প্রণয়ের_পরনতি পর্ব ১০

#প্রণয়ের_পরিণতি
#লেখিকা_সাদিয়া_আফরিন_নিশি
#পর্ব_১০

প্রবহমান নদীর তীরে বসে আছে তৃপ্তি। তার মনটা আজ একদমই ভালো নেই। আগেরদিন যখন সবাই মিলে এই জায়গাটায় এসেছিল তখন কতই না মজা হয়েছিল। আলাদা রকম ভালো লাগা কাজ করছিল মনে। আর আজ সে একা এসেছে এখানে। অশান্ত মনটাকে নদীর ঢেউয়ের স্রোতের টানে একটু শান্ত করতে।

নীল, ইতু,নীতি কেউই আজ কলেজে আসেনি। আর রিশি তো একবারের জন্যও তৃপ্তির সামনে আসেনি। একবার তৃপ্তির সামনে পড়ায় তৃপ্তি তার কাছে গিয়েছিলো কিন্তু সে এক মুহুর্ত আর সেখানে দাড়ায় নি।সোজা কলেজ থেকে বেরিয়ে গেছে।
রিশির এহেন আচরণের কারণ তৃপ্তির অজানা। সেই থেকেই তার মনটা খুব খারাপ লাগছে। সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না রিশি কেন এমন করছে তার সাথে।

ওদিকে কলেজ থেকে বেরনোর সময় তৃপ্তির ক্লাসমেট রিনি এসে তাকে বলেছে কে যেন কাল রাতে সামিরকে খুব মেরেছে। ডান হাতটা একদম ভেঙে দিয়েছে। এটা শুনে তৃপ্তির আরো খারাপ লাগল।কে করল এমন?

এসব ভাবনা মাথা থেকে বের করতেই তৃপ্তি এখানে এসেছে। কিন্তু কিছুতেই কোনো লাভ হচ্ছে না। সামিরের ভাবনা ততটা না আসলেও তৃপ্তির মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরছে।রিশি কেন তার সাথে এমন বিহেভ করল?

এসব ভাবতে ভাবতে একসময় তৃপ্তি মন স্থির করলো সে রিশিকে ফোন করবে।যেই ভাবা সেই কাজ তৃপ্তি রিশির নাম্বারে ডায়াল করলো।কিন্তু রিশির ফোন বারবার শুধু সুইচড অফ বলছে।
এবার তৃপ্তির খুব করে কান্না করতে ইচ্ছে করল।কেন তার এতো মন খারাপ হচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না। তৃপ্তি আর কীছু না ভাবতে পেরে এবার কেঁদেই দিল।একা একা বসে ঠোঁট ফুলিয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগল।একসময় তৃপ্তির কান্নার সাথে তাল মিলিয়ে আকাশও কেঁদে উঠল।ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল।তৃপ্তি সেভাবেই বসে রইল।তার চোখের জল আর বৃষ্টি জল মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে লাগল।

রিশি বেলকনিতে বিন-ব্যানে বসে বসে সিগারেটে টান দিচ্ছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছে। তৃপ্তির সাথে এমন ব্যবহার করে সে মোটেও ভালো নেই। একটার পর একটা সিগারেট শেষ করে চলেছে। হঠাৎ তার কেমন জানি আগের দিনে তৃপ্তির সাথে ঘুরতে যাওয়া ওই নদীর তীরের কথা মনে পড়ল।খুব করে টানল ওই নদীটি তাকে।কেন জানি বারবার মনে হতে লাগল ওখানে তার খুব মুল্যবান কিছু তাকে খুব করে ডাকছে।

সে আর এক মুহুর্ত দেড়ি করল না। গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেল এই বৃষ্টি ভেজা শহরে অজানা কিছুর খোঁজে।

গাড়ি থেকে নেমে রিশি দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তার সেই কাঙ্খিত জায়গায়। দেখা গেল দুরে দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে মুখ করে বৃষ্টিতে ভিজে চলেছে একটি মেয়ে।

রিশি আস্তে আস্তে হেঁটে এগোতে লাগল। প্রায় মেয়েটির কাছাকাছি যখন এলো তখন রিশি বুঝতে পারল মেয়েটি হয়তো কাঁদছে। ফোপাঁনোর জন্য তার শরীর একটু পরপর কেঁপে উঠছে। নাকের ডগা লাল হয়ে আছে। পরনের সাদা কলেজ ড্রেসটা ভিজে একাকার হয়ে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।

মেয়েটি এখনো সেভাবেই চোখ বন্ধ করে কেঁদে চলেছে।তাকালে হয়তো দেখতে পেতো তার সামনে তার কাঙ্খিত মানুষটি খুব আকুতি নিয়ে তাকে দেখে যাচ্ছে।

রিশির মনে প্রশ্ন জাগল, মেয়েটি এভাবে কাঁদছে কেন? সকালে তো বেশ ভালোই ছিল। তাহলে কী আমার কথায় কাঁদছে?আমার কথায় কেন কাঁদবে? আমি তো তাকে কিছুই বলি নি।শুধু ইগনোর করেছি। এতেই এতো কষ্ট পেতে হবে কেন?আমি কে তার? সে কেন আমার ইগনোরেন্স নিতে পারছে না? আর এতোই যদি আমার কথা ভাবে তাহলে আমার কথা উপেক্ষা করে ওই ছেলেটির সাথে কেন গেল? আর কেনই বা ওই ছেলেটির সাথে হাত ধরে বসে ছিল?

ছেলেটিও মেয়েটির সাথে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হলো।অনেকক্ষণ কাটল এভাবে। তারপর ছেলেটি তার বৃষ্টি সিক্ত কাঁপাকাঁপা হাত দুটি বাড়িয়ে দিল মেয়েটির মুখ পানে।
কারোর স্পর্শে ধরফরিয়ে চোখ খুললো মেয়েটি।সামনের মানুষটিকে দেখে খুশি হলো সাথে অবাকও।এভাবে ছেলেটি তারদিকে তাকিয়ে আছে কেন আর এভাবেই বা তাকে ধরে আছে কেন? মেয়েটি বলতে চাইলো অনেক কিছু কিন্তু কিছুই বলতে পারলনা। দুজন দুজনের দিকে নিরব দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।
অনেক চাপা অভিমান চোখে চোখে প্রকাশিত হলো কিন্তু মুখে একটি কথাও হলো না।
হঠাৎ ছেলেটির নজরে এলো অতিরিক্ত ঠান্ডা বৃষ্টির পানিতে মেয়েটির কাঁপুনি ছুটেছে।
ততক্ষণাত ছেলেটি মেয়েটিকে কোলে তুলে নিল।মেয়েটি ছেলেটির এই কাজে আরও অবাক হলো। ছেলেটি কোনো দিক না তাকিয়ে মেয়েটিকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল।মেয়েটির মুখ দিয়ে আজ আর কোনো কথাই বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে মনে হয় বোবাই হয়ে গেছে।

গাড়ি চলছে আপনগতিতে।গাড়ির জানালা দিয়ে আসা বাতাসে মেয়েটির আরো বেশি ঠান্ডা লাগছে। কুড়িমুড়ি দিয়ে বসে জানালার বাহিরে তাকিয়ে আছে মেয়েটি।ছেলেটি সাথে সাথে মেয়েটির দিকে ঝুঁকে এলো।মেয়েটি এবার পুরোই গাড়ির সাথে লেপ্টে গেল।ছেলেটি একটু মৃদু হাসি দিয়ে জানালাটা লক করে দিয়ে আবার নিজের জায়গায় ফিরে গিয়ে ড্রাইভিংয়ে মন দিল।
মেয়েটি একটু লজ্জা পেল নিজের মনের উতভট চিন্তার জন্য। সাথে সাথে আবার রাগও হলো ছেলেটির ওপর সে কেন জানালা দিয়ে দিল?ভালোই তো লাগছিল বাহিরের দৃশ্য দেখতে। একটু শীত করলেও ঠিক ছিল।

_________

তনয়ারা আজ দেখতে যাবে পাহাড়ি এলাকা।তনয়ার খুব ইচ্ছে ছিল এইসব পাহাড়ি মানুষদের জীবন যাবন দেখার। আজ সেই ইচ্ছে পুরোন হবে ভাবতেই তার অনেক ভালো লাগছে। কাল আবার তারা ঢাকা ব্যাক করবে।আরও একদিন এখানে থাকার কথা ছিল কিন্তু কাব্যর কিছু কাজ পরে যাওয়ায় কালই ওদের ফিরতে হবে।

রিশানের সাথে তনিমার খুব ভাব হয়ে গেছে। তনিমা রিশানকে ভাইয়া বলেই ডাকে এখন। আর তনয়াও কাব্যকে ভাইয়া বলে ডাকতো তবে কাব্য বলেছে নাম ধরেই ডাকতে। তাই সে কাব্যকে নাম ধরেই ডাকে। কিন্তু দুবোন তাদের বসকে স্যার বলেই সম্বোধন করে।

বেড়নোর আগেই ঘটে গেল এক বিপত্তি। রিশানকে কফি এগিয়ে দিতে গিয়ে তনিমা সব কফি ফেলে দিলো কাব্যের গাঁয়ে।সেই নিয়ে তো কাব্য সেই রেগে গেছে। সে প্রপার রেডি হয়ে এসেছিল এখন তাকে আবার রেডি হতে হবে। তাছাড়া তার প্রিয় শার্টটাও তো কফির দাগ হয়ে গেল।

কাব্য:এই মেয়ে এটা তুমি কী করলে? আমি কত কষ্ট করে রেডি হয়ে আসলাম আর তুমি আমার এই কী হাল করলে?

তনিমা:ও মা রেডি হতে অনেক কষ্ট হয়েছে? হ্যাঁ হ্যাঁ তা তো হবেই
নতুন বউদের মতো সাজলে তো রেডি হতে কষ্ট হবেই(ব্যঙ্গ করে)

কাব্য:নতুন বউ মানে কী বলতে চাইছ তুমি?

তনিমা:ন্যাকা, এখন আর কিছুই বুঝেনা।
বলছি যে নতুন বউদের মতো না সাজলে আপনার এতো কষ্ট হলো কেন শুনি?
লএকটু তো কফিই পরেছে শার্টে।শার্টটা চেঞ্জ করে এলেই তো হলো তাতে এতো রাগার কী আছে শুনি?

কাব্য:রাগার কিছু নেই মানে?আমার কতো শখের শার্ট এটা তুমি জানো?
এখনই এটা কেঁচে পরিষ্কার করে দেবে।নয়তো তোমাকে বেড়াতে যেতে দিবো না।

তনিমা:কিহ আমি পারব না। আপনার শার্ট আপনি কেচে নিন হুহহহহ

কাব্য:তুমি দিবে তোমার ঘাঁড়ও দিবে ফাজিল মেয়ে

তনিমা:ইস আমার ঘাঁড় কেন দিবে। আমার হাত হলেও একটা কথা ছিল কিন্তু ঘাঁড় না না না না এটা হবে না। আমার ঘাঁড় কিছুতেই আপনার শার্ট পরিষ্কার করবে না।

কাব্য:Shut up, আসলেই তুমি একটা স্টুপিড।
নাও এখন কথা কম বলে শার্টটা কেঁচে দেও।
তনয়া এটা যে তোমার বোন আমার তা একদমই বিশ্বাস হয় না। তুমি কতো পরিপাটি আর এ আস্ত একটা গাঁধা। ঝগড়া ছাড়া কিছুই জানেনা।

তনিমা:এটাও ভুল কথা গাঁধা নয় গাঁধি হবে। তবে আমি গাঁধি নই।আমি যে কী তা আপনাকে সময় হলে বুঝিয়ে দিবো।

তনয়া:তনি তুই প্লিজ চুপ কর। এসব কী বলছিস তুই। মাথাটা কী পুরোই গেছে।
আচ্ছা বাদ দে এসব এখন চল

কাব্য:নাননননননা ও কোথাও যাবে না। আগে আমার শার্ট পরিষ্কার করবে তারপর প্রয়োজন হলে ওকে আমি নিয়ে যাবো।

তনয়া রিশান তোরা চলে যা। আমি একে নিয়ে একটু পর আসছি।

রিশান তনয়া অনেক বোঝানোর পরও কাব্য ওদের কথা শুনল না।
তাই বাধ্য হয়ে রিশান আর তনয়াকে চলে যেতে হলো।তনয়া অবশ্য চেয়েছিল একেবারে তনিমাকে নিয়ে যাবে কিন্তু তনিমা তাকে জোর করে পাঠিয়ে দিল।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here