দিওয়ানা পর্ব ১০

#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_১০

রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে সোহা। গাড়ির জন্য। আমন তাকে দাঁড়াতে বলেছে একসাথে ইউনিভার্সিটি যাবে কিন্তু তার আগেই সোহা আমন কে ফেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে। হটাৎ এতদিন পর বড় শত্রুর সাথে ইউনিভার্সিটি যাবে সবাই আবারো কথা বানাবে। এতদিন যে অপমান করেছে আজ তার সাথে ইউনিভার্সিটি যাবে এটা সবাই দেখলে আজকেই এটা হেডলাইন ছেপে যাবে। তাই সোহা আমন এর রেডি হওয়ার সুযোগে বাড়ি থেকে জলদি জলদি বেরিয়ে এসেছে। ক্যাব আসতেই সোহা উঠে পড়ে। মাথায় এখনও ব্যান্ডেজ লাগানো আছে। এই দুর্বল শরীর নিয়ে ইউনিভার্সিটি ছুটে যাচ্ছে সোহা। মণি যেতে বারণ করেছিলো কিন্তু সোহা শোনেনি ক্লাস মিস হয়ে যাচ্ছে তাই বসে না থেকে ইউনিভার্সিটি যাচ্ছে। অ্যাস আগেই বেরিয়ে গেছে কিছু কাজ আছে বলে। সোহা জানে আজ তার দুঃখ আছে এই ছেলে কে চাখমা দেয়া এর শোধ ঠিক নেবে।

হঠাৎ করে সোহার ভাবনার তার ছিড়ে বাস্তবে ফিরে আসে গাড়ি জোর ব্রেক হওয়ার জন্য। সোহা চোখ খুলে সামনে তাকাতে দেখতে পায়। আগুন দুটো চোখ। সোহা জানে এখন কি হতে চলেছে। আমন আজ বাইক নিয়ে বেরিয়েছে। গাড়ির সামনে বাইক থামিয়ে এগিয়ে আসছে আমন। গাড়ির কাছাকাছি এসে পকেট থেকে টাকা নিয়ে ড্রাইভার কে দিয়ে দেয়। সোহা এখনও বসে আছে চুপ করে। আমন যেমন রাগী আর সোহা তেমনই জেদি। আমন গাড়ির দরজা খুলে মাথা ঢুকিয়ে সোহার মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে হঠাৎ করেই ঘাড়ের তিল এর ওপর কামড়ে দেয়। সোহা কোনো শব্দ না করে আমন এর ঘাড়ে খামছে দেয়। সে জানত এমনটাই হবে। এই ছেলে ছোটো থেকেই এমন। আমন সোহা কে ছেড়ে দু হাতে সোহা কে কোলে তুলে গাড়ি থেকে বের করে আনে। সারা রাস্তায় জ্যাম হয়ে আছে চারিদিকে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। হটাৎ করে গাড়ির সামনে থেমে যেতেই সবাই আটকে গেছে। সোহা কে এই ভাবে গাড়ি থেকে বের করে নিতেই দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ইয়ং জেনারেশন এর ছেলে মেয়েরা সিটি দিয়ে ওঠে। আমন সোহা কে বাইক এর ওপরে বসিয়ে দিয়ে নিজেও চড়ে বসে। নিজের হাত পিছনে নিয়ে সোহার হাত নিয়ে নিজের বুকের ওপরে কাঁধের আর কোমরের থেকে নিয়ে হাত লক করে দেয় আঙুল এর মধ্যে। সোহা কোনো কথা বলতে পারে না। রাগে মুখ লাল হয়ে আছে। আমন ব্যাক মিররে দেখে গাড়ি চালাতে চালাতে এক হাত দিয়ে নিজের শার্ট সরিয়ে দেয় কিছুটা কাঁধ এর থেকে। আঙুল দিয়ে ইশারা করে। সোহা আর না পেরে আমন এর কাঁধে জোর কামড় বসিয়ে দেয়। আমন কোনো কথা বলে না। মুখে ফুটে আছে একটা মিষ্টি হাসি। ছোটো থেকেই দুজন এর কামড়া কামড়ির অভ্যাস আছে।

ইউনিভার্সিটির গেট দিয়ে আমন কে বাইক নিয়ে ঢুকতে সবাই অবাক হয়ে গেছে। এত বছরে এই প্রথম আমন বাইক নিয়ে এসেছে। আর তারপরে পিছনে কেউ আছে যে আমন কে জড়িয়ে রেখেছে ।এটা দেখেই যে যেখানে ছিল সেখানে দাঁড়িয়ে গেছে। আর আমন এর জন্য অপেক্ষারত মণিকা রাজ আর বাকি চেলা চামুন্ডা গুলোর চোখ কপালে উঠে গেছে। আর মণিকা তো রাগে ফুলে যাচ্ছে। মণিকার হাতে আর পায়ে ক্রেপ ব্যান্ডেজ করা আছে তবে সেটা দেখলে কেউ ধরতে পারবে না। কারণ তার ওপরে খুব সুন্দর করে ট্যাটু কভার পরে আছে যেটা দেখে মনে হচ্ছে রিয়েল। সেদিন আমন এর জন্য সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে পা আর হাতে ক্রাক হয়ে গেছে।

আমন এর গাড়ি কাছাকাছি আসতেই পিছনের মেয়ে টার মুখ পরিস্কার হয় সবার সামনে আর সাথে সাথে যেনো আরো একটা বড় ঝটকা লেগে গেলো সবার। সোহা এটা কি করে সম্ভব। ওই বেহেনজি টাইপ মেয়ে টা কি ভাবে আমন এর সাথে হতে পারে তাও এই ভাবে জড়িয়ে বসে আছে। এটাই ভেবে যাচ্ছে সকলে।আর মণিকা তো মনে হচ্ছে এখুনি বাস্ট করবে। আর ওদের সাথে থাকা বাকিদের মুখ এখনও হা হয়ে আছে। রাজ প্রথমে একটু অবাক হলেও তারপর স্বাভাবিক হয়ে গেছে সে আগে থেকেই আমন এর ফিলিংস টা জানতো তাই বেশি অবাক হয়নি। কিন্তু মণিকা তার রাগের চোটে নিজের হাত কষে চেপে ধরে। আমন কখনো তার হাত পর্যন্ত ধরতে দেয় নি আর এই মেয়ে তাকে এই ভাবে চিপকে আছে। এটা ভাবতেই মণিকা যেনো জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।

আমন বাইক থামিয়ে দিয়েছে কিন্তু সোহার নামার নাম গন্ধ নেই। আমন একবার মিররে সোহার মুখ দেখে নেয়। সোহার রাগে ফুলে থাকা মুখ দেখে আমন এর হাসি পেয়ে যায়। কিন্তু হাসে না জানে হাসলে আর রক্ষা নেই এখুনি তার ওপরে চড়ে যাবে। তাই আমন কিছু না বলেই নিজের বুকের থেকে সোহার হাত ছাড়িয়ে নেয়। ছোটো বেলার ট্রিক ইউজ করে। নিজের মাথা ঘুরিয়ে টুপ করে সোহার গালে একটা হামি খেয়ে বসে। সাথে সাথে সোহা আমন এর হাত নিজের হাতে নিয়ে কামড় বসিয়ে দেয়। রাগ জেদ কমে যেতে হাত ছেড়ে বাইক থেকে নেমে যায়। এবার আসে পাশে তাকাতে দেখে সোহার টনক নড়ে। চারিদিকে সবাই তাদের দিকে চোখ বড় বড় আর মুখ হা করে তাকিয়ে আছে ঠিক স্ট্যাচুর মত। মাথা ঘুরিয়ে মণিকা কে দেখলে দেখতে পায় আগুন চোখ মুখ। আমন গাড়ি পার্ক করে এসে সোহা কে হাত ধরে যেতে নিলেই সোহা হাত ছাড়িয়ে নিতে চায় কেমন একটা অস্বস্তি নিয়ে। আমন সোহা কে এমন করতে দেখে ভ্রু কুঁচকে কোনা চোখে তাকালে দেখতে সোহা কেমন আনইজি ভাব নিয়ে চারিদিকে দেখছে। আমন এতক্ষণ পর এবার কোনা চোখে চারিদিকে দেখে নেয়। আসা থেকে কাউকে সে খেয়াল করেনি সোহা কে নিয়ে ডুবে ছিল। সবাই কে তাদের দিকে তাকাতে আর মণিকা রাগী চোখ মুখ দেখে আমন বাঁকা হেসে আরো একটু এগিয়ে এসে কাঁধের ওপর দিয়ে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। এগিয়ে যায় সামনের দিকে।

-“কি এমন করে কি দেখছিস? মানিয়েছে না আমাদের খুব সুন্দর। আমন বাঁকা হেসে জিজ্ঞেস করে ওঠে তার চেলাদের।

এখনও সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমন সোহার দিকে। সোহা এতক্ষণ অপ্রস্তুত হলেও সামনে দাঁড়ানো সবাই কে দেখেই তার মুখ কঠিন হয়ে যায় বিশেষ করে মণিকা কে দেখেই। সোহা নিজেই কিছুটা আমন এর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে যায়। আমন কোনা চোখে সোহা কে দেখলে দেখতে পায় সোহার কঠিন চোখ মুখ।

-“ভাই আজ হটাৎ বাইক নিয়ে? তোকে তো কখনো আমরা বাইকে দেখিনি ইনফ্যাক্ট তুই নিজেই বাইক এড়িয়ে চলতি। তাহলে আজ? রাজ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে,

-” ওয়েল ছোটো বেলায় একজন কে প্রমিস করেছিলাম আমি প্রথম বাইক তাকে নিয়েই চালাবো। এতদিন সে ও দূরে ছিল আর আমিও বাইক থেকে দূরে ছিলাম। বাট এখন তাকে আমি পেয়ে গেছি তাই এরপর আমাকে বাইক নিয়েও দেখতে পাবি। আমন সোহা কে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে।

সোহা ও কোনও কথা নয় বলে হালকা হেসে আলতো হাতে আমন এর হাতে হাত রাখে। এতক্ষণ সোহার মধ্যে যে অস্বস্তি ভাব ছিল সেটা এখন আর নেই। আমন এর এমন কথা আর কাজে কম্পফর্ট ফিল করছে।

-“হে আমন আমি তোমাকে ফোন করে ছিলাম আজ আমাদের একটা পার্টি তে যাওয়ার কথা ছিল তাই। মণিকা আহ্লাদী হয়ে বলে ওঠে আমন এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

মণিকার এমন কথা শুনেই সোহা ভ্রু কুঁচকে ফেলে আমন এর হাতের ওপর থাকা সোহার হাত আরো জোরে চেপে বসে। আমন বুঝতে পারে সোহা রেগে যাচ্ছে তাই বাঁকা হাসে।

-“আমি একটু বিজি ছিলাম তাই দেখিনি তুমি কল দিয়েছ। আর তাছাড়া হঠাৎ করে তোমার সাথে আমার পার্টি যাওয়ার কথা কবে হল?কই আমি তো জানিনা। আমন কিছুটা অবাক হয়ে তীক্ষ্ণ আওয়াজ নিয়ে বলে ওঠে।

-” না আসলে আজকে একটা পার্টি ছিল তাই ভাবলাম এক সাথে যাব তাই তোমাকে ফোন করেছিলাম। মণিকা কিছুটা আমতা আমতা করে বলে ওঠে।

-” স্যরি আমার সময় নেই। আমন সরাসরি না করে দেয়।

এর মধ্যে অ্যাস ছুটে এসে সোহা কে জড়িয়ে ধরে লাফাতে থাকে। এমন মনে হচ্ছে যেনো খুব খুশি হয়ে আছে। সোহা কে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে ।

-” আরে জেলেবি জে.. লে.. বি আমন পিছন থেকে দেখে ওঠে।

-” ভাই আমরা গেলাম আমাদের ক্লাস আছে। অ্যাস পিছন ঘুরে আমন কে বলে।

-“ভাই! মানে? রাজ অবাক হয়ে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ ও আমার বোন আর আমি ওর বড় ভাই হই। ও কখনও নিজের ক্ষমতার বড়াই করে না সব সময়ে সিম্পল ভাবে থাকতে পছন্দ করে। আমন সিম্পল ভাবে বলে ওঠে।

আসলে আমন এর সাথে চব্বিশ ঘণ্টা কেউ না কেউ থাকলে ও তারা আমন আর অ্যাস এর পরিচয় জানতো না। আমন কখনই তার বন্ধুদের বাড়ি নিয়ে যায় নি। আর অ্যাস নিজে কখনো বাইরে তার বাবার আর ভাই এর পরিচয় দেই নি সে নিজের মত করে সাধারণ ভাবে বাঁচতে চেয়েছে। না তার বাবা আর ভাই এর পরিচয় নিয়ে। তার বাবা আর ভাই এর নামডাক আছে বলতে গেলে এখানে তাদেরই চলে। তাই সে সব সময়ে নিজেকে সাধারণ মানুষের মত ঘোরাফেরা করে আর এর আরও একটা বড় কারণ সোহা। কারণ আমন এর মত তারও সোহা ছোটো থেকে ভালো বন্ধু ছিল বলতে গেলে এক আত্মা। তাই তার সাধারণ ভাবে থাকার একটা বড় কারণ। তার ড্যাড এর কাছে থেকে সেই জানতো সোহার আসল পরিচয়। তাই তার বেড়ে ওটা একদম স্বাভাবিক ছিল যাতে সোহার সাথে মিশে যেতে পারে।
.
.
.
. 💚💚💚
. চলবে…

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন ।প্লিজ নিজেদের মতামত জানাবেন।ঝ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here