পতিতা স্ত্রী পর্ব ৬

#পণ্যস্ত্রী #Part_6
#লিখা- #Yasira_Abisha
ডাক্তার যখন ভেতরে ছিলেন তখন আমরা সবাই বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম একটা সুখবর শুনার আশায় কারণ আর কোনো রকম দুঃখ নিতে পারছিলাম না আমরা কেউ,, বেশ করে ইরাদ ভাই,, তার মা বাবা তো তাকে সেই ছোটো বেলায় রেখে আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছিলো তারপর যাদের বাবা মা বলেছিলেন তারা ২ জন ও এক নিমিষেই তাকে আবার অনাথ করে দিয়ে আল্লাহার কাছে চলে গেলেন,,
এবার শুধু ইরাদ ভাইয়ের সুখ বলতে রইলো তার ভালোবাসার মানুষ,,যাকে ছাড়া ইরাদ ভাই অপরিপুর্ণ,, আমাদের সবার মনের একটাই কথা ছিলো যে মায়া ভাবিকে যেন আল্লাহ পাক ফিরিয়ে দেয়,, এসব ভাবতে ভাবতেই কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার বাইরে বেরিয়ে এলেন,,
ডাক্তারকে দেখেই আবির ভাই জিজ্ঞেস করলেন
-ডক্টর, ভাবির কি অবস্থা?
ডাক্তার- আপনারা সবাই একবার দেখা করে নিন তার হাতে বেশি সময় নেই।
কথাটা শুনে ইরাদ ভাই মাটিতে বসে পরলেন,,আর হতভম্ব হয়ে ডাক্তারের দিকে তাঁকিয়ে রইলেন। আমাদের সবার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো,,,
আবির- মায়া ভাবির মত একটা হাস্যোজ্জ্বল মেয়ে আমাদের মাঝে আর বেশি সময়ের জন্য নেই এটা আমরা কেউ মেনে নিতে পারছিলাম না,, ইরাদ স্যার একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। তার কি বলা উচিৎ বা কি বলবে সেইটাই ইরাদ স্যার জানেনা। সেই মুহুর্তে কেবিন থেকে নার্স এসে ডাক্তারকে বলল
-স্যার পেশেন্ট তার আপন জনদের দেখতে চাইছে। কি করবো?
-যা করতে চাইছে করতে দাও। আটকিয়ো না।(আবির দরজার এপাশ থেকে কথা বলতে বলতে এসে সোফায় বসে বাকি কথা বললেন)
আবির আর কথা গুলো বলতে পারছে না মনটা খুব ভারী হয়ে গিয়েছে,,
আবির- টুনি কথা গুলো তুই শেষ কর আমি পারছিনা।
বলেই আবির উঠে চলে গেলো।
টুনি- তারপরে আমরা সবাই মিলে কেবিনে গেলাম। সবচেয়ে প্রথমেই ইরাদ ভাই সামনে গেলেন,,
ইরাদ এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে মায়া ভাবির দিকে। চোখ গুলো লাল রঙের হয়ে গেছে। মায়া ভাবির চোখ পানি পরছে। কে কাকে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা কেউ! মায়া ইরাদের হাতের উপর হাত রাখলো। তার হাতে প্রচুর পরিমাণ ক্ষত,, ফরসা হাতে লাল যখমে ভরা,,
মায়া- ইরাদ (অন্য দিকে তাকানো)
ইমার বাবা,, এদিকে তাকাও(ইরাদের আর মায়ার মেয়ের নাম ইমা রাখতে চেয়েছিলো)
ইরাদ কিচ্ছু বলছে না,,(কথাগুলো বলতে গিয়ে মায়া ভাবির গলা ধরে আসছিল)
-ইরাদ ভাই তখনো কিছু বলছে না শুধু তাঁকিয়ে ছিলো ভাবির দিকে,,
মায়া-ইমার বাবা শোনো আমার একটা ইমা চাই কিন্তু। তুমি তোমার খেয়াল রেখো আর কখনো আমাকে মনে করে কেঁদো না। আমি থাকব না তো কি হয়েছে আমার সৃতি তো আছে। একটা বিয়ে করো আমার জন্য। আর শোনো তাকে ভালোবেসো অনেক তুমি সুখে থাকবে অনেক প্লিজ,,
-তুমি এসব কেন বলছো মামনি? কিচ্ছু হবেনা তোমার! আমরা আছি না? (ঝুনু খালা চোখের পানি মুছতে মুছতে)
-খালা ও কথা বলছেনা কেন??ওকে কথা বলতে বলেন। ও কি একটাবার আমায় জড়িয়ে ধরবেনা? ও এভাবে তাঁকিয়ে আছে কেন আমার দিকে? ইরাদ কথা বলো না একটু! প্লিজ ইরাদ (ভাবি কান্না করতে করতে তার কথা গুলো বলতে বেশ কষ্ট হচ্ছে বুঝা যাচ্ছিল)
আবির- ভাই একটু কথা বলেন! ভাবি কত বার ডাকতেসে,, এভাবে চুপ করে থাকবেন না,,
ঝুনু খালা- বাবা মায়া মনি কান্না করছে,, আপনার মায়া মনি একটা বার কথা বলেন।
ইরাদ-একা আমায় ফেলে চলে যাবে? তোমার পাগলকে রেখে চলে যাবে? আমার ভালোবাসা তোমার কাছে কিছুই ছিল না? (শান্ত গলায় বলল সব গুলো কথা)
-ইরাদ একটাবার আমায় জড়িয়ে ধরো একটাবার তোমার ওই টাইট hug টা শেষ বারের মত পেতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে (ভাবি উঠতে চেষ্টা করে)
আমি ভাবিকে উঠিয়ে দিই। ইরাদ ভাই তাকে জড়িয়ে ধরে,, পাগলের মতো জাপটে ধরেছিল। একদম অন্তরে ঢুকিয়ে ফেলতে চেষ্টা করছে যেন, ভাবির চুলগুলো সব ভাইয়া বার বার হাতাচ্ছিল। কেঁদে দুইজনেই গা ভাসাচ্ছে।
অনেকক্ষণ এভাবেই ভাবিকে ধরে রেখেছে ভাই
আমরা সবাই কান্না করছিলাম এরকম এক দৃশ্য দেখে নিজেকে স্বাভাবিক রাখা কারো পক্ষেই সম্ভব ছিলো না।
ইরাদ- মায়া তুমি জানো তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারিনা,, আমি যে বেচে থেকেও মরে যাবো প্লিজ মায়া আমাকে একা ফেলে যেও না,, আমাকে এত বড় সাজা দিও না। তুমি ছাড়া তো ইরাদ অপূর্ণ। মায়া আছে তো ইরাদ আছে মায়া নেই তো ইরাদ নেই। তোমাকে দিয়ে আমার শুরু আর তোমাকে দিয়েই আমার শেষ,, আল্লাহর কাছে তো আমার একটাই চাওয়ার মায়া যখন থেকে তোমার সাথে পরিচয় হয়েছিলো যে তুমি আর আমি যেন এক সাথে অনেক সুখে থাকতে পারি।
মায়া- আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে। আমি কিভাবে থাকব তোমাকে ছাড়া?আমার সব তুমি ইরাদ তোমার থেকে দূরে আমি যেতে চাইনা।আমি মরতে চাইনা, আমি মরতে চাইনা। কান্না করতে করতে কথা গুলো বলে ফেলল উনি।
ইরাদ-আমি তোমায় কোথাও যেতে দিব না। কোত্থাও না। তুমি আমার আর আমার কাছেই থাকবে। মায়া আমালে একা করে দিও না। আমি পাগল হয়ে যাব,পাগল হয়ে যাব মায়া।
আমি এত বড় কষ্ট সহ্য করতে পারবো না।
মায়া- আপনারা সবাই আমাকে মাফ করে দিবেন প্লিজ,, জানা অজানায় অনেক ভুল ভ্রান্তি করেছি।(আবির ভাই,ঝুনু খালা আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল ভাবি কথা গুলো)
টুনি- না ভাবি, আপনি অনেক লক্ষী একটা মেয়ে আমরা আপনাকে অনেক সম্মান করি।
মায়া-ডাক্তার বলল মা বাবা I.C.U তে কি অভাগা আমি যাবার আগে নিজের বাবা মা কে শেষ দেখাও দেখতে পেলাম না (ভাবিকে ডাক্তার জানায় নি যে তার বাবা মা মারা গেসেন)
ঝুনু খালা- ইরাদের জন্যে একটা পরীর মত মেয়ে এনে দিবেন,আমার ইরাদকে যেন ও অনেক অনেক ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে,, ওকে বিয়ে করানোর দ্বায়িত্ব কিন্তু আপনাদের সবার,, আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস রেখে যাচ্ছি আপনাদের কাছে ওকে দেখে রাখবেন। আমি চলে যাওয়ার পরে ওর অনেক কষ্ট হবে,, অনেক পাগলামিও করবে কিন্তু প্লিজ আপনারা ওকে সামলিয়ে নিবেন।
ইরাদ- মায়া উইল ইউ স্টপ দিস মায়া?
মায়া-ভেবেছিলাম বিয়ের পরে খুব খুব করে ভালোবাসা দিবো আমার ইরাদকে,, কিন্তু দেখো ইরাদ আমাদের ভাগ্য কেমন একটা খেলা খেললো আমাদের সাথে? আমি তোমার স্ত্রী হওয়ার আগেই আল্লাহর কাছে চলে যেতে হচ্ছে।
ইরাদ-আমার বউ কেউ হলে মায়া হবে আর কেউ হবেনা কখনোই না। I love you a lot <3 plz don't leave me 🙁 আমিও তোমার সাথে চলে যাবো মায়া,, এই দুনিয়াতে আমার আর কোনো কাজ নেই। মায়া- ইরাদ ভুলেও না,, এই কথা মাথায় ও এনো না আমি মারা যাওয়ার পরে তোমার নিজ হাতে আমার খাটোলা নিয়ে কবরস্থান যাওয়া লাগবে,, নিজ হাতে আমাকে কবর দেয়া লাগবে,, আমার মাগফিরাতের জন্যে দোয়া করা লাগবে,, এটাই আমার লাস্ট উইশ৷ পুরো করবে না তুমি?? ইরাদ- কান্না করতে করতে হুম বলল। এই আশা টা পুরন করতে যেয়ে যে ইরাদের বুকে রক্ত খরণ হচ্ছে খুব। এই ব্যাথাটা যে আর সহ্য করতে পারার ক্ষমতা নেই ইরাদের কথাটা হয়তোবা মায়া বুঝতে পারছেনা। মায়া- কাঁদবেনা একদম। আর ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে, নিজের খেয়াল রাখবে, মনের যত দুঃখ, কষ্ট, যা হবে সব আল্লাহ কে বলবে কিন্তু তবুও আমার কাছে নিজে থেকে আসার চেস্টা করবেনা। ইরাদ- তোমাকে ছাড়া আমি পারবো না মায়া,,, তুমি কেন বুঝছো না মায়াকে ছাড়া ওর ইরাদ....(ইরাদের কথা শেষ করার আগেই মায়া ইরাদের বুকের উপর মাথা রেখেই নিজের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে) মায়া! মায়া! মায়া প্লিজ কথা বল!আমার মায়া কথা বলছে না কেন? মায়া?? তোমার কথা না শুনে আমিতো একটানা ৩ ঘন্টাও থাকতে পারিনা।মায়া তোমাকে তো অনেক কিছু বলার ছিলো,, কতটা ভালোবাসি তা ঠিক ভাবে আমি প্রকাশ ও তো করতে পারিনি। মায়া তুনি আমার অন্তর,, তুমি আমার রুহ। তুমি আমাকে সব সময় বলতে না আমি তোমাকে ভালোবেসে কিছু ডাকি না কেন? বাসর রাতে ডাকবো বলে ডাকতাম না,, মায়া উঠো না প্লিজ?? প্লিজ মায়া আমার তো কথা গুলো শেষ হয়নি,, আরও অনেক কথা জমে আছে,,আমি সহ্য করতে পারছিনা,, এত একা করে দিয়ে যেও না তোমার ইরাদকে। আমার পথ চলার জন্যে শুধু আমার মায়াকেই চাই। সবাই কান্না করছিলাম,,, খুব কান্না করছিলাম ভাবির অকালে মারা যাওয়া আর ইরাদ ভাইয়ের এই অবস্থা,,, আবির-স্যার৷ ভাবি আর নেই। আপনি প্লিজ নিজেকে কন্ট্রোল করেন। স্যার প্লিজ শান্ত হন। ইরাদ- দেখ আবির তোমার ভাবি কথা বলে না। টুনি তোর ভাবিকে উঠতে বল,, খালা কিছু বলেন না? আমি পারছি না। আবির- স্যার আপনি আমার সাথে চলেন। অনেক কষ্টে ইরাদ ভাইকে নিয়ে বাইরে গেলেন আবির ভাই। মায়া ভাবিকে গোসল করানো হল জানাজা পরানো হল এরপরে কবরে নিয়ে যাওয়া হলো ইরাদ ভাইকে ভাবি যেভাবে যা বলে গেসে উনি সব সঠিকভাবে করে ছিলেন কবরটাও নিজের হাতে দিয়েছিলেন। ভাবির দাফন হবার পরে ভাই অনেকক্ষন দুয়া কালেমা পরেছিলেন,, মুনাজাতের পরে ইরাদ ভাই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলেন কবরস্থানেই। (এই part টা লিখতে গিয়ে আমি নিজেই কান্নায় ভেঙে পরছিলাম,, আপনারা অবশ্যই জানাবেন কেমন লেগেছে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here