তুমিময় অনুভূতি পর্ব -০৬

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ৬

বিয়ের ১৫ দিন আগে থেকেই বাড়িতে বিয়ে বিয়ে আমেজ এসে গেছে।আপু এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতো পার্লার যাচ্ছে তার চুল রিবন্ডিং করতে।এর আগে ২ বার গিয়েছিলো ফেসিয়াল আরো কি কি হাবিজাবি করতে।যেসবের নামও আমি জানি না।এদিকে মা সকাল থেকেই আপুর পিছে পিছে ঘুরছে নাক ফুটো করার জন্যে।কারন আপু আগে নাক ফুটো করে নি।অবশ্য সেটা নিয়ে একটা কাহিনী আছে।

আমি এসএসসি দেয়ার পর আমরা ফুপি বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলা।সেখানে আমার ফুপাতো বোন শামীমা আপু নাক ফুটো করবে। এটা শুনে আমার ও নাক ফুটো করার শখ জাগে।আমি আপুকে বললে আপু প্রথমে রাজি না হলেও পরে আমার সাধাসাধিতে রাজি হয়।তো কথা হয় যে প্রথমে শামীমা আপু করবে।এরপর আপু তার পর আমি।যেহেতু আমি ছোট তাই আমি সবার শেষে। কিন্তু শামীমা আপুর পর আপু আমাকে বলে মেঘা বোন তুই কর আমি তোর পর করবো।তো ফুপি আমাকে নাক ফুটো করে দেয়। কিন্তু এতো ভয় পেয়েছিলাম যে আমি কান্না করে দেই।এদিকে আমার কান্না দেখে আপু ভেবেছে আমি ব্যাথা পেয়ে কান্না করেছি।ব্যাথার ভয়ে আর সে মুখো হয় নি আপু।সবাই মিলে টানাটানি করেও আর আপুকে নাক ফুটো করাতে পারে নি।

পার্লারে বসে বসে বোর হচ্ছি কিন্তু আপুর কাজ শেষ হচ্ছে না।এখন নিজের কপাল চাপড়াচ্ছি যে কেনো আপুর সাথে আসতে গেলাম।অবশেষে প্রায় ২ ঘন্টা পর আপুর কাজ শেষ হলো।ওখান থেকে বেড়িয়ে রিক্সার জন্যে অপেক্ষা করছি তখন দেখি অভ্র ভাই রাস্তার অপর পাশের বাইকের দোকানে বাইক সার্ভিসিং করাচ্ছেন।

“মেঘা দেখ তো ওটা অভ্র না?”

“হ্যাঁ আপু।”

“অভ্র কে ফোন দিয়ে এখানে আসতে বল।ও একটা রিক্সা ডেকে দিলে আমদের যেতে সুবিধা হবে।”

আপুর কথা শুনে আমি আপুর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম।আপু যে কি আমি বুঝি না।এই সামান্য কাজের জন্যে অভ্র ভাইকে কেন ডাকতে হবে।আর আমি মরে গেলেও এই সামান্য কাজের জন্যে অভ্র ভাইকে ডাকতে পারবো না।পরে আবার উনি আমাকে এইটা নিয়ে কথা শোনাবেনা যে কিছু করতে পারিস না।একটা রিক্সা নিজে ডাকতে তোর লজ্জা করে। নিজেকে কি সেলিব্রিটি ভাবিস যে রিক্সা ডাকলে তোর ফ্যান ফলোয়ার কমে যাবে।সো আমি এই সিদ্ধান্তে অটল যে আমি ওনাকে ডাকবো না।নো নেভার কাভি নেহি।

“দেখো আপু একটা সামান্য রিক্সা নেয়ার জন্যে ওনাকে ডাকার মানেই হয় না।আর যদি তোমার প্রয়োজন হলে নিজে ডাক দাও।আমি ওই অভ্র ভাইকে মরে গেলেও ডাক দিবো না।”

আমার কথা শুনে যে আপু খুব একটা খুশি হলো না তা তার বিষ্ফোরিত দৃষ্টি দেখেই আমি বুঝে গেছি।কিন্তু আমি তাতে পাত্তা না দিয়ে রাস্তার এপাশ ওপাশ তাকালাম রিক্সার আশায়। কিন্তু সামনে তাকাতেই অভ্র ভাইকে আমাদের দিকে আসতে দেখে আমার দুচোখ তার দিকে স্থির হয়ে গেলো।ওনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি বেশ ক্লান্ত।ঘামে ওনার গায়ের শার্ট ভিজে শরীরের সাথে সেটে আছে।অভ্র ভাই আমাদের সামনে আসতেই ক্লান্ত ঠোঁটে একটা মারাত্মক হাসি দিলেন। যা দেখে আমি মুগ্ধতায় ছেয়ে গেলাম।নিজে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম নিজের কর্মকান্ডে।লজ্জায় মাথা নিচু করে হাসলাম।এরপর আড়চোখে আবার ওনার দিকে তাকালাম।

“অভ্র তুমি এখানে? ”

“একটা কাজে পাবলিক লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিলাম আপু।কিন্তু মাঝ রাস্তায় বাইকের টায়ার পাঞ্চার হয়ে বিপদে পড়ে গেলাম।এখন আমার ওখানে যাওয়াও ইম্পর্ট্যান্ট। আবার বাইক ছাড়াও তো যেতে পারছি না।তাই বাইক ঠেলে এখানে নিয়ে এসে টায়ার সারাচ্ছিলাম।তোমরা এখানে কেনো?”

“আর বলো না।পার্লারে এসেছিলাম আমি।মেঘাকেও সাথে নিয়ে এসেছি।এখন বেড়িয়ে সেই কতক্ষন থেকে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু দেখো না একটা রিক্সা পাচ্ছি না।”

আপুর কথা শুনে উনি পাশ ফিরে তাকালেন আমার দিকে। ওনার হাবভাবে যা বুঝলাম তা হলো উনি এতোক্ষন আমাকে খেয়ালই করেন নি।আপুর কথায় আমার দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন।আমাকে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলেন।এদিকে আপু আবার বলতে শুরু করলো যে,ল

“তোমাকে দেখে মেঘাকে বললাম যে মেঘা দেখ অভ্র ডাক দে ওকে।রিক্সা পাচ্ছি না।ও যদি ম্যানেজ করে দিতে পারে।কিন্তু সে তোমাকে ডাকবে না।এই সামান্য কাজে নাকি তোমাকে ডাকার প্রয়োজন নেই।এটা সে নিজেই পারে”

আপুর কথা শুনে আমি ধপ করে মনে হয় আকাশ থেকে পড়লাম।এই কথাটা কি ওনাকে বলার খুব দরকার ছিলো।ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজে ছিড়ি আর আপুকে মাথায় তুলে একটা আছড় মেরে বলি বদ মেয়ে সব বলতে হবে কেনো তোমার।মুখে কিছু আটকায় না।পেটে কথা থাকে না?আজ আছাড় মেরে তোমাকে উচিত শিক্ষা দিবো।আমাকে বাঘের মুখে ঠেলে দিচ্ছো কেনো?আমি তোমার কোন পাঁকা ধানে মই দিয়েছি।উনি যে আস্ত একটা বন মানুষ।তা কি তোমার অজানা।আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।কিন্তু মনে মনে ভাবলেও মুখে কিছু বললাম না।শুধু মাথা নিচু করে ভাবছি না জানি অভ্র ভাই আবার আমায় কি বলে অপমান করে।এদিকে আপুর কথা শুনে অভ্র ভাই আমার দিকে কঠোর ভাবে তাকিয়ে আপুকে বললেন,

“একটু অপেক্ষা করো আপু।বাইক ঠিক হয়ে গেছে আমি নিয়ে আসছি।”

বলে উনি বাইক নিতে গেলেন।ক্ষানিকবাদে উনি বাইক নিয়ে এসে আমার আর আপুর সামনে দাড়ালেন।

“বৃষ্টি আপু উঠে পড়ো।”

বলে উনি সামনে তাকালেন।আপুও ওনার কথামতো বাইকে উঠে গেলেন।এরপর আমি উঠতে যাবো কিন্তু উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

“তুই কেনো উঠছিস মেঘ? তুই তো একা রিক্সা নিতে পারিস।তো তুই রিক্সা নিয়ে চলে আয়।আমি আপুকে রেখে আসি।”

বলে উনি আপুকে নিয়ে চলে গেলেন।এদিকে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনাদের যাওয়ার দিকে।কতটা খারাপ হলে মানুষ এরকম করতে পারে।এদিকে আপুও ওনাকে বলছিলো যে অভ্র মেঘার কাছে টাকা নেই।ও একা কি করে যাবে।কিন্তু উনি তা গ্রাহ্য না করে চলে গেলেন আমাকে ফেলে।আমার কাছে টাকা নেই।আপুর সাথে এসেছিলাম বলে শুধু ফোন নিয়ে এসেছি।এক পয়সাও নেই আমার কাছে। আমি কি করবো ভাবছি। এদিক সেদিক দেখছি অবশেষে একটাই কথা মাথায় এলো।বাবা বা ভাইয়াকে ফোন করা।ফোন হাতে নিয়ে ভাইয়ার নাম্বারে ডায়াল করছি তখন আমার সামনে একটা বাইক এসে থামলো।মাথা তুলে দেখি অভ্র ভাই।অভ্র ভাইকে দেখে যেন আমি ভূত দেখার মতো চমকে উঠে দুই কদম পিছনে চলে গেলাম।মাত্রই উনি আপুকে নিয়ে গেলেন।আর এখনি ফিরে এলেন।এটা কি করে সম্ভব।আপুকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসতে গেলে কমপক্ষে ৩০ মিনিট লাগবে।সেখানে উনি মাত্র ৫ মিনিটে ফিরে এলেন।

“কি ভাবছিস মেঘ?এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?”

উনার কথা শুনে আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম।কারন উনি এমন মানুষ যিনি আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলেন না।আমি নিশ্চিত এটা অভ্র ভাই না,অভ্র ভাইয়ের ভুত।ভূত তো আর জানেন না অভ্র ভাই আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলেন না।তাই ভুত মহাশয় আমাকে ভয় দেখাতে এসে ধরা খেয়ে গেলেন ভালো ভাবে কথা বলে।আমি ভয়ে ভয়ে অভ্র ভাইয়ের ভুত কে বললাম,

“আপনি কে?দেখুন প্লিজ আমাকে কিছু করবেন না। অভ্র ভাইয়ের ভুত প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।আমি আর কোনোদিন অভ্র ভাইকে নিয়ে কোনো কথা বলবো না।প্রমিস”

আমার কথা শুনে মনে হয় অভ্র ভাইয়ের ভুত অবাক হয়ে গেলেন।তার ঠোঁটদ্বয় সামান্য ফাকা হয়ে গেল।সাথে তার মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট বুঝতে পারলাম।ভুত রাও যে বরক্ত হয়।আর এভাবে বেরোয় তা আমি প্রথম দেখলাম।কারন এতোদিন আমি যে গল্প বা মুভিতে দেখেছি তাতে ভুতকে সবসময় রাতে আসতে দেখেছি আর ইনি অন্য রকম ভুত।আমি তাকে আবার কিছু বলতে যাবো তার আগে উনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,

“কি যাতা বলছিস মেঘ?ভুত বলে কি এই পৃথিবীতে কিছু আছে?এতো বড় মেয়ে এসব বাজে বকছিস?কেউ শুনলে তোকে কি বলবে জানিস সার্টিফাইড পাগল।যে খুব সম্ভবত পাবনা থেকে পালিয়ে এসেছে।ভূত সিরিয়াসলি মেঘ।ডু ওয়ান থিং এই যে নে হাতে টাচ করে দেখ আমি অভ্র দাঁড়িয়ে আছি।কোনো ভুত না।বিয়ে দিলে বাচ্চার মা হয়ে যাবে আর সে আজও ভুতে ভয় পায়।আর একটা কথা না বলে বাইকে উঠে বস ভালো মানুষের মতো।নাহলে সত্যি সত্যিই তোকে এইখানে রেখে আমি চলে যাবো।”

এইবারের কথা শুনে শিওর হলাম যে উনি আস্ত অভ্র ভাই যিনি ভালো ভাবে কথা বলতে জানেন না রাগ ছাড়া ভুত নয়।কিন্তু উনি এতো তাড়াতাড়ি আপুকে কোথায় রেখে এলেন এটাই বুঝতে পারলাম না।কিছু না বলে গোমড়া মুখ নিয়ে চুপচাপ বাইকে অভ্র ভাইয়ের পিছনে উঠে বসলাম।আর উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে দৃষ্টিপাত করে হাত দিয়ে চুল ঠিক করে বাইক স্টার্ট দিলেন।আর এদিকে আমি রাগে মনে মনে ফুসছি আর অভ্র ভাইকে বকে চলেছি

“ব্যাটা বজ্জাত।তিক্ততা ছাড়া কথায় কিছু নেই।ভুতের মতো কাজ করবে আর আমি ভূত বললেই দোষ তাই না?মুখপোড়া হনুমান কোথাকার।আর পেয়েছে এক কথা কিছু বললেই বিয়ে দিলে বাচ্চার মা হয়ে যাবে মা হয়ে যাবে করে।আরে ভাই নিজে যে সময় মতো বিয়ে করলে এতোদিনে বাবা হয়ে যেতো সে খেয়াল কি নেই নাকি।যত্তসব ইচ্ছে করছে পানিতে চুবাই।”

কিন্তু মনের কথা গুলো মনেই দাবিয়ে রাখলাম।আর অভ্র ভাইয়ের সাথে বাড়ির পথে চললাম।তবে বেশ লাগছে অভ্র ভাইয়ের সাথে যেতে।বার বার শুধু একটা গানই মাথায় আসছে,

“এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো?”

(চলবে)

(১৩৭৩ ওয়ার্ড আছে।আজ কেউ প্লিজ ছোট বলবেন না।আর ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here