ফাল্গুনের ঢেউ পর্ব -২১

#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ২১ #ঘুরপ্যাঁচ (প্রথম অংশ)
লেখিকা – Zaira Insaan

ঘুম থেকে উঠেই মুখটা শুকিয়ে গেল মিহির। হঠাৎ
আজকে এতো খারাপ লাগছে কেন? তাও ঘুম থেকে উঠা মাত্রই! মাথাটা ঝিমঝিম করছে হঠাৎ করেই। চারিপাশ কেমন টা ঝাঁপসা ও গোলগোল ঘুরতে লাগলো। চুলে এক হাত ডুবিয়ে মাথা নুয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। মনে হচ্ছে মগজে কেউ দা দিয়ে কুপাচ্ছে। দেয়াল ধরে ধীরে ধীরে উঠে কোনমতে বাথরুমে অগ্ৰসর হলো মিহি। খানিকটা বাদে বের হলো ও। কিছুটা শান্তি লাগছে মাথায় পানি দিয়ে। বাধ্য হয়ে তৈরি হতে হচ্ছে ওর। ভার্সিটি যেতে হবে সামনে যে পরীক্ষা নোটস কালেক্ট করার জন্য। খারাপ লাগা টা প্রণিমা কে জানালো মিহি। প্রণিমা যেতে নিষেধ করলেও শুনেনি মিহি। অল্পটুকু নাস্তা খেয়ে বেড়িয়ে গেল।
ভার্সিটি আসার পর থেকে একটা পড়াও মাথায় ঢুকছে না তার। বরং খারাপ লাগাটা ক্রমশ বাড়ছে।
চুপচাপ বসে স্নিগ্ধের ক্লাসে স্নিগ্ধর দিকে অপলক চোখে চেয়ে রইল। স্নিগ্ধ দু’তিন বার তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। চোখ দুটো ভারী ভারী লাগছে। খুলতে কষ্ট হচ্ছে। স্নিগ্ধের ক্লাসটা থার্ড ঘন্টায় পড়লেও সে আজ সব ক্লাসের শেষেই এই ক্লাসটা নিল। মিহি কারোর সাথে টু বিন্দু কথা বলেই চলে যেতে লাগল। তনু ও বন্নি তাকে ডাকলেও সে সাড়া দিল না। বিরক্ত লাগছে সাথে মাথাটাও ঘুরঘুর করছে।

জ্যামজট সর্টকাট রাস্তা দিয়ে না যেয়ে লংকাট নির্জন রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্টুডেন্ট এর বাসার উদ্দেশ্যে যেতে লাগল মিহি। আজ শুধু দুইটা টিউশনি করে নিজ ঘরে ফিরবে। বাকিগুলো করার শক্তিই নেই তার। কার বাড়ির সামনে এসে দরজা টোকা দিতে লাগল ও। নেত্রজোড়া জোর পূর্বক খুলে রাখছে। কিয়ৎক্ষণ বাদে দরজা ওপাশ থেকে খুলল কেউ। মিহি কে বেশ অবাক হলো স্নিগ্ধ। ওর ঘরের দুয়ারে এসে কী করছে এ? স্নিগ্ধ প্রশ্নাত্বক চোখে তাকিয়ে বলে,,

“তুমি এখানে?”
পরিচিত আওয়াজ শুনে চোখ বড্ড কষ্টে তুলে সামনে তাকালো। দেখার মাত্রই ভূত দেখার মত ভড়কে গেল। আকস্মিক মুহূর্তে হতভম্ব হয়ে গেল। সে এখানে কি করছে? ডান হাত দিয়ে চোখ ঘষলো দৃশ্যমান দৃশ্যটা সত্যিই সত্য! ক্ষীণ গলায় বলল,,

“আপনি এখানে?”

“বারবার আমার ঘরে এসে উল্টো আমাকেই জিজ্ঞেস করো আমি এখানে কেন? এটা আবার কোন ধরণের প্রশ্ন?”

চমকে উঠল। তার কথায় বিব্রত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে,শান্ত হতে ইতস্তত করতে থাকে।
ঠিক তো এই প্রশ্নটা করার মানে কি?
স্নিগ্ধের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই থমকে গেল। সে শুধু ট্রাউজার পড়ে আছে গায়ে কোন কাপড় নেই। শ্যাম শরীরে চাপা ঘাম লেগে আছে। দৃষ্টি সংযত রেখে নামিয়ে নিল। এভাবে কেউ আসে!
মিহি ‘স্যরি’ বলে কেটে পড়লো। অল্পটুকু গিয়ে গেটের সাথে ওড়না টান খেল আর নিচের ইটের সাথে পা লেগে উল্টে পড়লো মিহি। ধপাস করে পড়লো ব্যাথার আর্তনাদের সুর তুলতেই স্নিগ্ধ চটজলদি আসলো। জুতো ছিঁড়ে গেছে পায়ের তলায় ছিলে গিয়ে গড়গড় করে রক্ত পড়ছে। স্নিগ্ধ ওর এক হাত কাঁধে উঠিয়ে ওকে কোলে তুলে নিল। পুরো হচকচিয়ে গেল মিহি।
রুমে নিয়ে বেডে বসালো স্নিগ্ধ। তার গৌরবর্ণের ওই পা ছুঁতেই ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠল। স্নিগ্ধ অতি সাবধানে বড় মাপের ব্যান্ডেজ করিয়ে দিল।
গম্ভীর মুখে রেগে বলে,,

“এক মেয়ে দেখলাম জীবনেও সুস্থ থাকতে পারে না মনে হয়।”

মিহি মাথা নুয়ে রাখল। ইতস্তত বোধ করছে। স্নিগ্ধ উঠে ঔষুধ এনে পানি সহ ওর দিকে এগিয়ে দিল। মিহি চোখ তুলে তাকাচ্ছে না হাত বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। স্নিগ্ধ ভ্রু কুঁচকালো মিহির হাতের দিশা অন্য দিকে চলে যাচ্ছে। ওর অবস্থা দেখে না হেঁসে পারল না সে। আচমকা স্নিগ্ধকে ওভাবে হাসতে দেখে ললাটে সরু রেখার ভাঁজ ফেলল। জলদি করে তার থেকে ওষুধ নিল বুঝলো স্নিগ্ধের হাসির কারণ কি। মেডিসিন নিয়ে রিল্যাক্স হওয়ার চেষ্টা করলো মিহি। কিন্তু পা ভারী হয়ে আছে। স্নিগ্ধ রুম থেকে বেরিয়ে গেল। সেই সুবিধার্থে পুরো রুমে চোখ বুলালো সে। লোকটা আস্ত নিরামিষ! রুমটা পুরো ফাঁকা পড়ে আছে। জিনিস থাকলেও ফাঁকা ফাঁকা পুরো। মুখ কুঁচকে নিল ও। কিয়ৎক্ষণ বাদে সে আসলো। গাঢ় নীল রঙের কলার ছাড়া গেঞ্জি পড়ে। সুঠাম দেহের সাথে গেঞ্জি ভালোভাবে চেপে আছে। তার দিকে একপলক তাকিয়ে আবারো চোখ ফিরিয়ে নিল। ওর সামনে একটা আপেল দিল স্নিগ্ধ। সেই আপেলের দিকে চোখ কুঁচকে তাকালো সে। স্নিগ্ধ অতিরিক্ত মাত্রায় বিরক্ত হয়ে হাত ধরে আপেলটা ধরিয়ে দিল বলল,,

“খাও।”

বলে পাশে দূরত্ব নিয়ে বসল। আড়চোখে দেখে নিল সেও খাচ্ছে তাই মিহিও আপেলে কামড় দিল। খেতে খেতে বলল,,

“An apple a day keeps a doctor away.”

“এটা মোটেও তোমার জন্য প্রযোজ্য না।” বলল স্নিগ্ধ।

মিহি তাকালো। স্নিগ্ধ আরো বলল,,

“তোমার আশেপাশে হাজার ডাক্তার দাঁড় করিয়ে রাখলেও দেখবে তুমি তারপরও অসুস্থ হচ্ছো। ওরা চিকিৎসা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাবে কিন্তু তুমি অসুস্থ হতে হতে ক্লান্ত হবে না।” টিটকারি মেরে ভদ্র মার্কা হাসি দিয়ে বলল স্নিগ্ধ। তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো মিহি বলল,,

“ফাজলামো করছেন!”

স্নিগ্ধ অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বলে,,

“নো, আ’ম সিরিয়াস।”

আরো রাগ রাগলো মিহির। অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। লোকটা এমন করে কথা বলে কেন? শুনলেও তো মেজাজ চটে যায়! তার মতলব কী বুঝে ত্যক্তভাবে বিরক্ত হয়ে উঠে। মিহি উঠতে নিলে হাত ধরে পুনরায় বসিয়ে দেয় স্নিগ্ধ। বলল,,

“কোথায় যাও?”

মিহি হচকচিয়ে গিয়ে হাত ছাড়িয়ে বলে,,

“বাসায় যাব, মা অপেক্ষা করছেন।”

স্নিগ্ধ ঠান্ডা গলায় বলে,,

“তোমাকে বাসায় আমি দিয়ে আসবো।”

“না লাগবে না আমি যেতে পারব।”

“এই অবস্থায়?!” এক ভ্রু উঁচু করে শানিত কন্ঠে প্রশ্ন করল স্নিগ্ধ।
উদাসীন মুখে পায়ে তাকালো মিহি। ঠিক তো এই হালৎ এ যাবে কীভাবে? দাঁড়াতেও পারছে না।‌ এই বুঝি স্নিগ্ধের সহায়তা লাগবে তার। স্নিগ্ধ দাঁড়িয়ে ওর দিকে ঝুঁকে দুই হাত বাড়াতেই মিহি ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে বলে,,

“কোলে নিবেন না প্লিজ।”

“তো তোমার জন্য গাড়ি এখানে হাজির করব নাকি!” অবাক হলেও স্বাভাবিক কন্ঠে চটাস করে উত্তর দিল স্নিগ্ধ। থতমত খেল মিহি। তাও নিজের কথাই অনড় থেকেই বলল,,

“আ..আপনি শুধু হাত ধরেন। আ..আমি হে.. হেঁটেই যাব।”

স্নিগ্ধ ওর কথাই একদমও খুশি হলো না। তাও ওর হাত শক্ত করে ধরল। মাটিতে সেই না পা রাখতেই ব্যাথায় বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো। তারপরও শব্দ না করে ব্যাথা হজম করে কচ্ছপের মত হাঁটতে লাগলো। স্নিগ্ধ ওর হাঁটা দেখে অতিষ্ঠ হয়ে হুট করে আবারো কোলে তুলে নিল। মিহি আঁতকে চেঁচিয়ে উঠা থেকে থামলো। ভয়ে বুকটা মুচড়ে উঠেছিল তার। লজ্জায় একদম মিইয়ে গেল ও। গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে ওপাশ হতে এসে বসল স্নিগ্ধ।
মিহির ঘনিষ্ঠে এসে হাত বাড়াতেই মিহি চরম ভয় পেয়ে কাঁচুমাচু হয়ে এক কোণায় লেগে গেল। #ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ২১ #ঘুরপ্যাঁচ (বাকি অংশ)
লেখিকা – Zaira Insaan

মিহির ঘনিষ্ঠে এসে হাত বাড়াতেই মিহি চরম ভয় পেয়ে কাঁচুমাচু হয়ে এক কোণায় লেগে গেল। পরে এর মতলব জানতে পারলো, স্নিগ্ধ হাত বাড়িয়ে শুধুমাত্র সীট বেল্ট টা টেনে এনেছিল। আর মিহি কিসব আজেবাজে চিন্তা করেছিল! ভাবতেও ঘৃণা লাগে নিজের উপর। শত দফা গালমন্দ করল নিজেকে! আচানক গাড়ি ব্রেক কষলো স্নিগ্ধ। পকেট হাতিয়ে ত্যক্ত হয়ে বলে উঠে,,

“ড্যাম! মোবাইল টা বাসায় ফেলে আসছি।”

মিহি নরম কন্ঠে বলে,,

“কাউকে কল করবেন?”

“ইয়াপ।”

মিহি ব্যাগ থেকে নিজের মোবাইল বের করে তাকে দিয়ে বলে,,

“আমার টা থেকে কল করুন। আবার ফিরবেন নাকি!”

স্নিগ্ধ নিল মোবাইল টা দেখেই বিস্মিত হলো! সামনের অংশ টা বাজেভাবে বিগড়ে গেছে! এটা ব্যবহার করে কেমনে? আর কথা না বাড়িয়ে নিজ প্রয়োজনে কাউকে কল করল। কুড়ি মিনিটের মধ্যে কথা বলে রেখে দিল সে। মিহি কে মোবাইল ফিরিয়ে দিয়ে গাড়ি পুনরায় স্ট্রার্ট দিল।

প্রণিমা মিহি কে দেখে বেশ বিস্মিত হলেন।‌ অস্থির হয়ে বলেন,,

“তোর পায়ে আবার কি হলো?”

“উল্টে পড়ছে ও।” মিহি কে বলতে না দিয়ে নিজেই তার উত্তর দিয়ে দিল স্নিগ্ধ। প্রণিমা ক্ষীণ চোখে তাকালেন, বলেন,,
“আর কত!”

মিহি নিশ্চুপ রইল। রুগল সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে নীচে নামলেন বাইরে কথোপকথন শুনে। মিহির পায়ে ব্যান্ডেজ দেখে অবাক হয়ে বলেন,,

“পায়ে ব্যান্ডেজ করা কেন?!”

“তোমার মেয়ে এই বয়সেও উল্টে পড়ছে।” ঝাঁড়ি গলায় বিরক্ত হয়ে বলে প্রণিমা।
প্রণিমা এমন চেহারা বানালেন যেন মিহির এই খামখেয়ালি পনার জন্য তার আফসোসের অন্ত নেই!

স্নিগ্ধ কে দেখে বিরাট প্রসন্ন হাসলেন রুগল। তাকে সোফায় বসালো। প্রণিমা কে বলল, খাবার তৈরি করতে স্নিগ্ধ আজ খেয়েই যাবে। থতমত খেল মিহি।‌ আচমকা কি হলো তাদের! এতো খাতিরদারি করছে কেন? স্নিগ্ধ নিজেও থতমত খেল এদের অবস্থা দেখে। হাসার চেষ্টা করল।‌ মিহির দিকে তাকালো সে এখনো বোকা বনে সবার মুখে মুখে চেয়ে আছে। স্নিগ্ধ চোখ সরিয়ে তাকালো রুগলের দিকে। কথায় ব্যস্ত হয়ে উঠলো। মিহি ধীরে ধীরে রান্নাঘরে গেল প্রণিমা ফ্রিজ থেকে ইতিমধ্যে সবকিছু নামিয়ে ফেলল রাঁধতে। মিহি গলা ঝেড়ে বলল,,

“হঠাৎ তোমাদের কী হলো? উনার এতো আপ্যায়ন করছো কেন?”

প্রণিমা কথা এড়িয়ে গিয়ে বলে,,

“তুই গিয়ে স্নিগ্ধের পাশে বস। না, দাঁড়া প্রথমে রুমে গিয়ে কাপড় বদলিয়ে আয় তারপর যাহ্।”

আর বিপরীত কথা হয়ে উঠল না। মিহি ভাবতে ভাবতে রুমে গেল তারপর ভালো একটা কাজ করার কাপড় পড়ে আসলো। রান্নাঘরে আবারো যেতেই প্রণিমা ওকে ভালোভাবে দেখে ঝাঁঝ গলায় বলেন,,

“চুলগুলো ‌আম্মার মতো খোঁপা করে রাখছোস কেন? খুলে আয়।”

মিহি ঠাই দাঁড়িয়ে রইল। মা’কে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে, সোফায় বসে থাকা স্নিগ্ধের দিকে একপলক তাকালো। সে খুবই মনোযোগ দিয়ে রুগল সাহেবের কথা শুনছে। মিহি গমগমে গলায় বলল,,

“চক্কর কি? আমি এখনো বুঝতে পারছি না।”

“তোর বিয়ে।” ব্যস্ত গলায় বলে কড়াইতে তেল দিলেন প্রণিমা। চোখ দুটো ড্যাব ড্যাব করল মিহি।
চেঁচিয়ে বলে,,

“কিহ্?!”

আওয়াজ উঁচু হতেই ভয় পেয়ে গেলেন প্রণিমা। স্নিগ্ধ ও রুগল সাহেব চমকে তাকালো রান্নাঘর দিকে। প্রণিমা নীচু গলায় ধমক মেরে বলেন,,

“চটাস করে থাপ্পর মারব তোকে। চেঁচাচ্ছিস কেন!”

মিহি নিজের আওয়াজের কারণে নিজেই হচকচিয়ে গেল। কন্ঠ নামিয়ে বলে,,

“বিয়ে মানে? আমি কোন বিয়ে টিয়ে করব না।”

প্রণিমা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। এর জ্বালা কাজ করতে পারছেন না তিনি। বলেন,,

“এখন যাহ্, গিয়ে স্নিগ্ধের পাশে বস।”

“রুমে যাচ্ছি আমি।” বলে জেদ দেখিয়ে চলে গেল ও।

রাগে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললেন প্রণিমা।
___________

স্নিগ্ধ গেল প্রায় দুই ঘণ্টা হচ্ছে। রাগের বসে রুম থেকে বেরুচ্ছে না মিহি। না জানিয়ে বিয়েও ঠিক করে ফেলল! আর সে বেখবর! উঠে গিয়ে পর্দা সরিয়ে নীচে উঁকি দিল। রুগল সাহেব ও প্রণিমা সোফায় একাকি কথা বলছেন। মিহি আস্তে করে দরজা খুলে শোনার চেষ্টা করল। কিন্তু সমস্যা এখানে বেঁধে গেল! দরজাটা খোলার সময় বিরাট শব্দ করে বসল তারপর হুট করে দরজাটা মেলে যেতেই , রুগল ও প্রণিমা ওকে দেখে ফেলল। ইশ্ এদের সামনে লজ্জিত হলো! নিজের উপরই রাগ উঠে গেল মিহির। পুনরায় রুমে ঢুকে যাওয়ার আগে প্রণিমা ডাকলেন। মিহি আরো লজ্জিত হলো। ইতস্তত করতে করতে ওদের সামনে এসে দাঁড়াল ও। রুগল সাহেব বসতে বললেন। কথা মত বসল সে। রুগল সাহেব ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলেন,,

“বিয়ে করবি না তুই?”

“এখন না বাবা, আমার আরো পড়াশোনা বাকি আছে। সব শেষে বিয়ে নিয়ে ভাববো।”

“তোর পড়াশোনা শেষ হতে তো আরো ৪ বছর বাকি আছে।”
“আমি ভেবে রেখেছি আর্কিটেকচার হওয়ার পরেই বিয়ে করব এর আগে না বাবা।”

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন তিনি। অতঃপর কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে বললেন,,

“মিলি কে দেখেছিস? ও অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে এখন। আর কয়েক বছর পর কলেজ এ পড়বে। ওকে কি বিয়ে-সাদি করবে না! তুই তো বিয়ে করার পরেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবি। সব দিক দিয়ে চিন্তা করা উচিত তোর। ঘরের বড় তুই।”

এতটুকু বলে লম্বা বিরতি নিলেন রুগল সাহেব। মেয়ের দিকে এখনো তাকিয়ে আছেন। হয়ত কোন এক শান্তিপূর্ণ উত্তরের অপেক্ষায়। মিহি এখনো অব্দি মাথা নুয়েই রাখল। সেই অবস্থাতেই ভাবছে সে। কী করবে? বিয়ের জন্য তো নিজেকে রাজি করাতে পারছে না। তার উপর দুই তিন বছর পর পঁচিশে পা রাখলেই সবাই কুড়ি বুড়ি বলা শুরু করবে। তখন নিজে সহ মিলির সমস্যা হবে। সব ভেবে হালকা মাথা নাড়ল মিহি। মুখে জবাব দিলে লজ্জা টা আরো গাঢ় হবে এর চেয়ে ভালো বরং ইশারা দেওয়া। রুগল ও প্রণিমা শান্তি হলেন যেন। রুগল সাহেব বলেন,,

“পাত্র কে জানিস? দাঁড়া…।”

রুগল সাহেব আরো কিছু বলতে নিলে মিহি গম্ভীর গলায় বলে,,

“জানতে ইচ্ছে করছে না এখন, ঘুমাবো।”

বলে দাঁড়াল। রুমের দিকে অগ্ৰসর হতে নিলে প্রণিমা বলেন,,

“কালকেই তোর বিয়ে। আর পাত্রের খবর না জেনে চলে যাচ্ছিস!”

থেমে দাঁড়ালো সে। বলা মাত্র দ্রুত শ্রবণ হলো। কালই বিয়ে! মানে কি?

(চলবে…)

(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here