প্রণয়ের_পরনতি পর্ব ১২

#প্রণয়ের_পরিণতি
#পর্ব_১২
#Sadia afrin nishi

সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে তৃপ্তির ভীষণ জ্বর হলো।অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজার ফল আরকি।জ্বরের সাথে প্রচন্ড পরিমাণে ঠান্ডা লাগছে তার।তাই আর পরদিন কলেজ যেতে পারল না।

রিশি সকাল সকাল কলেজে গিয়েই তৃপ্তির খোঁজ করতে লাগল।কিন্তু কোথাও পেল না। তারপর সে নীলকে খুঁজে পেল।নীলও বললো সে কিছু জানেনা।রিশি তৃপ্তিকে কল করবে তারও তো কোনো উপায় নেই। তৃপ্তির ফোন তো নষ্ট। তারপর রিশি মন খারাপ করে ক্লাসে চলে গেল।

নীলও ভাবছে তৃপ্তির কথা। কেন আসল না মেয়েটা। কিছু না বলে কয়ে লাপাত্তা হয়ে গেল।

জ্বরের ঘোরে তৃপ্তি উল্টোপাল্টা বকছে। ওর মা ডক্টরকে ফোন করে ডেকে এনেছে। ডক্টর মেডিসিন দিয়েছে আর বলেছে এক সপ্তাহ প্রপার রেস্ট নিতে।

মেডিসিন খেয়েও তৃপ্তির তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। তৃপ্তির মা একবার ভাবল তনয়াকে ফোন করে জানাবে কিন্তু আর জানালো না। কারণ মেয়ে দুটো তো দুরে আছে এখন ওদের জানালে শুধু শুধু চিন্তা করবে তার থেকে বরং কাল এলে একবারে বলবে।আজকের দিনটা উনিই সবটা সামলে নেবেন।

________

পাহাড়ি আঁকাবাকা পথ,সারিসারি পাহাড়ি গাছগাছালি,পাহাড়ি মানুষ তাদের পোশাক, খাওয়া-দাওয়া চলাধেরা,আচার-অনুষ্ঠান সবকিছুই মন কেড়ে নিল তনয়ার। সবকিছুই অদ্ভুত রকমের সুন্দর।
এদের জীবন আর আমাদের জীবনের মাঝে অনেক পার্থক্য। সৃষ্টিকর্তার অসীম ক্ষমতা। এক ধরনীতে তিনি কত রকম মানুষ, কত রকমভাবে সৃষ্টি করেছেন। সব মানুষের বৈশিষ্ট্য আডবার আলাদা।

রিশান একটা বাচ্চা ছেলের সাথে ওদের এখানকার খেলাধুলা সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করছে।আর তনয়া মহিলাদের সাথে বসে তাদের কাপড় তৈরি করা দেখছে।এখানকার মহিলারাও খুব পরিশ্রমী। সংসার, বাচ্চাকাচ্চা সামলে তারা বারতি আয়ের জন্য নানারকম কাজ করে থাকে। এটা এখানকার একটি তাঁতি বাড়ি।এখানে এই জনগোষ্ঠীর যাবতীয় পোশাক তৈরী হয়। এদের পোশাকগুলোও একটু অদ্ভুত। উপরে গামছার মতো কাপড় ব্লাউজের মতো করে পেঁচানো নিচেও আর একটি কাপড় ওই একইভাবে পেঁচানো,সাথে একটা গামছা কোয়ালিটি ওরনা।

রিশান আর তনয়া এবার এখন থেকে কাছেই একটি পাহাড় ভ্রমণে যাবে।তনয়া বোনকে খুব মিস করছে তাই সে তনিমার নম্বরে ফোন দিল।কিন্তু রিন বেজে বেজে ফোনটা কেটে গেল।তনয়ার এবার চিন্তা হতে লাগল।তাই সে রিশানকে বললো কাব্যকে একটা ফোন করতে।
রিশান কাব্যকে ফোন করলে কাব্য জানালো তারা এখন আসতে পারবে না। তনিমা নাকি রাগ করে যাবে না বলেছে।কাব্য রিশানকে সত্যি কথাটা বলল না তাহলে হয়তো ওদের ঘোরাটাও নষ্ট হয়ে যাবে তাই কাব্য রিশানকে মেনেজ করতে মিথ্যে বলে দিল।

রিশান তনয়াকে কাব্যর বলা কথাগুলো বলায় তনয়া রিশানকে বলেছিল আর ঘুরবে না রিসোর্টে ফিরে যাবে কিন্তু রিশান তনয়াকে জোর করে নিয়ে গেল পাহাড় দেখাতে।

তনয়া পাহাড়ের গাঁয়ে তৈরীকৃত আঁকাবাকা পথ বেঁয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করছে। তার পাশে পাশে রিশানও উঠছে।হঠাৎ তনয়া হোঁচোট খেয়ে পরে যেতে নেয়। রিশান তনয়ার পাশে থাকায় সে সাথে সাথে তনয়াকে ধরে নেয়।তারপর কোনো কথা না বলে তনয়ার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে। তনয়াও আর কিছু বলে না। রিশানের হাতে হাত রেখেই উপরে উঠতে থাকে।

_________

কাব্য দরজা পর্যন্ত গিয়ে তনিমা চিৎকার শুনে আবার ফিরে আসে।দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে তনিমা বিছানায় পরে ছটফট করছে। তারপর সে দ্রুত রিসিপশনে গিয়ে ফার্স্ট এইড এনে একটা ব্যথার মলম তনিমাকে দেয়।

কাব্য:এটা লাগিয়ে নাও ব্যথা কমে যাবে।
তনিমা:ও মা গো ভুভভভভভত
তুমি কী কাব্যের ভুত। কাব্য তো এই মাত্র চলে গেল আমাকে ফেলে তাহলে তুমি নিশ্চয়ই কাব্যর ভুভভভত

কাব্য:এই ডিজিটাল স্টুপিট একদম চুপ। এই নেও মলম এটা কোমড়ে লাগিয়ে নাও। ব্যথা কিছুটা কমবে। আর এর মধ্যে মেডিসিনও আছে। মলম লাগিয়ে ব্যথা একটু কমলে কিছু খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নিও।
এই বলে কাব্য বিরবির করে তনিমাকে বকতে বকতে চলে গেল।

তনিমা:এটা তাহলে কাব্যর ভুত ছিল না কাব্য ছিল 😳তার মানে কাব্য আমাকে ভয় দেখানোর জন্য ওগুলো বলেছে।ও আচ্ছা ঠিক আছে আমার নামও তনিমা সময় মতো সবটা তোমাকে সুদে-আসলে ফেরত দিয়ে দিব মি:নিমফল।
এ আমার সাথে নাটক করলো
আর আমি কী না কত কিছু বলে দিলাম। হায় আল্লাহ আমারে তুইলা নাও।

এসব একাএকা বকতে বকতে তনিমা মলমটা হাতে মাখিয়ে কোমড়ে লাগাতে চেষ্টা করলআ।অনেক কষ্টে তনিমা মলমটা কোমড়ে লাগালো।তারপরও ব্যথায় উঠতে না পেরে ওভাবেই কাব্যর বিছানায় ঘুমিয়ে গেল।

_________

কলেজ ছুটির পর রিশি মন খারাপ করে চলে গেল বাড়ি।তার আর কিছুই ভালো লাগছে না। কাল তৃপ্তির সাথে অনেকটা সময় পার করার পর এখন তার শুধু তৃপ্তিকেই চাই। এক মুহুর্ত একা থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তৃপ্তির হলো টা কী?কোনো সমস্যা হলো না তো? এসব নানারকম প্রশ্ন রিশির মাথায় ঘুরছে।

সারা রাত রিশি শুধু এপাশ ওপাশ করেই কাটিয়ে দিল।ঘুম আর হলো না।

এদিকে তৃপ্তির জ্বর কমার কোনো নামই নেই। কিছু খেতেও পারছেনা। তৃপ্তির মা মেয়ের এমন অবস্থা দেখে খুবই নাজেহাল হয়ে পরল।তার এখন কী করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছিল না।সে বসে বসে তৃপ্তির মাথায় জলপট্টি দিতে লাগল।সারারাত এভাবেই কাটল।

পরদিন রিশি খুব তাড়াতাড়ি কলেজ চলে গেল। গিয়েই তৃপ্তিকে হন্নে হয়ে খুজল।কিন্তু আজও তৃপ্তির দেখা মিলল না। রিশি আজও মন খারাপ করে চলে এলো কলেজ থেকে। আর ভাবতে লাগল তৃপ্তির জন্য তার এমন ফিলিংস কেন হয়? তাহলে কী সে তৃপ্তিকে ভালোবেসে ফেলেছে?

সকালে তৃপ্তির জ্বর কিছুটা কমে এসেছে। একটু আধটু কথা বলতে পারছে বাট এখনো কিছু খায়নি।তৃপ্তির মা তাই গরম গরম স্যুপ বানিয়ে জোর করে তৃপ্তিকে খাইয়ে দিল।তৃপ্তি অার্ধেকটার মতো খেয়ে আর খেতে পারল না। তার শুধু মাথা ঘুরে বমি পাচ্ছে। সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। তাই সে আবার শুয়ে ঘুমতে চেষ্টা করলো।

___________

তনয়া আর রিশান খুব সুন্দরভাবে পাহাড়, পাহাড়ি এলাকা, মানুষজন সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে রিসোর্টে ফিরে এলো।কাব্য একাই রিসোর্টের আশপাশ দিয়ে ঘুরেছে। রিশান তনয়াকে অনেক ছবিও তুলে দিয়েছে সুন্দর সুন্দর স্পেস দেখে। তার মধ্যে একটা ছবি সে চুপিসারে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। সেই ছবিটি রিশান তার পোন দিয়ে তুলেছে তাই তনয়া ওইটা দেখেনি। আর রিশানও তনয়াকে দেখায় নি।ওই ছবিটার মধ্যে তনয়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে একটা প্রজাপতিকে নিজের হাতের তালুতে নেওয়ার চেষ্টা করছিল ঠিক তখনই রিশান সাইড এঙ্গেল থেকে ছবিটা তোলে।অসম্ভব সুন্দর সিগ্ধ একটা ছবি।

রিশান তনয়া রিসোর্টে ফিরে তনিমার কাছে যায় কিন্তু তনিমাকে ঘরে না পেয়ে কাব্যর ঘরে গিয়ে দেখে তনিমা ওখানে ঘুমিয়ে আছে। দুজনে একেবারে অবাক হয়ে যায়। তারপর তনয়া গিয়ে তাড়াতাড়ি তনিমাকে ডেকে ওঠায়। তনিমা উঠে সবটা ওদের বলে কী কী হয়েছে ওরা যওয়ার পর থেকে। রিশান তনয়া হাসবে না কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আসলেই দুটোই পাগল।তনয়া রিশানের সাহায্যে তনিমাকে ওদের রুমে নিয়ে যায়। তনিমাকে দিয়ে রিশান রুমে চলে আসে। আর তনয়াকে বলে আসে সবকিছু গুছিয়ে নিতে কাল সকাল সকাল ওরা ঢাকা রহনা দেবে।
রিশান ঘরে এসে দেখে কাব্য এসে গেছে। তারপর দুজনে মিলে সবকিছু গুছিয়ে নেয়।

ডিনার করতে আজ আর ওদের একসাথে ক্যান্টিনে যাওয়া হলো না। ওয়েটারকে বলে খাবার যার যার ঘরে এনে তারপর খেল।

এখান থেকে বাসে গেলে দুদিন লেগে যায়। কিন্তু অত সময় ওদের হাতে নেই তাই রিশান আর কাব্য ঠিক করলো ওরা প্লেনে যাবে।

__________

আজও রিশি একটা নির্ঘুম রাত কাটালো। সে ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে সে তৃপ্তিকে ভালোবেসে ফেলেছে।

তৃপ্তি এখন আগের চেয়ে অনেকটাই বেটার। তবে শরীর খুবই উইক তাই বিছানা থেকে নামতেও পারে না। তৃপ্তি রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছে রিশির কথা। রিশি কী তাকে এই দুদিন এক বারও মনে করেছে? তাকে কী খুঁজেছে?তার জন্য মন খারাপ করেছে? হয়তো করেছে।

তৃপ্তিরও রিশির জন্য খারাপ লাগতে লাগল।বার বার শুধু মনে হতে লাগল, একবার যদি রিশির সাথে কথা হতো তাহলে সে অনেকটা সুস্থ হয়ে যেত।কিন্তু কী করে কথা হবে তার ফোনটা তো নষ্ট। নতুন ফোন তো এখনো কেনাই হয়নি।এখন মার কাছ থেকে ফোন নিয়ে ফোন দিলে মা তো অনেক প্রশ্ন করবে তাহলে এখন কী উপায়।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here