দ্বিতীয় বাসর পর্ব ২৪+২৫

নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান অনেকে আমার গল্পের শহর চ্যানেল থেকে গল্প পড়ে না বিষয়টা আমাকে খুব কস্ট দেয় তাই গল্পের শহর থেকে নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের শহর চ্যানেলের ।community আর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই আপনি নোটিফিকেশন পান)

দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-২৪
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

মিতুর বিয়ে হয় মে মাসের দশ তারিখে।আর বাসর হয়েছে কিনা গতকাল অর্থাৎ সাতই সেপ্টেম্বর।যদিও এর আগে বন্ধন তাকে সোহাগের এ চিহ্নগুলি দিয়েছে তাও প্রায় দশদিন আগে।তবে সেটা বাসর বা ফুলশয্যা কোনটাই ছিল না।
গতরাত এমনকি দিন থেকেই হয়েছে মিতুর জীবনের প্রথম বাসর বা ফুলশয্যা।যদিও ফুল ছিল না।তবে বন্ধন কিন্তু তাকে বেলী ফুল কিনে দিয়েছিল,ক্যাফেতে খাওয়ার সময়।
আর খুব আফসোস করেছে হোটেলটায় তারাহুরো বা হঠাৎ করে এসেছে না হলে বন্ধন বলে দিলেই নাকি ফুলের ব্যবস্থাও হয়ে যেতো।
মিতু অবশ্য তাতেই খুশি।
“আরে লাগবে না কি যে বলেন এখন ফুল দিয়ে কি হবে?বিয়ে তো কবেই হয়ে গেছে?’
বন্ধন বলেছে,
” তুমি ফুল ভালোবাসো না মিতু?’
“তা কেন বাসবো না?’
“হুম তা ঠিক?আমার বউটাই তো একটা সুগন্ধী ফুল! তবে হ্যা পরেরবার পুশিয়ে দিব।অনেক ফুলের ভেতর তোমাকে নতুন করে সাজাবো আর প্রাণ ভরে সুবাস নিবো আমার বাসরের সবচাইতে আবেদনময়ী সুন্দর ফুলের….’
বন্ধনের আবেগী কথায়,ভালোবাসায়, সোহাগে সব কিছুতেই যেন জাদু আছে।
ঘুমের ভেতর একাকীত্বে,বিশেষ করে বন্ধন যখন অফিস চলে যায় , তখন আরোবেশী মিতুর কানে বাজে বন্ধনের এসব জাদুমাখা কথা!
আর ভাবে
“লোকটা কি পাগল?
কিন্তু এভাবে বল্লে তো যে কেউই পাগল হয়ে যাবে?এভাবে ভালোবাসলে,আদর করলে….’
কিন্তু প্রথমদিন বন্ধনের আদরে যতখানি দাগ ছিল,আজ তো ওত থাকার কথা না।
মিতু এবার নানুর ড্রেসিং টেবিলে ভালো করে তাকায় নিজের দিকে।
“আসলেই তো…বোঝা যাচ্ছে এখন…পাঁচমাস পরে যে বাবু কি শুরু করলেন?’
হাত দিয়ে সড়ানোর চেষ্টা করতে চায় মিতু।গলার দাগ গুলি আরো বেশী বোঝা যাচ্ছে।
“ফুপুও তাহলে এসব দেখছিলেন ভ্রুকুটি করে….’শংসয় মিতুর।
মিতু এবার শাড়ীর আঁচল দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখতে চায়।কি যে বিপদে পড়ে যায় সে এই অবস্থায়?
রানু ফের বলে ওঠে,
“ভাবী ওতো শরমায়েন না,আমি আপনের ননদ।ননদের সামনে শরমের কী?এসব আমরা বুঝি গো ভাবী…’
রানু বেশ চটকদার কথাও জানে।মিতু খেয়াল করলো ওর কথায় আঞ্চলিকতা থাকলেও শুদ্ধ ভাষাতেই সে কথা বলার চেষ্টা করছে।
“ভাবী তো দেখতে অনেক সুন্দর?মাশাআল্লাহ!ভারতীয় নায়িকাদের মতো?’
“তাই নাকি?তুমি ভারতীয় নায়িকাও চিনো?’
মিতুর বিস্ময়।
“হো ভাবী আমাদের ঝিনাইদহে সব আসে।ডিশ,নেট সব মোটামুটি দেখা যায়।’
বন্ধনদের দেশ তো খুলনা বলেই জানে মিতু।দুঃসম্পর্কের চাচার বাসা বোধহয় ঝিনাইদহ?ভাবে মিতু।
“ও আচ্ছা।কিন্তু ভারতীয় নায়িকা কেন বলছো?বাংলাদেশী নায়িকা বুঝি সুন্দর না?’
“না না সুন্দর তো?নায়িকা মৌসুমী আফা তো ওহনো কত সুন্দর!মোটকা হইলেও ভালো লাগে….ভাবীরে তো ওইরকমই দেখা যায়।’
মিতু অবশ্য এর আগেও শুনেছে এ কথা।একটু সাজলে,তার গালের দুপাশ আর ভালো স্বাস্থ্যের জন্যেও অনেকবার শুনেছে সে।নীবিড় তো প্রথম দেখেই বলেছিল,
“পুরাই নায়িকা মৌসুমী….. ‘
মিতু হেসে বল্ল,”মৌসুমী তোমার আপা?’
রানু ফিক করে হেসে দেয়।
মিতু অবশ্য মনে মনে বলতে থাকে,
“আমি মৌসুমী হলে তুমি তাহলে শাবনূর?যে চটাং চটাং কথা তোমার?’
” যেভাবে শাবনূর মুখ ভেংচিয়ে সুন্দর অভিনয় করে দেখায়,কেমন একটা ঢঙ নিয়ে কথা বলে এ মেয়েটাও দেখছি তাই…..?’ভাবে মিতু।
“ঘর গোছানো শেষ হয় নি?’
যদিও নানুর ঘর তেমন অগোছালো হয় না।মিতু বেশীরভাগ বিছানাটা গুছিয়ে দেয়,কাপড় বা শাড়ী থাকলে সযতনে ভাজ করে ।
বুয়া ঘর ঝাড় দিতে এসেও গোছায় ফার্নিচার গুলি মুছে দেয়।
তবে নানু নাকি তার আলনার কাপড় গুলি দিয়েছে তাকে ভাঁজ করে দিতে।
বুয়া অবশ্য বলছিল নানু নাকি রানুকে অনেক পছন্দ করে।নানুর শখের পুরনো দিনের কাঠের আলমারীও নাকি তাকে দিয়ে গোছাবে।
“বুড়ীর মনে যে কী আছে কেডা জানে?’মিতুকে বলছিল বুয়া তখন।
মিতুও মনে মনে জানার চেষ্টা করে…..।(চলবে)নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-২৫
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

মিতু মনে মনে যা আন্দাজ করেছিল তাই ই হয়েছে।নানু রানুকে পছন্দ করছে নীবিড়ের জন্যে।
কিন্তু নীবিড় রানুকে পছন্দ করছে বলে মনে হয় নি।করবেই বা কেন? নীবিড় হাইয়ার স্টাডিজ এর জন্য কানাডায় পড়াশোনা করছে।গ্রেজুয়েশন শেষ।এখন এম বি এ পড়বে।পাশাপাশি সফটওয়ার বিজনেজে ইনভলব ওরা কজন বন্ধু মিলে।
নীবিড়ের কথায়, আচরনে আভিজাত্যের ছোঁয়া, ভাই বন্ধনের মতোই।
অবশ্য ওরা তিন ভাইই বেশ স্মার্ট, রুচিশীল।
আর রানু এসেছে নাকি নানুই খবর দিয়ে আনিয়েছে।
মিতুর বিয়ের সময়ই খবর দিয়েছিল।রানুর মা নাকি অসুস্থ তাই আসেনি।
রানু ইন্টার পর্যন্ত পড়েছে।পরীক্ষাও নাকি দেয় নি।ফুপুর কথায় বোঝা গেল, মা অসুস্থ থাকায়,সংসারের সব কাজ করে।নানারকম পিঠা,আচার,ভর্তা থেকে শুরু করে সব রান্নায় নাকি পারদর্শী।হাতের কাজও জানে।
শুধু পড়ালেখাটাই হয় নি।ওকে দেখেও বোঝা যায় বেশ গুনের তবে পড়ালেখায় মন নেই।
তবে রানুর কিছু আচরন মিতুর মোটেও ভালো লাগছে না।অতিরিক্ত কথা বলে।
ভাই তাকে কিভাবে সোহাগ করে তাও জিজ্ঞেস করে বসে।মিতু তো প্রচণ্ড রেগে যায়।তবে কিছু বলেনি।তবে রেগে যায় আরও কিছু কারনে।
যখন তখন , ওড়না ছাড়াই বন্ধন বা নীবিড়ের সামনে চলে আসে রানু।
বন্ধন কলিংবেল চাপলেই দৌড়ে যায় দরজা খুলে দিতে।
মিতু গম্ভীর গলায় বলে,
“শোন রানু কিছু মনে করো না,শরীরে ওড়না কেন থাকে না?ওড়না ভালভাবে পড়ো,মাথায় কাপড় দাও।কারন ঘরে দুজন পুরুষ আছে বোঝা উচিত। ‘
“আর শোন তোমার ভাই যখনই আসুক দৌড়ে কেন যাও? শরবতও গুলিয়ে খাওয়াচ্ছো কারনটা কি?’
“না মানে ভাই তো অনেক কাজ করে আসে ক্লান্ত শরীরে শরবত দিলে বল পাইবে।নানু আমাকে বলে দিয়েছেন ভাইদের দিকে খেয়াল রাখতে।’
মিতুর গা জ্বালা করে এমন আদিখ্যেতা দেখে।
আজকাল বেশ সাজগোজও করে।চোখে কাজল,দুল,হালকা লিপষ্টিক ভাইরা ঘরে আসার আগেই যেন নিজেকে ফিটফাট রাখে।
“তাই বলে বুকে ওড়না রাখবি না কেন বদ কোথাকার?’
মনে মনে গালাগাল দেয় মিতু।
রানু এসেছে ছয় সাতদিন, চাচাজান,ফুপু রাতে খেয়েই চলে গিয়েছিল।
আর তাতেই যা শুরু করেছে মেয়েটা।নানুর হাত পা টিপে গাল গল্পে হেসেই খুন না জানি কি হয়ে গেছে।
আর বুড়ীও বেশ মজে গেছে।মিতুর সাথে আগের মতোন কথা বলেন না।
দুজনে যে কি এত প্রেমের আলাপ কে জানে?মিতু ও ঘরে ঢুকলেই চুপ দুজন।যেন মুখে কুলুপ এটে দেয় তাকে দেখামাত্রই।ব্যক্তিগত বিশেষ আলাপ কিছুতেই ফাঁস হওয়া যাবে না,মিতুর কাছে তো নয়ই….এরকমই তাদের একত্রে আচরন!
ভাইরা এক একজন উঠলে রানুই ব্যস্ত হয়ে যায় তাদের নাস্তা দিতে।
এর ভিতর একদিন নিহারী বানালো সে।নীবিড় তো হাতের আঙুল চেটেপুটে শেষ।
এত চালাক মেয়েটা নিজের পয়সা খরচ করে ড্রাইভারকে দিয়ে নান রুটিও আনিয়েছে।
মিতু তো অবাক।
বুয়াও শুরু করে দেয়,
“কইসিলাম না দেকসেন মাইয়া কেমন সেয়ানা?’
বাবাইকে আদর করতে চায়।কিন্তু বাবাই খুব একটা পছন্দ করছেনা রানুকে।
হঠাৎ রান্না করছে মিতু, রানু অবাক করে দিয়ে জানতে চায় একটা কথা কিন্তু ভাষাটা ভীষন অশ্লীল লাগে মিতুর কাছে।
“ভাবী, কিসু মনে না করলে একটা কথা কই?’
“কি কথা?’
“বাবু ভাইজান আপনেরে অনেক জ্বালায় তাই না ভাবীজান?’
“জ্বালায় বলতে?কি জ্বালায়?’
“মানে আপনেরে অনেক কামড়াকামড়ি করে,শরীলে তো জাগায় জাগায় দাগ আপনের।আমাগো বাড়ীতে আমার আরেকখান ভাবী আসে, তারে তার জামাই এই বন্ধন ভাইয়ের মতোই কামড়া কামড়ি করে,কিচ্ছু বাদ রাখে না।রাইতে যে বৌটা কি চিল্লায়!আমরা সব শুনতে পারি।’
মিতুর তো সারা গায়ে পশম খাঁড়া হয়ে যায় শুনে।
ফের বলে রানু,
“ঐ ব্যাডাও বুইড়া,হালা বুইড়া ব্যাডা এমন নরম কঁচি বউ পায়া মুরগীর ঠ্যাং এর মতোন চিঁবাইতে থাকে।’
“বলে কি এই মেয়ে?ওকি মানসিক বিকারগ্রস্থ? ‘
“কি আবোলতাবোল বকছো রানু?’
রানু চুপ করে শোনে এবার।কারন মিতু রেগে গেছে তার কথায়।
“ভদ্রভাবে কথা বলো রানু,সে তোমার বড় ভাই।আর কামড়াকামড়ি, বুইড়া এসব আবার কোন ধরনের ভাষা?তোমার ভাই যা করে করে,তুমি কি করো?যখন তখন ভাইদের সামনে বুকে ওড়না ছাড়া যাও…..?’
প্রচন্ড জোরে ঝাড়ি দেয় রানুকে মিতু।
রানুর মাঝে কোন ভাবান্তর নেই,মাথা নীচু করে থাকে।নানু আসে রান্নাঘরে।
“কি হইল ওরে এত বকতাসিস কেন মিতু?’
“দরদে উথলে যাচ্ছে বুড়ীর……’
মিতুর মাথাটা আরো গরম হয়ে যায় শুনে।
মিতু কোন জবাব না দিয়ে গজগজ করে সরে যায়।ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে খেতে থাকে।
নীবিড় আসে ড্রাইনিং রুমে।একবার ভাবীর দিকে একবার রানুর দিকে তাকায়।
নীবিড়কে দেখে মহারানী তো বেজায় খুশি।
“ভাই শরবত করে দেই?’
দেখে মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয়নি?মিতু চুপচাপ তামাশা দেখে।
“আজকাল নীবিড়কে স্পেশাল নাস্তা দেয়ার তো মানুষও এসে গেছে?’
আজকাল জিজ্ঞেসও করে না,
“ভাবী কি হয়েছে?কিছু লাগবে কিনা?’
বিড়বিড় করে মিতু
“নানু যদি সত্যি রানুকে নীবিড়ের বউ বানাতে চায় বানিয়ে ফেলুক না? ওরা বোধহয় বাইরে চলে যাবে?কিন্তু মেয়েটার তো আচরনগত সমস্যা আছে?শত হলেও নীবিড় তার দেবর,ছোট ভাইয়ের মত।ভালোমতো না জেনে এমন মেয়েকে বিয়ে করানোই বা কেন ঠিক হবে?’
“যদিও ছোটমামী পারুলের জন্যে নীবিড়কে পছন্দ করে বসে আছেন।কতবার ফোন করে নীবিড়ের বিষয়ে আগ্রহ দেখায় মামী।ছোট মামা যদি প্রস্তাব নিয়ে আসে তখন?আচ্ছা নীবিড় কি রানুকে পছন্দ করছে?’
নীবিড় আজকাল রানুর দিকেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।আবার পারুলের কথাও আগে কত জানতে চাইতো, যদিও মজা করতো।কথার ছলে ওর সেলনাম্বার টাও চেয়েছে মিতুর কাছ থেকে।
কিন্তু মিতু তখন সেটা আমলে নেয়নি।কারন পারুল মিতুকে বলে দিয়েছিল সে এখন বিয়ে নিয়ে মোটেই ভাবছে না।তার ফ্যাশনডিজাইনিং,এমবিশন নিয়েই যত ভাবনা তার জন্য আরো কিছু সময় চাই ওর।
এদিকে নানু ও নীবিড়ের হাবভাবও সুবিধের ঠেকছে না মিতুর।ভাবনায় পড়ে যায় সে…..(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here