তোলপাড় পর্ব ২৮+২৯

#তোলপাড়💓
#পর্বঃ২৮
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

আহসান সেই যে বেড়িয়েছে আর আসার নাম নেই।দুপুর গড়িয়ে বিকেল,বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা,সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত।রাত হয়েছে বটে তবে গভীর রাত।রিমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে বাহিরের মেইন গেইট দেখা যায়।রিমির চোখে ঘুম টলমল করছে।কিন্তু ঘুমাতে পারছে না আহসানের টেনশনে।বেশি টেনশন করলে ওর মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।মাথাটা চেপে ধরে আছে দু হাত দিয়ে।ঘড়ির কাটা যখন রাত দুটোতে নামলো তখন রিমির চিন্তা যেন আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেল।সেদিনের মতো দিশেহারা হয়ে গেল বেচারি।তবে আজ যেন চিন্তা টা একটু বেশিই হচ্ছে ওর।কারণ সেদিন আহসানকে ও কিছু না বললেও আজ অনেক ভালো মন্দ শুনিয়ে দিয়েছে।নিজেই নিজের কথায় অনুতপ্ত রিমি।ভয় একটাই আহসান কোনো বিপদে নয়তো!

-আমি যে কেন ওনাকে বেশি কথা বলতে গেলাম?ইদানীং খুব বেশি ধারালো হয়ে গেছে আমার জিভ।একেবারে ধারালো অস্ত্রের ন্যায় ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।আচ্ছা উনি তো অনুতপ্ত ওনার আগের ব্যবহারের জন্য।তাহলে আমি কেন ওনাকে মাফ করে দিচ্ছি না?সত্যি তো ওনার বাবার জন্য আমি ওনাকে কথা কেন শোনাচ্ছি?পা থেকে মাথা পর্যন্ত পাপ করলেও বান্দা যখন মন থেকে আল্লাহর কাছে মাফ চায় তখন আল্লাহ তো তার বান্দাকে খালি হাতে ফেরায় না।সেখানে আমি একজন সাধারণ মানুষ।মহান আল্লাহর সৃষ্টি আমি।মহান আল্লাহ আমাকে এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন তার বান্দা হিসেবে।তিনি যদি মহাসাগর সমান পাপকে মাফ করে দিতে পারেন তাহলে আমি এতোটুকু অন্যায়ের জন্য আহসানকে কেন মাফ করতে পারবো না?আমি মানছি উনি খুব অহংকারী,দাম্ভিক,রাগী মানুষ।তবে ছিলেন।এখন অনেকটাই ভালো হয়ে গেছেন উনি।উনি চাইলে আরও ভালো হতে পারবেন।তবে এর জন্য আমার সাপোর্ট প্রয়োজন ওনার।আমি যদি এমন করি তাহলে উনি ভালো মানুষ হতে পারবেন না।তাই আমাকে যে করেই হোক ওনাকে বুঝতে হবে।ওনার সাথে থেকে ওনাকে সাহায্য করতে হবে একটা প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ার জন্য।না উনি আসুক আমি ওনাকে সরি বলে দেব।কিছুক্ষণ বারান্দায় পায়চারি করার পর রিমি আহসানের গাড়ি গেটের মধ্যে প্রবেশ করতে দেখতে পেল।রিমি যেন কোনো অমূল্য কিছু দেখে ফেলেছে।ঠোঁটের হাসিটা বেশ চওড়া হয়ে উঠেছে।এক দৌঁড়ে বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে পৌঁছালো।আহসান বেল বাজানোর আগেই রিমি দরজা খুলে ফেলল।আহসান বিষয়টা দেখে বেশ অবাক হয়ে গেল।আহসানের চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে সারাদিন কিছুই পেয়ে পড়েনি।রিমি যেন নিজের মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল আহসানের এমন হাল দেখে।ওর মুখে যেন তালা লেগে গেছে।আহসান আর রিমি একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে।দুজনেরই চোখের পলক পড়ছে না।নিরবতা ভেঙে রিমি বলে ওঠে,কোথায় ছিলেন?মুখের একি হাল করে রেখেছেন?সারাদিন কিছু খাননি?আহসান রিমির কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রিমির পাশ কেটে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে।রিমি দরজা লাগিয়ে আহসানের সামনে দাঁড়িয়ে আবার জিজ্ঞেস করল,কিছু বলছেন না কেন?কোথায় ছিলেন আপনি?হাসপাতালে কি?

আহসান গম্ভীর কণ্ঠে বলে,রাত ১০টা অবধি হসপিটালেই ছিলাম।

-তারপর কোথায় গিয়েছিলেন?এতো রাত করে ফিরলেন যে?

-উকিলের কাছে গিয়েছিলাম।

রিমির বুকটা ছ্যাত করে উঠলো।উকিল নামটা শুনে ওর মনে পড়ে ডিভোর্স এর কথাটা।রিমি কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে,উকিলের কাছে কেন?রিমির আহসানের উত্তরটা শোনার জন্য গভীর আগ্রহে চেয়ে আছে।ওর মন যেটা বলছে ও সেটা চাচ্ছে না।খুব ভয় লাগছে ওর।আহসান কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে বলল,ডিভোর্স পেপার্স রেডি করতে বলেছি।রিমি যা ভয় পেয়েছিলো তাই হলো।ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে এসেছে ওর।যেদিন ওর সাথে আহসানের বিয়ে হয়েছিল সেদিনও একই ভাবে ভয় পেয়েছিলো ও।আজ বিয়ের এক মাস প্রায়।এই এক মাসে আরেকটা ধাক্কা খেল যেন আজ।ডিভোর্স যেন ওর কাম্য নয়।রিমির গলা শুকিয়ে এলো ভয়ে।

-আপনি এটা কেন,,,,রিমিকে পুরো কথা শেষ না করতে দিয়েই আহসান বলে ওঠে,তোমার ইচ্ছেই পূরণ হবে।আমি চাইনা তুমি আর কষ্ট পাও।আমি চাইনা তুমি আমার চক্ষুশূল হয়ে থাকো।আমি চাইনা তুমি আর এ বাড়িতে পড়ে থেকে লাথি চড় খাও।

-আপনি কি বলছেন এসব?

-তুমি তো এটাই বলেছিলে আমায়।ডিভোর্স চেয়েছিলে,তাই সেটাই দিচ্ছি।দু দিনের মধ্যে সব কিছু রেডি হয়ে যাবে।আর মাত্র দুটো দিন আমাকে আর আমার বাপিকে সহ্য করো।তাও যদি না পারো আমাকে বলো আমি তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে দিয়ে আসবো ঠিক দুদিনের মাথায় ডিভোর্স পেপারে সাইন করে তোমার বাসায় পার্সেল করে দেব।কথাগুলো অন্য দিকে ফিরে বলল আহসান।রিমি যেন থমকে গেল আহসানের পুরো কথায়।অজান্তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল ওর।বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে ওর।কিন্তু ও যে সেসব কিছুই বলতে পারছে না আহসানকে।রিমি বলতে চায় ও ডিভোর্স চায়না।কিন্ত এক অদৃশ্য বাঁধন ওকে যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে।সে বাঁধন ওকে বলতে দিচ্ছে না যে ও ডিভোর্স চায়না।আহসান কিছু না বলে উপরে চলে গেল।রিমি সেখানেই ধপ করে বসে পড়ল।তারপর নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে বলল,আমি তো চাই আপনি আমাকে ডিভোর্স দিন।কিন্তু আমার এতো কষ্ট কেন হচ্ছে?আমার মন বলছে আমি ডিভোর্স চাইনা?কেন আমার সব সিদ্ধান্ত পালটে গেল?আমি তো আপনাকে আজ খুব সহজে বলেছি আমি আপনার থেকে ডিভোর্স চাই কিন্তু এখন কেন মেনে নিতে পারছি না?কেনোই বা মুখ ফুটে বলতে পারছি না আমি ডিভোর্স চাইনা।আমি এই বাড়িতেই থাকতে চাই।শত অপমান সইতে রাজি তবুও ডিভোর্স চাইনা আমি।কেন?কেন?কেন বলতে পারছি না?রিমি রুমে এসে দেখলো আহসান ঘুমিয়ে পড়েছে।রিমিও ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে উল্টো দিক ফিরে।রিমি উল্টো দিক ফিরে শুতেই আহসান চোখ মেলে ফেললো।আহসানের চোখ মুখ ক্রমশই লাল হতে থাকলো।চোখ বেয়ে এক ফোঁটা পানি ঝরে বালিশে পড়ে।রিমিও ওদিকে যন্ত্রণায় ছটফট করছে।রাত যত বাড়ছে ওদের কষ্টের মাত্রা ততই বেড়ে চলেছে।রাতটা দুজনেরই নির্ঘুমে কেটে গেল।সকালে আহসান নিজ দায়িত্বে হসপিটালে চলে যায়।রিমিকে কিছু বলার প্রয়োজনবোধ করেনি।রিমির দিকে একটাবার তাকায় ও নি।রিমি আহসানের এমন কঠিন পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না।রিমির মনে হচ্ছে এর থেকে আহসানের দেওয়া কষ্টই শ্রেয় ছিলো।

——————————————————+++++———–

-কিরে এসেছে কি রিমি?

-বস আমি দেখছি তো।এখনি ক্লাস শুরু হতে অনেক সময় আছে আপনি এতো ব্যতিব্যস্ত হবেন না।

-তুই বুঝবি না আমার সিচুয়েশনটা।আমার চোখের সামনে এখনো রিমির সেই সুন্দর মুখটা ভেসে উঠছে।রিমিকে দ্বিতীয়বার দেখার জন্য আমি কতটা বিচলিত হয়ে আছি সেটা তুই বুঝবি না রাফি।এই প্রথম কোনো মেয়ে আমাকে এতটা ভাবালো।এই প্রথম কেউ আমাকে তার মায়ায় লেপ্টে দিল।তুই বুঝবি না রাফি,তুই বুঝবি না।

রাফি চিল্লিয়ে বলল,বস রিমি ম্যাম এসে গেছে।

-Really!তাহলে চল গেটের সামনে।সামির আর রাফি মিলে গেটের সামনে গেল।রিমি যেই কলেজে প্রবেশ করলো ওমনি এক গোছা গোলাপ রিমির সামনে তুলে ধরল সামির সাথে ওয়েলকাম উয়িশ করে।আচমকা এরকম কিছু হওয়ায় রিমি বেশ বিভ্রান্তে পড়ে গেল।চোখ রাঙিয়ে বলল,এসব কি?তোমরা এখানে কি করছো?

-আমি তোমাকে ফুল দিয়ে ওয়েলকাম করতে এসেছি রিমি।গতকাল জানতাম না বলে প্রিপারেশন নেইনি। তাই আজ ওয়েলকাম জানালাম।এই নাও তোমার মতো বিউটিফুল লেডির জন্য রোজেস।যদিও এটা তোমার থেকে বেশি বিউটিফুল নয়।রিমি প্রচন্ড রেগে গিয়ে সামিরের হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে নিল।তারপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলল,ম্যানারলেস ছেলে কোথাকার।এতো বড় সাহস কোথ থেকে পাও আমাকে তুমি করে বলার?তার উপর আমার নাম ধরে ডাকা!গতকাল না বলেছি আমাকে ম্যাম বলবে।মার গুলো কি ভুলে গেছ?নাকি আরও খাবে?

-মারো যত ইচ্ছে হবে তোমার।তোমার আগে কেউ কখনো আমাকে মারার দুঃসাহস দেখায়নি।তাই এটা আমার জন্য নিউ এক্সপেরিয়েন্স।তোনার যত ইচ্ছে মারো আমি বাধা দেবনা।

-অসভ্য বেহায়া ছেলে কোথাকার!আজ ক্লাসে এসো চাপকে পিঠের ছাল তুলে ফেলবো।রিমি রাগে গিজগিজ করতে করতে চলে গেল।

-দেখলেন বস উনি আপনাকে মোটেও পছন্দ করেন না।আমি বলি এতো বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই।উনি ম্যাম মানুষ,ওনাকে উত্ত্যক্ত করুন অন্য টিচারদের যেভাবে করেন।কিন্তু ওনার সাথে ফ্লার্ট ছি ছি মানাচ্ছে না।

-তুই চুপ কর।বেশি বকবক করলে আজকে এক গ্লাস পানি অবধি কিনে খাওয়াবো না।

রাফি ৩২ টা দাঁত কেলিয়ে বলল,না বস আমি কিছুই বলিনি।আপনার যা ইচ্ছা করেন আমি কিছুই বলবো না এই যে মুখে তালা লাগালাম।

যে সামির লাস্ট বেঞ্চ ছাড়া কখনো ক্লাসরুমে বসেনি সে আজ সবার সামনে বসেছে একেবারে হোয়াইট বোর্ড বরাবর।সেখানে যে বসেছিল তাকে উঠিয়ে দিয়ে ও বসেছে সাথে ওর চামচা রাফিকেও বসিয়েছে।রিমি ক্লাসে এসে ক্লাস নিচ্ছে।সামির এক ধ্যানে রিমিকে দেখছে।রিমি সর্বপ্রথম প্রশ্নটা সামিরকেই জিজ্ঞেস করলো।
-বলো হিসাবের প্রাথমিক বই কাকে বলা হয়?সামির উত্তর দিল,ম্যাম আপনার শাড়ির কালারটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।আপনাকে মানিয়েছে।রিমি ও সামির বাদের ক্লাসের সবাই হেসে ওঠে।

-কিপ সাইলেন্স!এসব কি ধরনের বেয়াদবি?তুমি কি শুধরাবে না?আজ প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলতেই হবে।এই বলে প্রিন্সিপালের রুমে গেল রিমি।প্রিন্সিপালকে সব কিছু বলার পর উনি বললেন,সামিরকে অবুঝ ভেবে ক্ষমা করে দিন ম্যাম।আসলে ও এখনো অবুঝ।বয়স ঠিকই হয়েছে কিন্তু বোধ বুদ্ধি হয়নি।আপনি পারলে ওকে নিজের মতো শায়েস্তা করুন আমি কিছুই বলবো না।কিন্তু আমাকে এই বিষয়ে জড়াবেন না প্লিজ।নইলে খুব অভিমান করবে আমার উপর।আমার একটাই ছেলে বুঝতেই তো পারছেন কত আদরের।তাই আমি কিছু হেল্প করতে পারলাম না।আপনি ওকে নিজের মতো করে ভালো করুন।আমি যেমন সামিরকে কিছু বলবো না,তেমনি আপনাকেও কিছু বলবো না।

-আপনার ছেলেকে মেরে মেরে সোজা করতে হবে দেখছি।

-এই ভুল করবেন না।ওকে মেরে লাভ নেই।তাছাড়া মারই সব সমস্যার সমাধান নয় ম্যাম।আপনি কৌশলে বোঝান এতে আপনার জন্যই ভালো।আমি যতদূর জানি সামির মার খেয়ে ভালো হওয়ার ছেলে নয়।ওকে অন্য কোনো উপায়ে বোঝান।আপনি যদি ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে এবার পাশ করাতে পারেন তো আমি আপনাকে আমাদের কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল বানাবো।কথা দিচ্ছি। তখন কলেজটা শুধু আমার নয় আপনারও হাফ হয়ে যাবে।আপনি যদি সামিরের মতো ত্যাড়া ছাত্রকে বাধ্য বানাতে পারেন তো আমি বুঝবো এই পুরো কলেজের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা আপনার আছে।আপনি পারবেন তো আমার এই চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করতে?ভালো করে ভাবুন।পরে কিন্তু পিছপা হতে পারবেন না।

রিমি কিছুক্ষণ ভেবে বললো,হুম পারবো।আপনার ছেলে কেন এই কলেজের প্রতিটি স্টুডেন্টকে সোজা করার দায়িত্ব আমি নিজ কাঁধে নিলাম।ইওর চ্যালেঞ্জ একসেপ্টেড স্যার, ধন্যবাদ।
রিমি বাড়িতে এসে আহসানের পছন্দের খাবার নিজ হাতে রান্না করলো।এই বাড়িতে এই প্রথম রিমি রান্না করলো।অপা আর সম্পাকে আজ রেস্ট নিতে বলে নিজে হাতে সব কিছু রান্না করেছে।দুপুরে সবাই খাবার টেবিলে বসলো।সবাই বলতে আহসান,রঞ্জিত ও অপা।রঞ্জিত সেই প্রথম থেকেই খাবরের ঘ্রাণ শুকে তারিফ করে যাচ্ছে।আহসান তেমন রিয়েকশন দিচ্ছে না।মন ভালো নেই বলে।তবুও কাউকে বুঝতে দিতে চাচ্ছে না।এইজন্য কোনো কিছু না ভেবে খেতে বসে গেল।নইলে অপা হাজারটা প্রশ্ন ছুড়ে দিত।খাবে না কেন?কি হয়েছে হ্যান ত্যান।রঞ্জিত সবগুলো রান্নার আইটেম দেখে আরও খুশি হয়ে গেলেন।জিভে তার পানি চলে আসলো।রঞ্জিত ওর মতো নিয়ে খেতে লাগলো।

-বাহ চমৎকার রান্না।একদম আমার মায়ের মতো হয়েছে।অনেকদিন পর অন্যরকম টেস্ট পেলাম রান্নায়।সবই দেখছি আমার আর আহসানের পছন্দের খাবার। আমি আজ ইম্প্রেস হলাম অপা।ম্যানি ম্যানি থ্যাংকস। আহসান কিছু বলছে না ও নিজ বিরুদ্ধে গিয়ে খাচ্ছে।সব স্বাদ যেন বিষাদময় হয়ে উঠেছে ওর কাছে।
এতোটাই মন খারাপ যে নিজের পছন্দের খাবার গুলোর দিকেও তাকাচ্ছে না।

-তুমি আমার প্রশংসা করছো কেন বলোতো?

-এতো ভালো রান্না করেছো আর আমি কিনা প্রশংসা করবো না!ট্যালেন্ট এর কদর করতে হয় বুঝলে?

-তা বুঝলাম।কিন্তু এতসব রান্না আমি করিনি।

-তাহলে নিশ্চয়ই সম্পা করেছে?ও কোথায়,আজ ওকে খুশি হয়ে বখশিশ দেব আমি।
রান্নাঘর থেকে রিমি সব কিছু লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে।আর মনে মনে খুশি হচ্ছে রঞ্জিতের ওর হাতের রান্না পছন্দ হয়েছে বলে।

-বখশিস দেওয়ার হলে রিমিকে দেও।কারণ ওই সব রান্না নিজ হাতে করেছে আজ।কথাটা শুনে রঞ্জিতের মুখের রং উড়ে গেল।হাত ধুয়ে উঠে যেতে নেবে কি আহসান বললো,এখন উঠে যাচ্ছো কেন?রিমি রান্না করেছে বলে কি এতোক্ষণের সব প্রশংসা মাটিতে মিশে যাবে!

-আমার কাছে একটুও ভালো লাগেনি আমি সব বানিয়ে বানিয়ে বলেছিলাম।এই খাবার মুখে দেওয়াই যাচ্ছিলো না। আগে জানলে এভাবে মিথ্যে প্রশংসা করতামই না।এই বলে চলে গেলেন রঞ্জিত।আহসান আর অপা একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে।ওদিকে রিমির ও বেশ খারাপ লাগলো।ভেবেছিল এই বুঝে রঞ্জিত ওকে একটু হলেও ভালো জানবে।কিন্তু তেমন কিছুই হলো না।ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো রিমির।ওর খুশি মানে ক্ষণিকের একটা মন মাতানো বাতাস।বাতাস শেষ হওয়া মাত্র ওর মনটা আবারও সেই চিরস্থায়ী মন খারাপের দেশে ফিরে আসবে।
#চলবে?
#তোলপাড়💓
#পর্বঃ২৯
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

রাতের বেলা রিমি আহসানের বালিশের উপর সরি কার্ড রেখে ঘুমানোর ভান করে শুয়ে থাকে।আহসান আসতেই ওর চোখ যায় রিমির দিকে।অন্য দিনের তুলনায় আজ অনেক তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরেছে ও।অন্যদিন যতই রাত হোকনা কেন রিমি জেগে থাকতো।কিন্তু আজ রিমিকে এতো ফাস্ট ঘুমাতে দেখে আহসান যেন খুব বেশিই আশ্চর্য হলো।আগামীকাল ও রিমিকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে এই কথাটা মাথায় আসতেই একটা শুকনো হাসি ফুটে উঠে ওর মুখে।যদিও হাসিটা তাচ্ছিল্যের হাসি।আহসান বালিশের দিকে তাকাতেই রিমির রাখা কার্ডটি দেখতে পেল।কার্ডটি হাতে নিয়ে দেখলো সেখানে বড় বড় লেটারে “SORRY” লেখা।

-এখানে সরি কার্ড কে রাখলো?রুমে কেউ আছে নাকি?এই বলে রুমের চারিদিকে তাকাতে শুরু করলো।

রিমি চট করে উঠে বসে বলল,এদিক সেদিক তাকাচ্ছেন কেন?আমি ছাড়া রুমে কে আসবে কার্ড রাখতে।

আহসান আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলল,
-তুমি রেখেছো!কেন?

-কেন আবার,গতকালের ব্যবহারের জন্য।আমি আপনার ওই বদরাগী বাপটার উপর রাগ দেখাতে পারিনি বলে আপনাকে স্বীকার বানিয়ে ফেলেছিলাম।বিশ্বাস করুন আমি যা যা বলেছিলাম সব রাগের মাথায়।কি বলেছি না বলেছি কিছুই মনে নেই আমার।তবে যাই বলে থাকি না কেন মন থেকে কিছুই বলিনি।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন।(কান ধরে)

-মাফ চাচ্ছো কেন?তুমি রেগে বলো আর যেভাবেই বলো না কেন আমি বুঝতে পেরে গিয়েছি তুমি এখানে ভালো থাকবে না।সাথে করে ডিভোর্স পেপার নিয়ে এসেছি। আমি সাইনও করে দিয়েছি তুমিও সাইন করে দিও।আমি আগে থাকতেই সাইন করে রেখেছি কারণ সকাল ৬টার সময় আমায় হসপিটালে যেতে হচ্ছে।কাল সারাদিন বাড়িতে থাকছি না।উকিলকে বলে রেখেছিলাম আজ রাতের মধ্যেই ডিভোর্স পেপার রেডি করে দেওয়ার জন্য।তাই কষ্ট করে খুব ফাস্ট করে দিয়েছে।তুমি চাইলে সকালে সাইন করতে পারো।কারণ তখন তুমি এ বাড়ি থেকে বুক ফুলিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে।একদম মুক্ত পাখির মতো।আহসান ওর কথার মাঝে কারো কান্নার শব্দ শুনতে পেল।তাকিয়ে দেখল রিমি ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে।রিমিকে কান্না করতে দেখে আহসান আবারও বলতে শুরু করলো,আমি জানি এটা তোমার খুশির কান্না।আমি তোমাকে আজ আটকাবো না,তুমি যত পারো কাঁদো।এই বলে হাতের কাগজগুলো টেবিলের উপর রেখে চেঞ্জ কর‍তে চলে যায়।এদিকে রিমির কান্নার মাত্রা আরও শতগুণ বেড়ে গেল।

-ব্যাটা টিকটিকির নানার বংশধর,কাউয়ার লিডার,নর্দমার কালো পানি,গরুর হাড্ডি তোর কোনোদিন ভালো হবে না বলে দিলাম।ডিভোর্স দিবি আমায়!দে ডিভোর্স।তারপর যখন কপালে হিন্দি সিনেমার কাঞ্চানা বউ হিসেবে জুটবে তখন বুঝবি ঠ্যালা।আমি মেয়ে শান্তশিষ্ট বলে এক মাস নাহয় সংসার করতে পারলি।ওই কাঞ্চানার সাথে দেখবো কতদিন টিকে এই বলে আবারও কান্না জুড়ে দিল।আহসান বাহিরে এসে দেখলো রিমি উল্টো পাশ শুয়ে নাক টানছে বারবার।আহসান কি জানি কি ভেবে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল।রিমি সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে আহসান রুমে নেই।তারপর ওর মনে পড়ে আহসান তো ৬টার সময় হসপিটালে যাওয়ার কথা বলেছিল।এই ভেবে উঠবে কি ওর নজর গেল টেবিলের উপর রাখা কাগজগুলোর দিকে।রিমি মন খারাপ করে কাগজ গুলো হাতে নিল।তারপর একে একে সব গুলো কাগজ দেখতে শুরু করলো।রিমি যেন চরম অবাক হলো কাগজগুলো দেখে।চোখ উল্টে তাকিয়ে আছে কাগজগুলো হাতে নিয়ে।

-একি!এগুলো তো সব খালি অফসেট পেপার।ডিভোর্স পেপার কোথায় গেল?কোথাও উড়ে টুরে যায়নি তো?এবার শেষের কাগজটা দেখে রিমি যেন অবাকের শেষ চূড়ায় পৌঁছে গেল।শেষ কাগজটায় লাল কালি দিয়ে লেখা,কতটা সিলি তুমি রিমি!আমি তোমাকে এতো সহজে ডিভোর্স দিয়ে দেব,এটা কিভাবে ভাবতে পারলে?আমি জানতাম তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইবে না।তাইতো পরীক্ষা করে দেখেছিলাম তুমি কি করো ডিভোর্স এর কথা শুনে।আর ডিভোর্স পেপার রেডি করতে দুদিন সময় লাগেনা।টাকা দিলে এক ঘন্টায় সব হয়ে যায়।তুমি সেটাও বুঝলে না!আসলে আমি তোমাকে একটু নাকানিচুবানি খাওয়াতে চেয়েছিলাম তা কিন্তু নয়।আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি কি এক্সপ্রেশন দাও ডিভোর্সের কথা শুনে।আমি গতকাল খুব সহজে বলে দিয়েছিলাম তোমায় ডিভোর্স দিয়ে দেব।কিন্তু পরক্ষণে মনে হলো একটা দিন দুটো দিন ওয়েট করে দেখি তুমি কি বলো এই ভেবে সময় নেওয়া।ভেবেছিলাম তুমি হয়তো এটাই চাও।কিন্তু যা বুঝলাম তুমি ডিভোর্স না নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছো।এটা বুঝতেই আমি আমার ডিসিশন পালটে ফেলি।দুদিন ওয়েট করতে পারিনি গতরাতেই রহস্য উদঘাটন করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুমি তো পেপার গুলো খুলে দেখলেই না।দেখলে হয়তো তোমার ওই সিলি কান্নাটা থেমে যেত।রাত ভরে তোমার নাক টেনে কান্নার শব্দে আমি এক মিনিট ও ঘুমাতে পারিনি।ইচ্ছে করছিলো খালি পেপার গুলো তোমায় দেখিয়ে সবটা বলে দেই।কিন্তু সেটা আর করা হলো না।কারণ আমি সত্যিটা বলে দিলে তুমি তেমন সারপ্রাইজড হতে না।যেটা এখন হয়েছো।আর আমি জানতেও পারতাম না তুমি সামান্য ডিভোর্সের জন্য এতটা কষ্ট পাচ্ছো।রাতভরে যেভাবে কান্না করলে তাতে আমি স্পষ্ট বুঝেছি তুমি আর যাই চাও না কেন, ডিভোর্স একদমই চাওনা।তাই তুমি ঘুমিয়ে গেলে এই ছোট চিরকুট টা লিখলাম।যাতে তুমি ব্যাপারটা স্পষ্ট বুঝতে পারো।আর তোমার মনের সব কনফিউশান্স দূর হয়ে যাক।তবে আমি জানি না তুমি সবটা পড়তে পেরেছো কিনা।কারণ সবাই বলে ডক্টরদের হাতের লিখা নাকি সাধারণ মানুষ পড়তে পারেনা।কি জানি কি পড়তে কি পড়েছো আর আমার নামে উল্টো পালটা ভাবছো।রিমি এই লিখাটা পড়ে ফিক করে হেসে ওঠে।তারপর আবারও পড়তে শুরু করে,জানো রিমি আমি এখন অনেক পালটে গিয়েছি।সেই আগের আমিটা আর নেই আমার মাঝে।এখন আর কথায় কথায় রেগে যাইনা।সবাইকে বোঝার চেষ্টা করি।এইসব কিছুর পেছনে শুধু তুমি।তুমি অল্প কদিনেই আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিলে।তাই মনের গহীন থেকে থ্যাংকস জানাই তোমাকে।আজ বাসায় আসবো নাকি জানি না।তাই রাতেই তোমার ভুল ভাবনা টা ভাঙাতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুমি সেটা আর হতে দিলে না।তুমি যদি একটাবার খালি কাগজগুলো দেখতে তাহলে সারারাত নিজেও কষ্ট পেতে না,আর আমিও একটু ঘুমোতে পারতাম।যাই হোক সময় মতো কলেজে পৌঁছে যেও।গুড মর্নিং।

-আপনার পেটে পেটে এতো!আজ বাড়িতে না আসলেও কালতো আসবেন!এবার আসুক তারে আমি মজা দেখাবো।গানের লাইনটা গেয়ে উচ্চস্বরে হেসে ওঠে।

রিমি ক্লাস করাচ্ছে আর সামির রিমিকে দেখে শিশ বাজাচ্ছে।বিষয়টা রিমির একদমই পছন্দ হয়নি।রিমি গিয়ে সামিরের কান টেনে ধরল।

-অসভ্য ছেলে।ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাও এখনি।

সামির খুব সুন্দর করে বলল,ম্যাম ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলে আপনাকে দেখবো কি করে?

রিমির রাগ যেন সাত আসমানে পৌঁছে গেল।সামিরকে এক প্রকার টেনে হেচড়ে বাহিরে বের করে দিল।

-এখানে এক পা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি যতক্ষণ না ক্লাস থেকে বের হচ্ছি ততক্ষণ এক পা নড়বে না।

সামির খুব ইজিলি বলে দিল,আপনি যা বলবেন তাই হবে ম্যাম।আপনি বললে আজ সারাদিন এখানে এভাবে এক পা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবো।(এক পা তুলে)

-তোমার কপালে খুব বেশি দুঃখ আছে এই বলে রাখলাম।টিচারের সাথে বেয়াদবি করা জঘন্য অপরাধ।তুমি খুব কঠোর শাস্তি পাবে এর জন্য।লাই পেয়ে পেয়ে আস্ত বেয়াদব হয়ে গেছ।তবে তোমাকে সোজা আমি করেই ছাড়বো।এটা আমার চ্যালেঞ্জ রইলো।
#চলবে,,?
(খুব বিজি আছি।তাই গল্প লিখার সময় হয়ে উঠছে না।তবুও চেষ্টা করবো রোজ গল্প দেওয়ার)
(লিখার আগ্রহই যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম।কিন্তু আপনাদের সবার ভালবাসায় না লিখে থাকতে পারলাম না।সবাই গঠনমুলক মন্তব্য করুন।আপনাদের জন্য লেখা।এতোটুকু আশা তো করতেই পারি।তাই অনুরোধ রইলো গঠনমুলক সমালোচনার যেন পাই।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here