#ফোটা_শিউলি_ফুল_একবারই_শিশিরে_ভেজে
#Writer_NE_EL(Noor)
#Neel
৬. (অন্তিম পর্ব)
কোর্টের পরিস্থিতি ভয়াবহ। শিশির বহুত বাজেভাবে কেইস টার কেমিস্ট্রি সাজাইছে।
কিন্তু এর মধ্যেই কেইসের মূল পয়েন্ট মেহেদীর পক্ষের উকিল উল্টিয়ে দিল। কোর্টে শিশির আর শিউলির ডিভোর্স পেপার হাজির করায়।
শিশির – এই ডিভোর্স কার্যকর হবে না, কারন তখন শিউলি প্রেগন্যান্ট ছিল।
শিশির এর কথায় শিউলি ভয় পেয়ে যায়। মেহেদী এটা দেখে শিউলি কে ভরসা দেয়।
মেহেদীর পক্ষের উকিল তখন বুদ্ধি করে শিশির কে জিজ্ঞেস করে,সে কী করে জানে শিউলি প্রেগন্যান্ট ছিল?প্রমান দিতে।
শিশির থমকে যায়। সত্যি ই তো , তখন তো সে শুধু শুনেছিল, বাস্তবিক প্রমান তো নেই।শায়মা দেশে নেই,আর ও সাক্ষী ও দিবে না।মা ও তো নেই।তাহলে? শিশির চুপ হয়ে গেল।দিনার সাক্ষী মঞ্জুর হবে না। শিশির আর তার উকিল বাজে ভাবে ফেঁসে গেল।
তখন শিউলির শুভাকাঙ্খী আর তার উকিল সত্যতা স্বীকার করে। শিশির আর শিউলির ডিভোর্স ২ বছর আগে হয়েছে। আর তখন শিউলি প্রেগন্যান্ট ছিল না।বরং তার স্বামী তার সাথে প্রতারনা করে দিনা কে বিয়ে করেছিল তাই বাড়ি থেকে সে চলে এসেছিল এবং বছর খানেক পর ডিভোর্স দিয়েছেন দুজন স্বইচ্ছাই।
(সত্যিই ফুলের জন্মের পর শিউলি আর শিশিরের ডিভোর্স হয়েছে। সেদিন ডিভোর্স পেপার কার্যকর না করে, সেটা ১ বছর পর কার্যকর করায় শিউলির উকিল আর তার বান্ধবী। শিশির কে নোটিশ পাঠানো ও হয়েছিল কিন্তু ওটা দিনার হাতে পড়েছিল,যা দিনা শিশির কে দেয় নাই।তাই শিশির জানে ই না, সত্যি ই তাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।)
তাছাড়া, আমাদের ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী, স্বামী স্ত্রী একবছর দূরে থাকলে, তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের কাছাকাছি চলে যায়। এখানে রিতিমত ডিভোর্স হয়ে শিউলি মেহেদী কে বিবাহ করেছে।
টাকা থাকলে নাকি বাঘের চোখ ও পাওয়া যায়। মেহেদী তাই করেছে চাল উল্টিয়ে দিয়েছে। শিশির এর উকিল ফুলের কথা উঠাতেই ,মেহেদীর আইনজীবী এমন ভাবে কোর্টে সত্যতা প্রমাণ করায় যে,ফুল শিশির আর শিউলির বাচ্চা নয়। আর ফুলের বয়স ৩ বছর। ফুল শিশিরের সন্তান নয়।(বাস্তবিক অর্থে মিথ্যা কথা )।ফুল হচ্ছে মেহেদী আর মায়ার সন্তান। ডিএনএ সহ এমন অনেক প্রমান (মিথ্যা প্রথম)মেহেদী আর তার উকিল এমন ভাবে সব কিছুই সামাল দিলো, অবশেষে রায় এটা ই হলো, মেহেদীর উপর কেইস টা মিথ্যা। শিউলি আর মেহেদী জিতে যায়।
কোর্টের বাইরে,
মেহেদী গাড়ির সামনে ফুল কে নিয়ে হাসছে, কথা বলছে, মিষ্টি মিষ্টি দুষ্টুমি করছে।
(ফুল এতোক্ষণ গাড়ীতে ই ছিল,ড্রাইভার এর সাথে)
শিশির দূর থেকে দেখছে, কেন যেন বুক পিজ্ঞরের ব্যাথা অনুভব করছে। শিউলি আস্তে আস্তে ভরা পেট এ হেঁটে আসছে। শিশির শিউলির সামনে পথ আটকিয়ে দাঁড়িয়ে বলল-সত্যি ই কি ফুল আমার সন্তান নয়?
শিশির যে পথ আটকিয়ে দাঁড়াবে শিউলি জানতো। তাচ্ছিল্য হেসে বলল- ঐ (মেহেদী কে ইশারায় দেখিয়ে) যে, পুরুষ টি কে দেখছেন, ওনি হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো বাবা, সবচেয়ে ভালো প্রেমিক, সবচেয়ে ভালো পুরুষ, সবচেয়ে ভালো স্বামী।জন্ম দিলেই যেমন মা হওয়া যায় না,ঠিক রক্তের মিল থাকলেও বাবা হওয়া যায় না, বাবা হতে হলে ঐ পুরুষের মতো হতে হবে। যে ফুল কে আমার থেকেও বেশী ভালোবাসে।আজ আপনার জন্য আমি ফুল কে মেহেদী আর মায়া আপুর সন্তান বলে উৎসর্গ করেছি, বাস্তবিক অর্থে সে আপনার আর আমার সন্তান।(রাইটার -নীল নূর)
শিশিরের চোখ ভরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। বলল – সত্যি ই কি আমাকে কখনোই ভালোবাসিস নি? তুই?
শিউলি – আমি শিউলি ফুল একবার ই ফুটেছিলাম ,একবার ই শিশিরে ভিজেছিলাম। আমি শিশির কে ভালোবাসি,আর সারা জীবন বাসবো। কেননা আমার দুঃখীময় জীবনে সে দুমুঠো সুখ দিয়েছিলো। একটা মা দিয়েছিল,বোন দিয়েছে। আমি ঐ শিশির কে সারাজীবন ই ভালোবাসি, কিন্তু আপনাকে না।ভাবছেন, মেহেদী কে তাহলে ঠকাচ্ছি তাই না?
মেহেদী ও মায়া আপু কে ভালোবাসে, অনেক!! আমি তাদের ভালোবাসা দেখে মন এক অচেনা অদ্ভুত শান্তি পাই।তার আর আমার সম্পর্কে ভালোবাসা আছে কি না জানি না, তবে বিশ্বাস, আস্থা এগুলো আছে।
শিশির – আমি কি ভুল করেছি, শুধু একটা ভুল ই করেছি, দিনা কে বিয়েই করেছি, ইসলামে চারটা বিয়ে তো জায়েজ, তাহলে?
শিউলি মুচকি হাসি (কি নিদারুন হাসি) দিয়ে বলল – আমি ও তো ভুল করিনি আপনাকে ছেড়ে এসে। সঠিক রাস্তা পেয়েছি। তবে একটা কথা বলবো, যার জন্য আমাকে ধোঁকা দিয়েছেন, সে ও তো আপনাকে কম ধোঁকা দেয় নাই। কথায় আছে, প্রকৃতি ছাড় দেয় তবে ছেড়ে দেয় না।চলি, ভালো থাকবেন।(রাইটার -নীল নূর)
শিউলি চলে যাচ্ছে তার গন্তব্যে। কিন্তু শিশির?সে তো নিঃস্ব।দিনার জন্য ছেড়ে এসেছে, সেই দিনা ই তো তাকে ধোঁকা দিয়েছে। শিশির জানতো দিনার গর্ভে তার সন্তান । কিন্তু তা মিথ্যা। দিনার গর্ভে ছিল দিনার নষ্টামী করার ফল। ছলনাময়ী দিনা আর তার পাতা ফাঁদে পড়ে যায়। বাচ্চা হচ্ছিল না, তাই সে রাজি হয়ে যায়।আর এই বাচ্চা নিজের মনে করে। সত্যিই তো সে শিউলি কে ধোকা দিয়েছে। শিউলি ছিল তার জীবনের লক্ষী। শিউলি চলে যাওয়ার পর সব চলে যায়।তার মা ব্যস্ত থাকতাম পরে মেয়ে বিয়ে দিতে।বোন কে দেখে শুনে বিয়ে দিয়ে দেয় দু তিন মাসের মধ্যে।তার মা ও তার দু তিন মাসের পর হার্ট অ্যাটাক এ মারা যায়।তার পর থেকে বোন এর সাথে সম্পর্ক ই ছিন্ন হয়ে যায়।দিনা প্রসব যন্ত্রনায় হাসপাতালে নিলে, মৃত বাচ্চা জন্ম নেয়। শিউলি কে খুঁজছে, কিন্তু পায় নাই। তারপর থেকে তার চাকরি টা ও চলে যায়, সাথে দিনার ও। সব হারিয়ে সত্যি সে নিঃস্ব হয়ে যায়।কোন ভাবে দিন আনে দিন খায়। দিনাকে মাফ করে দিয়েছিলো। কত চেষ্টা করার পর ও একটা সন্তানের মুখ দেখতে সক্ষম হয় নি। সত্যিই প্রকৃতি খুব সুন্দর একটা খেলা খেলছে।খুব সুন্দর।
শিউলি,ফুল আর মেহেদী গাড়ি করে চলে গেল। শিশির বিরবির করে বলল – ভালো থেকো।(চোখের পানি টা মুছে নিল)
দিনা সব কিছু ই দেখছে। কিন্তু সাহস করে বলতে পারল না কিছু।অটো রিকশায় করে বাড়ি চলে গেল শিশির কে ছাড়াই।
রাস্তায় এলোমেলো হাঁটছে শিশির আর তার মায়ের সেই কথাটা মনে করছে, তুই খুব মূল্যবান জিনিস হারিয়ে ফেলছিস।মা হয়ে সন্তানের এই পতন দেখবো। হয়তো জীবনে কোন এক সময় পাপ করেছিলাম। যেই রত্ন তুই অন্যতে খুঁজসিস, সেটা হালাল ভাবে তুই পেয়ে ও হারিয়ে ফেললি। তবে একটা কথা মাথায় রাখিস, শিশির হয়তো প্রতি রাতে হাজারো কলি শিউলি ফুল কে ফুটায়, তবে প্রতিটি শিউলি ফুল একবার ই শিশিরে ভিজে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,যদি তোমার কথার অর্থ বুঝতাম!!!!
(গল্পটা একটা বাস্তব জীবনের কাহিনী, এক ভাই শেয়ার করেছিল, আমি তার জীবনের অংশের একাংশ নিজ ভাষায় বর্ণনা করেছি, ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)
~~~~সমাপ্ত~~~~