প্রণয়ের_পরনতি পর্ব ১১

#প্রণয়ের_পরিণতি
#লেখিকা_সাদিয়া_আফরিন_নিশি
#পর্ব_১১

টাওয়াল হাতে দাড়িয়ে আছে মেয়েটি। তার ভীষণ ভয় করছে।কলেজ শেষ করে এখনো বাহিরে আছে। মা নিশ্চয়ই অনেক টেনশন করছে। আপুরাও তো বাড়িতে নেই। মা কে একটা ফোন করা দরকার।কিন্তু তার ফোনটা তো বৃষ্টিতে ভিজে একাকার অবস্থা। এখন সেটা দিয়ে ফোনও তো যাচ্ছে না। এখন কী করবে এইসবই ভাবছে মেয়েটি।

দুকাপ গরম কফি হাতে নিয়ে রুমে ঢুকল ছেলেটি।মেয়েটিকে এখনো ওভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার ভীষণ রাগ হলো।এভাবে বেশি সময় থাকলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।নিজের রাগটা দমন করার চেষ্টা করে সে মেয়েটিকে গম্ভীর গলায় বললো,
আর কতক্ষণ এভাবে থাকা হবে?
তাড়াতাড়ি চেঞ্জ না করলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।

মেয়েটি টাওয়ালটি নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে গিয়েও থমকালো।মিনমিন সুরে বললো, আমি চেঞ্জ কী করে করবো। আমার কাছে তো এক্সট্রা ড্রেস নেই। তার থেকে বরং আমি এখন বাড়িতে চলে যাই।

ছেলেটির এবার খুব রাগ হলো।মেয়েটির কী কোনো আক্কেল নেই?সাদা ড্রেসটা চুপচুপে ভিজে তার সারা শরীরে লেপ্টে আছে। এভাবে রাস্তা দিয়ে সে কী করে বাড়ি ফিরবে। সব মানুষ তো তার দিকে খারাপ দৃষ্টি দিবে।

ছেলেটি এবার একটু ধমক দিয়েই মেয়েটিকে বললো, এভাবে তুমি বাড়ি যাবে লাইক সিরিয়াস।নিজের দিকে দেখেছ?
চুপচাপ কথা কম বলে আমি তোমাকে আমার একটা শার্ট আর একটা ট্রাউজার দিচ্ছি এটা পরে নেও।তোমার কাপড় শুকিয়ে গেলে তারপর আবার চেঞ্জ করে বাড়ি যেও।

কাবার্ড থেকে ছেলেটি একটা নীল শার্ট আর একটা কালো ট্রাউজার বের করে মেয়েটিকে ধরিয়ে দিল।

মেয়েটি এবার আর কিছু না বলে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।তার কাছে এ ছাড়া আর কোনো অপশন নেই।

এটা রিশিদের বাংলো বাড়ি।এই বাড়িতে কেউ থাকে না। মাঝে মাঝে বেড়াতে আসে মন ফ্রেশ করতে। বৃষ্টিতে আর কোথাও তো যাওয়ার উপায় নেই তাই রিশি তৃপ্তিকে এখানে নিয়ে এসেছে।

কফির মগ নিয়ে রিশি বেলকনিতে চলে গেল।একটু পর ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে সে পিছু ফিরল।

তৃপ্তি শার্টটের হাতা ভাজ করার চেষ্টা করছে। শার্টটা তার গায়ে বেশ ঢোলা আর বড় হয়েছে। আর ট্রাউজারটাও বেশ বড় পায়ের কাছ থেকে।
তৃপ্তির কান্ড দেখে রিশির খুব হাসি পাচ্ছে। কিন্তু তার তো হাসলে চলবে না। সে তো তৃপ্তির উপর ভীষণ রেগে আছে। তাই সে হাসিটা কোনোভাবে আটকে তৃপ্তির কাছে যেতে লাগল।

রিশিকে এভাবে এগোতে দেখে তৃপ্তি ভয়ে ভয়ে পেছাতে লাগল।
বেশি দুর যেতে পারল না তার আগেই রিশি ওর হাত ধরে একটান দিয়ে খাটে বসিয়ে দিল।
তারপর হাঁটু মুড়ে বসে তৃপ্তির শার্টের হাতা আর ট্রাউজার নিচ দিয়ে বটে দিল।

এবার আর তৃপ্তির বেশি অসুবিধা হচ্ছে না। সে মনে মনে খুশিই হলো রিশির এমন কাজে।আবার নিজে নিজেই হাসল এই ভেবে যে সে শুধু শুধু রিশিকে নিয়ে উল্টাপাল্টা সন্দেহ করে।
রিশি উঠে বেলকনিতে চলে গেল। তার পিছু পিছু তৃপ্তিও গেল।রিশি একটা চেয়ারে বসে তৃপ্তির দিকে আর একটা চেয়ার এগিয়ে দিল।
তৃপ্তিও বসে পরল।রিশি এবার এক মগ কফি নিলো। কফিটা কিছুটা ঠান্ডা হয়ে গেছে তবে বেশি ঠান্ডা হয়নি।আর এক মগ কফি তৃপ্তির হাতে দিল।দুজনে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। তৃপ্তির এখন একটু
ঠান্ডাটা কম লাগছে। এইসময় কফিটা পেয়ে তার জন্য খুব উপকার হলো।
তৃপ্তি রিশিকে মিনমিন করতে করতে বললো,তোমার ফোন থেকে কী একটু ফোন করা যাবে?
মা অনেক টেনশন করছে হয়তো।
আমার ফোনটা বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
রিশি তৃপ্তির দিকে তার ফোনটা এগিয়ে দিল।
তৃপ্তি ফোন হাতে নিয়ে মায়ের নম্বরে ডায়াল করল।একবার রিং হতেই ফোন রিসিভ করল তার মা। হয়তো তার ফোনের প্রতিক্ষায়ই ছিল।
তৃপ্তি:মা আমি তৃপ্তি। আসলে বৃষ্টিতে আটকে গেছি। তুমি আমার জন্য চিন্তা করো না আমি ঠিক আছি।

তৃপ্তির মা:তুই এখন কোথায় আছিস? তোর ফোন বন্ধ কেন?

তৃপ্তি :মা আমি আছি এক ফ্রেন্ডের বাসায়। আমি তোমাকে বাড়ি ফিরে সব বলবো।প্লিজ তুমি চিন্তা করো না। আমি একদম ঠিক আছি। আর বৃষ্টি থামলেই বাড়ি ফিরে আসবো।
আচ্ছা রাখি তাহলে।

তৃপ্তি ফোনটা রিশিকে দিয়ে দিল।তারপর আবার দুজন কফি খেতে লাগল।
তৃপ্তির বারবার মনে হতে লাগল রিশি হয়তো কোনো কারণে তার ওপর রেগে আছে। তাই রিশি ওর সাথে ঠিক ভাবে কথা বলছে না।

তৃপ্তি:তুমি কী আমার ওপর রেগে আছো?
রিশি:চুপ
তৃপ্তি:আমি কী কোনো ভুল করেছি?
রিশি:চুপ করে কফি খেয়েই যাচ্ছে।
তৃপ্তি:কিছু তো বলো?আমার অপরাধটা কী।
এই বলে তৃপ্তি রিশির এক হাত ধরে ঝাঁকাতে লাগল।
রিশি সঙ্গে সঙ্গে তার হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে নিল।

রিশি:তুুমি জানো না তুমি কী করেছ?
জানবেই বা কী করে। আমার বলা কথা তো তোমার মনে থাকার কথাই নয় তাই না। আমি তোমার কে?আমার কথা তুমি কেন শুনবে?

তৃপ্তি:কিন্তু আমি তোমার কোন কথাটা শুনিনি বলো?

রিশি:ওহ তুমি আমার সব কথা শোনো বুঝি?
সামিরের সাথে ঘুরতে যেতে,হাত ধরে হাঁটতে আমি তোমাকে বলেছিলাম বুঝি?
নাকি আমি তোমাকে সামিরের কাছ থেকে দুরে থাকতে বলেছিলাম কোনটা?(চিৎকার করে)

রিশির চিতকারে তৃপ্তি কেঁপে উঠল।
তৃপ্তি:আমি যেতাম না কিন্তু (থেমে যায়)
রিশি:কিন্তু কী?
তৃপ্তি:কিছু না
রিশি:বলো(ধমক দিয়ে)
তৃপ্তি:আসলে তুমি ওই দিন কলেজে আসোনি। আমাকে একবার ফোনও করোনি। তাই আমার খারাপ লেগেছিল তাই সামিরের সাথে বেরিয়ে ছিলাম কিন্তু ইচ্ছে করে সামিরের হাত ধরিনি আমি। ও কথার মাঝে হঠাৎই ধরে বসেছিল। তারপর আমারও এই জিনিসটা খারাপ লাগে তাই আমি ওকে নানা অজুহাত দেখিয়ে তখন চলে আসি।

রিশি এতক্ষণ তৃপ্তির কথা অবাক হয়ে শুনছিল।তৃপ্তি তারওপর অভিমান করে এগুলো করেছে? তার যে একদমই বিশ্বাস হচ্ছে না। এতো কিসের অভিমান তার ওপরে তৃপ্তির? সেদিন সে তৃপ্তিকে ফোন দিতে চেয়েছিল কিন্তু বাবা সামনে থাকায় নীলকে ফোন দিয়েছে। পরে আর সময় পায়নি তাই আর তৃপ্তিকে জানাতে পারেনি।মেয়েটা এই জন্য তার সঙ্গে অভিমান করে আছে। রিশির সত্যিই এখন খারাপ লাগছে। শুধু শুধু তৃপ্তিকে ভুল বুঝে কতো কিছু বললো।

রিশি:তোতাপাখি, রাগ করো না প্লিজ।আসলে ওইদিন বাবা সামনে থাকায় তোমাকে কল দিতে পারিনি। পরেও আর সময় পাইনি।
আই এম ফেরি ফেরি সরি তোমাকে এই দুদিন অনেক কষ্ট দিয়েছি।প্লিজ মাফ করে দেও।

তোতাপাখি ডাকটা শুনেই তৃপ্তির বুকের ভেতর কেমন মোচড় দিয়ে উঠল।
তৃপ্তি:আচ্ছা এভাবে বলতে হবে না। ভুল তো আমিও করেছি।তোমার সুবিধা-অসুবিধা না জেনেই রাগ করে বসে আছি।যাক গে এখন এসব বাদ দেও। আর ভালো লাগছে না।

রিশি:হুম

রিশি খেয়াল করলো তৃপ্তির চোখমুখ কেমন লাল হয়ে আছে। আর বারবার হাঁচি দিচ্ছে তৃপ্তি।

রিশি:তৃপ্তি তুমি কী ঠিক আছো? কোথাও অসুবিধা হচ্ছে?

তৃপ্তি:আমি ঠিক আছি।বৃষ্টির পানিতে আমার এলার্জি হয়ে যায়। তাই এমন হচ্ছে। তুমি টেনশন নিও না।

রিশি:আর উই সিওর কোনো প্রবলেম হবে না?

তৃপ্তি:ইয়েস আই এম

রিশি:ওকে,তবে চলো বেলকনিতে বসে কথা বলি।

দুজনে এভাবে বিকেল পর্যন্ত ছিল। তারপর তৃপ্তির কাপড় শোকানোর পর রিশি তৃপ্তিকে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে সেও বাড়ি চলে গেল।

_________

শার্ট কেঁচে ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা তনিমার। মনে হচ্ছে শার্ট না ও আস্ত কাব্যকেই কেঁচে বেরিয়েছে।
শার্টটা নিয়ে কাব্যের ঘরে গিয়ে দেখে কাব্য নেই তাই ও সোজা বেলকনিতে চলে যায় শার্ট নেড়ে দেওয়ার জন্য।
বেলকনির দরজার কাছে দাঁড়িয়েই তনিমা শার্টটা জোরে ঝাড়া দেয়। শার্টের সব পানি গিয়ে পরে কাব্যর গাঁয়ে।আসলে কাব্য বেলকনির কোনায় বসে ফোন টিপছিল তাই তনিমা কাব্যকে দেখতে পায়নি।
শার্টের পানি কাব্যর গাঁয়ের সাথে সাথে ফোনেও পরেছে। কাব্য তো এক চিৎকার করে উঠে তনিমার দিকে রেগে তাকিয়ে আছে।

তনিমা সেই অবাক কাব্যকে দেখে। সাথে সাথে ভয়ও পাচ্ছে। কাব্য যে রেগেছে না জানি এবার তার কপালে কী আছে?

_________

রিশান গাড়ি পার্ক করল একটি পর্যটন কেন্দ্রের সামনে। এখান থেকে পাহাড়ী ভাষায় পারদর্শী
একজনকে সাথে নিয়ে তারপর এলাকা ভ্রমণে যাবে।কারন রিশান তনয়া কেউই পাহাড়ি ভাষা বুঝতে পারবে না তাই একজনকে নিতে হবে। তাদের ইচ্ছেমতো একজনকে পেয়েও গেল।তারপর তাকে সাথে করেই তারা পাহাড়ি এলাকা ভ্রমণে বের হলো।

_________

কাব্য রেগে গিয়ে তনিমার কাছে আসছিল আর শার্টের পানি নিচেও পরাতে সেই পানিতে পা পিছলে কাব্য একেবারে তনিমাকে নিয়ে মেঝেতে পরে যায়। তনিমা তো ওরেহহহ মা বলে একটা চিৎকার দেয়। তার কোমড়টা বোধহয় ভেঙেই গেল।কারণ কাব্য পরেছে তো পরেছে একেবারে তনিমার ওপরে পরেছে। আর তনিমা কাব্যের নিচে। তারপর দুজনে অনেক কষ্ট করে উঠে এখন চুপচাপ বিছানায় বসে আছে।
তনিমা কোমড়ে খুব ব্যথা পেয়েছে। কোমড় একদমই নাড়াতে পারছে না। আর কাব্য পেয়েছে পাঁয়ে ব্যথা।

কাব্য:সব তোমার জন্য হয়েছে এখন থাকো এখানে বসে। আমি চললাম

তনিমা:তো যান না দেখি ভাঙা পা নিয়ে কীভাবে যেতে পারেন।

কাব্য:দেখবে আচ্ছা দেখ।
এই বলে কাব্য খুড়িয়ে খুড়িয়ে দরজা পর্যন্ত গিয়ে তনিমার দিকে ফিরে বললো এবার এখানে থাকো একা একা। এখানে কিন্তু ভুতও আছে। সন্ধ্যা হলেই ভুতের উপদ্রব বারে। কাউকে যদি একা পায় তাহলে তো কথাই নেই।তার ওপর তোমার মতো ডিজিটাল ইস্টুপিটকে পেলে দেখা গেল বিয়ে ও করে নিয়ে যেতে পারে।

আচ্ছা যাই হোক হেপি ম্যারিড লাইফ গুড বাই
এই বলে কাব্য দরজা ঠাস করে লাগিয়ে চলে যেতে লাগল।

আর তনিমা নাহহহহহহ বলে এক দৌড় দিতে নিলে কোমরে অনেক জোরে টান খায়।সাথে সাথে আবার বিছানায় পরে যন্ত্রনায় চেঁচাতে থাকে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here