দিওয়ানা পর্ব ১৩

#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_১৩

সোহা দরজায় হাত রেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। সামনের দৃশ্য দেখে তার সারা শরীরে আগুন লেগে যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে সোহা কিন্তু মুখ একদম নরমাল হয়ে আছে। এখন তাকে দেখে কেউ বলবে না যে সে রেগে আছে নাকি শকে। ছোটো থেকে মার খেতে খেতে এই গুণ টা রপ্ত করেছে নিজের মধ্যে।

রুমের ভিতরে আমন আদুল গায়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তাকে লেপ্টে আছে মণিকা। মণিকার পরনের শার্ট এর বাটান প্রায় সব খোলা বললে চলে। আমন নিজের থেকে মণিকা কে সরিয়ে দিতে চাইছে আর মণিকা আর জোক এর মত জড়িয়ে নিচ্ছে। দরজায় আওয়াজ হওয়ার জন্য দুজনই একসাথে ঘুরে তাকায় দেখে সোহা দাঁড়ানো। আমন এর দৃষ্টির মধ্যে সোহা দেখে কে কোনো ভয় পাওয়ার চিহ্ন নেই একদম শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে। সোহার দিকে তাকাতেই আমন এর শান্ত চোখে আসতে আসতে মুগ্ধতায় ভর করে সোহা কে দেখে। সোহা খুব সুন্দর একটা হোয়াইট এভিনিং গাউন পড়েছে খোলা চুল গুলো থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে। মণিকা আমন কে ছেড়ে দিয়ে ভয় পাওয়ার ভান কিরে নিজের শার্ট ঠিক করছে আর শয়তানি হাসি নিয়ে সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছে।

সোহা কোনো কথা না বলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমন এর চোখের দিকে তাকায় যেখানে দেখতে তার জন্য অঢেল ভালোবাসা। যেখানে তাকে কাছে পাওয়ার আবেদন। যেখানে আছে তাকে ঘিরে একরাশ মুগ্ধতার চিহ্ন। সোহা সেখানে কোথায় তাকে ধোকা দেয়ার চিহ্ন পায় না। মণিকা কে না দেখার ভান করে সোহা চুপচাপ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নেয়।

-“এইরকম ভাবে না দাঁড়িয়ে থেকে শার্ট পড়ে নিয়ে নিচে চলো মণি খেতে ডাকছে আমাদের। সোহা শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে।

আমন তার মুখে একটা মিষ্টি নিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে ঘুরে যায় তার ড্রেস করার জন্য। আর এদিকে মণিকা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আগের মত শয়তানি হাসি টা নেই সোহার কথা শুনে ওটা গায়েব হয়ে গেছে। সোহা এক নজর মণিকা কে দেখে নেয়। আমন এর হয়ে গেলে সোহার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। আমন ও পুরোই হোয়াইট পড়েছে হোয়াইট জিন্স আর হোয়াইট টি -শার্ট আর তার সাথে হোয়াইট ব্লেজার
আর পায়ে হোয়াইট লোফার। সোহা এক নজর দেখে নেয় আমন কে। তারপর মণিকা এর দিকে নিজের দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়।

-“মিস মণিকা আপনার এই সব ট্রিকস পুরোনো হয়ে গেছে মানে নতুন কিছু এপ্লাই করার কথা ভাবুন। নাহলে আপনার এই সমস্ত ট্রিকসে কেউ আর ফাঁসবে না আর আমি তো একদমই নয়। আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন আমি কি বলার চেষ্টা করছি। সোহা করুন মুখ করে বলে ওঠে মণিকা এর দিকে তাকিয়ে।

-” আর একটা কথা আমার বিশ্বাস এতটা ঠুঙ্ক না যে আপনার এই সমস্ত কাজে যেটা ভেঙে যাবে। একটা সম্পর্কে বিশ্বাস টাই আসল কথা যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে কোনো ভালোবাসা নেই তাই আগে মানুষ কে বিশ্বাস টা অর্জন করা উচিত। আপনার এই সমস্ত কাজে হয়তো আমার মতো আরো অনেক মেয়ের সম্পর্ক নষ্ট করেছেন কিন্তু আমি সেই সব মেয়েদের মধ্যে পড়িনা যারা কিছু দেখলো কি দেখলো না বা প্রতিপক্ষ এর কথা শুনে কাউকে ব্লেম করে দিলাম বা আমার বিশ্বাস ভেঙে ভালোবাসা ঘৃণা তে পরিণত হয়ে গেলো। আমি সোহা জৈন যে মানুষ কে আমি একবার বিশ্বাস করি তার প্রতি সহজে আমার অবিশ্বাস টা আসে না। সে বিশ্বাস ঘাতক হলেও তার মুখের কথা শোনা আর প্রমাণ দেখা অবশ্যই জরুরি অনেক সময়ে আমাদের চোখের দেখা ও ভুল হতে পারে তাই আগে সেই মানুষটার মুখের থেকে সত্যি কথাটা শোনা উচিৎ আর মুখ যদিও বা মিথ্যে বলে চোখ কিন্তু মিথ্যা বলতে পারে না। তাই আমি আমার মন কে আমার নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি তাই আপনার এইসব জিনিসে আমার বিশ্বাস গলে যাবে না ওকে এবার নিজের রাস্তা দেখতে পারেন নাহলে আপনার ক্ষতি হতে পারে আমি কিন্তু খুব একটা ভালো নয়। সোহা তীক্ষ্ণ আওয়াজ বলে ওঠে।

-“চলো মন। সোহা আমন এর কাছে এসে আমন এর হাত জড়িয়ে নিয়ে নিচের দিকে পা বাড়ায়।

আমন মুখে হাসি নিয়ে সোহার সাথে বেরিয়ে যায় সে তার জেলেবির কথা শুনে খুব প্রাউড ফিল করছে। তার জেলেবির কথা গুলো তার হৃদয়ে গিয়ে লেগেছে। সে বুঝতে পারে তার জেলেবির মনে তার জন্য কতটা বিশ্বাস আর ভালোবাসা লুকিয়ে আছে।

এদিকে মণিকা পুরো রাগে হাসফাস করছে তার কোনো চাল কাজে দিলো না বরং তাকেই লেকচার শুনিয়ে গেলো। হুম এমন করে যে কত সম্পর্ক ও ভেঙে দিয়েছে শুধু মাত্র নিজের অহংকার এর জন্য আর এই মেয়ে বলে কি না বিশ্বাস। সোহার বলা প্রত্যেকটা কথা ভাবছে আর রাগে আগুন হচ্ছে নিজের পা মেঝেতে ঠুকে সে ও বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

—————

সোহা আমন নিচে নামতেই দেখতে পায় বাড়ির ইন্টেরিওর কেমন একটা বদলে বদলে গেছে কেমন একটা পার্টি পার্টি ভাইবস আসছে। সোহা আমন নামতেই ওদের দুটো কে ধরে নিয়ে গিয়ে টেবিলে বসিয়ে দেয় আমন এর মম। সোহা ও আমন এর পছন্দের চিলি চিকেন ও সাথে চাউ বসিয়ে দেয় সাথে চিকেন স্যুপ। দুজনেই খাবার মুখে দিতেই হু হা করে ঠেলে ওঠে। আমন খাবার মুখে নিয়ে চুপচাপ গুম হয়ে বসে যায় সাথে সাথে চোখ মুখ লাল হয়ে যায় আর চোখের কোণে পানি চিক চিক করছে।

-“ঝাল.. ঝাল । সোহা জোর চিৎকার করে ওঠে নিজের মুখে হাত চেপে ধরে।

সোহার চিৎকার করার সাথে সাথে এবার আমন ও নিজের মুখের খাবার ফেলে মুখ দিয়ে আওয়াজ করতে থাকে আর পানি খাচ্ছে। ওখানে থাকা বাকিরা এই দৃশ্য দেখে পুরো বেকুব বনে গেছে চিলিচিকেনে ঝাল এটা ভেবেই যাচ্ছে যতদূর জানা এটাতে ঝাল কম আর তার সাথে মিষ্টি ভাব থাকে। কিন্তু ওদের দুজনের ঝাল পছন্দের তাই মিষ্টির জায়গা ঝাল একটু বেশি করে দেয়া কিন্তু সেটাতো সব সময়ে থাকে। সেখানে এদের দুজনের এই ঝাল ঝাল করে চিৎকারে সব হতভম্ব হয়ে গেছে। ওদের দেখে মনে এক বাটি ঝাল গুলে খাইয়ে দেয়া হয়েছে।

-“এই তোদের কি হয়েছে বলত আজকে এত ঝাল ঝাল করে চিৎকার করছিস কেনো তোরা ঝাল খাস তাহলে? আমন এর মম সন্দেহ চোখে দুজন এর দিকে তাকায়।

-” সোনাইমা কি হয়েছে তোর কি খুব ঝাল লাগছে? সম্রাট চৌধুরী জিজ্ঞেস করে।

আমন সোহা একবার দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে নেয়। তারা তো জানে এই ঝাল লাগার কারণ কি আরে বাবা এত কামড়াকামড়ি করলে গালের আর কিছু থাকে নাকি তাই তো ঝাল লাগছে শয়তান ছেলে একটা আমার গালের আর কিছু রাখলো না। সোহা মনে মনে গাল দিয়ে যাচ্ছে আমন সোহার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে সে বুঝতে পারে সোহা তাকে মনে মনে গাল দিচ্ছে।

-“উফ মম আমরা ঝাল এর জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছি তুমি কোথায় ঝাল কমার জন্য কিছু করবে তা না তুমি আরও কোথায় কি সব বৃত্তান্ত জানতে বসে গেলে। আমন বেশ ঝাঁঝের সাথে বলে ওঠে।

ওদিকে আমন এর বদমাশ বন্ধু গুলো আমন সোহার চোখে চোখে কথা বলা দেখে বুঝতে পারে যে আসল কেসটা কোথায় তারা এবার মুচকি মুচকি হাসছে আর আমন কে টিজ করছে। মণিকা ওদের এইসব দেখছে আর রাগে জ্বলছে পুরো।

-“লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান তোমাদের সবাই কে কিছু বলার আছে বিশেষ করে আমার সোনাই মা ও রোদ কে। আজকে মেনলি ওদের নিয়েই সব কিছু। আজ ওদের এনগেজমেন্ট পার্টি রাখা হয়েছে যেটা বিশেষ ঘরোয়া ভাবেই শুধু মাত্র আমন এর ফ্রেন্ডস আর আমাদের কিছু রিলেটিভ মিলেই মারা এখন এখানে যারা যারা উপস্থিত আছে শুধু মাত্র তাদের নিয়েই। আজ পার্টি এর বিষয়ে আমি আর আভা পুরোটাই ওদের দুজন কে সারপ্রাইজড দেয়ার জন্য অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছি ওদের পছন্দ মত। কারণ ওরা দুজনেই কেউ পছন্দ করে না জাঁকজমক। সম্রাট চৌধুরী সবার মাঝে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে।

এদিকে আমন তার ড্যাড এর কথা শুনে যেমন অবাক হয়েছে তেমন খুশি ও হয়েছে আমন গিয়ে জড়িয়ে ধরে তার ড্যাড কে। সোহা দাঁড়িয়ে আছে অবাক হয়ে সে বুঝতে পারছে না সে কি করবে তার চোখে বেয়ে বিন্দু বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়ছে তার জানা ছিল না যে তার জন্য এত কিছু অপেক্ষা করছে তার কপালে এত সুখ আছে আমন এর মম সোহা কে এই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে আর কাঁদতে দেখে মুচকি হেসে সোহার দিকে এগিয়ে গিয়েই সোহা কে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। আমন এর বন্ধু গুলো এটা শুনেই সব খুশি হয়ে গেছে সবাই হাততালি দিচ্ছে কেউ সিটি দিচ্ছে। কিন্তু মণিকা রাগী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই খবরটা শোনার পর তার পুরো শরীরে যেনো কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

আমন আর সোহা কে ধরে মাঝখানে আনা হয়েছে এখন বুঝতে পারছে দুজন যে তখন কেন সব কিছু চেঞ্জ চেঞ্জ লাগছিল। অ্যাস মুচকি হেসে সোহার আর আমন এর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমন এর মম সোহার হাতে একটা প্লাটিনাম এর প্যেইর রিং তুলে দেয় আর আমন এর ড্যাড আমন এর হাতে একটা প্লাটিনাম এর ওপরে হিরের খুব সুন্দর ডিজাইন এর রিং তুলে দেয় এই দুটোই কাপল রিং। সবাই হাততালি দিচ্ছে। অ্যাস মুচকি হেসে সোহার হাত ধরে আমন এর দিকে এগিয়ে দেয়। আমন সোহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে রিং পড়াতে নিয়ে আবার হাত টেনে নেয়। এতে সবাই হই হই করে চিৎকার করে ওঠে। আর সোহা লজ্জা পেয়ে আমন এর দিকে চোখ মটকে তাকায় মুখে রয়েছে লাজুক হাসি। আমন সোহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চোখ টিপে রিং টা পরিয়ে দেয়। আবারও সবাই হাততালি দিয়ে ওঠে। সোহা রিং টা পরে নিয়ে এবার ফিরে চলে যেতে চায়। আর আমন অবাক আর অসহায় হয়ে তাকিয়ে।

-“আরে! বলে চিৎকার করে ওঠে আমন।

-” কি রিং পড়াতে হবে না কি? সোহা এবার বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

-“নে ভাই তুই শুরু করেছিস এবার সামলা। অ্যাস হেসে বলে ওঠে।

ওখানে থাকা বাকিরা ও হেসে ফেলে সবার আর সোহার হাসি দেখে আমন মুখ ঘুরিয়ে নেয়। সোহা মুচকি এগিয়ে গিয়ে আমন এর হাত টেনে আমন এর হাতে রিং পড়িয়ে দেয়। সাথে সাথে দুজনের মুখে ফুটে ওঠে মিষ্টি হাসি।
.
.
.
.💚💚💚
.চলবে…..

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here