#নষ্ট_গলি
পর্ব-৩৯
লেখা-মিম
রাত ১২:১০।আজ মায়া,সোহানের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী।পাশাপাশি চেয়ারে এপার্টমেন্টের ছাদে বসে আছে দুজন।রেলিং এর উপরে রাখা কফির মগ থেকে ধোঁয়া উঠছে।
-দুই বছর কেটে গেলো!তাই না?
-হুম!দুই বছর।
-ভালো সময় হয়তো খুব দ্রুত চলে যায়।টেরই পাইনি কোথা থেকে দুবছর চলে গেলো।প্রতিটা সময়,প্রতিটা মুহূর্ত আমার কাছে স্বর্গীয় ছিলো।
নতুনভাবে নিজেকে আবিষ্কার করেছি।কখনো ভাবিনি জীবনটা এভাবে ঘুরে দাঁড়াবে।যখনি আয়নার সামনে দাঁড়াই তখনই মনে হয় নতুন কেউ।এই আমি তো সেই আমি না।আয়নার সামনে এখন যে দাঁড়িয়ে আছে সে সোহানের মায়া।তার নিজের মনমতো সাজানো কেউ।
-চেয়ার নিয়ে আরো খানিকটা মায়ার গা ঘেষে বসল সোহান।১হাতে শক্ত করে মায়ার কাঁধ জড়িয়ে ধরলো,অন্য হাত হাত বাড়িয়ে কফির মগটা হাতে নিলো সোহান।কফির মগে চুমুক দিয়ে মায়ার কানে নাক ঘষে দিয়ে বলল,
ভালোবাসি…..
আজ কলেজ যায়নি মায়া।সারা রাত ছদে কাটিয়ে এসে ভোরের দিকে সোহানের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়েছে।আজ গোটা দিনটা সোহানের জন্য বরাদ্দ রাখবে।
বেলা সাড়ে ৯টা বাজে,বালিশের কাছে রাখা মায়ার ফোনটা বাজছে।ঘুমের ঘোর কাটতে কাটতে রিসিভ করার আগেই কলটা কেটে গেলো।দ্বিতীয়বারের মত ফোনটা আবার বাজছে।হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে “হ্যালো”বলল মায়া।
ওপাশ থেকে কারো ফুঁপিয়ে কাঁদার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
-তুমি কি জানো আনিকার কি হয়েছে?
-চমকে গিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকালো মায়া,কে ফোন করেছে?স্ক্রিনে আনিকার মায়ের নম্বরটা ভেসে উঠেছে।তড়িঘড়ি করে আবার কানে ফোনটা লাগালো ।
-জ্বী আন্টি,কি বলছিলেন?
-গতকাল রাত থেকে আনিকা রুমের দরজা লক করে বসে আছে।ভোরের দিকে ওর রুম থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ পাচ্ছিলাম।ও চিৎকার করে কাঁদছিলো আর কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলো।ও খুব করে কাওকে রিকুয়েস্ট করছিলো”আমার সাথে এরকম করো না,আমাকে ছেড়ে যেও না।আমাদের সম্পর্ক কতটা গভীর সেটা বোঝার চেষ্টা করো”।
-তুমি কি কিছু জানো ওর কি হয়েছে?
মায়া শোয়া থেকে উঠে বসল ।বললো,
-আন্টি আপনি আগে কান্না বন্ধ করুন।আমি ওকে ফোন দিয়ে দেখি,ওর কি হয়েছে।
-ও কোন ধরনের রেসপন্স করছেনা।সকালবেলা চেঁচামেচির পর থেকে বিগত ১ঘন্টা ধরে ওর কোন সাড়াশব্দ নেই।অনেক ডেকেছি,আমার বড় মেয়েকে দিয়ে ফোন করিয়েছি কোন লাভ হয়নি।ওর আমার বড় মেয়ের ফোন রিসিভ করেনি।এমনকি ভেতর থেকে ১টা আওয়াজ ও পাচ্ছিনা।
-আচ্ছা ঠিক আছে আন্টি।আমি আপনাদের বাসায় আসছি।
-তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো মায়া।সোহানকে কিছু না জানিয়ে আনিকার বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলো।
মাঝপথে যাওয়ার পর ফের আনিকার মায়ের ফোন এলো।ফোনটা কানে লাগাতেই ওপাশ থেকে হাউমাউ করে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
আমার মেয়েটা শেষ।
-আঁৎকে উঠল মায়া!কি বলেন আন্টি?
ওপাশ থেকে আর কোন সাড়া পাওয়া গেলো না,শুধুমাত্র কান্নার আওয়াজ ছাড়া।প্রচন্ড চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে ওপাশ থেকে।
১০-১৫ সেকেন্ড পর কলটা কেটে গেলো।
কলটা কেটে যাওয়ার পর আরো ৫বার ট্রাই করল মায়া কিন্তু ওপাশ থেকে ফোনটা কেউ রিসিভ করেনি।
আনিকার বাসায় গিয়ে দেখল দরজায় তালা লাগানো,বাসায় কেউ নেই।পাশের ফ্ল্যাটে নক করলো আনিকাদের খবর নেওয়ার জন্য।দরজা খুলে একজন মাঝবয়সী মহিলা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকালো।
-জ্বী!কাকে চাচ্ছেন?
-পাশের ফ্ল্যাটের আনিকা…..ওরা কোথায়?কিছু জানেন?
-হ্যাঁ!এইতো ৭-৮ মিনিট আগে দেখলাম ধরাধরি করে ওর বাবা-ভাই আর আমাদের বাসার দারোয়ান ওকে হসপিটাল নিয়ে যাচ্ছে।ওর নাক থেকে ব্লিডিং হচ্ছিলো।বোধ হয় সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছে।
-আন্টি?আন্টি কোথায়?
-উনিও ওদের সাথেই গিয়েছে।
-কোন হসপিটাল?জানেন কিছু?
-নাহ,এই ব্যাপারে তো আমি কিছু জানিনা।
ভালো হয় যদি আপনি ওদেরকে ফোন করে জানেন।
-আমি তো ওর নম্বরে অনেকবার ট্রাই করেছি কিন্তু উনি ফোনটা পিক করছেন না।আপনি কি আনিকার ভাই অথবা বাবা কারো নাম্বারটা আমাকে দিতে পারবেন?
-আচ্ছা!তুমি দাঁড়াও আমার ফোনটা নিয়ে আসছি।
খুব দ্রুত গতিতে ঢাকা মেডিকেলের দিকে ছুটছে মায়ার গাড়ি।নি:শব্দে চোখের পানি ফেলছে ও।
১৫মিনিট আগে মায়ার ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পেরেছে আনিকাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হচ্ছে।
(চলবে)
/