অনেকে আমার গল্পের শহর চ্যানেল থেকে গল্প পড়ে না বিষয়টা আমাকে খুব কস্ট দেয় তাই গল্পের শহর থেকে নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের শহর চ্যানেলের ।community আর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই আপনি নোটিফিকেশন পান)
দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-২৬
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
একসপ্তাহ না যেতেই মিতুর মাথায় বাজ পড়ে যাবার মতো ঘটনা ঘটল।
প্রতিদিনকার মতো বন্ধন খুব ভোরে অফিসে চলে যায়।তার কিছু পরে ফোন করে জানায় আজ রাতে আসবে না।
নীবিড়ও আজ সকাল সকাল সেজেগুজে বের হয়ে যায়।চোখে দামী সানগ্লাস যেটা এইবার বন্ধন এনে দিয়েছিল সিংগাপুর থেকে।
ভাই এর তো দুইটা গাড়ী।এলিয়েনটা নিয়ে বের হয়।ইদানীং জিম শুরু করেছে আবার।সর্ট হাতা স্পোর্টস গেঞ্জি বা টিশার্ট পড়ে আর ইচ্ছেমতো বডি স্প্রে লাগিয়ে বেশ একটা ভাব নিয়ে বের হচ্ছে।
বন্ধন অবশ্য বলছিল নীবিড়ের বাইকের খুব শখ।ছোট ভাই আদরের ভাই বলে কথা সেটা নাকি যত দ্রুত কিনে দিবে।
মিতু অবশ্য বলছিল,”ওর ছুটি শেষ হলেই তো চলে যাবে,তাছাড়া আপনার গাড়ীতো আছেই।আর বাইকে এখন অনেক এক্সিডেন্ট হচ্ছে।দুদিন পর ওর বিয়ে দিবেন,শুধু শুধু বাইক দিয়ে কি হবে এখন?’
“আহা তুমি বুঝছো না কেন হি ইজ এ ইয়াং ম্যান।এই বয়সে বাইক নিয়ে সবারই একটা ফেসিনেশন কাজ করে।যাওয়ার আগে যদি ওর কোন গার্লফ্রেন্ড থাকে তাকে চড়াবে,ঘুরবে … বাবা,মা নেই ছেলেটা দুদিন পর চলে যাবে আমি যদি ওকে না বুঝি আর কে বুঝবে বল?’
“আমি তো সেটাই বল্লাম ও তো চলে যাবে তখন বাইক দিয়ে কি হবে?’
“ওর বউ চড়বে….যখন টা তখন দেখা যাবে….’
মিতু আর কথা বাড়ায় না।
নীবিড়ের হিরো মার্কা গেটআপ দেখে রানু তো তাকিয়েই থাকে।চোখের পলক যেন পড়ছে না।
এদিকে নীবিড় ফোনে যেন কাকে বলছে,
“এই তো আর কয়েকটা দিন ওয়েট করো বেবী? ভাই তো নিজে বলেছে বাইক কিনে দিবে আমাকে…তারপর তো….’
“নীবিড় তাহলে চুটিয়ে প্রেম করছে।মেয়েটা কে,কে জানে?’বোঝার চেষ্টা করে মিতু।
শুধু নীবিড় না?রানুও ফোনে কার সাথে যেন কথা বলে।
বুড়ীটা কে যে কি দিয়ে ব্রেইন ওয়াশ করেছে কে জানে?
ঝিনাইদহে মা,বাবার সাথে কথা বলা লাগে তাই নীবিড়কে দিয়ে কম দামী মোবাইল কিনে আনিয়েছে।কিন্তু সেটাও স্মার্ট ফোন।
মিতু আগেও খেয়াল করেছে বিষয়টা ফাঁক পেলেই নানুর মোবাইলে কার সাথে যেন কথা বলে রানু।তাকে দেখলেই চুপ।মা বাবার সাথে কথা বল্লে এমন ফিসফিসিয়ে কথা বলে নাকি?তাও আবার এত হেসে?
মিতু এও বলেছে উঠতি বয়সী মেয়ে রানু।ওকে এভাবে মোবাইল দেয়াটা ঠিক না।
কিন্তু নানুই টাকা দিয়েছে কিনতে এখানে মিতুর আর কি বলার থাকতে পারে?
“এ বাসায় যে হঠাৎ কি শুরু হয়েছে আল্লাই জানে?’
খুব উদ্বিগ্ন মিতু।
তবে নীবিড় বাবাইকে স্কুলে দিয়ে আসে।ভাবীকে বলে,
“তুমি আজ ওকে স্কুল থেকে নিয়ে এসো ভাবী?আমি ওকে এখন ড্রপ করে দিচ্ছি।’
মিতু মাথা নেড়ে সায় দেয়।
বেলা দুটা বাজে বাবাই এর স্কুল ছুটি।ধানমন্ডি পনেরোর আশেপাশে বাসার কাছেই স্কুল।মিতু রান্নাবান্না সব কাজ শেষ করে বাবাইকে তুলে নেয় ওর ছুটির পর।তারপর ভাবে একটু সুপার সপে যাবে।
সুপার সপে কেনাকাটা শেষ করে বাবাইকে নিয়ে।বাবাই ও বেশ খুশি।বিস্কিট,চলকেট,আইসক্রীমও কিনে তার প্রিয় সাবেক টিচার মিতু আন্টিকে সাথে নিয়ে।
গাড়ী দিয়ে ফেরার পথে মিতুর চোখ আঁটকে যায়।রিক্সায় করে দেখে পারুল ও নীবিড়।দুজনের হাত ধরে আছে আবার?
“কি আশ্চর্য সকালে না এলিয়নটা নিয়ে বের হয়েছে?তাহলে রিক্সায় কি করছে পারুলের সাথে?তাও আবার হাত ধরে?’
“আর পারুল তো ভারী ন্যাকা সেজে থাকে?বলে তোমার দেওরকে ভালো লাগে না…. এখন বিয়ে করবো না কত ন্যাকাপনা? আর তলে তলে এই?এইভাবে ধোঁকা দিলি আমাকে পারুল….বিষয়টা তো আমাকে জানাতে পারতি?আর নীবিড় তাহলে ফোনে কাকে বেবী বেবী করছিল…পারুলই কি তাহলে…..?’
রাগে মিতু ভীষন ফুসতে থাকে।পারুল সান্তা মারিয়াম প্রাইভেট ভার্সিটিতে ফ্যাশন ডিজাইনিং এ পড়ছে।এই ভার্সিটি নাকি এই সাবজেক্ট এ বেশ নাম করছে পারুল সেদিন ফোনে বলছিল।কিন্তু সেদিনও তো কিছু বোঝা যায় নি।
বন্ধনের দুটা গাড়ী বলতে এলিয়নটা ওর নিজের।আর একটা জীপ গাড়ী অফিসে ব্যবহারের জন্যে।আজ বাসায় আসবে না,নীবিড়ও এলিয়নটা নিবে তাই জিপটা পাঠিয়ে দিয়েছে।
বাসায় এসে মাথা ঘুরছে মিতুর।ইদানীং মনে হয় তার এত স্ট্রেস নিতে পারছে না।তার কাছে মনে হচ্ছে সবাই তাকে ফাঁকি দিচ্ছে কোথায় যেন।
নানু,নীবিড়, রানু এখন পারুলও তাকে নিয়ে খেলছে।গা গুলিয়ে আসে মিতুর।
সাথে সাথে ওয়াশরুমে যায় ভেসিনে বমী করে ভাসিয়ে দিচ্ছে মিতু।
রানুই আবার দৌড়ে আসে তার কাছে।
“কি হইসে ভাবীজান?আস্তে আস্তে….’
মিতুকে ঘরে এনে শুইয়ে দেয় সাথে সাথে।
“হাত পা ডইলা দেই ভাবী….?’
“না লাগবে না….পানি খাব ঠান্ডা পানি দাও তাড়াতাড়ি…’
মিতুর বুকটা খুব অস্থির করছে।লাফাচ্ছে অবিরত।কিছুই ভালো লাগছে না।ভাবে,
“বাবুকে একটা ফোন দিব?না থাক টেনশন করবেন।’
পানিটা খেয়ে চুপচাপ শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে মিতু।
রাতে বুয়াকে বলেছিল এসে তার ঘরে ঘুমাতে।কারন একা তো সে থাকতে পারে না।
বন্ধনও বলে দিয়েছে একা না শুতে।প্রয়োজনে নানুর রুমে বা রানুকে এসে এখানে ঘুমাতে।
রানুর ভাবসাব, ফোনালাপ সব কিছুই বিরক্তিকর।তাছাড়া নানু তো ওকে আল্লাদ দিয়ে তা ধেই ধেই করে মাথায় তুলেছে।
বুয়া আর আসেনি।রানু পাশে এসে শোয় ওর।
মিতু খেয়াল করলো রানু মোবাইল চাপছে।
বিরক্ত মিতু, “এই মোবাইল রাখো এত রাতে কি এত মোবাইলে?ঘুমাও…… ‘
ফের বলে ওঠে রানু,
“ভাবীর মাথাখান টিইপ্পা দেই?’
“না ঠিক আছে এখন ঘুমাও।’
এপাশ ওপাশ করে মিতু।শরীরটা হঠাৎ খারাপ হওয়ায় আজ পারুলকেও ফোন করে নি।আর কিই বা জিজ্ঞেস করবে।
“ধ্যাত যা খুশী করুক গিয়ে…..’
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে মিতু।
হঠাৎ ঘুম ভাঙে ওর।পাশে দেখে রানুও নেই।ওয়াসরুমটাতেও নেই।
“গেল কই ও?নানুর ঘরে চলে গেল নাকি আবার?’
এদিকে ফের পানির পিপাসা মিতুর।ডায়নিং রুমে যায় সে পানি খেতে।
গিয়ে তো মিতুর চক্ষু চড়ক গাছ।এমন দৃশ্য দেখবে সে কল্পনাও করেনি তাও একই দিনে একই ব্যক্তিকে নিয়ে?
নীবিড় অনেক রাতে বাসায় ফিরেছিল তাই সকালে আর ঐ ঘটনার পরে আর দেখেনি।আর এখন যেভাবে দেখল মিতুর মাথা চক্কর দিচ্ছে।
রানু নীবিড়কে পেছন থেকে জাপটে ধরে আছে।আর কি যেন ফিসফিস করে আবেগী কন্ঠে বলছে নীবিড়কে।
নীবিড়ও হা হু কি জানি বলছে।
একই সাথে কজনের সাথে মিতু আর ভাবতে পারে না।
লাইটা জ্বালিয়ে হুংকার দিতে থাকে মিতু।
“কি হচ্ছে এখানে হ্যা?’
রানু পড়িমরি করে ছেড়ে দেয় নীবিড়কে।
“ভাবী পানি খাইতে আসছিলাম, ডরায় গেসিলাম তাই….’
“ডরায় গেসিলা এই তার নমুনা?’
গায়ে আবারো ওড়না ছাড়া এই অবস্থা দেখে মিতুর আরো মাথা গরম হয়ে যায়।
নিজেকে আর সামলাতে না পেরে কষিয়ে গালে চড় বসিয়ে দেয় রানুর।
“বেয়াদপ মেয়েছেলে কোথাকার বাসায় তোমাদের ভাই নেই আর রংগশালা বানিয়ে রেখেছো?কতদিন ধরে চলছে এসব?’
“আহ্ ভাবী কি যাতা বলছো?আর রানুকে মারলে কেন?’নীবিড়ের পাল্টা জবাব।
“তুমি চুপ থাকো নীবিড়? কতজনের সাথে এসব করে বেড়াও কেজানে?’
“কতজনের সাথে মানে?কি বলতে চাও ভাবী?’
“কি বলতে চাই?কাল দুপুরে কার সাতে ছিলে তুমি?পারুলের সাথে রিক্সায় কি করছিলে?ওর হাত ধরনি তুমি? নাকি যখন তখন যাকে পাও তার হাতই ধরো?এখন আবার রানুকে…..ছিঃ’
“ভাবী ছিঃ ছিঃ টা একটু কম করো তোমার বোনকেই জিজ্ঞেস করো আমার সাথে দেখা করার জন্য ওই পাগল থাকে।আমার হাত ধরার জন্যেও তাই…..আমার ওত শখ নাই ওকে?’জোরে জোরে পাল্টা আক্রমন করে নীবিড় ভাবীকে।
“ও তাই এখন আমার বোনের দোষ আর তোমার তো কোন কিছুই ইচ্ছে করে না না?’
“না করে না….আমার এতো সময় নাই……!’
“তাহলে এখানে রানুর সাথে অন্ধকারে কি করছিলে?নাকি এখানেও রানুরই দোষ?’
প্রচন্ড রেগে থরথর করে কাঁপছে মিতু।
“আমি এখানে কারো দোষ দিচ্ছিনা,পানি খেতে এসেছিলাম।রানুই কি সব শুরু করে দিল বল্ল ওর ভয় লাগছে….. ‘
“ও বল্ল ভয় লাগছে আর এজন্য দুজন জাপটাজাপটি করছো আর আমি এসব কিছু বুঝিনা ভেবেছো?ভয়ই যদি ওর লাগে ওকে বকা দিয়ে রুমে পাঠায় দিলা না কেন? সাধুপুরুষ হয়ে ওর কথা তো ঠিকি শুনছিলা?’
“দেখো ভাবী আমি ওকে মোটেও জাপটে ধরিনি। চোখে
কি দেখতে পাও না আমি না, রানুই আমাকে ধরেছিল? ‘
রানু এবার মুখ কাচুমাচু করে আছে চোড়ের দাগ বসে গেছে ওর ফরসা গালে?
এবার নীবিড়ও রেগে যায়,
“ভয় পেয়ে আমাকে ধরলে আমি কি করবো?আর ধরলে ধরেছে তোমার তাতে কি হয়েছে?তোমার বরকে তো আর ধরেনি?যত্তসব রাতবিরাতে চেঁচিয়ে বাড়ী মাথায় তুলছো।মেয়েটাকে তো ঠিকই মেরেছো আবার আমার সাথেও চিৎকার করছো?’
“কি? কি বল্লে তুমি নীবিড় আমার কি মানে?তোমরা কেলেংকারী করবে আর আমি কিছু বলতে পারবো না…?ফের মিতুর মাথা চক্কর দিতে থাকে।গা গুলিয়ে আসে।তাদের হৈচৈ,চেঁচামেচিতে নানুও জেগে যায় ততক্ষণ।
মিতু চোখমুখ উল্টায় ফের দৌরে যায় বেসিনে।অনর্গল বমী করছে তো করছেই।হঠাৎ উল্টে পড়ে যায় মিতু বেসিনের পাশ দিয়ে মেঝেতে তৎক্ষনাত।(চলবে)নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-২৭
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
ভোরে ফজরের আযানের সময় টের পায় মিতু।বন্ধন এইসময়ে উঠে, তাই স্বামীর সঙ্গে থেকে অভ্যেসটা রপ্ত হয়ে গেছে। তারও এই সময়ে ঘুম ভাঙে।
বন্ধনের অফিসে যাবার সময় সব গুছিয়ে দিয়ে উনি বিদায় নেয়ার পর আবার আর একটু ঘুমায়।
মিতু চোখ মেলে বুকের ভেতরটা তখনও জানি ভারী ভারী লাগে।গতরাতে বাজে একটা ঘটনা সে দেখেছে।সব ঝেড়ে ফেলে বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করে নামাজটা পড়ার জন্য।
কিন্তু ফের মাথা চক্কর দেয়।চোখ মেলে দেখে রানু ফ্লোরে বিছানো শতরঞ্জির উপর সটাং হয়ে শুয়ে আছে।
আবারো তার বুকে ওড়না নেই।দেখেই ফের চটে যায় মিতু।
“আচ্ছা ওর সমস্যাটা কি? ওর কি গরম বেশী লাগে? ‘
মিতুর হাত,পা, মাথাও ভেজা টের পায় সে।পাশে টেবিলে ছোট বাটিতে পানি ও তেল দেখে বোঝে ওর হাত পা,মাথা ঢলে দেয়া হয়েছিল।
বিছানার ওপাশটায় নানুকে দেখে ঘুমাচ্ছেন।দেখে ভালই লাগে মিতুর।
অনেকদিন পর নানু তার বিছানায়।হঠাৎ মিতুর মনে হলো,ও পড়ে যাবার সময় নানু কি যেন বলছিল।
“ব্যারাম আছে মিতুর,খালি মাথা ঘুইরা পড়ে।’
রানুকে বোধহয় বলছিল।নানুটা কেমন যেন বদলে গেছে।অথচ বিয়ের পর এই নানুই তাকে মায়ের স্নেহ দিতেন,কত মজার মজার কথা শোনাতেন মিতুকে।
বিয়ের আগে যখন বাবাইকে পড়াতে আসতো,তখন থেকে নানু তাকে আদর করতেন,বন্ধনের জন্যে তো নানুই তাকে পছন্দ করেছিলেন।আর এখন?রানুকে পেয়ে….
রানুর কথায় বিরক্তি ধরে যায় ফের।ও আসার পর থেকেই সব ওলটপালট।
ফের রানুর গালটার দিকে তাকায়,অন্ধকারে বোঝা না গেলেও মিতু টের পায় গতরাতে ওর গালে কষে চড় বসিয়ে ছিল।
“আচ্ছা কোন ভুল করলাম না তো ওর গায়ে হাত তুলে?মাথাটা কি বেশী গরম হয়ে গিয়েছিল? আর হবেই বা না কেন?কতবড় সাহস বুকে তো ওড়না রাখেই না,অন্ধকারে নীবিড়কে জাপটে ধরে প্রেম নিবেদন করেছে?আর মোবাইলেও তো তার আশিকের অভাব নেই।’
নানুর মোবাইল মিতু সেদিন কার সাথে কথা বলবে নিয়েছিল ওর মোবাইলে ব্যালেন্স ছিল না।
কিন্তু রানু যে নানুর মোবাইল থেকেও টেক্সট পাঠাতো মিতুর চোখে তা পড়ে গিয়েছিল।
কোনটাতে জান লেখা,কোনটাতে সোনা,ময়না মিতু তো প্রচণ্ড অবাক রানুর শাহস দেখে।
রানুকে আড়ালে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল,নানুর কারনে পারেনি।
সেজন্যে নীবিড়ের সাথে দেখে আরো বেশী চটে গেছে।
মিতু কষ্ট করে উঠে যায়।ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে
মাথা ঘুরছে এখনো।তবুও অাল্লাহর উপর ভরসা করে নামায আদায় করে।
রুমে এসে দেখে নানু নেই।নামাজ পড়ার জন্য বোধহয় তার ঘরে গেছে।
আশ্চর্য অন্যসময় তো ঠিকই জিজ্ঞেস করতো,
“কই রে বুবু কই গেলি আজ না বলেই চলে গেছে?’
নাকি ডেকেছিল মিতু শুনতে পায়নি।
নামাজ শেষ করে রানুর গায়ে নিজের একটা ওড়না দিয়ে ঢেকে দেয়।
ফের শোয় মিতু।শুয়ে শুয়ে ভাবে একটা কথা।এতবার বমি, মাথাঘোড়ানোর কারন তদন্ত করে সে।
শরীর খারাপ বা মাসিকের ডেট পার হয়েছে তাও প্রায় দশদিনের উপর।
সেতারাও গতকাল ফোন করেছিল।
“কি রে কেমন আছিস মিতু?’
“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।’
“তারপর দিন কেমন কাটছে বল,আর্মি অফিসারের বউ কোথায় কোথায় ঘুরলি?ফেইসবুকে তো শুধু পাঁচতারা হোটেলে আর ক্যাফেতে ঘুরেছিস,গান শুনছিস তাই দেখলাম বন্ধনের টাইমলাইনে।তুইও কিছু পোষ্ট কর?’
“তুমি তো জানো আমি ফেইজবুুক বা অনলাইনে তেমন একটিভ নই আমার এসব ভালো লাগে না আপা?’
“এখনও ভালো লাগে না?কবে ভালো লাগবে?একটা বাচ্চা নিয়ে নে,সব ভালো লাগবে।’
মিতু আমতা আমতা করে।বিকেলে যে বমি হয়েছিল তা জানায়,মাথা ঘোরায়, সব উপসর্গ গুলি জানায়।কিন্তু বাসায় যে টেনশন চলছে এ ব্যাপারে কিছু জানায় না বোনকে।
সেতারা শুনে আপাতত কুইক প্রেগনেন্সি টেস্ট করাতে বলে।
মিতু ফের উঠে বসে।কাবার্ড থেকে তার ব্যাগটা নামায় বুক পকেটের চেইনটা খোলে।হাতরিয়ে একটা ভাজ করা কাগজ পায়।
অবাক হয় মিতু।বন্ধনের দেয়া সেই একহাজার টাকার নোটটা সে খরচ করেনি।এভাবেই রেখে দিয়েছিল।যদিও পারুল বলেছিল ওদের খাওয়াতে।কিন্তু সেতারা বলেছিল “ওটা তোর হবু বরের থেকে পাওয়া প্রথম টাকা ওটা আশীর্বাদ সহজে খরচ করবি না।দরকার হলে সুযোগ বুঝে পড়ে কিছু কিনে নিবি না হলে সযতনে রেখে দিবি পড়ে কাজে লাগবে।’
ফের আর একটা জিনিস বের করে।কুইক প্রেগনেন্সি টেস্ট যেটা নিশা ওকে কিনে দিয়েছিল।রানু আসার পর যখন একবার তার মন খারাপ হয়েছিল মিতু নিশার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল।ওখানে গিয়েও মিতু বমী করে দেয়।ঐদিন থেকেই মিতুর বমী শুরু হয়েছে।
নিশাকেও রানুকে নিয়ে ঝামেলার সব কথা বলতে পারেনি, অসুস্থতার কারনে।বেচারী বান্ধবীর এই অবস্থা দেখে নিশা তাকে এটা কিনে দেয় ডিসপেনসারি থেকে,বান্ধবীকে বিদায় জানানোর পথে।যাবার সময় বারবার শুধু বলে
“তোর শরীরের অবস্থা কিন্তু ভালো ঠেকছে না মিতু।এটা রাখ,সকালে খালিপেটে শুধু পানি খেয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে টেসটা করবি।তবে দু সপ্তাহ পরে করালে ভালো।আর হ্যা বাসার এ সমস্ত চিন্তা এখন বাদ।আগে টেস্ট করা।পরে এসব নিয়ে ভাবা যাবে আগে দুজনকে সুস্থ থাকতে হবে।’
“কোন দুজনকে?’মিতুর কৌতুহল।
নিশা মিতুর পেটে হাত দিয়ে বলে,
“সত্যি কেউ আসছে কিনা যার খবর জানার জন্য এতক্ষন বকবক করলাম এটা দিয়ে।’
মিতু পানি খায় পুরো এক গ্লাস।দশদিনের বেশী প্রায় দু সপ্তাহই তো তার পিরিয়ড বন্ধ।
খালি শিশি আগেই যোগার করে রেখেছিল।এবার একটা লম্বা দম নিয়ে জিনিসগুলি নিয়ে ওয়াশরুমে যায়।
বুকবুকটা ধকধক করছে তার।কি হতে চলেছে…..?রেজাল্ট কি আসে কে জানে?
মাত্র দুমিনিটেই রেজাল্ট পাওয়া যায়।কিন্তু মিতু কয়েক সেকেন্ডে এ রেজাল্ট পেয়ে গেল।
বিস্ময়ে,আনন্দে তাকিয়ে থাকে মিতু রেজাল্ট দেখে।ঠোঁটের কোণায় বহুদিন পর ফের হাসির রেখা ফুটে ওঠে তার।
টেস্টের রেজাল্ট পজিটিভ,দুটো লাল দাগ চিহ্ন এসেছে তাতে।
খুশীতে সে ফেটে পড়ে।
পেটে হাত দিয়ে আদর বুলাতে থাকে,
“সত্যি আমি মা হতে যাচ্ছি……?’বিশ্বাসী হতে চায় না তার?
মিতু রুমে এসে বন্ধন আর তার বিয়ের ছবিটা নাড়াচাড়া করে,
আবেগে দুচোখ ভরে আসতে চায় ওর।ভীষন মিস করে বন্ধনকে মিতু।ছবির দিকে তাকিয়ে ফের বলে,
“কই আপনি বন্ধন?তাড়াতাড়ি আসেন না আমাদের কাছে…….’
ব্যাগ থেকে বিয়ের আগে দেয়া বন্ধনের সেই একহাজার টাকার নোটটা বের করে।ঘ্রান নেয় মিতু যেখানটায় বন্ধনের হাতের স্পর্শ লেগে ছিল।ভাবে
“এইবার বোধহয় এই টাকাটা কাজে আসবে…।'(চলবে)