দ্বাবিংশতি পর্ব -১৩

#দ্বাবিংশতি
#লিখনে_মৃত্তিকা_চৌধুরী
#পর্ব_১৩

২৯.🐙

শুদ্ধ হাসছে কারণ তার মাকে সে সব বুঝিয়ে বলেছে নাতাশার কীর্তি-কর্ম।আর এদিকে সায়ানের মুখে অন্ধকার নেমে রয়েছে।রাই আর ফাইজা হলরুমের সোফায় বসে বসে কথা বলছিলো ইন্ডাস্ট্রির কিছু বেসিক ব্যাপার নিয়ে।হঠাৎ দুজন সায়ান আর শুদ্ধের আওয়াজে অবাক হয়ে পেছনে তাকালো।

রাই ভেবেছিলো শুধু সায়ান আসবে কিন্তু এখন তার সাথে শুদ্ধও যোগ হয়েছে।শুদ্ধের মুখের লম্বা হাসির কারণ রাই ভালোই বুঝতে পারছে।শুদ্ধ খুশিতে রাইকে ছুটে এসে জরিয়ে ধরলো।সায়ান এই দৃশ্য দেখে আকাশ থেকে মাটিতে পড়েছে এমন অবস্থা।তার ধারণা ছিলো না এই পাষাণ মেয়েটাকেও কেউ ভালোবাসতে পারে।তাও আবার ফাইজাদেরই প্রফেসর!

কিন্তু এখন অবাক হওয়ার সময় না। তাই সায়ান খুব দ্রুতই নিজেকে সামলে নিলো।আজকে তার এসব ভাবলে হবেনা।সে ফাইজাকে দেখে চিৎকার করে বললো,

“ফাইজা!রেডি হয়ে নাও তাড়াতাড়ি।আমাদের বাসায় ফিরতে হবে।”

ফাইজা কিছু বললোনা;শুধু মুচকি হাসলো।আজ রাই নিজের সত্ত্বাকে ফাইজার মাঝে দেখতে পাচ্ছে।

ফাইজা এগিয়ে গিয়ে সায়ানের একদম কাছে দাড়ালো।

“কোথায় যাবো?”

“বাসায়।”

“কার বাসায়?”

“আমার বাসায়।”

“তোমার বাসায় আমি কেন যাবো আজব!”

এবার সায়ানের রাগ চরম পর্যায়ে পৌছে গেল।সে ফাইজাকে থাপ্পড় দিতে নিতেই ফাইজা তার হাতকে ধরে ফেললো।এই ঘটনায় সায়ানের রিয়েকশনের আগেই শুদ্ধ নিজের বুক থেকে রাইকে সরিয়ে ফেললো।

“না,না!এটা মনে হয় ফাইজা।নাহলে আমি জড়িয়ে ধরলাম ও কিছুই বললো না?আবার ফাইজা সায়ানের থাপ্পড় আটকে ফেললো!হঠাৎ এই দুই বোনের আকস্মিক পরিবর্তনের কারণ কি?”

রাই হেসে শুদ্ধের কানে কানে বললো,”শুদ্ধ,আমিই রাই।”

শুদ্ধ সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।সায়ান এবার ফাইজার হাত থেকে নিজের হাতটাকে এক ঝটকায় সড়িয়ে নিলো।ফাইজা কোনো এক্সপ্রেশনই দিলোনা কারণ আজ তার নিজেকে অনুভূতি শূন্য লাগছে।শুধু বললো,

“চলে যাও সায়ান নিজের বাসায়।আমি ম/রে গেলেও ওই বাড়িতে পা রাখবোনা,ইন শা আল্লাহ।”

“এবার কিন্তু অতিরিক্ত হচ্ছে ফাইজা।”

“পরশুর মধ্যে ডিভোর্স পেপার তোমার হাতে থাকবে।সাইন করে মুক্তি নিয়ে নিয়ো আমার থেকে।”

“কি?ডিভোর্স পেপার?আর কে দিবে তুমি!মজা করো না ফাইজা।”

“ফাইজা মজা করেনা,সায়ান।সে তার জীবনে কখনোই মজা হিসেবে কিছুই করেনি।চুপচাপ থাকলেও সে সব বিষয়েই সিরিয়াস।”

“ফাইজা।”

“বের হয়ে যাও!গার্ডস?গার্ডস?কিক হিম আউট রাইট নাও।”

সায়ান ফাইজার এই ব্যবহারে শিহরিত হয়ে গিয়েছে অনেকটাই।গার্ডসরা ভেতরে আসলেও রাই তাদের সায়ানকে বাহিরে বের করে দিতে মানা করলো।এরপর শান্তস্বরে সায়ানকে সোফায় বসতে বললো,

“বসো এখানে।”

সায়ান একবার অদ্ভুত ভাবে রাইকে দেখে রাইয়ের সামনাসামনি বসলো।শুদ্ধ এখন রাইয়ের হাত ধরে আছে।তার ধারণা সায়ান যদি রাইকে মারে!কিন্তু সে তো জানে না তার একমাত্র বউ ইতালিয়ান মাফিয়া যার কাছে মারামারি কোনো ব্যাপারই না।

৩০.🐙

রাই কোনো ভণিতা না করে স্ট্রেইটলি বলতে শুরু করলো,

“তোমার কি মনে হয় সায়ান?আমার বাবা তোমার বাবাকে মে/রে ফেলেছে?কিসের জন্য তোমার বাবার সম্পত্তির জন্য?”

সায়ানের বুঝতে কিছুক্ষণ লাগলো।সায়ান বুঝলো রাই সব জেনে গেছে।রাইয়ের পাশে এসে এবার ফাইজাও এসে বসলো।সায়ান এবার ফাইজাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“তুমি সব জানতে?তাও তুমি ওদের পক্ষেই আছ,ফাইজা?”

“ফাইজাকে আমি কালকে সব বলেছি।আমার কথা এখনো শেষ হয়নি,সায়ান।সো কন্টিনিউ করি আমি?”

“হু,কন্টিনিউ করুন।”

“হুম,তা তো করতেই হবে।তোমার মা তোমার বাবার দেহকে আর কষ্ট দিতে চায়নি তাই তোমার বাবার কেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো।এস ফর তোমার বাবার সম্পত্তি!সেটা এখন তোমার চাচা আফজাল খান ভোগ করছে।তোমাকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আফজাল খান কোম্পানির অর্ধেক দাবি করছিলো।আমার বাবা তার শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নিজে নতুন ইন্ডাস্ট্রি দাড়া করিয়েছে।সো তোমার বাবার সম্পত্তি তোমার চাচার কাছে আছে।এরপর আর কখনো তুমি আমার বাবার সম্পত্তির দিকে তাকালে তোমার চোখ কিভাবে উপড়ে ফেলতে হবে তা আমার ভালো মতোই জানা আছে।”

“চুপ করো,রাই।আর কত মিথ্যা বলবে?”

“মিথ্যা আর আমি?”

“নিপা খালা ফাইলগুলো আর ছবিটা নিয়ে আসবেন কাইন্ডলি?”

“জি আপা।”

নিপা খালার দৌড়ে টেবিল থেকে এনে রাইয়ের হাতে ফাইল আর ছবিটা দিতেই রাই সেগুলোকে সায়ানের কাছে এগিয়ে দিলো।সায়ান ভালো মত দেখলো কিন্তু কিছুই বুঝলোনা।আর যা বুঝলো তা সে বিশ্বাস করতে পারলোনা।যে সে যাদের সাথে আছে তারা তাকে এত মিথ্যা কথা বলেছে সম্পত্তির ব্যাপারে!

“আচ্ছা,আমি নাহয় সম্পত্তির কথা মানলাম!কিন্তু,আমার বাবার খু/নের ব্যাপারেও আপনি কিছু বের করেছেন?”

“ইয়েস,আমি একজন ল’ স্টুডেন্ট।এটা আমার দায়িত্ব।তো এখন আসা যাক এই ছবিটার ব্যাখ্যাতে!তোমার চাচার সাথে আমার আম্মুর কাইন্ড অফ প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।কিন্তু সম্পর্কের দুইমাস গড়াতেই তোমার চাচাকে বাহিরে পাঠিয়ে দেয় তোমার দাদা।তোমার চাচা বেশ বুদ্ধিমান থাকায় সে সেখানে কিছুদিনের মধ্যেইনিজের কোম্পানি বানায়।

ভাগ্য ভালো থাকায় আমি জানতে পারি তোমার চাচা কানাডায় ছিলেন।আমার কানেকশন থাকায় ওখান থেকে তোমার চাচার কোম্পানি সম্পর্কেও খবর নেই।সেখানে পঁচিশ বছর আগে ‘AK’ নামের একটা কোম্পানি ছিলো যা বাংলাদেশি একজন মানুষ দাড়া করিয়েছিলো।কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে প্রায় ছয় বছরের মাথায় কিছু কারণে কোম্পানিটা বন্ধ হয়ে যায়।তোমার চাচার কোম্পানির সবাইকে সিল করে কোনো কারণে কারাগারে রাখা হয়।সেখান থেকে অনেক কষ্টে তোমার চাচা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।”

এতটুকু বলে রাই তার সামনে থাকা গ্লাস থেকে পানি খেল।এরপর আবার বলতে লাগলো,

“তোমার চাচা সেখানে আসার পর তার বাবার মারা যাওয়া সহ তোমার বাবার কোম্পানি সম্পর্কে জানতে পারে।সে তোমার বাবার কাছে ফিরে না গিয়ে আগে আমার মাকে খুজে বের করেন।তখন সে আমাদের জন্মের কথা জানতে পারে।তাই তোমার আর আমার বাবাকে একসাথে মারতে সে সেদিন তাদের ক্যাম্পের কাছে গিয়ে পৌছায়।এক ঢিলে দুই পাখি টাইপ।কিন্তু তোমার বাবা তার ভাইকে ওমন অবস্থায় দেখেও চিনতে পারে।আর সে আমার মা আর তোমার চাচার সম্পর্কেও জানত।তাই আমার বাবাকে বাচাতে সামির আঙ্কেলের প্রাণ যায়।আমার মা এগিয়ে আসে।তোমার চাচা তাকে দেখেই চিনে ফেলার ভয় পালিয়ে যায়।কাহিনিতে এরপরও টুইস্ট আছে সায়ান খান।

তোমার চাচা সামির আঙ্কেলকে মেরেছে তা তোমার মা কিছুদিনের মধ্যেই জানতে পেরে যায়।তাই সে আর তার স্ত্রী তোমার মাকে শ্বাসরোধ করে খু/ন করে।তোমার নিশ্চয়ই তোমার মায়ের গলায় থাকা কালো দাগ গুলোর কথা মনে আছে।আর না থাকলে তোমার মায়ের গোসল যারা করিয়েছে তাদের থেকেও তুমি সব সহজেই জানতে পারবে।যদিও তাদের মোটা অংকের ঘুষ দিয়েছে তোমার চাচা।”

মায়ের কথা শুনতেই সায়ান বুঝতে পারলো রাই তো সত্যি কথাই বলছে।তার মাকে যখন সে সকালে ডাকতে গিয়েছিলো তখন সে তার মায়ের গলার দাগের কারণ জিজ্ঞেস করতেই তার চাচা তাকে কি না কি বুঝিয়ে বাহিরে পাঠিয়ে দিয়েছিলো।আর খুব দ্রুতই তার মায়ের গোসল শেষ করে দাফন করে দিয়েছিলো।সায়ানের মাথা এসব শুনে ঘুরছে।সে উঠে দাড়াতেই রাই তাকে আবার ডাকলো,

“তোমার বাবার খু/ন যেই পিস্তল দিয়ে করা হয়েছে তা এখনো তোমার চাচার কাছেই আছে আই থিংক সো।আমি ফাইজার বিয়েতে দেখেছিলাম অনেক ওল্ড মডেলের একটা পিস্তল আছে তোমার চাচার হাতে।তুমি মডেলের নাম লিখে সার্চ করলেই কানাডিয়ান দেখতে পাবে।আর কোম্পানি সম্পর্কেও সার্চ দিতে পারো।এবার আমি আশা করতে পারি তুমি ব্লাইন্ডলি কিছুই করবেনা।তুমি এখন আসতে পারো।”

সায়ান রাইয়ের কথাগুলো ঘোরের মাঝে শুনে তার গাড়ি নিয়ে খান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।তার মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরছে।কিন্তু এবার সে যেই সিদ্ধান্তই তা ভেবে চিন্তেই নিবে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here