নষ্ট গলি পর্ব ৩৮

#নষ্ট_গলি
পর্ব-৩৮
লেখা-মিম

সমুদ্রের মাতাল হাওয়ায় জানালার পর্দাগুলো উড়ছে। জানালার পাশেই দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মায়া৷ পড়নে কালো রঙের নেটের শাড়ি৷ এখানে আসার আগে মায়ার লাগেজে শাড়িটা রেখে দিয়েছিলো সোহান। শাড়ির উপরে ছিলো ছোট্ট একটা চিরকুট।
” আজ রাতে পরীটাকে কালো শাড়িতে দেখতে চাই।”

সমুদ্র পাড় থেকে ফিরেই কালো শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে হাল্কা সেজে নিলো মায়া। রুমের দরজার বাইরে সোহান দাঁড়িয়ে ছিলো। সে অনেকটা সময় দরজার বাইরে অপেক্ষা করেছে কালো শাড়ীতে একটা পরীকে দেখার জন্য।

মানুষটা ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে ওর দিকে। চোখে মাদকতা চিকচিক করছে মানুষটার। হৃদস্পন্দন বাড়ছে মায়ার।

– দেখো ভাই, ভিডিও ক্লিপ চেয়েছিলে দিয়ে দিয়েছি। সব দিয়েছি। তোমার লোকরা তো আমার বাসা পুরাটা খুঁজে দেখেছেই। আর কোথাও নেই। বিশ্বাস করো। আমাকে যেতে দাও প্লিজ।
– হ দিমু তো। এখন তোরে সোজা উপরে পাঠামু।
– ভাই, আমি আর জীবনেও মায়ার পিছু নিবো না। আমাকে আমার মত যেতে দাও।
– তোরে দিয়া ভরসা নাই৷ ঐ মানিক শালার মুখটা বাঁধ। কোলে নে। ছাদের উপরে যামু।
– এই না,,,,, না,,,,, ভাই টাকা লাগলে বলো আমি দেই। আমার যা আছে সব দিয়ে দিবো আমাকে যেতে দাও।

বিশালদেহী মানিক হাসতে হাসতে ইমনের মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে তাকে বড় একটা ড্রামের ভিতর ঢুকিয়ে নিলো। টুনু আগে ভাগে যেয়ে সিঁড়ির লাইট অফ করে দিয়েছে। টুনু আর মানিক ড্রামটা নিয়ে লিফটে উঠে গেলো। বাকিরা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসছে। টুনু আর মানিক ধরাধরি করে ড্রামটা ছাদে নিয়ে এসেছে। ইমনকে ড্রামের ভিতর থেকে টেনে বের করছে ওরা।

– ঐ বিল্লাল তুই এইটারে আয় তুই আমি মিলা ধইরা নিচে ফালাই। ইমনের মুখটা এখনও খোলা হয়নি৷ দুচোখ বেয়ে অঝোরে পানি ঝড়ছে তার। চোখে বেঁচে থাকার আকুল আবেদন দেখা যাচ্ছে । খুব করে কিছু বলতে চাচ্ছে সে৷ কিন্তু সামনে থাকা লোকগুলো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওর দু পায়ে দুজন ধরে উল্টো করে ঝুলিয়ে দিলো ছাদের রেলিংয়ের বাইরে। নিঃশ্বাস নিতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। চোখ মেলে রাখতে পারছে না৷ বুকে পিঠে চাপ লেগে গেছে বাজেভাবে। ইমন বুঝে গেছে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে গেছে সে। এইতো আর কিছু মূহুর্ত। এরপর সে আর এই দুনিয়ার বাসিন্দা হিসেবে বিবেচিত হবে না। জীবনের সমস্ত পাপগুলো যেনো একের পর এক সারি বেঁধে চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

– ভাই, তারে একটা সুযোগ দেন।

রেলিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে কথাটা বললো টুনু৷ এ মূহূর্ত্বে টুনুকে ফেরেশতা মনে হচ্ছে ইমনের। মনে হচ্ছে একদম কলিজার ভিতর টুনুকে সযত্নে ঢুকিয়ে রাখতে।
– এটা হইলো ভাইরাস। বাঁচায়া রাখলে অসুবিধা আছে।
– তবু ভাই। শুধরানোর একটা সুযোগ অন্তত দ্যান।
– যদি আবার কোনো কাহিনী করে?
– তখন না হয় মাইরা ফালায়েন। তারে আমরা চোখে চোখে রাখমু৷ উল্টাপাল্টা কিছু করলে ঐদিনই শ্যাষ কইরা দিমু।
– দেখ আমি রিস্ক নিতে চাই না।
– ভাই ক্যান জানি মায়া লাগতাসে৷ ছাইড়া দেন ভাই।
– তুই এমন করতাসোস ক্যান একটু কইবি? এত পিড়িত জাগতাছে ক্যান?
– জানি না ভাই।
– কেমনডা লাগে? কি রে বিল্লাল কি করমু?
– সোহান স্যাররে কি কইবেন?
– সেটাই তো কথা।
– ভাই, সোহান স্যাররে বলমু তারে মাইরা ফালাইসি।
– বেকুবের মত কথা কইস না তো৷ এই বেটারে রাস্তাঘাটে দেখলে আমাগোরে শ্যাষ কইরা ফালাইবো।
– সে অন্য কোথাও চইলা গেলেই তো হইবো।

ইমনকে আবার টেনে উপরে তুললো স্বপন আর বিল্লাল। ফ্লোরে দু পা ছড়িয়ে বসে আছে ইমন। মুখ থেকে স্কচটেপ খুলে দেয়া হয়েছে। মাথা ভীষনভাবে ঘুরাচ্ছে তার। নিঃশ্বাস নিচ্ছে জোরে জোরে। খানিক বাদেই বমি করতে লাগলো ইমন।

– শালায় কি শুরু করছে। একটু আগে মুতলো। এখন আবার বমি করতাসে। খবীশ একটা।

ভ্রুঁ কুঁচকে ইমনের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো বাশার।

– ঐ, তোর বমি করা হইছে?

উপরে নিচে মাথা নাড়লো ইমন।
– দ্যাখ সোহান স্যার কইছে তোরে মাইরা ফালাইতে। টুনুর মায়া লাগতাছে দেইখা তোরে ছাড়তাসি। কথা হইলো তুই এই দেশে থাকতে পারবি না৷ তোর দেশ ছাইড়া যাইতে হইবো। সোহান সয়ার যদি দেখে তুই বাইচা আছোস তাইলে তোরে তো মারবোই সাথে আমাগোরেও শেষ করবো।
– আমি চলে যাবো ভাই। আমি থাকবো না এখানে। মায়ার কাছ থেকে বহুদূর চলে যাবো।
– ঠিক কইতাসোস?
– সত্যি ভাই।

হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো ইমন। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না ওকে ছেড়ে দেয়া হবে।

– ঐ মানিক যা গাড়ি নিয়া যা। বাসায় দিয়া আয় এইটারে।
ঐ উঠ। যা, ওর লগে যা। আর যা কইসি তা যেনো মনে থাকে।

ইমন উঠে টুনুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানাবে ভেবে পাচ্ছে না। তাই চুপ করে ওকে জাপটে ধরে রেখেছে।

– হইছে, হইছে ছাড়েন আমারে। ভালা হইয়া যাইয়েন। মাইয়্যা মানুষের পিছনে ঘুরা ভালা না। মন্দ কাম। এইসব কাম আর কইরেন না।

ইমন কিছু বললো না। টুনুর দিকে একবার কৃতজ্ঞতা ভরা নজরে তাকিয়ে মানিকের পিছু পিছু চলে গেলো। মানিকের সাথে বাশারকেও পাঠিয়েছে স্বপন।

ইমন যাওয়া মাত্রই সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। টুনু বললো,

– সোহান স্যার এটারে বাঁচায়া রাখতে কইলো ক্যান। মাইরা ফেললেই ভালো হইতো।
– নাহ্। সোহান ভাই এসব ক্যাচালে জড়াইবো না। খুন করলে ক্যাচাল সামাল দিতে কষ্ট হয়া যাইতো।
– সোহান স্যাররে ফোন কইরা বলেন খেল খতম।
– হ দেই।

ভোর হয়ে আসছে৷ হেলান দিয়ে বসে আছে সোহান। ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে মায়া। কল এসেছে স্বপনের। এতক্ষণ যাবৎ এই কলটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটলো।

– কাজ হয়েছে?
– হ্যাঁ ভাই। খুব ভয় পেয়েছে। ক্লিপগুলো ওর ফোনের মেমরি আর দুইটা পেনড্রাইভে ছিলো। সব পুঁড়ে ফেলেছি।
– পুরো বাসা ভালোভাবে চেক করেছো তো?
– হ্যাঁ চেক করেছে। ওর কাছে আর কোনো কপি নেই।
– দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার শর্ত দিয়েছো?
– হ্যাঁ দিয়েছি। রাজি হয়েছে। দেশ ছেড়ে দিবে এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। আর যদি না যায় তখন অন্য কোনো স্টেপ নিবো।
– আচ্ছা,,, স্বপন থ্যাংকস। থ্যাংকস এ্য লট।
– ভাই যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে ডাকবেন। যতটা সম্ভব হেল্প করার চেষ্টা করবো।
– ঠিকাছে। রাখি। ঘুমাবো এখন।
– আচ্ছা।

সোহানের এ মূহূর্ত্বে মনে হচ্ছে মাথা থেকে এক মন ওজনের পাথর সরেছে৷ প্রচন্ড রিল্যাক্স লাগছে। এবার একটু শান্তিমতো ঘুম দেয়া যাবে। মায়ার মাথাটা খুব সাবধানে বালিশে রেখে ওর পাশেই শুয়ে পড়লো সোহান। মায়াকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরলো সোহান। সব ধরনের অতীত থেকে আগলে রাখতে চায় মেয়েটাকে। এতটুকু বয়সে অনেক সহ্য করেছে মেয়েটা। আর না। এবার ওকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখাতে হবে।

(/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here