তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতা পর্ব -১৫+১৬

#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১৫)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

“জীবনের সব পা’প কাজকে ভুলে গিয়ে তোমার ভালোবাসায় নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নিয়েছিলাম। তুমি তো বলেছিলে তুমি র’ক্ত দেখতে পারো না , সেই তুমি আজ আমার বুকে ছু’রি চা’লি’য়ে আমাকে ক্ষ’ত-বি’ক্ষ’ত করে দিতে পারলে বউ…..”

তীব্র ওর বুক একহাতে চে’পে ধরে ক’রু’ন কন্ঠে নূরাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললো। তীব্রের এমন আ’কু’ল য’ন্ত্র’ণা ভেজা কন্ঠ নূরার কর্ণপাত হতেও ওর মাঝে এতোটুকুও পরিবর্তন হলো না। নূরা একদৃষ্টিতে তীব্রকে দেখছে , ওর দৃষ্টিতে নেই তীব্রের জন্য একটুকরোও ভালোবাসার অংশ। শুধু আছে একরাশ ঘৃ’ণা , রা’গ আর ক্ষো’ভ। নূরা নিজের জায়গায় স্থির থেকে কা’ট কা’ট কন্ঠে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বললো…

“খুব য’ন্ত্র’ণা অনুভব হচ্ছে তাই না মি.আবরার রহমান তীব্র!
আমারও খুব ক’ষ্ট হচ্ছে , কলিজা ছে’ড়া য’ন্ত্র’ণা অনুভব হচ্ছে প্রতিক্ষণে এই যে ঠিক এখানে (নিজের বুকের বাম পার্শ্বে আঙুল ঠেকিয়ে ইশারা করে)। যার জন্য তুমি দা’য়ী , তোমার এই শারিরীক বে’দ’না’র থেকে আমার মনের বে’দ’না গুলো বেশি য’ন্ত্র’ণা দা’য়’ক। পা’প করতে করতে নিজের জীবনের পা’পে’র কলসী সেই কবেই পূর্ণ করে ফেলেছো তুমি , তাই আজ তোমাকে ম’র’তে হবে আমার হাতেই তোমাকে ম’র’তে হবে। তোমার য’ন্ত্র’ণা দা’য়’ক মৃ’ত্যু নিজের চোখের সামনে দেখবো তবেই আমার মনের ভিতর সৃষ্টি হওয়া প্র’তি’শো’ধে’র আ’গু’ন নি’ভ’বে , তার আগে নয়।”

তীব্র অদ্ভুত চাহনি নিয়ে আছে নূরার দিকে , স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে পুরোপুরি। মুখ দিয়ে একটা টু শব্দ করার শ’ক্তি বা ইচ্ছে জাগাতে পারছে না তীব্র ওর মাঝে। নূরা বারকয়েক জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ছে’ড়ে আবারও তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বললো….

“মনে আছে তোমার! বিশিষ্ট ব্যবসায়ী/শিল্পপতী মি.জাবেদ ইসলামের কথা? আমি ওনার বড় মেয়ে নামিয়া ইসলাম নূরা। তোমার জন্য আমি আমার সবথেকে প্রিয় বাবা আর ছোট বোনকে হারিয়েছে সারাজীবন এর জন্য। তুমি তো অন্যের উপর জু’লু’ম খাটিয়ে তাকে নিঃস্ব করে দিতে পারলেই ক্ষা’ন্ত হও। কিন্তু নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পর তাদের কি অবস্থা হতে পারে সেটা কখনও চি’ন্তা ও করো না।

আমার বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ছিলো তার কোম্পানি, আমার ছোট বোনকে গু’লি বি’দ্ধ করে আমার বাবার অ’স’হা’য়’ত্বে’র সুযোগ নিয়ে সেই ফসল তুমি ছি’নি’য়ে নিয়েছিলে। উদারতা দেখাতে আমার বোনকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলে কিন্তু পরে আর খোজ নিয়েছিলে ঐ ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটি আদেও বেঁ’চে আছে কিনা! হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পূর্বেই ওর ছোট্ট দেহ থেকে ওর আ’ত্না’টি বহুদূরে চলে গিয়েছিলো।

কোম্পানি হা’রা’নো’র শো’ক , তোমার করা অ’প’মা’ন , আমার বোনের মৃ’ত্যু সবকিছু আমার বাবাকে পুরোপুরি গ্রা’স করে ফেলেছিলো। যা আর সহ্য করতে না পেরে নিজের ঘরের সেলিং ফ্যনের সাথে ঝু’লে শ্বা’স রু’দ্ধ করে নিজেকে শে’ষ করে দিয়েছিলেন। মৃ’ত্যু’র আগে আমার জন্য একটি চিঠি লিখে রেখে গিয়েছিলেন। যেখানে উল্লেখ ছিলো আমার বাবা-বোনের সাথে তোমার করা নি’র্ম’ম’তা’র কথা।
সেদিনই আমি নিজের কাছে দৃঢ় প্র’তি’ঙ্গা’ব’দ্ধ হয়েছিলাম তোমাকে ক’রু’ণ মৃ’ত্যু দিবো। আজ সেই দিন এসে গেছে।

যেই ছু’রি’টা তোমার বুক ছি’দ্র করেছে সেই ছু’রি’তে বি’ষ মিশ্রিত করে নিয়েছিলাম , এই বি’ষ এখন ধীরে ধীরে তোমার শরীরের প্রতিটি শি’রা’য়-শি’রা’য় ছড়িয়ে পড়বে একটু একটু করে তোমাকে য’ন্ত্র’ণা দিয়ে দিয়ে নিঃশ্বেস করে ফে’ল’বে। আজ তোমাকে সাহায্য করার জন্য একটা কা’ক-প’ক্ষী ও এগিয়ে আসবে না।একটু একটু করে নিজের মৃ’ত্যু’র শেষ প্রহর গুলো গুনতে থাকো তীব্র”

কথাগুলো বলে নূরা আর একমুহূর্তের জন্য সেখানে না দাড়িয়ে দ্রুত পায়ে স্থান ত্যগ করে। নূরার চলে যাওয়ার পরমুহূর্তেই তীব্র দু’চোখ বুঝে কয়েক ফোঁটা নোনাজল ফে’লে সেখানেই সে’ন্স হারায়৷

বর্তমান……
———–
আমার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমার মনে এখনও হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খা’চ্ছে , তীব্র তো বে’চে আছে , কিন্তু ওকে সেদিন কে বাঁচিয়ে ছিলো? এরপর নূরাকে কি খোঁজে নি তীব্র?

সিড়ি ভে’ঙে উপরে আসছে এমন পায়ের শব্দ কর্নপাত হতেই আমার ধ্য’ন ভা’ঙে দ্রুততার সাথে ডায়েরিটা আলমারির ভিতর রেখে চাবিটাও সঠিক স্থানে রেখে দেই। তারপর দু-হাত চোখ মুখ মুছে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিতেই তীব্র এসে দাঁড়িয়ে পরে দরজার সামনে। আমি তীব্রের দিকে লক্ষ্য না করে ওকে পাশ কা’টি’য়ে চলে যেতে নিলে তীব্র আমার হাত ধরে হ্য’চ’কা টা’ন দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। অ’স্ব’স্তিতে আমার সর্ব শরীর তি’র তি’র করে কা’প’ছে। তীব্রের স্পর্শ আমার শরীরে ঘৃ’ণা’র সৃষ্টি করছে।

ধু’ধু করা মরুভূমির মাঝে তীব্রের ম’রি’চী’কা’র রূপ ভালোবাসাকে ক্ষণিক পূর্বেও সত্য মনে করেছিলাম, কিন্তু বাস্তবে যেমন মরিচীকা শুধু চোখের বি’ভ্রা’ন্ত তেমনি তীব্রের আমার প্রতি থাকা সকল ভালোবাসাই ছিলো নিছক অভিনয়ের এক একটা অংশ। তীব্র যে তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তা আমি ওর দিকে না তাকিয়েও অনুভব করতে পারছি। তীব্র সি’ক্ত কন্ঠে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…

“কান্না করেছো কেন?”

তীব্র এমন প্রশ্ন যেনো আমার ভিতরটা কাঁপিয়ে তুললো মূহূর্তেই। শুকনো ঢো’ক গি’লে, জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে ঠোঁট দ্বয় ভিজিয়ে নিয়ে বললাম….

“ম’রি’চী’কা’র রূপ ভালোবাসাকে সত্য ভেবে এসেছিলাম এতোগুলো মাস ধরে তাই বে’হা’য়া চোখজোড়ার বা’ধ বারবার ভে’ঙে নোনাজল গড়িয়ে পরে”

আমার কথা শুনে তীব্র কিয়ৎক্ষন ওভাবেই আমাকে নিজের সন্নিকটে রেখে দাড়িয়ে রইলাম। আমার দৃষ্টি নিচের দিকেই নি’ব’দ্ধ। পরমুহূর্তে তীব্র আমাকে ছেড়ে দিয়ে কিছু না বলেই রুমটির (ডায়েরী রাখা রুম) ভিতর প্রবেশ করে ভিতর থেকে দরজা আ’ট’কে দেয়। আমি চোখ তুলে ব’ন্ধ দরজার দিকে একপলক দেখে পরপরই দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলাম।

আমার পা-জোড়া অনবরত কাঁপছে।ঠোঁট ভে’ঙে চোখ ফে’টে অনবরত কান্না বেড়িয়ে আসছে। বুকের ভিতরটা হু’হু করা দরুণ য’ন্ত্র’ণা অনুভব হচ্ছে। নিজের রুমে গিয়ে দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে অ’গো’ছা’লো পায়ে ওয়াশরুমের ভিতর প্রবেশ করে ঝ’র্ণা ছেড়ে তার নিচে বসে পড়লাম। হা’টু’র ভাজে মুখ লুকিয়ে হু’হু করে কাঁদতে শুরু করলাম। বে’হা’য়া মন বারবার বু’লি আওরাচ্ছে…

“আমাকে সত্যিই একটু ভালোবাসলে কি হতো তীব্রের?
আমার মন, অনূভুতি, ভালোবাসার সাথে এভাবে প্র’তা’র’ণা করে কি শান্তি পেলো তীব্র?”
——————————
বেশ কয়েক ঘন্টা পর ,
তীব্র ঐ রুম থেকে বের হয়ে নিজের অন্য রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে, তৃপ্তির রুম পেরিয়ে ওর রুমে যেতে হয়। তৃপ্তির রুমের দরজা খোলা দেখে বাহির থেকে ভিতরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তীব্র, কিন্তু তৃপ্তিকে রুমের ভিতর দেখতে পায় না। তীব্র ওর ভ্রু কিন্ঞ্চিত কুঁচকে নিয়ে রুমের ভিতর প্রবেশ করে দৃষ্টি ঘুরিয়ে চারদিকে ভালো ভাবে দেখে নেয় তৃপ্তি নেই। পরমুহূর্তে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে, রান্নাঘর থেকে শুরু করে ডায়নিং রুম কোথাও তৃপ্তিকে দেখতে পায় না। বাড়ির বাহিরে এসে বাগান ঘুরে দেখে এসেও তৃপ্তিকে দেখতে না পেয়ে তীব্রের চোখে-মুখে চি’ন্তা’র ভা’জ স্পষ্ট হয়।
মূল গেইটের কাছে গিয়ে দারোয়ানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তীব্র ক’র্ক’শ কন্ঠে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে…

“তৃপ্তি কি বাহিরে গিয়েছে?”

তীব্রের চোখ-মুখের অবস্থা অস্বাভাবিক দেখে দারোয়ানের ভিতরের ভ’য় স্পষ্ট হয়। কা’পা’ন্বি’ত কন্ঠে বলে..

“হ স্যার, ভাবীজান তো অনেক ক্ষ’ণ আগেই বাহিরে গেছেন। আমি কই যাইতাছেন জি’গা’ই’লে কইলো আপনে নাকি তারে তার বাড়ি যাওনের লা’ই’গা অনুমতি দিছেন। বিষয়টা নিশ্চিত হওনের লা’ই’গা আমি আপনারে কল করছিলাম কিন্তু আপনি ফোন উঠান নাই, আর ভাবীজান ও যাওয়ার লা’ই’গা তা’ড়া দিচ্ছিলেন জন্য আমি আর আ’ট’কা’ই নি।”

তৃপ্তি ওকে না বলে বাহিরে গিয়েছে শোনামাত্র তীব্রের রা’গে কপালের আর ঘা’ড়ে’র চিকন র’গ গুলো ফু’লে লা’লা’ভো বর্ণ ধারণ করেছে। তীব্র আর এক মূহূর্তের জন্য সেখানে না দাড়িয়ে বাড়ির ভিতর চলে যায়।
——————————-
ব’দ্ধ ঘরে চেয়ারের সাথে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছে একজন মধ্য বয়সের লোককে। কিয়ৎক্ষণ পর সে’ন্স ফিরতেই অ’ন্ধ’কা’রা’চ্ছ’ন্ন ঘরে নিজেকে এমন বাঁধা অবস্থায় দেখে লোকটি ছু’টা’র জন্য আ’প্রা’ণ চেষ্টা করেও বারবার ব্য’র্থ হচ্ছে। মুখ বা’ধা থাকায় ‘উমমম’ ‘উমম’ শব্দ ছাড়া ২য় কোনো শব্দ মুখ দিয়ে বের করতে সক্ষম হচ্ছে না লোকটি।

সেইমূহূর্তে দরজা খু’লে যায় এক’ছ’ট’কা আলো লোকটির চোখে-মুখে এসে পড়তেই চোখ ব’ন্ধ করে নেয় মূহূর্তেই। পরমুহূর্তে পিট পিট করে চোখ মেলে সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই কাওকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখতে পায় লোকটি। ভ’য়ে কপাল বে’য়ে ঘা’ম গড়িয়ে পড়ছে, বারকয়েক শুকনো ঢো’ক গি’লে নেয়। আ’গ’ন্তু’ক’টি ছেলে নাকি মেয়ে তা বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না ঐ মধ্যবয়সী লোকটি। আ’গ’ন্তু’ক’টি কে তা জানার আগ্রহে মধ্য বয়সের লোকটির মুখ দিয়ে ‘উমম’ ‘উমম’ শব্দের গ’তি আগের তুলনায় কয়েক গুণ বে’ড়ে গিয়েছে।

#চলবে…………#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১৬)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

অন্য একটি চেয়ার টেনে মধ্যবয়সী লোকটির সামনে বসে পরে আ’গ’ন্তু’ক’টি তার মাথায় উপর থাকা ক্য’পটি খুলে ফেলে। তারপর লোকটির মুখের কাপড়টি খুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে। লোকটির মাথার উপর ছোট্ট একটি লাইট জ্বলছে যা অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরটিতে ছোট্ট একটি বৃত্তের আকার নিয়ে সামান্য জায়গা আলোকিত করে রেখেছে। আ’গ’ন্তু’ক’টির মুখে আলো না পড়ায় লোকটি ওর মুখ দেখতে সক্ষম হচ্ছে না। কাপা কাপা কন্ঠে বলে…

“ক কে আ আপ আপনি! আ আমাকে এ এভাবে ক কি কি’ড’ন্য’প করে এনে চেয়ারের সাথে বে’ধে রেখেছেন কেন? আমার দো’ষ কোথায়?”

আ’গ’ন্তু’ক’টি শীতল কন্ঠে ধা’রা’লো ছু’রি’র ন্যয় ধা’চ বসিয়ে মধ্য বয়সের লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে..

“তোদের মতো পা’পী’দে’র এই ধরনীর বুক থেকে চিরতরে মু’ছে ফেলার জন্য এসেছি আমি। তোদের জন্য আ’জ’রা’ই’ল আমি। এখন বলে , নূরা কোথায়? কোথায় গু’ম করে রেখেছিস তোরা ওকে? আশ্রম থেকে কয়জন বাচ্চাকে পা’চা’র’কা’রী’দের হাতে তুলে দিয়েছিস? কারা কারা আছে এই পা’চা’র কার্যের সাথে লিপ্ত? বল….”

আ’গ’ন্তু’ক’টি মুখে এহেনু প্রশ্নগুলো শুনামাত্র মধ্য বয়সের লোকটির সর্ব শরীর ঘা’ম’তে শুরু করেছে। কা’পা’ন্বি’ত কন্ঠে বলে..

“আ আ আমি ক কি কিছু জ জানি না, আ আমাকে ছ ছেড়ে দিন। আ আমি ন নিরাপরাধ।”

আ’গ’ন্তু’ক’টি শব্দ করে হেসে উঠে , ওর হাসির শব্দ দেওয়ালের চারপাশে বে’জে প্রতিধ্বনি তুলছে যা সম্পূর্ণ রুমটিকে কা’পি’য়ে তুলছে। আ’গ’ন্তু’ক’টি বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মাঝ বয়সের লোকটির চুলগুলো নিজের হাতে মু’ষ্ঠি’ব’দ্ধ করে নিয়ে রা’গে হি’স’হি’সি’য়ে বলে…..

“তুই কতো বড় পা’পি , দো’ষী সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। ভালোয় ভালোয় বলে দে নূরা কোথায় আর এই পা’চা’র কার্যের সাথে আর কোন কোন পা’পী’রা যুক্ত আছে। নয়তো নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই তোর এমন ক’রু’ণ হা’ল করবো যে তোর পরিবাররাও তোরে দেখে আ’ই’ডে’ন্টি’ফা’ই করতে সক্ষম হবে না। মাটির নিচে প’চে যাবে তোর এই পা’পে ভরা সম্পূর্ণ শরীর।”

————————–
রহমান মন্ঞ্জিল এর মূল গেইটে এসে দাঁড়াতেই দারোয়ান ভাই আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন…

“ভাবীজান আপনে তো বলছিলেন স্যার আপনারে আপনার বাড়ি যাওনের লা’ই’গা অনুমতি দিয়েছিলেন আর তাই আমি বিশ্বাস করে আপনারে যাইতে দিয়েছিলাম। স্যার তো ঘন্টা খানেক আগে আমারে আইসা আপনার কথা জিগাইলো , আপনে তারে না বইলাই বাহিরে গিয়েছিলেন স্যাররে দেইখা মনে হইলো ভিষণ রা’ই’গা আছেন আপনার উপর। তাড়াতাড়ি স্যারের কাছে যান নয়তো খা’রা’প কিছু হইয়া যাইবো।”

দারোয়ান ভাইয়ের কথাগুলো আমার মধ্যে তেমন একটা ভি’তী’র সৃষ্টি করতে পারলো না। কারণ এই তীব্র নামক লোকটিকে আমি শুধু ঘৃ’ণা’ই করি তাই ওনাকে ভ’য় পাওয়ার কোনো মানে হয় না৷ আমি দারোয়ান ভাইয়ের দিকে একপলক দেখে স্মিত হাসি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করি। বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই দেখি যেমন ভাবে সব রেখে গিয়েছিলাম তেমনই আছে , রাগ হলে তবে তীব্রের ভা’ঙ-চো’ড় করার মতো খা’রা’প অভ্যাস নেই৷ পারে তো শুধু নি’রি’হ , নি’রা’প’রা’ধ মানুষদের খু’ন করতে। ধীরপায়ে একটা একটা করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছি। আজ অনেক ধ’ক’ল গিয়েছে , এই মূহূর্তে আমার একটু বি’শ্রা’ম করা ভিষণ প্রয়োজন। তীব্রের জন্য সেই সুযোগ হবে কি না আল্লাহ ভালো জানে।

ডায়েরি রাখা ঘরটি পেরিয়ে যেতে নিতেই ভিতর থেকে তীব্রের ক’র্ক’শ কন্ঠস্বর ভেসে আসে , আমার পা থে’মে যায় সেখানেই। দু’চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে বারকয়েক নিঃশ্বাস ফেললাম। কিয়ৎক্ষণ পর তীব্র আমার সামনে দাঁড়ালেন , আমার দৃষ্টি নিচের দিকেই নিবদ্ধ করে রেখেছি আমি। তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমাকে দেখছেন , ওর এই দৃষ্টি আমার ভিতরটা আরো গভীর ভাবে পু’ড়ি’য়ে দিচ্ছে যেনো। চোখের পলকেই তীব্র আমার দু’হাত নিজের এক হাতের মুঠোয় মু’ষ্টি’ব’দ্ধ করে নিয়ে আমার পিঠ দেওয়ালের সাথে শ’ক্ত ভাবে চে’পে ধরে রা’গে হি’স’হি’সি’য়ে বললেন…

“কার অনুমতি নিয়ে বাড়ির বাহিরে পা রেখেছিলি তুই?”

শ’ক্ত ভাবে চে’পে ধরায় দু’হাতের ক’ব্জি’তে ভিষণ ব্য’থা করছে , ব্য’থা’য় চোখ-মুখ খি’চে বন্ধ করে নিলাম। তীব্র ওর অন্য হাতে আমার মুখ চে’পে ধরে আবারও বললেন…

“বলছিস না কেন কিছু? খুব সা’হ’স বে’ড়ে গিয়েছে তোর তাই না?”

দাঁতের সাথে দা’ত চে’পে তীব্রের দেওয়া প্রতিটি আ’ঘা’ত সহ্য করছি। তীব্র আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে আমার মাথার বাম পার্শ্বের দেওয়ালে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ঘু’ষি প্রয়োগ করলেন , ওনার এহেনু কাজে আমার সর্ব শরীর কে’পে উঠলো। এতোসময় ভ’য় না করলেও ওনার এমন কাজের পর ভ’য় করছে। আমি পিট পিট করে চোখ মেলে ওনার হাতের দিকে লক্ষ্য করতেই আমার কলিজা কেঁ’পে উঠলো যেনো। ঘু’ষি প্রয়োগ এর ফলে র’ক্ত ঝরছে ওনার হাত থেকে৷ আমি চ’ট করে ওনার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ওনার লা’লা’ভ মুখশ্রী দেখতে পাই। একবার ওনার মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতো আরেকবার ওনার র’ক্ত ঝ’র’তে থাকা হাতের দিকে৷ আমি কা’পা কা’পা কন্ঠে বলি…

“আ আপ আপনার হ হা হাত থ থেকে ত তো র র’ক্ত ঝ ঝড়ছে”

তীব্র এতোটাই রে’গে ছিলেন যে উনার ম’স্তি’ষ্ক থেকে বে’ড়ি’য়ে গিয়েছিলো আমি র’ক্ত দেখতে পারি না। আমার ব্লা’ড ফো’বি’য়া নামক স’ম’স্যা’টি আছে। তীব্র ওনার র’ক্ত ঝরতে থাকা হাতটি আমার মুখের সামনে এনে ধ’রে আর বলে…

“হুম দে’খ , ভালো করে দে’খ র’ক্ত তো ঝরছেই এর জন্য শুধু তু…..

তীব্র পুরো কথা শে’ষ করতে পারলেন না তার আগে আমার শরীর আমাকে সা’য় না জানানোতে আমি সে’ন্স হা’রি’য়ে ফেলি।
———————-
পিটপিট করে চোখ মেলে নিজের অবস্থান বুঝতে চেষ্টা করি। আমি তীব্রের রুমে ওনার বিছানায় আমাকে শুয়ে রাখা হয়েছে। দু’হাতে মাথা চে’পে ধরে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসি। হাতের বাম পার্শ্বে লক্ষ্য করতেই দেখি তীব্র র’কিং চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বু’ঝে আছে। ওনাকে দেখে আমার সেন্স হা’রা’নো’র পূর্বের ঘ’ট’না মনে পড়ে। চ’ট করে ওনার হাতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। কোনো ব্য’ন্ডে’জ করে নি ওভাবেই রেখেছে , ক্ষ’ত স্থানের র’ক্ত জ’মা’ট বেধে গিয়েছে।

ওনার ফর্সা হাতের চারটে আঙুল র’ক্তে লাল হয়ে আছে। বুকের বাম পার্শ্বে চি’ন চি’নে ব্য’থা অনুভব হলো। কিছুসময়ের জন্য যেনো ভু’লে গেলাম ওনার প্রতি থাকা আমার সব ভালোবাসাগুলো ঘৃ’ণা’র চাদরে চা’পা দিয়ে রেখেছিলাম। বিছানা ছেড়ে নেমে ওয়ার ড্র’প এর উপর থেকে ফাস্ট এ’ই’ড এর বক্সটা হাতে নিয়ে তীব্রের সন্নিকটে এসে মেঝেতে বসে পড়ি।

ওনার হাতটা আলতো ভাবে স্পর্শ করতেই আমার মেরুদণ্ড শি’র’ডা’রা বেয়ে শি’হ’র’ণের বাতাস বয়ে যায়৷ চোখ দু’টো নোনা জলের পুকুরে পরিণত হয়ে যায় মূহূর্তেই। ফাস্ট এইড বক্সের ভিতর থেকে তুলো বের করে হে’ক্সি’স’ল লাগিয়ে ওনার ক্ষ’ত স্থানে রাখতেই উনি ‘আহহহ’ বলে কে’পে উঠেন , দ্রুত চোখ মেলে তাকান , হাত সড়িয়ে নিতে ধরলে আমি শীতল কন্ঠে বলি….

“বেশি ন’ড়া চ’ড়া করলে সম্পূর্ণ হে’ক্সি’স’ল আপনার এই ক্ষ’ত স্থানের উপর ঢে’লে দিবো বলে দিলাম”

আমি আড়দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলাম তীব্র আমার এমন কথায় চো’খের আকৃতির স্বাভাবিক এর তুলনায় বেশ বড় করে ফেলেছেন। আমি ঠোঁট চে’পে হাসি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলাম। পরমুহূর্তে ওনার হাত পরিষ্কার করাতে মনোনিবেশ করলাম। জ্ব’ল’ন যেনো কম অনুভব হয় তাই ‘ফুউউ’ দিচ্ছি আর ক্ষ’ত স্থান খুব যত্নের সাথে পরিষ্কার করছি।

পরিষ্কার করা শে’ষ হলে ব্য’ন্ডে’জ করে দিলাম। তারপর একটা ব্য’থা কমে যাওয়ার ট্য’ব’লে’ট বের করলাম , বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ওনার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাস আর ঔষধটি এগিয়ে দিলাম। উনি না’কো’চ স্বরে বললেন…

“আমার মতো মা’ফি’য়া দের জন্য কা’টা ছে’ড়া’র য’ন্ত্র’ণা ভিষণ স্বাভাবিক বিষয়। ঔষধ এর প্রয়োজন নেই।”

আমি স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম…
“ভালোভাবে যদি খে’তে না চান , তবে জো’ড় প্রয়োগ করে হলেও ঔষধ খা’ই’য়ে ছাড়বো আপনাকে”

আমার কথায় তীব্র শব্দ করে হাসতে শুরু করলেন , সেই সুযোগে আমি ঔষধটা ওনার মুখে পু’ড়ে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে উনি ‘থু’ করে ফেলতে চাইলে আমি রা’গা’ন্বি’ত কন্ঠে বললাম…

“গি’লে ফেলুন ঔষধটি”

তীব্র পানি ছাড়াই ঔষধটি গি’লে ফেলে। আমি পানির গ্লাসটা ওনার হাতে ধরিয়ে দিলাম। উনি এক নিঃশ্বাসে সবটুকু পানি খেয়ে নিলেন। আমি গ্লাসটি ওনার হাত থেকে নিয়ে আবারও বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে দিলাম। তারপর কোনো কথা না বলে ওনাকে পাশ কা’টি’য়ে চলে যেতে নিলে উনি বলে উঠলেন…

“আমাকে না জানিয়ে বাহিরে কোথায় গিয়েছিলে বললে না তো”

আমি সেভাবেই দাঁড়িয়ে ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন…

“চোখের পর্দা সড়িয়ে ফে’লু’ন, সবসময় চোখের দেখা জিনিসগুলো সত্যি হয় না।”

তারপর তীব্রকে আর ২য় কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি ওর রুম ত্য’গ করি।

#চলবে…………..

(😳কে ঐ আ’গ’ন্তু’ক’টি বলুন তো পাঠকমহল!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here