প্রেমময়ী তুমি পর্ব -০১+২

“মা’কে বলেছিলাম গার্লফ্রেন্ড প্রেগনেন্ট! তার বাচ্চার বাপ আমি! তবুও মা বিশ্বাস করল না! বলল নিজের পায়ে দাঁড়াও এরপর বিয়ে করবে! এই দিকে আমার সব বন্ধু-বান্ধবরা বিয়ে শাদি করে তিন-চার বাচ্চার বাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমার বিয়েটা আর হলো না। গোটা শীতকালও চলে গেল ভাই! এই দুঃখ আমি কাকে দেখাই?”

“আমিও দুই বাচ্চার বাপ হয়ে গেলাম। তবুও বিয়ে শাদি হলো না! তৃতীয় বাচ্চার প্ল্যানিং চলছে! মা আর কবে আমাদের দুঃখ বুঝবে ভাই? আর এক গ্লাস বিয়ার হবে প্লিজ? আর এক গ্লাস গিললে হয়তো আরও একটু শান্তি পেতাম।”

“ভাই? তোর কী মনে হচ্ছে না আজ আমরা একটু বেশিই নেশা করে ফেলেছি? মদের বদলে মেয়ে দেখছি কেন? তাও আবার দু’দুটো! আচ্ছা ভাই? এদের এমন লাল নীল দেখাচ্ছে কেন? চোখে কী আমার তাঁরা বাত্তি জ্বলছে?”

“আরেহ্ ভাই.. তোর চোখের রং তো এমনিতেই নীল! তাই সব নীল নীল দেখছিস!”

“না ভাই! সত্যিই আমি নীলচে রঙের মেয়ে দেখছি! আচ্ছা এরা আমাদের দিকে এভাবে তেড়ে আসছে কেন ভাই? কী করেছি আমরা?”

দুই নেশাখোর এবার ফ্যাল ফ্যাল চাহনিতে আমাদের দুই বোনের দিকে পিছু ফিরে তাকাল! খালাতো ভাইয়ার বিয়েতে এসে রাস্তার মাঝখানে এভাবে দুই নেশাখোরের খপ্পরে পড় যেতে হবে বুঝতে পারি নি আমার দুই বোন! প্রথমে ভেবেছিলাম এক্সিডেন্টটা বোধ হয় হয়েই গেল! পরে আকস্মিক চোখ খুলে দেখলাম রিকশার সাথে বাইকটির সংঘর্ষ হওয়ার পূর্বেই মদের নেশায় বুদ হয়ে থাকা দুই নেশাখোর বাইক নিয়ে বাঁ পাশে ছিটকে পড়ল! কোনো রকম ব্যথা, বেদনা, হায়-হুতাশ ছাড়াই দুই নেশাখোর নিজেদের মতো বকবক করেই চলছে। মূলত যেসব বকবকানি একজন সুস্থ মস্তিষ্কধারী মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। সোহানী আপুকে পেছনে রেখে অতি ক্রুদ্ধ হয়ে আমি কোমড়ে দু’হাত বেঁধে নেশাখোরদের দিকে অগ্রসর হলাম। সোডিয়ামের টিমটিমে আলোতে তাদের দুজনের মুখের আদল স্পষ্টত বুঝা যাচ্ছে না। তবে খালি চোখে যতটুকু ঠাওড় করতে পেরেছি তাদের দুজনের মুখটিই আমার কিছুটা পরিচিত মনে হচ্ছে! বিষয়টিকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে আমি দুই নেশাখোরের দিকে কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“এই? বাড়িতে কী মা-বাবা বা ভাই-বোন নেই আপনাদের? পরিবার থেকে শিক্ষা পেয়ে আসেন নি রাতে-বিরাতে এভাবে নেশা ভান করে অন্যের গাড়ির সামনে পড়তে নেই?”

হুড়মুড়িয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল এক মাতাল! টলমল শরীর নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো। পিটপিট চাহনিতে কম্পিত গলায় বলল,,

“হেই মাইন্ড ইউর লেঙ্গুইজ। আমরা কোনো নেশা-ভান করি নি! আমরা তো ড্রিংকস করেছি, ড্রিংকস। ড্রিংকস মানে বুঝেন? ড্রিংকস মানে হলো বিয়ার! বিয়ার খুব এক্সপেন্সিভ জিনিস। এই জিনিস খেলে নেশা হয় না! মুখ থেকে ফটাফট সত্যি কথা বের হয়, সাহস বাড়ে, শক্তি বাড়ে! আর এখন এই সাহস নিয়েই আমি মাকে গিয়ে বলব, ‘মা আমি বিয়ে করতে চাই! গার্লফ্রেন্ডের কাছ থেকে ব্রেকাপ চাই না!”

মুখ থেকে বিচ্ছিরি গন্ধ বের হয়ে আসছিল ছেলেটির! তৎক্ষনাৎ নাক সিটকে আমি ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে নিলাম। ছেলেটিকে দেখে হচ্ছিল, ‘জাতে মাতাল, তালে ঠিক।’ এর মধ্যেই পাশ থেকে অন্য ছেলেটি উঠে দাঁড়াল। আমার সাথে তর্ক করা ছেলেটির কাঁধে হাত রেখে চাপা গলায় বলল,,

“চল ভাই আমরা বাড়ি ফিরে যাই। এসব মেয়েদের সাথে বিশ্বাস নেই! কখন আমাদের কীভাবে ফাঁসিয়ে দেয়! এরা নিশ্চয়ই নিষিদ্ধ পল্লির কেউ হবে! ভদ্র পরিবারের মেয়েরা এতো রাতে বাড়ি থেকে বের হয় না!”

পাশ থেকে আমি এবং আপু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম। রাগান্বিত হয়ে আমি কিছু বলার পূর্বেই সোহানী আপু গর্জে উঠল! ছেলেটির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“হেই ইউ? আমাদের দেখতে কী নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়েদের মতো দেখতে? আমরা কী কোনো ভাবে আপনাদের জোর করেছি আমাদের সাথে কোথাও যেতে? মুখ সামলে কথা বলুন বলছি। ভদ্রতা বজায় রাখুন। ঢাকায় নতুন এসেছি বলে ভাববেন না, আমরা ভয় পেয়ে যাব অথবা আমরা এখানে বানের জলে ভেসে এসেছি। আমরা একটি ভদ্র পরিবার থেকেই বিলং করি। আপনাদের মতো অভদ্র এবং অশিক্ষিত পরিবার থেকে নয়!”

এবার ঐ পাশ থেকে দুই মাতাল ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল! মাতলামী ভুলে সমস্বরে বলে উঠল,,

“কে অভদ্র পরিবার থেকে এসেছে হ্যাঁ? কারা অশিক্ষিত পরিবার থেকে এসেছে? মেয়ে মানুষ বলে কিন্তু ছাড় পাবেন না আপনারা। প্রতিবাদ সমানে সমানে হবে। আর একটি বার শুধু আমাদের পরিবার সম্পর্কে বলে দেখুন না জাস্ট পুঁ”তে রেখে দিব! এই এলাকা আমাদের বুঝেছেন? এই এলাকার বাপ আমরা।”

রাগ যেনো মুহূর্তের মধ্যেই নিয়ন্ত্রাধীন হয়ে উঠল আমার! তাই তেজী গলায় হাঁক ছেড়ে বললাম,,

“ন”লা ভেবেছেন আমাদের হ্যাঁ? ন”লা ভেবেছেন? আমরা কী এখানে বানের জলে ভেসে এসেছি? আপনারা জানেন? আমাদের এলাকায় আমাদের ঠিক কতো খানি দা”পট? আপনাদের মতো ছেলেদের পুঁ”তে রাখার টেকনিকও আমাদের খুব ভালো ভাবে জানা আছে! শুধু মাতাল বলেই আজ আপনাদের ছাড় দিচ্ছি কিন্তু।”

ছেলে দুটো টালমাটাল শরীর নিয়ে তেজী দৃষ্টিতে আমার দিকে তেড়ে আসতেই সোহানী আপু ভয়ে ঘাবড়ে উঠল! দু’হাত দিয়ে আমাকে টানতে টানতে রিকশার দিকে অগ্রসর হতে হতে বলল,,

“ছেড়ে দে ‘চাঁদ!’ এদের সাথে আমরা জোরে পারব না। ঢাকা শহরে আমরা নতুন এসেছি। তাও আবার একা দুটো মেয়ে। রাত এখন অনেকটাই বেড়ে গেছে। তাছাড়া এখানের পথ-ঘাট, মানুষ-জন কিছুই আমাদের জানা শোনা নেই। ঠিকানা অনুযায়ী খালামনির বাড়িতে পৌঁছাতে পারলেই হলো। এদের সাথে শ”ত্রুতা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই।”

“আপু ছাড়ো প্লিজ! এদের তো আমি দেখেই ছাড়ব। কতো বড় সাহস আমাদের পরিবার নিয়ে কথা তুলে। শুধু তাই নয়, আবার থ্রে”ড দিয়ে বলে আমাদের পুঁ”তে রেখে দিবে। শা”লা মাতালের দল!”

ছেলে দুটো অগ্নিশর্মা হয়ে আমাদের রিকশার দিকে তেড়ে আসতেই আপু তাড়াহুড়ো করে রিকশাওয়ালাকে বলল রিকশা ছেড়ে দিতে! আমার সাথে তর্ক করা ছেলেটি পা থেকে জুতো খুলে আমাদের রিকশার পেছনে ছুড়ে মারল! বজ্রকন্ঠে বলে উঠল,,

“হেই ইউ? চাইলে কিন্তু আমিও স্লাং ইউজ করতে পারতাম! কিন্তু করি নি। কেন বলুন তো? কারণ, আমরা ভদ্র পরিবার থেকে বিলং করি। আপনার মুখটি না? আমি খুব ভালো ভাবেই চিনে রেখেছি। পরের বার দেখা হলে রাস্তায় ঠিক পুঁ”তে রেখে দিব। আমাকে শা”লা বলা না? এই ‘নূরকে’ মাতাল বলা?”

আমিও রিকশার হুড তুলে ব্যগ্র গলায় চিৎকার করে বললাম,,

“মাতালদের মাতাল বলব না তো কী বলব হ্যাঁ? সাধু পুরুষ বলব? ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে যেনো পবিত্র জল খেয়ে এসেছে! আপনিও শুনে রাখুন মিস্টার মাতাল, পরের বার দেখা হলে কিন্তু আমিও আপনাকে ছাড় দিব না। এলাকা আমার না হলেও, আমি কিন্তু একজন মেয়ে! মেয়ে মানুষদের ক্ষমতা সম্পর্কে আশা করি ধারণা আছে আপনার?”

“শুধু একটি বার বাড়ির ঠিকানাটা দিয়ে যান! দেখুন কী অবস্থা করি আপনার। শুধু একটু ড্রিংকস করেছি বলে আজ বেঁচে গেলেন। পরের বার দেখা হলে কিন্তু রেহাই নেই!”

রিকশাটি এতো দ্রুতই জায়গা পরিত্যাগ করল যে মাতাল দুটোকে আর দৃষ্টির সীমানায় দেখতে পেলাম না! শীঘ্রই রিকশার হুড উঠিয়ে নিলাম আমি। স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,

“রাত-বিরাতে এসব লাফা”ঙ্গার-রা যে কোথা থেকে ছুটে আসে মাতলামো করে আল্লাহ্’ই জানে। এদের মতো দু-একজন ছেলের জন্যই রাস্তা-ঘাটে মেয়েদের নানা রকমের হ্যারাস”মেন্টের শি”কার হতে হয়। কবে যে এসব ছেলেদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে স্বয়ং আল্লাহ্’ই ভালো জানেন।”

“হুম। এখন ছাড় এসব। খালামনির বাড়ির ঠিকানা অনুযায়ী হয়তো আমরা পৌঁছেও গেছি। এবার শুধু খালামনির সাথে দেখা করার পালা।”

————————————–

রাত এগারোটা বেজে ত্রিশ মিনিট প্রায়! আপু এবং আমি কিছুক্ষণ আগেই খালামনির বাড়ি এসে পৌঁছেছি! দীর্ঘ দশ বছর পর খালামনি এবং আংকেলের সাথে দেখা! তাঁরা যেনো পারছিল না আমাদের কলিজায় ঢুকিয়ে নিতে! আনন্দে আত্নহারা প্রায়। কুমিল্লায় শিফট হওয়ার পর থেকেই খালামনিদের সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আমাদের! আম্মু এবং খালামনির মধ্যে কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা থাকার কারণে আমরা অনেকটাই আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম! আত্নীয়ের সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন হওয়ার অবস্থায় ছিলাম। তবে এতো গুলো বছর পর হঠাৎ আমার বড়ো খালাতো ভাইয়ার বিয়ে উপলক্ষ্যে সমস্ত মান-অভিমান, ঝগড়া-বিবাদ, দ্বিধা-দ্বন্ধ ভুলে খালামনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করেই ফেলল! মিনতি করে বলল ভাইয়ার বিয়েতে সহ-পরিবার এসে এটেন্ড করতে। আম্মু প্রথমে নাকোচ করে দিলেও পরবর্তীতে আমি, আপু, আব্বু এবং ছোটো খালামনির জোরাজুরিতে আম্মু প্রায় বাধ্য হয়েছিল বড়ো খালামনির কথা রাখতে। সেই কথার জের ধরেই আমি এবং আপু বিয়ের পনেরো দিন আগেই খালামনির বাড়ি চলে এলাম! তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, যার বিয়েতে আমরা এসেছি তার চেহারাটিই স্পষ্ট মনে নেই আমাদের! ছবিতে শুধু একবার দেখেছিলাম “নীড়” ভাইয়াকে। দ্বিতীয় বার দেখলে হয়তো বা চিনতে সুবিধে হতো।

এর মধ্যেই খালামনি দুধের গ্লাস নিয়ে আমাদের শোবার ঘরে প্রবেশ করল! আনন্দে আপ্লুত হয়ে তিনি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের দু’বোনের মুখোমুখি দাঁড়াল। দুধের গ্লাস দুটো আমাদের দু’ বোনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় শুধালো,,

“কেমন হয়েছে রান্না? তোরা পেট ভরে খেয়েছিস তো?”

আমি এবং আপু মিষ্টি হেসে সমস্বরে বললাম,,

“খুব ভালো হয়েছে খালামনি। অনেক বছর পর তোমার হাতের রান্নার স্বাদ পেলাম। মাঝখানে তো তোমার হাতের রান্নার স্বাদ প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম!”

দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন খালামনি! কিঞ্চিৎ মুহূর্ত মৌণতা বজায় রেখে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,,

“আচ্ছা রুমটা তোদের পছন্দ হয়েছে তো? পছন্দ না হলে কিন্তু বলতে পারিস৷ নূরের বেড রুমটায় তোদের শিফট করে দিব! ওর রুমটা আমাদের সবার রুমের তুলনায় প্রায় অনেকটাই বড়। আই থিংক ঐ রুমেই তোরা কমফোর্টেবল ফিল করবি।”

তাৎক্ষণিক আপু ব্যতিব্যস্ত গলায় জবাবে বলল,,

“না খালামনি। এসবের কোনো প্রয়োজন নেই। আমি এবং চাঁদ এই রুমেই ঠিক আছি। অযথা নূরকে হেনস্তা করতে হবে না। তবে খালামনি, আসার পর থেকে নূর এবং নীড় ভাইয়াকে কোথাও দেখছি না। কোথায় তারা?”

“আর বলিস না। ছেলে দুটো দিন দিন বেয়াড়া হয়ে উঠছে! ইদানিং খুব রাত করে বাড়ি ফিরে। শুনেছি কোনো ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে গিয়েছে। পার্টি শেষ করে আসছে হয়তো।”

ইতোমধ্যেই আমার দৃষ্টি পড়ল বেলকনির গ্রীল ভেদ করে বাড়ির মেইন গেইটের দিকে। চাঁদের মৃদু আলোয় সেই আধো অস্পষ্ট মুখ দুটো দৃষ্টির সীমানায় ভেসে উঠল! তাৎক্ষণিক দৃষ্টি আমার চড়কগাছ হয়ে উঠল! প্রকান্ড চক্ষুজোড়ায় আমি আপুকে দু’হাত দিয়ে ঠেলে ভয়ার্ত গলায় বললাম,,

“আপু দেখ মাতাল দুটো আমাদের ফলো করতে করতে এই বাড়িতেও চলে এসেছে! আমি তখন ঠিকই ধরেছিলাম, “এরা জাতে মাতাল, তালে ঠিক! দেখ, এখনও ওরা মাতলামি করেই চলছে। মেইন গেইট খোলা দেখেও দেয়াল টপকে বাড়ি ঢুকছে!”
#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_২
#নিশাত_জাহান_নিশি

“আপু দেখ মাতাল দুটো আমাদের ফলো করতে করতে এই বাড়িতেও চলে এসেছে! আমি তখন ঠিকই ধরেছিলাম, “এরা জাতে মাতাল, তালে ঠিক! দেখ, এখনও ওরা মাতলামি করেই চলছে। মেইন গেইট খোলা দেখেও দেয়াল টপকে বাড়ি ঢুকছে!”

তড়িৎ বেগে আপু পিছু ঘুরে দাঁড়াল। আমার দৃষ্টিকে অনুসরণ করে দুই মাতালকে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখা মাত্রই আপু ভড়কে উঠল! দু’বোন হাতে হাত ধরে সাংঘাতিক ভয়ে কাঁপাকাঁপি করছি। এই ছেলেরা যে এত বেশি মা’স্তান টাইপ হবে বুঝতে পারি নি আমরা দু’বোন! খালামণি আমাদের এহেন হটকারি ভাব-ভঙ্গি দেখে বিস্মিত গলায় আমাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কী রে কী হয়েছে তোদের? তোরা এইভাবে ওখানে কী দেখছিস? তাছাড়া দুজনকে খুবই চিন্তিত মনে হচ্ছে। হয়েছেটা কী?”

দেখলাম মাতাল দুটো দেয়ালের উপর বসে আছে। খুব চেষ্টা করছে দেয়াল টপকে নিচে নামার! তবে শারীরিক দুর্বলতার কারণে হয়তো পেরে উঠছে না! দুজনই ক্রমাগত হাঁফিয়ে উঠছে। আর এক মুহূর্তও বিলম্ব করলাম না আমি। মাতাল দুটিকে এক্ষণি এই মুহূর্তে হাতে-নাতে ধরতে হবে। ভয় পেয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। উচিৎ একটি শিক্ষা দিতেই হবে। মেয়েদের অবলা ভেবে তাদের পিছু করা না? দাঁড়াও বাছা ধনেরা, এবার তোমাদের এভাবে মেয়েদের পিছু করা বের করছি। তড়িঘড়ি করে আমি আপুর হাতের বাঁধনটি ছেড়ে খালামনির মুখোমুখি দাঁড়ালাম। ব্যতিব্যস্ত গলায় খালামণিকে বললাম,,

“এখন কিছু বলা যাবে না খালামণি। তুমি এক কাজ করো। বাড়িতে দা, ব’টি, ছু’রি, চা’কু যা আছে সব নিয়ে এসো! আমাদের বাড়িতে মাতাল ঢুকেছে! আমাদের উপর এ্যা’টাক করার জন্য! কিছুতেই এদের অ’ক্ষত অবস্থায় ফেরত পাঠানো যাবে না। এরা কিন্তু ভীষণ ডেঞ্জা’রাস।”

খালামনি নির্বোধ ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিয়ৎক্ষণ একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকার পর তিনি মৌণতা কাটিয়ে উঠলেন। ভ্রু যুগল সরু করে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“মাতাল? কোথায় মাতাল? কাদের কথা বলছিস তুই?”

আমি অধৈর্য হয়ে উঠলাম। খালামনির সামনে থেকে প্রস্থান নিয়ে সমস্ত ঘর জুড়ে দূরদৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম! ছটফটিয়ে বললাম,,

“উফফফ খালামণি। তোমাকে এখন এতকিছু এক্সপ্লেইন করে বুঝানোর সময় নেই আমার হাতে। এরচেয়ে বরং ভালো আমি নিজেই নিজের কাজ করি। দাঁড়াও আমি নিজেই দা, ব’টি, ছু’রি, চা’কু যা পাচ্ছি সব খুঁজে নিয়ে আসছি। এসব হলো আত্ন’রক্ষার জিনিস বুঝলে? যখনি কোনো বি’পদে পড়বে তখনি এই জিনিস গুলো তোমার কাজে আসবে। এসব হলো নিজেকে বি’পদ থেকে বাঁ’চানোর প্রাথমিক অ’স্ত্র।”

এক ছুটে আমি রান্নাঘরের দিকে গতিপথ নির্ধারণ করলাম। পেছন থেকে খালামণির অস্থির গলা শুনতে পাচ্ছি। আমার নাম ধরে ডেকে চলেছেন তিনি। তক্ষণি আপু ব্যগ্র গলায় খালামণিকে থামিয়ে দিয়ে বলল,,

“শান্ত হও খালামনি। চাঁদ যা করছে একদম ঠিক করছে! সত্যিই বাড়িতে মাতাল ঢুকেছে। বিশ্বাস না হলে এক্ষণি আমার সাথে বাড়ির মেইন গেইটে চলো।”

এরপর ওখানে কী ঘটল জানি না! আমি তো ছুটছি রান্নাঘরের দিকে! রান্নাঘর থেকে অনেক খুঁজে একটি ছু’রি পেয়েছি মাত্র! ছু’রিটি পাওয়া মাত্রই আমি পৈ’শাচিক হাসিতে মত্ত হয়ে উঠলাম। আজ এই ছু’রির সাহায্যেই মাতালদের ঘ্যা’চাং করে কা’টব! আমাদের এলাকায় যে কত ছেলেদের এভাবে ছু’রির সাহায্যে ভয় দেখিয়েছি তা যদি ঐ মাতালের দলেরা জানত তবে এই চাঁদের সাথে পা’ঙ্গা নিতে আসত না! ভয়ে আমার থেকে একশ গজ দূরে থাকত। যাই হোক, অযথা সময় নষ্ট না করে আমি দ্রুত পায়ে হেঁটে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। সদর দরজা পাড় হয়ে বাড়ির মেইন গেইটের দিকে অগ্রসর হতেই দেখলাম খালামণি এবং আপু মাতালদের পেছনে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে! হয়তো খালি হাতে তাদের কাছে যাওয়ার সাহস খুঁজে পাচ্ছে না! দুই মাতাল এখনও উল্টো হয়ে দেয়াল থেকে নামার চেষ্টা করছে। যার কারণে তাদের মুখটি এখনও স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে না। তারা হয়তো এই মুহূর্তে বুঝতেও পারছে না তাদের পেছনে চা’কু নিয়ে ঠাকুর দাঁড়িয়ে আছে! তেড়ে গেলাম আমি তাদের দিকে। খালামণি এবং আপুকে দু’হাত দিয়ে দু’দিকে ছিটকে ফেলে আমি ছু’রিটি তাদের পেছনের দিকে তাক করে চোয়াল উঁচিয়ে বললাম,,

“এই তাকা। পেছনের দিকে তাকা। ঠাকুর তোদের পেছনের দিকে!”

সঙ্গে সঙ্গেই মাতাল দুটো থতমত খেয়ে উঠল! কম্পিত গলায় সমস্বরে বলে উঠল,,

“কেকেকে?”

“তোদের য’ম! এদিকে তাকা।”

দুই মাতালের মধ্যে এক মাতাল মিনমিনিয়ে বলল,,

“ভাই বাড়িতে কী চো’র-ডা’কাত ঢুকেছে?”

অন্য মাতাল ক্লান্ত গলায় বলল,,

“আরে ভাভ চোর না। হয়তো চু’ন্নি ঢুকেছে! শুনছিস না মেয়েদের গলা!”

“ওহ্ হ্যাঁ। আর এজন্যই তো আম্মুর সাজের জিনিস গুলো রুম থেকে কিছুদিন পর পর চু’রি হয়ে যাচ্ছিল! তার মানে এই চুন্নি মেয়েই আম্মুর সাজের জিনিস গুলো চু’রি করছিল?”

প্রচন্ড ক্ষেপে উঠলাম আমি! মুখ দিয়ে যা আসছে এই মাতাল গুলো তাই বলে চলছে? মানে এদের কী মিনিমাম কমনসেন্সটুকু নেই? নেশার ঘোরে এতটাই বুদ হয়ে আছে তারা? চোয়াল উঁচিয়ে উঠলাম আমি। দাঁতে দাঁত চেপে শুধালাম,,

“এই তোরা কাদের চু’ন্নি বলছিস হ্যাঁ? কাদের চু’ন্নি বলছিস? এদিকে তাকা। এদিকে তাকা বলছি! তোরা কী ভেবেছিস হ্যাঁ? আমরা খুব বোকা-সোকা? তোরা আমাদের পিছু করতে করতে এই বাড়ি অবধি চলে আসবি আর আমরা টেরই পাব না? ঘাসে মুখ দিয়ে চলি আমরা হ্যাঁ? ঘিলুতে মগজ নেই আমাদের?”

পাশ থেকে আপু গলা খাঁকিয়ে উঠল! চাপা গলায় বলল,,

“উফফ! ওটা মগজ নয় চাঁদ। বুদ্ধি হবে! একটু তো বুঝে শুনে কথা বলতে পারিস!”

বিশৃঙ্খল শ্বাস ছাড়লাম আমি। ঘরের শত্রু বিভীষণ! দাঁতে দাঁত চেপে আপুর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললাম,,

“সব কথার মাঝখানেই তোমার বাঁ হাত না ঢুকালে হয় না আপু? মাতালদের সামনেও আমাকে অপমান করতে ছাড়লে না? একটু চুপ করে দেখো না আমি কী করতে চাইছি।”

আপু মুখ টিপে হেসে চুপ হয়ে গেল! অন্যদিকে আমি আক্র’মনাত্নক হয়ে উঠলাম। তেড়ে গিয়ে পেছন থেকে দুই মাতালের শার্টের কলার চেপে ধরতেই দুই মাতাল ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল! এক ঝটকায় তাদের শার্টের কলার থেকে আমার হাতটি ছাড়িয়ে নিলো! এক ঝাপে দেয়াল টপকে নিচে দাঁড়াল! চক্ষু জোড়ায় রক্তিম আভা ফুটিয়ে দু’জনই লৌহ গলায় আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“এই কে কাকে ফলো করেছে হ্যাঁ? কার ঘিলুতে মগজ নেই? কার বাড়িতে এসে ঢুকেছেন আপনারা হ্যাঁ? চু’ন্নি তো আপনারাই। এসেছে চুরির মতলব নিয়ে আবার বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। ফলো তো আপনারা আমাদের করছিলেন! কী ভেবেছেন আমরা মাতাল? কমনসেন্স নেই আমাদের?”

আমি একটুও ভয় পেলাম না। নির্ভীক ভঙ্গিতে তাদের মুখোমুখি দাঁড়ালাম। হাতে থাকা ছুরিটি তাদের দিকে ঘুরাতে ঘুরাতে বললাম,,

“চু’রি ও চু’রি আবার শিনাও জুরি? নিজেরা যে মাতাল তার তো প্রমাণ দিয়েই দিলেন। আবার দেখি উচ্চ আওয়াজে কথাও বলছেন। হাতে এটা কী আছে দেখতে পারছেন তো? ঠিক খু’ন করে ফেলব!”

অমনিই খালামণি চ্যাঁচিয়ে উঠল! চিৎকার করে বলল,,

“কাদের তুই খু’ন করার কথা বলছিস চাঁদ? তুই কী এখনও ওদের চিনতে পারিস নি?”

তৎক্ষনাৎ মাতাল দুটো লাফিয়ে উঠল। মুখে হাত চেপে অস্থির গলায় বলে উঠল,,

“মামামামা! মামামা এখানে কী করছে?”

ভড়কে উঠলাম আমি! বিস্মিত গলায় খালামণির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“আশ্চর্য! কে এরা খালামণি? কোথা থেকে এসেছে এরা? কী তাদের পরিচয়?”

তৎক্ষনাৎ আমার দিকে এগিয়ে এলো খালামণি। বাজখাঁই গলায় বলল,,

“এরা তোদের খালাতো ভাই চাঁদ! নীড় এবং নূর! চিনতে পারলি না তুই ওদের?”

চমকে উঠলাম আমি! মুহূর্তের মধ্যেই আমার মুখটি হা হয়ে গেল! অবিলম্বেই চোখ দুটো প্রকান্ড হয়ে উঠল। এরা সত্যিই আমাদের খালাতো ভাই? পাশ থেকে আপু আমার বাঁ হাতটি চেপে ধরল। মিনমিনিয়ে বলল,,

“ছিঃ! এ কী করলাম আমরা? নিজেদের খালাতো ভাইদের নিজেরাই মাতাল বলছিলাম? অভদ্র অশিক্ষিত বলছিলাম? ছু’রি, চা’কু নিয়ে তেড়ে এসেছিলাম?”

আপাতত আমি কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। শুধু হা করে খালামণির দিকে তাকিয়ে রইলাম! এর মধ্যেই খেয়াল করলাম দুজনই মুখে হাত চেপে ধরে এক’পা দু’পা করে আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে! এদের মধ্যে একজন চাপা গলায় বলছে,,

“ভাই উল্টো দিকে দৌঁড়া। আসল রহস্য জানতে পারলে কিন্তু এক্ষণি মা আমাদের ঝাড়ু নিয়ে দৌঁড়াবে!”

বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলো না দুজনই খালামণির কাছ থেকে নিজেদের বাঁচা’নোর জন্য অন্তঃপ্রাণ চেষ্টা করছে! পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এই পর্যায়ে এসে মুখ খুললাম আমি! দুই কাল’প্রিটকে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম! কোনো দিকে কালক্ষেপণ না করেই আমি নীড় ভাইয়া এবং নূর ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,

“আপনারা কোথায় যাচ্ছেন ভাইয়া? চলুন আগে আমরা পরিচিত হয়ে নেই! কোথায় দেখা হয়েছিল, কী হয়েছিল, সব আশয়-বিষয় বলি। আর কেনই বা আপনারা বাড়ির মেইন গেইট খোলা রেখে দেয়াল টপকে বাড়ি ভেতরে ঢুকছিলেন এই সম্পর্কেও কিছু বলি!”

ধরা পড়ে গেল দুজন। হাঁটা থামিয়ে অস্থির ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পড়ল! আমার দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! বিনিময়ে বাঁকা হাসলাম আমি! এবার কী করবে চাঁদুরা? মুখ তো এবার তোমাদের খুলতেই হবে! এক্সপেন্সিভ জিনিস যে খেয়ে এসেছ তার প্রমাণ তো খালামণির কাছে দিতেই হবে! এর মধ্যেই মৃদু হাসল খালামণি। নীড় ভাইয়া এবং নূর ভাইয়ার মুখোমুখি দাঁড়াল। তাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“ঠিকই তো! তোরা দেয়াল টপকে বাড়ির ভেতর ঢুকছিলি কেন? গেইট তো খোলাই ছিল।”

দুজনই স্তব্ধ হয়ে গেল! কী জবাব দিবে তারই ব্যর্থ উপায় খুঁজছিল। এর মধ্যেই খালামণি আবার মৃদু হেসে বলল,,

“বুঝেছি। ভয় পাচ্ছিলি তোরা। ভাবছিলি এত রাতে ফিরেছিস মা বকবে তাই না? ইশশশ! আমার ছেলেরা আমাকে এত ভয় পায়!”

দুজনই এবার আশকারা পেয়ে বসল! মিটিমিটি হেসে উঠল! খালামণির আত্নবিশ্বাসকে মিথ্যে প্রমাণ করার জন্য আমি যেই না মুখ খুলতে যাব অমনি খালামণি প্রসঙ্গ পাল্টে দুই ভাইকে বলল,,

“তোরাও চিনিস নি ওদের? আরে ওরা হলো সোহা আর চাঁদ। তোদের মেঝো খালামণির মেয়ে৷ আয় আয় তোদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।”

আপত্তি থাকা সত্ত্বেও দুজন অবুঝ ভঙ্গিতে আমাদের মুখোমুখি দাঁড়াল। ভাব দেখে মনে হচ্ছিল যেন ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে জানে না! খালামণি প্রথমে সোহানী আপুকে দেখিয়ে বলল,,

“এই হলো সোহানী। তোদের মেঝো খালামনির বড়ো মেয়ে। এবার অনার্স চতুর্থ বর্ষে আছে। এই বছরেই অনার্স কমপ্লিট হয়ে যাবে।”

সোহানী আপু জোরপূর্বক হেসে তাদের দুজনের দিকে তাকাল! হাসি তো দূরে থাক তারা চোখ তুলেও আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না! খালামণি এবার আমাকে দেখিয়ে বলল,,

“এই হলো চাঁদ৷ তোদের মেঝো খালামণির ছোটো মেয়ে। এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। তোদের সব খালাতো বোনদের চেয়ে সবচেয়ে দুষ্টু হলো এই চাঁদ! যার পেছনে লাগবে তাকে নাকানি-চুবানি খাইয়েই ছাড়বে!”

এবার দুজন চোখ তুলে আমার দিকে তাকাল! আমি ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে বিদ্রুপাত্নক হেসে তাদের দিকে তাকালাম! সঙ্গে সঙ্গেই তারা রাগ ভুলে ভয়ে মুর্ছে উঠল! ইশারায় বলতে লাগল কোনো ঘটনাই যেন খালামণিকে না বলি। প্রচুর ভাবসাব নিয়ে আমি হাত জোড়া বুকে বেঁধে দুই কাল’প্রিটের মুখোমুখি দাঁড়ালাম। খালামণিকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,

“আমাদের পরিচয় তো অনেক দিলে খালামণি। এবার তোমার ছেলেদের পরিচয় দাও।”

“দিচ্ছি দিচ্ছি। এই যে হোয়াইট শার্ট পড়া? এই হলো আমার বড় ছেলে নীড়। তোদের বড়ো খালাতো ভাই। ওর বিয়েতেই তোরা এসেছিস!”

সোহানী আপু চিৎকার করে উঠল! বিস্মিত গলায় শুধালো,,

“কী বললে তুমি খালামণি? আমরা উনার বিয়েতে এসেছি? কিন্তু উনার তো অলরেডি দুটো বাচ্চা আছে খালামণি! তৃতীয় বাচ্চার প্ল্যানিংও চলছে!”

নীড় ভাইয়া আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না! মুখ চেপে ধরে এক দৌঁড়ে জায়গা পরিত্যাগ করল! যেতে যেতে চ্যাঁচিয়ে বলল,,

“আমি যাচ্ছি মা। আমার খুব ঘুম পেয়েছে!”

খালামণি তাজ্জব বনে গেল! নীড় ভাইয়ার যাওয়ার পথে প্রশ্নত্তুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আর বাকি রইল নূর ভাইয়া! তিনি তো ভয়ে অনবরত কেঁপেই চলছে! দাঁত দ্বারা নখ কামড়াচ্ছে। ছটফট ছটফট করছে। আমার দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে! মনে মনে যে আমাকে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুঁয়ে ফেলছে তা বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলো না আমার। এর মধ্যেই তিনি কেমন যেন অস্থির গলায় খালামণিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“আমার খুব জোরে ইয়ে পেয়েছে মা! আমি একটু আসছি!”

নূর ভাইয়াও দৌঁড়াতে লাগল! আমি ফিক করে হেসে নূর ভাইয়ার যাওয়ার পথে তাকিয়ে বললাম,,

“আপনার গার্লফ্রেন্ড তো প্রেগনেন্ট তাই না? তার বাচ্চার বাপ তো আপনি। তা বিয়ে করবেন না তাকে? আপনার মাকে বুঝাবেন না? বড় গলায় বলবেন না? মা আমি বিয়ে করতে চাই?”

#চলবে…?
#চলবে…?

#প্রেমময়ী_তুমি
#সূচনা_পর্ব
#নিশাত_জাহান_নিশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here