#তোমারই_আছি_আমি
পর্ব-০৫
#SaraMehjabin
“যা এখন।”
আকাশভাইয়া আমার থেকে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়াল।
আমি পেছন থেকে দৌড়ে গিয়ে আকাশভাইয়ার পা জড়িয়ে ধরলাম,,,, দুই হাতের বাহুডোরের সর্বোচ্চ চেষ্টায় মানুষটার পা’দুটো আকড়ে ধরে আছি। আকশভাইয়ার পায়ে মাথা ঠেকিয়ে অঝোরধারায় কেঁদে চলেছি আমি। এই মানুষটা আমার কাঁদতে পারার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। আমি তো জানি তার মতো যত্নে কেউ আমার চোখের পানি মুছতে পারে না, আমার দুঃখগুলোকে সুখে রূপান্তর সে ছাড়া কেউ করতে পারে না।
আকাশ: সারা আমার রাগ উঠাস না। ছাড় আমাকে।
সারা: ছাড়ব না। আমার আর ক্ষমতা নেই তোমাকে ছেড়ে থাকার। তুমি কি ভাবো আমি কিচ্ছু বুঝি না? তুমি বললেই আমি বিশ্বাস করব তুমি তোমার পুতুলকে ভুলে গেছ, আর ভালবাসো না। ঘৃনা করো অনেক তাই না? তাহলে শাস্তি দেওয়ার অভিনয় করে আমাকে এখানে এনে ওষুধ লাগিয়ে দিলে কেন? তোমার ভালবাসাকে ঘৃনার আড়ালে লুকিয়ে রাখছ কেন আকাশভাইয়া? কেন ঘৃনার অভিনয় করে আমাকে শাস্তি দিচ্ছো? সাতটা বছর ধরে শাস্তি দিচ্ছ আমায়। আমি কি দোষ করেছি?
কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লাম।
“পুতুল,,, পুতুল কাঁদিস না। আমার কথা শোন্। একটু শান্ত হ। কাঁদিস না।”
আকাশভাইয়া আমাকে পায়ের থেকে তুলে তার বুকের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেছে। আকাশভাইয়া আমার দুইহাত কাছে টেনে তাতে যত্ন করে অনেকগুলো ভালবাসার পরশ আঁকল। তারপর খুব আলতোভাবে চোখের পানিগুলো মুছিয়ে দিল। মানুষটার ছোঁয়ায় অদ্ভুত শান্তি পাচ্ছি। আকাশভাইয়া কতদিন পরে আমাকে এভাবে আদর করল।
“পুতুল তুই জানতে চাস না কেন তোকে এত কষ্ট দেই? তোকে দূরে সরিয়ে রাখি? মেধার জন্য তোকে সবসময় অপমান করি? আমি আজকে তোকে সব বলব পুতুল। আমি আর পারছি না তোকে কষ্ট দিতে।”
আকাশভাইয়া আমার ভেজা গালদুটো তার মুঠোয় নিল।
সারা: হ্যা। আমি সব জানতে চাই আকাশভাইয়া।
আকাশ: কিন্তু পুতুল আমার একটা শর্ত আছে।
সারা: কি শর্ত? তুমি যা বলবে আমি তাই করব।
আকাশ: সত্যি তো? তুই কিন্তু আমাকে ছুঁয়ে বললি কথাটা। শোন্ পুতুল, নিবিড়কে যে তুই নিজের চোখে দেখেছিস সেটা কাউকে বলবি না। ও নিঁখোজ-ই থাকবে সবার চোখে।
সারা: কি বলছ আকাশভাইয়া?? নিবিড়ভাইয়া ফিরে এসেছে ও হারিয়ে যায় নি এটা কাউকে বলব না??
আকাশ(রেগে): না বলবি না। আমি যা বলছি সেটা সবার ভালোর জন্য-ই। বোঝ একটু পুতুল। তুই না বুঝলে কে বুঝবে, বল্?
আকাশভাইয়া আদর করে আমার গালে হাত রাখে। আমি আকাশভাইয়ার হাতে চুমু দিয়ে বললাম, ঠিক আছে। বলব না।
আকাশভাইয়া সাথে সাথে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিল আমাকে। “হা হা হা। তোর কাছ থেকে এই কথাটাই আদায় করার ছিল। এখন যা। যা, দূর হয়ে যা তুই। তোর মুখ দেখতে ঘিন্না লাগছে। ইশ্, চুমু দিয়ে তুই আমার হাতটাও নোংরা করে দিলি!ছিঃ থু। তোর মতো মেয়েকে এত কাছে নিয়েছি। বাসায় গিয়েই গোসল করতে হবে।”
আকশভাইয়ার একেকটা কথা যেন মাটি সরিয়ে দিল আমার পায়ের তলা থেকে। ঐখানে আর এক মুহুর্ত-ও দাঁড়ালাম না। দৌড়ে চলে গেলাম। কাঁদব কি, কাঁদার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছি। এতখানি কষ্ট আর অপমান-ও আমার জন্য ছিল। কিন্তু আকাশভাইয়া নিবিড়ের বিষয়টা কাউকে জানাতে চায় না কেন?
চলবে