দিওয়ানা পর্ব ১২

#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_১২

সোহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমন এর দিকে। এখনও এই মুখে ফুটে আছে রাগ ভয় আর যন্ত্রণার ছাপ। আর এগুলো সব যে তাকে নিয়ে সেটাও জানে সোহা। চুল গুলো কিছুটা কপালে পড়ে আছে। কান আর গাল দুটো লাল লাল স্ট্রবেরী হয়ে আছে। দেখেই লোভ লাগছে মন চাচ্ছে কামড়ে খেয়ে ফেলতে। সব ফেস গুলোই আগুন যাকে বলে মারাত্মক সুন্দর। যে কেউ দেখলেই পা পিছলে যাবে। রাগী ফেস হাসি ওয়ালা ফেশ ইনোসেন্ট ওয়ালা সব কিছুই মারাত্মক। আচ্ছা ঘুম ফেস টা তো দেখা হয়নি। না ছোটো বেলায় কিউট ছিল এখন দেখতে কেমন হয়েছে। ইশশশশশশশ ভাবতেই লজ্জা করছে যেনো। সোহা এক দৃষ্টিতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চেক আউট করছে আমন কে।

আমন এক মনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। আসার সময়ে বাইক নিয়ে আসলেও সোহার কথা ভেবে পরেই ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি আনিয়ে বাইক পাঠিয়ে দিয়েছে। আর অ্যাস ও চলে গেছে নিজের গাড়ি নিয়ে। আমন বুঝতে যে সোহা তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সে তাকাবে না। এখন যদি আমন তাকিয়ে ফেলে তাহলে সব রাগ যন্ত্রণা সব কিছুর ঝুল সোহার ওপরে থেকে উঠবে। কিন্তু এই মেয়ে যে তার দিকে তাকিয়েই আছে তো আছে দেখো মনে হচ্ছে গিলে খেয়ে ফেলবে তাকে। এটা ভাবতেই মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। হটাৎ করেই আমন এক হাতে স্ট্রেয়ারিং রেখে সোহার দিকে ঝুঁকে এসে সোহার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দিয়ে সরে যায়।

এক সেকেন্ডের মধ্যে কোথায় থেকে কি হয়ে গেলো সোহা বুঝতে পারছে না। সে এখনও হতভম্ব হয়ে বসে আছে একই জায়গায় এখন পার্থক্য একটাই চোখ গুলো বড় বড় রসগোল্লার মত হয়ে গেছে যে চোখে এতক্ষণ নেশা কাজ করছিলো সেখানে এখন বিস্ময় এর ছাপ ফুটে উঠেছে। হাত টা ও আপনি আপনি ঠোঁটের ওপরে চলে গেছে।

-“চোখ গুলো ছোটো ছোটো করো না হলে এখুনি বেরিয়ে আসবে। আমন সোহার দিকে না তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

সোহা ঠিক কী হয়েছে বুঝতে পেরে নিজের মুখের থেকে হাত সরিয়ে নেয়। চোখ গুলো এখন ছোটো ছোটো করে ভ্রু কুঁচকে আমন এর ঠোঁটের বাঁকা হাসির দিকে তাকায়। হুট করেই সোহা নিজের সিট থেকে উঠে আমন এর হাত সরিয়ে দিয়ে কোলে উঠে বসে পড়ে। আমন অবাক হয়ে কিছু বলতে গেলেই সোহা আমন এর ঠোঁটের ওপর আক্রমন করে। আমন এর মাথার পিছনে হাত রেখে গলা জড়িয়ে নিয়ে আমন এর ঠোঁটে ডুবে যেতে থাকে।

আমন হঠাৎ আমন কাণ্ডে হতবাক হয়ে গেছে তার সুন্দর সুন্দর চোখ গুলো এখন পুরো বড় বড় হয়ে গেছে ঠিক মার্বেল এর মত তার হাত একটা স্ট্রেয়ারিং এর ওপর রাখা আর দৃষ্টি সামনে কিন্তু সে এখন পুরোই হতবুদ্ধি হয়ে আছে। সোহার প্রতিক্রিয়া দেখে আমন গাড়ি থামাতে গেলে সোহা আমন এর ঠোঁটে ডুবে থেকেই হাত দিয়ে ইশারা করে যেনো আমন গাড়ি না থামায়। আমন এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করে নিতে। আমন সামনে থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সোহার চোখের দিকে তাকাতেই চোখ টিপে দিয়ে ঠোঁটে কামড় বসাতে থাকে। আমন চুপচাপ সহ্য করছে এই মিষ্টি যন্ত্রণা। আমন নিরুপায় হয়ে এক হাত সোহার কোমরে রেখে আর এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে। আর সোহা মেতে আছে আমন ঠোঁট কামড়াকামড়িতে।

-“একবার শুধু বাড়িতে যায় তারপর দেখো জেলেবি আমি কি কি ভাবে আর কত রকম স্টাইল করে খাই। আমন শুধু এখন মনে মনে ভেবে যাচ্ছে আর গাড়ি ড্রাইভ করছে।

আমন গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন গাড়ি ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে সোহা মাঝে মাঝে আমন এর চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে আর আমন এর ঠোঁট নিয়ে পড়ে আছে। মনে হচ্ছে যেনো ওকে কেউ চকলেট এর ডিব্বা ধরিয়ে দিয়েছে আর সোহা ও মনের আনন্দে চুষে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ এর মধ্যে গাড়ি চৌধুরী প্যালেস এর গেট দিয়ে ভিতরে ঢোকে। আমন গাড়ি থামিয়ে মনে মনে বাঁকা হাসে।

-“এবার তোমাকে কে বাঁচাবে আমার হাত থেকে জেলেবি রানী। আমন মনে মনে বলে ওঠে।

গাড়ি থামিয়ে আমন এবার সোহাগ কষে জড়িয়ে ধরে। এতক্ষণ সোহা তার ঠোঁট এর অনেক জায়গায় কামড় দিয়ে কেটে ফেলেছে। এবার আমন এর পালা আমন সোহা কে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে পাল্টা চুমু খেতে থাকে। আমন এর চুমু খাওয়ার গতি দেখে সোহা চমকে যায়। নিজেকে ছাড়াতে চাইলে পারে না। আমন তার বাধন আরো শক্ত করে নেয়। সোহা পারে না পালিয়ে যায়। চোখ গুলো খুলে পিট পিট করে আমন এর চোখের দিকে তাকায়। আমন সোহার মুখ ডুবিয়ে রেখেই সোহার দিকে তাকায় সোহা কে পিট পিট করতে দেখে ভ্রু নাচায়।

-“এবার বোঝো কেমন মজা শুরু তুমি করেছিলে। আমন চোখ ভ্রু নাচিয়ে সোহা কে ইশারা করে।

আমন সোহা কে চুমু খেতে খেতেই পা দিয়ে গাড়ির দরজা খোলে আর সিট বেল্ট তো অনেক আগে খোলা হয়ে গেছে। সোহা কে ওই অবস্থায় নিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সোহা বুঝতে পারে আজ তার কপালে দুঃখ আছে আমন তাকে আজ সহজে ছাড়বেনা। তাই সেও আমন কে চুমু খেতে লেগেছে। এবার শুরু হয়েছে দুজনের মধ্যে চুমুর লড়াই। আমন সোহা কে নিয়ে ব্যাকইয়ার্ড চলে আসে। কাঠের তৈরি সিঁড়ি দিয়ে ওঠে ওপরে খুব সুন্দর করে কাঠের ছাউনি করা আছে। আর চারিদিকে থেকে বিভিন্ন লতা গাছ আর বিভিন্ন কাগজ ফুল বা বাগান বিলাস বা বাহারি ফুল দিয়ে ছেয়ে আছে। পাশে বসার জায়গা করা আছে আর তার পাশেই দোলনা আর এই ছাউনির সাথে লেগে আছে বড় একটা আকাশমনি গাছ। এখান থেকে সিঁড়ি করা আছে গাছের ডালে আর তার পরে খুব সুন্দর করে আকাশমণি গাছের ফুল ফল আর কাগজ ফুল ও লতা পাতা দিয়ে একটা ছোট্ট পাখির বাসার মত করে বানানো। পুরোটাই দেখলেই একটা ফুলের বাগান মনে হবে। আমন সোহা কে নিয়ে আসতে ওপরে উঠে যায়। নিজে ওপরে ওই পাখির বাসার মত জায়গাটাতে বসে সোহা কে নিজের পায়ের ওপর রেখে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেয় আর সাথে আমন ঝুঁকে গিয়ে চুমু খেতে থাকে। এটা কে চুমু ঠিক বলা যাবেনা এক কথায় কামড় বা লাভ বাইট বলা চলে।

-“ওহ প্লিজ মন এবার তো ছাড়ো আর কত কামড়াবে। সোহা আমন এর থেকে নিজের মুখ অতি কষ্টে ছাড়িয়ে নিয়ে হাফাতে হাফাতে বলে ওঠে।

-” উহুহু কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। শুরু টা কি আমি করেছি নাকি? আমাকে উষ্কে ছিল কে হ্যাঁ? কে আমার ঠোঁট টা কে চকলেট মনে করে খাচ্ছিল শুনি। আমন সোহা কে জড়িয়ে সোহার ঘাড়ে তিল এর জায়গায় নাক ঘষতে ঘষতে বলে ওঠে।

-” স্যরি তো আর হবে না রোদ। সোহা শিহরিত হয়ে কেঁপে ওঠে বলে।

-” হবে না বললে হবে না। হতে হবে তো। তাহলে আমিও এমন করে কামড় দিতে পারবো তাই না। বাঁকা হেসে ফিসফিসিয়ে বলে সোহার তিল এর ওপরে জোরে কামড় বসিয়ে দেয়।

সোহা মুখ দিয়ে চাপা আর্তনাদ করে ওঠে। আমন তার ইচ্ছা মত কামড় আর চুমু দিয়ে সোহা কোলে তুলে নেবে যায়। সোহা গাল ফুলিয়ে আমন এর গলা জড়িয়ে রেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আমন বাঁকা হেসে বাড়ির গেটের কাছে এসে সোহার নাকে কামড়ে দিয়ে নামিয়ে দেয়। সোহার হাত ধরে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায় দুজনে সোহা রাগে নিজেকে ছাড়াতে চাইলেও আমন আরো সোহা কে নিজের দিকে টেনে জড়িয়ে নিয়ে যায়। দুজন বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই লিভিং রুমে সবাই কে দেখতে চমকে যায়।

সোফায় আমন এর সব বন্ধু গুলো বসে আছে। বসে আছে বললে ভুল তারা এক একেকটা খেতে আছে। এদের মধ্যে মণিকা ও আছে। আর তাদের পাশে বসে তাদের সাথে কথা বলছে সম্রাট চৌধুরী। সোহা আর আমন কে এমন ভাবে দেখে তার চোখের মধ্যে যেনো আগুন জ্বলছে কিন্তু মুখ সিম্পল করে রেখেছে।

-“কিরে তোদের এত দেরি হলো কেনো তোরা তো অনেক আগেই নাকি বেরিয়ে গেছিলি শুনলাম। আভা চৌধুরী ওদের দিকে আসতে আসতে বলে।

-” জেলেবি কে নিয়ে একটু ডক্টর এর কাছে গিয়েছিলাম। আমন শান্ত ভাবে বলে ওঠে। এখনও সোহা কে আমন আগের মত নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছে।

-“ওমা ডক্টর কেনো কি হয়েছে সোনাই এর। হন্তদন্ত হয়ে বলে ওঠে আভা চৌধুরী।

-“রোদ সোনাই এর কি হয়েছে হ্যাঁ বলবিতো? কই ডক্টর আমাকে জানালো না কেনো? সম্রাট চৌধুরী ওদের পাশে থেকে লাফিয়ে উঠে সোহার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে ওঠে।

-“কিছু হয়নি মণি সিমসিম মাথার ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করতে গেছিলাম শুধু। সোহা আভা চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে।

-“রোদ তুই বল কি হয়েছে শুধু শুধু কেনো ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করতে যাবি? আজ সকালেই তো করিয়ে দিলি তাহলে? কি লুকাচ্চছিস আমাদের কাছে। সম্রাট চৌধুরী কঠিন ভাবে বলে ওঠে।

-” কিছু না ড্যাড ও মাথায় একটু হালকা আঘাত পেয়েছিলো আর তার থেকে একটু রক্ত পড়ছিল তাই ওকে ডক্টর দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমন মুচকি হেসে বলে ওঠে।

-” মানে কি করে হল বেশি লাগেনি তো? তোমরা কোথায় ছিলে। আয়ু আয়ু কোথায় ছিলে তোমরা সোনাই কে দেখে রাখতে বলেছিলাম না তোমাদের তাহলে ও আবারো মাথায় কি ভাবে আঘাত পেলো? সম্রাট চৌধুরী গলার আওয়াজ উঁচু করে বলে ওঠে।

আমন তার ড্যাড এমন করতে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। আর অ্যাস চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। তারা দুজনই জানে তাদের মম ড্যাড সোহা কে কতটা ভালোবাসে আর যদি জানতে পারে যে এটা মণিকা করেছে তাহলে না জানি কি করে বসে। সোহা তার মণি আর সিম সিম কে এক সাথে জড়িয়ে ধরে।

-“দেখো সিম সিম আমি একদম ঠিক আছি। সামান্য চোট পেয়েছিতো ওদের কোনো দোষ নেই। সোহা বাচ্চাদের মত করে বলে ওঠে।

-” মণি খিদে পেয়েছে তো। সোহা সব প্রশ্ন থেকে বাঁচতে বাচ্চার মত করে বলে ওঠে।

-“আহারে আমার মাটার খিদে পেয়েছে আর আমি দাঁড়িয়ে আছি। আয়ু যা ওকে সাবধানে রুমে নিয়ে যা ফ্রেশ হয়ে চলে আয় আমি খাবার দিচ্ছি। আভা চৌধুরী তাড়াতাড়ি করে বলে।

এতক্ষণ ওখানে থাকা বাকিরা তাদের খাওয়া ভুলে গিয়ে এই দৃশ্য দেখছিল। আমন ড্যাড ওদের কে এখানে আসার জন্য বলেছে তাই সবাই এখানে আসার অনুমতি পেয়েছে। তারা সবাই দেখছিল আমন এর কড়া রাগী ড্যাড কে আর তার সাথে মম কে ও এতক্ষণ তারা এসেছে তাদের সাথে তেমন কথা হয়নি। আর সোহার সামান্য ডক্টর দেখানো নিয়ে কি তুমুল ঝড় তুলেছিল দুজন। কতটা ভালোবাসে যে নিজের ছেলে মেয়ে কে ও বকে যাচ্ছে। আর মণিকা তো রেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে এই সব দেখে তার এই সব আদিক্ষেতা মনে হচ্ছে। সে এসেই আমন মায়ের সাথে কথার বলার চেষ্টা করেছিলো যাতে আমন এর মাকে হাত করে নিতে পারে কিন্তু সেগুড়ে মাটি। আমন এর মা ওদের সাথে তেমন কথা বলেননি। আর এখন সোহার সামান্য লাগাতে যেনো আদিক্ষেতা শুরু করে দিয়েছিলেন। এটা ভেবেই যেনো রাগে মণিকার মাথা ফেটে যাচ্ছে।
.
.
.
. 💚💚💚
. চলবে……

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । প্লিজ সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। শরীর খারাপ থাকা অবস্থায় লিখেছি তাই প্লিজ আপনাদের থেকে নাইস আর স্টিকার কমেন্ট থেকে বিরত থেকে গঠন মূলক মন্তব্যের আশা করছি।……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here