#দ্বিতীয়_বসন্ত-৫
Zannatul Eva
হুনলাম তোমার মাইয়ার লগে নাকি কী কী ঘইটা গেছে। তা মমতা এই মাইয়ার বিয়া কেমনে দিবা তুমি? কে বিয়া করবো তোমার মাইয়ারে? আচ্ছা সত্যিই কি তোমার মাইয়া ধর্ষন হইছিলো নাকি কোনো পোলার লগে ধরা পরার পর ধর্ষন বইলা ব্যাপারটা ধামাচাপা দিছো! শহরে তো এমন অহরহ ঘটতাছে তাই কইলাম আর কী। কিছু মনে কইরো না।
গ্রামে আসার পর যে প্রতিবেশীদের এসমস্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে মমতা খানম তা আগে থেকেই আন্দাজ করেছেন। তাই নিজেকে শক্ত রাখার মতো মন-মানসিকতা রেখেই সে গ্রামে আসার সাহস করেছেন। একটু আগেও পাশের বাড়ির এক ভাবি বলে গেলো, এই মাইয়ার তো বিয়া হইবো না গো। এমন সুন্দর মাইয়াডার কপালে এই লেখা আছিলো! আহারে!!
যদিও রুহি লোকের কোনো কথাতেই কান দিচ্ছে না। মেয়েটা ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিচ্ছে। মমতা খানম মেয়ের পরিবর্তন দেখে নিজেকে আরও শক্ত করলেন। তিনিও কারো কথায় কান দেবেন না বলে মনস্থির করলেন।
এই মাইয়া তুই কিন্তু ঘরতে বাইর হইবি না কইয়া দিলাম। রুহির দাদি বললেন।
সায়েদা বেগম রুহির বাবার আপন ফুপু। উনি ভীষণই রাগী মানুষ এবং পুরনো দিনের সব রকম কুসংস্কার রীতিনীতি গুলো এখনও নিজের ভেতরে পুষে রেখেছেন।
রুহি বলল, কেনো দাদিজান? বাইরে গেলে কি হবে?
সায়েদা বেগম বললেন, জানোস না কি হইবো? গেরামের মাইনষে তোর দিকে ড্যাবড্যাবায়া চাইয়া থাকবো। নানান লোকে নানান কথা কইবো। চুপচাপ ঘরে বইয়া থাক। আর তোমারে কী কইতাম বউ! মাইয়াডা মেট্রিক পাস করোনের লগে লগে বিয়া দিতে কইছিলাম তোমারে। গেরামে আইনা যদি তহন বিয়াডা দিয়া দিতা তাইলে আইজ এই দিন দেখতে হইতো না। মাইয়া গো এতো উইড়া বেরান ভালা না। নজর লাগে গো মাইনষের নজর লাগে। দেখলা তো মাইয়া তোমাগো মুখে একদম চুনকালি মাখায়া দিলো। আশুরে কইছি আমি, এইবার যহন গেরামে আইছোস তহন রুহির বিয়া এই গেরাম থেইকাই দিতে হইবো। দরকার হইলে পাঁচ গেরাম সম্বোন্ধ দেহুম আমরা৷ শহরের মানুষ ভালা না। মাইয়াগো ঠিক বয়সে পার না করতে পারলে অনেক জ্বালা গো। চিন্তায় চিন্তায় আশুর চোখ মুখের কী অবস্থা হইছে! এই ছেমরি, তুই কিন্তু একদম ঘরের বাইরে যাবি না। আর সবসময় মাথায় ঘোমটা দিয়া রাখবি। চুলে তেল দেছ নাই ক্যান? আয় আমার কাছে। ভালা কইরা তোর তুলে তেল মাখায়া দেই। এমন লম্বা লম্বা চুল গুলানের তো খাওয়োন দাওয়োন লাগে নাকি! আয় তো আমার কাছে।
রুহি কিছু বলার আগেই মমতা খানম চোখ ইশারা করে বললেন সায়েদা বেগমের কাছে গিয়ে বসতে। রুহিও চুপচাপ তার কাছে গিয়ে বসলো।
রুহির ছোট চাচি নাছিমা এসে বলল,ময়নার বিয়াডা মনে হয় ভাইঙ্গা যাইবো গো। আহারে এতো গরিব ঘরের মাইয়া। একবার বিয়া ভাঙ্গলে আর বিয়া দিতে পারবো!!
মমতা খানম জিজ্ঞাসু নজরে নাছিমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কি হয়েছে।
নাছিমা বলল, একটু আড়ালে আসেন ভাবি।
__________________________________________________
মা প্লিজ, কার না কার বিয়ে সেই জন্য এখন আমাদের গ্রামে যেতে হবে! বিরক্ত লাগে আমার গ্রামের পরিবেশ।তোমাদের যেতে হলে তোমরা যাও।আমি যাবো না।
রেহনুমা আহমেদ বললেন, তোর বাবা যখন একবার ঠিক করেছেন আমাদের সবাইকে নিয়ে গ্রামে যাবে তার মানে সবাইকেই যেতে হবে৷ আর সবসময় এক জায়গায় থাকতে ভালো লাগে নাকি! একটু ঘুরে আসলে দেখবি মনটাও ভালো হবে। গ্রামের ফুরফুরে হাওয়া গায়ে লাগলেই দেখবি ভেতরে একটা অদ্ভুত শান্তি অনুভব হচ্ছে।
প্লিজ মা তুমিও এখন শুরু করে দিয়ো না। বাবাকে একটু ম্যানেজ করো। আমি যাবো না। আমার বন্ধুরা সবাই এখানে আমি ওখানে গিয়ে একা একা কী করবো?
ওখানে তোর ভাই-বোনেরা আছে না! ওদের সাথে গল্প করবি, ঘুরেঘুরে গ্রাম দেখবি। কত বছর পর যাচ্ছিস বল তো? সেই ছোট বেলায় যে তোকে নিয়ে ঢাকায় এলাম তারপর থেকে তো আর একবারের জন্যও তোকে গ্রাম মুখো করতে পারিনি৷ এবার তোকে যেতেই হবে। আমি কোনো না শুনবো না। ব্যাগপত্র গুছিয়ে নে। ভোরে ভোরেই বেরিয়ে পরবো আমরা।
একথা বলেই রেহনুমা আহমেদ চলে গেলেন। মাহির চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে একটা সিগারেট ধরালো।
সকাল হতেই রেহনুমা মাহিরকে ডাকতে শুরু করলেন। মাহির রুমের দরজা না খুলেই ভেতর থেকে উত্তর দিলো, আমি যাবো না মা প্লিজ। বারবার ডেকো না তো।
রেহনুমা আহমেদ চেচিয়ে বললেন, তুই আগে রুমের দরজাটা খোল। তোর বাবা কিন্তু ভীষণ রেগে যাবেন।
মাহির রেগেমেগে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলল।
কি রে এখনও ব্যাগ গোছাসনি?
উফফফ মা……….
তামজিদ আহমেদ বললেন, কী ব্যাপার তোমার? এতো তোষামোদ করা লাগছে কেনো? চলো তারাতারি তৈরি হয়ে নাও। দেরি হয়ে গেলে কিন্তু জ্যামে আটকে যাবো। তাছাড়াও গ্রামের জমিজমা নিয়ে আমার অনেক কাজ আছে। তুমি আমার একমাত্র ছেলে। আমার কোথায় কতটুকু সম্পত্তি আছে সবটা তোমার জানা দরকার৷ গ্রামে গিয়ে তোমাকে সব বুঝিয়ে দেবো কোথায় কতটুকু জায়গা সম্পত্তি আছে আমাদের। আমার অনুপস্থিতিতে এসব তো তোমাকেই সামলাতে হবে। ঝটপট তৈরি হও।
মাহির চুপচাপ বসে আছে।
হঠাৎ রেহনুমা আহমেদ বলে উঠলো, এই মাহিরের বাবা সেদিন ভাবির সাথে দেখা হয়েছিলো আমার।
তামজিদ আহমেদ বললেন, কোন ভাবি?
আরে আশরাফ ভাইয়ের বউ। মমতা ভাবি।
ওওও আচ্ছা আচ্ছা! তা কী বললেন ভাবি? কেমন আছেন ওনারা? আশরাফের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই অনেক বছর যাবত। দুজনি ভীষণ ভালো মনের মানুষ।স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত আমাদের একসাথে বড় হয়ে ওঠা কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে ঐ গ্রামে।
রেহনুমা আহমেদ বললেন, তাহলে একটা ভালো খবর দেই তোমাকে।
কী?
ওনারাও গ্রামে যাচ্ছেন। এবার তাহলে ওনাদের সাথে দেখা হবে কী বলো?
তাজা বলেছো। পুরনো বন্ধুত্ব আমাদের। দেখা সাক্ষাত না হলেও মনের টান এখনও আছে। এই মাহির তুমি তারাতারি তৈরি হয়ে এসো।
রেহনুমা আহমেদ ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই কি সত্যিই যাবি না? ঠিক আছে যেতে হবে না তোকে।
একথা বলেই রেহনুমা আহমেদ রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন এমন সময় মাহির বলল, মা আমি যাবো।
রেহনুমা একটা হাসি দিয়ে বলল, এই তো আমার ভালো ছেলে। আমরা অপেক্ষা করছি তারাতারি আয়।
মাহিরের গ্রামে যেতে চাওয়ার একমাত্র কারন রুহি৷
রুহির কাছাকাছি থাকার জন্য এর চেয়ে ভালো মওকা আর কী হতে পারে!! ইয়েস……..
অতঃপর মাহিরও তার বাবা-মায়ের সাথে গ্রামের উদ্দেশ্য রুওনা দিলো।
চলবে……..