প্রেম_প্রাঙ্গণ পর্ব ১

–ইউ আর কিডন্যাপড মিস!

কথাটুকু শুনেই মুহূর্তের মাঝে রন্ধ্রে রন্ধ্রে কম্পন সৃষ্টি হয়ে গেল প্রেমের,শরীর ঝাকি দিয়ে উঠল কয়েকবার,শিরা-উপশিরায় যেন এক ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল!নিজেকে এখন কোনো হিন্দি ফিল্মের নায়িকা মনে হচ্ছে তার।আচ্ছা শুধু কি ফিল্মেই এমন হয়?নাকি বাস্তবেও হয়?হয়তো হয়।নাহলে আজ এদিকে হাত-পা,মুখ বাধা অবস্থায় পড়ে থাকত না প্রেম।বাড়ির সবার কথা মনে পড়ছে এমনকি তাদের জন্য কষ্ট লাগছে।হয়তো বাড়ির সকলেই এতক্ষনে তাকে খোজা আরম্ভ করে দিয়েছে।নিজেকে আজকে অনেক অদ্ভুত মনে হচ্ছে তার!শেষে কীনা সে কিডনাপ হয়েছে?

এদিকে সামনের ব্যাক্তি অনবরত সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়েই যাচ্ছে।ঘরে একটি জানালাও নেই;শুধু একটি দরজা আছে তাও আবার আটকানো। মাথার উপর একটা হলুদ রঙের বাল্ব জ্বলছে যা পুরো ঘরটাকে আলোকিত করে রেখেছে।সামনের ব্যাক্তির চেহারা ভালোভাবে দেখতেও পারছে না প্রেম।কার এমন শত্রুতা তার সাথে?তাও আবার একটা ছেলে?গলার স্বর শুনে আপাতত তাই-ই বুঝতে পারল যে সামনে থাকা ব্যাক্তি একজন পুরুষ বা ছেলে।ঘরে বাল্বের আলোর পাশাপাশি ধোঁয়া আর সিগারেটের আসঁটে গন্ধ বের হয়েছে।প্রেমের মুখ এমনেতেই বাধা তার উপর সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধে শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।

–পানি লাগবে মিস?

সামনের ব্যাক্তির মুখের কথা শেষ হতে না হতে মাথা উপরনিচ করে সায় দেয় প্রেম।হ্যা,তার পানির প্রয়োজন এখন,ভীষণ প্রয়োজন।মা আগে পানি খেতে বলত কিন্তু দিনে ৪ বারের বেশী আর পানি খেত না প্রেম কিন্তু আজকে বুঝতে পারছে পানি ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না।তাই তো বলে “পানির অপর নাম জীবন”। পানির কথা মনে পড়তেই মায়ের কথা মনে পড়ে যায় প্রেমের।এবার প্রেমের চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।মায়ের কথা শুনে যদি বাড়ি থেকে বের না হতো তাহে হয়তো আজকে তার এ দশা হতো না।

–উহু মিস,কাদঁছেন কেন?এখন তো সবে শুরু।আরো সময় আছে কাঁদার। তখন না হয় কাদঁবেন।

প্রেম থমকে গেল!কিডনাপারদের গলার স্বর এমন হয় নাকি?ভাবছে প্রেম।এত সুন্দর করে কেউ হুমকি দেয় প্রেমের আগে জানা ছিল না।কিছুটা আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে লোকটাকে তবু সে আন্দাজ করতে পারছে না ছেলেটার বয়স কত হতে পারে।কিন্তু গলার স্বর শুনে এতটুকু মনে হয় কিডনাপার কোনো ছেলে।প্রেমের খুদায় পেট চু চু করছে!কিন্তু বলতে পারছে না।এদের উপর আবার প্রেমের বিন্দু মাত্র বিশ্বাস নেই;কখন খাবারের সাথে কি মিশিয়ে দেয় বলা যায় না।লোকটা আস্তে আস্তে ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেল।প্রেমের ভয় করলেও এখন হাফ ছেড়ে বাচঁল।বলা তো আর যায় না লোকটাকে কখন কি করে ফেলে তার সাথে।

~~

প্রেম এহসান!বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। এহসান সাহেবের স্ত্রী প্রিয়ার তিনবার গর্ভপাতের পর তার মেয়ে প্রেমের জন্ম হয়।তাই প্রেমের বাবা প্রেমকে ভীষণ ভালোবাসেন!প্রিয়তমার নামের সাথে মিলিয়ে মেয়ের নাম প্রেমা রেখেছিলেন এহসান সাহেব কিন্তু সার্টিফিকেটে মেয়ের নামের “আকার” বাদ পড়ে যায় আর সেই থেকেই তার মেয়ের নাম প্রেম হয়ে উঠে।এহসান সাহেব একজন নামকরা বিচারক যাকে জাজ বলা যায়।মেয়েকে নিজের সবটুকু দিয়ে ভালো রাখার চেষ্টা করেন তিনি;কখনো মেয়ের চাহিদাকে অপূর্ণ রাখেননি।হয়তো এমনই হয় সব বাবারা….

সকাল সকাল প্রেম উঠে পড়ে কলেজে যাওয়ার জন্য।তেমন কোনো কাজ ছিলনা;রেগ ডে’র ফাংশন থাকায় সে রেডি হয়ে বের হচ্ছিল এমন সময় তার রুমে তার মায়ের আগমন হয়।সকাল থেকেই বাইরে হরতাল!নানা অচেনা মানুষের যাতায়াত!তার মধ্যে মেয়েকে তিনি বাইরে বেরই হতে দিবেনা তাও আবার একা!তাই প্রেমকে সাবধান করতে ও বাইরে যেতে নিষেধ করতে এসেছিল কিন্তু প্রেম শেষ-মেষ জোর জবরদস্তি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।আর রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কোথা থেকে এক মাইক্রো এসে তুলে নিয়ে গেল প্রেমকে।যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করে আর সামনে কালো ছায়া,মূলত একজন ব্যাক্তি।প্রেম বুঝতে না পারায় তাকে যখন প্রশ্ন করল তখন সে এই কথাই বলল

প্রেমের ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটে যখন দরজা খোলায় ক্যাচ্ করে শব্দ হয়।প্রেম সামনে তাকায় কিন্তু বাইরের অতিরিক্ত আলোর জন্য তাকাতে কষ্ট হচ্ছে।যতটুকু বুঝল কেউ একজন ঘরে ঢুকেছে।লোকটি ঢোকার সাথে সাথেই দরজা লাগিয়ে দিল।প্রেমের এবার ভয় হচ্ছে;ছেলেটি যদি এখন কিছু করেও তাহলে সে নিজেকে বাচাতে পারবে না কারণ হাত-পা এখন তার বাধা।ছেলেটি কাছে আসে,আলোয় চেহারা দেখা যাচ্ছে।দেখতে সুদর্শন!বেশ লম্বাও!

–এই যে মিস,আপনার খাবার।

প্রেম শুনে!গলার স্বর এক নয় আগেরজনের আর এখন যে ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে তার।তাহলে কি অন্য ছেলে?

–আমি যতটুকু জানি আপনি কথা বলতে পারেন,এম আই রাইট মিস?

প্রেম বিরক্ত!ছেলেগুলো তাকে কথায় কথায় মিস বলছে।যাকে কিডনাপ করেছে তার নামই জানে না?প্রেম এবার মোচড়ানো শুরু করে।মুখ বাধা তাই কথা বলতে পারছে না কেবল গোঙানি দিচ্ছে।ছেলেটি ব্যাতি ব্যস্ত হয়!

–আরেহ আরেহ মিস,কি করছেন আপনি?এই ওয়েট করুন আপনার মুখটা খুলে দিচ্ছি।

ছেলেটি প্রেমের মুখ খুলে দেয়।প্রেম এবার গড়্গড় করে বলা শুরু করে

–সমস্যা কি আপনাদের?আমাকে এভাবে তুলে এনে বেধে রেখেছেন কেন?জানেন আমি কার মেয়ে?বাবাই জানলে আপনাদের একেক জনের যে কি অবস্থা হবে আপনারা নিজেরাও জানেন না।

–তোমার বাবা-ই সব নষ্টের মূল(ফিসফিস করে বলল ছেলেটি)

— কি বললেন?(প্রেম বুঝতে না পারায় জিজ্ঞেস করল)

–আব তেমন কিছু না।বাই দ্যা ওয়ে,তুমি এমন মাছের মতো লাফাচ্ছো কেন?

প্রেম ছেলেটির কথা শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে।তাকে এভাবে বেধে রেখে আবার তাকেই জিজ্ঞেস করছে এমন লাফাচ্ছে কেন?

–আপনারা আমাকে এভাবে বেধে রাখবেন আর কথায় কথায় মিস মিস করবেন আর আমি চুপচাপ বসে বসে আপনাদের কথা গিলব নাকি?

–ওহ সরি মিস,আসলে আপনার নামটাই তো জানা হয় নি।

–আমি প্রেম,প্রেম এহসান।(ছেলেটির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে উত্তর দিল)

–আর আমি সাহিল,সাহিল তালুকদার।

–আমি কি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি?

সাহিল এবার বোকা বনে যায়।আসলেই তো,প্রেম তো জিজ্ঞেসই করে নি তার নাম কিন্তু সে তো ফরমালিটির খাতিরে বলেছিল।সাহিল গলা ঝেড়ে নিল

–কেন আমার নামটা কি সুন্দর না?

প্রেম সচেতন চোখে তাকায়।সাহিল!নামটা খারাপ না তবে এখন ভালোও বলা যাবে না।তা না হলে এই ছেলে হয়তো তার মাথায় উঠে যাবে।

–হুম হুম ভালোই।একটা কথা বলুন তো আমাকে।এই ভাবে তুলে এনেছেন কেন আমায়?আপনাদের সাথে কি আমার কোনো শত্রুতা আছে নাকি?

–তা তো আমি বলতে পারব না।যে আপনাকে এখানে এনেছে সেই জানে।

প্রেম আর কিছু বলে না।আসলে তার আর কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না।মাথা ব্যথা করছে,ঘুমুতে পারলে ভালো হতো।কিন্তু চেয়ারে বসে ঘুমাবে কি করে?আর কিছু না ভেবে মাথাটা এলিয়ে দিল চেয়ারে।এখন একটা ঘুম দিতে হবে!একদম গভীর ঘুম!

~~
–কি করছে মেয়েটি সাহিল?

সাহিল সামনে তাকায়!হাতের মোবাইলটি তাড়াহুড়ো করে রেখে দেয়।আর সময় হলো না প্রাঙ্গণের আসার?কি সুন্দর আরেকটুর জন্য আজকের চিকেন ডিনারটা মিস হয়ে গেল তার।সাহিল জানত এমন কিছুই হবে।তার সাথে প্রাঙ্গণ সবসময়ই এমন করে আজ আর তেমন কি?সাহিল সোজা হয়ে বসে দায়সারাভাবে জবাব দেয়

–মেয়েটি ঘুমে ঢুলুঢুলু।

প্রাঙ্গণ হুট করেই রাগী চোখে তাকায় সাহিলের দিকে।যত যাই হোক না কেন সাহিল প্রাঙ্গণের এই দৃষ্টিকে ভয় পায়;ভীষণ রকমের ভয় পায়।সাহিল একটু নড়েচড়ে বসে গলা ঝেরে নেয়

–আসলে মেয়েটি মনে হয় ঘুমায়নি তাই দেখলাম কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গেছে।আমি আর ডাক দেই নি;বেচারীকে শুধু শুধু কেন ডিস্টার্ব করব বল?

প্রাঙ্গণ আর কিছু বলে না।এখন বেশী কিছু বললে সাহিল আবার বাংলা ছবির নায়িকাদের মতো ইমোশনাল হয়ে যাবে।লাইটার দিয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বাইরের দিকে হাটা ধরল প্রাঙ্গণ।উদ্দেশ্য লার্জ সিটি কোম্পানি!

চলবে……….

‘প্রেম_প্রাঙ্গণ’🍂
সূচনা পর্ব
লেখাঃসুনেহরা শামস

(আসসালামু আলাইকুম।নতুন গল্প নিয়ে আবার হাজির হলাম।প্রথম পর্ব সম্পর্কে একলাইনের মন্তব্য করে যাবেন।

ধন্যবাদ❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here