#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব_১৩)
তুহার হাত দুটোকে শক্ত করে আগলে নিয়ে ওর বাবা ওর কাছে আবদার করলো…
– মা তুই মেহতাবের সাথে বিয়েতে রাজি হয়ে যা।
তুহা হতবাক হয়ে গেলো। তার বাবা এই আবদার করবে এটা ধারনার বাইরে ছিলো তুহার। তুহা ভালো করেই বুঝতে পারছে ওর বাবা নিজের জেদ রাখার জন্য এই অসুস্থতার সুযোগটা নিতে চাইছে। তুহা কি করবে আর যাই করুক নিজের বাবার আবদার তো ফেলতে পারবে না। তুহা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল…
– ওকে বাবা তাই হবে।
– আর একটা কথা মা ওই ফারাবির থেকে দূরত্ব বজায় রাখবি ছেলেটা ভালো নয় আমার থেকে তোকে কেড়ে নিতে চাই ওহ।
৩ দিন পর…
তুহার বাবা আজকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে এসেছে। এই তিন দিনে তুহা ওর বাবাকে এক মুহুর্তের জন্য একা ছাড়েনি। আর না ফারাবির সাথে কথা বলেছে না ফারাবিকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছে। ফারাবি অস্থির হয়ে উঠছে তুহাকে সবকিছু জানানোর জন্য কিন্তু তুহা তো কিছুই শুনতে না।
তুহা ওর বাবার ঘরে এসে দেখলো,সবাই থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তুহা কিছুই বুঝল না। ওর বাবা কাঠ কাঠ গলায় বলল…
-বোন তাহলে এটাই কি তোর ফাইনাল ডিসিশান।
-হুম দাদা। আমি কখনোই চাইনি তুহা আমার বাড়ির বউ হোক। শুধুমাত্র তোমার জেদের কারনে আমি রাজি হয়েছিলাম। আমি তো আগে এই সবকিছু জানতাম না জানলে কখনোই এই ঘৃন্য কাজ করতাম না। আমি সবসময় চেয়ে এসেছি তুহা ভালো থাকুক। ওকে আমি নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসি আর ভালোবাসবো কিন্তু তাই বলে আমার ছেলের সাথে বিবাহিত একজনের বিয়ে কিভাবে দিই বলো।
– তুই এখুনি আমার বাড়ি থেকে চলে যা। আমার সাথে তোর আর কোনো সম্পর্ক নেই।
– ঠিকাছে চলে যাচ্ছি। একটা কথা বলে রাখি নিজের জেদ রাখতে গিয়ে তাহার মতো তুহার জীবনটাও শেষ করে দিও না দাদা।
মেহতাবের মা চলে যায়। তুহার বাবা রাগে ফোঁস ফোঁস করছেন। তুহার মা ওনাকে শান্ত করতে ব্যস্ত। মেহতাবের মা যাবার সময় তুহাকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওকে টেনে নিয়ে ড্রইং রুমে এনে বললেন…
-প্লিজ তুহা মা নিজের জীবনটা নিজের বাবাকে এইভাবে শেষ করে দিতে দিস না। সবকিছু শেষ হয়ে যাবার আগে সবকিছু ঠিক করে নে নাহলে যেটা হবে ভালো হবে না।
-কিন্তু আন্টি কি হয়েছিলো আর তাহা ই বা কে?
– আমি তোকে কিছুই বলতে পারবো না আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তোর বাবার কাছে। তবে সবকিছুর সমাধান তোকেই করতে হবে। তোর বাবা একটা মিথ্যা রাগকে নিজের মনের মাঝে পুষে রেখে তোকে আর ফারাবিকে আলাদা করতে চাইছে এটা করতে দিস না মা।
– আমি কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
– আমি সবটা বলতে পারবো না তবে একটা কথা বলতে পারি। ফারাবি আর তুই স্বামী -স্ত্রী যেটা আজ থেকে নয় অনেক বছর আগেই তোদের বিয়ে হয়েছিলো। আর মেয়েদের বিয়ে একবারই হয় মা তাই নিজের স্বামীকে আলাদা হতে দিস না মা।
উনি চলে গেলেন তুহাকে ভাবনার মাঝনদীতে ফেলে। তুহা কি করবে কিছূই বুঝতে পারছে না। তখনি কেউ একজন ওর কাঁধে হাত রাখলো। পেছনে ঘুরে দেখলো ওর মা দাঁড়িয়ে আছে।
– মারে আমাদের মাফ করে দে। আমি জানি তোর বাবা যেটা করছে সেটা অন্যায় কিন্তু কি করবো বল নিজের সংসার বাঁচাতে গিয়ে আজকে এতগুলো দিন সবকিছু দেখেও চুপ করে আছি।
– মা আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
– আমি সবটা জানি না সবকিছুর সমাধান একমাত্র তোর বড়ো মামা করতে পারবে তুই ওনার সাথে যোগাযোগ কর। আর একটা কথা মা ফারাবিকে কষ্ট দিস না ছেলেটা তোকে বড্ড ভালোবাসে।
– মা তোমার ভাগ্নে আমাকে নয় তার বান্ধবীকে ভালোবাসে। কিন্তু সবকিছু সত্যি তো আমাকে জানতেই হবে।(মনে মনে)
পরেরদিন…
তুহা কলেজে যাবার নাম করে বাড়িতে থেকে বের হয়ে যায়। সাথে মেধা আছে উদ্দেশ্য মামার বাড়ি।
– তুহা তোর কি মনে হয় সবকিছু জানতে পারবি তুই।
– জানি না কিন্তু সত্যি টা তো জানতেই হবে কিছুই তো আমার মাথায় ঢুকছে না কি হবে।
– তোর কথাগুলো যদি সত্যি হয় তাহলে তো তুই আর দাদাই স্বামী – স্ত্রী।
– আর স্বামী স্ত্রী। উনি তো মনিকা দি’কে ভালোবাসেন। এমনকি ওনাদের বিয়ের কথাও চলছে। আমার না সবকিছুই গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে। কি থেকে কি হচ্ছে।
– মামাই এর কাছ থেকে সবকিছু জানতে পারলে তবেই সবকিছুর সমাধান করতে পারবি তুই।
– হুম।
তুহাকে আর মেধাকে দেখে সকলেই চমকে উঠলো। হয়তো তুহাকে এখানে আশা করেনি।
– তুহা মা তুই এখানে( ফারাবির মা)
– মামিমনি আমার বড়ো মামাই এর সাথে কথা আছে উনি কি বাড়িতে আছেন।
– আমি এখানে।
তুহা ওর বড়ো মামার কাছে গিয়ে ওনাকে সালাম দিয়ে। বললো..
– মামায় আমি জানতে চাই অতীতের সব কথা। কি জন্য আপনার ওহ আমার পরিবারের মাঝে এতটা দ্বন্ধ আমি জানতে চাই।
– আমি আজকে তোমাদের সবকিছু বলবো। কুহু ফারাবিকে এখানে আসতে বলো। আর তোমরা দুজন বসো।
– জ্বি।
মেধা আর তুহা বসে পড়লো। ওর মনটা আনচান করছে। কি বলবে কি সত্যি জানতেপারবে ভাবতেই ভয় করছে বুকের মাঝে।
– বলো বাবা।
ফারাবির কন্ঠস্বর শুনে সকলেই ওর দিকে তাকালো। তুহা কেঁপে উঠলো ফারাবিকে দেখে, ফারাবিকে বড়োই বিধ্বস্ত লাগছে,চোখমুখ ফোলা হয়ে আছে, মুখ শুকিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমায়নি।
-তাহু পাখি তুমি এখানে( আস্তে করে)
ফারাবি আস্তে করে কথাটা বললেও তুহার কানে পৌঁছে গেছে। তুহার শিড়দাড়া সোজা হয়ে গেলো কি শুনলো ওহ ফারাবি ওকে তাহু পাখি বলে ডাকলো।
– উনি আমাকে তাহু পাখি বললেন কেন! তাহলে কি উনিই আমার প্রেমিক পুরুষ।( মনে মনে)
তুহা ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলো মামার কথাতে।
– ফারাবি এখানে এসে তুহার পাশে এসে বসো।
মেধা তুহার পাশ থেকে উঠে চলে যায়। ফারাবি বিনাবাক্যে ওর তাহু পাখির পাশে বসে। ফারাবি তুহার পাশে বসতেই তুহার একটা অন্যরকম অনুভূতি হলো। নিজেকে সামলে নিয় বললো…
-মামাই বলুন।
– ফারাবি এই সব ঘটনার কিছুট জানলেও সবকিছু জানে না আর তুহা তো এই সম্পর্কে অবগত নয়।
অনেক বছর আগে আমি আর তোমার বাবা মিরাজ দুজন দুজনের ভালো ছিলাম। দুজনের মধ্যে বয়সের ফারাক থাকলেও আমরা একে অপরের প্রান ভোমরা ছিলাম। আমার আর তোমার মামিমনির বিয়েটা হয়ে যায়। বছর ঘুরতেই আমাদের কোল আলো করে ফারাবি আসলো। তখন তোমার বড়ো মনির বিয়ের কথা চলছে আর তোমার মা পড়াশোনা করছে। হুট করেই তোমার বাবার এইবাড়িতে যাতায়াত বেড়ে গেলো। ফারাবি ওর খুব আদরের ছিলো আর ফারাবি তো মিরাজ বলতে অজ্ঞান। মিরাজ বরাবরই বলতো ফারাবিকে নিজের জামাই বানাবে। কথাটা আমরাও মজার ছলে নিতাম। একদিন জানতে পারলাম মিরাজ আর তহুরা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। মিরাজ ভালো ছেলে হওয়াতে বাবা আর দ্বিমত করেনি। ওদের চারহাত এক হয়ে যায়। সবকিছু ভালোই চলছিলো কিন্তু একটা ঝড় সবটা এলোমেলো করে দিলো, কখনোই ভাবিনি মিরাজ জেদের বশে ভুলটা করবে।
তুহা ভয়ে কেঁপে উঠলো। কি হয়েছিলো, কি সেই ঝড়।
#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব _১৪) সত্যের মুখোমুখি 💖
তুহা ভয়েতে কেঁপে উঠছে। ফারাবি ওর হাতটা তুহার হাতের উপরে রাখলো,তুহা ফারাবির দিকে তাকাতেই ফারাবি চোখ দিয়ে আশ্বাস দিলো কিছুই হবে না। চিন্তা করো না।
– মিরাজ খুব বুদ্ধিমান মানুষ। কিন্তু কখনো কখনো পরিস্থিতির চাপে পড়ে বুদ্ধিমান মানুষটাও বোকা হয়ে উঠে তার বড়ো প্রমান মিরাজ।
ফারাবির বাবা কিছুক্ষন থেমে তারপরে বলতে শুরু করলেন..
– তুহা তুমি হয়তো জানো না তোমার বাবার দুটো বোন ছিলো।
– দুটো বোন!
– হুম। তাহা মিরাজের ছোটবোন খুব আদরের তাহার কোনো আবদার কখনোই মিরাজ ফেলতো না। তাহা বয়সে অনেকটাই ছোট তখন মাত্র ১১ এ পড়ছে। একদিন মিরাজ তাহার ঘরে গিয়ে আমার কিছু ছবি দেখতে পাই ভয় ও শঙ্কিত হয়ে পড়ে তাহাকে প্রশ্ন করতে শুরু করে..
অতীত…
– তাহা বোন আমার চুপ করে থাকিস না বল ফারুকের ছবি তোর কাছে কেন।
তাহা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
– বোন আমার বল না দাদাকে।
– দাদা আমি ফারুক দাকে ভালোবাসি।
মিরাজ এক পা পিছিয়ে গেল।
– ফারুক জানে কথাটা।
– না দাদা আমাকে আমার ফারুককে এনে দাও না।
মিরাজ রাগে গজগজ করতে করতে বললো…
-পাগলের মতো কথা বলিস না। ফারুক বিবাহিত আর তোর সাথে ফারুকের বয়সের কতটা ফারাক তুই আবেগের বশে ভুল করছিস বোন। নিজেকে সামলে নে ফারুক কখনোই তোর হবে না।
মিরাজ তাহাকে অনেক বোঝায়। তাহাকে সময় দেয় কিন্তু তাহার পাগলামি ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকে। মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে তখন মিরাজ আর কোনো উপায় না পেয়ে তাহার বিয়ে ঠিক করে। আর সেইদিনই..
তহুরা আর ওর বড়ো ননদ তাহাকে আনার জন্য ঘরে আসতেই দেখে ঘরের দরজা বন্ধকরা। অনেক কষ্ট করে দরজা খোলার পর দেখতে পাওয়া যায় শাড়ি গলায় দিয়ে তাহা ঝু/ল/ছে।
– তাহা বোন আমার।
মিরাজের বাবা মা কেউ ছিলো না দুই বোনকে নিয়েই ওর সবকিছু ছিলো তাহার মৃ/ত্যু টা সহজ ভাবে নিতে পারেনি পাগলের মতো ব্যবহার করতে থাকে। তাহার দাফন করা হয় মিরাজ ওকে লাল শাড়িতে দেখতে চেয়েছিলো কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে সাদা কাফনে দেখতে হলো।
১ মাস কেটে যায়, তবুও মিরাজ তাহার কথা ভুলতে পারে না। তাহার ঘরেগিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। একদিন, ঘর আলো করে তুহা আসলো, সেইদিন মিরাজ তুহাকে আঁকড়ে ধরে কেঁদেছিলো। মনে হচ্ছিল হারানো তাহাকে ফিরে পেয়েছিলো। তাহার সাথে নাম মিলিয়ে তুহা রাখলো।
মিরাজ প্রতিদিন কাজ সেরে তাহার ঘরে গিয়ে তাহার সাথে সময় কাটাতো কল্পনায়। একদিন তাহার ঘর থেকে একটা চিঠি পাই,চিঠিটা তাহার বিয়ের দিনের লেখা।।
প্রিয় দাদা.
যখন তুমি এই চিঠিটা দেখবে তখন আমি আর এই পৃথিবীতে থাকবো না। আমাকে মাফ করে দিও। আমি পারলাম না ফারুকের মায়া থেকে বের হয়ে নতুন করে কাউকে ভালোবাসতে পারলাম না। তাই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলাম। ভালো থেকো দাদা।
ইতি____
তাহা।
চিঠিটা পড়ার পর থেকে মিরাজের মনে আলাদা রকমের একটা ক্ষোভ জমা হলো। সবকিছুর জন্য ফারুককে দায়ী করতে লাগলো। এই পরিবারের সাথে নিজের সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো।
বছর খানেক পর…
তুহার বয়স তখন মাত্র ৩ বছর আর ফারাবির বয়স ৭-৮ বছর হবে। হঠাৎ একদিন ফারাবির দাদু অসুস্থ হয়ে পড়লেন, অসুস্থ হয়েছিলেন এই দুই পরিবারের দ্বন্দের কারনে। উনি চাইছিলেন মৃ/ত্যু/র আগে এই দুই পরিবারের দ্বন্দের অবসান ঘটাতে। অসুস্থতাকে কাজে লাগিয়ে উনি ব্ল্যাকমেল করলেন। মিরাজ ওনাকে যথেষ্ট ভালোবাসতেন।
– মিরাজ ফারুক বাবা আমার শেষ ইচ্ছাটা তোরা রাখবি না।
– এইরকম বলো না। (ফারুক)
– মিরাজ বাবা আমার ইচ্ছা রাখবে না।
– বাবা আপনি বলুন আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
– না তোরা দুজন আমাকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা কর।আমার ইচ্ছাটা তোরা রাখবি।
– করলাম।
– আমি চাই ফারাবি আর তুহার বিয়ে হোক।
সকলেই চমকে উঠলো। ফারুক বললো…
– কিন্তু বাবা ওরা তো খুব ছোট।
– তো কি হয়েছে। ওদের হয়ে তোরা সই করবি কাবিনে আর বড়ো হবার পর ওদের পুনরায় বিয়ে দিবি।
– আমি রাজি নয় (মিরাজ)
– আমাকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছো কিন্তু।
–
মিরাজ বাধ্য হয়ে কাবিননামায় সই করেন। ওদের দুজনের বিবাহ সম্পন্ন হয়।
কিন্তু তার দুইদিন পরেই বাবা মারা যায়। আর মিরাজ কাবিনটা ছিঁড়ে ফেলে দেয়।
– এটা কি করলি তুই মিরাজ।
– যা করেছি বেশ করেছি। আমি তোমার কারোর সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না।আমি ফারাবিকে আমার মেয়ের জীবনে আস্তে দেবো না।
-তহুরা এইবাড়ির মেয়ে তাই এই বাড়িতে আসার অধিকার ওর আছে।
– ঠিকাছে তহুরা আসবে আমি কখনোই ওকে বাঁধা দেবো আর না কখনো ওকে কষ্ট পেতে দেবো কিন্তু কখনোই তুহাকে এই বাড়ির ধারে আস্তে দেবো না।আর না এইবাড়ির কারোর ধারে কাছেআসতে দেবো। তুহা আর ফারাবিকে কখনোই আমি এক হতে দেবো না।
________
তুহা সবটা শুনে থম মেরে বসে আছে সবটা শুনে।
– সেই থেকেই শুরু। বাবা চেয়েছিলেন তোমাদের চারহাত এক করে সবকিছু ঠিক করে দেবেন কিন্তু আরো সবকিছু গোলমাল হয়ে গেলো। তবে সবকিছুর মাঝে মিরাজ নিজের কথা রেখেছে আমার তহুরা কে কখনোই কষ্ট পেতে দেয়নি যার জন্য আমি ওর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
– কিন্তু মামাই আঙ্কেল যেটা করছেন সেটা তো অন্যায়। (মেধা)
– হুম জানি কিন্তু ওকে কে বোঝাবে। যাই হোক তোমরা এসেছো খেয়ে যাবে। আমি ভেতরে গেলাম।
উনি উঠে চলে গেলেন। ওনার চোখের কোনো পানিটা কারোরই নজর এড়ালো না। ফারাবিও উঠে চলেগেলো। তুহা এখনো বসে আছে। তুহার পাশে ওর মামিমনি বসলো…
– জানিস তুহা মা আমার ছেলেটা না তোকে খুব ভালোবাসে। সেই ছোটবেলা থেকেই। যখন এইসব হয় তখন হয়তো তুই ছোট থাকলেও ওতো বড়োছিলো সেই থেকেই ওরমনে শুধু তুই। ছেলেটা শুধুমাত্র তোর জন্য এতগুলো বছর বিদেশে ছিলো তোকে ভুলে থাকার জন্য কিন্তু পারেনি তিশাকে দিয়ে তোর খোঁজ নিয়েছে প্রতি নিয়ত। তোর মামাই বলেছিলো অন্য কারোর সাথে বিয়ে দেবে সেইদিন বাড়িতে তুলকালাম করেছিলো।
– আর মনিকা দি।
তুহার মুখে মনিকার নাম শুনে কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন উনি।
– মনিকা এসেছিলো দাদাকে নিয়ে কিন্তু ফারাবি না বলে দিয়েছি সোজাসুজি। তার তাহু পাখি ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না কখনো প্রয়োজনে সারাজীবন একা থাকবে।
তুহার চোখ ভিজে গেলো। মামিমনি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো…
– ছাদে আছে ছেলেটা যা মা সবকিছু মিটিয়ে নিয়ে নতুন করে শুরু কর। দুজনে একসাথে তোর বাবার ভুলটা ধরিয়ে দে।
তুহা মেধার দিকে তাকালো। মেধাও ওকে ইশারা করলো যাবার জন্য। তুহা দৌড়ে চলেগেলো। পরিবারের সকলের মুখেই হাসি আর চোখে পানি। এতবছরের ভালোবাসাটা প্রকাশিত হচ্ছে সবাই খুব খুশি।
– আল্লাহ এবার আমার ছেলেটাকে সুখের মুখ দেখিয়ো। ( মনেমনে)
তুহা ছাদে গিয়ে দেখলো, ফারাবি হাতে একটা সিগারেট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চেষ্টা করছে স্মোক করার কিন্তু অভ্যাস না থাকার কারনে হচ্ছে না।নিজের কষ্টগুলো কমানোর চেষ্টা করছে। আর একহাতে বারবার নিজের চোখের পানি মুছে চলেছে। তুহা আর পারলো না দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
আচমকা এইরকম হওয়াতে ফারাবি চমকে উঠলো। পরক্ষনেই মুখে হাসি ফুটলো। হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে সামনে ঘুরে তুহাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। দুটি মানুষ তাদের বহু বছরের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত। দুজনে কি এইবার এক হবে নাকি আবারো নতুন কোনো ঝামেলা তৈরি হবে ওদের জীবনে।
#চলবে…
১) অনেকেই তুহার বাবার করা কাজটাকে ভিত্তিহীন বলবেন,বাস্তবতার সাথে মিল নেয় বলবেন। তাদের উদ্দেশ্যে একটা কথা … বাস্তবেও অনেক মানুষ থাকে তারা জানে অপর মানুষটার কোনো দোষ নেয় তবুও অন্যের উপরে রাগ ক্ষোভ প্রকাশ করে। তাই মিরাজের কাজটা খুব একটা কাল্পনিক নয়।
২) আগেরকার দিনে বাচ্চা বয়সেই বিয়ে হয়ে যেতো। যদিও এখন হয়না আর সন্তানদের হয়ে বাবা মায়ের অনুমতি নিয়ে বিয়ে হয় এই রকম একটা কথা আমার জানা ছিলো। যদিও সম্পূর্ণ বিষয়টা জানি না। তাই কোনো ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। আমি ঠিক করে নেবো ইনশাআল্লাহ।
বিঃ দ্রঃ ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। হ্যাপি রিডিং 🙂
#চলবে…