নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ
পর্ব-১৯
আদিবের অবহেলায় মুমু ভীষণ মনখারাপ নিয়ে রুমে বসে ঝুড়ি ঝুড়ি কষ্ট পাচ্ছে।সে ঠিক করেছে সে আর যাবেই না আদিবের সাথে কথা বলতে, একদম যাবে না। দেখুক সে কার্টুন, দেখে দেখে সে বিখ্যাত কার্টুন দার্শনিক হয়ে যাক।মুমুর সাথে কথা বলার দরকার নেই।টলটলে চোখে এসব ভাবছে আর ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে রাখার কঠিন চেষ্টা করছে মুমু।
দরজা খোলার শব্দে সামনে তাকাতেই দেখে আদিব এসেছে।আসুক, সে কথা বলবে না,একদমই বলবে না।তাই চুপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকে।আদিব বেশ বুঝতে পেরেছে মুমুর সাথে কথা না বলাতে সে ভীষণ অভিমান করেছে।তাইতো আর আশেপাশে যায়নি।বউটা এখনো আগের মতোই রাগ করে ভেবেই শয়তানি হাসি দিয়ে মুমুর কাছে যায়।
বিছানায় ধপাস করে শুয়ে বলল,”হাত-পা খুব ম্যাজ ম্যাজ করছে, একটু টিপে দে তো মুমু। ” বলেই মুমুর দিকে পা এগিয়ে দেয় আদিব।মুমুর এবার সত্যি সত্যিই কান্না পাচ্ছে, ভীষণ কান্না।একেতো সারা সকাল একটাও কথা বলেনি তার উপর মুমু যে রাগ করেছে তার কোনো খবরই নেই। এখন আবার পা টিপতে বলছে।মুমুর কোনো সাড়া না পেয়ে আদিব ঘাড় উঁচিয়ে দেখে মুমু কাঁদছে।ফোঁত করে একটা নিশ্বাস ফেলে, মুমুকে ঝট করে বিছানায় ফেলে ওর উপর আধশোয়া হয়ে ঝুকে বলল,” একটু কথা বলিনি তাই কেঁদে সুনামি বানিয়ে ফেলছিস আর রাতে যে আমাকে ফেলে ভুস ভুস করে ঘুমিয়ে গেলি তার বেলায় কি? হুম?”
মুমু প্রচন্ড অপরাধী ভাব নিয়ে বলল,” প্রয়াকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে ঘুমিয়ে গেছিলাম আমি ইচ্ছে করে ঘুমোইনি।” মুমুর মুখের দিকে তাকিয়ে ভীষণ হাসি পাচ্ছে আদিবের, কেমন বাচ্চাদের মতো মুখ করে কথা বলছে।আদিব মুমুর নাকে ছোট্ট একটা কামড় দিয়ে বলল,” তোর এতো শাস্তি পাওনা রয়েছে তার উপর আবার নতুন শাস্তি, কীভাবে শোধ করবি রে মুমু?” মুমু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রয়ার ডাকে দুজনেই ফট করে উঠে বসে।মুমু দ্রুত দরজা খুলে দিতেই প্রয়া হেসে মুমুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।
আদিব অনেকক্ষণ যাবত হতাশ ভাবে বসে গালে হাত দিয়ে উদাস হয়ে চিপস খাচ্ছে।সৃজা কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বিরক্তি নিয়ে বলল,” আদি, এরকম গরুর মতো জাবর কেটে চিপস খাচ্ছিস কেন? তোর কি খুধা পেয়েছে?খাবার কিছু এনে দিব?” আদিব দেবদাসের থেকেও হতাশ হওয়ার ভঙ্গিতে সৃজার দিকে তাকালো তারপর ফট করে উঠে এসে সৃজার একহাত ধরে বলল,”সৃজা আমার ভীষণ প্রেম পেয়েছে, তোর অসভ্য ননদটাকে এনে দিবি?” আদিবের কথা শেষ হতেই সৃজা হুহা করে হেসে দেয়।
আদিব রেগে বলল, “হাসবি না, তোর মাথামোটা, বেআক্কল,গবেট ননদকে আমি আস্ত রাখবো না।অসভ্য মেয়ে এতদিন পরে বর এসেছে কোথায় বরের সঙ্গে লটকিয়ে থাকবে তা না সে ঘুমচ্ছে।” বলেই আবার ধুপ করে সোফায় বসে পড়ে।সৃজা কিছুক্ষণ হেসে গড়াগড়ি খেল তারপর উঠে সিরিয়াস মুখ করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কলিংবেলের আওয়াজে উঠে দরজা খুলে।
” সৃজা আপু” বলেই জড়িয়ে ধরে রুপা।তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে রূপক।সৃজাও হালকা জড়িয়ে ধরে বলল,” আরে রুপা,কেমন আছো?”
রুপা,সৃজা আর রূপককে আসতে দেখে হাসি মুখে উঠে দাড়ায় আদিব।সকলে মিলে অনেকক্ষণ কথা বলার পরেও মুমুর দেখা না পেয়ে রূপকের মন অস্থির হয়ে উঠে।
কিছুক্ষণ পরে মুমু প্রয়া আর সমৃদ্ধকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসে।প্রয়া যেয়ে আদিবের কোলে উঠে বসে আর মুমু রুপা ও রূপকের সাথে কথা বলে সমৃদ্ধকে পাশে নিয়ে আদিবের কাছে বসে। অন্যদিকে রূপক বার বার আড় চোখে মুমুর দিকে তাকায়, মুমু আর আদিবকে পাশাপাশি দেখে ভীষণ রাগ লাগছে তার। বুকটা ভীষণ জ্বলছে, মুমু কেন তাকে একটু ভালোবাসে না। হঠাৎ আদিবের ফোন আসায় সে প্রয়াকে মুমুর কোলে বসিয়ে এক্সকিউজ মি বলে বেরিয়ে যায়।রুপা তার ছেলেকে রেখে এসেছে বলে সন্ধ্যার পরই রূপকের সাথে চলে যায়।
মিমন প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে আদিবের সামনে বসে আছে।আট বছর আগের ঘটনা আবার তাকে পায়-টু-পায় শুনাতে হচ্ছে।আদিব সিরিয়াস ভাবে মুমুর কলকাতা যাওয়ার ঘটনা সবকিছু শুনছে।মিমন সবকিছু বলে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, “কলকাতা যাবার পরে আর কোনো ধরনের সমস্যা তো হয়নি।শুধু মাঝে মাঝে ব্ল্যাঙ্ক নম্বর থেকে মেসেজ পেতো মুমু, তাও চার বছর যাবত মেসেজও পায়নি। আমার মনে হয় না আর কোনো ধরনের সমস্যা হবে।” আদিব দুই হাত মুঠো করে মুখের সামনে ধরে শূন্য দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। মিমন উঠে দাড়িয়ে আদিবের কাঁধে হাত রেখে বলল,” এসব নিয়ে আর ভাবিস না তো।”
প্রয়াকে ঘুম পাড়িয়ে বিছানার উপর বাবু হয়ে বসে আছে মুমু।আজ সে কোনো ভাবেই ঘুমবে না তাই এই সিস্টেমে বসে আছে।আদিব অনেকক্ষণ হলো ভাইয়ার ঘরে গেছে কিন্তু আসার নাম নেই।উফফ কোমড়টা ব্যাথা হয়ে গেছে এভাবে বসে থেকে। তাই একটা বালিশ নিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলো।প্রায় আধাঘণ্টা পরে আদিব এসে দেখে মুমু বসে বসে ঝিমাচ্ছে। শয়তানি একটা হাসি দিয়ে ফোন থেকে কাউকে মেসেজ করল।তারপর শব্দহীন ভাবে হেটে প্রয়ার কাছে গেল।” গুড নাইট আমার পরীটা,হ্যাব আ সাউন্ড স্লিপ।” বলেই প্রয়ার কপালে চুমু খেল।
আদিবের কথা শুনে মুমু পট করে সোজা হয়ে বসে, দেখে আদিব প্রয়ার কপালে চুমু দিচ্ছে।মুমু কিছু বুঝে ওঠার আগেই আদিব ফট করে তাকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা শুরু করে। “আরে আরে বাইরে কেন যাচ্ছ? কেউ দেখলে কী ভাববে প্লিজ নামাও।” বলে মুমু নামার জন্য ছটফট শুরু করে দেয়। আদিব মুমুর দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে বলল,” শাট আপ এন্ড স্টপ ব্র্যাগিং” ড্রয়িংরুম পেরিয়ে মেইন ডোরের সামনে আসতেই দেখে সৃজা দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।লজ্জায় মুমুর কান্না পাচ্ছে তাই সে শক্ত করে চোখ বন্ধ করে নেয়। এতো কেন নির্লজ্জ তার বর!!
“প্রয়াকে দেখে রাখিস আর সকালের আগে একদম দরজা নক করবি না” বলেই এক চোখ টিপ দিল আদিব।সৃজা আগেই আদিবের এপার্টমেন্টের দরজা খুলে রেখেছিল।সে দরজায় দাঁড়িয়ে সৃজার দিকে ঘুরে দাঁত কেলিয়ে বলল,”লাভ ইউ দোস্ত” সৃজা উত্তরে শব্দ করে হেসে দরজা বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে আদিবের কথা শুনে লজ্জায় মুমুর কান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।সে মনেমনে পণ করছে আর চোখ খুলবে না, কোনদিন খুলবে না।
নোনাজলের শহর
লেখিকা: হৃদিতা আহমেদ
পর্ব-২০
“মুমু, তুই এতো ভারী!! ইসস, আমার কোমড়ের হাড় গুলো মনে হয় ডিসপ্লেইস হয়ে গেছে।”
মুমুকে বিছানায় বসিয়ে মাজাটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ব্যায়াম কারার ভঙ্গি করতে করতে বলল আদিব।কিহহ, সে মোটা!সে ভারী! মাত্র একান্ন কেজি ওজন আর তাকে ভারী বলছে আদিব! নাহ কড়া রকমের কিছু বলবে ভেবেই পট করে চোখ খুলে মুমু।মুমুকে রাগানোর জন্যই কথাটা বলেছে আদিব।নাক ফুলিয়ে রাগী চোখে মুমুর তাকানো দেখে আদিব শয়তানি হাসি দিয়ে মুমুর সামনে বসে।মুমু চোখ ছোট করে ভ্রু কুঁচকে রেগে বলল,
-“আমি কী কোলে ওঠার জন্য হাতে পায়ে ধরেছিলাম? নির্লজ্জের মত সবার সামনে কোলে করে নিয়ে এসে এখন ভারী বলা হচ্ছে? থাকবো না আমি, একদম থাকবো না।”
বলেই উঠতে গেলে আদিব খপ করে মুমুর হাত ধরে বিছানায় ফেলে ওর উপর শুয়ে পড়ে।রাগে মুমুর নাক হালকা ঘেমে গেছে, ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলছে।মুমু রেগে গেলে,নার্ভাস হলে আর লজ্জা পেলে তার নাক ঘেমে যায়।আদিবের ভীষণ ভালো লাগে মুমুর রাগী ফেস দেখতে,কেমন বাচ্চাদের মতো রাগ করে? আর এই নাক ঘামানো, উফফ কী মারাত্মক!
–“উফফ মুমু তোকে না একদম স্ট্রবেরি ফ্লেভারের ফিয়ামা সাবানের মতো লাগছে।তোর ঘামের সঙ্গে কী মাদকদ্রব্য মিশিয়ে ছিস? ইসস, মাতাল করে দিচ্ছে আমাকে।” মুমুর গালে নাক দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল আদিব।
আদিবের এহেন স্পর্শে মুমু ফ্রিজড হয়ে গেছে।অস্পষ্ট ভাবে বলল,”প্র প্রয়া কাদবে” আদিব শাড়ীর আঁচল গলিয়ে মুমুর কোমড় চেপে ধরে বলে উঠে, “একদম বাহানা করবি না”বলেই মুমুর গলায় মুখ ডুবিয়ে তুমুল আদর শুরু করে।
মার্চের মাঝামাঝি হওয়ায় সকালে বেশ শীত শীত লাগে।ব্লাঙ্কেটের নিচে আদিবের বুকে একদম লেপ্টে ঘুমিয়ে আছে মুমু।ভোরে একবার ঘুম ভেঙেছিল মুমুর কিন্তু আদিবের আরেক দফা আদরের তোড়ে আবার ঘুমিয়ে গেছে।কথাটা ভেবেই আদিব আরো একটু গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে, মুমুও উষ্ণতায় আদিবের উদোম বুকে নাক ঘষে আরো কাছে লেপ্টে আসে।এই মেয়েটা যে তার জীবনের কতটা জুড়ে আছে কাউকে বুঝাতে পারবে না সে।মনে মনে হাজার বার ভালবাসি উচ্চারণ করে মুমুর মাথার ডান সাইডে আলতো একটা চুমু খায় আদিব।তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকলো,
-“মুমুপাখি, এই মুমু ওঠ সকাল হয়ে গেছে তো”
-” উহু”
ঘুমের ঘোরেই মাথা নেড়ে বলল মুমু।আদিব আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মুমুর মাথায় শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে বলল,
-“মুমু প্রয়া খুব কাঁদছে।”
এবার মুমু ফট করে চোখ খুলে ধড়ফড় করে উঠতে যায়।মুমুর কান্ড দেখে আদিব হুহা করে হেসে বলল,
-“কেবল ছয়টা বাজে প্রয়া এখনো উঠেনি।”
মুমু ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করে ব্যর্থ হয়ে আদিবের দিকে তাকাতেই দেখে আদিব ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।রাতের কথা মনে হতেই মুমু লজ্জায় আদিবের বুকে মুখ গুজে।আদিব আর কথা না বলে মুমুকে কোলে তুলে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
একটানা তিনদিন ভার্সিটি না যাওয়ার ফলে বেশ তাড়াহুড়া করেই রেডি হচ্ছে মুমু।আজকে দশটার দিকে একটা ক্লাস আছে তার।অন্যদিকে জরুরি কাজে আজই ফিরতে হবে মিমনকে। তাই মিমন আর সৃজাও তার সাথে বের হবে বলেছে।প্রয়া সকাল থেকে সমৃদ্ধর হাত ধরে বসে আছে সে কিছুতেই ভাইয়াকে যেতে দেবে না।তাকে নানু মনি অনেক বুঝিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে এসেছে।মিমন প্রয়াকে আদর করে মার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়।সৃজা আগেই ছেলেকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছে, প্রয়া দেখলে আবার কাদবে সেই ভয়ে।মুমু তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে এসে আদিবকে ফরমাল ড্রেসে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“তুমি কোথায় যাচ্ছ? ”
-” কোথায় আবার তোমাকে পৌঁছে দিব না?”
-” ড্রাইভার চাচা তো আছেন তোমাকে যেতে হবে না।”
-” কিহ, যাবো না মানে অবশ্যই যাবো, আমার বাচ্চা বউকে আমি একদম একা ছাড়বো না।”
মুমুকে এক চোখ টিপ দিয়ে দাঁত কেলিয়ে কথাটা বললো আদিব। ওর কথায় সৃজা আর মিমন হো হো করে হাসা শুরু করে। সকাল থেকে মুমুকে একদণ্ড শান্তি দিচ্ছে না আদিব। একঘন্টা ওয়াশরুমে আটকে রেখে তারপর ছেড়েছে।রান্নাঘরে সৃজার সামনেই চুমু দিয়েছে। নাস্তার টেবিলে বসে আরেক নাটক তার হাতে ভীষণ ব্যাথা নিজে খেতে পারবেন না।তাই মা,ভাইয়া সকলের সামনে জোর করে মুমুর হাতে নাস্তা করেছে। মুমু বিরক্তি নিয়ে আদিবের দিকে তাকায়, এতো কেন নির্লজ্জ, অসভ্য তার বরটা? ভেবেই গটগট করে হেটে বেরিয়ে যায় মুমু।
মিমনদের স্টেশনে পৌঁছে মুমুকে নিয়ে বেরিয়ে যায় আদিব। আদিব ড্রাইভ করছে আর মুমু তার পাশের সিটে বসে ঘুমে ঢুলছে।মৃদু হেসে মুমুর মাথাটা নিজের কাঁধে নিতেই মুমু পট করে চোখ খুলে মুখ ফুলিয়ে সোজা হয়ে বসে,যার অর্থ সারারাত ঘুমতে না দিয়ে এখন দরদ দেখানো হচ্ছে, লাগবে না তার দরদ।আদিব আবার মুমুর মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে ধমকের সুরে বলল,
-“একদম নড়বি না, চুপচাপ চোখ বন্ধ কর। পৌঁছে আমি ডেকে দিব।” মুমু ধমক শুনে লক্ষী মেয়ের মতো চোখ বন্ধ করে নেয়।
রাস্তায় জ্যাম না থাকায় অনেকক্ষণ আগেই পৌঁছে গেছে।মুমু এখনো আদিবের কাঁধে মাথা রেখে শার্টের বুক পকেট ধরে বাচ্চাদের মতো ঘুমচ্ছে।হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে মুমুর মাথায় হাত বুলিয়ে ডেকে তুলে মুমুকে।চোখ মেলে আশেপাশে তাকাতেই বুঝতে পারে পৌঁছে গেছে। তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নামতে গেলেই আদিব একহাত ধরে থামিয়ে দেয় মুমুকে।মুমু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আদিব কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বলল,
-” ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই যেন রিসিভ করা হয়।” মুমু কিছুক্ষণ আদিবের দিকে তাকিয়ে থেকে মিষ্টি হেসে মাথা দুলিয়ে আচ্ছা জানালো।ইসস, নির্লজ্জ টা এতো কেন ভালোবাসে? ভেবেই অন্যরকম সুখ সুখ লাগছে মুমুর।গাড়ি থেকে নেমে কয়েক পা আগাতেই ফোনের রিংটোন শুনে স্ক্রিনে দেখে আদিবের কল।পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আদিব হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে বাই জানাচ্ছে। মুমু আবারও মিষ্টি হেসে সামনে আগাতেই ফোনে মেসেজের শব্দ পেয়ে হেসে ফোনের দিকে তাকায়।
মুমুর ভার্সিটির সামনে প্রতিদিনের মতো আজও রূপক এসে বসে আছে। অনেকক্ষণ হলো মুমুর গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু গাড়ি থেকে কাউকে নামতে দেখা যাচ্ছে না।প্রায় বিশ মিনিট পরে মুমু হাসি মুখে বের হতেই রূপকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।কিন্তু আদিবকে দেখেই সেই হাসি আবার মিলিয়ে যায়।কিছু একটা ভেবে দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে মুচকি হেসে দেয় রূপক।
“দিস ইজ নট ফেয়ার জান,ইউ ব্রেইক ইউর প্রমিজেস। দিস টাইম আই’ল সিউরলি কিল হিম জান,এন্ড আই মিন ইট জান।”
মেসেজ টা দেখেই মুমুর হাত থেকে ফোন টা পড়ে যায়।ধুপ করে ওখানেই বসে পড়ে, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে হাত-পা প্রচন্ড কাপছে চোখ থেকে অঝোরে নোনাজলের স্রোত গড়িয়ে পড়ছে।
চলবে
চলবে