প্রেম_প্রাঙ্গণ পর্ব ২

‘প্রেম প্রাঙ্গণ’🍂
পর্ব-০২
লেখাঃসুনেহরা শামস
.
.
চেয়ারে বাধা অবস্থায় বসে বসে ঝিমুচ্ছে প্রেম,তার পাশেই গালে হাত দিয়ে বসে আছে সাহিল।প্রেমের ঝিমানোরও কারণ আছে।আগামীকাল যখন ঘুমিয়ে ছিল,বলা যায় একদম গভীর ঘুমে ছিল তখনই তার মনে হচ্ছিল কনকনে ঠান্ডা তরল কিছু তার মাথা বেয়ে পড়ছে।সাথে সাথেই চোখ মেলে তাকায় প্রেম!তাকানোর পরই যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খায় সে।সামনে কেউ দাড়িয়ে তার উপর পানি ঢালছে,প্রেম এবার মোচড়ানো শুরু করে।কিন্তু মোচড়ানোর পর যেন শীত তাকে জড়িয়ে ধরেছে আষ্টেপৃষ্টে।শীতে এবার কাপুনি উঠে যায় প্রেমের!এদিকে যে পানি ঢেলেছিল সে অল্প মুহূর্তের মাঝেই ঘর থেকে বের হয়ে যায়।এদিকে প্রেমের কাপুনির চোটে ঘুম চোখ থেকে উধাও!

আগের কথাগুলো ভেবে এখন আবার চোখের থেকে ঘুম ছুটে যায় প্রেমের,সোজা হয়ে বসে সে।কি ভয়ানক লোক!কিডনাপ করে কিভাবে তিলে তিলে কষ্ট দিতে হয় তা ভালোভাবেই জানে এই লোক।ভাবতে ভাবতে চোখ যায় সামনে গালে হাত দিয়ে বসা সাহিলের দিকে যে এখন ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে প্রেমের দিকে।প্রেম একটু নড়েচড়ে বসে,এভাবে চেয়ে থাকার মানে কি?সে কী ভিন্ন কোনো দেশের প্রানী নাকি এলিয়েন যে এভাবে চেয়ে থাকবে?আজব!প্রেম ডাকে সাহিলকে কিন্তু সাহিলের কোনো সাড়া শব্দ পেল না।প্রেম এবার একটু টেনে টুনে কাছে যায় সাহিলের আর হুট করে কানের সামনে গিয়ে চিৎকার দেয়।হুট করে চিৎকার দেওয়ায় সাহিল হুড়মুড় করে দাঁড়িয়ে যায় আর বুকে থু থু দিতে থাকে।খিলখিল হাসির শব্দে নিচের দিকে তাকায় সাহিল।দেখে প্রেম একাধারে খিলখিলিয়ে হেসেই যাচ্ছে।সাহিল দেখে!একদম ভালোভাবে দেখে!হাসিটা অন্যরকম,একটু ভিন্ন সবার হাসি থেকে।ভালোলাগে সাহিলের,তার মুখেও ফুটে উঠে এক চিলতে হাসি!

~~
চারিদিকে রক্তের দাগ!দুটো লাশ মাটিতে পড়ে আছে!সবকিছু একদম নিস্তব্ধ!ঝিঝি পোকার শব্দ পরিবেশটাকে আরো ভয়ানক করে তুলেছে।টেবিলের উপর থাকা রুমাল দিয়ে ভালোভাবে হাত মুছে নিল প্রাঙ্গণ।কেউ মারা গেলেই তার দেহ লাশে পরিনত হয়,ঠিক তেমনি এই মানুষগুলোও ১৭ মিনিট আগে জীবিত ছিল।আর এখন তারা মৃত লাশ!মূলত তাদেরকে মারা হয়েছে।আর এই মার্ডার হয়েছে প্রাঙ্গণের হাতে,একদম সূক্ষ্মতম ভাবে খুন করেছে প্রাঙ্গণ।লাশ দুটোর পরিচয় লার্জ সিটি কোম্পানির মালিক আর তার পার্টনার,তাদের এই মৃত্যু দেখে এদিকে হাত-পা কাপছে মুহিব সাহেবের।এমন চোখের সামনে দুটো মানুষ এর নির্মম মৃত্যু যে কেউ দেখলেই তার হাত-পা কাপবে।মুহিব সাহেবেরও একি অবস্থা!পরিচয়ে মুহিব সাহেব প্রাঙ্গণের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট।কিন্তু প্রাঙ্গণের মতো নন।একদম চুপচাপ বলে যাকে!কিন্তু প্রাঙ্গনকে তিনি নিজের আইডল ভাবেন।এমন ড্যাসিং,পারফেক্ট ম্যাচো ম্যান এজীবনে তিনি কমই দেখেছেন।তার মতো হতে তো যে কেউই চাইবে।তিনিও তার ব্যাতিক্রম না তবে তার এই ড্যাসিং হওয়ায় সবচেয়ে বড় বাধা তার বুকের নিচে অবস্থিত তার মোটা ভুড়ি।এই নিয়ে অনেক আফসোসও করেন মুহিব।কেন যে তাকে সৃষ্টিকর্তা এত বড় একটা ভুড়ি দিল সে বুঝে না।আজকে যদি ভুড়ি না থাকত তাহলে সে-ও প্রাঙ্গণের মতোই দেখতে হতো।

–এভাবে দাঁড়িয়েই থাকবে নাকি লাশ দুটোর ব্যবস্থা করবে তুমি?

প্রাঙ্গণের গাম্ভীর্য মেশানো কথায় মুহিব নিজের ভাবনা থেকে ফিরে আসে।নিজের গায়ে হাত দেয়,এখনো ঠান্ডা হয়ে আছে,থরথর করে কাপছে!এখনই এভাবে কাপছে,না জানি লাশগুলোকে ছুতে গেলে তার কি অবস্থা হবে।মুহিব আগায় আবার পিছায়,আগায় সামনের দিকে আবার পিছায়।প্রাঙ্গণ টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখে,বুঝেও!মাঝে মাঝে ভাবে ,কাদেরকে নিজের আগে পিছে রাখে সে?

~~
ভীষণ রকমের বোর হচ্ছে প্রেম।এতক্ষন তো তার সাথে কথা বলার সাথী হিসেবে সাহিল ছিল কিন্তু কারো কল আসায় সাহিলও হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে যায়।চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে সবকিছু প্রেম।ঘরটায় তেমন কিছুই নেই,মনে হচ্ছে কোনো গুদামে তাকে বেধে রেখেছে।ভালোলাগছে না প্রেমের একদম,এখন কয়টা বাজে বলতেও পারবে না প্রেম।সাহিলকে অনেকবার কৌশলে জিজ্ঞাসাও করেছিল তাকে কেন কিডনাপ করে এদিকে বেধে রাখা হয়েছে কিন্তু সাহিলের একই জবাব,,

–যে তোমাকে এখানে এনেছে সেই জানে,আমি কি জানি?

প্রেম নিজের গত ১৮ বছরের কথা ভাবে।কার কার সাথে তার ঝগড়া হয়েছে,কার সাথে তার চরম শত্রুতা রয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতেই হুট করে ক্যাচ করে শব্দ হয়,মাথা ঘুরে তাকায় প্রেম।কেউ একজন ভেতরে আসছে!প্রেম ভালোমতো লক্ষ্য করে,ছেলেটার হাটার স্টাইল সম্পুর্ন আলাদা।

লোকটা ভেতরে আসে,দরজা লাগিয়ে দেয়,হাটতে থাকে।এদিকে ঘর পুরো নিস্তব্ধ,শুধু লোকটার জুতার কটকট আওয়াজ হচ্ছে।সে সাথে প্রেমের বুকও সমানতালে ধকধক করছে।লোকটা কাছে আসে,আরো কাছে আসে,এবার লাইটের কাছে আসায় আবছা আলোয় কিছুটা দেখা যাচ্ছে।প্রেম একদৃষ্টে হতভম্ব হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।অতিরিক্ত মাত্রায় ফরসা,চুলগুলো সিল্কি তাই ঢেউ খেয়ে কপালে কিছু চুল পড়ে আছে,ঠোটগুলো চিকন আর বাম সাইডের ভ্রুতে দুইটা কাটা দাগ,চোখগুলো ব্রাউন কালার একদম আবছা আলোয় চোখদুটোই ফুটে উঠেছে।প্রেম ভাবে!এই ছেলেই তাকে এখানে বেধে রেখেছে,এমন ভদ্র হয়ে এমন অসভ্যদের মতো কাজ!প্রেম নাক ছিটকায়!এসব ভদ্র ছেলেদের তলে তলে যে এত অসভ্যতামী প্রেম জানতই না।বাবা ঠিকই বলত,যে ছেলেরা মাত্রাতিরিক্ত ভদ্র সাজে,তারাই একদম চরম বেয়াদব হয়।হুট করে প্রেমের ভয় হয়,ভীষণ ভয়!এই ছেলে যদি কিছু করে নিজেকে তখন বাচাবে কীভাবে?সাহিল নামের ছেলেটাও নেই যে তার থেকে সাহায্য চাইবে,অবশ্য সে তো এই ছেলেরই ডান হাত।সে-কী আদেও তাকে সাহায্য করবে?

–ভাবনা-চিন্তা শেষ মিস?

কানের কাছে কারো ফিসফিসানিতে শরীর ঝাকি দিয়ে উঠে প্রেমের।গলার স্বর সমধুর!একদম নেশা লাগানো যাকে বলে।এই বদ্ধ নিস্তব্ধ ঘরে এমন নেশা লাগানো গলার স্বর!ভালোই লাগছে প্রেমের কাছে।কিন্তু এই ভালো লাগা এখন ভয়ের কাছে হার মানলো।কারণ ছেলেটি একদম তার কানের কাছে,দুইটি হাত তার চেয়ারের সাথে বাধা হাতের উপর।তীব্র সুগন্ধের ভয়ানক রকমের পারফিউম এর ঘ্রাণ নাকে আসে প্রেমের।প্রেম ভীতির চাহনি নিয়ে তাকায় সামনের দিকে,একদম তার মুখের কাছে প্রাঙ্গণের মুখ!চোখে চোখ পড়ে।প্রেম একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে চোখের দিকে।প্রাঙ্গণ বাকা হাসি দিয়ে প্রেমের ঘাড়ে হাত রাখে,মুহূর্তের মাঝে চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে যায় প্রেমের।এরপর একদম গভীর ঘুম!আর কিছু মনে নেই!কিছুই না!

চলবে…….

[সরি ফর বিইং লেট!কেমন হয়েছে জানাবেন।নাইস/নেক্সট না বলে ছোট একটা মন্তব্য ছেড়ে যাবেন।মনে রাখবেন আপনার নেক্সট এর থেকে গল্প সম্পর্কে একলাইনের মন্তব্য লিখতে আরো বেশী অনুপ্রেরণা দেয়।

গুড নাইট।হেভ আ সেফ অ্যান্ড সাউন্ড স্লিপ❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here