানকে ধরে। মনে মনে আন্দাজ করে নিয়েছে দায়ানের হয়তো বা’জে কিছু একটা হয়ে গেছে।
তাই তারাতাড়ি দায়ানের বাবাকে বলে ধরার জন্য হাসপাতালে নিতে হবে। রুশের মা আর দায়ানের মা ও পিছন পিছন ছুটে। আর বিলাপ করে চলেছে আমার ছেলেটা শেষ হয়ে গেলোরে ছোটো। দায়ানের বাবা আর রুশ মিলে দায়ানকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে ছুটে
#চলবে,,,,
#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#সূচনা_পর্ব
#Jhorna_Islam