#প্রেমালঘ্ন
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ৩৫
,
,
,
,
আসফি ভাইয়ের পুনরায় জিজ্ঞেস করায় বিছানায় আরাম করে বসলাম। উনার চোখের দিকে তাকিয়ে গম্ভির স্বরে বলে উঠলাম
—ঘুরতে যাবেন
আমার এহেন আওয়াজে যেনো উনি ভরকে গেলেন সেটা উনার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।মনে মনে হাসলেও উপরে গম্ভির রুপটা ধরে রাখলাম
—কি হলো উত্তর দেন অসুস্থ আমাকে থুয়ে অন্য কোন মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন
—আমি তো সেজন্যই তোকে জিজ্ঞেস করলাম
—আমাকে জিজ্ঞেস করলেন মানে কি হ্যা আপনি কি জানেন না আমি অসুস্থ নাকি ভালোবাসা শেষ আমার বাচা মরা নিয়ে এখন আর আপনার মাথা ব্যাথা নেই তাহলে বড় আম্মুকে কেন আমাকে নিয়ে যেতে দিলেন না।
—চুপ কর
—আর যদি না করি আমি আপনার বোন হয়। বাহ তাহলে তিন কবুল কি মজা করে বলেছিলেন নাকি চাপে পড়ে কোনটা।নাকি এই অসুন্দর মেয়েকে নিজের পাশে আর মানতে পারছেন না
—ভালোবাসা বিয়ে আশু ওই এইসব কি বলছে
—এই চুপ একদম চুপ বড় হন তাই চাচ্ছি না আপনার সাথে কোন প্রকার বেয়াদবী করতে আর হ্যা ফারদার আমার স্বামিকে আসু বলে ডাকার স্পর্ধা করবেন না।
—আসফি তুই কিছু বলছিস না কেন এই মেয়ে তখন থেকে যা না তাই বলে যাচ্ছে।একটা থাপ্পড় দে অসভ্য হয়ে গেছে। কেন সেদিন বাচালি একে ওর জন্য আমাদের দিন টাই মাটি হয়ে গেলো।
আমি চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম জানিনা রাগ টা কমার বদলে বেড়ে চলেছে।হঠাৎ থাপ্পড়ের তীব্র আওয়াজ কানে আসতেই কেপে উঠলাম। চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো আসফি ভাইয়া আমাকে মারতে পারলেন কি করে। কিন্তু গালে ব্যাথা অনুভব না হওয়াই অবাক হলাম। যে জোড়ে আওয়াজ হলো এক দুইটা দাত নড়ে যাওয়া ব্যাপার না তাহলে আমি চোখ মেলে তাকাতেই অবাক হলাম আসফি ভাই এর চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে হাত জোড়া মুঠ করে রেখেছে তার সামনেই প্রিয়ন্তিকা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঠোঁটের কোণা কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখেই শিউরে উঠলাম
কানে ভেসে এলো প্রিয়ন্তিকার ভাংগা গলা খারাপ লাগলো চোখের কোণে জমা পানি দেখে তার
—আশু তুই আমাকে আঘাত করতে পারলি
—তোর সাহস হলো কি করে আমার শ্যামাঙ্গিনী কে এই ভাবে বলতে পারলি তোর গলা টিপে ধরি নি এটাই তোর ভাগ্য। আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা নাহলে আমি কি করে ফেলবো জানা নেই আমার।
প্রিয়ন্তিকা কান্না করতে করতে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। আমি আটকে রাখা নিশ্বাস ত্যাগ করার আগেই আমার গালে চড় পড়তেই আতকে উঠলাম চরে তেমন ব্যাথা না লাগলেও অবাক হয়েছিলাম
—কি বলছিলি তোর মরা বাচা নিয়ে আমার কিছু যায় আসেনা
—মিথ্যা বলেছি
—তোকে যারা আমার নিশ্বাস যেখানে আমার সাথে বেঈমানী করে সেখানে কি ভাবে এই দোষ টা আমার উপর লাগালি
—এজন্য অসুস্থ আমি টাকে থুয়ে আপনি ঘুরতে যাচ্ছিলেন
—তোর এটা মনে হলো একটা বার ভাবলিনা আমি এই অবস্থায় তোকে আদৌ ফেলে যাবো এতোটা দ্বায়িত্ব হীন তোর আসফি না যেখানে আমি আমার দ্বায়িত্ব থেকে কোন দিন পিছপা হয়নি সেখানে ভালোবাসার মানুষকে আগলে রাখার কাজটাই আমি কমতি রাখবো
তোর মন খারাপ ছিলো তাই যেহেতু প্রিয়ন্তিকা বললো তাই ভাবলাম তোকে নিয়ে ঘুড়ে আসা যাক সেও যাইতো। কিছুক্ষন তাকে নিয়ে ঘুরে তাকে বাসায় পৌছে তোকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যেতাম
—তাহলে আমাকে জিগাইলেন কেন আমি থাকতো পারবো কি না
—দেখতে চায়েছিলাম বউ আমার অন্য কারো সাথে একা যাবো এটা শুনে কেমন রিয়েকশান দেই
কথাটা দুষ্টুমির আভাস পেতেই রেগে গেলাম
—খবরদার বউ বলবেন না এখন আছেসে বউ বলে ডাকতে।বান্ধবীর সামনে তো ঠিক বোন বলে পরিচয় দিলেন
—আমি কখন বললাম তুই আমার বোন
—কেন তখন
উনি ভ্রু কুচকে বুকের উপর হাত গুজে বিছানার স্টেন্ডের সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালেন
—কখন।আমি একবারো বলিনি তুই আমার বোন বরং তোর মুখে ভাই বের হয়েছে
—ওই যখন আপনার সামনে বোন বলছিলো আপনি কিছু বলেন নি
—তুই বলতি বলিস নি কেন উলটা ভাই ভাই করে ডাকছিলি দোষ টা কার
—ধুর সব দোষ আমার।
আমি রেগে হন হন করে সেখান থেকে বেরিয়ে চলে গেলাম ছাদে।শরীর টা দুর্বল লাগছে ভীষন সাথে মন টাও যেনো দুর্বল হয়ে পরেছে। সব কিছু এলোমেলো লাগছে আবার মনে হচ্ছে সব ঠিক আছে এলোমেলো হয়ে গেছি আমি।ভালোবাসায় ঠিক এতোটা পাগল হয়ে গেছি যে এখন তাকে বিহীন নিজেকে ভাবাটাও হয়ে উঠেছে দুস্কর জানিনা এই ভালোবাসার পরিনতি কি।শুনেছি অতিরিক্ত কিছু ভালোনা তাহলে আমার এই অতিরিক্ত ভালোবাসার পরিনতি কি হবে ভাবতেই গায়ের লোম অব্ধি খারা হয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ ঘাড়ে উষ্ণ ভালোবাসার পরশ পেতেই মাথাটা পিছনে এলিয়ে দিলাম কাঙ্ক্ষিত মানুষ টির বুকে।
________
এক বছর পরে………
আসফি ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে। চেহারা দেখে তার ক্লান্তি স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট ছোট চুল গুলা দাড়ি গুলো আগের ন্যায় বেরেছে। এই অবস্থাতেও সৌন্দর্যর কোন কমতি ন্যায়।
ওটির লাইট বন্ধ হতেই সবাই চাতক পাখির ন্যায় সেদিকে ছুটলো শুধু ঠায় বসে রইলো আসফি তার মাঝে হেলদোল দেখা গেলোনা। যেনো সে কোন পাথর। কানে তার শুধু বাজছে প্রিয়তমার চিৎকার।হঠাৎ সে চিৎকার এর বদলে কানে এসে বারি খেলো নবজাত শিশুর কান্নার মধুর আওয়াজ। আসফির শরীরে শিহরণ বেয়ে গেলো চোখ জোড়া আপন মনেই বুযে এলো।
—ভাই তোর মেয়ে হয়েছে দেখ।
আসফি আরিফার গলা শুনে তার দিকে তাকালো। ৬ মাসের গর্ভবতী মেয়েটার মুখে আলাদা এক আভা ফুটে উঠেছে।ফুলে উঠা পেটের উপর রাখা শিশুটির দিকে তাকাতেই কেদে উঠলো আসফি আরহাম তার কাধে হাত রাখতেই তাকে জড়িয়ে ধরলো আসফি শক্ত করে।আলিফ ও এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো আসফিকে। চোখের পানি বেয়ে পরছে অনবরত বাবা হওয়ার সুখ টা বুঝি সত্যি এতোটা আন্দনের হয় যে আনন্দ সকল সুখ কে পিছনে ফেলে দেয়।
নিজের রাজকন্যা কে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আসফি ঘুমুন্ত আয়রার সামনে।আসফি চেষ্টা করছে তার প্রিন্সেস আর তার মায়ের মাঝে মিল খুজার কিন্তু নাক বাদে আর কোন মিল না পেয়ে হতাশ হলো কেমন হলো এমনটা সে তো ছোট শ্যামাঙ্গিনী চেয়েছিলো
—দেটস নোট ফেয়ার প্রিন্সেস তোমাকে না বলেছিলাম সেম টু সেম তোমার মাম্মাম এর মতো তাহলে তুমি হলে না কেন
— কারন সে তার বাবাই এর মতো হয়েছে
আসফি পিছনে ঘুড়ে দেখে তার মা আর বাবা দাঁড়ায় আছে।আসফির কোল থেকে বাচ্চা টাকে নিজের কোলে তুলে নেন আসফির বাবা
আর মিসেস রহমান তার নাতনির মাথায় হাত বুলাতে লাগেন
—ছোট বেলায় তুই ও এমন ই ছিলি শুধু তোর নাকটা ছিলো খারা
—যে খাড়া নাকে সকল রাজ্যের গম্ভির্য ছিলো তাই না বড় আম্মু
আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে তাকাই হেসে দেয় শুধু আসফি ভাই নাক ফুলিয়ে রাখেন।।।।।সবাই ছোট আসফি কে নিয়ে কি সুন্দর মেতে আছে।আসফির ঠোটের কোণের হাসিটা যেনো সরতেই চাচ্ছেনা
—থ্যাংঙ্কিউ মাই লিটেল মাম্মাম। আমার আসফির জীবনে আসার জন্য। তোমার জন্যই যে তার মুখের এই অমায়িক হাসিটা দেখিতে পেলাম যে হাসিটা সবচেয়ে আলাদা সবচেয়ে সুন্দর কারন এই হাসিতে রয়েছে বাবা হওয়ার প্রাপ্তি এক অদ্ভুদ শান্তি।
মনে মনে কথা গুলো ভেবে আপন মনেই হাসলাম সেটা দেখে আসফি চোখ দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে।আমি মাথা দুলিয়ে জবাব দিলাম কিছুনা তিনি হাসলেন সেই হাসিতে আবারো মুগ্ধ হলাম আমি।এই লোকটার প্রেমে আর কইবার পড়বো জানা নেই আমার। পুরাতন তাকে যে রোজ নতুন করে ভালোবাসতে বড্ড ভালো লাগে।
_____
আসফি আর আমার মেয়ে আসিফা কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি মিসেস সরকার এর কবর থেকে খানিকটা দূরে। আসফি, মিস্টার সরকার বড়আব্বু ছোট আব্বু আলিফ ভাই আর মিসেস সরকার এর ছেলে তার কবর জিয়ারত করছে।চোখে আজকে অশ্রু নেয় কিন্তু রয়েছে এক আকাশ সমান আফসোস কেন এলেন না আরও তাড়াতাড়ি। যখন বেচে ছিলেন তখন আমার মুখটাও দেখলেন না কিন্তু যখন তাকে মরণ ব্যাধি যার অপর নাম ক্যান্সার তাকে আপন করে নিলো তখন মনে পরলো আমার কথা।
—বাবা আমি নাহয় পেলাম না তার থেকে উত্তর কেনো তিনি ছেড়ে গেছিলেন আমাকে। তুমি নাহয় উপরে উনাকে জিজ্ঞেস করে নিও কেনো তোমাকে একা ফেলে চলে গেছিলেন কেনো ঠকিয়েছিলেন।
মনে মনে আকাশের প্রানে তাকিয়ে কথাটা বলেই ভারি নিশ্বাস ত্যাগ করে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেলাম। কবরটা আব্বুর কবরের পাশেই দেওয়া হয়েছে এটা নাকি উনার শেষ ইচ্ছা ছিলো।জীবত থেকে স্বামির সাথে ছিলোনা মরার পরে তার পাশে কবর দিয়ে কি বুঝাতে চান আমার মাথায় ঢুকেনা এতোই যখন ভালোবাসা তাহলে বেচে থাকতে কেনো কদর হয়না
_____
মেয়েকে ঘুম পারিয়ে তার পাশেই শুয়ে ছিলাম মাথা নিচু করে।হঠাৎ পুরুষালী হাত এসে আকড়ে ধরলো আমাকে জামা ভেদ করে হাত রাখলেন উমুক্ত পেটে। ঠান্ডা হাতের ছোয়াই কেপে উঠলাম। আমার উপর থেকে অসভ্য লোকটাকে উঠাতে চেয়েও পারলাম না। সে নিজের মতো করে ব্যাস্ত নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে ভালোবাসতে।আমিও সাড়া না দিয়ে পারলাম না পাগল প্রেমিকের স্পর্শের।
ভোর হতেই হঠাৎ করে ঘুম ভাংগতেই মুখ তুলে তাকাতেই এক জোড়া নেশালো চোখ এসে থমকালো আমার আখিতে। হঠাৎ আসফি ভাইয়ের,ঠোঁট জোড়া এসে ছুলো আমার কান। হৃদপিণ্ড শিতল করতে বেরিয়ে এলো তার মুখের প্রেম বার্তা #প্রেমালঘ্নে আরও একটি সৃতি যোগ করতেই হয়তো তার এই বার্তা।কিন্তু আমাদের প্রেমালঘ্ন যে শেষ হবার নয় মৃতু আগ অব্দি ততোদিন কি উনার এই প্রেমাবার্তা এই ভাবে আমাকে আলাদা এক সুখ এনে দিবে যানা নেই আমার শুধু কানে বাজছে তার বলা সকল শব্দগুচ্ছ
হলদে আভাতে রাঙিত ধরনীর বুক,
হলদে ছরিয়েছে চারিপাশে,
রোদ্দুর আকাশে র্সূয উকি দিয়েছে,
সোনালী রোদ বলছে ডেকে “নতুন সুচনা শুরু হক”।
শুরু হোক নতুন দিনে আরেকটি প্রেমালঘ্নে বন্দি হওয়া ঘটনা
যে ঘটনা শুধু আমি আর আমার শ্যামাঙ্গিনীতেই সীমাবিদ্ধ
যার সাক্ষি আমাদের ভালোবাসাতেই আবদ্ধ
সমাপ্ত!!!
কেমন হলো জানাতে ভুইলেন না