দিওয়ানা পর্ব ১১

#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_১১

সোহা ভ্রু কুঁচকে সামনে তাকিয়ে আছে। নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে বন্ধ করে নিয়েছে। কিন্তু মুখের এক্সপ্রেশন একদম শান্ত ।ওকে এই মুহূর্তে দেখলে কেউ বলবে না যে মেয়েটা রেগে আগুন হয়ে আছে। পাশেই দাড়িয়ে আছে অ্যাস রেগে বোম হয়ে।

-“এভাবে অসভ্যের মত সামনে এসে দাঁড়ানোর মানে টা কি মিস মণিকা। অ্যাস রেগে গিয়ে বলে ওঠে।

-” আরে অ্যাস তুমি না আমন এর বোন হও তাহলে এই চিপ ক্লাস মেয়েটার সামনে কি করছো। মণিকা কিছুটা ভালো মানুষি করে বলে ওঠে।

-“আমি কোথায় কি করছি? কোথায় যাচ্ছি? কার সাথে থাকছি এটা আজ পর্যন্ত আমার বাড়ির লোক ও আমায় জিজ্ঞেস করেনি সেখানে তুমি কোন হরিদাস পাল এলে আমাকে জিজ্ঞেস করার? আর তোমার সাহস কি করে হল আমাকে জিজ্ঞেস করার? অ্যাস কাঠ কাঠ গলায় বলে ওঠে।

-” অ্যাস তুমি আমার সাথে এই ভাবে কথা বলতে পারো না। আফটার অল আমি তোমার ভাই এর গার্ল ফ্রেন্ড হই। মণিকা নাকি সুরে বলে ওঠে।

-” হোয়াট… গার্ল ফ্রেন্ড। হা হা হা হা। বলেই অ্যাস হাসতে শুরু করে।

-“এই বউ মণি এটা নাকি ভাই এর গার্ল ফ্রেন্ড হয়। তোর সতিন লাইক সিরিয়াসলি? অ্যাস কথাটা বলেই আবারো হাসতে শুরু করে

-“তুমি কিন্তু একটু বেশি বেশি করছো। এটা আমার অপমান হয়ে যাচ্ছে। আমি কিন্তু তোমার ভাই কে বলে দেবো? মণিকা অ্যাস কে বলে ওঠে।

-“ও হ্যালো প্লিজ। মান অপমান বোধ টা আদেও সিকি পরিমাণ তোমার মধ্যে বেঁচে আছে নাকি? যদি সত্যি থাকতো তাহলে সকালের ওই চাটা টার কথা মনে থাকতো। আর এখানে আমাদের সামনে আসতে না। আর তুমি ভাই কে কি বলবে? যাও বল গো। চিৎকার করে বলে ওঠে অ্যাস।

চারপাশের সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে ওদের কে। আসলে সবে সোহা আর অ্যাস ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে ছিলো আর হটাৎ করেই ওদের সামনে এসে দাঁড়ায় মণিকা। ইউনিভার্সিটির সব সময়ে এর নাক উঁচু মেয়েটার এই ভাবে অপমানিত হতে দেখে সবাই চুপচাপ মুচকি হেসে দেখতে আছে।

-“অ্যাস তুমি সত্যি অনেক অসভ্য। আসলে তুমি হবে না কেনো কার সাথে মেলামেশা করো দেখতে হবে তো । একটা চিপ ক্লাস গাইয়্যা ঢ্যাড়শমার্কা ব্যাহেনজি ।তার নিজের না আছে কোনো ক্লাস না আছে কোনো ফ্যাশন সেন্স তাই তোর ওর মতো করে কথা বলো। মণিকা বলে ওঠে।

-” এই যে তুমি কি মনে করো হ্যাঁ নিজেকে? সব সময়ে এমনে ভোলা ভালা চেহারা নিয়ে থাকবে সবার কাছে মহান সাজবে। হতে পারো তুমি হাই ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে। কিন্তু তুমি নিজে একটা চিপ ক্লাস বুঝতে পেরেছ? মাথায় হাতে পায়ে এই সব ব্যান্ডেজ করে এসে মনে করেছো তুমি আমন এর সিমপ্যাথি আদায় করে আমন কে নিজের দিকে টেনে নেবে। না সেটা আমি কখনোই হতে দেবো না। বলেই মণিকা এগিয়ে গিয়েই সোহার মাথার থাকা ব্যান্ডেজ এ টান মারে।

-“ঠাসসসসস ।

সোহা মণিকার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে গায়ের জোরে গালে সপাটে একটা থাপ্পড় মেরে বসে যেটা পুরো সেকেন্ড ফ্লোরে সবাই কে চমকে দিয়েছে। সোহার মাথায় থেকে রক্ত পড়ছে হালকা হালকা। কারণ সোহার মাথার চোট টা গভীর ছিল যেটা এখনও শুকিয়ে যায় নি আর তার ওপরে আবার মণিকা টানাটানি করেছে। সোহার চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে গেছে সারা শরীর কাঁপতে শুরু করেছে একই দুর্বল আর তার ওপরে এই রকম সিচুয়েশনে পড়ে আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছে।

মণিকা সোহার হাতের থাপ্পড় খেয়ে কিছু সেকেন্ড এর জন্য পুরো হ্যং হয়ে গেছিল নিজের হুস সামলে নিয়ে রাগে আগুন হয়ে সোহার দিকে তেড়ে যায়। হাত উঠিয়ে মারতে নিলে আবার ও একটা থাপ্পড় পড়ে গালে।

-“ঠাসসসসস ।

আগের থাপ্পড় এর থেকে এটা যেনো আরো তিন গুণ বেশি জোরে আওয়াজ হয়। আর সাথে সাথে কিছুটা দূরেই ছিটকে পড়ে মণিকা। আর সাথে ওখানে থাকা বাকি গুলো ও হতবাক হয়ে সামনে দেখতে থাকে।

আমন সোহা কে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রেখে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেনো সামনে পড়ে থাকা মণিকা কে এই আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে ফেলবে। আমনই তখন সোহা কে মারতে আসা মণিকার হাত ঝাপটে দিয়ে নিজেই মণিকা কে থাপ্পড় দেয়। সোহা এখনও আমন এর বুকে পড়ে আছে। ওর সমস্ত শরীর এখনও কাঁপছে। আমন মণিকার দিকে থেকে নজর সরিয়ে মাথা নিচু করে দু হাত দিয়ে সোহার মুখ তুলে ধরে।

-“জে.. জেলেবি তুমি ঠিক আছো? অস্থির কন্ঠে বলে ওঠে আমন।

এখন আমন আর কোনো দিকে কোনো খেয়াল নেই এখন তার এক মাত্র ধ্যান জ্ঞান সব কিছুই সোহা হয়ে উঠেছে। সোহা কে এই অবস্থায় দেখে যেনো আমন পাগল হয়ে উঠেছে। আমন এর কথাই সোহা মাথা নাড়াতেই আমন কিছুটা শান্ত হয়। তবুও ওর মাথার থেকে বেরোনো রক্ত দেখে যেনো আরো বেশি জ্বলতে থাকে।

মণিকা উঠে দাঁড়িয়ে আমন এর পাগলামি নিজের চোখে দেখছে। সাথে দেখতে পাচ্ছে কতটা আকুলতা আর কতটা ভালোবাসায় জড়ানো। সবাই এতক্ষণ বিমোহিত হয়ে এই দৃশ্য দেখে যাচ্ছিলো। তারা যেনো কিছুটা অবাক সাথে অনেকটা খুশি ও মণিকা কে এই অপমানিত হতে দেখে। ওরা কখনই মণিকা কে পছন্দ করেনি। মণিকা সব সময়ে নিজের অহংকার বজায় রাখত তাদের কে মানুষ বলে মনে করত না।

-“তোমার এতবড় সাহস কি করে হল ওর দিকে হাত ওঠানোর? এর আগেও তুমি ওর গায়ে হাত উঠিয়ে ছিলে আর তার পরিণাম তুমি ও পেয়েছ। আর ড্যাড তোমাকে ওর্য়ান করেছিলো তারপর ও সাহস কি করে হল। আমন সোহা কে অ্যাস এর কাছে ধরিয়ে দিয়ে মণিকার দিকে তেড়ে যায়।

-” আমন তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না। এই সামান্য মেয়েটার জন্য এতটা খারাপ ব্যবহার তুমি করতে পারো না? মণিকা নাকি কান্না কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।

-” অফকোর্স করতে পারি। ওর জন্য আমি সব কিছু করতে পারি। কারোর জান ও পর্যন্ত নিয়ে নিতে পারি। ও আমার সব কিছু। আন্ডারস্ট্যান্ড। আমন সোহা কে এক হাতে নিজের বুকের ওপর জড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে।

-” আশা করি এই কথাটা মাথায় রাখবে সারাজীবন। এটাই তোমার জন্য মঙ্গল আর এখানে সবাই এর জন্য। আমন চৌধুরী এর জান এর দিকে যে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করবে সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মত থাকবে না সেটা মাথায় রেখে তার পরেই ওর দিকে হাত বাড়ানোর সাহস রাখবে। আমন চিৎকার করে সবাই কে বলে ওঠে।

-“আর হ্যাঁ ও কোনও অর্ডিনারি মেয়ে নয় তোমার মত। তুমি যে বাবার টাকার এত অহংকার দেখাও না সেই বাবার সব কিছু দশবার কিনতে পারবে আর বেঁচে দিতে ও পারবে। সেই ক্ষমতা টা ও নিজে রাখে। ও নিজের দমে আর নিজের ক্ষমতা দিয়ে করে সব কিছু নাকি তোমার মত সব কিছু তোমার বাবার ভড়ং দেখায়। আমন মণিকার দিকে আঙুল তুলে বলে ওঠে।

আমন ঘুরে দাঁড়িয়ে সোহা কে নিজের কোলে তুলে নেয়। সোহা আমন এর গলায় হাত জড়িয়ে নিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমন সামনের দিকে হাঁটা দেয়।

-“চলে আয় আয়ু। আমন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাস কে বলে সামনের দিকে পা বাড়ায়।

-” আশা করি তুমি তোমার উত্তর টা পেয়ে গেছ তাই না। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ নিজের জায়গা টা….. ঠিক…… কোথায়? অ্যাস মণিকার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে বেরিয়ে যায়।

ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই দেখতে থাকে আমন এর সোহা কে কোলে তুলে নিয়ে যাওয়া টা। এমন কি আমন এর সব সাঙ্গপাঙ্গরাও তারাও এসেছিল আমন এর পিছন পিছন যখন আমন খবর পেয়ে ছুটে ছিল এখানে এসে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখে আর কিছু বলার মত ছিলনা তাদের পুরো স্তব্ধ হয়ে গেছে বাকি দৃশ্য গুলো আর আমন এর বলা কথা গুলো শুনে। মণিকা এদিকে রাগে ফুসফুস করে ফুলছে। সবাই এবার ওকে দেখে মুচকি মুচকি হেসে কেটে পড়ছে। আর মণিকা আগুন চোখে তাকিয়ে আছে আমন সোহার যাওয়ার দিকে।
.
.
.
.💚💚💚
চলবে…..

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন রি-চেক করিনি ।প্লিজ সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন।

(আলহামদুলিল্লা আমি আগের থেকে এখন একটু সুস্থ আছি। আপনাদের সকলের ভালোবাসায় আবারো আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আপনাদের সকলের এত এত ভালোবাসা দেখে সত্যি আমি আপ্লুত। জানি পর্বটা ছোটো হয়েছে তবুও কিছু করার নেই। অতি কষ্টে এত টুকু লিখতে পেরেছি। ফোনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মাথা যন্ত্রণাটা বেড়ে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তাই ছোটো হলে ও আমি পর্ব দেয়ার চেষ্টা করব। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে আবারো আগের মত বড় পার্ট দেবো। সবাই ভালো থাকবেন। ভালোবাসা নিবেন ❤️❤️❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here