তোমাতে করিবো বাস পর্ব -২৭+২৮+২৯

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২৭
লেখনীতে-আফনান লারা
.
বাপ্পি যেভাবে আগলে রাখে তাতে করে একটা অপরিচিত মেয়েও এক দেখায় প্রেমে পড়ে যাবে সেখানে তটিনি পড়লোনা?কেন পড়লোনা?
এটা বাপ্পি ভাবেনা।ভাবে শুধু তটিনি।সুদর্শন,দায়িত্ববান পুরুষ একটা নারীর স্বপ্ন।অথচ তটিনির কাছে সেই স্বপ্ন সত্যি হবার আনন্দ জাগেনা মনে।বারবার মনে হয় সেই আসিফকেই পেলে হয়ত খুব ভাল হতো।আফসোস থাকতোনা।কিন্তু আসিফ তাকে এই কেয়ার কখনই দিতে পারতোনা যেটা বাপ্পি তাকে দিচ্ছে।তাহলে কোনটা ভাল হলো?
বাপ্পি বালিতে বসে ভেজা বালিতে তার নাম আর তটিনির নাম লিখে ছবি তুলছে তাড়াহুড়া করে।তার নাম লেখার পর তটিনির নাম লেখার আগেই ঢেউ এসে সব মুছে দেয়।তাও সে বিরক্ত হয়না।বারবার লিখে যাচ্ছে আর ঢেউ এসে মুছে দিচ্ছে।
তটিনি ওর ধৈর্য্য দেখে অবাক হয়ে বসে আছে।শেষ পর্যন্ত সে পুরোটা করতে পেরেছে ঢেউ আসার আগেই।করতে পেরে লাফ দিয়ে অনেকদূর দৌড়ে যেতে যেতে বললো,’আজকের কভার পিক হয়ে গেলো!’

তটিনির মুখে অজান্তেই হাসি এসে গেলো।সেও মনে মনে চাইছিল বাপ্পির এত কষ্টের যেন একটা ভাল ফল হয়।

বাপ্পি দৌড়ে অনেকদূর গিয়ে আবার ফেরত চলে আসে তটিনির কাছে।এসে ওর পাশে বসে ছবিটা আপলোড করতে ব্যস্ত হয়ে যায়।তটিনি ভাবছিল এই মূহুর্তে আসিফ থাকলে সে আসিফের হাত ধরে ভেজা বালি স্পর্শ করে যতদূর মন চাইতো চলে যেতো।হঠাৎ নিজের হাত টানা অনুভব করে ঘোর থেকে বেরিয়ে দেখে বাপ্পি ওকে টানছে ভেজা বালিতে হাঁটার জন্য।
তটিনি রোবটের মতন ওর সাথে হাঁটা ধরলো উঠে দাঁড়িয়ে।কেন বাপ্লি তাকে এত ভালবাসছে!সে তো এর যোগ্য না!
তটিনিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বাপ্পি জানতে চাইলো সে কিছু বলবে কিনা।

‘আচ্ছা আমি যদি বলি আসিফ ভাইয়ার কাছে ফিরে যেতে চাই।আপনার উত্তর কি হবে?’

‘পারবেনা’

‘কেনো?যদি পারি?’

‘পারবেনা কারণ তুমি আমাতে মিশে গেছো।হয়ত অতীতের স্মৃতি তোমায় টানছে কিন্তু দিনশেষে তুমি আমার মধ্যেই বাস করো।তোমার অস্তিত্ব আমাতে।বুঝেছো?’

‘না বুঝিনি।যেভাবে বললেন যেন আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি’

‘প্রেমে পড়লেই কি কাছে থাকতে ইচ্ছে হয়?একটা মানুষের প্রতি টান,তার সাথে বৈধ সম্পর্ক থাকলেও ঐ মানুষটাকে ছাড়া যায়না সহজে।যেখানে আসিফ তোমার কেউ ছিলনা সেখানে আমি তোমার স্বামী।এর চাইতে বড় সম্পর্ক আর কি হতে পারে তটিনি?নিজেকে প্রশ্ন করো!আদৌ তুমি আমাকে ফেলে আসিফের কাছে গিয়ে শান্তি পাবে কিনা।আসিফ ও কিন্তু রিনির স্বামী।সে একা নয়।তুমি চাইলেও তার আর রিনির সম্পর্ক অস্বীকার করতে পারোনা।আমি তোমাকে যেতে দেবোনা কারণ তুমি গেলে রিনির মতন একটা মেয়ের সংসার ভাঙবে।আসিফ হয়ত তোমার অবস্থা দেখে রিনিকে ছেড়ে দিতে পারে কিন্তু আমি তোমায় ছাড়বোনা।’

তটিবি বাপ্পির হাতটা ছাড়িয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে বললো,’আমার বয়ে গেছে আরেকজনের স্বামীর কাছে গিয়ে বলতে,’ প্লিজ আমায় বিয়ে করো।আমি এমনি ভাবছিলাম এসব।ভাবতে তো ক্ষতি নেই’

‘ভাবলেই ক্ষতি।আজব!এইসব কেনোই বা ভাববে তুমি?’

তটিনি আর কিছু বলেনা।
চুপচাপ হাঁটতে থাকে।হাঁটার গতিটাও কমিয়ে দিয়েছে।সে চায় বাপ্পির পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে পথ চলতে।

হাওয়ায় তটিনির শাড়ীর আঁচল ভাসছিল।বাপ্পি ও নিরবই আছে তবে নিরব হয়ে সে ঐ উড়ন্ত আঁচলটা দেখতে মত্ত ছিল।দুজনে আর কথা বলেনি।হেঁটে অনেকটা পথ চলে এসেছে যেখানে একটা কাকপক্ষী ও ছিলনা।এখন তারা যে আবার হেঁটে ফিরবে সেটাও সম্ভব না।কারণ হাঁটাই হয়েছে এক ঘন্টার উপরে।আবার হেঁটে ফেরার মতন শক্তি দুজনের গায়েই নেই।বাপ্পি রোডে এসে একটা গাড়ীর অপেক্ষা করছিল,হোটেল অবধি পৌঁছানোর জন্য।তটিনি বাপ্পির পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে।আগে আসিফের পিঠ দেখলে তার মন চাইতো গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।আসিফকে দেখলেই ওর জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা কাজ করতো।কিন্তু বাবার ভয়ে সে কখনওই এই ইচ্ছা পূরণ করতে পারে নাই।আর আজ বাপ্পির পিঠ দেখে তার একই ইচ্ছা কাজ করছে।তফাত হলো আসিফ তার কেউ ছিল না।আর বাপ্পি তার স্বামী।সে যদি এখন এই জায়গায় বাপ্পির পিঠ জড়িয়েও ধরে একটা মানুষ ও এসে তাকে বাধা দেবেনা,এমনকি বাপ্পিও না।কিন্তু সে কেন ধরবে!মানুষটাকে তো সে পছন্দই করেনা।
বাপ্পি পেছনে তাকাতেই দেখে তটিনি ওর পিঠ নিয়ে গবেষনা করছে।ওর পেছনে এসে একেবারে আর একটুর জন্য গায়ে লেগে পড়েনি।চোখ বড় বড় করে বাপ্পির গায়ের টিশার্টের পিঠের অংশে লেখা Don’t follow me তে নজর দিচ্ছে।বাপ্পি ওমনি ওর দিকে ফিরে বলে,’এত কি দেখছো?পিঠে কিছু লেগে আছে আমার?’

‘আপনাকে কখনও কেউ জড়িয়ে ধরেছে?’

‘অনেকেই ধরেছে’

‘মেয়ে?’

‘উমমমম ভাবতে হবে।হ্যাঁ ধরেছিল।ক্লাস টেনে থাকতে র‍্যাগ ডের দিন একটা মেয়ে পিঠে নাম লিখে জড়িয়ে ধরেছিল,সেটা অবশ্য আমার ইচ্ছেতে না।আমি জানতাম ও না সে যে আমায় ধরবে,আকস্মিক ছিল”

তটিনি চিন্তিত হয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,’তাহলে কি সে পিঠ জড়িয়ে ধরেছিল?’

‘পিঠ কেন ধরবে?হাত জড়িয়ে ধরেছিল’

‘ওহ।’

এটা বলে তটিনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।বাপ্পি পালটা জিজ্ঞেস করে সে কেন এটা জানতে চাইছে।
তটিনি আবারও চুপ হয়ে যায়, কিছু বলেনা।মূলত সে অপেক্ষা করছিল কখন বাপ্পি মুখ ঘুরিয়েনদাঁড়াবে আর সে পেছনে ওর পিঠ দেখবে।কথামতন বাপ্পি আবারও ঘুরে দাঁড়ায় গাড়ীর অপেক্ষায়।আর তটিনি অনেকক্ষণ ধরে দেখে পিঠটা।আসিফের পিঠ একেবারে ফ্ল্যাট ছিল।আর অপরদিকে বাপ্পির পিঠ ফুলা ফুলা।সে নাকি কখনও জিমে যায়নি।তবে এমন ফুলা ফুলা দেহ বানাইলো কি করে!
পরে মনে আসলো বাপ্পির মা তো ওরে কোলে নিয়ে ভাত খাওয়াইতো।ডিম,দুধ, কলা খাওয়াইতো তাই হয়ত এত সুন্দর শরীর বানাইছে।

তটিনির ভাবনার মাঝেই তারা একটা গাড়ী পেয়ে যায়।সে গাড়ী করেই তারা হোটেলে ফিরে আসে।
পানিতে ধপাধপি করায় বাপ্পির টি শার্টের ভেতর দিয়ে অনেকখানি বালি ঢুকে গেছে।এখন সে বালি ঢুকে খচখচ করছে অনেক সময় ধরে।তাই হোটেলের রুমে ফেরত এসেই সে ঢুকতে ঢুকতে চট করে গায়ের টিশার্ট খুলে ফেললো তটিনির সামনেই।তটিনি তখনও ওর পিঠই দেখছিল।টি শার্ট খুলে ফেলায় তার সামনে দৃশ্যমান হলো বাপ্পির উদম পিঠ।
তটিনি ঢোক গিলে আরও মনযোগ দিয়ে দেখছে।বাপ্পি টিশার্ট ফেলে পিঠ চুলকাতে গিয়ে আয়নায় চোখ রেখে দেখে তটিনি হা করে ওর পিঠ দেখছে।ওমনি সে টিশার্ট টা তুলে পিঠ ঢেকে বললো,’তোমার কি হয়েছে বলোতো?আমার পিঠ দেখছো কেন বারবার?’

‘কেন?আপনার কি তাতে কোনো সমস্যা আছে?’

‘আমি যদি তোমার পিঠের দিকে এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকি তোমার কি অস্বস্তি লাগবেনা?’

‘না লাগবেনা।কারণ আমার পিঠ এত অাকর্ষণীয় না’

‘ওহ আচ্ছা, তার মানে আমার পিঠ আকর্ষনীয়?’

তটিনি থতমত খেয়ে বললো,’নাহ।ভুল।’

এটা বলে সে বিছানায় বসে টিভিটা অন করে মোড় ঘুরানোর চেষ্টা করে।বাপ্পি বুঝে গেছে সবকিছু,চোখের সামনে সব পরিষ্কার হয়ে গেলো।সব বুঝতে পেরে সে মিটমিট করে হাসতে হাসতে গিয়ে গোসল করে আসে।
পিঠ তখনও উদমই ছিল, এসে সে তটিনির সামনে বরাবর দাঁড়িয়ে মুখ মুছতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
তটিনি তখন টিভি দেখা বাদ দিয়ে বাপ্পির ভেজা পিঠ দেখছিল আবারও।
সে এখন যদি এই পিঠ জড়িয়ে ধরে বাপ্পি তাকে পাগল ছাড়া আর কিছুই ভাববেনা।বলবে এই মেয়ে পাগল!বলে আসিফের কাছে ফিরে যাবে আসলে সে জড়িয়ে ধরতে চায় বাপ্পিকে।নিজেও জানেনা তার কি চাই!
এগুলো ভেবে সে চোখ ফেরায়।চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।তার চোখ আর মন বলছে যা তটিনি গিয়ে তোর স্বামীটাকে জড়িয়ে ধর।সম্পর্ক গড়ে যাবে সহজেই।জড়িয়ে ধরলে মনে মনে মিল ঘটে!
তটিনি এইসবই ভাবছিল সেসময় বাপ্পি এসে ওর পাশে বসে টিভি দেখতে লাগে।ওর পিঠটা এবার তটিনির এত কাছে যে বাপ্পি যে সাবান দিয়ে গোসল করেছে সেই সাবানের তীব্র গন্ধ এসে তটিনির নাকে লাগছে।
তটিনি যে ড্যাব ড্যাব করে ওর পিঠ দেখছে তা বাপ্পি বেশ ভাল বুঝতে পারে।চ্যানেল বদলাতে গিয়ে সে হুট করে বলে দিলো,’মন চাইলে জড়িয়ে ধরতে পারো।আমি কিছু মনে করবোনা’

এটা শুনে তটিনি চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে,”বয়ে গেছে’

‘তবে যদি আর একবার হা করে আমার পিঠ দেখেছো, তো এবার আমি তোমায় জড়িয়ে ধরবো’

চলবে♥তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২৮
লেখনীতে-আফনান লারা
.
‘শুন,আমার কাল থেকে এক মাস ব্যাপী ফাইনাল পরীক্ষা চলবে।তুই আজ থেকে ঐশীর রুমে ঘুমাবি।যা এখন,তুই থাকলে পড়ালেখায় মন বসবেনা আমার’

রিনি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আসিফের লেকচার শুনলো।এরপর আসিফ ওর হাতে বালিশ ধরিয়ে দিতেই ঘোর থেকে বেরিয়ে সে বললো,’আঁই তো আন্নেরে কিছু কইত্তাম ন।টুকুস করি হুতি থাইক্কাম এক পাশে।এককানাও জ্বালাতাম ন।’

আসিফ জোর করেও রিনিকে রুম থেকে বের করতে পারে নাই।সে পারতো সোফায় গিয়ে বসতে কিন্তু ওখানে তার পড়ায় মন বসবেনা।তাই রিনির সাথে আর জোরাজুরি না করে বই নিয়ে টেবিলের কাছে বসে পড়া শুরু করে সে।রিনি ও গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।শুয়ে শুয়ে মাথার উপরের ফ্যানটা দেখছে।শীতকাল বলে বন্ধ আছে সেটা।বেশ ধুলাবালি জমা।ছেলেরা নিজের রুমের প্রতি অপরিষ্কার হয় এটা রিনি জানে।কারণ তার বাড়িতেও তার ভাই আছে।ঐ গাধাটাও রুমের বেহাল দশা করে রাখে।অনেকক্ষণ ফ্যানটা দেখা শেষে রিনি ভাবলো সে ফ্যানটা মুছবে।কারণ সেটাতে এত বেশি ধুলা জমে ছিল মনে হয় এই বুঝি খুলে মুখের উপর পপড়বে ময়লাগুলো।বিছানা থেকে নেমে রিনি বাইরে থেকে একটা নেকড়া আর টুল নিয়ে এসে হাজির।আসিফ তখনও জানেনা রিনি কি কার্যকলাপ করছে।
সে টুলে উঠে ফ্যানটা মুছতেছিল স্বাভাবিক ভাবেই।আসিফ বই রেখে পানির বোতল নেয়ার জন্য পেছনে ফিরতেই দেখে রিনি ওড়না কোমড়ে পেঁচিয়ে ফ্যান মুছতেছে।নাকে রুমাল বাঁধা।

‘একি!এইসব কি করছিস তুই?’

‘জীবনে তো করেননা।আঁই করমুনা তো কে কইরবো?’

‘তাই বলে এইসময়ে?নাম বলছি!খাটের উপর কেউ টুল রাখে?পড়বি তো!নাম!’

আসিফের ধমকে রিনির ভয় লাগলো,যার কারণে তার পা কাঁপছে সাথে টুলটাও।কাঁপতে কাঁপতে এক সময়ে সে টুল সমেত নিচে পড়ে গেলো দুম করে।পড়ে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বললো ‘এইন্না নি করে মানুষ?বউ হড়ি গেছে,এককানা ধরতে হারেননো?সিনামাত নায়কেরা যেমনে করে ধরে ওরকম করে ধরতে হারেন ন?’
[এমন করে মানুষ?বউ পড়ে গেছে,একটু ধরতে পারলেন না?সিনামায় নায়কেরা যেভাবে ধরে সেরকম করে ধরতে পারেন না?]

‘তোর আর আমার প্রেম চলে যে আমি তোরে ধরমু?’

‘বিয়া তো হইছে তাই না?’

ওমনি কারেন্ট চলে গেলো।আসিফ রুম থেকে দেয়ালে হাত রেখে রেখে বের হয়ে যায় মোমবাতি আনতে।রাত দুইটা বাজে বলে সকলে ঘুমায়।কারোর মোমবাতির প্রয়োজন নেই।কিন্তু আসিফ তো পড়বে তাই সে মোমবাতির খোঁজে বেরিয়েছে।
মোমবাতিটা ধরিয়ে পেছনে ফিরতেই রিনির সঙ্গে ধাক্কা লেগে যায় আসিফের।অন্ধকারে মোমবাতির আলোয় ওকে আচমকা দেখে আসিফ প্রথমে ভয় পেয়ে গেছিলো।পরে দম ফেলে বলে,’তুই না পড়ে মাথায় চোট পেয়েছিস?তো এখানে কি করিস?’

‘মনে কইচ্ছি আন্নে হত্তে হত্তে ডরাইবেন।তাই আন্নেরে সাহস দেনের লাই আঁই চলি আইছি🐸’
[ভাবছি আপনি একা একা ভয় পাবেন তাই আপনাকে সাহস দেয়ার জন্য আমি চলে এসেছি ]

‘ আমি ডরাই?নাকি তুই ডরাস!’

আসিফ পাশ কাটিয়ে হাঁটা ধরে।রিনিও ওর পিছু পিছু আসতে আসতে বলে,’এত শীত! আইয়েন না ঘুমাই।’

‘তোর ঘুম আসলে ঘুমা।আমি সারারাত জেগে পড়বো’

‘আন্নেরে ছাড়া আঁর ঘুম আইতোনো’
——–
বাপ্পি উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছিল।তটিনি দূরে বারান্দায় বসে তার বেস্ট ফ্রেন্ড কাশপিয়ার সাথে কথা বলছে।তার মনে যে ইচ্ছা ঘুরপাক খাচ্ছিল তারই সলুশান সে কাশপিয়ার কাছে চাইছে।
সে কাশপিয়াকে জানায় বাপ্পির পিঠটা দেখে তার কেমন কেমন যেন লাগছে।আসিফের বেলায় ও এমন হতো।কিন্তু বাপ্পির বেলায় বেশি হচ্ছে।মন চাইছে ওরে জড়িয়ে ধরতে।
কাশপিয়া শুরুতে অট্টহাসিতে লুটিয়ে পড়ে এরপর হাসি থামিয়ে বলে এটাই স্বভাবিক।স্বামীর প্রতি স্ত্রীরই তো আকর্ষণ বাড়বে।এটাতে ভয় পাবার কি আছে।

‘ভয় পাবো না?আমি তো ওনাকে ভালবাসিনা’

‘না বাসলে ভাইয়ার প্রতি এত টান লাগছে কেন তোর?’

‘তাও কথা।কিন্তু বিশ্বাস কর।আসিফ ভাইয়ার প্রতি এরকম ফিলিংস কাজ করলেও কখনও এতটা গাঢ় হয়নি সেটা’

‘হয়নি কারণ আসিফ ভাই তোর হাসবেন্ড ছিল না’

তটিমি মাথায় হাত দিয়ে বললো,’কথা সেটা না!আমার কেন!!’

এই বলে সে পেছনে ফিরতেই বাপ্পির সাথে লেগে গেলো।বাপ্পি মাথা নিচু করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তটিনি ফোনটা কান থেকে নিচে নামিয়ে হ্যাং হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাপ্পি ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে কানে ধরলো ওমনি।কাশপিয়া বলছে’শুন।তুই আর ইতিউতি না ভেবে ভাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধর।বাকিসব ভাইয়াই করবে।আর পিঠ দেখিস না।এটা লজ্জাজনক,ভাইয়া তোকে উজবুকও ভাবতে পারে। সামনে আপেল কেটে রাখা আর তুই আপেলের খোসা ঘন্টার পর ঘন্টা দেখবি।এটা আপেলের কেমন লাগবে?’

বাপ্পি বললো,’আপেলের খুব খারাপ লাগবে’

এটা বলে সে ফোন রাখে।
তটিনি ঢোক গিলছে।কাশপিয়া কি বলেছে কে জানে।সে ভয়ে ভয়ে পিছোচ্ছিল।তখনই বাপ্পি তার হাতটা ধরে টান দিয়ে সামনে নিয়প এসে বলে,’তোমার বান্ধবী বলে কাটা আপেলের খোসা না দেখে আপেলটা খেয়ে নিতে নাহলে আপেলের খারাপ লাগবে।এবার বলো কি করবে তুমি?বলছে তুমি না পারলে যেন আমিই করি’

তটিনি আবারও ঢোক গিলে হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বাপ্পি ছাড়ার মতন না।সে আরও শক্ত করে ধরেছে ওকে।
——
আসিফ পড়তে পড়তেই টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছিলো।রিনি ওর গায়ে চাদরটা পরিয়ে দিয়ে ওর সামনে বরাবর চেয়ারে এসে বসে।আসিফ না ঘুমানো পর্যন্ত সে আসিফের মুখের দিকে মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকতে পারেনা।আসিফ হাজারটা কথা বলে।যেন মুখের দিকে তাকিয়ে থাকাটাই অপরাধ।
এখন দেখো!কেউ কিছু বলছেনা।কি শান্তি চারিদিকে।মনমত আসিফকে দেখতে পারছে সে।তটিনি পছন্দ আছে!এত সুন্দর ছেলে দেখলে পাগল হবারই কথা।অবশ্য ওনার স্বামী ও কম না!বরং বেশিই সুন্দর!হয়ে যাবে!একদিন না একদিন তাদের ও প্রেম হয়ে যাবে।শুরুতে এরকম অপছন্দ থাকেই!মানিয়ে নিতে কতক্ষণ! এই বেডাও তাকে একদিন ঠিক মেনে নেবে।
——–
তটিনি কিছু বলছেনা দেখে বাপ্পি ওর হাত ধরে রুমে নিয়ে আসে,এরপর বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আবারও জানতে চায় সে কিছু বলবে কিনা।

‘নাহ!কিছু বলার নেই আমার’

বাপ্পি আজ আর আচ্ছা বলে কথা শেষ করেনি।বরং এক টান দিয়ে তটিনিকে বসা থেকে আবার উঠে দাঁড় করিয়ে বলে,’জড়িয়ে ধরো দেখি।কেমন ধরতে পারো’

‘আআআআআমি কেন ধরবো?কিসের প্রয়োজন?’

‘প্রয়োজন আছে, আগে ধরো তারপর বলছি।আসিফকে যেভাবে ধরতে সেভাবে না কিন্তু’

‘তো কিভাবে?’

‘আমি শিখিয়ে দিচ্ছি’

বাপ্পি তটিনির একটা হাত নিজের গলার সাথে লাগিয়ে ধরলো আরেকটা বাপ্পির কোমড়ে এরপর তাকে মাথা ঠেকাতে বললো বাপ্পির বুকে।
তটিনি সেরকমই করেছে।বাপ্পি মুচকি হেসে বলে,’কিরকম লাগছে?’

‘অদ্ভুত!’

‘আসিফকে ধরলে কেমন লাগতো?’

‘মনে নাই।তবে আপনাকে ধরে মনে হচ্ছে এর আগেও ধরেছি’

‘সব বুঝে গেলাম’

‘কি বুঝে গেলেন?’

‘বুঝলাম এই যে তুমি আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো।আসিফের প্রতি যে ফিলিংস ছিল তোমার সেটা আসলে আবেগ ছিল।যদি সত্যি সেটা খুব গভীর প্রেম হতো তবে এত জলদি তুমি এই অবধি পৌঁছাতে পারতেনা।প্রাউড অফ ইউ!’

তটিনি বাপ্পিকে ধাক্কা দিয়ে বলে,’মজা করছেন?জড়িয়ে ধরা নিয়ে এতকিছু বলার কোনে লজিক নাই।আমাকে বোকা বানাচ্ছেন কেন!’

‘অবশ্যই আছে আর তা হলে আসিফের সাথে তুমি সেইসব করতেনা যেটা আমার সাথে করতেছো।তার মানে আমি জিতে গেছি আর তুমি হেরে গেছো।’
——
রিনি আসিফকে দেখতে দেখতেই টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছিল।এরপর যখন সে চোখ খুললো তখন নিজেকে পেলো বিছানায়।তাও কম্বল মুড়ি দেয়া।তার মানে কি হয়েছে বুঝতে পারছেন?
রিনি এক চিৎকার করে উঠে বসে বলে,’আঁর জামাই আঁরে রাইত কোলে করি টেবিলের তন উডাই খাটে লই আইনছে!কুনমি যাইতাম খুশিতে’😇
[আমার জামাই আমায় রাত কোলে করে টেবিলের থেকে উঠিয়ে খাটে নিয়ে এসেছে।কোথায় যাবো খুশিতে!]

আসিফ তখন গোসল করে বের হয়েছিল ওয়াশরুম থেকে।রিনিকে বকবক করতে দেখে সে বললো,’এ্যাহ!ভাল করে মনে করে দেখ!রাতে মশার কামড়ে ধরাম করে টেবিলের থেকে মাথা নিয়ে নিচে পড়ে গেছিলি।পরে আমিও জেগে গিয়ে তোকে ধমক দিছিলাম এরপর নিজে নিজে গিয়ে বিছানায় শুয়েছিস।আমার বয়ে গেছে তোকে কোলে করে বিছানায় দিয়ে আসার।এত খুশির কিছু নাই’

রিনি মনে করার চেষ্টা চালাচ্ছে আসলেই কি এইসব ঘটেছিল!অনেক ভেবে তার আবার মনে আসলো কালকে রাতের ঘটনা।সে ঘুমে থেকে টেবিলের উপর থেকে হাত পিছলে চেয়ার থেকে পড়ে গেছিলো নিচে। এরপর মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়ে।পরে আসিফ তাকে কোলে তুলে বিছানায় এনে রাখে এরপর বলে,’বাচ্চা একটা মেয়ে’!

‘এই আঁর মনে আইছে।আন্নে কইছেন বাচ্চা একটা মেয়ে!!’

আসিফ ততক্ষণে পগারপার।

চলবে♥তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২৯
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসলে সত্যি কথা হলো এই যে রিনি সত্যি সত্যি মেঝেতে শুয়ে পড়েছিল।আর তখন আসিফ তাকে তুলে বিছানায় নিয়ে এসে কম্বল মুড়িয়ে দেয়।
কাজটা সে কখনওই রিনির চোখ খোলা থাকতে করতে পারতোনা।সাহস এবং ইচ্ছা দুটোই গায়েব থাকতো।কিন্তু সেইসময় রিনি গভীর ঘুমে তকিয়ে ছিল বলে আসিফ সুযোগটাকে কাজে লাগায়।রিনি তখনও ভাবছিল আদৌ সবই তার মনের ভুল নাকি সত্যি এইসব কিছু ঘটেছে।অনেক ভাবনাচিন্তা করে এরপর সে উঠে চলে যায় মুখ- চোখে পানি দিতে।হয়ত ঘুমের রেশ কেটে গেলে তার সব মনে এসে যাবে।
আসিফ নাস্তা খেয়ে আর রিনির সামনে আসেনি।বই হাতে ভার্সিটির দিকে চলে গেছে।এখানে থাকলে রিনি তাকে চেপে ধরবে সত্যিটা সত্যিতে প্রমাণ করার জন্য।
——-
বাপ্পি মুখে কলম গুজে ফোন টিপছে আর কিছুক্ষণ পর পর কাগজে কিসের যেন হিসাব করছে।অর্থাৎ সে বোধহয় অফিসের কাজে ব্যস্ত। তটিনি ও আগ বাড়িয়ে কথা বলেনি।
এদিকে শুধু শুধু টিভিতে বোরিং শো গুলো দেখতে দেখতে তটিনির আর সময় কাটেনা।তার মন চাইছে অন্য কিছু।একটু ঘুরে আসবে যদিও কাল অনেক ঘোরা হয়েছিল কিন্তু কক্সবাজার কি মানুষ একদিন ঘুরতে আসে?একদিনে কি সব ঘোরা যায়?তাই ভেবেই বাপ্পিকে ঘুরতে যাবার কথা বলবে বলবে বলে ভাবছিল তটিনি।
তটিনি সচরাচর বাপ্পির দিকে তাকায়না।তাকালেও ওর মুখ বাদ দিয়ে হাত পা পিঠ এইসব তাকিয়ে দেখে।কিন্তু আজ সে সরাসরি বাপ্পির দিকে তাকিয়ে আছে।
বাপ্পি সাথে সাথেই বুঝতে পেরেছে কারণ কাজের সাথে সাথে সে তটিনির উপরও নজর রাখছিল।তটিনি ওর দিকে তাকাতেই সে বলে উঠলো,’কিছু বলবে?’

‘বলছিলাম আর কত বসে থাকবো?’

‘হাঁটো।রুম তো বেশ বড়’

‘সেটার কথা বলছিনা।বাহিরে বের হবেন না আজ?হানিমুনে এসে কেউ অফিসের কাজ করে?’

বাপ্পি মুখ থেকে কলমটা বের করে মাথা তুলে বলে,’হানিমুনে এসে হাসবেন্ড ওয়াইফ মাঝে দুই হাত দূরুত্ব রাখে?’

‘তো কি লেগে বসে থাকবো?’

‘সেটা তোমার ইচ্ছা।বিয়ের পর থেকেই তো তোমার ইচ্ছেতে সব হচ্ছে।এটাও বাদ যাবে কেন!কদিন পর শুনবে আসিফ রিনির বেবি হবে আর আমি এখনও। থাক আর নাই বলি।জীবন যুদ্ধে তোমার কারণে আমি পিছিয়ে রয়ে গেলাম’

তটিনি গাল ফুলিয়ে রাখলো তারপর ভাবলো আসলে বাপ্পি সত্যি বলেছে।সে তো আসিফকে বলেই দিয়েছে সে যেন রিনিকে ভাল বাসে, আদর যত্ন করে।তবে তো ওদের কদিন পর এই সুখবরই আসবে।!তাহলে সে কেন পারছেনা?আসিফের সাথে জেদ ধরে যখন বাপ্পিকে বিয়েই করে নিয়েছে তখন সে কেন আলাদা আলাদা থাকছে?আসিফ তো ঠিকই সব ইঞ্জয় করে চলে!’
——-
রিনি রুটি মুখে দিয়ে বারবার মনে করার চেষ্টা করছে কাল রাতের কথা।কিন্তু তার স্পষ্ট মনে পড়ছেনা।তার সিওর জানা দরকার আসিফ তাকে কোলে নিয়েছে কিনা।জানলে বিছানায় উঠে একটা নাচ দিবে!কারণ কোলে তুলা মানে অনেক অনেক কিছু।আসিফ যে ছেলে জীবনেও স্বীকার করবেনা কিন্তু এইদিকে রিনির ও স্পষ্ট কিছু মনে পড়ছিল না।এরপরে রিনি একটা প্ল্যান করে।
আসিফ বাড়ি ফিরেছে দুপুর আড়াইটার দিকে।এসে দেখে বাড়ির সকলে যে যার রুমে ভাতঘুম দিয়ে থাকলেও কেবল রিনি বাড়ির সামনের সিড়িতে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমায়।
আসিফ শুরুতে ভেবেছিল রিনি হয়ত ভান করছে।কিন্তু মানুষ হা করে তো ভান করে ঘুমায়না।তাই সে ভাবলো হয়ত সত্যি সে ঘুমায় তাই হাতের বইখাতা রেখে রিনিকে আগেরমতন কোলে তুলে হাঁটা ধরে সে।কিছুদূর যাবার পর রিনি চোখ খুলে বলে,’তার মানে কাইল রাইত আন্নে আঁরে কোলে তুলি বিছানায় আইঞ্চেন।আলহামদুলিল্লাহ! ‘

আসিফ এ কথা শুনে থেমে যায়।চেয়ে দেখে রিনি ওর গলা জড়িয়ে ধরে মুচকি মুচকি হাসে।

‘তুই ঘুমাসনি?’

‘নাহ।নাটক করতাছিলাম।দেখছেন আন্নেও বুঝেন নাই।এই জন্যই আম্মা আব্বারে কইতাম আঁরে এককানা সিনামায় কাম করতো দিতো।’

আসিফ রিনিকে নামিয়ে দিয়ে রাগে কটমট করছিল।রিনি দাঁত কেলিয়ে এগিয়ে এসে আসিফকে জড়িয়ে ধরে বলে,’এত দরদ লাগে আঁর লাই?’

আসিফ কিছু বলেনা।রিনি তাকে বোবা বানাই দিছে।এভাবে সে কথা বের করবে তা আসলেই সে বুঝতে পারেনি।এখন সে আরও বেশি করে জ্বালাতন করবে।রিনি আসিফকে ছাড়ছিলই না কিছুতে।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখে সে নিজেও কিছু বলছেনা আসিফকেও বলতে দিচ্ছেনা।সেসময় ঐশী পানি খেতে ডাইনিংয়ের কাছে এসেছিল।এসেই এই দৃশ্য দেখে জিভ কামড়ে অন্যদিকে ফিরে যায়।
আসিফ ঐশীকে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে রিনিকে বুক থেকে সরিয়ে পিছিয়ে গেলো, রিনি জোরজবরদস্তি করে আবারও ওকে ধরে ফেলে।সে তখনও জানেনা ঐশী ওখানে আছে।আসিফ লজ্জায় কি করবে আর ভেবে না পেয়ে রিনির কানে কানে বললো,’ঐশী’

এটা শুনে রিনি আসিফকে ছেড়ে এবার নিজে পিছিয়ে গেছে।

ঐশী বললো,’আমি কিছু দেখিনি ভাইয়া।তোমরা সহজ বোধ করো’

আসিফ হালকা কাশি দিয়ে এক প্রকার ছুটেই তার রুমে চলে গেছে।রিনি মাথা চুলকে সেও চলে গেলো পিছু পিছু।ঐশী হাসছে শুধু।এর আগে ওদের দুজনকে দেখে মনো হত পৃথিবীর দুই প্রান্ত।দুজনের সাথে দুজনের কোনো মিল নেই।আর আজ তার দৃশ্যই বদলে গেছে।
—–
বাপ্পি কাজ শেষ করে তটিনিকে নিয়ে কাছে ধারে ঘুরতে বের হয়।আজ তারা মার্কেটে এসেছে ফেরার পথে সবার জন্য গিফট নেবে বলে।বাপ্পি শুরুতে বকুল আপু আর বুসরার জন্য যা কেনার কিনে নিয়েছে কারণ তাদের পছন্দ নিয়ে তটিনি অবগত না।এরপরে তটিনির বাড়ির লোকদের জন্য সে নিজে পছন্দ করে নেয়।বাপ্পি বলেছে গিফট দিলে সবাইকে দিবে।তটিনিও তাই খুশিমনে সবার জন্য উপহার কিনে হাত ভর্তি করে ফেললেও তার নিজের জন্য কিছু কিনেনা।মোট কথা সে ভুলে গেছে নিজের জন্য কিছু কেনার কথা।
কিন্তু বাপ্পি ভোলেনি সে লুকিয়ে তটিনির জন্য একটা কিছু কিনেই ফেলেছে।তটিনি বুঝতেই পারেনি।এদিকে তটিনিও বাপ্পির জন্য কিছু কিনে নিয়েছে।দুজনে দুজনের অগোচরে গিফট নিয়েছে অথচ তারা কেউ এখনও জানেনা।
হোটেলে ফিরে ব্যাগগুলো রাখতেই তটিনি বললো সে ঘুরতে যাবে সমুদ্রে।শপিং করলে তো আর ঘোরাঘুরি হয়না।
বাপ্পি তটিনির কথামতন তাকে নিয়ে এই রাত আটটার সময় সমুদ্রে আসে।আগেকার মতন সে এমন একটা নির্জন জায়গায় এনেছে যেখানে দর্শনার্থী নেই বললেই চলে।বাপ্পি তো এটাই ভেবে এনেছিল।কিন্তু তার ভাবনায় ছেদ ঘটালো এক দল যুবক যুবতীর মহড়া।
দূরে ডেকোরেশন করে তাদের হুইহুল্লড় শোনা যাচ্ছিল বেশ।
বাপ্পি সেদিকে যেতে না চাইলেও তটিনি লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটলো।তারা ওখানে এসে দেখে এটা একটা প্রোপোজ পার্টি ছিল।যে কাপল এই আয়োজন করেছে তারা সবাইকে ইনবাইট করেছে।ওখানে বাপ্পি আর তটিনিকে দেখে তারা আমন্ত্রণ জানালো যেন তাদের সাথে যুক্ত হয়।লাউড মিউজিক চলছিল।ইংরেজী গান সাথে কেউ গিটার বাজাচ্ছে,গলা মেলাচ্ছে কেউ বা ভালবাসার মানুষটির হাত ধরে নাচছে।তবে তাদের সবাইকে দেখে বাপ্পির সন্দেহ হচ্ছিল যে ওরা হয়ত সবাই নেশাগ্রস্থ।
সে তটিনিকে সাবধান করতেই যাবে তার আগেই চেয়ে দেখে একটা মেয়ের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে সে খেয়ে নিয়েছে যেটা খাওয়ার।
বাপ্পি জানতো ওটাতে ভুলভাল কিছু মেশানো আছে কিন্তু সে তটিনিকে জানানোর আগেই তটিনি খেয়ে একদম সাবাড় করে ফেলেছে।
বাপ্পি ওর কাছে আসা ধরতেই দুটো ছেলে ওকে আটকে বললো ওদের সাথে নাচে তাল মেলাতে।তারা কিছুতেই বাপ্পিকে তটিনির কাছে আসতে দিচ্ছিল না।এদিকে তটিনি এক গ্লাস খেয়ে হেব্বি মজা পেয়ে এখন আরও খাচ্ছে।এই দেখে বাপ্পি আর ওখানে থাকেনি।ছুটে এসে ওকে আরও খাওয়া থেকে আটকালো।।
তটিনি ঠোঁট মুছে দাঁত কেলিয়ে বললো,’আমি জানি হয়ত মদ জাতীয় কিছু খেয়েছি।আগে থেকে বলে রাখি খবরদার আমায় টাচ করবেন না।আমি যদি ইচ্ছাও পোষণ করি তাও না।একদম না!’

বাপ্পি হাসলো ওর কথায়।তারপর ওর হাত ধরে ওখান থেকে চলে আসলো।তটিনি হাঁটছেনা ভালমতন,সে বারবার ঐ জায়গায় আবার ফিরতে চাইছে।কিন্তু বাপ্পি কিছুতেই তাকে ওদিকে আর যেতে দেবেনা।
হোটেলে আসার পর ঠিক সেটাই হলো যেটা তটিনি মানা করে দিছিলো।
তটিনি বাপ্পিকে ছাড়ছেনা।আকড়ে ধরে রেখেছে।চোখের সামনে আসিফের মুখটা বাপ্পির মুখের বদলে দেখছে সে।অনেকক্ষণ যাবত দেখে বললো,’তুমি আসিফ ভাইয়া?তাহলে ধরবোনা।তুমি তো আমার হাসবেন্ড নাহ”

এই বলে তটিনি পিছিয়ে গিয়ে বিছানায় ধপ করে বসলো তারপর বললো,’আমার বাপ্পি হাসবেন্ডকে পাঠাই দাও।তাকে ধরবো।তারে ধরলে গুনাহ হবেনা।তারে এনে দাও।’
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here