নীল হতে নীলান্তে পর্ব ৬+৭

#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
ষষ্ঠ পর্ব

অর্নিতা- বাবা আমার ভালো লাগছে না,পরে বলবো।

জাহিদ আফসারী বুঝতে পেরেছেন মেয়ে হয়তো ক্লান্ত!
তাই তিনি তার মেয়েকে এ নিয়ে আর বেশি জেরা করলেন না।
কাজ যখন তখনই পরে যায়।

অর্নিতা তার অফিসে ফোন করে জানিয়ে দিলো তার ভালো লাগছে না। শরীর খারাপ এসব বলেই সে বসে পরল বেডে। আসলে ভালো লাগছে বা শরীর খারাপ করছে না তা নয়। মানসিক দিক দিয়ে অর্নিতা ভেঙ্গে পরেছে। অর্নিতার মনে হচ্ছে একটু একা থাকা দরকার।
পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন তার!
____________________________________

সেদিনের সেই একদিনের সঙ্গে আরো তিন দিন যোগ করে অফিস থেকে ছুটি চেয়ে নিয়েছে।
অফিস থেকে তাকে ছুটি ও দেওয়া হয়েছে।
অর্নিতা আজ অফিসে সময় মতো এসে তার স‍্যারের সঙ্গে দেখা করেছে। অরুপ স‍্যারকে সেদিনের সব ঘটনা খুলে বলেছে। তাই তিনি অত‍্যন্ত খুশি অর্নিতার কাজ তাকে মুগ্ধ করছে বারবার।

স‍্যার- মিস অর্নিতা আফসারী আপনার কাজ দেখে আমি বরাবরই মুগ্ধ হই বলাচলে মুগ্ধ হবার মত কাজই আপনি করেন। আপনার এই কাজ সত‍্যিই প্রশংসনীয়!
আপনি চাইলে উপর মহলেও আমি আপনাকে নিয়ে একটা প্রতিবেদন করাতে পারি বা আপনার প্রমোশন এর ব‍্যবস্থা করতে পারি।

অর্নিতা- স‍্যার আমি এখনো সেই অবস্থায় যাই নি।
তাই আমি চাই নিজেকে আরো ভালোভাবে দক্ষ করে তুলতে।

স‍্যার- বল কি সাহায্য করতে পারি, তোমার দক্ষতা বাড়াতে?

অর্নিতা- আমি উচ্চতর ট্রেনিংয়ের জন‍্য বাহিরে মানি আমাদের পর্যায়ের অফিসার বা এই বাহিনীর জন‍্য ভালো হয় এসব দেশে যেতে চাই। যদি উপকার করতে চান আমাকে এটাই করুন।

স‍্যার- ভেরি গুড ডিসিশন! এটাই তো আমি চাই একজন মেধাবী অফিসারের উচিৎ শুধু দেশের চিন্তা করার নয় বহিরাগত দেশ গুলোতেও তোমার অবস্থান করা প্রয়োজন! সেখানে যেমন সুনাম অর্জন করতে পারবে তেমনই কিছু শিখতেও পারবে।

অর্নিতা- ধন‍্যবাদ স‍্যার,

অরুপ- কিছুটা দূরেই দাড়িয়ে ছিল। অর্নিতাকে স‍্যারের রুম থেকে বেড়োতে দেখে বলল –

-মিস অর্নিতা ভালো আছেন?

অর্নিতা স‍্যালুট জানিয়ে – জ্বী!

অরুপ- আপনি হঠাৎ করে অসুস্থ হলেন কেমন করে?

অর্নিতা- অসুস্থতা কেমন করে বা কারন কি এগুলোর মধ‍্যে প্রকাশ পায় না। অসুস্থতা যেকোন সময় দেখা দিতে পারে অরুপ!

অরুপ- জ্বী,

অর্নিতা- আজ ফরহাদ আর জামিলকে তৈরী থাকতে বলবেন। আমি আজ সম্পূর্ণ রুপে প্রস্তুত।

অরুপ – আচ্ছা, ঠিক আছে।
________________________________________

অরুপ সেই জালমুড়ি ওয়ালা সেজেছে আজও, বিরক্ত লাগছে তার এই জাল মুড়ি ওয়ালা সাজতে কি অদ্ভুত!
শেষ পর্যন্ত লুঙ্গি! ফতুয়া পরে জালমুড়ি ওয়ালা!
একবার কারো নজরে পরলে মানইজ্জত তার পুরোপুরি শেষ।

অর্নিতাও আগের রুপে, জামিল অন‍্য রুপে সেজেছে সে আজ এমনি একজন ফর্মাল পোষাক পরেছে।
বাকিরা আগের সাজেই।

অর্নিতা আজ বসে থাকেনি ঘুরে ঘুরে দেখছে কিভাবে পাওয়া যেতে পারে।

অনেকক্ষণ বসার পর অর্নিতার মনে হলো এখানে বসে না থেকে একটু স্টেশন এর পিছনের দিকে যাওয়া যাক।
যেই ভাবা সেই কাজ।
অর্নিতা খুড়িয়ে খুড়িয়ে গাড়ি পর্যন্ত এসেগেলো।
এসেই সে সবাইকে নিয়ে ভিতরের পাশে একটি বস্তির পাশে খালি জায়গায় গিয়ে দাড়ালো দেখল কিছু ছোট ছোট ছেলে মেয়ের হাতে ফুলানো পলিথিন, তবে ওরা হাতে করে সেই পলিথিন নিয়ে বারবার শ্বাস টানছে।
অর্নিতার মনে পরেগেল এগুলো ড্রাগস!
হিরোইন এবং হিরোইন জাতীয় এই দ্রব‍্য এভাবেই শুকে শুকে নিতে হয়।
অর্নিতা অরুপকে ইশারা করল।

অরুপ- এই! এই পোলা আমারে একটা দে! দিবি?

ছেলেটি- আমনে কেডা? আমনেরে দিমু না!

অরুপ- যদি দেছ তাইলে এই মুড়ি তোরাও পাবি!

ছেলেটি: চাচা আমি দিতে পারুম না আমার সুখ লাগতেছে। আমার ডা না নিয়া রুবেল ভাইয়ের তে লোন! রুবেল ভাইয়ের কাছে মেলললা আছে। আমি দিতে পারুম না।

অরুপ- কোথায় থাকে তোর রুবেল ভাই?

ছেলেটি- হ‍ে ইস্টিশেনের লগেই আইয়ে রাতের বেলা।

অরুপ- আয় তো। তোর রুবেল ভাইয়ের কাছে যাই।
অরুপ আর সেই ছেলেটি মিলে সেই মাদক ব‍্যাবসাহী রুবেলের কাছে গেলো।

রুবেল স্টেশনের পাশেই একটি পানের দোকান নিয়ে বসেছে।

রুবেল- কিরে রহিম এইডা কেডা?

অরুপ – ভাই আমার একটা দেন, ভালা লাগে না! ঘরে নাই সুখ! বাহিরে নাই সুখ! আমারে একটা দেন ভাই!
বড় দুখে আছি।

রুবেল অরুপের কাছে এসে কানে কানে বলতে লাগল।

রুবেল- কারো কাছে কইয়া দিবেন নাতো?

অরুপ – না ভাই কমু না! এই আমনের মাথা ছুইয়া কসম কাটি!
রুবেল লোকটি- আরে দুরো মিয়া কসম কাটতে হইবো না, নিয়া যান! তয় সাবধান কেউ যেন না জানতে পারে!

অরুপ- আইচ্ছা!

রুবেল – অরুপ কে পলিথিন দিতে চাইলে,

অরুপ- ভাই এইডা না!

রুবেল – কোনডা?

অরুপ- ভাই এসব দিয়া আমার দুঃখ মিটবো না আরো বড় চাই!

রুবেল- বড় গুলা দিয়া কি করবেন? আর আমার কাছে নাই ও। মহাজনের কাছে যাওন লাগবো!!

অরুপ – আমি যামু ভাই!

রুবেল – কি মুশকিল! মহাজনের কাছে যাওন যায় না!

অরুপ রুবেলের পায়ে ধরে বলছে- ভাই আমনে আমার ধর্মের ভাই! আমারে নিয়া যইবেন লগে।

অরুপের জোড়াজুড়িতে রুবেল রাজি হয়েগেল। ঠিক হলো কালই যাবে তারা।
___________________________________

অর্নিতা- খুব ভালো অভিনয় করতে পারেন আপনি!

অরুপ- সেতো পারি, জানেন অভিনয়ের জন‍্য আমার মামা আমাকে নিতে চেয়েছিল!

অর্নিতা- তাই নাকি?

অরুপ- কনফিডেন্সের সাথে জ্বী! আব্বুর জন‍্য যেতে পারিনি!
#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
সপ্তম পর্ব

অর্নিতা- খুব ভালো অভিনয় করতে পারেন আপনি!

অরুপ- সেতো পারি, জানেন অভিনয়ের জন‍্য আমার মামা আমাকে নিতে চেয়েছিল!

অর্নিতা- তাই নাকি?

অরুপ- কনফিডেন্সের সাথে জ্বী! আব্বুর জন‍্য যেতে পারিনি!

অর্নিতা- আপনার মামা কি করতেন?

অরুপ – চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন! মামা এখনো আমাকে বলে ভাগনে ও সব তোমার ধারা হবে না আমার সঙ্গে এসো! নায়ক বানাবো তোমাকে! তুমি হবে নায়ক আমি হবো তোমার মাথার উপর ছায়া দুলাভাইয়ের কথায় চলবে নাকি? সে এসব বুঝে নাকি!

অর্নিতা- ওহ,খুব ভালো বলেছেন, আচ্ছা আপনারা সবাই তাহলে আসুন! কাল সন্ধ‍্যায় আমাদের মিশন শুরু!

অরুপ- আপনাকে পৌছে দি….

অর্নিতা- আরে লাগবে না! আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি তা দিয়ে যাবো, কাল যাই নি হয়তো ড্রাইভার বলেনি তাই শুনেনি। আজ আবার আপনার সাথে গেলে চিন্তা করবে।

অরুপ – আচ্ছা!

অর্নিতা তার গাড়ি করে বাসায় চলেগেল। অরুপ ফরহাদ, জামিলরা বাইরে কিছুক্ষণ কাটিয়ে তারা ও চলেগেল বাসায়।

পরেরদিন,,,,,

অরুপ, অর্নিতা, জামিল ফরহাদ সবাই এসেছে একসাথে। স্টেশন এ তবে অরুপের সাজ ওদের থেকে আলাদা। অরুপ আগের সাজে থাকলেও তারা সবাই একই রঙ্গের পোশাক পরে এসেছে।

অর্নিতা জিন্স আর টিশার্ট পরে মাথায় একটা ক‍্যাপ পরেছে। তাকে দেখে বুঝার উপায় নেই সে মেয়ে বা ছেলে। কাধ সমান চুল আর লম্বাটে শরীরে তার পোশাকটিও ফুটে উঠেছে।
অর্নিতারা সবাই গাড়িতে বসে আছে।

অরুপ গিয়েছে রুবেলের সঙ্গে দেখা করতে।
অরুপ- আসলামুআলাইকুম ভাইসাব!

রুবেল – অলাইকুম আসল্লাম! আইছেন যোহোন হুনেন!
এই নিয়া কারো কাছে কইতে পারবেন না। নাইলে জায়াগার উপর চান্দে উঠাই দিবো!

অরুপ- আমি কিছু করমু না ভাই!

রুবেল – আইচ্ছা চলেন যাই!

রুবেল, অরুপ মিলে স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাসে আসলো। অরুপকে ফলো করে অর্নিতা ও তার সঙ্গিদের নিয়ে একত্রে আসছে।

রুবেল – ভাই ওহোন আমাগোরে গুলিস্তান যাওন লাগবো!

অরুপ- গুলিস্তান? কিয়ের লাইগ্গা?

রুবেল – আরে মিয়া হেনেই তো আসল জিনিস!

অরুপ – হো চলেন।

কিছুক্ষণের মধ‍্যেই রুবেল আর অরুপ মিলে গুলিস্তানে চলে এসেছে,এখানকার একটি সরু গলি দিয়ে তারা যাচ্ছে। অরুপের কাছে যায়গায় টা কেমন যেন! গিন্জি পরিবেশ!
একদম নতুন জায়গা তার জন‍্য! ঢাকা শহরে থাকলেও এমন পরিবেশ এ কমই আসা হয়েছে তার।

অর্নিতা অরুপের পিছু নিয়ে অনেকদূর চলে এসেছে।
অর্নিতা ফোন করল অরুপকে, অরুপ রুবেল এর দিকে তাকিয়ে ফোন ধরলো। রুবেল তার দিকে ফিরে চেয়ে আছে।

অরুপ ফোন ধরেই অর্নিতার আগেই বলে উঠলো-

হো বউ কও কি কইবা?

অর্নিতা- আপনি যায়গায় টা ভালো করে চিনে রাখুন।

অরুপ- বউ আমি তো গুলিস্তানের এই গলিতে আইছি!

অর্নিতা- আচ্ছা শুনুন ও যেন না বুঝতে পারে!

অরুপ- হো বউ বুঝছি! এত বুদ্ধি দেওন লাগবো না!

রুবেল- ভাবি ফোন করছে?

অরুপ- হো! আমারে বুদ্ধি দেয় ঢাহা শহরে কেমনে চলতে হইবো।

অপরপাশ থেকে, জামিল, ফরহাদ হাসছে।

অর্নিতা কঠিন মুখ করে বলে উঠলো – বি সিরিয়াস!
এটা কোন হাস‍্যকর মুহুর্ত নয় যে হেসে যাবেন!
ফলো মি। এন্ড! ওয়াচ জিপিএস সিস্টেম!
হোয়ার দে গয়িং!
Follow me! Watch gps system! Where they going now?
ফরহাদ হাসি থামিয়ে চলতে লাগলো।
____________________________________

নিরিবিলি যায়গায়! কোন মানুষই নেই, একটি কারখানার ভিতর ডুকলো তারা। এটি মূলত একটি পরিত‍্যক্ত ফ‍্যাক্টরী!
গার্মেন্টস ফ‍্যাক্টরীহিসেবে কিছুই নেই এখানে। বাহিরে সাইনবোর্ড অনুযায়ী ভিতরে তেমন কোন কিছুই নেই।
পুরোনো কিছু সেলাই মেশিন আছে তাও জায়গার তুলনায় অনেক কম নেহাতই তিন চারটে হবে।
যায়গাটা এই অবৈধ ব‍্যাবসাহীদের জন‍্য ঠিকই আছে।
অরুপ ভালো করে দেখছে। দেখতে দেখতে রুবেলকে প্রশ্ন করে উঠলো-
অরুপ- রুবেল ভাই মহাজন কই?

রুবেল- অপেক্ষা করেন! আসতেছে! এইতো চইলা আইবো।

অরুপ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে লাগল। আজ এই মহেন্দ্রক্ষণ সে ছাড়বে না! একটা কেইস জিতে যাওয়া মানি তার জন‍্য স্পেশাল একটা মোমেন্ট!

মহাজন আসলেন অন‍্যান‍্যদের সঙ্গে কথা বলেই ,
রুবেল এর সঙ্গে অরুপকে দেখে চমকে যান।
কিরে রুবেল এইডা কেডা?

রুবেল- ভাই এ কালকে কইতাছিল আমার লগে আপনার সাথে দেখা করার লাইগা নিয়া আইছি।

মহাজন রুবেলকে ডেকে নিয়ে বলল- তুই ওরে সব কইছোছ?

রুবেল- হো!

মহাজন – আরে শালা করছে কি! হারামজাদা কারে না কারে কইতি গেলি।

রুবেল- আরে এইডা গিয়া বাইরে কিছুই কইবো না!
মহাজন রুবেল কে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে অরুপের কাছে আসলেন,
কি চাই তোর?

অরুপ- মামা আমারে ভালোমানের কিছু গান্জা দেন!

মহাজন – গান্জা আবার ভালোমানের হয়? এই প্রথম হুনলাম!

অরুপ- এই যেমন ধরেন বিদেশি! বড় বড় বোতল!
খামু মামা!

মহাজন- তোর চেহারা দেখছোত? ওইগুলা কিনা তো দূর ধরতে পারবি নাকি?

অরুপ- মামা আমার শান্তি নাই ঘুম নাই নিদ্রা নাই একটা দেন!

মহাজন – দূর হও! এই রুবেল কারে ধইরা লইয়া আইলি। শুন তুই এইগুলা কিনতে পারবি না।
পাও ছাড়! ছাড় কইছি!

অরুপ- না ছাড়ুম না!

মহাজন তার পকেট থেকে পিস্তল নিয়ে, অরুপকে গুলি করে বসলো।

অরুপ একটা আর্তচিৎকার দিয়ে লুটিয়ে পরলো মাটিতে।

অরুপের সঙ্গে ব্লুটুথ এর মাধ‍্যমে সংযুক্ত ছিল অর্নিতা ও জামিলরা সবাই।
গুলির শব্দ তারা বাহিরে থেকেই শুনেছে।

অর্নিতা ভয়পেয়ে গেল অরুপের কিছু হলো নাতো?
অরুপ একটু বাড়াবাড়ি বেশিই করতে যায় সব সময়।
অর্নিতা ফরহাদকে উদ্দেশ্য করে- ফরহাদ আপনি আর আপনারা সবাই থাকুন এখানে।
আমি আর জামিল যাচ্ছি ভিতরে।
জামিল আমি যাবার পর আপনি আমার পরে যাবেন।
অর্নিতা সবাইকে এগুলো বলতে বলতে সেই কারখানায় এসে ডুকে পরলো।

অরুপকে গুলি করে হাতে পিস্তল নিয়ে দাড়িয়ে আছে মহাজন। রুবেল ও অন‍্যদের বকে যাচ্ছে।

অরুপ পা ধরে কিছুক্ষণ কাতরাতে কাতরাতে সেখানেই
পরেগেল………

চলবে।

পাঠকদের উদ্দেশ্যে
_________________________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here