তুমিময় অনুভূতি পর্ব -০৭+৮

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ৭+৮

অভ্র ভাই মানুষটা বেশ অদ্ভুত।উনাকে এই মুহুর্তে আমার বেশ বিরক্ত লাগছে ওনার ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে।এদিকে যে আপুর চিন্তায় আমার মাথা ভনভন করছে সেটা ওনাকে কি করে বুঝাবো আমি।কয়েকবার আপুর কথা জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করতে পারি নি যদি উনি আবার বকে বা মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দেয়।কিন্তু না আর চুপ থাকতে পারছি না।আমি এইবার অভ্র ভাইয়ের কাধে একটা চিমটি কাটলাম ওনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে।হঠাৎ চিমটি পড়ায় চমকে উঠে কাধ নাড়িয়ে আমার দিকে রাগি চোখে তাকালেন।

“কি সমস্যা কি তোর।চিমটি কেনো কাটছিস?বাইক থেকে নামিয়ে দিবো কিন্তু।এরপর একা একা হেটে যাস বাসায়।”

“অভ্র ভাই একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।রাগ করবেন না প্লিজ ”

“কি কথা।বল তাড়াতাড়ি। ”

“আপনি তো আপুকে নিয়ে গেলেন।আবার ৫ মিনিটেই ফিরে এলেন।আচ্ছা আপুকে কোথায় রেখে এসেছেন সত্যি করে বলুন তো।আমার আপুর জন্যে খুব চিন্তা হচ্ছে।”

আমার কথা শুনে উনি একটা রহস্যময় হাসি দিলেন।যা আমি বাইকের আয়নায় দেখতে পেলাম।কিন্তু উনি কোনো উত্তর দিলেন না।তাই আমি আবার একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম,

“আহ অভ্র ভাই বলুন না আপুকে কোথায় রেখে এসেছেন।”

“মেঘা তোমার কি মনে হয় যে আমি অভ্র?আচ্ছা তুমি অভ্রকে কখনো তোমার সাথে রাগ ছাড়া শান্ত ভাবে কথা বলতে শুনেছো।কিন্তু আমি তোমাকে প্রথমে এসেই খুব সুন্দর ভাবে বাইকে উঠতে বলেছিলাম।তুমি বড্ড বোকা মেঘা।যে কাউকেই সহজে বিশ্বাস করে নাও।আমি অভ্র নই মেঘা ”

বলে উনি হাহাহা করে হাসতে লাগলেন।এদিকে উনার কথা শুনে আমার যায় যায় অবস্থা। আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।লাফ দিবো বাইক থেকে কিন্তু সেই সাহস নেই আমার।দোয়া দরুদ যত জানা আছে সব পড়ছি কিন্তু না কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।এদিকে আমার অবস্থা ভয়ে করুন থেকে করুনতম পর্যায়ে চলে গেছে।মাথা ফাঁকা হয়ে আসছে।সামনের সব কিছু ঘোলা হয়ে আসছে।এরপর আর আমার কিছু মনে নেই।

চোখ খুলে কোথায় আছি তা বুঝতে পারছি না।মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে।কিন্তু এটা আমার রুম নয়। তাহলে আমি কোথায়?তাহলে সত্যি সত্যি অভ্র ভাইয়ের ভূত আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে।কিন্তু আমি কি করেছি সেটাই বুঝতে পারছি না।এপাশ অপাশ তাকাতেই বোধ করলাম এটা একটা হসপিটাল। আর আমি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি।বেডের পাশের একটা চেয়ারে কপালে দুই হাত ঠেকিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছেন অভ্র ভাই।আমাকে চোখ খুলে তাকাতে দেখে একজন নার্স ডাক্তার কে ডাকতে বেড়িয়ে গেলেন। তার কথা শুনে অভ্র ভাই মাথা তুলে তাকালেন।তার চোখে মুখে অপরাধী ভাব।চোখদুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে ওনার।আমি হাত টান করতেই হাতে ব্যাথা পেয়ে আওয়াজ করতেই অভ্র ভাই আমার কাছে এসে বললেন,

“স্যালাইন যাচ্ছে মেঘ।নড়াচড়া করিস না।রক্ত উঠে যাবে।ওনার কথায় আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,

” দেখুন আপনি আমার কাছে আসবেন না।আর আমি কোথায়?আপনি কে সত্যি অভ্র ভাই না অভ্র ভাইয়ের ভুত।প্লিজ আমাকে কিছু করবেন না।”

আমার কথা শুনে উনি মনে হয় চরমভাবে রেগে গেলেন। কিন্তু কিছু বললেন না।রাগ কন্ট্রোল করার জন্যে কপালে দুই হাত কয়েকবার স্লাইড করে আমার দিকে তাকালেন,

“মেঘ আমি অভ্র।দেখ ”

বলে আমার হাত নিয়ে ওনার গালে রাখলেন।হাত ওনার গালে রাখতেই আমার মাঝে এক অজানা শিহরণ বয়ে গেলো।আমি তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নিলাম।অভ্র ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে উনি কিছু বলতে চান।কিন্তু বলতে পাচ্ছেন না ওনার মাঝে তীব্র অপরাধবোধ কাজ করছে কারন তার দৃষ্টিতে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

“অভ্র ভাই কিছু বলবেন?”

আমার কথা শুনে উনি কয়েকবার চোখের পলক ফেললেন।এরপর আমাকে বললেন,

“মেঘ আ’ম সরি।আমি বুঝতে পারি নি তুই এতো ভয় পাবি।আমি তো শুধু মজা করেছি তোর সাথে।ভুত বলে কিছু আছে কি তুই বল।প্লিজ মেঘ…”

অভ্র আর কিছু বলবে তার আগে ডাক্তার আর নার্স চলে এলো।স্যালাইন প্রায় শেষ।ডাক্তার স্যালাইনের সুচ খুলে দিয়ে চেক-আপ করে আমাদের চলে যেতে বললেন।সাথে এটাও বললেন যে আমি যেনো ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করি।ঠিক মতো ঘুমাই।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আপুর রুমে গেলাম।মাথাটা ব্যাথা করছে।কিন্তু আমার এখন আপুর থেকে তখনের সব কথা জানা প্রয়োজন তাই আপুর কাছে গেলাম।আপু ফোনে কথা বলছে।মনে হয় রিয়াদ ভাইয়ার সাথে।তাই আপুকে আর কিছু না বলে ওর বিছানায় বসে পড়লাম তখন হঠাৎ একটা বইয়ের উপর দৃষ্টি গেলো।উইলিয়াম শেক্সপিয়রের রোমিও এন্ড জুলিয়েট।বইটা আমি অনেকদিন থেকে পড়তে চাই কিন্তু পড়তে পারি না।কারন আপু আমাকে ধরতে দেয় না।ওকে নাকি কে গিফট করেছে তাই আমি যদি নষ্ট করে ফেলি সেই জন্যে আমাকে ধরতে দেয় না।আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বইটার দিকে তাকালাম।বইটার কাছে যেতেই আপু রুমে প্রবেশ করলো।

“মেঘা তুই এখানে কিছু বলবি?”

“হ্যাঁ আপু তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।”

“বল কি বলবি।”

“আপু তখন অভ্র ভাই তোমাকে নিয়ে কোথায় রেখে এসেছিলো।আসলে ওনাকে তো যেতে আর আসতে দেখলাম তাই জিজ্ঞেস করছি আরকি।”

“তখন তোকে রেখে আসার পর আমি অভ্রকে বলি যে তোর কাছে টাকে নেই তুই একা আসতে পারবি না।তো অভ্র সেটা শুনে আমাকে মোর ঘুরেই একটা রিক্সা পেয়ে সেটাতে উঠিয়ে বলে চলে যেতে ও তোকে নিয়ে যাবে।তাই আমি নিশ্চিন্ত হয়ে চলে আসি।আর অভ্র তোকে নিতে চলে যায়।কেনো কিছু হয়েছে?”

আপুর কথা শুনে আমি আপুর দিকে করুন চোখে তাকালাম।আমার মনোভাব এমন যে এখনি কান্না করে দিবো। আপু আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে আজকের ঘটে যাওয়া সব কাহিনী আপুকে বললাম।আমার কথা শুনে আপু আবাক হয়ে গেলো।

“অভ্র এরকম করতে পারে।আমি তো ভাবতেও পারছি না।তবে যাই হোক তুই ঠিক আছিস এটাই অনেক। এখন যা খেয়ে রেস্ট নে।অনেক ধকল গেছে তোর উপর।”

“আচ্ছা কিন্তু আপু এটা মাকে বলো না।মা অযথাই চিন্তা করবে।”

“আচ্ছা বলবো না।”

“আর একটা কথা আপু।তোমার ওই রোমিও এন্ড জুলিয়েট বইটা আমাকে দেবে।আমি শুধু পড়বো।প্রমিস কিচ্ছু করবো না বইয়ে।প্লিজ আপু দাও না।”

আমার কথা শুনে আপু মুচকি হেসে বই নিতে বললো।আমি তো অবাক হয়ে গেলাম আপুর কাজে।তবে যাই হোক দিয়েছে তো।এটাই অনেক।এরপর তাড়াতাড়ি বই নিয়ে আমার রুমে চলে এলাম।রুমে এসে বই নিয়ে পড়তে বসলাম।কিন্তু বইয়ের প্রথম পেজ উল্টাতেই ফোন বেজে উঠলো।শুভ্র ভাই ফোন করেছেন।

“কিরে তুই নাকি ভূতের ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি।”

“সব তোমার ওই ভাই অভ্রের জন্যে।”

বলে শুভ্র ভাইকেও সব খিলে বললাম।সব শুনে শুভ্র ভাই হাসতে লাগলো।তাই ওনার সাথে রাগ দেখিয়ে ফোন কেটে দিয়ে আবার বই পড়ায় মনোযোগ দিলাম।

(চলবে)

(ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন লাগলো জানাবেন।রি-চেক দেয়া হয় নি।তাই ভুল হলে প্লিজ ক্ষমা করে দিবেন।)

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ৮

সকাল থেকেই ব্যস্ততায় কাটছে আমার দিন।আপুর বিয়ে বলে কথা।কাল হলুদের অনুষ্ঠান বলে আজ থেকেই ফুপিরা,মামা দের বাসার সবাই,আপুর বন্ধুরা সবাই এসেছে।বাসায় আজ একপ্রকার কোলাহল সৃষ্টি হয়েছে।সকাল থেকে কাজের ধকল থাকায় আর এতো কোলাহলে আমার মাথাটা বেশ ধরেছে।একটা কড়া লিকারের লাল চা পান করতে ইচ্ছে করছে খুব।কিন্তু চা এই সময় পান করলে যে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে সেই জন্যে নিজের ইচ্ছেটাকে দমন করলাম।এখন আপাতত আমার একটু বিশ্রামের প্রয়োজন।কিন্তু আমার রুমের বারান্দা ছাড়া কোনো ফাঁকা জায়গা খুজে পাচ্ছি না।সোফায় বসে শুধু চারদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলেছি। দরজার দিকে দৃষ্টিপাত হতেই ভাইয়া আর অভ্র ভাইকে দেখতে পেলাম।ভাইয়াকেও বেশ ক্লান্ত লাগছে।কোথাও গিয়েছিলো হয়তো ঘামে ভাইয়ার শার্ট ভিজে একাকার হয়ে আছে।তিবে অভ্র ভাইকে দেখতে খুব ফ্রেশ লাগছে। আমাকে সোফায় দেখে ভাইয়া সেখানে এসে ধপ করে আমার পাশে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফায় গা এলিয়ে দিলো।তার অভ্র ভাই ও বসলো।

“পিচ্চি একগ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আয় তো।উফফ গরমে জীবনটা শেষ হয়ে গেলো।”

ভাইয়ার কথা কর্ণপাত হতেই আমি চট করে সোফা থেকে উঠে রান্নাঘরে গেলাম একটা গ্লাসে শরবত করে আরেকটা গ্লাসে শুধু পানি নিয়ে ভাইয়ার কাছে এলাম।শরবতের গ্লাসটা ভাইয়াকে দিয়ে পানির গ্লাস অভ্র ভাইয়ের দিকে এগিয়ে দিলাম।আমাকে এভাবে গ্লাস এগিয়ে দিতে দেখে অভ্র ভাই প্রথমে ভ্রু যুগল সামান্য কুচকালেও পরবর্তীতে ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ফুটিয়ে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে সব পানি পান করে ফেললেন।ভাইয়া শরবতের গ্লাস সোফার সামনের টেবিলে রাখতে রাখতে বললো,

“তোর হাতের বানানো শরবতের টেস্টটাই আলাদা মেঘা।দেখ নিমিষেই ক্লান্তি ভাবটা চলে গেছে।আহ আমাদের পিচ্চি যার বাড়িতে যাবে সে খুব ভাগ্যবান হবে। ”

ভাইয়ার কথা কানে আসতেই আমি একবার অভ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম।উনার দৃষ্টিও আমার দিকে।উনি ঠোটদ্বয় সামান্য ফাকা করে তাকিয়ে আছেন। আমি তাড়াতাড়ি দৃষ্টি নামিয়ে নিয়ে লজ্জায় মেঝের দিকে তাকালাম।

“দেখেছিস অভ্র কেমন লজ্জা পেয়েছে মেঘা।বোন আমার বলে বলছি না।সত্যি মেঘাকে যে বিয়ে করবে সে সত্যি খুব ভাগ্যবান হবে।”

এরপর গ্লাস দুটো নিয়ে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে কেটে পড়লাম।তবে যেতে যেতে ভাইয়ার বলা কথা গুলো শুনে আমার লজ্জা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যার ফলে যা হবার তাই রান্নাঘরের দরজার কাছাকাছি এসে দেয়ালের সাথে সজোরে ধাক্কা খেয়ে হাতে থাকা কাচের ক্লাস মেঝেতে পড়ে কয়েক হাজার টুকরোতে পরিণত হলো।শব্দ শুনে ভাইয়া আর অভ্র ভাই সোফা থেকে উঠে এলো আমার কাছে।বাড়ির বাকিরাও আমার কাছে চলে এসেছে। মা তো এসে থেকেই বকে যাচ্ছে যে আমি নাকি কিছু কাজ পারি না।অভ্র ভাইও ভাইয়াকে বললো,

“হ্যাঁ ভাই তোমার বোনকে যে বিয়ে করবে তার জীবনটাও এমন গুড়ো গুড়ো হয়ে যাবে।”

মায়ের বকা শুনে আমার যতটা না খারাপ লেগেছিলো তার থেকে কয়েকশো গুন বেশি খারাপ লাগলো অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে।উনি আমায় ভালোবাসেন না মানলাম।কিন্তু এভাবে বলার কি আছে।আমি কি এতো খারাপ?আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না।আচ্ছা মানলাম ভালোবাসা যায় না।কিন্তু তাই বলে অভ্র ভাইয়ের এভাবে আমাকে সবসময় অপমান কেনো করতে হবে।রাগে অপমানের আমার চোখে লোনাজল ভড়ে এলো।আমি সেই জল কাউকে দেখাতে চাই না।জেদ চেপে বসলো আমার।জেদ করে তাড়াতাড়ি ওখানে বসে কাচের ভাঙা টুকরো গুলো তুলতে লাগলাম।আমার এমন কাজে সবাই অবাক।আমাকে কাচ তুলতে নিষেধ করছে কিন্তু আমি তাদের কথা না শুনে কাচগুলো একটা একটা করে জড়ো করতে লাগলাম।কিন্তু অসাবধান বশত একটা টুকরা ধরতেই হাত কেটে গেলো আমার।সাদা ফ্লোরে রক্তের লাল ফোটা দিয়ে ভেসে গেলো।বেশ অনেকটা কেটে গেছে ডান হাতের।কিন্তু আমি একটা শব্দ ও না করে কাচগুলো তুলেই যাচ্ছিলাম।এদিকে ভাইয়া রক্ত দেখে চেচামেচি শুরু করে দিয়েছে।মা ও রেগে গেছে।ওরা বুঝতে পেরেছে আমি জেদ করে এরকম করছি। ভাইয়া এন্টিসেপ্টিক আর ব্যান্ডেজ নিয়ে এসে আমার হাত ধরলো।

“মেঘা উঠে আয়।এক কথা আমি আর দ্বিতীয় বার বলবো না।নিষেধ করা স্বত্বেও কাচ গুলো তুলতে গেলি।”

ভাইয়া আমার হাত ধরে আমাকে সাবধানে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। আর মাকে বললো কাচগুলো পরিষ্কার করতে।এর মাঝে আমি আর একবার ও অভ্র ভাইয়ের দিকে তাকাই নি।যার কাছে আমার কোনো দাম নেই তাকে আমি আর আমাকে অপমান করার সুযোগ দিবো না। মনে মনে ঠিক করে নিলাম এরপর থেকে আমি আর অভ্র ভাইয়ের সাথে কথা বলবো না।

সব কাজিনরা মিলে ভাইয়ার রুমে বসে ঠিক করছে কাল আপুর হলুদ সন্ধ্যায় তারা কি কি করবে।আমাকে ডেকেছিলো নিরা আপু।কিন্তু আমি যাই নি।কারন সেখানে অভ্র ভাই আছেন বলে।শামিমা আপু আমাকে এখানে এসে খাইয়ে দিচ্ছে।একটু পর দেখি ভাইয়া আমার রুমে চলে এলো।কয়েক লোকমা ভাত মুখে দিতেই আর খাওয়ার রুচি হলো না।তাই খাবো না বলে পানি খেয়ে নিলাম ভাইয়া আমার হাতে একটা ঔষধ দিয়ে খেতে বললো।এরপর আমার কপালে হাত দিয়ে তাপ পরীক্ষা করলো।

“পিচ্চি জ্বর লাগছে বলিস নি কেনো?”

“ব্যাথায় জ্বর এসেছে ভাইয়া ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে।’

” বেশ বুঝিস তুই তাই না মেঘা?রাগ আছে কিন্তু তোর উপর।একদম বেশি কথা বলবি না।”

বলে ভাইয়া আবার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।এরপর একয়াটা এইস প্লাস ট্যাবলেটের পাতা নিয়ে আসলো।আমকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে ঘুমাতে বলে ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

আজ আপুর গায়ে হলুদ।তাই সবাই নানান কাজে ব্যাস্ত।শুধু আমি ছাড়া।কারন আমাকে কেউ কাজ করতে দিচ্ছে না।হাতের ব্যান্ডেজটার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম।আমার
এভাবে থাকতে খুব অসহ্য লাগছে।হঠাৎ অভ্র ভাইয়ের দিকে চোখ পড়তেই দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে তাকাতে দেখে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন কিন্তু আমি ওনার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সোফা থেকে উঠে রুমে চলে এলাম।ওনার সাথে আমি আর কথা বলবো না।এটাই ফাইনাল ডিসিশন নিয়েছি।আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকবো সেটা যে পরিস্থিতিই হোক না কেনো। রুমে এসে আবার বাহিরে গেলাম।হাতের ব্যান্ডেজ টা খোলা প্রয়োজন।একা একা তো সম্ভব না।তাই আবার বেরিয়ে গেলাম।সবাই কাজে ব্যাস্ত।শুভ্র ভাই আর অভ্র ভাই বসে আছে।

“শুভ্র ভাই আপনি কি ফ্রি আছেন?”

“কেনো রে মেঘা?”

“আমার একটু হেল্প লাগতো তো।”

“কি হেল্প?আমার বাহিরে যেতে হবে যে ফুল আনতে।”

“ওহ আচ্ছা তাহলে থাক।”

“আরে কি কাজ বল অভ্র ফ্রি আছে ও করে দিবে।”

“প্রয়োজন নেই শুভ্র ভাই।আমি ম্যানেজ করে নিবো।”

বলে আমি সেখান থেকে চলে আসতে নিলে অভ্র ভাই আমার হাত ধরে আমাকে থামিয়ে দিলেন।আমি পিছন ফিরে তাকাতেই উনি রেগে আমাকে বললেন,

“কি কাজ বল।আমি করে দিচ্ছি।”

“অভ্র ভাই হাত ছাড়ুন।আমার কোনো কাজ আপনাকে করতে হবে না।আমি ম্যানেজ করে নিবো।”

বলে ওনার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রুমে চলে এলাম।একা একা ব্যান্ডেজ খুলে ফেললাম।প্রায় দেড় ইঞ্চি মতো কেটে গেছে।ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এসে একা একা ড্রেসিং করতে শুরু করলাম।কিন্তু একা একা করতে পারছিলাম না।স্যাভলন লাগাতেই এতো জ্বালা করছে যে আমি বার বার তুলা সরিয়ে নিচ্ছি।

“জেদ থাকা ভালো কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ভালো না।”

কথাটা কানে আসতেই মাথা তুলে দেখি অভ্র ভাই দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।আমি কিছু না বলে আবার আমার কাজে মনোনিবেশ করলাম।কিন্তু অভ্র ভাই এসে আমার হাত থেকে তুলা নিয়ে হাত ধরে স্যাভলন লাগিয়ে দিতে শুরু করলেন।কিন্তু আমি জোরাজোরি করে ওনার থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে হাত টান দিতেই হাত গিয়ে বিছানায় লাগতেই আমি আহ করে শব্দ করলাম।দেখি আবার রক্ত পড়তে শুরু করেছে।আমার কাজে অভ্র ভাই রেগে গেলেন আর আমার গালে সজোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলেন।

অশ্রুসিক্ত নয়নে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছি অভ্র ভাইয়ের দিকে।উনি রেগে গেছেন খুব।রাগে ওনার হাত কাপছে।উনি অভ্যাস মতো কপালে হাত দিয়ে স্লাইড করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।এরপর আমার সামনে বসে আলতো করে হাতটা নিয়ে স্যভলন দিয়ে মুছে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলেন।আমি একটা বার ও ওনার দিকে তাকাই নি।উনি ব্যান্ডেজ করা শেষে আমার সামনে ১০ টা বেশ কয়েকরকম চকলেট রেখে আমার দুই গালে হাত দিয়ে মাথা তুলে ওনার দিকে করে বললেন

“জেদ করে নিজের ক্ষতি ছাড়া কিছুই করতে জানে না।আর সরি মেঘ।প্লিজ মাফ করে দে।তোর কাজে রাগ উঠে গিয়েছিলো তাই থাপ্পর মেরেছি।প্লিজ মাফ করে দে।”

বলে যেই গালে থাপ্পর মেরেছেন সেই গালে হাত বুলয়ে দিয়ে চলে যেতে লাগলেন।কিন্তু আমার রাগে গা রিরি করছে। আমি কোলের উপরে থাকা চকলেট গুলো ওনার দিকে ছুড়ে দিলাম আর কয়েকাতা চকলেট ওনার পিঠে গিয়ে লাগলো পিছন ফিরতেই আমি ওনাকে বললাম,

“একদম জুতো মেরে গরু দান করতে আসবেন না। এইসব অভিনয় আমাকে না দেখিয়ে অন্য কাউকে দেখান মিঃঅভ্র। ”

বলে সেখান থেকে উঠে বারান্দায় চলে গেলাম।ভালো লাগছে না আমার কিছু।ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙে ফেলি।কিন্তু তা সম্ভব নয়।তাই বারান্দায় গিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলাম।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here