তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৪৫+৪৬

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:45
#Suraiya_Aayat

“তারপর !”

নির্বিকার অন্ঠে আয়াশ বলে উঠলো
” লাভ এট ফাস্ট সাইড নামের একটা নেশায় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম, পড়াশোনা নামক নেশাটা ছুটে গেল আর ভালোবাসা নামক নেশাটা বেড়ে গেল ৷ নিজের মনে মনে তার নামটা ধরে ডাকতেও ভালো লাগতো , একদিন তার নামের বুলি আওড়াতে আওড়াতে বলে উঠলাম
” আফু সোনা !”
নামটা এক নিমেষেই মাথায় গেথে গেল, বেশ কয়েকবার নামটা উচ্চারন করলাম দেখলাম জোশ একটা ব্যাপার আছে নামটাতে কি সুন্দর
” আ ফু সো না ৷”

কথাটা শোনা মাত্রই নূর শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে চেপে ধরলো , এতদিন ধরে যেটাকে নিজের নাম ভাবতো আজ সেটা অন্য একজনের নাম হিসাবে শুনছে ভাবলেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে ওর ৷ নূর চুপচাপ শুনছে , আপাতত আফু সোনা নামটার ওপর ঘৃনা চলে এসেছে ৷

” নামটা নিতে নিতে বিছানা থেকে লাফ দিলাম, ঘড়ির দিকে তাকালাম তখন বাজে বিকাল 4.30, এই সময়টা ছিলো ওর ইভিনিং ওয়াকের টাইম ,তাকে ফলো করতে করতে এটা আমার ও একটা ডেইলি রুটিং এ পরিনত হয়েছিলো ৷ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেতেই দেখি সে আমার অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে তবে তার যাওয়ার জায়গাটা অনেকটাই নির্দিষ্ট তাই আমার যেতে খুব একটা অসুবিধা হলো না, আমি সেদিন সেই জায়গাটাতে গেলাম, জায়গাটা ভীষন রকম সুন্দর ছিলো,বিরাট একটা লেকের পাশে , কতো মানুষ সেখানে বসে থাকতো গল্প করতো ৷ আমি সেখানে গেলাম বেশ কিছুখন টলহদারি করেও খুজে পেলাম না,অস্থির লাগছিলো ভীষন এমনিতেই উইকেন্ড বলে কলেজে যাওয়ার ও সুযোগ পাইনি আর রুম থেকেও খুব একটা বার হতে পারিনি ৷ রাগ আর বিরক্তি দুটোই সমানভাবে কাজ করছিলো, পুরো জায়গাটা খুজেও না পেয়ে বাসাতে ফিরছিলাম, পথে ফেরার সময় দেখি রাস্তায় একটা ছোট বাচ্চা গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে,,লাল তাজা গোলাপ , ভীষন রকম সুন্দর ৷ অনেক উপন্যাস পড়ার অভ্যাস ছিলো আমার তাছাড়া অনেক সিনেমাতেও দেখেছি যে কি সুন্দর প্রমিক প্রেমিকাকে গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে, আমার ও ভীষন রকম ইচ্ছা ছিলো যে এরকম কখনও গোলাপ হাতে কাওকে নিজের মনের কথা জানাবো ৷ ইচ্ছা ছিলো এনিরা কে কখনো এমন ভাবে বলবো , কথাগুলো ভাবতে ভাবতে অনেকখন ধরে গোলাপ গুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম ৷ বাচ্চাটাও ভেবেছিলো যে আমি বোধহয় গোলাপ গুলো কিনবো তাই সে আমার দিকে এগিয়ে আসতে গেলেই আচমকা আমি সেখান থেকে চলে যাই সেদিন বোধহয় বাচ্চাটাকে অজান্তেই হার্ট রে ফেলেছিলাম খুব ৷”

কথাটা বলে খানিকখন থামলো আয়াশ ৷ মাথাটা চেয়ারে এলিয়ে দিয়ে একটা গা ছাড়া ভাব নিতেই নূর বেশ লম্বা সুরে বলল
” তারপর কি হলো বলুন ৷”
আয়াশ চুপ করে আছে , কিছু বলছে না, নূর ও আয়াশের উত্তরের অপেক্ষায় রইলো কিন্তু আয়াশের চোখটা যেন ক্রমেই বুজে আসছে হয়তো চোখে ঘুম ভর করছে ভীষন রকম ৷ আয়াশের চোখজোড়া বুজে আসবে তার আগেই নূর একটু রাগী কন্ঠে বেশ উচ্চস্বরে বলল
” কি হলো বলছেন না কেন ! অন্যর চোখের ঘুম হারাম করে নিজে কিভাবে ঘুমাচ্ছেন আপনি ?”

কথাটা শোনামাত্রই আয়াশ একটু হতচকিত হয়ে বলল
” ওয়েট ওয়েট একটা সিগারেট ধরায়,নেশায় পারে নেশাকে কাটাতে ৷”
নূরের চোখ দিয়ে টুপিয়ে পড়া জলটা নূর হাত দিয়ে মুছে নিলো,শুনবে ও কষ্ট হলেও শুনবে ৷

আয়াশ সিগারেটের ধোঁয়াটা বাতাসে উড়িয়ে বলল
” তারপর কি যেন বলছিলাম আমি !”

নূর দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে রইলো একটা মানুষ কিভাবে এতো উদাসীন হতে পারে ! আয়াশ নুরের মুখের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম
” কতটুকু বললাম আফু সোনা ‌,ওপস নূর ৷”

নূরের শরীরটা তিরতির করে জ্বলে উঠলো ৷

আয়াশ সরে এসে আবার ধীম ধরা কন্ঠে বলল
” তারপর ফিরলাম সেই বাসায় , গালে হাত দিয়ে গম্ভীর হয়ে বসে আছি আমি ,ভাবছি মেয়েটা কোথায় যেতে পারে , তাকে অনুসরন করছি এক সপ্তাহ হলো মাত্র তাকে এই কদিন সেই লেকের ধার ছাড়া কোথাও যেতে দেখিনি, তার পরিবারের লোকজন ও যথেষ্ট স্বাধীনতা দিতো তাকে ৷”
মনের মধ্যকার চঞ্চল ভাবটা কাটছিলো না তখনও তাই খানিকটা ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে নীচে গেলাম কারন আসার সময় কাওকে দেখিনি তাছাড়া আমি ছাড়া এই বাড়িতে আর একজন ভাড়াটিয়া থাকেন তারা তিনতলাতে তারা খুব কম নামতেন নীচে ৷ ফেরার সময় এনিরার বাবা মা কে কোথাও দেখিনি তাই একটু উঁকি ঝুকি দিয়ে নীচে নামলাম , সার্ভেন্টগুলোও আজ আসেনি ৷ এই বাড়িতে থাকতাম ঠিকই কিন্তু কে কোথায় থাকে বা কারোর সাথে সেভাবে ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতা হয়ে ওঠেনি শুধু থার্ড ফ্লোরের দম্পতির একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে আছে তাকে হাত নাড়িয়ে ইশারা করে কথা বলি মাঝে মাঝে নাহলে তেমন একটা মিশতে পারতাম না ৷ সিঁড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকালাম , ঠিক যেমন চোর এসে যেমন করে দেখে ঠিক তেমনভাবেই ৷ এরিনার ঘরটা দেখতে মন চাইছালো ভীষন , তার কোন ছবি আমার কাছে ছিলো না তাই ভাবলাম তার রুমে গিয়ে যদি কোন ফটো ফ্রেম থেকে কোন ছবি মোবাইলে ক্যাপচার করতে পারি তো মন্দ হবে না ৷ আমার মতো ভীতু ছেলেটা যে হুঠ করে এতোটা সাহস পেয়ে গিয়েছিলো সেদিন আমি তা বুঝতে পারিনি ৷ প্রথম ঘরে ঢুকে বুঝলাম সেটা তার বাব মায়ের ঘর তাই দ্রুত বেরিয়ে এসে পাশের ঘরে গেলাম তারপর ঢুকতেই দেখলাম ফটোফ্রেমে তার একটা সুন্দর হাসি হাসি মুখের ছবি , ফটোটা দ্রুত তুলে নিলাম মোবাইলে ৷ তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরোতে যাবো তখনই পায়ে একটা ডায়েরি জাতীয় কিছু পড়তেই হাতে তুলে নিলাম…..অন্যর ডায়েরি কখনও তার পারমিশান ছাড়া খোলা উচিত না তাই আমার মাঝেও খানিকটা দ্বিধা আর সংকোচ কাজ করছিলো কিন্তু ইচ্ছাও জাগছিলো প্রবল যে পছন্দের একটা মানুষের গোপন কিছু তথ্য জেনে তাকে আরও ভালো ভাবে জানার ৷ ডায়েরিটা চম্পট খুলতেই দেখলাম প্রথম পাতায় লেখা..

” Hey ! I am Anira….Anira Karsan……it is too personal don’t open it…..”

লেখাটা দেখে ডায়েরিটা খুলে দেখার ইচ্ছাটা 200 গুন বেড়ে গেল, স্বাভাবিক ডায়েরির প্রথম পাতায় কেউ এমন লিখলে তা যে কেউ দেখতে চাইবে ৷ ঝটপট প্রথম পাতা খুলতেই কোন লেখা পেলো না, তারপর বেশ কয়েকটা পাতা ওলটালেও তাতে বিশেষ কিছু পেলাম না, রোজকারের কথাগুলো লিখে রাখতো সে ,তার পাতার কোথাও আমার নামটা একবার ও উল্লেখ ছিলো না যার দ্বারা বোঝা যায় যে সে আমাকে চেনেই না অথচ আমি তাকে বোকার মতো ফলো করেই চলেছি ভেবে একটু স্টুপিড মনে হলো নিজেকে ৷ বোরিং লাগছিলো বেশ, তার সম্পর্কে জানার মতো কিছুই ছিলো না তবে লাস্ট পাতায় এসে জানলাম অনেক কিছুই ৷”

কথাটা সেই হতেই নুর প্রশ্ন করে উঠলো
” এনিরা আফসানা থেকে সে এনিরা কারসন হলো কিভাবে?”

নূরের তীক্ষ্ণ কন্ঠের এই প্রশ্নে আয়াশ হেসে উঠে বলল
” তারপর শোনো ৷”
নূর রেগে গেল ওর প্রশ্নকে উপেক্ষা করায় ৷

” ডায়েরিতে লাস্ট যে কথাটা লেখা ছিলো তা হলো ক্যারেন বলে একজন তাকে বেশ কয়েকদিন ধরেই উত্তক্ত করছে আর তা নিয়ে সে ভীষনভাবে বিরক্ত , তাই সে আজ ছেলেটার সাথে এর একটা সামঝোতা করার জন্য দেখা করতে যাবে ৷”

লেখাটাতেই শেষ, আয়াশ ডায়েরি বন্ধ করে নিজের ঘরের দিকে ছুটলাম ,ক্যারেন ছেলেটার ওপর রাগ হচ্ছে ভীষন ,তাকে সামনে পেলে ও বেধড়ক পেটাতাম হয়তো ৷ কথাটা ভেবে শুয়ে পড়লো আয়াশ,রাগ বাড়লে শুয়ে পড়লে নাকি তা কমে যাই তার ই প্রচেষ্টা , আর রাগ ও কমলো……”

কথাটা বলে আয়াশ থেমে চোখ বন্ধ করলেই নূর আবার বলে উঠলো
” কি হলো থেমে গেলেন কেন? বলুন তারপর কি হলো?”

আয়াশ একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল
” It was all about love at 1st side and I killed her…….!”

কথাটা বলে হো হো করে হাসতেই নূর শিউরে উঠলো ৷ দাঁড়িয়ে পড়লো নূর ৷
“কি বলছেন কি এসব ! Are u mad……”

আয়াশ ও উঠে দাঁড়িয়ে নূরের কাছে গিয়ে নূরের কোমর জড়িয়ে ধরে বলল
” yeah…..i am mad just because of u cause i love u…..you are my addiction…my favourite addiction….তুমিই আমার প্রিয় নেশা….”

কথাটা শেষ হতে দেরি হলো না নুর সপাটে একটা চড় বসিয়ে দিলো আয়াশের গালে ৷
#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:46
#Suraiya_Aayat

” আপনার এই মন ভোলানো কথা আপনি অন্যকে শোনাবেন আমাকে না, আমি আর আপনাকে বিশ্বাস করি না ৷”
কথাটা বলে বেশ জোরেই আয়াশকে ধাক্কা মারতেই আয়াশ খানিকটা দূরে ছিটকে গেল, তাল সামলে নিয়ে আয়াশ নূরের দিকে তাকিয়ে বলল
” মানুষকে বোকা বানানো অনেক সহজ জানো তো আফু সোনা ?”

কথাটা শোনামাত্রই নূর হুংকার ছাড়লো
” খবরদার আপনার ওই মুখে আর আপনার আফু সোনা ডাক আমি শুনতে চাই না ৷ ঘৃনা এসে গেছে নামটার ওপর আমার ৷ অন্যকে ভালোবেসে দেওয়া নাম আমি দয়া হিসাবে চাই না ৷”

কথাটা বলে নূর চলে যেতে নিলেই আয়াশ পিছন থেকে হাত ধরে নূরকে নিজের কাছে টেনে নিলো তারপর নূরের দুই হাত বন্দী করে নূরকে ধরে বলল
” কোথায় যাচ্ছো আফু সোনা? পুরোটা না শুনেই চলে যাবে?”

নূর দাঁড়িয়ে থেকে থমকে গেল, এক প্রকার রাগে ফোঁসফোঁস করতে লাগলো , শোনার মতো ইচ্ছা বা মন মানসিকতা কোনটাই কি আর আছে‍?
নূর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো তবুও সফল হলো না ৷

” আপনার সেই প্রেমকাহিনী শোনার কোন ইচ্ছা নেই আমার, ছাড়ুন আমি ঘুমাবো ৷”

আয়াশ নূরকে এবার কোলে তুলে নিয়ে সোফাতে বসলো,নূরকে জাপটে ধরে আছে ছাড়বে না কোনমতেই ৷
নূর ঝাপটাঝাপটি করতে করতে বলল
” ছাড়বেন নাকি আমি চিৎকার করে এবার লোক জড়ো করবো এই মাঝ রাতে , কোনটা করবো বলুন?”

আয়াশ নূরের কথার পরোয়া না করেই বলল
” আমি এতখন ধরে যা বলেছি সব মিথ্যা বলেছি ৷ আসলে আমি একটা এক্সপেরিমেন্ট করছিলাম যে কতো সহজ ভাবে কিছু বললে একটা মানুষকে বোকা বানানো যায় ৷”

নূর পুনরায় ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল
” আর কোন বাড়াবাড়ি না, একটাও মিথ্যা কথা না ৷”

আয়াশ মুচকি হেসেই বলল
” এরিনা নামে কেউ কখনো আমার জীবনে ছিলো না আর না ছিলো আফু সোনা বলে কেউ ,কিন্তু তুমি আছো এখন আমার জীবনে আমার আফু সোনা হয়ে আর না আজ কারোর মৃত্যু বার্ষিকী ৷ আহান ভাইয়াও আমার থেকে ছোট নয় আর না আমি আহান ভাইয়ার থেকে বড়ো ,তবে এটা ঠিক যে আমি বরাবরই খুব শান্ত স্বভাবের কিন্তু তোমার এটা মানতে কষ্ট হবে কারন আতি তোমার সাথে কখনও শান্ত শিষ্ঠ স্বভাব সুলভ আচরন করিনি ,তোমার কাছে আমার পরিচিতি হলো ” ডেভিল ” হিসাবে ৷ কারনটা আমিই এতোদিন ধরে তোমার মনে গেঁথে দিয়েছি আর ভাবতে বাধ্য করেছি যে আমি প্রকৃতই ডেভিল ৷আর তুমিও খুব ভালো ভাবে তোমার বোঝার কর্তব্য টা পালন করেছো ৷ তোমাকে বোকা বানানোর কাজটা নিত্য৷ন্তই খুবই সহজ একটা কাজ কারন তোমাকে কিছু বললে তুমি কখনও তা যাচাই করতে চাও না যে তা আদতেও সত্য কি মিথ্যা ৷ আমি বললাম আর কতো সহজে তুমি বিশ্বাস করে নিলে,চাইলে তুমি কথার মার প্যাঁচে আমাকে ফেলে যাচাই করতে পারতে কিন্তু তুমি তা করোনি বরং উল্টে আমার দেওয়া একটা সুন্দর ভালোবেসে দেওয়া নাম ” আফু সোনা ” ডাকটাও ঘৃনার যোগ্য করে তুললে ‌ তাহলে ভাবো !”

আয়াশের কথাটা শেষ হতেই নূর খানিকটা ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
” চাইলেও কি আর আমি আতীতে ফিরে গিয়ে দেখে আসতে পারতাম যে আপনি ঠিক কি কি করেছেন! পারতাম না তো ! তাহলে স্বাভাবিক ভাবে আপনার মুখের কথা বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই ৷ মানুষের মুখের কথা শুনে তা যদি বিশ্বাস না করতে পারি তাহলে এ জীবনের স্বার্থকতা কি আপনিই বলুন ৷”

আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” একবার যাচাই করতে !”

নূর আয়াশের বুকে মাথা রেখে চোখটা বন্ধ করলো ,
” আমি জানি আপনি এখনও আমাকে ঠকিয়ে চলেছেন তবুও যে আমি পাগল , বিশ্বাস তো আমাকে করতেই হবে আর বারবার ঠকতেও হবে ৷ চিন্তা নেই একটা সময় ঠিক আমার মিথ্যা গুলোতে অভ্যস্ত হয়ে যাবো , মিথ্যা ভালোবাসা আর মিথ্যা অনুভূতি গুলোয় হয়তো একদিন সজীব আর তরতাজা হয়ে যাবে ‌৷”

আয়াশ নূরকে আরও খানিকটা জাপটে ধরিয়ে বলল
” প্রথমত, আমি কোন প্রেমিক পুরুষ নয় আফু সোনা যে কথায় কথায় তার প্রেয়শীকে মন ভোলানো কথা ,বল ভোলাবে বা হাতে লাল গোলাপ ধরে হাটু গেড়ে প্রপোজ করবে ৷ আমি পারি না ৷

দ্বিতীয়ত, আমি আমার অনুভূতি প্রকাশে সর্বদাই ব্যার্থ ৷ আমি ঠিক করে গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা আর না থাকে আমার কথার মাঝে কোন ভালোবাসার প্রকাশ তাই তোমার কাছে আমার একটা অতি পরিচিত রুপ হলো ডেভিল ৷

তৃতীয়ত, ভালোবাসায় আমি কখনও বিশ্বাসী নয় এমনকি তোমাকে আমি ভালোবাসি কি আমি তা ও জানি না আর আমার জানাও নেই ৷ তবে তুমি আমার একটা নেশা, খুবই প্রিয় নেশা যে নেশা না আছে অ্যালকোহলে আর না আছে কোন নেশা জাতীয় দ্রব্যে ৷ আফু সোনা নামক মানুষটা একটা নেশার কুন্ডলীর মতো আমাকে আবিষ্ট করে ঘিরে থাকে সর্বদা ,বারবার নেশাতে জড়াতে ইচ্ছে করে তাই তো দূরে সরে যেতে পারিনা কখনও ৷”

নূর আয়াশের বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে উঠলো ,শার্টটা কে শক্তপোক্ত করে খামচি মেরে বলল
” আপনি আবারও আমাকে ঠকাচ্ছেন ৷”

আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” যা তুমি ভাববে ৷”

” আমার চিন্থ তুমি বহন করছো তাই তোমার কাছে আমার কৃতঞ্জতার শেষ নেই , আমাদের সম্পর্কটা কোন কৃতঞ্জতার না যদিও তবে নেশাময় ৷ নেশাটাকে ভালোবাসি আর #তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা ৷” এর থেকে বেশি ব্যাক্ত করা হয়তো আমার পক্ষে আর সম্ভব না আফু সোনা, তুমি জোর করলেও বোধ হয় পারবো না ৷”

নূর কাঁদতে কাঁদতে বলল
” কখনো আর এ বিষয়ে আমি কোন প্রশ্ন তুলবো না শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর চাই ,দেবেন?”

আয়াশ নির্বিকার কন্ঠে বলল
“হমম বলো ৷”

” নেশা আর ভালোবাসা দূটোই কি আপনার কাছে এক ?”

আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” ভালোবাসা হলো নেশাময় ,নেশা কেটে গেলেই ভালোবাসা ফুরিয়ে যায় ,তোমার নেশা ফুরোবেনা সুতরাং ভালোবাসা নামক বস্তুটাও কখনও শেষ হবে না ৷”
.নূর আয়াশকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
” আপনি আবার আমাকে ঠাকাচ্ছেন তাইনা !”

আয়াশ এবার হো হো করে হেসে বলল
” হমম !”

…….

সকাল সকাল আয়াশ রেডি হয়ে নীচে নামল, আহানকে আনতে যাবে আয়াশ এয়ারপোর্টে ৷ নূর ওপরের ঘরেই রয়েছে , আয়াশের কড়াকড়িতে বেড থেকে ফ্লোরে নামার উপায় নেই, কিছু চাওয়ার আগেই সবাই সব কিছু সামনে হাজির করে দিচ্ছে, বিষয়টা নূরের কাছে একটু বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে,ওর এমন জীবন যাপন চাই না,সকলের সাথে একসাথে সময় কাটাতে চাই ও ৷ আয়াশ বাসাতে ফিরলে আয়াশকে বলবে কথাটা নূর ৷
আয়াশ বেরিয়ে গেছে হয়তো, নূর বিছানা থেকে নামতে গেলেই ইফা এসে বলল
” এই এই কি করছো ভাবী নামছো কেন? ”

নূর বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলল
” এভাবে আর কতখন ইফা ! একটা মানুষের কি সারাদিন একভাবে বিছানায় শুয়ে থাকতে ভালো লাগে ? ”

ইফা দাঁত বার করে হেসে বলল
” সহ্য করো ভাবী সহ্য করো !”

নুর গাল ফুলিয়ে বলল
” তোমার ও সময় আসুক বুঝবে ৷”

ইফা হেসে বলল
” সে সময় আসুক দেখা যাবে ৷”

নূর ইফাকে ওর পাশে বসিয়ে বলল
” ইফা একটা সত্যি কথা বলবে আজ‌?”

ইফা পাশে বসে বলল
” হমম বলো ভাবী ৷”

” তুমি কি কাওকে পছন্দ করো বা ভালোবাসো?”

কথাটা শুনে ইফা হো হো করে হেসে উঠতেই নূর অবাক হয়ে বলল
” কি হলো হাসছো যে !”

” তোমার কি সত্যিই মনে হয় যে আমার কাওকে পছন্দ হয়?”

” তেমনটা ঠিক না তবে এখনকার দিনে এটা খুবই নরমাল একটা বিষয় ৷”

” আরে নাহ ভাবী , আমার অমন কোন কিছু নেই আর আমি ভাবি ও না এমন ৷ আর আহান ভাইয়া কি বলেছে জানো ?”

নূর কৌতুহল নিয়ে বলল
” কি বলেছে উনি?”

ইফা বেশ রাগ ফুটিয়ে বলল
” ভাইয়া বলেছে সে বাসায় ফিরলে নাকি আমার বিয়ে দিয়ে দেবে, তুমিই বলো আমার কি বিয়ের বয়স হয়েছে? আর কদিন পরেই ssc দেবো এখনো পিচ্চি আমি ৷”

নূর মুচকি হেসে বলল
” সত্যিই উনি একথা বলেছেন?”

ইফা গাল ফুলিয়ে বলল
” হমম হমম হমম , এই কারনে ওনার ওপর রেগে আছি ৷”

নূর এবার ফিক করে হেসে ফেলল
” ননদিনী থেকে,,,,,,হম হম হম ৷”

ইফা অবাক হয়ে বলল
” কি !”

নূর মুচকি হেসে বলল
” এটা না হয় সাসপেন্স ই থাক ৷”

ইফা আভিমান করে রইলো, আর নূর ইফার আভিমানটা বেশ এনজয় করতে লাগলো ৷

#চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here