#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পর্বঃ০৯
অন্ধকার চারদিকে কিন্তু পূর্ণিমা চাঁদের উজ্জ্বল আলোয় চারদিকে আলোকিত।মৃদ্যু মন্দ বাতাসে ভেসে আসছে শিউলি ফুলের তীব্র ঘ্রাণ।নদীতে উত্তাল ঢেউ আর পানির অদ্ভুত এক মায়াময় শব্দ।এরকম একটা মোহময় পরিবেশে যদি নিজের প্রিয়তমা সাথে থাকে এর থেকে আনন্দের মুহূর্ত আর কিইবা হতে পারে।নদীর পাড়ে ঘাসের উপর সুয়ে আছে ইয়াসিবা আর ওকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে দেখছে আদিয়াত।পূর্ণিমার চাঁদের আলোতে মেয়েটাকে দেখতে চমৎকার সুন্দর দেখাচ্ছে।স্নিগ্ধতায় ঘেরা একটি মায়াভরা মুখ।অনেক রাত হওয়ায় আদিয়াত সোহেব আর জাহিনকে পাঠিয়ে দিয়েছে গাড়ি দিয়ে।তারপর বলেছে যেন ওর ড্রাইভারকে গাড়ি নিয়ে এখানে আসতে।প্রথমে ওরা যেতে চাইছিলো না আদিয়াত জোড় করে পাঠিয়ে দিয়ে।আদিয়াত আহির সাথে একান্ত সময় কাটাতে চায়।অনেক বোঝাপড়া বাকি ওদের মাজে।এরই মাজে আদিয়াত দেখলো আহি আস্তে আস্তে চোখ খুলছে।আদিয়াত দ্রুত সরে বসলো আহি’র কাছ থেকে।
চোখজোড়া আস্তে আস্তে খুলে তাকায় আহি।মাথাটা ভার ভার লাগছে তার।দুহাতে মাথা চেপে ধরে উঠে বসে আহি।চোখ বন্ধ করেই খানিক স্থির হয়ে বসে রইলো।তারপর আস্তে আস্তে ওর সাথে কি হয়েছে সব মনে পড়তেই চমকে উঠে আহি।চোখ খুলে দ্রুত এদিক সেদিক তাকাতেই আদিয়াতকে দেখে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থেকেই ছিটকে দূরে সরে যায় আহি।আদিয়াত আহি’র সবকিছুই দেখছে শান্তভাবে।আহি যে ওকে দেখে কতোটা ডেস্পারেট হয়ে পরেছে তা দেখছে সে।এমনে যতো যাই হোক আদিয়াতকে প্রচুর ভয় পায় আহি।প্রচুর মানে একেবারে হাড় কাঁপানো ভয়।আহি ভয়ে ভয়ে একটু একটু করে পিছিয়ে যেতে যেতে হুট করে উঠে দৌড় দেয় ও কোথায় যাচ্ছে? কি হবে ওর সাথে কোন কিছুই জানা নেই ওর?কিন্তু বেশি দূর যেতে পারলো না।তার আগেই একজোড়া হাত তাকে হেঁচকা টানে বুকের মাঝে চেপে ধরে। হ্যা আদিয়াত! আহিকে দৌড়ে যেতে দেখে আদিয়াত ওর পিছনে পিছনে ছুটে যায়।হাজারো হোক একজন ছেলে মানুষের সাথে কি আর একটা মেয়ে দৌড়ে পারে?উহুঁ! কখনোই না।
আদিয়াত আহির একহাত পিছনে মুরিয়ে আহির পিঠের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে আহিকে একেবারে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।আরেক হাতে আহির মাথার পিছনের চুলগুলো শক্ত করে চেপে ধরে আহি’র মুখটা একেবারে আদিয়াতের মুখ বরাবর আনলো।দুজনের মাজে মাত্র দুই ইঞ্চি দূরুত্ব। আদিয়াত রক্ত লাল চোখ জোড়া দেখে আহি চোখ বন্ধ করে ফেলে।এই ভয়ানক চোখজোড়ার দিকে তাকানো সম্ভব না তার।সাথে আবার আদিয়াত ওর হাতে আর চুলে এতো জোড়ে চেপে ধরেছে যে ব্যাথায় আহি’র জান বের হয়ে যাবার উপক্রম।তবুও আহি কাঁদবে না কিছুতেই কাঁদবে না।এখন সে আগের আহি নেই যে অল্পতেই ভ্যা করে কেঁদে দেয়।আদিয়াত নিজের রাগ কিছুতেই সংযত করে রাখতে পারছে না।রাগে ওর পুরো শরীর কাঁপছে।কপালের রগগুলোও ফুলে উঠে নীল বর্ণ ধারন করেছে।আদিয়াত শীতল কন্ঠেই বলে উঠলো, ” কেমন আছিস আহিয়ানা?”
ব্যাস এইটুকুই যথেষ্ট ছিলো আহি’র জন্যে।আদিয়াতের এই শীতল কন্ঠস্বর যে তার জন্যে কতোটা ভয়ানক শুধু সেই জানে।আদিয়াত প্রলয় এনে ফেলবে।আহি পারলো না আর নিজেকে ধরে রাখতে ভয়ে ওর হিতাহিত জ্ঞান ভুলে গিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো।আহি কে কাঁদতে দেখে আদিয়াত বললো, ” বাহ গেট-আপ, স্বভাব, সব চেঞ্জ করে ফেলেছিস।কিন্তু আমার সামনেই সেই আগের মতোই কাঁদছিস।আমাকে কি এখনো আগের মতো ভয় পাস?না-কি নিজেকে যেভাবে বদলে নিয়েছিস সেইভাবে আমাকেও আর ভয় পাস না?”
আদিয়াতের প্রতিটা কথায় আহি শরীর ভয়ে জমে যাচ্ছে।হৃৎপিন্ডটা বুজি শব্দ করে ছুটে চলা এই বন্ধ করে দিলো।শরীরের রক্ত চলাচল বুজি থেমে গেলো।আদিয়াত আহি’র চুল গুলো আর একটু জোড়ে চেপে ধরে আহি ব্যাথায় পারে না চিৎকার করে কাঁদতে।তবুও মুখ দিয়ে টু শব্ধ পর্যন্ত বের করছে না শুধু ওর চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে।আদিয়াত বলে, ” কিরে ভয় পাস না আমায়?বলছিস না কেন?”
আহি চুপ করেই আছে একটা কথাও বলছে না সে।আহির চুপ থাকাটাই আদিয়াতের রাগ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।আদিয়াত এইবার আহি’র চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে শক্ত হাতে ওর গাল চেপে ধরলো।হুংকার দিয়ে বললো, ” তোর সাহস কি করে হলো?বল! কিরে হলো?তুই আমার আহিয়ানা কে এইভাবে বদলে দিলি কিভাবে?”
আহিয়ানাকে আবারও চুপ থাকতে দেখে আদিয়াত এইবার আহিয়ানাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।আহি মুখ থুবড়ে পরে ঘাসের উপর।এইবার আহি শব্দ করে কেঁদে উঠলো।আদিয়াত আহির পাশে বসে আবারও ওর ঘাড়ের পিছনে চাপ দিয়ে ধরে আহিও আদিয়াতের হাতের উপর হাত রাখে ব্যাথা সয্য করতে না পেরে।আদিয়াত চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ফেললো তারপর হুট করে আহিকে বুকের মাজে চেপে ধরলো।আহি নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করেও পারছে না।আদিয়াত ওকে শক্ত করে ধরে রেখেই বললো, ” কেন করলি?তুই এমন ছিলি না? আমার আহিয়ানাকে ফিরিয়ে দে নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।আমার রাগ সম্পর্কে তুই ভালোই জানিস!তোর এই সুন্দর চুলগুলো অন্য পুরুষদের দেখিয়ে বেড়াচ্ছিস।লম্বা চুলগুলো নিউ হেয়ার কাট দিয়েছিস, কালার করেছিস,সেলোয়ার কামিজ রেখে এইসব টপ্স, জিন্স পড়ছিস,তোর ওই নরম গোলাপি ঠোঁটজোড়ায় মদ আর সিগারেটের ছোঁয়া দিচ্ছিস প্রতিনিয়ত।বল?কেন করছিস এমন?”
আবারও আহিকে নিজের বুক থেকে উঠিয়ে ওর বাহু ধরে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো আদিয়াত, ” বল উত্তর দে।কথা বল আহিয়ানা নাহলে অনেক খারাপ হয়ে যাবে।”
আহি আর চুপ থাকলো না অনেক হয়েছে।আর না। আর কতো সয্য করতে সে।ও কি মানুষ না? জানোয়ার পেয়েছে সবাই ওকে।যার যা মন চায় তাই করবে ওর সাথে।আর ও কি সব মুখ বুজে সয্য করে নিবে?উহুঁ কখনোই না।আহি ঝটকা মেরে আদিয়াতের হাত সিরিয়ে দিয়ে দ্রুত উঠে দাড়ালো।আদিয়াত নিজেও বসা থেকে উঠা দাড়ালো আহি’র মুখোমুখি।আহি দুহাতে চোখের জল মুছে শক্ত গলায় বললো, ” এক্সকিউজ মি! আপনি কে?আর আমি যা মন চায় তাই করবো?আপনে এক্সপ্লেনেশন কেন দিবো?আমি আমার চুল দেখাবো,সিগারেট, মদ খাবো।ট্প্স আর জিন্স কেন দরকার পড়লো তার থেকেও খারাপ পোষাক পড়ে ছেলেদের সামনে যাবো।আসলে কি বলুন ছেলেরা বলে আমাকে এইসব ড্রেসে না-কি প্রচন্ড।…..”
চু থেকে আহি আবার বলে, ” বুজতেই পারছেন আমি কি বললাম।”
আহি এতোক্ষন আদিয়াতের দিকে তাকায় নি।তাকালে হয়তো এতোগুলো কথা বলতো না।ও জানে না যে ও এইসব কথা বলে কতো বড় একটা ভুল করেছে। আদিয়াত রাগে তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।এমনিতেই সে রেগে ছিলো আর আহির কথাগুলো আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে।আদিয়াত গর্জন করে উঠলো আহি’র নাম ধরে। আহি চমকে উঠে আদিয়াতের দিকে তাকাতেই। আদিয়াত ধপ করে ওকে কোলে তুলে নেয়।আহি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
” আরে কি ক..করছেন?ছা..ছাড়ুন আমায়।”
আদিয়াত শক্ত মুখ করেই আহিকে নিয়ে রাস্তার দিকে হাটা ধরলো আহি ওকে কিল ঘুশি দিয়ে যাচ্ছে তাতে ওর ভ্রুক্ষেপ নেই।আদিয়াত রাস্তায় ওর গাড়ির কাছে এসে দাড়ালো।ড্রাইভার অনেক আগেই গাড়ি নিয়ে এসেছে।আদিয়াত ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করেই শক্ত মুখ বলে, ” এখান থেকে ১০ মাইল দূরে গিয়ে দাঁড়াবে।আমি ফোন না দেওয়া পর্যন্ত আসবে না।এখন আপাততো গাড়ির পিছনের দরজাটা খুলে দেও।”
ড্রাইভার আদিয়াতের লাল চেহারা দেখেই ভয়ে শেষ।দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে ড্রাইভার দৌড়।ড্রাইভার যেতেই আদিয়াত আহিকে গাড়ির মাজে ছুড়ে মারে।এভাবে ছুড়ে মারায় আহি ব্যাথায় ‘ আহ! ‘ করে উঠে।আদিয়াত নিজে গাড়িতে উঠে বসে।তারপর গায়ের শার্ট খুলে ফেলে।শার্টের নিচে টি-শার্ট আছে আদিয়াতের।আদিয়াতকে শার্ট খুলতে দেখেই আহি ভয় পেয়ে যায়।আদিয়াতকে ধাক্কা দিয়ে অপরপাশের দরজা খুলে বের হতে নিলেই আদিয়াত ওকে জোড়ে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।আহি কিছু বলতে নিবে তার আগেই আদিয়াত আহি’র পরিহিত লং-শার্ট টা একটানে ছিড়ে ফেলে।আহি ভয় পেয়ে চিৎকার করে সরে যেতে নিলেই আদিয়াত আবার ওকে নিজের সাথে চেপে ধরে। আহির পড়নে এখন ছোট গেঞ্জি কিন্তু ওর অন্তর্বাস পরা তা পুরো বুজা যাচ্ছে।আহি লজ্জায় ভয়ে শেষ।চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, ” ছাড়ুন আমায়।এনিবডি হেল্প মি প্লিজ।হেল্প মি!”
আদিয়াত আহি’র গাল চেপে ধরে আছে রাগী কন্ঠে বলে, ” কেউ নেই এখানে আর এই গাড়ি সাউন্ড প্রুভ বাহিরে কোন সাউন্ড যাবে না।আর তোর সমস্যা কিসে?তুই না ছেলেদের নিজের শরীর দেখিয়ে বেড়াতে ভালোলাগে।তো আমার বেলায় কিসের সমস্যা? ”
কথাটা বলতে দেরি আদিয়াতের দাতের ছাপ আহি’র ঘাড়ে পড়তে দেরি নেই।এতো জোড়ে কামড়ে ধরেছে যে মনে হচ্ছে মাংস তুলে ফেলবে আদিয়াত।আহি জোড়ে চিৎকার করে উঠলো।আদিয়াত এইবার আহিকে ছেড়ে দিয়ে আহির দিকে তাকালো।আহি চোখ বন্ধ করে কাঁদছে,পুরো মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।ঘাড়ের দিকে তাকালো আদিয়াত দেখে ঘাড় থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত বের হচ্ছে।আদিয়াত ধাক্কা দিয়ে আহিকে ফেলে দিলো আহি ব্যাক সিটে সুয়ে ঘাড়ে হাত কাঁদতে লাগলো।
আদিয়াত ব্যাক সিটের দরজা খুলে বের হয়ে গাড়ির সামনের দরজা খুলে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আবারো গাড়ির পিছনে চলে আসলো।আদিয়াত গাড়িতে উঠে গিয়ে বসে আহির হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলো।আহি এখনো ঘাড়ে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে কাঁদছে।আদিয়াত শক্ত হাতে আহির হাতটা সরিয়ে দিলো ওর ঘাড় থেকে।তারপর তুলোতে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে নিয়ে ঘাড়ের ব্যাথা জায়গায় জোড়ে চেপে ধরলো।আহি আবারো চিৎকার করলো।ঘাড়টা জ্বলে যাচ্ছে তার।আদিয়াত দাঁতে দাঁত চিপে বললো,
” জ্বলছে?আমারও জ্বলছে তোর থেকে দ্বিগুন পরিমান বেশি জ্বলছে আমার।ভীতরটা লাভার ন্যায় ধাউ ধাউ করছে।ইচ্ছে করছে তোকে এই আগুনে পুরিয়ে মেরে ফেলি।আমাকে যতোটা পুরিয়েছিস তার থেকে দ্বিগুন তেজে তোকে পুরতে হবে।আমার ভালোবাসার আগুনে তোকে জ্বলতে হবে প্রতিনিয়ত।”
আহি’র ঘাড়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে নিজের শার্টটা আহিকে জোড় করে পড়িয়ে দিলো।তারপর সিটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে রইলো আদিয়াত।আর আহি আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছে।
#চলবে__________
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।