পতিতা স্ত্রী পর্ব ৫

#পণ্যস্ত্রী #Suspense_Reveals #Part_5
#লিখা- #Yasira_Abisha
আবির- আপনি মেইবি চিন্তিত যে এসব কি হচ্ছে আপনার সাথে তাই না?
রুহি- আমি ঠিক বুঝলাম না,,
আবির- এইযে স্যারের এভাবে আপনাকে নিয়ে আসা এবং সবার আপনাকে ভাবি বলে সম্বধোন করা,,
রুহি- হুম
আবির-তাহলে আমরা এখন আপনাকে সব খুলে বলছি তবে আপনি আগে এই ফটো এলবামটা দেখেন,,
আমাদের ইরাদ স্যারের,,
রুহি ফটো এলব্যামের উপরে লিখা Me with my luv,,
এলবামটা খুলে দেখতে শুরু করলো একের পর এক ইরাদের ছবি সাথে রুহির মতো একটা মেয়ের ছবি রুহি এলবাম দেখছে একবার তারপর আবার একবার আবির ঝুনু টুনি ওদের দিকে তাকাচ্ছে,,
রুহির বুঝতে বাকি নেই যে ওর মতো চেহারার এই মেয়েটি কিন্ত এই মেয়ে রুহি না।
লাস্ট যে ফটো সেটা ইরাদের আর ওই মেয়ের এনগেজমেন্টের ছবি যেই ছবির পেছনে লেখা
” My Oxygen মায়া <3 I Love u more than anything " রুহির ছবি দেখে শেষ তারপরে টুনি এলবামটা নিয়ে নিলো রুহির থেকে,, রুহি একদম অবাক যে একজন মানুষের মত ওবিকল অন্য একজন মানুষ ও হয় কিভাবে সম্ভব? রুহির মাথায় ধরছে না এই ব্যাপারটা,, কিছুই মিলাতে পারছে না ও ঠিক ওই মুহুর্তেই ইরাদ নিচে আসলো ইরাদকে দেখে আবির বলল- স্যার অফিসের কিছু জরুরি ডকুমেন্ট আছে যেগুলো আপনার একবার দেখা লাগবে,, আমি কালকেই আপনাকে মেইল করে রেখেছিলাম একবার যদি দেখে নিতেন তাহলে আমি সামনের কাজ গুলো দেখতে পারতাম। ইরাদ- আচ্ছা তাহলে চল স্টাডি রুমে। আর রুহি তুমি চাইলে একটু ঘুমিয়ে নিতে পারো,, আমি কিছুক্ষণ পরে আসছি রুহি-আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান। আবির আর ইরাদ স্টাডি রুমে চলে গেলো রুহির মনে হাজার হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,, রুহি চিন্তায় ডুবে গেছে টুনি- ভাবি, রুহির ঘোর ভাংলো টুনির ডাকে,, রুহি- আপনারা আমাকে একটু বলবেন? আসল ঘটনা কি? আমি একদম বুঝতে পারছিনা,, টুনি- বলছি,, ঘটনার শুরু হয়ে ছিলো আরও ৩বছর আগে থেকে,, এই ছবি গুলোতে যেই মেয়েটিকে দেখলেন ইরাদ ভাইয়ের সাথে উনাকে ইরাদ ভাই ভালোবাসতো,, শুধু ভালো বাসতো না তাদের বিয়ের ও কথা ছিলো,, ইরাদ ভাইয়ের বিজনেস পার্টনারের মেয়ে ছিলো মায়া ভাবি,, মায়া ভাবি তার বাবা মায়ের এক মাত্র মেয়ে ছিলো,, ইরাদ ভাই আর মায়া ভাবির রিলেশনের ব্যাপারটি সবাই খুশি মনে মেনে নিসিলো,, ইরাদ ভাইয়ের মা বাবা তাকে ছোট রেখেই মারা গেসিলেন আর মায়া ভাবির বাবা মা ইরাদ ভাইয়ের সাথে পরিচয় হবার পর থেকে ইরাদ ভাইকে নিজের সন্তানের মত করে দেখতেন,, সবই খুব সুন্দর ভাবে চলছিলো গত বছরের প্রথম দিকে ইরাদ ভাই আর মায়া ভাবির এনগেজমেন্ট হলো খুব ধুমধাম করে,, এরপরে তারা সবাই মিলে মালয়েশিয়া ট্রিপে গিয়েছিলো,, সেখানে একটা বাংলাদেশী ছেলের মায়া ভাবিকে পছন্দ হয়ে যায় ওই লোক একটা গুন্ডার মত ছিলো মায়া ভাবিকে প্রপোস করে বসে ভাবি রাগের মাথায় ওকে বেশ অপমান করে এবং থাপ্পড় দেয়,, বাংলাদেশে আসার পরে এই ঘটনা সবাই ভুলেও যায় কিন্তু এর পর যেন আমাদের অশান্তি শুরু হয়ে যায়,, আমাদের সুখের পরিবারটা অসুন্দর হয়ে যায়,, ভাবির বাবার সকল বিজনেস নষ্ট হয়ে যায় তারা খুব ভেঙে পরে কিন্তু ইরাদ ভাই তাদের যথেষ্ট সাপোর্ট করতেন,, তারা ইরাদ ভাইয়ের বাসায় এসে থাকা শুরু করলেন,, ইরাদ ভাইয়ের যেন ভালোবাসা আরও বেড়ে গেলো ভাবির জন্য,, খুব বেশি আহ্লাদ করতেন তাকে,, ভাইয়ের পুরো দুনিয়া একদিকে আর ভাবি একদিকে,, ভাই যে কি পরিমাণ ভালোবাসতো ভাবি কে এটা যে না দেখসে সে বিশ্বাস করবেনা,, আমরা দেখেছি তাই আমরা জানি,, ভাবিদের অবস্থা পরে যাওয়ার কারনে ভাই সিদ্ধান্ত নিলেন যে বিয়েতে বেশি দেরি করা যাবেনা তাই তাদের বিয়ে ঠিক করা হলো মাত্র ২মাস পরে মানে মে মাসের দিকে,, একদিন ইরাদ ভাই খুব বেশি ব্যাস্ত ছিলেন সারা দিন বাড়ি ফিরতে পারে নি,, রাতে মায়া ভাবি ইরাদ ভাইকে কল দিয়ে বলে যে সবাই মিলে মায়া ভাবির বান্ধুবির হ্লুদ সন্ধ্যাতে যাবে কিন্তু ইরাদ ভাইয়ের কিছু জরুরী কাজ ছিলো তাই উনি যেতে পারেনি,, মা বাবাসহ মায়া ভাবি বিয়েতে গেলো তার কয়েক ঘন্টা পরে ফোন আসে যে ভাবিদের গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়েছে অবস্থা খারাপ,, ইরাদ ভাই খবর পেয়ে তার অবস্থাও পুরো যায় যায় কেমন যে একটা অবস্থা হয়েছিলো সেটা আপনাকে আমরা মুখে বলে বুঝাতে পারবো না,, তখনই আমরা সবাই মিলে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম সাথে আবির ভাই ও ছিলেন উনি ফোন দিয়ে জানতে পারলেন যে এক্সিডেন্ট শুধু এক্সিডেন্ট না এটা ভাবিদের মেরে ফেলার চক্রান্ত ছিলো আর সেটা অন্য কেউ নয় ওই অসভ্য উন্মাদ লোকটা করে ছিলেন ইরাদ ভাই এসব শুনে পুরো পাথরের মত হয়ে গিয়েছিলেন তার মুখে কোনো কথা ছিলো না শুধু একটা কথাই বলেছিলেন- আবির ওকে ছারিস না,, যা লাগে সব ব্যাবস্থা কর। ভাইয়ার চোখে মুখে রাগ জেদ ক্ষোভ দেখা যাচ্ছিলো পারলে উনি ওখানেই ওই লোককে শেষ করে দিতেন,, কিন্তু চোখ ২টা ভেজা নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয় কাজ করছিলো,, অবশেষে আমরা হাসপাতালে পৌছে গেলাম যাওয়ার পরই শুনলাম ভাবির বাবা মার স্পট ডেড হয়েছে,, ইরাদ ভাই এই কথা শুনে জিজ্ঞেস করলো "আমার মায়া??? মায়া কেমন আছে?” ডাক্তার বল্লেন- "অবস্থা ভালো বলা যায় না,, আমরা চেস্টা করছি" ইরাদ- যা লাগে যত লাগে আমি দিব আমার মায়াকে সুস্থ করে দিন প্লিজ এটা বলেই ইরাদ ভাই মাটিতে বসে পরলো পুরো ৩ ঘন্টা অপারেশন চলল এই সময়ের মধ্যে আবির ভাই ওই লোককে পুলিশ দিয়ে ধরায়া এনকাউন্টার করে মারায়া ফেলসিল এইটুকু সময়ের ভিতরেই,, তখন এই খবর শুনার পরে ইরাদ ভাই শুধু বলছিল উপরের দিক তাকিয়ে " মা পাপা আমি আপনাদেরকে বাচাতে পারলাম না তবে ন্যায় বিচার করার চেষ্টা করেছি" ভাইয়ের চোখ ভরতি পানি ছিলো মায়া ভাবির মা বাবাকে অনেক সম্মান করতেন ইরাদ ভাই,, অপারেশন শেষ হলো,, প্রায় ৪ ঘন্টা ভাবিকে I.C.U তে রাখা হয়েছিলো সেই সময় গুলো ইরাদ ভাই ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলো I.C.U রুমের বাইরে সারা দিন ভাই এত খাটা খাটুনি করতেন তবুও তাকে ওরকম বিদ্ধস্ত কখনোই দেখা যেত না,, সেদিন যেমন দেখা যাচ্ছিল,, সারাটা রাতেই ভাই না খেয়ে ছিলেন অনেক চেস্টা করেও তাকে কিছুই খাওয়াতে পারি নি আমরা কেউ,, যদিও কারোই মন ছিলো না কিছু খাওয়ার,, মনের মধ্যে ঝড় বইছিল আমাদের, সবাই আল্লাহার নাম নিচ্ছিলাম যিকির করছিলাম,, ভোর হয়ে আসতে শুরু হলো,, ফজরের আযান হচ্ছিলো ডাক্তার ভিজিটে আসলেন মায়া ভাবিকে দেখতে আমরা সবাই আমরা গেইটের বাইরে শুধু ভিতরে কি হচ্ছে সেটা জানার আশায় ব্যাকুল হয়ে ছিলাম,, 🙁 শুধু আল্লাহকে একটা কথাই বলছিলাম ইরাদ ভাই জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছেন তাকে আর কষ্ট দিয়েন না আল্লাহ্। মায়া ভাবিকে ছাড়া ইরাদ ভাই কিছুইনা,, এরকম একটা জুটি আপনি ভাংবেন না,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here