বর্ণচোরা পর্ব -০৬

#বর্ণচোরা
#৬ষ্ঠ_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

–“গ্রামে যাওয়ার আগে শিলার সাথে একটু দেখা করে যেতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু কীভাবে বলব সেটাই বুঝতে পারছি না!”

অরু একটু হেসে বলল,

–“ওহ আচ্ছা! এই ব্যাপার! আচ্ছা ভাইয়া, তুমি কি সত্যিই কখনো প্রেম করো নি? না মানে এত বয়স হয়েছে!”

নিজের ছোট বোনের মুখে এমন কথা শুনে নেহাল একটু মন খারাপ করে বলল,

–“শেষ পর্যন্ত তুইও আমাকে এভাবে বলতে পারলি! তোর কাছে একটা বুদ্ধি চাইলাম আর তুই উল্টো আমাকেই কথা শুনাচ্ছিস!”

–“আরে ভাইয়া রাগ করছো কেন! আমিতো এমনিই জানতে চাইলাম! আমি জানি আমার ভাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাই!”

–“হয়েছে! আর পাম দিতে হবে না। আমাকে একটা বুদ্ধি দে এইবার!”

–“তুমি ভাবিকে বলো যে, আমার জন্য ইদের শপিং করতে যাবে৷ আমি অসুস্থ তাই যেতে পারবো না! আর মেয়েদের জিনিস তুমি চয়েজ করতে পারো না! তাই তাকে সাথে যেতে হবে!সিম্পল! ”

–“তাই বলে তোকে অসুস্থ বানিয়ে দেবো?”

–“আরে এসব কোন ব্যাপার না! তুমি বলেই দেখো!”

সত্যি করেই নেহাল তখনি শিলাকে ফোন করলো৷ আর অরুর কথামতো শিলা ওর সাথে যেতে রাজি হয়ে গেলো। নেহাল খুশি হয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।

গ্রামে এসে অরুর অনেক ভালো লাগছে। অনেকদিন পর ছোট-ছোট চাচাতো ভাইবোনদের সাথে ঘুরে বেড়াতে আর গল্প করতে ভালই লাগছে!

দেখতে-দেখতে ইদের দিন চলে এলো।বিকেলে অরু ওর চাচাতো বোন মিনার সাথে ঘুরতে বের হলো।মিনা এবার ক্লাস টেনে পড়ে। অনেকক্ষণ গ্রামটা ঘুরে বাড়ির পথে পা বাড়াতেই ও হায়াতের মতো কাউকে দেখতে পেলো। ও সেদিকে যেতে লাগলো। ও যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। একটা বাগানের পাশে গিয়ে ছেলেটির কাঁধে হাত রাখতেই ছেলেটি ওর দিকে তাকালো।

–“আপনি!”

অরুর ধারণাই ঠিক। ওর সামনে হায়াত দাঁড়িয়ে আছে। হায়াতও কি এই গ্রামের ছেলে! অরু আর হায়াত দুজনেই যেন দুজনকে দেখে অবাক হয়ে গেছে। অরু অবাক হয়ে বলল,

–“আপনি এখানে? ”

–“আমাদের গ্রামে আমি থাকবো নাতো কে থাকবে!”

–“এটা আপনাদের গ্রাম? আপনি কি জানেন আমার গ্রামের বাড়িও এখানে?”

হায়াত কিছুটা থতমত খেয়ে বলল,

–“না, আসলে। আমি….”

–“কি হলো? এমন আমতা-আমতা করছেন কেন? আপনি কি আমাকে আগে থেকেই চিনতেন? চিঠিটা কি আপনিই দিয়েছিলেন? দেখুন চুপ থাকবেন না। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানাটা আমার খুব জরুরি! আদিবও কি এই গ্রামেই থাকে?”

একসাথে এতগুলো কথা বলে হাঁপিয়ে উঠেছে অরু৷ হায়াত বলল,

–“আপনি প্লিজ একটু শান্ত হবেন! আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলেতো বলব! আর এতগুলো প্রশ্নের উত্তর আমি কীভাবে দিবো!”

–“আচ্ছা এতগুলো প্রশ্নের উত্তর একেবারে দিতে হবে না! আপনি আগে এটা বলুন যে, আদিবও কি এই গ্রামেই থাকে?”

–“এটাই আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন?”

–“মনে করেন তাই। প্লিজ বলুন না!”

–“হ্যাঁ, তবে আদিব আপনার সাথে দেখা করবে না।”

–“কেন? কেন আমার সাথে দেখা করবে না? আমি কি তাকে খেয়ে ফেলবো নাকি!”

হায়াত কিছুটা রেগে গিয়ে বলল,

–“যে ছেলেটা আপনার সাথে কথা বলতে চায়না! দেখা করতে চায়না! তার জন্য আপনি এত পাগল কেন?”

–“এটা আমার পার্সোনাল ব্যাপার! আপনি এক্ষুনি আমাকে আদিবের কাছে নিয়ে যাবেন। আমি শুধু উনাকে একবার নিজের চোখে দেখতে চাই৷ প্লিজ!”

–“আমি পারবো না! ও ওর হবু বউয়ের সাথে ঘুরতে গেছে। আপনি কি ওদের ডিস্টার্ব করতে চান?”

অরু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

–“ওকে! আপনি শুধু ওর একটা ছবি আমাকে দেখান। আর ওর হবু বউয়েরও! এটা অন্তত করতে পারবেন? জানেন আমি আপনাকে কত খুঁজেছি!”

–“কেন? আমার প্রেমে পড়ে গেছেন মনে হয়?”

–“ওয়েট! আরেকটা কথা, আপনি কি আমাকে কোন চিঠি লিখেছেন?”

হায়াত একটা হাসি দিয়ে বলল,

–“আমাকে কি আপনার ওইরকম ছেলে বলে মনে হয়?”

–“ওইরকম ছেলে মানে? কিরকম ছেলে?”

–“আপনার মতো একটা সেল্ফলেস মেয়ের পিছনে ঘুরার মতো! যে কিনা…”

অরু এইবার অনেকটা রেগে যায়। ও রেগে গিয়ে বলে,

–“আমি সেল্ফলেস মেয়ে? ওকে মানলাম আপনি আমাকে চিঠিটা দেন নি! কিন্তু তাই বলে আপনি আমাকে এভাবে অপমান করতে পারেন না!”

–“মান থাকলেতো অপমান!”

হায়াতের হঠাৎ এমন পরিবর্তনে অরু খুব অবাক হয়ে গেলো৷ এই ছেলেটা ওর সাথে এমন করে কেন কথা বলছে আজ! ও নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলল,

–“ইটস ওকে! আমি মানলাম আমি সেল্ফলেস! আপনি প্লিজ আমাকে একবার আদিবের একটা ছবি দেখান!”

অরুর মুখে বারবার আদিবের নাম শুনে রাগে জ্বলে উঠে হায়াত।

–“কি আছে ওই আদিবের মধ্যে? ওই ছেলেটার জন্য আপনি কেন এতো পাগল! দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব পড়েছে?”

–“দেখুন আপনি ভদ্রভাবে কথা বলুন। আমার পার্সোনাল ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার না করলেও চলবে! আপনি আদিবের ছবি দেখালে দেখান! আর নইলে দেখাতে হবে না! ”

হায়াতও জিদ করে বলল,

–“না! দেখাবো না আমি আদিবের ছবি! দুইদিন পর ওর বিয়ে! এবারতো ওর কথা ভুলে যান!”

–“আপনাকে কে বলেছে আমি উনার কথা মনে করি? আমিতো শুধু একবার উনাকে দেখতে চেয়েছিলাম! যার সাথে এতদিন কথা বলেছি! এত কথা শেয়ার করেছি! এত গল্প পড়েছি! তাকে দেখার ইচ্ছে কি একবার হতে পারে না? বলুন? আমিতো বলছি না যে, আমি উনাকে ভালবাসি! আমার উনাকেই চাই! আমিতো শুধু একটু……”

কথাগুলো বলে অরু এইবার কান্না করে ফেলে৷ হায়াত ওকে কাঁদতে দেখে কিছুটা নিরব হয়ে যায়৷ তারপর আস্তে করে বলে,

–“ওর সাথে আমি এখন আর কথা বলি না৷ ওর সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে। আর ওর কোন ছবিও আমার কাছে নেই! ও আমাকে ব্লক করে দিয়েছে সব জায়গা থেকে৷ সরি…”

–“ইটস ওকে! তবে আপনি আমাকে এত অপমান না করলেও পারতেন! আশা করি আর কখনো আপনার সাথে দেখা হবে না! আর আমার মতো সেল্ফলেস একটা মেয়ের সাথে কথা বলার ইচ্ছেও অবশ্য আপনার থাকার কথা নয়! আর আদিবের সাথে কখনো দেখা হলে আমার কথা বলবেন! আদিব না চাইলেও আমি আশায় থাকবো কোন একদিন ওকে দেখার!”

বলেই ওখান থেকে চলে গেলো অরু। মিনা ওকে না পেয়ে খুঁজতে-খুঁজতে ওখানে চলে এসেছিলো৷ অরু মিনার সাথে বাড়ি চলে গেলো। ওর সারাদিনের আনন্দ যেন মাটি হয়ে গেলো।

গ্রাম থেকে আসার সময় সারারাস্তা অরু চুপচাপ ছিলো৷ যে মেয়ে একদন্ড চুপ থাকে না সে আজ এত চুপচাপ! ব্যাপারটা ওর পরিবারের সবার চোখ এড়ালো না।

রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে নিবিড় ওর রুমে গিয়ে বলল,

–“তোর কি হয়েছে? গ্রাম থেকে আসার পর এমন চুপচাপ হয়ে আছিস কেন? ওখানে কেউ তোকে কিছু বলেছে? কেউ খারাপ ব্যবহার করেছে? আমাকে বল! আমি এক্ষুণি তাকে উচিত শিক্ষা দিচ্ছি!”

অরু নিবিড়কে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসল। তারপর বলল,

–“ভাইয়া, তোমরা না বলেছিলে আমাকে বিয়ে না দিয়ে তোমরা বিয়ে করবে না! এখন আমাকে রেখেই তোমরা বিয়ে করে নিচ্ছো! দিস ইজ নট ফেয়ার!”

বোনের মুখে এমন কথা শুনে নিবিড় কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছিলো না৷ তাই বলল,

–“আমার আর তন্বীর বিয়েতে তুই কি খুশি না? তন্বী তোকে কিছু বলেছে? দাড়া আমি এক্ষুণি ওকে ফোন করছি।”

অরু ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

–“না না, ভাইয়া! তন্বী কিছুই বলে নি! আর তোমাদের বিয়েতেও আমি ভীষণ খুশি৷ কিন্তু….”

–“কিন্তু কি? বল আমাকে! তুই কাউকে ভালবাসিস? তাকে বিয়ে করতে চাস? দেখ আমাকে তুই নির্দ্বিধায় বলতে পারিস! আমি শুধু তোর ভাই নয়! আমি যে তোর একটা ভালো বন্ধু!”

অরু এইবার কিছুটা শান্ত হয়ে বলল,

–“ভাইয়া, আমার কোন পছন্দ নেই! আমি বিয়ে করতে চাই! সেটাও যত দ্রুত সম্ভব! আর ছেলে তোমাদের পছন্দ হলেই হবে! আমার দেখতে হবে না!”

বোনের মুখে বিয়ের কথা শুনে থ হয়ে গেলো নিবিড়৷ যে মেয়ে বিয়ের কথা শুনলে পারলে নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে দিতো! আর সেই মেয়ে কিনা বলছে বিয়ে করবে!

–“তু…তুই ঠিক আছিসতো অরু?….. মা!মা! তাড়াতাড়ি এদিকে আসো৷ দেখোতো অরুকে আবার কোনো জ্বিন-ভূতে ধরলো কিনা!”

ওর চেঁচামেচি শুনে সবাই অরুর রুমে ছুটে আসলো। ওর মা বলল,

–“কি হয়েছে আবার? ওমন ষাড়ের মতো চেঁচাচ্ছিস কেন?”

নিবিড় কিছু বলার আগেই অরু ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

–“মা আমার জন্য নাকি তোমার ছেলে দেখা আছে! আমি চাই ভাইয়াদের বিয়ের দিন-ই আমারো বিয়ে হয়ে যাক! ”

নিবিড়ের মতো ওর মা সহ বাকি সবাই অবাক হয়ে গেলো৷ সবার চুপ থাকতে দেখে অরু আবার বলল,

–“মা তোমার নাকি কোন বন্ধুর ছেলে আছে! আমাকে নাকি অনেক পছন্দ করে! তাকে বলে দাও আমি বিয়ে করতে রাজি! আর এইসব দেখাদেখির ঝামেলার মধ্যে আমি যেতে চাইনা! সরাসরি বিয়ের দিন-ই ছেলেকে দেখবো!”

সবাই একে অন্যের মুখের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করছে৷ সবার মুখ যেন বন্ধ হয়ে গেছে। সারাঘরে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। অরুর সাথে কথা না বলে একে-একে সবাই রুম থেকে চলে গেলো৷ তারপর অরুর কি হয়েছে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করলো। মেয়েটা যে পরিমাণ জেদী আর একগুয়ে! একবার যখন বলেছে বিয়ে করবে তখন বিয়ে করেই ছাড়বে!

অরুর বিয়ের কথা শুনে সবার খুশি হওয়ার কথা! কিন্তু আজ উল্টোটা হচ্ছে। অরুর এমন পরিবর্তন কেউ যেন মেনে নিতে পারছে না! অরুর মা সবার সাথে আলোচনা করে উনার বন্ধুকেই সরাসরি ফোন করলো ব্যাপারটা জানানোর জন্য। দেখা যাক ওরা কি বলে!

অরু আদিবকে একটা মেসেজ করে রাখলো আবার যে, দুইদিন পর ও নিজেও বিয়ে করতে চলেছে এবং ওর বিয়ের ছবি আদিবকে পাঠাবে! মেসেজটা করেই অরু কিছুটা খুশি হলো! আদিব বিয়ে করবে আর ও বসে-বসে দেখবে! ও নিজেও বিয়ে করে নেবে! ও এসব ভাবছিলো তখন ওর মা রুমে এসে বলল,

চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here