ঘুমের মধ্যে কেউ যেন নিহীনের গালে হাত বুলাচ্ছে,তারপর ঠোঁটে আলতো করে হাত ছুয়ালো, কোন অপরিচিত স্পর্শ,ঘুম ভেঙে যাই নিহীনের।ঘরের লাইট তো আর ঘরে তো কেউ নেই।তাহলে নিহীনের এমন মনে হলো কেন??
সত্যিই কি কেউ এসেছিলো নাকি সে ভুল ভাবছে?এসব ভাবছে বসে বসে তখনই নিহীনের মা রেহেনা রহমান,ফুফু মহিমা করিম তার ঘরে ঢোকে।নিহীনকে এখনো বিছানায় দেখে মহিমা বেগম বকাবকি শুরু করে দেয়।
–বলি হারি নিহী এতো বেলা পর্যন্ত কোন সভ্য বাড়ির মেয়ে ঘুমাই?আল্লাহ রহমতে বাড়ির কোন কাজই তো করিস না,সারাদিন ঘুম আর ঘুরে বেড়ানো।বাড়িতে কি হলো না হলো তার ও খবর রাখিস না।আমরা মরে গেলেও তো তোর…..
(ফুফুকে থামিয়ে দেয় নিহীন)
–উফফ!সকাল সকাল তোমার ভাঙা রেডিও চালু করো না তো।সারাদিন বকতেই থাকো।তোমার এই বকার জন্যই মেইবি ফুফার কান কালা হয়ে গেছে।
নিহীন আর এক মুহুর্তও দাড়াই না,কারন সে জানে তার ফুফু এখনোই কান্না শুরু করবে তারপর কেঁদে কেঁদে নিহীনের মার সাথে নিহীনের কথা বলবে,বাড়ির সবার কাছে নালিশ দেবে।এটা তার ফুফুর স্বভাব।সে ব্রাশ করতে করতে বাইরে আসে।বাইরে সবাই বসে আছে,সে যেয়ে বাবার কোলের ওপর বসে পড়ে।রহমান সাহেব ও মেয়ের গালে একটা চুমু খাই।
–বাবা কি গল্প করছো তোমরা??
–নিহী বুড়ি তোর আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে রে(নিহীনের দাদি উত্তর দেই)
–কিহ??আপুর বিয়ে??
–হ্যা রে মা,(নিহীনের বাবা হাসিমুখে বলে)
নিহীন তো খুশিতে লাফানো শুরু করে।ফাইনালি তার আপুর বিয়ে।কতো প্লান করে রেখেছে সে আপুর বিয়ে নিয়ে।
গল্পের নায়িকা নিহীন রুবাইয়াত।মিনহাজুর রহমান আর রেহেনা রহমানের ছোট মেয়ে।ভাই নিশান রহমান সবার বড়,তারপরই বোন নিলুফা আর সবার ছোট নিহীন।অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী। মা-বাবা,ভাই-ভাবি,বোন,দাদী আর ফুফু,ফুফাকে নিয়েই নিহীনের পরিবার।নিহীনের বড় বোনের বিয়ের কথক চলছিলো,আজ সেটা ফাইনাল হয়েছে।তাই সে আনন্দে নাচানাচি করছে।
সবাই নিহীনের পাগলামিতে হাসছে,কিন্তু ঘর থেকে নিহীনের ফুফু কাঁদতে কাঁদতে বের হয়।সবাই বুঝে গেছে নিহীন আজ আবার কিছু বলেছে।নিহীনের দাদি তার মেয়েকে বকে দেই।
–আহ মহিমা সবসময় তোর এই কান্নাকাটি ভালো লাগে না তো।আজ কতো আনন্দের দিন আর তুই….(মায়ের কথা শেষ করতে দেই না।মুখ ঘুরিয়ে আরী জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে যাই।পিছু পিছু তার স্বামী ও যাই।বেচারা অনেক ভালো মানুষ তবে কানে একটু কম শোনে তাই মহিমা বেগম তাকে উঠতে বসতে কথা শুনাই)
–অনেক বেলা হয়েছে নিহী।যা খেয়ে নে..
মায়ের কথা শুনে নিহীন ঘড়ির দিকে তাকাই।বেলা ১২টা বাজে।সে ডাইনিং এ যেয়ে খাবার খেয়ে আপুর ঘরে যাই।আপুর সাথে তার এখনো দেখা হয়নি।আপুর ঘরে যেতেই দেখে আপু ফোনে কথা বলছে,,
নিহীন পিছন থেকে ফোন কেড়ে নেই,তার আপু ইশারাই ফোন চাই কিন্তু সে দেই না।
–হ্যালো,হ্যালো…(অপর পাশ থেকে)
–জানু,আই মিস ইউ..
–সরি কে?
–তোমার বউ।এই একটা চুমু দাও না গো….
–মানে??কি সব বলছো?
–কিসের মানে?বউ রে চুমু দিবা এতে আবার কিসের মানে??
(–নিহীন ফোনটা দে আর কি যা তা বলছিস ওটা তো,
–আপু তুই থাম তো)
অপর পাশের ব্যক্তিটি বুঝতে পারে এটা কে,সে মুচকি হাসে)
–চুমু নিবা তুমি?ওকে উম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মাম্মাম্মাম্মাম্মাহহহহহহহহ)
নিলুফা এবার ফোন কেড়ে নেই।
–ভাইয়া তোমার সাথে পরে কথা বলছি আর নিহীর বেয়াদবির জন্য প্লিজ কিছু মনে করো না।
ফোন রেখে দেই নিলুফা।
–এই মেয়ে এই কি বলছিলি ওসব?
–আহ আহ আপু কান টা ছাড় অনেক ব্যাথা লাগছে।ছাড় না প্লিজ।
–ফাজিল মেয়ে জানিস তুই কারে এসব বলেছিস?(আরো জোরে কানে মোড়া দেই নিলুফা)
–আহ,,হা হা হা।ছাড়া না অনেক ব্যাথা লাগছে।আর কার সাথে কথা বলবো আবার তোর বর মানে আমার দুলাভাই(নিহীন ৩২ টা দাত বের করে হাসি দেই)
নিলুফা এবার কান ছেড়ে দেই।দুই হাত দিয়ে বোনের কাধে হাত দিয়ে বলে,,
–না গো সোনা,ওটা তোমার দুলাভাইর ছোট ভাই সৌভিক ছিলো।হাহাহাহাহাহাহাহহা…..
–অ্যাঁ?(ভ্রু কুঁচকে ফেলে নিহীন)
–অ্যাঁ নয় বেবি হ্যাআয়ায়া….হাহহাহাহহাহহহা।দাড়াও বাবাকে বলছি…ও বাবা তোমার আদররের ছোট মেয়ে আমার দেবরের কাছে চুমু চেয়েছে,আবার নিজেকে তার বউ ও…(নিলুফার মুখ চেপে ধরে নিহীন)
–এই এই কি করছিস??বাশ খাওয়াবি নাকি?আর আমাকে আগে বলিস নি কেন?ছি ছি!উনি কি ভাবলো কে জানে…
–তুই বলার সুযোগ দিলি কই?
নিলুফা হাসতেই থাকে আর নিহীন মুখ গোমড়া করে খাটে বসে থাকে।
–কি ব্যাপার আশহাদ আরিয়ান সৌভিক এতো হাসছে কেন?কি হয়েছে হুম?
–ভাইয়া তোর বউ ফোন দিছিলো..
–নিলুফা ফোন দিছিলো কি বললো??
–বাব্বাহ!ছেলের কি খুশি..বউ এর কথা শুনেই মুখে হাসি,লজ্জাও আছে..(সৌরভের গাল টেনে)
–জীবনে তো একটা প্রেমও করি না,বাবার দয়াই বিয়েটা হচ্ছে খুশি তো হবোই ভাই..(দুষ্টু হেসে উত্তর দেই)
–ওলে বাবা লে..
–আর ধুর কি বললো তাই বল না।
–সে কিছু বলেনি,বলেছে তোর শালি..
–শালি?মানে নিহীন?
–ওমা ওর নাম নিহীন নাকি?
–ওরে নাটক এমনভাব মারছিস যেন জানিসই না?
–না মানে,মানে..
–আরে মানে মানে না করে বল তো।
–আমার কাছে চুমু চেয়েছে(কথাটা বলেই জোরে জোরে হেসে দেই সে)
–কি?
–ও ভেবেছিলো তুই।তাই ভাবি সেজে ইয়ারকি করতে গিছিলো কিন্তু বুঝতে পারিনি ওটা আমি না তাই আর কি..(এবার সৌরভ ও হেসে দেই।দুই ভাই পেটে হাত দিয়ে হাসছে।এরই মাঝে সৌরভকে ডাক দেই তাদের বাবা আলমাস খান।সে হাসি থামিয়ে যেতে লাগে)
–ভাইয়া..
–আবার কি?(পিছু ঘোরে সৌরভ)
–তোর শালিকা টাকে দিবি?(মুচকি হাসে সৌভিক)
–নিয়ে নে(চোখ টিপ মারে সৌরভ তারপর মুচকি হেসে চলে যাই)
সৌভিক বসেই থাকে।বুকে হাত দিয়ে হাই মে মারজাভা বলে ফোনের গ্যালারি তে যেয়ে একটা ছবি দেখে।তারপর একটা না অনেকগুলো চুমু দেই স্ক্রিনে।
চলবে কি??
#তোমার_মাঝেই_আমি
#সূচনা_পর্ব
#নিহীন_রুবাইয়াত
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।ভালো লাগলে জানাবেন।ধন্যবাদ)