গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৩০(১ম খন্ড)
প্রিয় মানুষ গুলোর সাথে কাটানো দিন গুলো যেন চোখের পলকে পার হয়ে যায়। ঘড়ির কাঁটাও যেন দৌড়ে চলছে,ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠা উল্টে যেতেও দেরি হচ্ছে না। পাতাঝরা বসন্তে শেষে, গ্রীষ্মের খরতাপ শুরু হলো, গ্ৰীষ্মের সেই দাবদাহ শেষে তৃষ্ণার্ত প্রকৃতিতে রোমাঞ্চকর বার্তা নিয়ে এলো বর্ষা। আজ বর্ষা ঋতুর প্রথম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঝিরঝির বাতাস আর এক পশলা বৃষ্টি।
শহরতলীতে এই বৃষ্টি অনেকের জন্য সমস্যার কারন হলেও প্রেমিকদের জন্য প্রণয় বর্ষন বলে খ্যাত। কেউ কেউ প্রেমিকার হাতে হাত রেখে এই ঝির ঝির বৃষ্টি স্পর্ষ করছে ,তো কেউ ভেজা গালে লেপ্টে থাকা চুল আলগোছে কানের পেছনে গুঁজে দিচ্ছে।আবার কেউ বৃষ্টি থেকে বাঁচতে টং দোকানের ছাউনি তলে আশ্রয় নিয়েছে। চোখে চোখে কথা আর ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিতেও ভুলছে না। এই এক পশলা বৃষ্টিতে গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির ভেতরে ঢুকলো সাদ। সবাই তার প্রিয়তমার সাথে বৃষ্টি বিলাস করতে ব্যাস্ত হলেও সাদ তার উদ্বিগ্ন চোখ জোড়া ঘুরিয়ে তার প্রিয়তমাকে খুঁজতে ব্যাস্ত।
সাজি সুস্থ হওয়ার বেশ কিছুদিন পর জুবায়ের সাজিকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে এডমিশন করিয়ে দেয়। এর পর থেকে সাজির ভার্সিটিতে যাওয়া আসা শুরু। প্রতিদিন সাজিকে নেওয়ার জন্য ড্রাইভার এলেও ,আজ সাদ নিজেই এসেছে সাজির জন্যে। প্রকৃতির চাহিদা বলে কথা!বছরের প্রথম বৃষ্টি প্রিয়তমাকে নিয়ে না ভিজলেই নয়।
ক্লাস থেকে বের হয়ে চারপাশটা দেখে নিলো সাজি। শীতল বাতাস আর বৃষ্টির ঝাপটায় মুখটা আধ ভেজা হয়ে রইলো। হাত বাড়িয়ে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির জল হাতে পুরে নিয়ে উপরের দিকে ছুঁড়ল। খানিকটা জল মুখের উপর পড়তেই খিল খিল করে হেসে উঠলো সাজিঁ। চঞ্চল চোখ জোড়া বন্ধ করে বৃষ্টির জলে মুখ ভেজানোর চেষ্টা চালালো। পিছলে যাওয়ার ভয়ে বার বার পিছিয়ে এলো। যার দরুন মুখ ভেজানো হয়ে উঠলো না।
সাজি থেকে কিছুটা দূরে আড়ালে দাঁড়িয়ে একজন সাজির কার্যকলাপ দেখছে। সাজির প্রতিটা কাজে ঠোঁট জোড়া বার বার প্রসারিত করছে সে। বৃষ্টির জলে মুখ না ভেজাতে পারার ব্যর্থতায় মুখ ফুলালো সাজি। বৃষ্টির উপর অভিমানে হাতজোড় গুটিয়ে নিলো।
সাজির এহেন কান্ডে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা পকেটে হাত গুজে সাজির দিকে এগিয়ে এলো। হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি নিয়ে সাজির দিকে বাড়িয়ে দিল। হাত ভর্তি পানি দেখে সেই হাতের মালিককে দেখার জন্য তাকাতেই চমকে উঠলো সাজি।ভয়ে জড়সড় হয়ে একপাশে সরে দাঁড়ালো। ওড়নার কোনা হাতে গুজে মিনমিনে গলায় বলল,, স্যার আপনি এইখানে?
সাজির ভয়ে জড়সড় হওয়া মুখায়বব দেখে মুচকি হাসলো রিসাদ।
আবরার রিসাদ ভার্সিটির প্রভাষক । গম্ভীর প্রকৃতির হওয়াতে সবাই বেশ ভয় পায়। সাজিও সেই সবার মধ্যে একজন।
রিসাদ সাজির দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল।ভার্সিটির প্রথম দিন থেকেই মেয়েটাকে দেখে আসছে। চঞ্চল, প্রাণবন্ত মেয়েটা, যদিও সামনে গেলে ভয়ে কুঁকড়ে যায়। সবাই-তো তাকে ভয় পায় তবে মেয়েটা বাকি সবার থেকে একটু আলাদা।যার পরিপ্রেক্ষিতে রিসাদ সাজি নামের মেয়েটিকে মনে রেখেছে। শুধু মনে রেখেছে বললে ভুল হবে, মনের পাশাপাশি নজরেও রেখেছে।
রিসাদ পকেটে দুহাত গুঁজে নিরেট স্বরে বলল,, হ্যা আমি। এইদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। দেখলাম আমার একটা স্টুডেন্ট বৃষ্টির পানি ছুঁতে না পারায় মন খারাপ করছে। তাই ভাবলাম একটু হেল্প করি।
সাজি নিচের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,, না মানে আসলে স্যার,আ’ম স্যরি।
রিসাদ সাজির দিকে তাকালো। কোমর সমান চুল গুলো পনিটেল করে রেখেছে সাজি।কিছু অবাধ্য চুল সব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে চোখে মুখে আঁ*চ*ড়ে পড়ছে।সেই অবাধ্য চুল গুলো বৃষ্টির পানিতে ভিজে লেপ্টে গেছে গালে। রিসাদের হাত জোড়া ক্ষনে ক্ষনে বেসামাল হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। বার বার মন বলছে লেপ্টে থাকা অবাধ্য চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে।মন মস্তিষ্কের বাকবিতন্ডায় চোখ সরিয়ে নিল রিসাদ।হাত মুঠ করে নিজেকে ধাতস্থ করলো। লম্বা শ্বাস টেনে সাজিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে। পরে ক্লাস এটেন্ড করতে পারবে না।
বাধ্য ছাত্রীর মতো মাথা নাড়ল সাজিঁ। রিসাদ এক পলক সাজির দিকে তাকিয়ে হনহন করে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। রিসাদ আজ প্রথম নিজেকে নিজের কাছে বোকা মানুষ বলে দাবি করেছে। তা না হলে যার দিকে বৃষ্টির পানি এগিয়ে দিলো তাকেই আবার ভিজতে বারন করে এলো! রিসাদ কপালে আঙ্গুল ঘঁষতে ঘঁষতে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, তুই বড়ই বেকুব রিসাদ।
রিসাদের যাওর পানে তাকালো সাজি। আজ স্যারকে দেখছে নাকি অন্য কাউকে দেখছে ঠিক বুঝলো না সাজি। রিসাদ স্যার কখনোই কারো সাথে পড়ালেখার ব্যাপার ছাড়া ঠিক করে কথা বলেনা।আজ স্যারের রূপ ধরে অন্য কেউ এলোনা তো? সন্দিহান গলায় নিজেকে নিজে সুধালো সাজি,, রিসাদ স্যার কি অসুস্থ ?
সাজি যখন ভাবনার জগতে ডু*বে বুঁদ হয়ে গেছে তখনই সাদ সাজির শিয়রে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,, উঁহু!! Risaad is in love with you.
ইনশাআল্লাহ চলবে,,,
(ভুল গুলো সুধরে দিবেন। ছোট করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত।)ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কাল গল্প দেইনি কারন রোগ নিয়ে রিসার্চ করতেছিলাম😁। )
ইনশাআল্লাহ চলবে,,
(ভুল গুলো সুধরে দিবেন।)