তোলপাড়
ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৩২
_______________
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলে বেনুনী গাঁথছে অরূণী।মুখে ওঁর কাল ভ্রমরের মৃদু গুঞ্জন। ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে আছে। গভীর মনোযোগে আয়নার দিকে তাকিয়ে চোখে কাজল দেয়।কলেজে যাওয়ার সময় রুদ্র দেখা করতে বলেছে। অদ্ভুত এক ভালোলাগায় অরূণীর মন-প্রাণ ছেয়ে যাচ্ছে।এই ভালোলাগার ব্যাখ্যা কিংবা বিশ্লেষণ করা সম্ভব না। সেলিনা আহমেদ অরূণীর রুমে ঢুকে সরু চোখে তাকায় অরূণীর দিকে। সচরাচর অরূণী এত গভীর মনোযোগে আয়না দেখে।অরূণী সেলিনা আহমেদের উপস্থিতি টের পায় না।
– “জ্বর কমেছে তোর? আজ এত তাড়াতাড়ি কলেজে যাচ্ছিস?”
অরূণী কলেজ ব্যাগ’টা কাঁধে নিতে নিতে বলল, “আম্মা লেখাপড়ার ইচ্ছে থাকলে জ্বর-টর ওসব কিছু না।কত দিন পর কলেজে যাচ্ছি তাই এত তাড়াতাড়ি।”
সেলিনা আহমেদ বেশ অবাক হয়ে বলল, “হঠাৎ এত লেখাপড়ার ইচ্ছে আসলো কোত্থেকে?”
অরূণী ততক্ষণে রুম থেকে বের হয়ে গেছে।বাসা থেকে বের হয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলে রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে।অরূণী’কে দেখে দূর থেকেই হালকা হাসলো।অরূণী এক ঝলক হেসে সামনের দিকে পা ফেলছে। রুদ্রর সামনে গিয়ে চুপ মেরে দাঁড়িয়ে রইল।কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। রুদ্র অরূণীর দিকে তাকিয়ে বলল, “জ্বর কমেছে?”
অরূণী বেশ অবাক হলো।রুদ্র’কে তো বলে নি জ্বরের কথা।
– “আপনি জানলেন কীভাবে আমার জ্বর এসেছে?”
– “তোমার এই অদ্ভুত অসুখের কথা তো আমি জানি।জ্বর কমেছে না-কি জ্বর নিয়েই কলেজে যাচ্ছো?”
– “কপালে হাত দিয়ে দেখেন জ্বর আছে না-কি গেছে।”
কথাটা বলেই জিভ কাটলো অরূণী।রুদ্রও হাসলো। তারপর আশেপাশে তাকালো রিক্সার খোঁজে। রুদ্র রিক্সা ডেকে অরূণীর দিকে তাকিয়ে বলল, “এক রিক্সায় যাবে?”
অরূণীর মেজাজ’টা চট করে খারাপ হয়ে গেল।রাগ’টা চেপে রেখে বলল, “না,না আপনি তো আমার খালার হাজবেন্ড আপনার সাথে এক রিক্সায় যাওয়া যায়?”
রুদ্র আবার হেসে ফেলল, “মেয়ে তুমি এত কথা বলতে পারো!”
দুইজন রিক্সায় বসে।অরূণী অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে বলল, “আমার না এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি আমাকে–”
– “কী তোমাকে?”
– “কিছু না।”
রুদ্র আবার হাসলো।বলল, “এখন যদি সূর্য দেখে ফেলে?”
অরূণী হকচকিয়ে উঠে।পর মুহূর্তে মনে পড়ে সূর্য সিলেট গিয়েছে।রিক্সা চলতে থাকে।হালকা শীত পড়তে শুরু করেছে এখন।ঠাণ্ডা বাতাস বইছে শির শির করে।
– “ভাইয়া-য়ায়ায়া।”
রুদ্র অরূণীর দিকে ফিরে তাকায়।ভ্রু কুঁচকে বলল, “ভাইয়া?কীসের ভাইয়া?কে ভাইয়া?”
অরূণী ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তো কী?স্যার?”
রুদ্র মৃদু স্বরে বলল, “স্যারও না ভাইয়াও না।অন্যকিছু।”
অরূণী হাসি চাপিয়ে বলল, “অন্যকিছু?অন্যকিছু আবার কী?বেহাই?”
রুদ্র অরূণীর কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু স্বরে বলে, “প্রেমিক।”
অরূণী সর্বাঙ্গে কেঁপে ওঠে।কী মোহময় গলা!প্রেমিক শব্দ’টা অরূণীর কানে বার বার ধ্বনি- প্রতিধ্বনি তুলছে।চোখ বুঁজে যাচ্ছে আবেশে। রুদ্র অরূণীর দিকে তাকিয়ে আবার বলল, “কী আবার জ্বর আসবে না-কি?আমার তো পকেটে সব সময় প্যারাসিটামল,নাপা-এক্সট্রা ইত্যাদি ইত্যাদি ঔষধ নিয়ে ঘুরতে হবে।”
– “এই মামা থামান।”
রুদ্র অরূণীর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়, “কেন থামাবে? তোমার কলেজ কী এখানে?”
রুদ্র আশেপাশে তাকিয়ে আবার বলল, “কলেজের সামনে আসো নি তো।”
রিক্সা থামে।অরূণী বলল, “একটা জায়গায় যাবো।”
– “কোন জায়গায় যাবে?কোথায় যাবে?তোমার কলেজে যেতে হবে না?”
অরূণী উত্তর না দিয়ে রিক্সা থেকে নেমে যায়। রুদ্র রিকশায় বসে আছে। অরূণী ব্যস্ত গলায় বলল, “আহা নামছেন না কেন?”
রুদ্র রিক্সা থেকে নেমে রিকশাওয়ালা ভাড়া মিটিয়ে অরূণীর দিকে তাকিয়ে বলল, “কী হলো হঠাৎ?”
– “এক জায়গায় যাবো চলেন।”
– “কোথায় যাবে?”
– “এত প্রশ্ন করেন কেন?যাবো না আজ কলেজে।আপনারও ভার্সিটিতে যেতে হবে না।”
রুদ্র আর প্রশ্ন করলো না।অরূণী রুদ্রর দিকে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “হাত ধরুন। আপনি হাত ধরলে আমার ভালো লাগে।”
রুদ্র অপ্রস্তত ভাবে তাকালো অরূণীর দিকে। অবাক হতে গিয়েও হলো না।অরূণী তো বরাবরই অদ্ভুত।রুদ্র অরূণীর হাত ধরলো।অরূণী চঞ্চল চোখে তাকাচ্ছে রুদ্রর দিকে। চোখে-মুখে খুশির দীপ্তি।অরূণীর চোখে জোড়া চুপিসারে যেন বলছে ‘এই তো পাইয়াছি তাঁহারে।’ অরূণীর চোখে হালকা করে কাজল দেওয়া।রুদ্র তাকালো কয়েকবার।কেউই কথা বলছে না।ধীর গতিতে হাঁটছে। যখন দুটি হৃদয় এক হয়ে যায় তখন বোধ হয় কথা বলার প্রয়োজন হয় না।কথা হয় হৃদয়ে হৃদয়ে।অরূণীর বুকের ভিতর দুরুদুরু করে কাঁপছে।সময়’টা এখানেই থেমে থাকুক।অরূণী রুদ্র’কে নিয়ে গেল সেই চায়ের দোকানে।যেখান থেকে রুদ্রর নাম জেনেছিলো।
– “এই দোকানে আপনি সব সময় চা খেতেন না?”
রুদ্রর অবাক গলা, “তুমি জানলে কী করে?”
অরূণী আর উত্তর দিলো না। দোকানি রুদ্র’কে দেখে হেসে দিলো।পরক্ষণে অরূণীর দিকে তাকাতেই হাসি’টা যেন মিইয়ে গেল।
– “অরূণী এখানে এসেছি কেন আমরা?”
– “চা খাবো।এই দোকানির কাছ থেকেই আপনার নাম জেনেছি।”
রুদ্র হতাশ হয়ে বলল, “আর কী কী পাগলামি করেছো তুমিই জানো।”
অরূণী দোকানের বেঞ্চিতে বসলো। রুদ্র’কে দোকানি’কে কাছে ডেকে কানে কানে বলল, “ভাই এই মাইয়া পাইলেন কই? সাংঘাতিক মাইয়া।এই মাইয়ার লগে প্রেম-ট্রেম করেন না-কি? সাবধানে প্রেম কইরেন।নয়ত কিন্তু বোমা মাইরা উড়ায় দিবে।আমার দোকান উড়ানের হুমকি দিছে কয়েকবার।”
অরূণী সরু চোখে তাকিয়ে আছে সেদিকে। চকিত হরিণীর মতো কান দুটো খাড়া করে রেখেছে। কিন্তু শুনতে পেলো না। দোকানির কথার প্রত্যুত্তরের রুদ্রও নিচু স্বরে বলল, “না ভাই উড়াবে না।আমার জন্য তাঁর মন ভরা ভালোবাসা।”
– “তবুও ভাই সাবধানের মাইর নাই। আপনের ফোন নম্বরের লাইগা আমারে পাগল বানায় ফেলছিলো।”
– “বলেন কী কবেকার ঘটনা এসব?আপনি তো আমায় বলেন নি এসব।”
– “বলমু কেমনে ওই যে হুমকি ধামকি দিছে।”
অরূণী রুদ্র’কে বিরক্ত গলায় ডাকল, “এ্যাই যে।”
রুদ্র দুই কাপ চা হাতে অরূণীর কাছে আসে। সাথে সাথে অরূণী জিজ্ঞেস করে, “কী কথা বলছিলেন?”
– “ও কিছু না।”
– “আমি জানি কী বলেছে।”
রুদ্র হেসে ফেলল, “মানুষ’কে হুমকি দেও না?”
অরূণীও আদুরে ভঙ্গিতে হাসলো। রুদ্র চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল, “নেও,চা খাও।”
– “উঁহু আমি চা-কফি কিছুই খাই না।”
– “চা-কফি খাও না?কি অদ্ভুত ব্যাপার।সত্যি খাও না?তাহলে এখানে আসলে কেন?”
– “এমনি আসলাম।আপনি তো চা খোর মানুষ।সমস্যা নেই আমি চা বানাতে পারি।”
রুদ্র চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, “বানাতে না পারলেও শিখে নেও। সারাজীবন আমায় চা বানিয়ে খাওয়াতে হবে না।”
সারাজীবন চা বানিয়ে খাওয়াতে হবে?কথা’টা গভীর ভাবে ভাবলো অরূণী।এক আকাশ প্রশান্তি বয়ে গেল মনে।অরূণী নিজেকে সংযত করলো।না,বেশি খুশি হওয়া যাবে না।জ্বর এসে যাবে।অরূণী বাসায় যাওয়ার আগে রুদ্রের হাতে চিঠির মত একটা কাগজ ধরিয়ে দিতে গেল। রুদ্র বাসায় গিয়ে খুলল কাগজ’টা।
“রাস্তাঘাটে দাঁত বের করে হাসবেন না।”
পুরো কাগজ জুড়ে শুধু এই টুকু লেখা। এর ভিতর কিরণ ফোন দিয়ে বলল, “কই তুই?সমস্যা কী তোর? কতক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছি?”
– “বাসায় আমি।ফোন সাইলেন্ট হয়ে ছিলো ভুলে।”
– “ভার্সিটি রেখে বাসায় কেন তুই?”
– “আরে ওই অরূণীর সাথে একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম।”
কিরণ বিস্ময় ভরা গলায় বলল, “বাপরে বাপ। এতদূর!”
– “এতদূর?কী এতদূর?”
– “না মানে ঘুরতেও যাস।”
– “তোর হিংসে হয়?”
– “আমার কেন হিংসে হবে? কিন্তু ভয় হয়।অরূণী তোরে যদি মাইর-টাইর দিয়ে বসে। সাবধান দোস্ত!”
– “তোর মাইর খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে না-কি?”
– “আমার গার্লফ্রেন্ড অত সাংঘাতিক না।যে জন্য ফোন দিয়েছিলাম।সন্ধ্যায় দেখা করিস।”
______________
অরূণী বাসায় ঢুকতেই সেলিনা আহমেদের সামনে পড়ে। সেলিনা আহমেদের কঠিন স্বর, “কলেজ রেখে কোথায় গিয়েছিলি?”
অরূণীর বুকের ভিতর ধ্বক করে উঠলো।কলেজে যায় নি সেটা তো সেলিনা আহমেদের জানার কথা না। অপ্রস্তুত ভাবে বলল, “কোথায় যাবো আবার?”
সেলিনা আহমেদের গলা আরো শক্ত হয়ে আসে, “তাইতি তো একটু আগে এসে তোকে খুঁজে গেল।”
অরূণীর টনক নড়ে এবার।মনে মনে তাইতির উপর ক্ষুব্ধ হচ্ছে।অরূণী তৎক্ষণাৎ কোনো উপযুক্ত মিথ্যে খুঁজে না পাওয়ায় রুমে চলে যায়।
গোসল সেরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় অরূণী।অরূণীর স্কুল-কলেজ ফাঁকি দেওয়ার অভ্যাস আছে।তাই এই বিষয় নিয়ে বেশি কিছু বললো না সেলিনা আহমেদ। তাছাড়া সূর্যের এ্যাংগেজমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত।তাই হয়ত ভুলেই গেছে এই বিষয়টা। দিন গুলো যেন স্বপ্নের মত কাটছে।স্বপ্নের থেকেও সুন্দর।অরূণীর বার বার মনে হচ্ছে পৃথিবীর টা সুন্দর কেন?এত রঙিন কেন?অরূণীর শরীরের প্রতি রন্ধ্র রোমাঞ্চিত হচ্ছে।আচমকা ফোনের রিংটোনের অরূণীর এই রোমাঞ্চকর ভাবনা চিন্তার ব্যাঘাত ঘটে।তাইতি ফোন দিয়েছে।তাইতি ঝাঁঝালো গলায় বলল, “প্রেম পড়ে দিন-দুনিয়া সব ভুলে গেছিস না-কি? সমস্যা কী তোর?”
অরূণী হৃষ্টচিত্তে প্রত্যুত্তর করল, “উফ্ দোস্ত প্রেম কী মজা!খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।”
– “তুই কি আর কলেজে আসবি না?”
– “কালকেই আসবো।”
– “তা তোর প্রেম কেমন চলে?”
– “রকেটের মত চলছে।”
হঠাৎ তাইতি আগ্রহী গলায় জিজ্ঞেস করল, “টাকা দিয়েছিস উনার?”
অরূণী চমকে গিয়ে বলল, “না দোস্ত।ফেরত দেওয়া হয় নি।ভালো কথা মনে করেছিস।কালই দিয়ে দিবো।কাল তো পড়াতে আসবে।”
সকাল বেলা রুদ্র পড়াতে আসলে অরূণী একটা খাম রুদ্রর সামনে রাখে। রুদ্র বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কী এটা?”
– “টাকা।যে টাকা ধার নিয়েছিলাম।”
রুদ্র কিছুক্ষণ কি যেন ভেবে বলল, “কিন্তু টাকা তো আমি এখন ফেরত নিবো না।”
– “নিবেন না মানে?কেন নিবেন না?”
– “নিবো তবে এখন না।বসন্তে। বিয়ের বসন্তে।বিয়ের বসন্ত বুঝো তো?”
অরূণী অপ্রস্তত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।কী সব বলছে রুদ্র?লজ্জা পাওয়া উচিত এখন? রুদ্র অরূণীর হাতের কাছে খামটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “নেও এখন তোমার কাছে রাখো।”
অরূণী আহত গলায় বলল, “আমার জ্বর আসবে।আবার জ্বর আসবে।”
রুদ্র হেসে ফেলল।অন্যদিকে অরূণীর বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। কী বললো রুদ্র?অরূণী শিউরে উঠছে। অরূণীর গলা ধরে আসছে। রুদ্রর কিছু’টা কাছাকাছি গিয়ে বলল, “আপনি আমার প্রেমিক না। আপনি আমার তোলপাড়।”
রুদ্র তাকালো অরূণীর দিকে। মোহময় দৃষ্টি। রুদ্র বুঝতে পারলো এই অদ্ভুত রকমের মেয়েটা ওঁর হৃদয় চরাচর নিজের দখলে নিয়ে যাচ্ছে। রুদ্র কিছুক্ষণ পর গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করে বলল, “এখন পড়াবো।আর একটা কথা বলবা না।”
– “একটা কথা বলবো। তারপর আর বলবো না।ওই যে একটা কাগজ দিয়েছিলাম।”
– “রাস্তা ঘাটে হাসবো না শুধু তোমার সামনে হাসবো। হয়েছে এবার?”
অরূণীর চোখে মুখে উপচে পড়া আবেগ। রুদ্রর প্রতিটা কথা এত মোহনীয় কেন?কি যেন কী আছে।পড়ার ভিতর অরূণী যতবার কথা বলতে উদ্যত হয়েছে তত বারই রুদ্রর ধমকে থেমে গেল।কঠিন স্বরে বলল, “তোমার আব্বাকে বলো নতুন টিচার রাখতে।ছেলে টিচার নয় মেয়ে টিচার। এভাবে ছাত্রীর সাথে প্রেম করার পক্ষপাতী আমি নই।”
অরূণী ঠোঁট উল্টিয়ে বলল, “সকাল সকাল আপনায় দেখে প্রেমে মন’টা ভরে যায়।অন্য টিচার..অসম্ভব।আর ছাত্রীর সাথে প্রেম মানে?আমি টিচারের প্রেমে পড়ি নি।আমি বাস স্ট্যান্ডে দেখা রুদ্রর প্রেমে পড়েছি।”
রুদ্র অরূণীর যুক্তিতে যেন পরাস্ত হলো। সেলিনা আহমেদ আর সাহেদ আহমেদ সূর্যের এ্যাংগেজমেন্টের ব্যাপারে আলোচনা করছে। সূর্য বাসায় না। সেলিনা আহমেদ নিজের রুম থেকে অরূণী’কে ডেকে বলল, “রুদ্র’কে নাস্তা দে অরূণী।টেবিলে রেডি করা আছে সব।”
– “অরূণী আমি খেয়ে এসেছি।খাবো না।”
কিন্তু প্রেমিকা জাতির জোরাজুরি উপেক্ষা করার ক্ষমতা খুব কম পুরুষেরই আছে।অরূণী রুদ্রর পাশে চেয়ার টেনে বসে চাপা গলায় বলল, “আমায় খাইয়ে দিতে হবে।”
রুদ্রর চক্ষু চড়কগাছ, “অরূণী পাগলামি করো না।একটু দূরত্ব রেখে বসো।যে কেউ দেখে ফেলবে।”
– “কেউ দেখবে না।খাইয়ে দিতে বলছি খাইয়ে দিবেন।এত বেশি কথা বলেন কেন? আব্বা-আম্মার রুম বাহির থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে রেখে এসেছি।”
– “মানে?”
– “বাংলাই তো বললাম মানে বুঝলেন না?আব্বা-আম্মা জিজ্ঞেস করলে বলল ভুলে লাগিয়ে রেখে এসেছি।যদিও তারা জরুরি বিষয়ে আলোচনা করছে। এক ঘণ্টার আগে বের হবে না।তবুও সাবধান থাকা ভালো।”
রুদ্র মনে মনে শুধু বললো সাংঘাতিক,আসলেই সাংঘাতিক।অরূণী’কে খাইয়ে দিবে?কেমন অস্বস্তি লাগছে রুদ্রর।এই অস্বস্তির কথা কাউকে বলা যাবে না তাহলে প্রেমিক সমাজে রুদ্রর ঠাঁই হবে না। রুদ্র নাস্তা অরূণীর মুখে তুলে দিলো লাগলো।
– “অরূণী তুমি সাংঘাতিক প্রেমিকা।”
(চলবে)