#বর্ণচোরা
#৪র্থ_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা
–“তন্বী! আমি তন্বীকে ভালবাসি!”
নিবিড়ের মুখে তন্বী নাম শুনে অরু যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না। ও ভুল শুনেছে ভেবে নিবিড়কে আবার জিজ্ঞেস করলো,
–“কাকে? তুমি কাকে ভালবাসো?”
নিবিড় এইবার একটু জোরে করেই বলে উঠে,
–“তন্বী!”
–“তন্বী? কোন তন্বী?”
–“তোর বান্ধবী! আসলে তোকে বলা হয়নি! তুই কি ভাববি না ভাববি তাই আমিই ওকে বারণ করেছিলাম তোকে না বলতে। তুই ওকে ভুল বুঝিস না!”
–“ওয়েট! তন্বী তোমাকে ভালবাসে এটা তুমি কি করে জানলে? আর তোমাদের মধ্যে! কীভাবে কী? আমি কিছুই জানতে পারলাম না!”
–“বছরের বেশি হয়ে গেছে! তুই ওর থেকেই সবটা শুনে নিস!”
বলেই নিবিড় ওখান থেকে চলে গেলো। অরু নির্বাক হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। প্রথমে আদিবের বিয়ের খবর! আর এখন তন্বী আর নিবিড়ের ভালবাসার খবর! কোনোটাই যেন অরুর হজম হচ্ছে না!
এইজন্য তন্বী ওকে ননদিনী বলে ডাকে! আর বারবার শুধু জানতে চায় যে, নেহাল কবে বিয়ে করবে! ওর ভাই না জানালেও তন্বীরতো উচিত ছিলো ওকে সত্যিটা জানানো! তন্বী, আদিব আর ওর ভাইয়ের উপরে একরাশ অভিমান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে অরু।
পরের দিন সকাল। অরুরা সবাই তৈরি হচ্ছে মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য। নিবিড় এখনো ঘুম থেকে উঠেনি দেখে অরুর মা অরুকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“নিবিড় কি আজ নাস্তাও করবে না? আর মেয়ে দেখতেও যাবে না নাকি? এখনো উঠছে না কেন? যাতো অরু ওকে ডেকে নিয়ে আয়।”
অরু চকোলেট খেতে-খেতে নিবিড়ের রুমে গিয়ে নিবিড়কে বলল,
–“আমি মাকে বলে দিচ্ছি যে তুমি একটু অসুস্থ তাই যেতে পারবে না! বাকি এক্টিংটা তোমাকেই করতে হবে। ”
নিবিড় বিছানা থেকেই বলল,
–“ঠিক আছে। ”
এরপর অরু নিবিড়ের রুম থেকে বের হয়ে ওর মাকে বলল,
–“মা, ভাইয়া একটু অসুস্থ। যেতে পারবে না! যখন ভালো লাগে উঠে খেয়ে নিবে! চলো আমরা বেড়িয়ে পড়ি। তুমি না বললে উনারা তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে।”
ওর মা নিবিড়ের রুমের দিকে যেতে গেলে অরু উনাকে বাধা দিয়ে বলল,
–“আজ শুধু বড় ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখলেইতো হয়! ছোট ভাইয়ার জন্য পরের সপ্তাহে দেখা যাবে। চলোতো!”
–“কিন্তু আমিতো উনাদের দুই মেয়েকেই দেখার কথা বলেছি!”
–“মা তুমি কি পাগল নাকি! এক বাড়ির দুই মেয়েকেই আনতে হবে তার কোন মানে আছে! দুইবোন এসে তোমাকেই বাসা ছাড়া করবে! তখন বুঝবে মজা!”
তখন ওর মা একটু খুশি হয়ে বলে,
–“তাতো আমি কখনো ভেবে দেখিনি! দুইবোনকে আনলে শেষে দেখা যাবে আমার নামে ষড়যন্ত্র করবে! নাহ! একবাড়ির দুই মেয়ে কিছুতেই আনা যাবে না! আমার নিবিড়ের জন্য অন্যকোথাও মেয়ে দেখবো!”
–“হ্যাঁ, আর সেই মেয়ের খোঁজ আমিই তোমাকে দিয়ে দেবো! এবার খুশি?”
–“হুম, চল।”
অরুর মায়ের মেয়েকে দেখে খুব পছন্দ হয়েছে। একটা না দুই মেয়েকেই! তবে অরু অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে এক মেয়ের জন্যই কথা বলতে বলেছে।
নেহালের মেয়ে পছন্দ হয়নি তা নয়! তবে পরিবারের পছন্দের উপরে কথা বলার সাহসও নেই। ও মেয়ের সাথে একাকী কথা বলতে চাচ্ছিলো৷ কিন্তু ও সবাইকে কথাটা কীভাবে বলবে বুঝতে পারছিলো না। অরু ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ওর মাকে বলল,
–“মা তোমার মনে হয়না যে, ভাইয়া আর উনার আলাদা কথা বলা উচিত? আমরা যতই পছন্দ করি ওদেরতো আলাদা একটা পছন্দ আছে!”
অরুর কথায় সবাই রাজি হয়ে যায়। পরে নেহাল আর মেয়েটাকে আলাদা পাঠানো হলো কথা বলার জন্য। ফিরে আসার পর দুজনকে দেখে খুশিই মনে হলো! পাকা কথা পরে জানাবে বলে ওরা সেখান থেকে চলে আসলো।
আজ ভার্সিটি ঢুকতেই অরুর সামনে ছোট্ট একটা ছেলে দৌড়ে এসে হাতে একটা লাল টকটকে গোলাপ আর হলুদ খামের একটা চিরকুট দিয়ে বলল,
–“আপনিই অরুনিতা আপু। তাইনা?”
ছোট্ট ছেলেটার হাত থেকে ফুলটা আর চিরকুটটা ও হাতে নিয়ে কিছু বলার আগেই ছেলেটা আবার দৌড়ে ওখান থেকে চলে গেলো৷ আর বলতে লাগলো,
–“একটা ভাইয়া আমাকে এটা দিতে বলেছিলো। আপনাকে পড়ে উত্তর জানাতে বলেছে।”
অরুকে কে চিঠি দিতে পারে? এটা ভেবে ও অবাক হয়ে গেলো। ওর কোনো বন্ধু প্রাঙ্ক করছে নাতো! ও আশেপাশে খুঁজেও তেমন পরিচিত কাউকে দেখতে পেলো না।
কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে ক্যাম্পাসের একটু ভেতরে এসেই সামনে পাওয়া একটা বেঞ্চে বসে পড়ল অরু৷ তারপর চিঠিটা খুলে আগে নাম দেখতে চাইলো যে চিঠিটা কে লিখেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত চিঠিটার লেখকের কোনো নাম ছিলো না। ও অনেক আগ্রহ নিয়ে চিঠিটা পড়তে শুরু করলো,
“প্রিয় অরুনিতা,
আশা করি ভালই আছো! আমাকে হয়তো তুমি চিনবে! আবার নাও চিনতে পারো।আমি তোমাকে সামনে থেকে একদিন দেখেই পাগল হয়ে গেছি! আসলেই তুমি এতটা রূপবতী! নাকি আমার চোখেই শুধু তুমি রূপবতী তা জানিনা! তবে তোমাকে দেখার পর থেকে আমার মনে হয়েছে আমার শুধু তোমাকেই লাগবে! তোমার মতো কাউকে নয়, তোমাকেই লাগবে আমার!
আমি জানি এভাবে চিঠি লেখাটা অনেক পুরাতন আইডিয়া! তবে তোমার সামনে এসে সরাসরি তোমাকে প্রপোজ করার দুঃসাহস এখনো আমার হয়নি! তুমি সাহস দিলে আমি তোমাকে সামনে থেকে ভালবাসার কথা জানাতে চাই!
আমি জানি তুমি আমার সম্পর্কে না জেনে অবশ্যই কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না! আবার আমাকে পাগলও ভাবতে পারো! আমিতো এখন তোমার প্রেমে পাগল-ই!
ক্যাম্পাসের উত্তরদিকের লেকপাড়ে আসলে আমাকে সাদা টিশার্ট পড়া দেখতে পাবে। তুমি এসে আমার সাথে কথা বললে বুঝে নিবো যে, তুমি আমাকে একবার হলেও তোমার মন জয় করার সুযোগ দিবে!
কম লিখতে চেয়েও পারছি না মায়াবিনী! তোমার মায়া মনের সব কথাগুলো আজ এই পাতায় বন্দী করতে চাইছে! অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরণ করে আজ এটুকুই লিখলাম!
তোমার এক পাগলপ্রেমী!
তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম! জানিনা তুমি আসবে কিনা! তবে আমি তোমার জন্য আজ সারাদিন লেকপাড়ে অপেক্ষা করবো! তোমার যদি একটুও আমার জন্য দয়া হয় তাহলে একবার এসে আমাকে দেখে যেও! তোমাকে পাই বা না পাই! অন্তত একবার তোমায় পাওয়ার সুযোগ পেলেও নিজেকে ধন্য মনে করব!
দেখেছো কথা যেন ফুরাতেই চাইছে না!
ভালো থেকো মায়াবিনী! ”
চিঠিটা পড়ে অরুনিতার কোনো অনুভূতিই যেন কাজ করছে না। একবার ভাবছে ছেলেটিকে দূর থেকে দেখে চলে আসবে! আবার ভাবছে ছেলেটার সাথে সরাসরি কথা বলে দেখবে! ও এর আগে কারো প্রেমে পড়েনি একমাত্র আদিব ছাড়া! কিন্তু আদিবেরতো কয়দিন পরেই বিয়ে! এটা ভেবে অরুর মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়।
ও চিঠি আর ফুলটা নিজের ব্যাগের মধ্যে রেখে ভীতপায়ে লেকের দিকে এগিয়ে যায়৷ লেকের পাশেতো অনেক ছেলেই আছে। চিঠির লেখককে ও কীভাবে খুঁজে বের করবে!
অরু সাদা টিশার্ট পড়া ছেলেকে খুঁজতে লাগলো৷ অবশেষে ও একটা ছেলেকে দেখতে পেলো যে সাদা টিশার্ট পড়ে আছে। ও ভালো করে ছেলেটাকে দেখেই চিনে ফেললো৷
ছেলেটা ওদের ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র। উনাদের ফাইনাল এক্সাম চলছে। অরুর সাথে কিছুদিন আগেই দেখা হয়ে ছিলো। একটা প্রজেক্টের ব্যাপারে কথা বলতে ও গিয়েছিলো ছেলেটার কাছে। ওর নাম রূপক৷ ছেলেটাকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গিয়েছিলো অরুর। এই ছেলেটা চিঠি দিলেতো ভালই হবে! অরুও একটা চান্স নেবে প্রেম করার! কি আছে এই প্রেমে! সবাই প্রেম-ভালবাসা বলতে পাগল!
অরু ভয়, শঙ্কা আর একরাশ দ্বিধা নিয়ে রূপকের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে৷ সত্যিই কি রূপক-ই ওকে চিঠি লিখেছে?
চলবে..?