পতিতা স্ত্রী পর্ব ৮

#পণ্যস্ত্রী #Part_8
#লিখা- #Yasira_Abisha
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত ৮টা বেজে গেলো রুহিও আজ অনেক অনেক দিন পরে চিন্তা মুক্ত আরামের একটা ঘুম দিয়েছে সে উঠতে উঠতে তাই দেরি হয়ে গেলো
উঠার পরে হাত মুখ ধুয়ে নিচে চলে গেলো যেয়ে দেখলো বাসায় ইরাদ নেই,, সম্পা এসেছে রুহিকে দেখতে,, আর মায়ার ডেথ সার্টিফিকেট গুলো ঝুনু খালার কাছে দিতে কিসের যেন একটা দরকারের জন্যে এগুলো অফিসের কাজে লেগেছিলো।
.
সম্পা- হ্যালো,, আপনি দেখতে একদম মায়া ম্যাডামের মত। তাই তো কপাল খুলে গেসে। নাহলে আপনাদের মতো নিম্ন মানের মেয়েদের এরকম বাসায় থাকার ভাগ্য কি আর হয়? নাহয় ইরাদ স্যারের মত লোকের কাজের মানুষ হবার যোগ্যতাও আপনার মত মেয়ের নেই। তবে আমি একটা জিনিস চিন্তা করছি একটা নষ্টা মেয়েকে কি সত্যিটা জানার পরে ইরাদ স্যার তার বাসায় আশ্রিতা হবার পর্যন্ত জায়গা দিবে কি?
টুনি- সম্পা আপা,, আপনি এভাবে কথা বলতাসেন কেন? উনি আসার পর থেকে আমাদের ইরাদ ভাই হাসি খুশি থাকা শুরু করসেন,, ইরাদ ভাইয়ের খুশি থাকাটাই সবচেয়ে জরুরী।
সম্পা- আমিও চাই স্যার ভালো থাকুক বাট এমন নিম্ন মানের মেয়ের সাথে এট লিস্ট স্যার কে মানায় না।
রুহি- একটা কথা বলি আপনাকে আমি এখানে ইরাদ সাহেবের বউ হতে আসি নি উনি আমাকে আমার জায়গা থেকে তুলে এনেছেন তার মায়া ভেবে,, আমি জানি আমি মায়া না।আর মায়া ম্যাডামের জায়গা আমি নিতেও চাইনা। ইরাদ সাহেব যখন সত্যিটা সুস্থ হয়ে যাবেন তখন তাকে আমি নিজেই সত্যিটা জানিয়ে দিব। আমার মধ্যে তাকে নিয়ে কোনো স্বার্থ নেই। তার শুধু একটা ভালো মানুষ ভালো থাকবে এটাই আশা করি। তাই আমাকে এসব শুনালেও আমার মধ্যে কোনো কষ্ট বা কিছু হারানোর দুঃখ কাজ করবেনা। শুধু শুধু আপনার মতো উচ্চ শ্রেণীর মানুষের প্রতি একটা অসম্মানের সৃষ্টি হবে। যেটা হয়ত নাহলেই ভালো।
সম্পা রাগে ফুসতে ফুসতে টেবিলের ওপরে কাগজ পত্র রেখে চলে গেলো।
বেড় হবার সময় ইরাদকে দেখলো দেখে সালাম দিয়ে চলে গেলো।
ইরাদ আসার পরে,,
ঝুনু খালাকে জিজ্ঞেস করলো
সম্পা এভাবে চলে গেলো কেনো কান্না করতে করতে?
ঝুনু- কিছু সত্য কথা সহ্য হয়নি উনার তাই চলে গেসে। বাবা সাহেব আপনি ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে নেন,,, বউ মনিও মাত্র উঠল।
ইরাদ-আচ্ছা খালা।
রুহি তুমি ঠিক আছো?
রুহি- হুম আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন আমরা খেয়ে নেই সবাই।
ইরাদ- হুম ওকে।
রাতে খাওয়া শেষে ইরাদ বলল
আমার মাথাটা একটু ব্যাথা করতেসে রুহি আমি রুমে গেলাম তুমিও রেস্ট করো।
রুহি সম্মতি দিয়ে নিজ ঘরে ঘুমাতে গেলো রাতে রুহি ভাবছিলো কিভাবে ইরাদের মন মতো হয়ে চলবে এসব ভাবতে ভাবতেই ও ঘুমিয়ে গেলো,, সকাল হলো রুহি ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে সুন্দর করে সাজগোজ করলো যেমনটা ইরাদ পছন্দ করে এর পর নিচে গিয়ে ঝুনু খালা ও টুনির কাছে ইরাদের খাবারের তারপর বিভিন্ন জিনিসের প্রতি পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে যেনে নিলো কিছুটা যেন ওর কারনে ইরাদের কোনো প্রকারের কষ্ট না হয়,,
ইরাদ প্রায় ৯টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো রুহিকে দেখে গুড মর্নিং জানালো,, বেশ ফুরফুরা লাগছে ইরাদকে রাতের ঘুমটা ভালো হয়েছে হয়তো এত দিন পরে নিজের ভালোবাসার মানুষকে দেখছে নিজের সামনে মন ভালো না থেকে উপায় কোথায়? নাস্তা বানানো শেষ,, ইরাদ রুহি খেতে বসছে রুহিই ইরাদকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে ইরাদ রুহির দিকে দেখছে অপলক দৃষ্টিতে আর ইরাদের চোখে পানি,, কি যে একটা সুন্দর দৃশ্য টুনি আর ঝুনু খালা দেখে খুবই খুশি হচ্ছে
টুনি ঝুনু রুহির এরকম আচরণ দেখে নারভাস হয়ে ইরাদকে বলে- ভাই দেখেছেন?ভাবির আচরণ বেশ পরিবর্তন হয়েছে,, ভাই এত দিন উনার কাছে ছিলো না এই জন্যেই এমন হয়েছে,,
টুনি কথাটা কিন্তু এই জন্যেই বলেছে যাতে মায়া আর রুহি ২জনের আচরণ যে বেশ আলাদা ইরাদ যেন বুঝেনা যায়।
যেহেতু রুহির আর ইরাদ এত দিন পরে একসাথে তাই ইরাদ আজ অফিস না যেয়ে রুহিকে নিয়ে ঘুরতে যাবে,, আগে সব সময় ওরা যখন অনেক দিন পর দেখা করতো তখন সারাদিন একসাথে সময় কাটাতো।
নাস্তা খাওয়া শেষে,,
ইরাদ- রুহি র‍্যেডি হও
রুহি- কোথাও যাবো?
ইরাদ- হুম।
রুহি- কোথায় যাবো?
ইরাদ- আগে তৈরি হও পরে বলছি,,আর pink color এর একটা শাড়িতে দেখতে চাই সুন্দর পরীকে।
রুহি- আচ্ছা।
ঝুনু খালা আর টুনি খুবই বেশি খুশি হয়েছে ইরাদকে সুখে দেখে। ইরাদ আবারও নতুন জীবন শুরু করবে এটা তো এদের ২ জনেরই স্বপ্ন ছিলো,,
রুহি খুব সুন্দর করেই তৈরি হয়ে আসলো, আর ইরাদ ব্লু কালারের একটা শার্ট পরেছে চুল গুলো স্পাইক করেছে বেশ দেখাচ্ছে রুহি যেন ইরাদকে দেখে খুব তৃপ্তি নিয়ে ওকে দেখছে কি যেন একটা যাদুর মত কাজ করছে ইরাদ সামনে এসে রুহিকে বলল – কি দেখছো?
রুহি- কিছুনা (লজ্জা পেয়ে)
ইরাদ আর রুহি ২জনই মিলে এয়ারপোর্টের পাশে একটা লেক আছে যেটা ইরাদের বাসা থেকে খুব বেশি দূরে না,,
ওরা রওনা দিলো গাড়িতে উঠার পর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিলো,,
রুহি ইরাদ ২জনই চুপ হয়ে আছে রুহি গ্লাস খুলে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে,,
ইরাদ কিছুক্ষণ পরে রেডিও অন করলো,,
রেডিও তে পুরোনো গান বেজে ওঠে
” আমি যে কে তোমার তুমি তা বুঝে নাও
আমি চিরদিন তোমারই তো থাকবো
তুমি আমার আমি তোমার,,
এ মনে কি আছে তুমি তা বুঝে নাও”
রুহি জানে ইরাদ ওর না ইরাদের জীবনে কিছু সময়ের অতিথি তাই এসবের কোনো প্রভাব যেন নিজের উপরে পরতে দিতে চাচ্ছেনা ও।
ওরা কিছুক্ষনের মধ্যে ওখানে গেল আকাশে মেঘ জমেছে তবে বৃষ্টি নেই এখন,, মানুষজন ও প্রায় নেই বললেই চলে।
রুহি এবং ইরাদ পাশাপাশি বসলো মাঝে একটু দূরত্ব রেখে ইরাদ পুরো চুপ করে আছে ও রুহির দিকেও দেখছে না কিছুক্ষণ ঠায় আকাশের দিকে দেখছে আর রুহি ইরাদকে দেখছে আবার চারিদিকে দেখছে,, বেশ সুদর্শন পুরুষ ইরাদ আর সব থেকে বড় কথা ও খুব ভালো মানুষ যাকে রুহি নিজের অজান্তেই মন দিয়ে বসেছে তাই কিছু সময় পর পর ইরাদের দিকেই চোখ চলে যায়,,
ইরাদ- রুহি,, তুমি ঠিক আছো?
রুহি- হুম।
ইরাদ- জায়গাটা সুন্দর না?
রুহি- খুব সুন্দর একটা শান্তি লাগছে এখানে আসার পরে।
ইরাদ- রুহি তোমাকে একটা কথা বলি?
রুহি- হুম বলেন,,
ইরাদ- না থাক আর অন্য দিন বলবো,,
প্রায় ১ঘন্টা পরে ওরা বাড়ি ফিরে এলো এরপরে এভাবে দিন যেতে লাগলো,,রুহির কোনো কিছুর কমতি হতে দেয় না ইরাদ,, ইরাদের ও খুব বেশিই যত্ম করে রুহি,,
প্রায় ১মাস পার হলো এরকম করেই
ইরাদ ১মাস পরে রুহিকে আবারও সেইম জায়গায় নিয়ে আসলো
আজকেও আকাশটা মেঘলা ঠিক সেদিনের মতই,,
ইরাদ- তোমাকে কিছু বলার ছিলো যেটা সেদিন বলা আমার কাছে ঠিক মনে হয়নি,,
রুহি- জি বলেন।
ইরাদ- জানো রুহি আমাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করতে হলে বা প্রমিস নিতে হলে এখানে নিয়ে আসতো আমার মায়া,, আমার মায়া এই জায়গাটা খুব ভালোবাসতো।তাই এই জায়গাটার সাথে তাই আমার এত বেশি এটাচমেন্ট কাজ করে,,
এই বলেই ইরাদ ওর চোখ বন্ধ করে নিলো,, ইরাদের চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পরলো।
রুহি প্রচুর ভয় পেয়ে গেলো ওর মুখে কোনো কথা আসছেনা। এরকম একটা সিচুয়েশনে রুহির কিই বা বলা উচিত আর ইরাদই বা কিভাবে সব জানলো?
রুহির মাথায় কিচ্ছু আসছে না
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here