#দূরে নয় কাছেই আছি!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্বঃতৃতীয়
–” শ্যামাঙ্গিনীকে একদিন না দেখলে যেন আমার ঘুমই আসতো, আমি তাই নিয়ম করে প্রতিরাত তার ছবি দেখতাম। তাই আমি বাবাকে অনুরোধ করে ছিলাম
শ্যামাঙ্গিনীকে যেন আমার করে নিয়ে আসে। হয়েছে ও তাই, কিন্তু শ্যামাঙ্গিনীর মন যে আরেক জায়গায় বাধা!
–” আপনি ভুল বলছেন, শ্যামাঙ্গিনীর মন অন্য কোথাও বাধা নেই!”
–” তাহলে এগুলো কি?”
শায়োরী মোবাইলের ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে অবাক হচ্ছে। আবির কি তাহলে তার সংসার ভাঙ্গার কাজ শুরু করলো!”
শুকিয়ে যাওয়া মুখ নিয়ে খানিকটা ইতস্তত হয়ে শায়োরী বলে উঠলো –
–” এই ছবিগুলো আপনি কোথায় পেয়েছেন?”
–” বেশি দিনের নয়, এই তো ছমাস হবে, আপনি তখন
কোন একটা কাজে কলেজে গিয়েছিলেন । আমি ও তখন বন্ধুদের নিয়ে গ্রামে ঘুরে এসেছিলাম। রাতে লং ড্রাইভে যেতাম, সকালে যদি একটু আপনার দেখা পাই সেই আশায়। আশা পৃরণ হয়েছিল আমার তবে সঙ্গে ছিল আপনার পাড়ার এই বড় ভাই। তা ওনার সাথে আপনার সম্পর্কটা কতদিনের চলছে?”
শায়োরী আরাফের বলা কথাগুলো শুনেই তারদিকে ছলছল চোখে চেয়ে রইল। বহু কষ্টে, জড়তা মাখানো কন্ঠে বলে উঠলো –
–” উনি আমার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে সাহায্য করেছিলেন। এর বেশি কিছুই ছিল না আমাদের মাঝে।
আমি তার সঙ্গে প্রায় দুয়েক বার কথা বলেছিলাম।
তা ও সংশোধন নিয়ে কিন্তু উনি সেই কাজের মাঝে এভাবে এমন অদ্ভুত চিন্তাধারায় ডুবে বসবেন আমি ভাবিনি কখনো।”
–” উনি তো ঢাকায় থাকেন, আপনার সাথে উনার পরিচয় কি ভাবে হলো?”
–” উনার বাবা আমাদের কলেজের কমিটির লোক ছিলেন। সেদিন উনি কলেজের পরিস্থিতি দেখাশুনা করতে গিয়েই আমাকে সেদিন দেখেছিলেন। তারপর সেই সমস্যা সমাধান করতে গিয়েই। উনি আমার পিছনে লেগে পরেন।”
–” ও, বুঝতে পেরেছি!”
–” হুম,”
–” এই বিয়ের কথা উনি জানতেন না? ”
–” না, উনি তখন ঢাকায়, এর মধ্যেই তো বিয়েটা হয়েগেল।”
–” হুম বেচারা ব্যার্থ প্রেমিক!”
–” ব্যার্থ কিনা জানিনা, শুনেছি খুব প্রভাবশালী খুব একটা সুবিধার নয়।”
–” সুবিধা আর অসুবিধার ব্যাপার টা বুঝতে পারলাম না! একটু বুঝিয়ে বলুন তো!”
তারপর শায়োরী আরাফকে বলতে লাগল সেদিন পুকুর পাড়ের ঘটনাটি, আবিরের বলা সব কথা।
–” ও, আপনি সেগুলো নিয়ে ভয় পাচ্ছেন? সিরিয়াসলি এতটা ভয় পাওয়ার কি আছে? আপনি তো বলছেন আপনি তার সঙ্গে রিলেশনশিপে ছিলেন না। সো আমার মনে হয় না তাকে নিয়ে আপনার অযথা কোন টেনশন করা প্রয়োজন। যদি না আপনার বলা কথাটা মিথ্যে হয়।
–” আপনার এখনো মনেহয় আমি মিথ্যে বলছি? ”
–” হয়তো মিথ্যে বলতেও পারেন। কারন আমি আর কতটুকুই বা ছিলাম আপনাদের পাশে।”
শায়োরী করুন চোখে চেয়ে রইল আরাফের দিকে।
আরাফ সেই দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে উঠে দাড়ালো।
আরাফ দরজাটা খুলে চলেগেল অন্যরুমে।
শায়োরী আরাফ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিল। দরজাটা বন্ধ করেই ধপ করে বসে পরল সে। কি হচ্ছে এসব তার সাথে? কেন হচ্ছে এগুলো তার সাথে? আর কেনইবা বারবার তার সাথেই এরকম হচ্ছে? কি দোষ তার? সেই ছোট্টবেলায় মা মারা যাওয়ার পর কথ লাঞ্চনা কত অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। তারপর আবির নামের বিষাক্ত কালসাপের নজরে পরতে হলো। এখনতো সংসার টাও শেষ হওয়ার যোগার। এত এত কষ্টের মাঝে বুঝি একটু সুখের দেখাও সে পাবে না?….
নির্জন রাস্তায় হেটে চলেছে আরাফ। শায়োরীর মায়াবী মুখ আর চোখ জোড়া তাকে বিষণ ভাবে কাছে টানছে।
মেয়েটাকে এত কথা শুনিয়ে কি ঠিক করল?
শায়োরীর কথাগুলোকি সত্যি? মন বলছে শায়োরী যা বলেছে সত্যিই বলেছে, আবার মনে হয় মিথ্যে!
রাস্তায় হাটতে হাটতে কিছুদূর যেতেই পথে দেখা হলো পাড়ার বন্ধুদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু যাকে সে সবকিছুই বলে। একা একা হাটতে বেশ ভালোই লাগছিল। তবে বন্ধু নাহিদকে পেয়ে কিছুটা মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তার।
নাহিদ সামনে এগিয়ে এলো।
–“কিরে নতুন নতুন বিয়ে করলি ভাবীর কাছে বাসায় না থেকে এখানে ঘুরছিস। কি ব্যাপার ভাবীর কিছু জরুরি জিনিস আনতে গিয়ে ভুল করছিলি নাকি? যার জন্য ভাবী বাসায় ঢুকতে দেয় নাই!”
–” আরে তেমন কিছু না ”
–” তাহলে? ঘুরছিস কেন? ”
–” এমনি,”
–” ও, যাইহোক বাসার সবাই কেমন আছে? ভাবী কেমন আছে?
–” ভালো,” তোকে কিছু বলার ছিল।”
–” বল,’
আরাফ শায়োরীর আর আবির সম্পর্কে সবকিছু বলল।
–” আমার মনেহয় ভাবী ঠিকই আছে। আর যা বুঝলাম
মিথ্যে না ও বলতে পারে। যেটুকু দেখেছি আর বুঝেছি
ভাবী কোন ভুল কাজ করতে পারেনা। তুই বরং ভাবীর সঙ্গে সব ঠিক করে নেয় এটাই ভালো হবে, আর তাছাড়া বিয়ের আগেরকার জীবন আর বিয়ের পরের জীবন অনেক তফাৎ! যদি ভাবীর আবিরের সঙ্গে সম্পর্ক থেকেও থাকে তাহলে সেই সম্পর্ক যে এখন টিকে থাকবে এমন কোন কথা নয়। আর যদি তোর মনে ভাবীকে নিয়ে কোন সন্দেহ কোন খুত খুত থাকে তাহলে আমি বলবো তুই এই মূহুর্তে সব মিটিয়ে ফেল।
ভাবীকে সময় দে, তার সঙ্গে চল তার মনে কি চলছে তা বুঝার চেষ্টা কর। সম্পর্কটাকে গভীরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কর, বারবার অবহেলা আর বারবার একই সন্দেহের তীর যদি ছুড়িস তাহলে তোদের সংসার গোড়ার আগেই ভেঙ্গে পরবে। অতএব আমি মনে করি সময় দিতে থাক, তাকে বুঝার চেষ্টা কর! সবসময় সবমানুষ একরকম না ও হতে পারে। হয়তো আবিরের কারনে ভাবী চাপে রয়েছিল। ”
–” কি ভাবছিস?”
–” না কিছু না, এমন ভাবে এমন একটা পরিস্থিতে বেকায়দায় পরে যাবো তা ভাবিনি। ”
–” এখন অত শত ভাবিস না, ঝামেলাটা মেটানোর চেষ্টা কর। দেখবি দাম্পত্য জীবনে সুখী হবি, এখন থেকে ভুল বুঝাবুঝি না মেটালে সর্বনাশ কিন্তু সামনে বাড়বে কমবে না। কি বলেছি বুঝেছিস তো?”
–” হুম,”
–” যা, বাসায় গিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে থাক কিভাবে সব সমাধান করবি! ” আরাফ নাহিদের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলার পর বাড়িতে ফিরল রাত ১০ টায়। কিছুই মাথায় ঢুকছে না। অস্থিরতা বেড়ে গিয়েছে তার, একদিকে স্ত্রীর মুখের কথা আর আরেক দিকে লোকমুখে আর মানুষের বলা কথাগুলো তাকে ভাবাচ্ছে,কোনটা সত্যি? ”
আরাফ বারান্দায় এসে দাড়ালো, প্যান্টের পকেট থেকে
সিগারেটের প্যাকেট খুলে একটা সিগারেট ধরালো।
খুব মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্থ না হয়ে পরলে সিগারেট তার হাতে সহজে উঠে না। সিগারেট ধরিয়ে একটান দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল।
বড্ড পুড়ায় এই আগুন! জ্বলে পুড়ে শেষ করে দেয়!
ভালোবাসার মানুষটিকে বিশ্বাস না করতে পারলে তাকে ভালোবেসে লাভ টাই বা কি? যাকে নিয়ে সংসার নয় পুরো জগৎ সংসারে জন্ম থেকে মৃত্য পর্যন্ত কল্পনায় বিভোর হয়েছিল তাকেই অবিশ্বাস?
আবার এটাও ভাবার সময়, সংসারের শুরু এখনো হয়নি শুধু সম্পর্কে জড়িয়েছে এতেই যদি ভেঙ্গে পরে, পরের বার যখন সে শায়োরীতে দূর্বল হয়ে পরবে তখন যদি শায়োরী তাকে ধোকা দেয়?”
প্যাকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করে তাতে আগুন ধরিয়ে আবার টান দিল। না এত এত ভাবনা আর জড়তাকে সে প্রশ্রয় দিবে না। বউ তো তারই, বিয়ে হয়েছে তার! আগে কি ছিল তা ভেবে কি করবে সে?
বউকে নিজের একার করেই রাখবে, জোর করে নয় তারমতই সে তাকে আগলে রাখবে। সিগারেটের ফিল্টার টা বিনে ফেলে দিয়ে সে রুমের ভিতর ঢুকে পরল। যত ভাববে ততই খারাপ চিন্তা আর ভয় মাথার ভিতর জেঁকে বসবে….
চলবে।