#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_৩
#নিশাত_জাহান_নিশি
“আপনার গার্লফ্রেন্ড তো প্রেগনেন্ট তাই না? তার বাচ্চার বাপ তো আপনি। তা বিয়ে করবেন না তাকে? আপনার মাকে বুঝাবেন না? বড় গলায় বলবেন না? মা আমি বিয়ে করতে চাই?”
এই পর্যায়ে এসে নূর ভাইয়ার ছায়াটি অবধি চোখে পড়ল না আমার! মাতলামী ভুলে তিনি একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মতোই এক ছুটে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল! পিছু ফিরে তাকানোর প্রয়োজনটিও বোধ করল না। এই মুহূর্তে হয়তো তিনি শুধু এটিই ভাবছিলেন, “ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি!”
নিজেকে খালামণির কাছ থেকে বাঁচানোর জন্য কতোই না তৎপর তিনি। অথচ একটু আগেই নেশার ঘোরে যা নয় তা বলে নিজের দাপট দেখাচ্ছিল আমাদের! খালামণি এখনো তাজ্জব বনে ঘুরছে! কিছুক্ষণ পর পর নূর ভাইয়ার যাওয়ার পথে তাকাচ্ছে তো কিছুক্ষণ গলা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে! চক্ষুজোড়ায় প্রবল সন্দেহ, কৌতূহল এবং প্রশ্নের ছাপ! তবে ব্যাপক ঘোরে থাকার কারণে তিনি মুখ খুলে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারছে না আমাদের। খালামণির দ্বিধা-দ্বন্ধ দূর করার জন্য আমি গলা খাঁকিয়ে খালামণিকে শুধালাম,,
“কী হলো খালামণি? তুমি কী কিছু বলতে চাও আমাদের?”
খালামণি মুখ খুলল। বিভ্রান্তি দূর করার জন্য বড়ো বড়ো কয়েকটি শ্বাস নির্গত করে শুধাল,,
“এর আগেও কী কোথাও তোদের দেখা হয়েছিল চাঁদ? তোরা একে অপরকে চিনতিস?”
বাঁকা হাসলাম আমি! মনে মনে পণ করে নিলাম এখনই এই দুই ভাইয়ের ভাণ্ডা ফাঁস করব আমি! খালাতো ভাই হয়েছে তো কী হয়েছে? অন্যায় তো তারা অবশ্যই করেছে। রাত-বিরাতে নেশা করেছে। অন্যের গাড়ির সামনে এসে পড়েছে। ভাগ্যিস বড়ো সড়ো কোনো দুর্ঘটনা ঘটে নি! শুধু তাই নয় নেশার ঘোরে আমাকে, আপুকে এবং আমার পরিবারকেও আচ্ছে মতো ধুঁয়ে দিয়েছে! এর শাস্তি তো এদের পেতেই হবে। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে আমি যেই না গলা ঝাঁকিয়ে খালামণিকে সব বৃত্তান্ত এক এক করে খুলে বলতে যাব অমনি আপু আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিলো! আমার বাঁ হাতে সজোরে চিমটি কেটে দাঁতে দাঁত চেপে খালামণিকে বলল,,
“কী যে বলো না খালামণি? আমরা তাদের কোথায় দেখব? কোথায়-ই বা আমাদের দেখা হবে বলো? এই তো, এই প্রথম বারের মতো আমরা তাদের দেখলাম! পরিচিত হলাম! কথা বললাম! সত্যি বলছি খালামণি তাদের সাথে পরিচয় হয়ে ভীষণ ভালো লাগছে আমাদের?”
রেগে উঠলাম আমি! চোয়াল উঁচিয়ে শুধালাম,,
“এসব তুমি কী বলছ আপু? আমরা তো…
“চুপ কর। অনেক রাত হয়েছে, ঘুমাবি চল।”
আমার সাথে ধমকের স্বরে কথা বলে আপু অপর দিকে খালামণির দিকে তাকিয়ে সৌজন্যের হাসি হাসল! আমার হাত ধরে বাড়ির সদর দরজার দিকে গতিপথ নির্ধারণ করল। সামনে থেকে খালামণিকে ডেকে বলল,,
“চলে এসো খালামণি। অনেক রাত হয়েছে। তোমারও নিশ্চয়ই খুব ঘুম পেয়েছে। ঘুমাতে যাবে চলো।”
খালামণি এখনো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে! ঝটকা থেকে উঠে আসতে পারছে না বোধ হয়। এইদিকে আপু আমাকে টানতে টানতে আমাদের শোবার ঘরে চলে এলো। দরজার খিল আটকে আমাকে এক ঝটকায় বিছানার উপর ছুড়ে মারল! তেজী গলায় বলল,,
“তোকে আমি ওয়ার্ণ করছি চাঁদ। খালামণিকে নূর এবং নীড় ভাইয়ার সম্পর্কে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। দেখছিলি না? ওরা দুজনই কত ভয় পাচ্ছিল? কেমন ঘাবড়ে উঠছিল?”
“সো হোয়াট? ভয় পেলে বা ঘাবড়ে উঠলে আমার কী? ওরা যা করেছে তা কী অন্যায় নয়? নেশা-ভান করা কী অন্যায় নয়? এক্সিডেন্ট করতে যাওয়া কী অপরাধ নয়?”
“আমি বলছি না অপরাধ নয়। তবে এই বয়সটাতে সবাই-ই এমন টুকটাক ভুল করে থাকে। ছাড় দেওয়া উচিৎ। সব বিষয় নিয়ে এত মাতামাতি করা ঠিক নয়! তাছাড়া ওরা আমাদের খালাতো ভাই। সে হিসেবে সমঝোতা করাই উচিৎ। আর কোনো কথা বাড়াবি না তুই। এক্ষণি চুপটি করে ঘুমিয়ে পড়বি। আমি যা বলছি তাই শুনবি।”
মুখ ফুলিয়ে নিলাম আমি! আপু রেগে গেলে সাংঘাতিক ভয় পাই আমি! তাই বিড়াল ছানার মতো বিছানার এক পাশে নিজেকে গুটিয়ে শুয়ে পড়লাম। ভগ্ন গলায় বললাম,,
“নাদিয়া, সাদিয়া, রুহি, জায়মা এদের ছাড়া আমার ঘুম হয় না আপু!”
“হবে কীভাবে? একেকটা তো বদের হাড্ডি! সারা রাত এই দুষ্টুমি সেই দুষ্টুমি করেই তো একেক জন গোটা রাত কাটিয়ে দিস। চিন্তার কোনো কারণ নেই। ওরা চার-পাঁচ দিন পরেই আসছে। তোর দল ভারী করার জন্য! এখন চুপ করে ঘুমিয়ে পড়। আর একটা কথাও বলবি না।”
“আয়মন ভাইয়া, সাব্বির ভাইয়া ওরা আসবে না?”
“আসবে। সবাই আসবে। তবে অনেক দেরি আছে। আর একটাও কথা বলবি না তুই। অনেক রাত হয়েছে। চুপ করে ঘুমা। ঘরের আলো নিভিয়ে দিচ্ছি আমি।”
আপুর কথা মতো আমি চোখ বুজে শুয়ে পড়লাম! আমি না প্রচণ্ড খুঁতখুঁতে স্বভাবের! গোড়া থেকে মূল কথা তলিয়ে দেখা না অবধি শান্তি নেই আমার। নূর ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড, নীড় ভাইয়ার বাচ্চা-কাচ্চা সম্পূর্ণই কী নেশার ঘোরে বলা তাদের ভুল-ভাল কথা ছিল? নাকি সত্যিই এসব চক্কর তারা ভেতরে ভেতরে ঘটিয়ে চলছে? আসল সত্যি গুলো ঠিক কী? মূল সত্যি গুলো তলিয়ে না দেখা অবধি তো নিস্তার হচ্ছে না আমার! আপাতত এই সন্দেহজনক বিষয় গুলো ধামা চাপা দিয়ে আমি নিবিড়ে চোখ বুজে নিলাম। চোখ বুজার সঙ্গে সঙ্গেই ক্লান্তি ভরা চোখ দু’টো ঘুমের দেশে ডুব দিলো। নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি। সেই ঘুম ভাঙল আমার খালামণির হাঁক-ডাকে! চোখ বুজা অবস্থাতেই শুনতে পাচ্ছিলাম খালামণি উচ্চ আওয়াজে বলছে,,
“এই চাঁদ উঠ। বাড়ির সবাই তো এতক্ষণে ঘুম থেকে উঠে পড়ল। তুই কখন উঠবি হুম?”
বিরক্তি ভর করল আমার দু’চোখে! আঁখি যুগল খিঁচে বন্ধ করে আমি রুক্ষ গলায় বললাম,,
“উঠছি তো খালামণি। তুমি যাও।”
ওপাশ থেকে আর কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না। হয়তো খালামণি চলে গেছে। বড় করে একটি হামি তুলে আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম। অলস চোখ জোড়া খুলতেই সকালের মিষ্টি রোদ কাঁচের জানালা ভেদ করে আমার সমস্ত মুখমন্ডলে ঠিকড়ে পড়ল। ঘোর আপত্তি নিয়ে আমি চোখ জোড়া বুজে নিলাম! চোখে এখনো ঘুম ঘুম রেশ রয়ে গেছে আমার। তাই সকালের এই স্নিগ্ধ মিষ্টি রোদটিও তিক্ত লাগছে। অমনি মনে হলো পাশ থেকে কারো সেলফোন বেজে উঠল! বিছানায় হাতড়ে আমি সেই রিং হওয়া ফোনটি খুঁজে চলছি। এক পর্যায়ে ফোনটি পেয়েও গেলাম। এক চোখ খুলে আমি স্ক্রিণের দিকে তাকাতেই দেখলাম স্ক্রিণে ‘নূর’ নামটি ভেসে উঠেছে! বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলো না ফোনটি খালামণির। আমাকে ডাকতে এসে বোধ হয় ভুলে ফোনটি রেখে দিয়ে চলে গেছে। অনবরত রিং হয়ে চলছে ফোনটিতে। বুঝতে পারছিলাম না ফোনটি কী তোলা উচিৎ নাকি রেখে দেওয়া উচিৎ? পরে আবার ভাবলাম ফোনটি হয়তো প্রয়োজনীয়ও হতে পারে। হয়তো নূর ভাইয়া বাইরে গেছে। প্রয়োজনেই কল করছে। তাই সমস্ত জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আমি ফোনটি কানে তুলতেই ঐ পাশ থেকে নূর ভাইয়া রুষ্ট গলায় বলে উঠল,,
“আম্মুম্মুম্মু…আমি বাথরুমে আটকে গেছি!”
মুহূর্তের মধ্যে অতৃপ্ত ঘুমেরা জানালা দিয়ে দৌঁড়ে পালাল! ভীষণ হাসি পেয়ে বসল! তবে গোপনীয়তা রক্ষার খাতিরে হাসলাম না। মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এঁটে মুখে ওড়না চেপে ধরলাম আমি। ভয়েস টোন পাল্টে কথা বলতে হবে! কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না যে ফোনের ঐ প্রান্তে থাকা মানুষটি আমি। প্ল্যান অনুযায়ী মিটিমিটি হেসে শুধালাম,,
“কেন বাবা? কী হয়েছে? বাথরুমের দরজা খুলতে পারছ না তুমি? শরীরে বুঝি এক ফোঁটাও শক্তি নেই?”
“না মা। ঘটেছে তো অন্যকিছু! কীভাবে বলব বুঝতে পারছি না!”
“কী এমন হয়েছে বাবা? যা তুমি বলতে পারছ না? আমার তো খুব সন্দেহ হচ্ছে! আ’কাম-কু’কাম ঘটিয়ে বসো নি তো?”
নূর ভাইয়া ঐ পাশ থেকে অধৈর্য্য গলায় বলল,,
“মানে? এসব তুমি কী বলছ মা? আমি কী আকা’ম কু’কাম ঘটাব? তাছাড়া তোমার গলার স্বর এমন শুনাচ্ছে কেন?”
থতমত খেয়ে গেলাম আমি! আমতা আমতা করে বললাম,,
“এমন শুনাচ্ছে মানে? ঠিকই তো শুনাচ্ছে। আচ্ছা যাই হোক, তোমার সমস্যাটি কী বলো? প’টি করার পর নিজেকে ক্লিন করতে পারছ না?”
“উফফ মা। পানি শেষ হয়ে গেছে টাংকির! সত্যিই নিজেকে ক্লিন করার মতো পানি নেই! তাছাড়া এখনো আমার শাওয়ারও নেওয়া হয় নি। ভার্সিটিতে যাব কখন বলো?”
“পানি শেষ হয়েছে তো কী হয়েছে বাবা? টিস্যু তো আছে। টিস্যু ইউজ করো।”
“টিস্যুও তো শেষ মা। তুমি প্লিজ এতো কথা না পেচিয়ে মোটরের সুইচটা অন করে এসো। আমার খুব তাড়া আছে।”
“এত তাড়া কীসের বাবা? ভার্সিটিতে বুঝি তোমার গার্লফ্রেন্ড ওয়েট করছে?”
ভড়কে উঠল তিনি! আমতা আমতা করে বলল,,
“এএএএ। তুতুতুমি এসব কীকী বলছ মা? আমার আবার গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি? আমি তো জন্মের সিংগেল! তোমার গর্ভ থেকে যেভাবে সিংগেল হয়ে এসেছি? এখনো ঠিক সেই একই রকম ভাবেই সিংগেল হয়ে রয়েছি। আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই মা।”
কদাচিৎ হাসলাম আমি! মুখ থেকে ওড়নার কাপড়টি সরিয়ে বিদ্রুপাত্নক গলায় বললাম,,
“কেন ভাই? গতকাল রাতেও তো বলেছিলে তোমার গার্লফ্রেন্ড প্রেগনেন্ট। তার বাচ্চার বাপ তুমি। এখন আবার সব অস্বীকার করছ? নিজেকে জন্মের সিংগেল বলে আখ্যায়িত করছ?”
মুহূর্তের মধ্যেই চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল নূর ভাইয়া! ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ছাড়তে লাগল। আক্রমনাত্নক গলায় বলল,,
“তুমি? তুমি এতক্ষণ আমার সাথে কথা বলছিলে আমার মা সেজে?”
“হ্যাঁ। এতক্ষণ আমিই আপনার সাথে কথা বলছিলাম। কত বড় গর্দভ আপনি! আমার ভয়েসটাও ধরতে পারেন নি।”
“তোমার মতো বেয়াদব নই আমি ওকে? তাছাড়া তুমি আমার আম্মুর ফোন ধরেছ কেন হুম? কে দিয়েছে তোমাকে এত বড় সাহস? নিজেকে খুব সেয়ানা মনে করছ তাই না? নূরের সাথে পা’ঙ্গা নিতে এসেছ?”
“এহ্! আইছে আমারে সাহস বুঝাইতে। আমি আমার খালামণির ফোন ধরেছি বুঝেছেন? এতে আপনার এত জ্বলছে কেন? তাছাড়া সম্পর্কে আমি আপনার খালাতো বোন হই। রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবেন আমার সাথে।”
“খালাতো বোন মাই ফুট! তোমার সাথে আমি রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলব না? তোমার সাথে? সামনে জাস্ট পেয়ে নেই তোমাকে। গতকাল রাতের সব প্রতিশোধ কড়ায় গন্ডায় উসুল করব।”
“আর আমি বুঝি আপনাকে ছেড়ে দিব? আপনাদের দুই ভাইয়ের সেই কালজয়ী কু-কীর্তি আড়াল করে রাখব? খালামণিকে কিছুই বলব না?”
কথা বলতে বলতে আমি নূর ভাইয়ার বেডরুমে চলে এলাম! বাথরুমের দরজায় পিঠ ঠেঁকিয়ে দাঁড়ালাম! ফোনের অপর প্রান্ত থেকে নূর ভাইয়া গর্জে উঠতেই আমি টুপ করে ফোনটি কেটে দিলাম! লোকটিকে রাগানোর জন্য মুখ চেপে হেসে দরজায় মুখ ঠেকিয়ে বললাম,,
“এভাবেই বাথরুমে পড়ে চিৎকার করতে থাকুন। আমি মোটরের সুইচ অন করব না! এমনকি খালামণিকেও ডেকে দিব না! বায় বায়।”
জোরালো হাতে দরজা ধাক্কাতে লাগল তিনি। চ্যাঁচিয়ে বলল,,
“আমি যদি এখন বের হই না? তোমার চৌদ্দটা বাজিয়ে ছাড়ব। তুমি কিন্তু এখনও এই নূরকে চিনতে পারো নি। রেগে গেলে যে সে কী পরিমাণ হিংস্র হতে পারে তুমি বুঝতেও পারছ না।”
“আগে তো বের হয়ে দেখান। এরপর না হয় দেখা যাবে আপনি কতটা হিংস্র হতে পারেন।”
“তুমি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছ তাই না?”
“যা ইচ্ছে তাই ভাবুন। আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার।”
সঙ্গে সঙ্গেই কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার মতো উপক্রম হলো আমার! নূর ভাইয়া গলার সমস্ত জোর কাজে লাগিয়ে ‘মা’ বলে চিৎকার করে উঠল! কী হলো জানি না তাৎক্ষণিক খালামণি যেন কোথা থেকে দৌঁড়ে এলো! নূর ভাইয়ার বেডরুমে ঢুকে বাথরুমের দরজার কাছে চলে এলো। উত্তেজিত গলায় শুধালো,,
“কী হয়েছে বাবা? চ্যাঁচাচ্ছিস কেন?”
“তোমাকে কখন থেকে ডাকছিলাম মা শুনতে পাচ্ছিলে না?”
“না বাবা। আমি তো একটু ব্যস্ত ছিলাম।”
“মোটরের সুইচটা অন করে এসো প্লিজ। সকাল থেকে ট্যাবে পানি নেই। আর তোমার বোনের মেয়েকে বলো আমার পেছনে না লাগতে। সাবধানে থাকতে। আমাকে বেশি চটাতে এলে কিন্তু আমি ভুলে যাব সে আমার কাজিন হয়! তোমার কিন্তু আমার রাগ সম্পর্কে ধারণা আছে মা।”
আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালাম না আমি! মাথা নুইয়ে অপরাধীর মতো দৌঁড়ে রুম থেকে প্রস্থান নিলাম! রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে কান পেতে শুনছিলাম খালামণি বলছে,,
“কেন কী হয়েছে নূর? চাঁদ কী করেছে তোকে?”
“মোটরের সুইচটা অন করছিল না মা। কিছুতেই আমার কথা শুনছিল না। আমাকে ক্রমাগত রাগিয়ে চলছিল! আমার গার্লফ্রেন্ডও হয়তো আমাকে এতটা জ্বালায় না!”
“কীহ্? তোর গার্লফ্রেন্ড আছে?”
থতমত খেয়ে উঠল নূর ভাইয়া। ইতস্তত গলায় বলল,,
“আরে না মা! ঐ যে মেয়ে বন্ধু! শারিন, তুলি, তিন্নির আছে না? ওদের কথা বলছিলাম। ওরা তো আমার মেয়ে বন্ধু তাই না?”
“ওহ্ হ্যাঁ! তাহলে ঠিক আছে। আচ্ছা বাবা ছেড়ে দে। চাঁদ তো ছোটো মেয়ে। তাই কিছু বুঝে নি বাবা। তুই শান্ত হ প্লিজ। আমি সুইচটা অন করে আসছি। শাওয়ার নিয়ে সোজা ব্রেকফাস্ট টেবিলে চলে আয়।”
“এই অবস্থায় বের হতে পারছি না বলে তোমার বোনের আদরের পাঁজি মেয়ে আজ বেঁচে গেল! পরের বার কিন্তু আমি ছাড় দিব না তাকে। এরচেয়ে খারাপ অবস্থাতে থাকলেও কিন্তু আমি তাকে জব্দ করেই ছাড়ব!”
পুনরায় দৌঁড়ে এলাম আমি রুরে। মুখটা হা করে হতবিহ্বল গলায় খালামণির পাশে দাঁড়িয়ে বললাম,,
“ছিঃ খালামণি! তোমার এত বড় ছেলে এখনো উ’লুঙ্গ হয়ে শাওয়ার নেয়? এরচেয়ে আর খারাপ অবস্থা কী হতে পারে?”
খালামণি খিটখিটিয়ে হেসে উঠল! ভেতর থেকে ভূমিকম্পের ধ্বস আরম্ভ হওয়ার আগেই আমি ফিক করে হেসে ঘর থেকে দৌঁড়ে পাললাম!#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_৪
#নিশাত_জাহান_নিশি
খালামনি খিটখিটিয়ে হেসে উঠল! ভেতর থেকে ভূমিকম্পের ধ্বস আরম্ভ হওয়ার আগেই আমি ফিক করে হেসে ঘর থেকে দৌঁড়ে পাললাম!
এই ছুটোছুটির মধ্যেই নীড় ভাইয়ার সাথে হঠাৎ ধাক্কা লেগে গেল! নীড় ভাইয়ার হাতে থাকা কফির মগটি মাটিতে পড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি দু’জন। পার্থক্য শুধু এখানেই। আমি ভীতুর ন্যায় অর্ধখোলা চোখে দাঁড়িয়ে! অপরদিকে নীড় ভাইয়া বিরক্তি ভরা চাহনিতে দাঁড়িয়ে। মুহূর্তের মধ্যেই হঠাৎ নীড় ভাইয়া ভ্রু যুগল উঁচু করে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন! তৎক্ষনাৎ আমি আমতা আমতা গলায় বললাম,,
“স্যস্যরি ভাইয়া। আআমি আসলে খেখেয়াল করি নি।”
বিন্দুমাত্র ভাবান্তর হলো না উনার! ভাবশূন্য ভঙ্গিতে উনি প্যান্টের পকেটে দু’হাত গুজে খানিক নড়েচড়ে দাঁড়ালেন! অবিশ্বাস্যভাবেই উনি এদিক ওদিক অস্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আকস্মিক আমার দিকে ঈষৎ ঝুঁকে এলেন! নিম্ন আওয়াজে বললেন,,
“এক শর্তেই তোমাকে ক্ষমা করতে পারি! যদি তুমি কাল রাতের ব্যাপারে আমার মা এবং আমার বাবাকে কিছু না বলো! আমাদের সাথে সমঝোতা করো।”
দ্বিমত পোষণ করলাম আমি! বুকে দু’হাত বেঁধে নাক উঁচিয়ে দাঁড়ালাম! শর্তে রাজি না হয়ে অসম্মতিপূর্ণ গলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বললাম,,
“ওকে। তবে শুনে রাখুন। আমাকেও আপনার ক্ষমা করতে হবে না! বিরাট কোনো অন্যায় করে বসি নি আমি। যার জন্য অন্তত আপনি আমাকে ক্ষমা না করলে আমার বড়ো সড়ো কোনো গুনাহ্ হয়ে যাবে! সামান্য একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে মাত্র। দেট’স ইট!”
নীড় ভাইয়ার দিক থেকে রোষভরা দৃষ্টি সরিয়ে আমি সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ভয়ে আতঁকে উঠলাম! আপু চোখ লাল করে তেজী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ইশারায় বলছেন নীড় ভাইয়ার কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে! ভয়ার্ত চাহনিতেও আমি অনবরত মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানাচ্ছি! নীড় ভাইয়ার কাছ থেকে ক্ষমা আমি কিছুতেই চাইব না! কিংবা নীড় ভাইয়ার শর্তে এক ফোঁটাও রাজি হব না! দাঁত কিড়মিড়িয়ে আপু আমার দিকে এবং নীড় ভাইয়ার দিকে তেড়ে এলেন। আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোয়াল শক্ত করে শুধালেন,,
“গুরুজনদের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় শিখাইনি আমরা? ইচ্ছে করে তুই আমাদের অসম্মান করছিস হ্যাঁ? নীড় ভাইয়া যা বলছে তাই মেনে নে বলছি। উনার কথার উপরে আর একটা কথাও বলবি না।”
মুহূর্তের মধ্যেই ভাব বেড়ে গেল নীড় ভাইয়ার! শার্টের কলার উঁচিয়ে উনি বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকালেন! মনে হলো যেন বিশ্ব জয় করে ফেলেছেন উনি! আপুর রাগতা দেখে বড্ড ভয় পেয়ে গেছি আমি! তাই ঘোর অমত থাকা সত্ত্বেও মাথা নুইয়ে নীড় ভাইয়াকে বললাম,,
“শর্তে আমি রাজি ভাইয়া। সরাসরি খালামনিকে কিছু বলব না আমি!”
জায়গা থেকে প্রস্থান নিলাম আমি! পেছন থেকে শুনছিলাম নীড় ভাইয়া গলা ঝাঁকিয়ে গম্ভীর গলায় সোহানী আপুকে জিজ্ঞেস করছেন,,
“আচ্ছা? তোমার নামটা যেন কী?”
আপু ম্লান হেসে বললেন,,
“সোহানী।”
“ওহ্। নাইস নেইম।”
ইতোমধ্যেই খেয়াল করলাম নীড় ভাইয়া হনহনিয়ে আমার পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন। রাগে গা-পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে আমার! আমাকে অপমান-অপদস্ত করে দু’জন বেশ ভাব জমিয়েছে। রাগে গজগজ করে হেঁটে চললাম আমি বেডরুমের দিকে। পেছন থেকে আপু বেশ মিষ্টি গলায় আমার নাম ধরে ডাকছে! এখন আইছে ঢং করতে! খালাতো ভাই নামক মাতালের সামনে আমাকে ছোট করে এখন আমাকে আহ্লাদ দেখাতে আসছে! হুড়মুড়িয়ে রুমে প্রবেশ করে আমি ভেতর থেকে দরজার খিলটা আটকে দিলাম! এবার হাজার চ্যাঁচালেও আমি দরজা খুলব না! যতক্ষণ অবধি না রাগ পড়বে আমার। মনোস্থির করে এক ছুটে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলাম। আপন মনে মাতাল দুই ভাই এবং আপুকে বকতে বকতে আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলাম। টাওয়াল হাতে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াতেই দরজায় খটখট আওয়াজ হলো। তবে কারো কোনো গলার স্বর শোনা যাচ্ছে না। ধারণা করতে পারছিলাম আপু হয়তোবা আমার রাগ ভাঙানোর জন্য দরজায় কড়া নাড়ছে! এক ঝটকায় টাওয়াটা বিছানায় ছুড়ে মেরে আমি উড়নচণ্ডী রূপ নিয়ে রুমের দরজাটি খুলে দিলাম! অমনি আমার চক্ষু জোড়া চড়কগাছ হয়ে উঠল! মুখটা অচিরেই হা হয়ে গেল! বুকটা ধড়ফড় করে কাঁপতে আরম্ভ করল। এ-কি দেখছি আমি? নূর ভাইয়া রুদ্রাক্ষের ন্যায় তেজী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! নীল মার্বেলের মতো চোখ গুলোর আশপাশটা কেমন টকটকে লাল রং ধারণ করেছে। গৌড়বর্ণের ফর্সা মুখটি লোহিত বর্ণে পরিণত করেছে। সদ্য শাওয়া নিয়ে আসা ভেজাক্ত চুল গুলো থেকে টপটপ শব্দে পানি পড়ছে। শাওয়ার নেওয়ার পরেও লোকটিকে ফ্রেশ বা স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে না। প্রচণ্ড চটে আছে এই লোক! মনে হচ্ছে এখনি আমাকে আস্ত চিবিয়ে খাবে! আর এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে আমি মুখের উপর দরজাটি বন্ধ করে দিলাম! জ্ঞান হওয়া অবধি এই পর্যন্ত কাউকে আমি এতটা রাগী রূপে দেখি নি! ভয়ে জানটা বের হয়ে যাচ্ছে আমার। ভেতর থেকে বড় বড় শ্বাস নির্গত হয়ে আসছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। দরজায় পিঠ ঠেঁকিয়ে দাঁড়াতেই মনে হলো দরজাটি ভেঙে হয়তো আমি শুদ্ধ মেঝেতে ছিটকে পড়ব। লোকটি এত জোরে দরজায় কড়াঘাত করছে! শুধু তাই নয় দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষিপ্ত গলায় বলছে,,
“এই দরজাটা খুলতে বলছি তোমাকে। তাড়াতাড়ি দরজাটা খোলো!”
মুখে তালা ঝুলিয়ে বসে আছি আমি! বোবা মানুষের ন্যায় কন্ঠনালীকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি। এর মধ্যেই উনি পুনরায় রুষ্ট গলায় শুধালেন,,
“কী হলো? দরজা খুলছ না কেন হ্যাঁ? আমাকে ফেইস করার সাহস হচ্ছে না এখন?”
চোখ জোড়া বুজে আমি প্রাণপনে আল্লাহ্কে ডেকে চলছি! এই শেষ বারের মতো এই ভয়ংকর রাগী লোকটির কাছ থেকে মুক্তি চাইছি আমি। তবে লাভ কিছু হচ্ছিল না এতে। দেখা যাচ্ছিল যে, দরজা না খুললে লোকটিকে আর সামলে রাখা যাবে না। এখনকার তুলনায় আরও বেশি নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে উঠবে। তাই আল্লাহ্’র উপর ভরসা রেখে আমি চোখ বুজে শেষ পর্যন্ত রুমের দরজাটি খুলেই দিলাম! অমনি লোকটি ঝড়ের বেগে আমাকে ধাক্কা মেরে রুমের মধ্যে ঢুকে পড়ল! আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কড়া গলায় শুধালো,,
“কী বলছিলে সকালে তুমি হ্যাঁ? কী বলেছিল? আমার রাগ দেখবে তাই তো? আমি কতটা হিংস্র হতে পারি দেখবে?”
ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে আমি নূর ভাইয়ার দিকে তাকালাম! শুকনো ঢোক গিলে জবাবে বললাম,,
“কেকে ককখন কীকী বলেছিল? আআমি তো কিছু বলি নি!”
“সিরিয়াসলি? তুমি কিছু বলো নি?”
“নানানা তো!”
“গলা কাঁপছে কেন এখন হ্যাঁ? গলা কাঁপছে কেন? আমার মতো ক্লিয়ারলি কথা বলতে পারছ না?”
“গগলা ব্যব্যথা করছে তাই!”
“রাগের একটু ছটা দেখে অমনি গলা ব্যথা শুরু হয়ে গেল না? যখন আরও বেশি হিংস্র রূপ দেখবে তখন কী করবে?”
ঘটনার আকস্মিকতায় আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম,,
“তখন আপনাকে খু’ন করে পালাবো!”
সঙ্গে সঙ্গেই মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি! ভয়ার্ত দৃষ্টিতে নূর ভাইয়ার দিকে তাকালাম। মনে মনে নিজেকেই বকতে আরম্ভ করলাম! মুখে বিন্দু পরিমান লাগাম নেই আমার। যাকে যা ইচ্ছে তাই বলে ফেলি! চোয়াল উঁচিয়ে নূর ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এলেন। তিরিক্ষিপূর্ণ মেজাজে বললেন,,
“গাঁয়ে জাস্ট একটা টাচ করে দেখাও না। এরপর দেখো তোমার কী হাল করি আমি! অনেক সহ্য করেছি অনেক। এখন আর সম্ভব নয়।”
ভয়ে সিঁটিয়ে গেলাম আমি! মুখে আঙুল চেপে অস্পষ্ট গলায় বললাম,,
“স্যরি। ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া। আর কখনো এমন ভুল হবে না!”
রাগের পরিমান তবুও যেন কমছিল না উনার! ভয়ানক তাণ্ডবের শিকার হওয়ার আগেই আমি মন্থর গতিতে পিছু হাঁটতে লাগলাম। তক্ষণি ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়লাম! রাগ ভুলে আচমকাই ক্রুর হেসে উঠলেন নূর ভাইয়া! শার্টের কলারটি পেছনের দিকে হেলিয়ে তিনিও বেশ ভাব নিয়ে ধপ করে আমার পাশে বসে পড়লেন! পায়ের উপর পা তুলে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“তো বলো? কী যেন বলছিলে? আমার মা’কে গতকাল রাতের কথা সব বলে দিবে তাই তো?”
কাঠ কাঠ আমি গলায় জবাবে বললাম,,
“বলেছিলাম! তবে এখন আর বলব না ভাইয়া!”
“আনবিলিভএবল! আচ্ছা এক কাজ করো? তোমার মাথায় হাত রেখে বলো মা’কে তুমি সত্যি সত্যি কিছু বলবে না।”
তাজ্জব দৃষ্টিতে আমি বিরক্তিকর লোকটির চোখের দিকে তাকালাম! হতবিহ্বল গলায় শুধালাম,,
“আমার মাথায় হাত রেখে বলতে হবে?”
“তো কার মাথায় হাত রেখে বলবে? আমার? পাগলে পাইছে আমারে? নিজের হাতে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনব? তোমাকে কোনো দিক থেকেই আমার বিশ্বাস হয় না!”
গলার স্বর পাল্টে নিলাম আমি! ন্যাকা ন্যাকা গলায় বললাম,,
“কিন্তু, আমি যদি মরে যাই? তখন কী হবে নূর ভাইয়া? আমার তো এখনো একটা প্রেমও হয় নি ভাইয়া। বয়ফ্রেন্ডও হয় নি! কারো সাথে ভালোবাসা বাসিও হয় নি!”
“তার মানে তুমি স্বীকার করছ মাথায় হাত দিয়েও তুমি মা’কে সব সত্যি বলে দিবে?”
“আমি কী করব ভাইয়া? আমার পেটে যে কোনো কথা থাকে না! ডক্টরও এই রোগ সারাতে পারে নি বিশ্বাস করুন! আমি সত্যিই নিরুপায়।”
আবারও প্রচণ্ড ক্ষেপে উঠলেন নূর ভাইয়া! ধমকের স্বরে শুধালেন,,
“সিরিয়াসলি? কথা পেটে থাকে না এর জন্যও ডক্টর দেখাতে হয়?”
“হয় ভাইয়া! আপনাদের ঢাকায় হয়তো এমন ডক্টর নেই। তবে আমাদের কুমিল্লায় এমন ডক্টর অহরহ আছে!”
“এই এই। একদম নাটক করবে না আমার সাথে। কথার জালেও আমাকে ফাঁসানোর একদম চেষ্টা করবে না। আমি বুঝে গেছি তুমি ইচ্ছে করে নাটক করছ আমার সাথে। সব মিথ্যে বলছ তুমি, সব।”
অবলার মতো মুখ করে আমি কাঁদো কাঁদো গলায় নূর ভাইয়াকে বললাম,,
“সত্যি বলছি ভাইয়া! আমি কোনো নাটক করছি না! এই রোগ আমার জন্মগত! কথা বেশিক্ষণ পেটে চেপে রাখতে পারি না। জানেন ভাইয়া? আমার এই রোগের জন্য আমার সব ফ্রেন্ডদের ব্রেকাপ হয়ে গেছে?”
“হোয়াট? ব্রেকাপ হয়ে গেছে?”
“হ্যাঁ তো! অনেকেরই ব্রেকাপ হয়ে গেছে! কারণ, আমি কোনো সত্যি কথা-ই লুকিয়ে রাখতে পারি না। ফ্রেন্ডরা তাদের বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে আমার কাছে যা যা দুর্নাম করত আমি সব তাদের বয়ফ্রেন্ডদের এক এক করে দিতাম! আমি আবার মিথ্যা কথা একদদদম সহ্য করতে পারি না। তাই আমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে মুখের উপর ঠাস-ঠুস সব বলে ফেলি। এখন তো আমি চিন্তায় আছি ভাইয়া। আপনারও যদি এখন ব্রেকাপ হয়ে যায়? আই মিন খালামনিকে যদি আমি সব সত্যি বলে ফেলি তখন?”
তড়িৎ বেগে আমার পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালেন নূর ভাইয়া। শার্টের হাতা জোড়া ফোল্ড করতে করতে শক্ত গলায় আমায় বললেন,,
“দেখি উঠো। বসা থেকে উঠো বলছি।”
“কিন্তু কেন নূর ভাইয়া? কী করেছি আমি?”
“উঠো। এরপর বলছি কী করেছ।”
ঠোঁট উল্টে নিলাম আমি! ব্যথীত গলায় বললাম,,
“পায়ে খুব ব্যথা হচ্ছে ভাইয়া! সকাল থেকেই হাঁটুর জয়েন্টে-জয়েন্টে ব্যথা করছে!”
“এই? আবারও নাটক করছ না? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা!”
ভীষণ উত্তেজিত হয়ে নূর ভাইয়া বিছানার উপর থেকে শলার ঝাড়ু হাতে তুলে নিলেন! অমনি আমি ভয়ে ‘খালামনি’ বলে এক চিৎকার দিয়ে রুম থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে এলাম! দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে হাঁক-ডাক ছেড়ে বলতে লাগলাম,,
“খালামনি দেখো? নূর ভাইয়া আমাকে মারতে আসছে! উনার গার্লফ্রেন্ডের কথা আমি তোমাকে..
আর কিছু বলতে পারলাম না! পেছন থেকে কেউ এসে আমার মুখ চেপে ধরল! প্রকান্ড চোখে আমি প্রবল কৌতূহল নিয়ে পিছু ফিরে তাকাতেই অবিশ্বাস্যভাবে নূর ভাইয়াকে দেখতে পেলাম! ইতোমধ্যেই উনি আমার কানের কাছে হালকা গোলাপী ওষ্ঠদ্বয় ঠেকিয়ে দাঁত দাঁত চেপে বলছেন,,
“প্লিজ। মা’কে কিছু বলবে না তুমি। এর বিনিময়ে তুমি যা চাইবে আমি তোমাকে তাই দিব। তবুও মা’কে কিছু বলবে না।”
থেমে গেলাম আমি! সমস্ত শরীর শিথিল হয়ে আসছিল। শরীরের প্রতিটি লোমকূপদ্বয় অদ্ভুত এক মন মাতানো শিহরণ তুলছিল। এর মধ্যেই হঠাৎ তৃতীয় কোনো ব্যক্তির আগমন ঘটল আমাদের সামনে। অগ্রে উৎসুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখলাম একজন সুদর্শণ পুরুষ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে! বিস্মিত গলায় নূর ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলছে,,
“এসব কী হচ্ছে নূর? মেয়েটি কে?”
#চলবে…?
#চলবে…?