#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
এনাক্ষী অবাক চোখে মেয়েটিকে দেখতে লাগলো। পিঠে ছড়ানো চুল, হাঁটুর একটু নিচ পর্যন্ত পরিহিত জামা, মুখে বিন্দু বিন্দু পানি লেগে আছে। এনাক্ষী বুঝতে পারছেনা কায়ানের বাসায় মেয়েটি কে। কায়ান তো বলেছিলো সে এখানে একা থাকে তাহলে এই মেয়েটি কি করছে।
” কি হলো তোমার? তুমি কি অ’সুস্থ বোধ করছো?”
” কে এসেছে সুজি?” ভেতরে থেকে কায়ান বলে উঠলো।
” আমি তো চিনতে পারছিনা কায়ান। সেও কিছু বলছেনা। তুমি এসে একবার দেখে যাও।”
কিছুসময় পর কায়ান ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। এনাক্ষী তাকিয়ে দেখলো এলোমেলো চুলে কায়ান দাঁড়িয়ে আছে।
” আরে এনাক্ষী তুমি এসেছো। ভেতরে এসো, তোমার সাথে ভালো মতো কথা হয়না কতদিন।”
” না তোমরা থাকো। তোমাদের বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। আমি পরে কোন সময় আসবো।”
” আরে কিছু না হবে এসো। লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।” কায়ান এনাক্ষীর হাত ধরে তাকে ভেতরে নিয়ে এলো। সুজি নামক মেয়েটি ভ্রু-কুচকে তাদের দিকে তাকিয়ে দরজা বন্ধ করে দ্রুত ভেতরে চলে এলো।
কায়ান এনাক্ষীকে একটা সোফায় বসিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। সুজি এসে এনাক্ষীর বিপরীত দিকে সোফাতে ধপ করে বসে পড়লো। সে সুক্ষ্ম দৃষ্টিকে এনাক্ষীকে পরখ করে চলেছে যা এনাক্ষীর একটু অস্বস্তি লাগছে। এরই মধ্যে কায়ান একটা ট্রে এনে টেবিলটাতে রাখলো। কায়ান বসবে ভেবে এনাক্ষী খানিকটা সরে এলেও সে বসলো সুজির পাশে।
” এনাক্ষী ডোনাটটা খেয়ে দেখো। সুজি নিজে বানিয়ে এনেছে, তোমার ভালো লাগবে।”
” তোমরা খাবে না?”
” না তুমি খাও এনা। আমরা খেয়েছি।”
এনাক্ষী ইতস্তত হয়ে ডোনাটে কা’মড় বসালো এবং দৃষ্টি রাখলো সামনের দিকে। কায়ানের পাশে মেয়েটিকে নিয়ে তার মাথায় নানা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
” ও এনাক্ষী তোমাকে তো বলাই হয়নি এটা হচ্ছে কিম সুজি। আমার কলিগ সেই সাথে আমরা ভালো বন্ধুও। সুজি তোমাকে বাংলাদেশীর কথা বলেছিলাম না? এই হচ্ছে সেই বাংলাদেশী-ইতালিয়ান ফরেনার এনাক্ষী বসু।”
” মেয়েটাতো অনেক পিচ্চি দেখতে। আমি তো প্রথমে বুঝতেই পারিনি এই সেই মেয়ে।”
” হুম একদম বাচ্চা দেখতে। কাজও তার বাচ্চদের মতো। কিছু বললেই গাল গুলো ডামপ্লিং এর মতো ফুলিয়ে রাখে। কিন্তু যাই বলো ভালোই লাগে।”
” হুম তবে কায়ান তোমার এই বাচ্চা বন্ধু কিন্তু আমার সামনে কিছুই না। আমার সাথে দাঁড়ালে তাকে তো দেখাই যাবেনা।”
হেসে এনাক্ষীর দিকে তাকালো সুজি। খাবার চিবোনো বন্ধ করে দিলো এনাক্ষী।
” আরে এনাক্ষীর মন খা’রা’প করলে নাকি? আমি তো মজা করেছিলাম। কষ্ট পেয়ে থাকলেও কিছু করার নেই। সব কথা এতো সিরিয়াসলি নিও না।”
” হুম।”
এনাক্ষী কিছু বললোনা। চুপচাপ খাওয়া শেষ করে উঠে পড়লো। যতটা সময় এনাক্ষী ছিলো তারা দু’জনেই কথা বলে গিয়েছে। এনাক্ষীর নিজেকে কেমন যেন তৃতীয় ব্যক্তি মনে হচ্ছিলো, অস্বস্তি লাগছিলো তার। কায়ান বলেছিলো আরেকটু বসতে তবে এনাক্ষী পড়ার বাহানা দিয়ে চলে এসেছে। এর মাঝে সে ভু’লেই গিয়েছে কেন সে কায়ানের বাসায় গিয়েছিলো।
.
.
ইউনিভার্সিটি থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে অল্প কিছু খেয়েই এনাক্ষী সাইকেল নিয়ে ছুটলো সিভি স্টোরের দিকে যেখানে সে কাজ নিয়েছে। এই পার্ট টাইম জব পেতে এনাক্ষীর ভালোই কাটতে হয়েছে। এই শহরে বেশির ভাগ স্টুডেন্টই পার্ট টাইম করে নিজের খরচ চালিয়ে থাকে।
একটা কাস্টমারকে তার জিনিস বুঝিয়ে দিয়ে এনাক্ষী মাত্রই পেছনে ফিরেছিলো তবে তার আগেই আরেকজন চলে এলো।
” এক্সকিউজ মি মিস।”
” জ্বি…. জ্বি স্যার বলুন আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”
এনাক্ষী সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কাস্টমারকে চিনতে পারলেও না চেনার ভান করলো।
” এনা তুমি আমাকে চিনতে পারোনি নাকি?” কপাল কুচকে বললো ফিলিক্স।
” স্যার আপনি কি কোন প্রোডাক্ট খুঁজে পাচ্ছেন না নাকি বিল পে করবেন?” স্বাভাবিকভাবে বললো এনাক্ষী। ফিলিক্স বুঝতে পারলো এনাক্ষী থাকে চিনেও না চেনার ভান করছে। মনে মনে হাসলো সে।
” জ্বি আমি খুঁজে পাচ্ছিনা। আপনি কি তা খুঁজে দিতে পারবেন?”
” জ্বি স্যার বলুন আপনি কোন জিনিসটা খুঁজছেন।”
” লাভ।”
” মানে!”
” মানে ভালোবাসা। পারবেন খুঁজে দিতে?” খানিকটা সামনের দিকে এগিয়ে এসে বললো ফিলিক্স। এনাক্ষী থতমত খেয়ে গেলেও পরমুহূর্তেই নিজে সামলে নিলো।
” সরি স্যার আমাদের শপে এরকম কোন জিনিস নেই।”
” শপে নেই তো কি হয়েছে? আপনার কাছে তো আছে।”
এনাক্ষী কিছু বলতেও পারছে না আর না পারছে সহ্য করতে। কাস্টমারের সাথে বা’জে ব্যবহার করলে তাকে মালিক বের করে দিতে দু’মিনিটও সময় নেবেনা। এনাক্ষী একটা লাভ সেইফের ললিপপ টেবিলে উপরে রাখলো।
” এই নিন স্যার আপনার লাভ।”
ফিলিক্স চুপচাপ ললিপপটা নিয়ে পে করে দিলো। প্যাকেটটা খুলে সেটা সেখানে রেখেই ললিপপ মুখে নিয়ে স্টোর থেকে বেরিয়ে পড়লো। এনাক্ষী প্যাকেটা নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলো দিলো। হয়তো প্যাকেটের জায়গায় সে ফিলিক্সকেই কল্পনা করেছে।
কাজ শেষ করে এনাক্ষী সাইকেলে চেপে বাসার উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো। কিছুদূর গিয়ে সে সাইকেল থামিয়ে দিলো। একজন বৃদ্ধ লোক গায়ে চাদর চাপিয়ে রাস্তায় বসে আছে। এনাক্ষী সাইকেলটা একসাইডে রেখে ওনার কাছে গেলো।
” আপনি কি অসু’স্থবোধ করছেন?”
বৃদ্ধটি মাথা উঁচু করে এনাক্ষীর দিকে তাকালো। লোকটিকে এনাক্ষী চিনতে পেরেছে। কিছুদিন আগেই তো অসা’বধানতার কারণে ওনার সাথে ধা’ক্কা লেগেছিলো।
” আরে আপনি। আপনি কি অসু’স্থবোধ করছেন? তাহলে চলুন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।”
” না ডাক্তার লাগবেনা। তুমি আমাকে একটা সাহায্য করবে?”
” হ্যাঁ বলুন আমি কি করতে পারি।”
বৃদ্ধ চাদরের ভিতর থেকে দু’টো আঙ্গুল বের করে কিছু ওন এনাক্ষীর দিকে বাড়িয়ে দিলো।
” আমার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসতে পারবে? ওতো দূরে গিয়ে খাবার আনার শক্তি যে এখন আমার নেই।”
এনাক্ষী কিছু একটা ভাবলো। তারপর নিজের জন্য কেনা শুকনো খাবারগুলো থেকে একটা পাউরুটি, বিস্কুট এবং কলার প্যাকেটটা ওনাকে দিয়ে দিলো।
” এগুলো আপনি রাখুন।”
” ধন্যবাদ তোমাকে। তুমি না থাকলে আমার আজকে উপোস করে থাকতে হতো। এই নাও খাবারের দাম। কম হলে বলো।”
” না না আমার ওন লাগবেনা। আপনি এগুলো নিজের কাছে রাখুন। চলুন আমি আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।”
” না তার দরকার নেই। কিছুটা দূরেই আমার বাড়ি, আমি চলে যেতে পারবো। তুমি চলে যাও, বাইরে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবেনা। শহরের অবস্থা ভালোনা, বি’পদ হতে পারে।”
বৃদ্ধ লোকটি বসা থেকে উঠে আস্তে আস্তে চলে যেতে লাগলো। যেহেতু এনাক্ষীর বাসা বিপরীত দিকে তাকাই সেও আর জোড় করলোনা। দ্রুত সাইকেল চালিয়ে চলে গেলো। বৃদ্ধ লোকটা একবার ঘুরে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকালো।
সাইকেল নিচে ঠিক মতো বেঁধে এনাক্ষী বিল্ডিং এর ভেতরে যাবে তখনই কায়ান তার সামনে এসে দাঁড়ালো।
” এতোটা সময় কোথায় ছিলে এনাক্ষী? ইউনিভার্সিটি তো আরো অনেক আগেই শেষ হয়ে যায়।”
” স্টোরে গিয়েছিলাম।”
” এতোটা সময়! তা কি এমন কিনতে গিয়েছিলে যে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পার হয়ে গেলো।”
এনাক্ষী গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
” কিছু কিনতে যাইনি। কাজ করতে গিয়েছিলাম। সিভি স্টোরে পার্ট টাইম জব নিয়েছি।”
” তুমি কবে থেকে পার্ট টাইম জব করছো? আমাকে তো বলোনি।”
” বলতে গিয়েছিলাম কিন্তু তুমি এতোটা ব্যস্ত ছিলে তাই আর বলতে পারিনি। আচ্ছা আমি এবার যাই, অনেক ক্লান্ত লাগছে।”
কায়ানকে পাশ কাটিয়ে উপরে চলে গেলো এনাক্ষী। তার এধরণের ব্যবহারে কায়ান কিছুটা অবাক হলো।
চলবে……#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
দরজা লক করে পেছনে ঘুরতেই এনাক্ষী চমকে গেলো৷ চোখবন্ধ করে বড় একটা নিশ্বাস নিলো সে।
” তুমি কি ভুত নাকি? এভাবে কেউ পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে? তোমার জন্য না আমি কোনদিন হার্ট অ্যা’টাক করে বসি ফিলিক্স।” ধম’কের স্বরে বললো এনাক্ষী। ফিলিক্স মুচকে হেসে এনাক্ষী মুখে ফু দিয়ে বললো, ” তো করোনা, আমি তো বার করিনি। আমি তো চাই তুমি যতবারই আমাকে দেখো তোমার হার্টটা যে বিট করা ব’ন্ধ করে দেয়। আমার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তোমার হৃদয়স্পন্দন যেন ব’ন্ধ হয়ে যায়। আর সেই হৃদয়স্পন্দন আমিই আমার ফিরিয়ে আনবো।”
এনাক্ষী পিটপিট করে ফিলিক্সের দিকে তাকালো। চশমা ভেদ করে তার বাদামী চোখজোড়ার দিকে দৃষ্টিস্থাপন করলো। তার চোখে এনাক্ষী কিছু একটা দেখতে পারছে, যেন তার চোখ কিছু বলছে তবে তা স্বাভাবিক নয়। এনাক্ষী দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।
” তুমি এখানে কেন এসেছো?”
ফিলিক্স দু’কদম পিছিয়ে গিয়েছে বুকের কাছে হাত দু’টো আড়াআড়িভাবে রেখে তীক্ষদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
” কাল স্টোরে তুমি আমাকে চিনতে পেরেও না চেনার ভান করেছিলে কেন?”
” কারণ ওটা কাজের জায়গায়। পরিচিত হলেও অপরিচিতের মতো ব্যবহার করাই ভালো।”
” কেন? অপরিচিতদের মতো থাকতে হবে কেন? তোমারে বের করে দেবে নাকি?”
” কাজের বাইরে বেশি কথা বলতে বারণ করেছেন মালিক। স্টোরে সবসময় সিসি টিভিতে অন থাকে। আমার কাছে কাজটা আগে, তাই ওরকম ব্যবহার করেছিলাম। আমার ব্যবহারে ক’ষ্ট পেয়ে থাকলে দুঃখিত। এবার আমি আসি, ইউনিভার্সিটিতে যেতে দেরি হয়ে যাবে।”
এনাক্ষী দ্রুত পা চালিয়ে নেমে গেলো। ফিলিক্স কিছুটা সময় সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।
.
.
দেরি হয়ে যাওয়ার কারণে হিতোমি দিক বেদিক না দেখে দৌড়ে ক্লাসের দিকে যেতে লাগলো। ক্লাসে দেরি হলে প্রফেসারের ঝা’ড়ি খেতে হবে। না দেখে দৌড়ানোর ফলে আচমকাই একজনের সাথে ধা’ক্কা লেগে যায় তার। হাতে থাকা বইগুলো হাত থেকে ফসকে নিচে পড়ে গেলো৷ হিতোমি দ্রুত বইগুলো তুলে সামনের ব্যক্তিটিকে সরি বলবে কিন্তু কথা তার মুখেই থেকে গেলো। ফিলিক্স বিরক্তি নিয়ে হিতোমির দিকে তাকালো।
” এভাবে ঘোড়ার মতো দৌড়াচ্ছো কেন? সামনে থেকে যে কেউ আসছে সেটা দেখবেনা?”
” মিয়ানে।” (সরি)
” ঠিক আছে তবে এভাবে দিক বেদিক না দেখে দৌড়াদৌড়ি করবেনা। যখনই দেখি দৌড়াতেই থাকো।”
” তুমি আমাকে দেখো?” খুশি হয়ে বললো হিতোমি।
” তোমাকে আমি কেন দেখবো? কে হও তুমি? তোমাকে তো আমি ঠিক মতো চিনিও না। সবসময় আমাদের ফ্লোরে ঘোরাঘুরি করো তাই না চাইতেও চোখ চলে যাই। ক্লাসে যাও এখন। তোমার জন্য আমারো ক্লাসে দেরি হয়ে গেলো।”
হিতোমি মন খা’রা’প করে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে তখনই ঘটলো আরেকটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। পায়ে পা লেগে ধপ করে নিচে পড়ে গেলো হিতোমি। ব্য’থায় চোখ মুখ খিঁচে ফেললো সে। চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় ব্যথায় তার চোখে পানি জমে গেলো। সে প্রাণপনে চেষ্টা করছে নিজের কান্না আটকানোর। এরইমাঝে ভীড় ঠেলে কেউ হিতোমির সামনে বসলো।
” হিতোমি তুমি ঠিক আছে? বেশি লেগেছে?”
জি ওয়ানের আদুরে মাখা কন্ঠশুনে হিতোমি নিজের কান্না আটকে রাখতে পারলোনা। শব্দ করে কেঁদে উঠলো সে। এতে সবাই ঘাবড়ে গেলো।
” কি হলো হিতোমি? বেশি ব্য’থা করছে?”
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো হিতোমি। আর সময় নষ্ট না করে জি ওয়ান দ্রুত তাকে নিজের কাঁধে ভর করে ইউনিভার্সিটিতে থাকা মেডিকেল রুমে নিয়ে গেলো। আসতে আসতে সবাই নিজেদের ক্লাসের দিকে চলে গেলো। ফিলিক্সও আর সময় অপচয় না করে নিজের ক্লাসে চলে গেলো।
.
.
শীতকালের প্রায় শেষ দিক চলছে। কিছুদিনেই মধ্যেই এই বছরের মতো শীতরাণী বিদায় নেবে।বিল্ডিং এর সবাই শীতের এই শেষ সময়টা উপভোগ করার জন্য ঠিক করলো রাতে বিল্ডিং এর সামনে খোলা জায়গায় বারবিকিউ পার্টি করবে। বর্তমানে তারই তোরজোর চলছে।
বিল্ডিং এর বড়রা সব রান্না এবং পরিবেশনের কাজ করছে। ছোটদের আগুণের কাছে যাওয়া নিষেধ তাই বাচ্চারা একপাশে খেলা করছে। টিনএজরা নিজের মতো গান শুনছে, গল্প করছে। এসবের মধ্যে এনাক্ষী পড়ে গিয়েছে একা। তার বয়সী এখানে আপাতত কেউ নেই। সে রান্নার কাজে সাহায্য করতে চেয়েছিলো তবে বড়রা দেয়নি। সে নাকি সামলাতে পারবেনা।
এনাক্ষী মাথানিচু চুপচাপ দোলানায় দোল খেতে লাগলো। ঘাসের উপর কারো জুতো দেখে এনাক্ষী মাথন তুলে তাকালো। কায়ানকে দেখে এনাক্ষী দোল খাওয়া থামিয়ে দিলো।
” আমি কি বসতে পারি?”
” এটা তো আমার দোলনা নয়। তুমি চাইলেই বসতে পারো, আমার বারণ করার অধিকার নেই।”
কায়ান আস্তে বসে এনাক্ষীর পাশে বসে পড়লো।
” তুমি কি আমার সাথে রা’গ করেছো?”
” না রা’গ কেন করবো? তুমি তো কিছু করোনি।”
” একা একা বসে আছো যে? সবাই কত মজা করছে আর তুমি একা একা বসে আছো। ভুতে ধরে নিয়ে গেলে কি করতে?”
” কি করবো তাহলে? কথা বলার জন্য কাউকেই পাচ্ছিনা। বড়রা রান্নার কাজে সাহায্য করতে দিচ্ছেনা আর ছোটদের মাঝে গেলে তারা অস্বস্তিতে পড়বে।”
” আহারে কত কষ্ট বেচারির। আহারে এনাক্ষী।”
” কায়ান তুমি কি মজা নিচ্ছো?”
” আরে মজা নেবো কেন? আমি তো তোমার কষ্টে কষ্টিত হচ্ছিলো।”
এনাক্ষী হালকা করে কায়ানের বাহুতে থা’প্পর মারলো।
” আ…. আমার হাত। হে ঈশ্বর আমার হাতটা ভে’ঙে গেলো। আমারে কেউ হসপিটালে নিয়ে যাও, এম্বুল্যান্স ডাকো। আমার হাতটা খু’লে পড়ে যাচ্ছে।”
” ঢং আমি এতোটাও জোড়ে মা’রিনি যে হাত খুলে পড়ে যাবে।”
” আরে কেউ হসপিটালে নিয়ে যাও।”
” কায়ান তুমি নাটক বন্ধ করবে? না হলে এবার সত্যি সত্যি জোড়ে মা’রবো।”
” না না, হাত ভে’ঙে গেলে আমাকে রির্পোট কভার করতে দেবেনা৷ তখন আমাকে না খেয়ে থাকতে হবে। দয়া করিয়া এই বেচারা বাচ্চা উপর রহম করিবেন মহাশইয়া।”
” ধুর তোমার সাথে কথাই আর বলবোনা।” এনাক্ষী অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো। কায়ান হেঁসে এনাক্ষীর গাল টেনে দিলো।
” আরে বাচ্চাটা রা’গ করেছে দেখি। আরে বাচ্চা রা’গ করোনা, তোমাকে আমি ললিপপ দেবো ”
এনাক্ষী একটুখানি জিহ্বা বের করে কায়ানকে ভেংচি দিলো।
” আচ্ছা টমি কোথাই? তাকে তো দেখছিনা।”
” টমি আমার কাছে নেই। সুজি নিয়ে গিয়েছিলো কিছুদিন আগে।”
” ও আচ্ছা।”
তারা আরো কিছু কথা বলবে কিন্তু একজন আঙ্কেল এসে কায়ানকে নিয়ে গেলো। কায়ান চলে যাওয়ার পর এনাক্ষী আবারো একা হয়ে গেলো৷ হাজারটা জিনিস চিন্তা করতে করতে সে দোল খাচ্ছিলো তখনই কেও ধপ করে দোলনায় বসে পড়লো এতে ভড়কে গেলো এনাক্ষী। আরেকটু হলেই দোলনা থেকে পড়ে যেতো। বিরক্তি নিয়ে পাশে তাকালো সে। ফিলিক্সকে হাসতে দেখে তার বিরক্তির স্তর তরতর করে বেড়ে গেলো।
” তুমি কি কখনো স্বাভাবিক মানুষের মতো আসতে পারো না? সবসময় ভুতের মতো উদয় হও কেন? সেইদিনও আচমকা পেছনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো আর এখন হঠাৎ করেই দোলনায় বসে পড়লে। আমি যদি পড়ে নাক-মুখ ফা’টিয়ে ফেলতাম তখন কি হতো?”
” তখন? তখন সবাই বলতো বিদেশের মাটিতে এক সুন্দরী ফরেনার নাক-মুখ ফাটিয়ে মুখে সাদা ব্যান্ডেজ বেঁধে ম’মিতে পরিণত হয়েছে।” কথাটি বলেই ফিলিক্স হো হো করে হাসতে লাগলো। এনাক্ষী রা’গী চোখে তার দিকে তাকালো৷ সাহস থাকলে এতোক্ষণে ফিলিক্সের কোঁকড়ানো চুলগুলো টেনে তুলে ফেলতো। আচমকাই ফিলিক্স হাসি থামিয়ে এনাক্ষীর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
” এনাক্ষী।”
ফিলিক্সের নরম আদুরে মাখা কন্ঠস্বরে এনাক্ষী বুক ধক করে উঠলো।
” রা’গ করলেও তোমাকে সুন্দর লাগে। ইচ্ছে করে তোমার ওই রা’গীভাব থাকা চোখ গুলো নিজের কাছে রেখে দি। রা’গী চোখে তাকালেও তোমার চোখগুলো অপূর্ব লাগে। দেবে তোমার ওই চোখ জোড়া আমাকে? সবসময় তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। বড্ড সুন্দর তোমার চোখ জোড়া।”
ফিলিক্সের অদ্ভুত কথা শুনে এনাক্ষী থতমত খেয়ে গেলো। দ্রুত দোলনা থেকে উঠে অন্যদিকে চলে গেলো। এনাক্ষী যেখানে বসেছিলো ফিলিক্স এখনো সেখানটাতেই তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে সে কোন ঘোরে চলে গিয়েছে।
চলবে……